রোগ এবং সংক্রমণ সম্পর্কিত ভ্রান্তি: ১

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি
লিখেছেন অনার্য সঙ্গীত (তারিখ: রবি, ০২/০৯/২০১২ - ৮:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্যক্তিগত জীবনে আমি দেখেছি এমনকি খুব সচেতন মানুষের মাঝেও রোগ এবং সংক্রমণ সম্পর্কিত মারাত্মক ভ্রান্তি রয়েছে। কুসংস্কার এবং প্রচলিত ধারনার সঙ্গে দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা মিলিয়ে শিক্ষিত লোকেরাও এসব ভ্রান্তিকে সত্য বলে মনে করেন। এই সিরিজে আলোচনা করা হবে কেন এইসব ভ্রান্তি সত্য নয়, কেন আমরা এসব বিষয়কে সত্য বলে মনে করি, ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক বিষয়।

ভ্রান্তি ১: বাঙালির পেটে রোগজীবাণু সব হজম হয়ে যায়! যে পরিবেশে, যেরকম ভেজাল খেয়ে, কাদামাটি মেখে আমরা বড় হই তাতে জীবাণু আমাদের শরীরে পাত্তা পায় না!

এই ধারনা কেন ভুল?

এই প্রসঙ্গে খুব প্রয়োজনীয় না হলেও একটি কথা এই সিরিজের সকল পর্বে বলা হবে। সেটি হচ্ছে, যখন কেউ কোন কিছু দাবী করেন, তখন যিনি দাবী করছেন তাঁর দ্বায়িত্ব হচ্ছে দাবীর পক্ষে যুক্তি দেখানো। তাঁর সেই দাবীকে প্রমাণ করা। সেটাকে ভুল প্রমাণ করা অন্য কারো দায়িত্ব নয়। আমি যদি দাবী করি যে, আমার একটি ডায়নোসর রয়েছে, তাহলে ডায়নোসরের উপস্থিতির প্রমাণ দেখানোটাও আমারই দ্বায়িত্ব। অন্য কারো কোন দায় নেই আমার কথা ভুল প্রমাণ করার। আমি নিজে যতক্ষণ না প্রমাণ করছি যে আমার ডায়নোসর রয়েছে ততক্ষণ আমার দাবী মিথ্যা।

এই জন্যে, যদি কেউ বলতে চান যে, বাঙালির পেটে সব হজম হয়, তাহলে তাঁকে সেটা প্রমাণ করতে হবে যে সত্যিই তা হয়। না হলে তাঁর কথা মিথ্যে।

এই সহজ দর্শনের পরেও আমরা এই প্রসঙ্গে আলোচনা করব, কেন এটি মিথ্যে। কেন বাঙালির পেটে সব জীবাণু হজম হয়ে যেতে পারে না।

আমাদের রান্না দেখেছেন? কড়া মশলা আর ঝাল! আর ভেজাল তো আছেই! ওতে মানুষই বাঁচে না, আর জীবাণু!

আমরা যখন খুব কড়া রান্না খাই, ধরা যাক খুব মশলাদার রান্না, অথবা খুব ঝাল হয়েছে এরকম রান্না, আমাদের মনে হতে পারে এইরকম মশলা (বা ঝাল), যা মানুষেরই সহ্য করতে কষ্ট হয় তাতে জীবাণু বাঁচতে পারেনা। কিন্তু আসলে সেরকম হয়না। কারণটি ব্যাখ্যা করছি ঝালের উদাহরণ দিয়ে। অন্যান্য মশলার ক্ষেত্রেও এটি সত্য।

আমাদের কেন ঝাল লাগে? ঝাল/মরিচের মধ্যে এমন একটি উপাদান রয়েছে (ক্যাপসেসিনয়েড) যেটি আমাদের এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের স্নায়ুতে পুড়ে যাওয়ার, তাপ সৃষ্টি হওয়ার সংকেত দিতে পারে। মরিচ খেলে তাই আমাদের ঝালের অনুভুতি তৈরি হয়। এবং আমরা বোকার মত ধরে নেই যে, জীবাণুদেরও ঝালে একই অনুভুতি হবে। কঠিন ঝালে তারা টিকতেই পারবে না। কিন্তু, জীবাণুদের কাছে ঝাল অথবা মশলা হচ্ছে শুধুই একটি খাদ্য উপাদান। স্বাদ বিষয়ক অনুভুতি তাদের নেই। কোন খাদ্য উপাদানে যদি বিশেষ কোন জাবাণুরোধী উপাদান থাকে তাহলেই কেবল বলা যাবে যে ওই খাবারে জীবাণু নেই। আবার সেই জীবাণুরোধী উপাদান খাবারে কেবল থাকলেই হবে না, যথেষ্ট পরিমাণে থাকতে হবে।

আমরা কেন ভেবে নেই যে সকল প্রাণির শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়আ একইরকম? আমাদের শারীরিক প্রক্রিয়া অন্য প্রাণির অথবা জীবাণুর মত হওয়ার কোন কারণ নেই! জীবাণুরা এই পৃথিবীর সবচে সহনশীল প্রাণি। এই গ্রহে যখন কোন প্রাণি ছিল না তখন তারা ছিল। যখন কোন প্রাণি টিকে থাকেনি তখন তারা টিকে থেকেছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। ১০০ ডিগ্রীরও কম তাপমাত্রায় যেকোন প্রাণিকে সেদ্ধ করে ফেলা যায়। অথচ ১৪০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় জীবাণু বেঁচে থাকে! ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা করে ফেললে তরল নাইট্রোজেনের ভেতরেও ব্যাকটেরিয়া টিকে থাকে। যাঁরা জানেন না, তাঁদের জানিয়ে রাখি, তাত্ত্বিকভাবে তরল নাইট্রোজেনের তাপমাত্রা -১৯৬ থেকে -২১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস! এই তাপমাত্রা কীরকম তা ধারনা করা শক্ত। উদাহরণ দিয়ে একটু ধারনা দেই। আপনি যদি আপনার একটি আঙুল তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়েই (আপনার পক্ষে যত দ্রুত সম্ভব) তুলে নেন তাহলেও সেটি পাথরের মত শক্ত কঠিন পদার্থ হয়ে যাবে। একটি হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে আপনার আঙুলটি কাঁচের টুকরোর মত গুঁড়ো হয়ে যাবে!

জীবাণুরা কেবল তাপমাত্রাই সহ্য করতে পারে তা নয়। যে তীব্র এসিডে অন্য প্রাণি ঝলসে যায় সেই এসিডে জীবাণু বেঁচে থাকে! একেবারে উল্টো পরিবেশ, ক্ষারেও, জীবাণু বেঁচে থাকতে পারে! সাগরের তলদেশের অকল্পনীয় চাপে (১০০০ এটিএম-এরও উর্দ্ধে), যার অর্ধেক চাপে সাবমেরিনও গুঁড়ো হয়ে যায়, সেই চাপে জীবাণু টিকে থাকে! মেঘের ভেতরের শূন্যতায় জীবাণু টিকে থাকে! শক্ত পাথরের ভেতরে জীবাণু টিকে থাকে! লবণের দলার ভেতরে জীবাণু টিকে থাকে! ধাতুর দ্রবণে জীবাণু টিকে থাকে! শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেটের ভেতরেও জীবাণু পাওয়া যায়!

সুতরাং পরীক্ষা না করে কখনোই বলা যাবে না কোন বিশেষ পরিবেশে একটি জীবাণু টিকে থাকবে কিনা। আপনি যদি বলতে চান আপনার ব্যবহৃত মশলায় জীবাণু টিকে থাকে না, তাহলে সেটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে আগে। (সত্যিই আপনার মশলায় জীবাণুরোধী উপাদান থাকলে, সেটি সবসময় খুব ভালো সংবাদ নয়। মানুষের পেটে যে হাজারো জীবাণু থাকে সেসব বেঁচে থাকার জন্য অতিপ্রয়োজনীয়। এইসব জীবাণু মরে গেলে আপনিও মরবেন!)

কেবল মশলা অথবা রান্নার উপাদান নয়, ভেজাল, অন্যান্য রাসায়নিক ইত্যাদির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আপনার জন্য যেটি বিষ সে জীবাণুর জন্যেও বিষ হবে এমন কোন কারণ নেই। মানুষের জন্য বিষাক্ত অসংখ্য উপাদানে জীবাণুরা চমৎকার বেঁচে থাকতে পারে! আপনার কোষের গঠন-গড়ন এবং জীবাণুদের কোষের গঠন-গড়ন এক নয়। আপনি প্রেমিকার ধোকায় পৃথিবীকে একটি অর্থহীন জায়গা বলে বিশ্বাস করতে পারেন, কিন্তু জীবাণুরাও সেরকম ভাববে তা মনে করার কোন কারণ নেই। আপনার জীবনের সঙ্গে জীবাণুর জীবনের সামান্যই মিল।

আপনার যদি কখনো মনে হয়, যে আপনার রান্নার উপাদান (তা সে ভেজাল হোক অথবা আপনার ব্যবহৃত মশলা হোক), জীবাণুদেরকে মেরে ফেলছে তাহলে আপনি একটি ছোট্ট পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। যে খাবারে এই জীবাণুরোধী উপাদান আছে বলে আপনি মনে করছেন, সেই খাবার খানিটা কয়েক দিন একটি পাত্রে রেখে দিন। লক্ষ্য রাখুন সেটি যেন শুকিয়ে না যায়, ভেজা থাকে। নিশ্চিত থাকুন, দুয়েকদিনের মধ্যেই সেটিতে পচন ধরবে। মনে রাখুন, সাধারণ সকল পচনের কারণ জীবাণু। জীবাণু বেড়ে উঠলেই কোনকিছু পচে যায়।

সুতরাং রান্নার উপাদান অথবা ভেজালের জন্য সাধারণভাবে জীবাণু মরে যায় না। অথবা, ভেজাল হলেই তা জীবাণুমুক্ত নয়। মশলাদার হলেই কোনকিছু জীবাণুমুক্ত নয়।

কিন্তু বাঙালির পেটে সব জীবাণু হজম হয়ে যায়!

এই ধারনাটিকে আমরা বর্ণবাদ বলতে পারি। বাঙালি এবং অন্যান্য সকল মানুষ একটিমাত্র প্রজাতি। তাদের শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সাধারণভাবে একইরকম। বাঙালি এবং অন্যান্য জাতির পরিপাকতন্ত্রে কোন পার্থক্য নেই। অভ্যাসবশত আমরা মশলাদার খাবারে সহনশীল হতে পারি। কিন্তু তাতে জীবাণুদের কিছু যায় আসে না। আপনার ডানা গজালেও জীবাণুর কিছু যায় আসে না! যায় আসে তখন, যদি আপনার শরীরে এমন কোন পরিবর্তন আসে যেটি জীবাণুর জন্য ক্ষতিকর। সেরকম কোন ক্ষেত্রে হতে পারে তা আমরা পরে আলোচনা করব।

সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা দেখা যায় সারাদিন ধুলোমাটি মেখে/খেয়েও সুস্থ আছে!

না নেই। তারা সুস্থ নেই। তাদের বেশিরভাগেই অপুষ্টির শিকার। তারা নানা অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত, আপনি জানেন না। আপনার শিশুটি একটি হাঁচি দিলে আপনি হায় হায় করে ওঠেন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা রোগে আধমরা হয়েও অসুস্থতা পাত্তা না দিতে শেখে। পাত্তা দেয়ার উপায় তাদের থাকে না। তারা সাধারণ সব শিশুর চাইতে বেশি অসুস্থ হয়। তাদের গড় আয়ু কম! তাদের জীবন যাত্রার মান নিন্ম। সুবিধাবঞ্চিত হয়ে জন্মানো কোন শিশুর অপরাধ নয়, কিন্তু সেটি প্রকৃতি হিসেবের মধ্যে নেয় না।

জ্বর, পেট ব্যাথা, পেটের অসুখ ইত্যাদি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনের অংশ। তারা এসব দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক অংশ হিসেবে বিশ্বাস করে! আপনি যে দুচার মুহূর্তের জন্য তাদেরকে দেখেন সেই সময়টুকুতে আপনার মনে হয় তারা বেশ সুস্থ আছে। আপনার অবচেতন মন নিজের সঙ্গে তাদের তুলনা করতে শুরু করে দেয়। আপনি ভাবতে থাকেন, যে পরিবেশে ওরা টিকে আছে সেই পরিবেশে আপনি থাকলে মরেই যেতেন। ওরা যেহেতু মরেনি, তাই ওরা বেশি সবল। বাস্তবতা সেরকম নয়। ওরা আপনার চাইতে অনেক বেশি দূর্বল, আপনি সেটি জানেন না!

এই কথাগুলি সুবিধাবঞ্চিত সকল শ্রেণীর জন্য প্রযোজ্য। দরিদ্র শ্রমিকদের কাজের দক্ষতা/শক্তি চমকপ্রদ নিশ্চয়ই। শারিরিক পরিশ্রম খুবই উপকারী অভ্যাস। কিন্তু জীবনযাত্রার নিন্ম মান কাউকে সবল অথবা বেশি জীবাণু সহনশীল করে তোলে না!

একটা বিদেশী এসে এইখানে টিকতে পারে না, বাঙালিরা পারে! নিজের চোখে দেখা!

অভ্যাস।
- ১০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় আপনি টিকতে পারবেন না। - ৪০ এ অনেক দেশের লোকে সুখেই থাকে! মরুর শুষ্কতায় আপনি শুকিয়ে মরবেন। আমার সুদানিজ বন্ধুটি মরবে না! চীনের মাছের চিপস এক কামড় খেলে আপনি পাকস্থলী উগরে দেবেন। চায়নিজরা কুড়মুড়িয়ে প্যাকেট শেষ করবে! আদিবাসীদের বাঁশের খোলে পঁচানো পোকা এক চামচ খেলে আপনি প্রেমিকার নাম ভুলে যাবেন! দু'চামচ খেলে বাপের নাম ভুলে যাবেন! যেই আদিবাসীরা সেটি বানিয়েছেন তাঁরা স্ত্রী-পুত্র নিয়ে রসিয়ে খাবেন! সবই সংস্কৃতি থেকে পাওয়া অভ্যাস। মানুষের সংস্কৃতিতে ভিন্নতা রয়েছে।

কিন্তু আপনার সংস্কৃতিতে জীবাণুদের কিছু যায় আসে না। আপনি চায়নিজ, বার্মিজ, ইউরোপিয়, বাঙালি, নাকি বেদুঈন সে জীবাণু জানে না। জীবাণু খোঁজে আপনার শরীর তার উপযুক্ত কীনা। আপনার কোষ তার লক্ষ্য। আপনার কোষের উপরিভাগের বিশেষ প্রোটিন অণুকে জীবাণু চেনে। আপনার সংস্কৃতি যদি সেই প্রোটিন অণুসমুহকে বদলে দিতে পারে, তাহলে চমৎকার। আপনি বিশেষ কোন জীবাণুরোধী। কিন্তু সেরকম কখনো হয়না।

ভিন্ন পরিবেশ, সংস্কৃতি, খাবারে অভ্যস্থতা আপনাকে সাধারণভাবে জীবাণু সহনশীল করে তোলে না।

কিন্তু পরিবেশ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে পারে!

পারে।

খুব সাধারণভাবে যদি ব্যাখ্যা করি, তাহলে আমাদের শরীরে কিছু কোষ আছে যারা জীবাণু চিনে রাখতে পারে। এই কোষেরা রোগ প্রতিরোধী কোষ। একবার এরা যে জীবাণুকে চিনে ফেলে সেই জীবাণু আর আমাদের ক্ষতি করতে পারে না। সেইজন্যে, আপনার পরিবেশে যেসব জীবাণু রয়েছে, সম্ভাবণা আছে সেসব জীবাণুর সঙ্গে আপনার শরীরের রোগপ্রতিরোধী কোষেরা পরিচিত হয়ে উঠবে এবং আপনি ওইসব জীবাণুতে আর আক্রান্ত/সংক্রামিত হবেন না।

তারমানে এই নয় যে আপনি সচেতনভাবে রোগজীবাণু সংক্রমিত হওয়া সম্ভাবণা রয়েছে এমন পরিবেশে থাকবেন। সেটি উপকারী হলে, আমরা এইডসের জীবাণু, জণ্ডিসের জীবাণু, যক্ষার জীবাণু শরীরে ঢুকিয়ে নিয়ে নিজেদেরকে রোগপ্রতিরোধী করে নিতে পারতাম। কিন্তু জীবাণুর সংস্পর্শে থাকলেই রোগপ্রতিরোধী হয়ে ওঠা যায় না। রোগপ্রতিরোধী হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটি দারুণ জটিল। এই প্রকৃয়া সবক্ষেত্রে একইরকম নয়।

যেমন দেখুন, কিছু জীবাণু রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে কখনোই আমাদের শরীরে প্রতিরোধ গড়ে উঠবে না। যে রোগপ্রতিরোধী কোষেদের কথা বলেছি তারা কখনোই কিছু কিছু জীবাণুকে চিনে রাখতে পারবে না। আবার কিছু জীবাণুকে তারা চিনে রাখলেও কিছুদিন পরেই ভুলে যাবে। অনেক জীবাণু আবার নিজেকে বদলে নিতে পারে। শরীরের প্রতিরোধী কোষেরা যে জীবাণুকে চিনে রেখেছে, হয়ত সেই জীবাণুর সামান্য পরিবর্তিত স্ট্রেইনে (রূপে) আমরা আক্রান্ত হব।

সেইজন্যে, পরিবেশ আমাদেরকে রোগ প্রতিরোধী করে তোলে সেটি সত্যি হলেও আমরা গায়ে পড়ে জীবাণুর সংস্পর্শে এলেই রোগপ্রতিরোধী হয়ে উঠব না। তাতে বরং সংক্রমণের সম্ভাবণা বাড়বে।

মনে রাখুন, অতি সতর্কতা, যেমন মাটির কাছে যাওয়া যাবে না। অথবা, ধুলো লাগলেই জীবাণুরোধী দিয়ে গোসল করতে হবে। অথবা জীবাণুনাশক সাবান* দিয়ে অপ্রয়োজনে বারবার হাত ধুতে হবে সেরকম অভ্যাস ভালো নয়। সাধারণ জীবনযাপন, খোলা মাঠে খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপ ইত্যাদি অভ্যাস সুস্থ এবং উপকারী। এই অভ্যাস বরং আপনাকে রোগপ্রতিরোধী হতে পরোক্ষ বা কখনো কখনো প্রত্যক্ষভাবেও সাহায্য করতে পারে। কিন্তু সেটি কেবল বাঙালির জন্য বাঁধা নয়। সেটি সকলের জন্যেই সত্যি।
(* জীবাণু নাশক সাবান বলে কিছু নেই! যেটি আছে সেটি ল্যাবরেটরিতে ব্যবহার করা হয়। সাধারণে তা ব্যবহার করে না। সেটির নামও জানে না। প্রসাধনী কম্পানীর জীবাণু নাশক সাবান এবং কাপড় কাচা সাবানের কার্যকারিতা একই!)

মূল ব্যাপারটা কী তাহলে?

মশলা বা ভেজাল উপাদান খাবারের জীবাণু যেমন মেরে ফেলে না তেমনি আপনাকেও জীবাণুরোধী করে তোলে না। মশলা এবং ভেজাল খেলেও আপনি রোগজীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হতে পারেন। সুতরাং জীবাণু থেকে নিরাপদ থাকার জন্য আলাদাভাবে নিজের যত্ন নিন। উচ্চতাপে রান্না করা খাবার খান। পরিচ্ছন্ন খাবার খান। পরিচ্ছন্ন থাকুন।

আপনি বাঙালি বলেই আপনার পাকস্থলী লোহা খেয়ে হজম করে ফেলতে পারে তা নয়। লোহা সব মানুষই খেয়ে হজম করতে পারে! লোহা (নাট-বল্টুর কথা বলছি না) খাওয়া জরুরি। যে কারণে শ্বাস নেয়া প্রয়োজন ঠিক সেই কারণে শরীরে লোহা প্রয়োজন। কিন্তু লোহা হজম করলেও আপনার কোষের গঠন-উপাদান ইত্যাদি বদলে যায় না। আপনি মোহাম্মদ আলী, অথবা আণ্ডারটেকার হয়ে উঠলেও আপনার পাকস্থলীর একেকটি কোষ জীবাণুদের কাছে সেই চিকনা চামেলিই থেকে যায়। আপনার পাকস্থলী/শরীরের কোষেরা কখনো আণ্ডারটেকার অথবা রজনীকান্ত হয়ে ওঠে না।

পরিবেশে আপনার সম্পৃক্ততা, যেমন, খেলাধুলা দৈনন্দিন কাজে ধুলোমাটির সংস্পর্শে আসা ইত্যাদি খারাপ অভ্যাস নয়। কিন্তু অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকলে আপনি জীবাণুরোধী হয়ে উঠবেন না। বরং জীবাণুতে সংক্রামিত হবেন। মনে রাখুন, পরিবেশ থেকে জীবাণুরাও শেখে। মাটির অ্যামিবাকে ফাঁকি দিতে দিতে জীবাণুরা আপনার শরীরের রক্ষীকোষেদেরও (যারা অনেকটা অ্যামিবার মত করে জীবাণু খেয়ে ফেলে) ফাঁকি দিতে শিখে যায়! সেইজন্যে, পরিচ্ছন্ন জীবন যাপনে যতটুকু জীবাণুর সংস্পর্শে আসবেন সেটি স্বাস্থ্যকর হলেও অপরিচ্ছন্ন জীবন যাপনে বেশি রোগপ্রতিরোধী হয়ে ওঠা যায় না। (শিশুকে স্বাভাবিকভাবে পরিবেশের সংস্পর্শে আসতে দিন। এটি তার জন্য উপকারী। মায়ের ত্বক থেকে শিশুর শরীরে প্রথম জীবাণু প্রবেশ করে। সেইজন্যে মা'কে সেদ্ধ করে ফেলার প্রয়োজন নেই। মায়ের দুধের সঙ্গে শিশুর শরীরে জীবাণুরোধী উপাদানও প্রবেশ করে। মায়ের ত্বকের যে জীবাণু শিশুর শরীরে প্রবেশ করে সে সাধারণভাবে শিশুর জন্য উপকারী। এই জীবাণুরা সারাজীবন তাকে রক্ষা করে চলে।)

আপনার বাড়িতে একজন বিদেশী এসে জ্বর বাধিয়েছে অথচ আপনি এখানে ৫০ বছর আছেন, তারমানে আপনি বেশি রোগপ্রতিরোধী হবেন সেরকম কোন নিশ্চয়তা নেই। হয়তো কোন বিশেষ জীবাণু আপনাকে সংক্রামিত করে না। এমনও হতে পারে যে, অন্য একটি জীবাণু হয়ত ওই বিদেশীকে সংক্রামিত করবে না কিন্তু আপনাকে করবে। হয়তো আপনাকে যে জীবাণুটি সংক্রামিত করছে না, সেটি আপনার আপনজনকে সংক্রামিত করবে। সুতরাং একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে কোন সিদ্ধান্তে আসবেন না। বিজ্ঞানের এই যুগেও অণুজীবদের সম্পর্কে আমরা সামান্যই জানি। শুয়োরের পালেরা মানুষ না মেরে মানুষ বাঁচাবার চেষ্টা করলে হয়তো বেশি জানতে পারতাম!

প্রতিষ্ঠিত এবং সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণ এবং বিশ্লেষণে প্রমাণিত না হলে আপনি আপাত দৃষ্টিতে যা দেখছেন অথবা আপনার যা মনে হচ্ছে সেটি সত্য নাও হতে পারে। মঙ্গলের মাটিতে মানুষের তৈরি রোবট চরে বেড়াচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের এমন যুগেও এই পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ নানারকম মিথ্যায় বিশ্বাস করে!

পুনশ্চ:
এই প্রসঙ্গে আপনার যুক্তি তর্ক আলোচনা এই লেখাটিকে আরো সমৃদ্ধ করবে। আমি জানতে আগ্রহী আপনি এই প্রসঙ্গে কী ভাবছেন। বাঙালি অধিক জীবাণুসহনশীল এই ধারনার পক্ষে অথবা বিপক্ষে যেকোন মন্তব্য এই পোস্টে খুব সাদরে গৃহীত হবে।

যেহেতু আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বজনদের মাঝেই রোগ এবং সংক্রমণ বিষয়ে এই ভ্রান্ত বিশ্বাসগুলো দেখেছি। তাই আমি মনে করি আপনার অথবা আপনার স্বজনদের এরকম অনেক ভ্রান্তি সম্পর্কে জানা থাকতে পারে। সেইসব ভ্রান্তি সম্পর্কে জানালে হয়তো সেই প্রসঙ্গে পরবর্তী পর্বটি লিখতে চেষ্টা করতে পারি।

ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশিত।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ইটা রাইখ্যা গেলাম...

-- ঠুটা বাইগা

তারেক অণু এর ছবি
অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

পরবর্তী পর্ব আসিতেছে।
ভ্রান্তি ২: তারেক অণু বলে সত্যিকার কারো অস্তিত্ব আছে! শয়তানী হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি এই পর্বখান মারাত্মক হইব।

--বেচারাথেরিয়াম

অতিথি লেখক এর ছবি

হো হো হো

---- ঠুটা বাইগা

অনিকেত এর ছবি

চলুক

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

থ্যাঙ্কিউ বস হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

আমি প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলাম। এখন লেখা পড়ে শান্তি পাচ্ছি। হাসি

আলোচনায় আসি।
অনেকেই উপরোক্ত কথাগুলো বলে, তবে সবাই যে বিশ্বাস করে তা মনে হয়নি।
কেউ হয়তবা নিছক মজা করার জন্য বলে, কেউ হয়তবা "আমরা অন্তত হজম করার ক্ষেত্রে তোদের চেয়ে এগিয়ে আছি" এই ধরনের একটা মনোভাব নিয়ে বলে। মোদ্দা কথা হল, এই ধরনের কথা বলার মানুষ কম নয় এবং কারা আদতেই মজা করছে বা কারা সত্যিকারভাবে বিশ্বাস করে, তা অন্তত চেহারা দেখে বলা মুশকিল।

ছোটবেলায় আমরা চপ্পল ছাড়া বিকেলে বাইরে খেলতে যেতাম, পায়ের কোণায়, নখের চিপায় সবখানে ধুলা কাদা লেগে থাকত। আর এখন শুনি মাটিতে ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসে সয়লাব হয়ে আছে। সবখানেই চপ্পল পর। ঘরেও পর।
শহরের কথা বাদ, কিন্তু গ্রামে মাঠে খেলতে গেলেও কি জুতা চপ্পল পরে যেতে হবে?

-- ঠুটা বাইগা

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

সবাই বিশ্বাস করে না, সত্যি। কিন্তু অনেকেই সত্যি বিশ্বাস করে! কোনটা সত্যি তা সবাই জেনে রাখলেই হল। এমনিতে কেউ কৌতুক করে বললে তাতে কোন সমস্যা নেই।

ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসে সারা প্রকৃতিই সয়লাব হয়ে আছে। কিন্তু এসব বেশিরভাগ জীবাণুই ক্ষতিকর নয়। এমনিতে মানুষের সুস্থ ত্বক সাধারণ জীবাণুরা ভেদ করতে পারে না! সেইজন্য ত্বকে কাটাছেঁড়া না থাকলে চপ্পল জরুরি না!

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

লাবণ্যপ্রভা এর ছবি

খালি পায়ে হাঁটলে তো বিভিন্ন রকম কৃমির আক্রমণ ঘটতে পারে(গ্রামে অনেক পেট ফুলে যাওয়া বাচ্চা দেখা যায়), তাই না?

সত্যপীর এর ছবি

উত্তম জাঝা!

একটা কুশ্চেন অনার্যদা। অনেকেই বলে শুনি দেশের প্যারাসিটামল আমেরিকায় কাজ করেনা, ঐখানে খাইতে হয় ওদের অ্যাডভিল। এইটা সত্যি নাকি? স্থানীয় ওষুধ কি স্থানীয় জীবাণুদের প্রতি বেশি কার্যকর?

..................................................................
#Banshibir.

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

না। স্থানীয় জীবাণু বলে আসলে কিছু নেই। জীবাণুর ভিন্ন প্রজাতি/স্ট্রেইন থাকতে পারে। কোন বিশেষ ওষুধ কোন নির্দিষ্ট স্থানের জন্য নয়, বরং কোন জীবাণুর বিশেষ প্রজাতি/স্ট্রেইনের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে।

প্যারাসিটামল (বা অন্য ওষুধ) সারা বিশ্বেই একই জিনিস। কোন স্থানীয় কম্পানি ওষুধে ভেজাল দিলে সেই কম্পানির ওষুধ খারাপ হতে পারে। এমনিতে নিয়মমত মান নিয়ন্ত্রণ করা হলে, স্থান অথবা কম্পানির জন্য ওষুধ বদলাবে না। কার্যকারিতাও বদলাবে না।

কোন জীবাণুর জন্য যে ওষুধটি কার্যকর সেই ওষুধ যেখানে থেকেই কিনুন তা কার্যকর থাকবে। অরেঞ্জ জুস যে কোম্পানিরই কিনুন, বা যে দেশ থেকেই কিনুন সে তো কমলা লেবুর রসই হবে!

প্রসঙ্গত: প্যারাসিটামল জীবাণুরোধী ওষুধ নয় কিন্তু।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সত্যপীর এর ছবি

খিক খিক। প্যারাসিটামলের মধ্যে জীবাণু আমদানি করার জন্য দুক্কিত। এ বিষয়ে আমার অঢেল নলেজ কিনা।

..................................................................
#Banshibir.

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

মোঘলাই জীবাণু নিয়ে আপনি কিছু লিখলেন না! আফসোস রইল অন্তরে চোখ টিপি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সত্যপীর এর ছবি

মোগল বাদশাগুলাই একেকটা জীবাণু আছিল।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

ধুসর জলছবি এর ছবি

চলুক

রিপন মজুমদার এর ছবি

স্থানীয় জীবাণু বলে আসলে কিছু নেই

তাহলে নিপা ভাইরাসের জন্য বিশেষজ্ঞরা দেশের বিশেষ কিছু এলাকাকে চিহ্নিত করেন কেন? কেনই বা অজ্ঞাত রোগে দেশের কোন কোন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা হঠাৎ করে আক্রান্ত হয়?

ক্লোন৯৯ এর ছবি

দেশের একটা প্যারাসিটামল ৫০০ mg আর আমেরিকার একটা প্যারাসিটামল (টাইলেনল) ২০০ mg। তাই আমেরিকার প্যারাসিটামল দেশের মত কাজ করাইতে হইলে একসাথে দুইটা পীরবাবার নামে খাইয়া ফেলবেন তাইলেই কাম করবো দেশের মত হাসি

এডভিল টা আইবুপ্রুফেন গ্রুপের ঔষধ ঐটা টাইলেনলের বড় ভাই। তয় যেই পেইন কিলারই খান না কেন, ভরপেটে খাইবেন নাইলে পাকস্থলি ফুটা হইয়া যাইবো।

সত্যপীর এর ছবি

আইচ্ছা এই কথা?

..................................................................
#Banshibir.

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

পেইনকিলার খাইয়েন না রে ভাই। বিশেষত ডাইক্লোফেনাক। খুবই ক্ষতি করে। ওষুধ হচ্ছে শেষ উপায়। যত কম খেয়ে পারেন। ডাক্তার ফরমান জারি না করলে কিছুই খাবেন না। সাধারণ অনেক সমস্যার খুব চমৎকার সমাধান করা যায় ওষুধ না খেয়েও। কেন শুধু শুধু খানিকটা কেমিকেল গেলা!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

আরিফ রহমান এর ছবি

ঠিক এই বিষয়টি নিয়ে কিছু লিখবেন কি?
ব্যক্তিগত ভাবে আমি সাধারণ ব্যাপারে ওষুধ খাবার ঘোর বিরোধী। কিন্তু মাথাব্যাথা, গ্যাস, সাধারণ অন্যান্য ব্যাথা ইত্যাদি'র জন্য তো কিছু একটা লাগেই..................।
সুতরাং, উক্ত 'চমৎকার' সমাধান গুলো জানা দরকার সবার ই।
পোস্ট চমৎকার হয়েছে। সাধুবাদ।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আমি নিজে এইসব বিষয়গুলো খুব কম জানি। ব্লগ লেখার মত তথ্য আমার কাছে নেই। আর এইসব সমাধানগুলো ব্যক্তি এবং পরিস্থিতির উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। গণপরামর্শ দেয়া একেবারেই ঠিক হবে না হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই রকম দরকারী কথাগুলো ছোট ছোট উদাহরণসহ একটু সংক্ষিপ্ত আকারে লিফলেট/ফ্লায়ার আকারে প্রকাশ করা গেলে বেশ হতো। দামী কাগজের দরকার নেই, রঙিন ঝলমলে ছবির দরকার নেই। লিফলেটগুলো তাহলে গ্রামের স্কুলে স্কুলে বাচ্চাদের দেয়া যেতো, হাটবারে বা মেলায় আগত মানুষদের দেয়া যেতো, পয়লা বৈশাখ বা অনুরূপ অনুষ্ঠানে আগত মানুষদের দেয়া যেত। বিপদ থেকে, ভ্রান্ত ধারণা থেকে, বছরের পর বছর চলে আসা আজাইরা মীথ থেকে বাঁচার জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। এনজিওগুলো এমন কাজে এগিয়ে আসবে বলে বিশ্বাস করি না। সরকারের বিষয়ে যত কম বলা যায় ততো ভালো। দুই পয়সার বাতাসা বিলানোর জন্য পায়ের চাপে দুই ডজন মানুষ খুন করার মতো নোংরামী করার চেয়ে এমন দরকারী কাজে পয়সা খরচ করার মতো শুভবুদ্ধি মানুষের মনে উদয় হোক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

স্কুলের পাঠ্য বইতে বোধহয় খানিকটা লিখে দেয়া যায় এই বিষয়ে।
ঠিক বলেছেন পাণ্ডব'দা, শুভবুদ্ধিটাই হয়না কেবল আমাদের!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ধুসর জলছবি এর ছবি

স্কুলের পাঠ্যবইতে লিখে দিলে চমৎকার হত। একেবারে প্রাথমিক লেভেলের হাইজিনের ধারনা হওয়া উচিৎ এসব, কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষই জানে না।
চলুক চলুক

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আচ্ছা ইনি কী বলেন


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ইনি যা বলেছেন খানিকটা বিভ্রান্তিকর! অনেকটা অতিরঞ্জন! এবং বেশ খানিকটা ব্যবসা!

আমি সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করি,
ট্যাপের পানিতে মুখ ধুতে গিয়ে একটুখানি খেয়ে ফেলেছেন বলে আতঙ্কিত হয়ে ওঠার কিছু নেই! দাদীর সরবত খেয়ে সুস্থ হয়েছেন সেটারও কোন প্রমাণ নেই! দাদীর সরবত না খেলে উনি যে ওই একটুখানি ট্যাপওয়াটারের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়তেন তা কেউ বলতে পারেনা! যদি এমন হয়ে থাকে যে, বাড়ির ওই ট্যাপের পানি খেলেই সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে সেই পানি দিয়ে তিনি মুখ ধুতেন না!

দাদীর সরবত সত্যিই যদি জীবাণু মেরে ফেলে, তাহলে ধারনা করি ওটা খেয়ে ওনার পেট খারাপ হয়েছিল! পেটে অসংখ্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে, এরা মরে গেলে হজমে সমস্যা হয়!

এবার আসি ফ্রেশপেপার প্রসঙ্গে, এই কাগজের এমন গুণের কথা এরা বলছে যে তা সত্যি হলে হৈ চৈ পড়ে যাওয়ার কথা। একটা ব্যাগে কেবল একটি কাগজ রাখলেই সেই ব্যাগের ফলের পচন বন্ধ হয়ে যাবে (২-৪ গুণ কমে যাবে)! এইটা খুবই মারাত্মক আবিষ্কার! ওই কাগজটি সরাসরি সব খাবারের সংস্পর্শে আসছে না। তাই নিশ্চিতভাবে ওই কাগজে কোন পদার্থ থাকতে হবে যেটা ওই ব্যাগের বাতাসে মিশে গিয়ে সব ফলের সংস্পর্শে আসবে আর ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং যৌগ অণু ভেঙে দেয়ার মত এনজাইমের কার্যকারিতা থামিয়ে দেবে! সেই পদার্থ আবার জৈব পদার্থ, ক্ষতিকর নয়! এরকম কোন পদার্থ তৈরি হলে আমি যতটুকু দুনিয়াদারীর খোঁজ রাখি তাতে ভালো চমক তৈরি হওয়ার কথা! খুঁজে দেখলাম, এই সম্পর্কিত কোন গবেষণা সেই, বিজ্ঞান পত্রিকায় উল্লেখও নেই! এনারা ওয়েব সাইটে উপাদানের নাম প্রকাশ করেননি! কোথাও গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করে পেটেন্ট নেয়ার চেষ্টা করেন নি (যতটুকু দেখলাম)।

এনারা এই কাজটি কীভাবে করছেন তা আমি নিশ্চিত নই। কিন্তু আমার জ্ঞানে আমি একটি ধারনা করতে পারি।

সম্ভবত এই কাগজটি এমনভাবে তৈরি যে তা বাতাসের জলীয়বাস্প শুষে নেয়! ক্ষুদ্র পরিসরে বাতাসকে আদ্রতাশূন্য করে তোলে। ফল, সবজি সাধারণভাবেই জীবাণুরোধী। ফলের ত্বক, সবজির ত্বক যদি শুকনো হয়, তাহলে তা এমনিতেই বেশিদিন টিকে থাকবে (এই কারণে শীতের সময় খাবার ধীরে পচে)। আপনি যদি আপনার ফলের ব্যাগে শুকনো কয়লার টুকরো রাখেন তাহলেও তা বেশিদিন টিকে থাকবে! আমি একটুকরো এই কাগজ পেলে একটি পরীক্ষা করতাম। দুইটা ব্যাগে ফল এবং এই জীবাণুরোধী কাগজ রেখে দিতাম। একটিতে অতিরিক্ত রাখতাম একটা ভেজা কাপড়। দেখতাম ভেজা কাপড়ওয়ালা ব্যাগের ফল দ্রুত পচে যায় কীনা! এরা যদি ফল সবজির সঙ্গে সঙ্গে একবাটি ডালের ক্ষেত্রেও এই কাগজ একইরকম কাজ করবে বলে ঘোষনা দিত, তাহলে আমি চমৎকৃত হতাম হাসি

শুকনো রেখে খাদ্য সংরক্ষণ করা সভ্যতার মত পুরনো পদ্ধতি! এরা সেই পদ্ধতিটিকে বাণিজ্যিক করতে চেষ্টা করছে সম্ভবত। দাদীর যে সরবত খেয়ে নিজে বেঁচেছে সেই সরবতের উপাদান বাতাসে মিশে সব জীবাণু আর এনজাইমেরও(!) বৃদ্ধি থামিয়ে রাখছে, এটা হয় যুগশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার, নয়ত যুগশ্রেষ্ঠ ভণ্ডামি!

প্রসঙ্গত, এমনিতে আমাদের অনেক মশলা রোগপ্রতিরোধী। অনেক মশলা জীবাণুর বৃদ্ধি থামিয়ে দিতে পারে। কিন্তু সেই কার্যকারিতা সাধারণ রান্নার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

এবং ফল-সবজি দুচারদিন বেশি টিকিয়ে রাখার জন্য এই কাগজের দরকার নেই। সাধারণ জ্ঞানের দরকার!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনার ব্যাখ্যায় আমি মুগ্ধ। একেবারে পাকা ডাক্তার আপনি!

এটা মনে হয় শুক্লাজীর একটা প্যাটেন্ট (একটু ভিন্ন বিষয়ের)। তবে চোখ বুলিয়ে মনে হলো কাগজটার কার্যকারিতার উৎসের ব্যাপারে আপনার অনুমানই ঠিক।

তবে এই ধরনের ব্যবসায়ী বুদ্ধি/উদ্যোগ/মার্কেটিংয়ের ব্যাপারে আমার তেমন আপত্তি নেই। মিথ্যার আশ্রয় না নিলে হলো। আর মিথ্যা বললে একবার যদি সেটা ফাঁস হয়, ব্যবসা, ক্যারিয়ার, সব বরবাদ।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধন্যবাদ। কিন্তু আমি ডাক্তার নই।

আমি অবশ্য এই ধরনের ব্যবসা সবসয় খুব ভালো চোখে দেখি না। খাবার শুকনো রাখতে হবে, শুকনো রাখার জন্য ব্যাগে দুটো কয়লার টুকরো রেখে দিলেই হবে, এই তথ্যগুলো প্রচার করলে বরং বেশি মানুষের কাজে আসে। এরা যেটা করেছে, বিজ্ঞাপন দিয়ে, রং ঢং করে একটা সহজ বিষয়কে অলৌকিক বানিয়ে ফেলেছে। মানুষ ভাবছে কী না জানি মহা আবিষ্কার তারা করেছে! অথচ সবাই এই পদ্ধতি জেনে/না জেনে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করছেন!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

কিন্তু আমি ডাক্তার নই।

আপনি দেখি লুকও সিরিয়াস। খাইছে উপসর্গ দেখেই রোগ বলে দেওয়ার মতো করে কাগজের কার্যকারিতা বলে দিলেন দেখে মজা করে বললাম।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চাল্লু

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রিপন মজুমদার এর ছবি

ওই কাগজে কোন পদার্থ থাকতে হবে যেটা ওই ব্যাগের বাতাসে মিশে গিয়ে সব ফলের সংস্পর্শে আসবে আর ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং যৌগ অণু ভেঙে দেয়ার মত এনজাইমের কার্যকারিতা থামিয়ে দেবে!

ফরমালিন কি এই কাজই করে?

পথিক পরাণ এর ছবি

চলুক

দেশে মাঝে মধ্যে এনথ্রাক্সের সংক্রমণ হলে পরে ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মাংস রেঁধে খাওয়ার কথা উচ্চারিত হয়। ১০০ ডিগ্রি তাপে কি এনথ্রাক্স জীবাণু আসলেই মরে যায়?

তবে ব্যক্তিগত সহনশীলতা বলতে একটা কিছু মনে হয় আছে। কেউ কেউ দিব্যি হোটেলে বা অন্য কোথাও নোংরা বা বাসি খাবার খেয়েও ডায়রিয়া না বাধিয়ে দিব্যি হজম করে ফেলছে!

-- এই বিষয়টিতে কি একটু আলোকপাত করা যায় অনার্য দা?

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অ্যানথ্রক্সের জীবাণু দুটো অবস্থায় থাকতে পারে। একটি হচ্ছে সাধারণ কোষীয় অবস্থা। এটা ১০০ ডিগ্রীতে সহজেই মরে যায়! আরেকটা হচ্ছে এণ্ডোস্পোর। এণ্ডোস্পোর তাপ সহনশীল। তবে ১০০ ডিগ্রীতে ৩০ মিনিট সেদ্ধ করলে এটা নষ্ট হয়ে যায় বলে স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো বলে। ১০০ ডিগ্রীতে সেদ্ধ করে মাংস খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, ৩০ মিনিট সেদ্ধ করা মানে '৩০ মিনিট ধরে' সেদ্ধ করা, ৩০ মিনিট চুলায় রেখে পানি ফুটলেই নামিয়ে ফেলা নয়! এণ্ডোস্পোর সম্পর্কে খানিকটা তথ্য পাবেন একটা পুরনো লেখায়: এখানে

ব্যক্তিগত সহশীলতা কম বেশি হতে পারে। সব মানুষের শারিরীক অবস্থা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সমান নয়। সেই জন্যে, একই বাসি খাবার খেয়ে কেউ অসুস্থ হতে পারেন আবার কেউ সুস্থ থাকতে পারেন।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

অ্যান্থ্রাক্স খুব খারাপ জীবাণু। এ রোগে আক্রান্ত প্রাণীকে পুড়িয়ে ফেলতে হয় বা মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হয়। এ রোগ মানুষে ছড়ায় বলে এটিকে জুনটিক রোগ বলে। তাই এন্থ্রাক্সে আক্রান্ত গরুর মাংস না খাওয়াই ভাল। খাইলে পস্তাইতে হইব

গৌতম এর ছবি

এখন জীবাণু-ভ্রান্তিবিলাস নামে একটা বই লিখে ফেলেন।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ব্লগই লিখতে পারি কিনা দেখেন! পরের পর্ব যদি কখনো লেখা হয় হো হো হো

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

গৌতম এর ছবি

দুআ রইলো।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

আবছায়া এর ছবি

কি কন!?
"ভ্রান্তি ২: তারেক অণু বলে সত্যিকার কারো অস্তিত্ব আছে!" এইটা অন্তত লেইখেন।।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

এই বয়সেও নতুন নতুন বিষয়ে জানছি।
ধন্যবাদ।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

খালি জীবাণু দিয়া ভয় দেখান দেখি দেঁতো হাসি

অতি গুরুত্বপূর্ণ সিরিজটি নিয়মিত চলুক।

আচ্ছা এই যে আমরা ৫-৬ বছর ধরে প্রায় সবকিছুতে ফরমালিন খাচ্ছি, কাপড়ের রং খাচ্ছি, বিষাক্ত কেমিক্যাল খাচ্ছি তার তো সেরকম কোন প্রভাব সহসাই দেখছি না! দেখতে কতদিন লাগবে? ১০-২০ বছর পর কী মহামারীর মত আমরা মারা যাবো? মন খারাপ


_____________________
Give Her Freedom!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

মহামারীর মত দুম করে সবাই মরে যাওয়ার মত কিছু হবে না। কিন্তু এখনই, ক্যান্সারের সম্ভাবণা বেড়েছে, আরো বাড়বে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমেছে, শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে! এইসব বাড়বে। রোগে শোকে মানুষ বেশি মরবে। পরিচিতজন কারো না কারো ক্যান্সার হবে! নানারকম বিদঘুটে রোগ হবে! নরকের বর্ণনা কি আর লিখে কুলিয়ে ওঠা যায়!

মহামারীর মত আমরা দুম করে মরে যাব না। নরক দেখতে দেখতে মরব।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ধুসর জলছবি এর ছবি

ক্যান্সারের সংখ্যা এখনই অনেক বেড়েছে বাংলাদেশে। প্রচুর রোগী পাওয়া যায় , যে ক্যান্সারটা হওয়ার কথা সাধারণত ৫০ র উপর বয়েসে সেটা ৪০ এর মধ্যে বাধিয়ে ফেলেছে।
মহামারী হলে বরং বেচে যাব। কারন নরক দেখতে দেখতে মরার ইচ্ছে নেই। মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধরুন আমি উত্তরা থেকে নিউ মার্কেট যাচ্ছি, পথে যে পরিমাণে ধুলোবালি, আর বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মনোঅক্সাইড ও সীসায় ভরা, আমার এক সেকেন্ডের মধ্যে ফুসফুস ফেটে মরে যাওয়ার কথা, কিন্তু আমি মরিনা, তার কারণ এসবের খুব কমই আমার ফুসসুস অব্দি পৌঁছায়, প্রকৃতিগতভাবেই আমাকে এমনভাবে বানানো হয়েছে যে আমার শ্বাসপ্রশ্বাস ভেজা ঝিল্লির(নাকের) মাধ্যমে চলে, যা উৎকৃষ্ট ফিল্টারের কাজ করে। অনুরূপভাবেই আমার শরীরের ত্বকও জীবাণুর ক্ষেত্রে একই কাজ করে। যে কারণে আমাদের চারপাশে থাকা অজস্র জীবাণুর খুব কমই আমাদের শরীরে হুমকির কারণ হতে পারে।

জাতিগতভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা বেশী এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। বরং আমরা অনেক ক্ষেত্রেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করি যা অবশ্যই বেশী ক্ষতিকর। সাদারা বরং আমাদের চেয়ে ভিন্ন কালচারে অনেক সহজে অভ্যস্ত হতে পারে, তাদের দেখি বাচ্চাদের আমাদের মত পুতুপুতু করে না পেলে ছেড়ে দিয়ে বড় করে, দুই তিন বছরের বাচ্চাদের সারাদিন সুইমিং পুলে ছেড়ে দিয়ে সাঁতার শিখায়, ঠিক তা তা শেখায় যা একটি শিশুকে দ্রুত নিজের প্রতি প্রতি যত্নশীল ও স্বাবলম্বী হতে শেখায়।

জীবাণু সংক্রমনে প্রতিরোধ হিসাবে অবশই মায়ের দুধের বিকল্প নাই, কিছু দিন আগেও এক গবেষণায় দেখানো হয়েছিলো এইডস সংক্রমণের ক্ষেত্রেও মায়ের দুধ পানকারী শিশুদের ঝুঁকি অন্য শিশুদের তুলনায় ৩৭% পর্যন্ত কম। অথচ আমাদের দেশের অনেক শিক্ষিত মায়েদেরও দেখেছি এ ব্যাপারে সচেতনতার অভাব, বাচ্চার গ্রোথ বাড়ছে না, রোগা হয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে অন্য খাওয়ায় অভ্যস্ত করে ফেলে।

আমাদের সুস্থ জীবনযাপন প্রণালি ও সচেতনটাই অনেকাংশে জীবাণু সংক্রমের হাত হতে রক্ষা করতে পারে। তারমানে এইনা যে জীবাণুর ভয়ে আমারা ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকব। তাই তো? হাসি

.........
রংতুলি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সুমাদ্রী এর ছবি

ভাল একটা লেখা। আচ্ছা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেককে দেখি কাঁচ, লোহা, পাথর ইত্যাদি খেয়ে ফেলতে। এগুলো কি ভেল্কি-বাজি? না, সত্যিই এগুলো হজম হয়। স্থানভেদে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভিন্ন হয় এরকম একটা কথাও শুনি। যেমন, জঙ্গলের লোকদের শরীরে নাকি ম্যালেরিয়ার জীবানু কামড় বসাতে পারেনা, কিন্তু আমরা বান্দরবন বা রাঙামাটি ঘুরে আসার সাথে সাথেই জ্বরে পড়ি। ধূমপান, মদ্যপান এসব ক্ষতিকর। কিন্তু অনেক লোককে দেখা যায় দীর্ঘদিন ধরেও ধূমপান করেও শরীরটাকে অটুট রাখতে। ধন্যবাদ।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আমরা যাই খাই, দুটো ব্যাপার ঘটতে পারে। একটা হচ্ছে স্রেফ গলা দিয়ে ঢুকে পাকস্থলী পার হয়ে বের হয়ে যাওয়া। আরেকটা হচ্ছে হজম (পরিপাক) হওয়া। তার মানে, যা খাচ্ছি তার প্রয়োজনীয় অংশ ভেঙে আমাদের কোষে পৌঁছানো, বাকিটা বের হয়ে যাওয়া।

কাঁচ হজম হয়না। লোহা শরীরে প্রয়োজনীয়। নানা খাবার থেকে সংগৃহীত হয়। পাথরের উপাদান যদি প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ হয় তাহলে তা শরীরে গৃহীত হতে পারে। কিন্তু খুবই সামান্য পরিমাণে! অনুষ্ঠানে দেখানো লোহা পাথর কাঁচ খাওয়া সবই ভাওতাবাজি! খাবার কেন হজম হয় অথবা হয়না সেটা খানিকটা বর্ণনা আছে এই লেখাটিতে

কারো কারো মাঝে বিশেষ রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধী ক্ষমতা থাকতে পারে। কিন্তু জঙ্গলের লোকের মালেরিয়া হয়না সেটা আমি কখনো শুনিনি। আপনাদের জ্বর যে পরিশ্রমের জন্য হয় নাকি ম্যালেরিয়ার জীবাণুর জন্য হয় সেটি কি আপনারা জানেন?

ধুমপান ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সেইজন্য একজনকে দেখে এর বিপদ সম্পর্কে বলা যাবে না।
কারো দিকে ছুরি ছুঁড়ে মারলেই সে মারা পড়বে তা নিশ্চিত নয়! কিন্তু সেই সম্ভাবণা অনেক বেশি! একশোজনের দিকে ১০০টা করে ছুরি ছুঁড়লে হয়তো ৩০ জন মারা যাবে, ৪০ মারাত্মক আহত হবে, ২৫ জন হালকা আহত হবে! আবার ৫ জনের হয়তো কিছুই হবেনা! একটাও ছুরি হয়তো তাদের গায়ে বিঁধবে না! সেইরকম, ধুমপান করলে যে ক্যান্সার হবেই তা নিশ্চিত নয়, কিন্তু ধুমপান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাবে বহুগুণ!

তবে ধুমপান সাধারণত কাউকেই ছাড় দেয় না। যিনি ধুমপান করে ৬০ বছর সুস্থ আছেন বলে আপনি দেখছেন, তাঁর সম্ভবত ধুমপান না করলে ৯০ বছর সুস্থ থাকার কথা ছিল!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ক্লোন৯৯ এর ছবি

হুমম ভাল টপিক। চলুক চলুক

পরে বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছা রইল বিশেষ করে ইনেট ইমিউনিটি আর জিওগ্রাফিকাল ডিস্ট্রিবিউশান এই দুই পয়েন্টে। আপাতত এইটুকু বলতে চাচ্ছি হাইপারসেনসিটিভ যেসব জীবাণুর কথা বলেছেন তার আগে "কিছু কিছু জীবাণু" লিখলে হয়ত ভাল হত, কারণ পড়ার পরে আমার মনে হয়েছে হয়ত সব জীবাণু সেরকম এক্সট্রিম এনভায়রনমেন্টে বেচে থাকতে পারে, যেটা পাঠককে একটা ভুল মেসেজ দিলেও দিতে পারে।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আপনার আলোচনায় অপেক্ষায় রইলাম। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

স্যাম এর ছবি

দুইটা কাজ - 'জীবাণু ব্যানার' আর পরের জীবনের সচলায়তন এ অনার্য সঙ্গীত নিক না পেলেও জীবাণু সঙ্গীত নিক নেয়া দেঁতো হাসি - এত সুন্দর করে ব্লগ লিখেন কেম্নে যেখানে কমেন্ট লিখতে গিয়ে ঘাম ঝরে যায়! চিন্তিত একদিন আমরাও --- মন খারাপ

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

মন্তব্য করতে গিয়ে ঘাম ঝরে যাওয়া খুবই খারাপ। যেইটাই মনে হচ্ছে স্পষ্ট লিখে দিন। ব্লগের শান্তি হচ্ছে ওটাই হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

পরমাণুঅণুজীব এর ছবি

দারুণ একটা লিখা ! অনেক ভুল ধারণার মিটবে। ইটা রাইখ্যা গেলাম...

প্রথম যেদিন অণুজীব বিজ্ঞানের ক্লাস করতে ঢুকি সেইদিনই স্যার বলে দিয়েছিলেন - তোমাদের এখন যা করতে হবে সেটা হল অনেক কিছু ভুলে যেতে হবে যা এতদিন জেনে এসেছো। এরপরে স্যার শুরু করলেন একটার পর একটা ভ্রান্ত ধারণার অপনোদন । মাইক্রোঅরগানিজম বলতে যে সবাই খালি রোগ - জীবাণু বলে লাফাই, কিন্তু এই অণুজীবের সিংহভাগই উপকারী, আমাদের শরীর থেকে এগুলারে বের করে দিলে আমাদের যে ১৪টা বাজবে, ধরিত্রীর বায়মাসের প্রায় ৬০ ভাগই এই মাইক্রোবস, প্রায় সাড়ে তিন বিলিওন বছর আগে তাদের উৎপত্তি - এমনসব তথ্যাণু পেয়ে আসলেই অনেক কিছু নতুন করে শিখেছিলাম। স্কুলের পাঠ্যবইতে অণুজীবদের নিয়ে জীববিজ্ঞানে মৌলিক কিছু অধ্যায় থাকা উচিত। তাহলে অনেক ভুল ধারণা শুরুতেই ভেঙ্গে যাবে।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রিপন মজুমদার এর ছবি

প্রথম যেদিন অণুজীব বিজ্ঞানের ক্লাস করতে ঢুকি সেইদিনই স্যার বলে দিয়েছিলেন - তোমাদের এখন যা করতে হবে সেটা হল অনেক কিছু ভুলে যেতে হবে যা এতদিন জেনে এসেছো। এরপরে স্যার শুরু করলেন একটার পর একটা ভ্রান্ত ধারণার অপনোদন ।

আমাদের বিজ্ঞানের স্যারেরা এভাবে ক্লাস শুরু করেননি। মুখ কঠিন করে ক্লাসে ঢুকেছেন। কিছুক্ষণ রোবটের মত বক বক করে বেরিয়ে গেছেন। ভ্রান্ত ধারণার অপনোদন তো দূরের কথা।

রু এর ছবি

খুব দরকারি লেখা। লেখা হয়েছেও সবসময়ের মতো অতি চমৎকার।

ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে স্যাভ্লন আর ৯৯% ব্যাক্টিরিয়ায় কিলিং এজেন্ট ব্যবহার নিয়ে একটু লিখতে পারতেন।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

স্যাভলন, ব্যাকটেরিয়ানাশক ইত্যাদি প্রসঙ্গ অন্য কোন লেখায় লিখব আশাকরি। ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মাহবুব লীলেন এর ছবি

তোমাদের এইটা ভুল ওইটা কুসংস্কার সুতরাং আমার পবিত্র পুস্তকে যাহা আছে তাহা অনুসরণ করো

তোমার কথাবার্তা তো এক্কেবারে মিশনারি মিশনারি মনে হচ্ছে। এনজিও খুলবা নাকি?

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

স্কুল মাষ্টার হব লীলেন'দা হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

যুমার এর ছবি

আপনি স্কুল মাষ্টার হলে বেশ ভালোই হবে,অন্তত ভবিষত্যের অনেক অনার্য সঙ্গীত তো তৈরী হবে।

রিপন মজুমদার এর ছবি

হাততালি

শাব্দিক এর ছবি

জীবাণু নাশক সাবান বলে কিছু নেই!

বাজারে যেসব হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যায় এবং হাসপাতালের করিডরে রাখা অ্যালকোহল জীবাণু নাশ করতে কতটা সহযোগী?

অটো-দুটি জায়গায় 'নিম্ন' টা বোধ হয় নিন্ম হয়ে গেছে।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

"হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার" জীবাণুনাশক হিসেবে কার্যকর। ৭০% অ্যালকোহলও কার্যকর। তবে দুটোরই সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। স্যানিটাইজার যদি স্পোর, ভাইরাস ইত্যাদি ধ্বংস করার মত শক্তিশালী হয় তাহলে সেটি খুব ভালো। অ্যালকোহল স্পোর নষ্ট করতে পারে না। আর এ দুটোই হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি ইত্যাদির মত বিশেষ স্থান/প্রতিষ্ঠানের জন্য। সাধারণের ব্যাবহারের জন্য নয়।

বানান ঠিক করে নেব। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

৭০% অ্যালকোহলও কার্যকর।

আগেই কৈছিলাম ... শরাব চিজ হ্যায় অ্যায়সি ... (১টা জুক্স কর্লাম)


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

৭০% এর কাছাকাছি বোধহয় কেবল অ্যাবসিনথে পাবেন! আর কিছু আছে নাকি?

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

নৈষাদ এর ছবি

আরে চা বাগানে ৮০-৯০% রেক্টিফাইড স্পিরিট খেয়ে ফেলত - দরকারে পেট্রোল পর্যন্ত। মন খারাপ
নেসেসিটি ইজ দ্য মাদার অভ অল ইনভেনসন। মন খারাপ

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দরকারে খেত নাকি! কন্কী!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

শাব্দিক এর ছবি

শরাব চিজ হ্যায় অ্যায়সি

খাইছে

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

শাব্দিক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার লেখা, অনার্য। পাণ্ডব'দা মন্তব্যে সহমত।

ইন্টারেস্টিং হল, অনেকের সাথে অন্ততপক্ষে দুজন ডাক্তার রোগজীবাণু হজম হবার কথা বলেছে আমাকে (কিছুটা কনভিন্সিং ফর্মে... ‘রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে একধরণের ইমিউন সিস্টেম ডেভেলপ’ করেছে টাইপের)। দুটা উদাহরণ দিয়ে সাধারনত এই এই ভ্রান্তিগুলি রি-ইনফোর্স করতে দেখেছি... বিদেশের কেউ এখানে আসলেই পেটে অসুখে পড়ে ... এবং ইন্টারস্টিং উদাহরণটা হল ‘সোয়াইন ফ্লু এবং এবং সার্স’ পূর্ব দিক থেকে ত্রাস নিয়ে এগিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেই ‘ডিফিউজ’ হয়ে গেছে।

এর মধ্যে একদিন দেখলাম অনিন্দ্যর কবিতা ম্যাডামের ভিডিও... আমি তো পুরো কনভিন্স।

অনার্য, সব ঠিকঠাক বলছেন তো? মন খারাপ

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

অনিন্দ্যর কবিতা ম্যাডাম মন খারাপ
ম্যাডামদের বিষয়ে আগ্রহ নাই। তবে আমাদের স্কুলে খণ্ডকালীন কৃষিবিজ্ঞান পড়াইতে আসছিল একজন, সে-ই শেষ।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নৈষাদ এর ছবি

আরে সিরিয়াসলি নেয়ার দরকার নেই।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

না‌, না ... মজা করলাম তো ... সিরিয়াস না।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

জীবাণুর সংস্পর্শে আসলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শক্ত হওয়ার সম্ভাবণা অবশ্যই রয়েছে। সেটি আমি আমার লেখাতেই বলেছি। কিন্তু সেই সংস্পর্শ স্বাভাবিক পরিচ্ছন্ন পরিবেশে যতটা হয় ততটাই হওয়া উচিত। আবার আপনি যতই সংস্পর্শে আসুন, অনেক জীবাণুর ক্ষেত্রে আপনার কোন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে না। কিছু ক্ষেত্রে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হলেও খুবই দূর্বল বা ক্ষণস্থায়ী হবে।

রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি হওয়া সম্ভব, স্বাভাবিক এবং তা হচ্ছেও। সেটা যেভাবে বাঙালির জন্য প্রযোজ্য সেইভাবে বিদেশীর জন্যেও প্রযোজ্য। সেইজন্যে প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকা স্বাস্থ্যকর হতে পারে। কিন্তু আমার লেখায় আমি বলতে চেষ্টা করেছি, রোগপ্রতিরোধী হয়ে ওঠার সম্ভাবণা আছে সেই ভাবনা যেন আপনাকে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকতে উৎসাহিত না করে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবণাই বেশি। আপনি প্রকৃতির সংস্পর্শে থেকেছেন সেইজন্যে যেন জীবাণু পাত্তা না দেয়ার মনোভাব চলে না আসে। আপনি বাঙালি, সেই আনন্দে যেন আপনি খাবারের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে অসচেতন হয়ে না পড়েন।

পরিবেশ যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে সেটা লেখাতেই বলেছি। কিন্তু তার অসংখ্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

বিদেশের কেউ আসলেই পেটের অসুখে পড়ার কারণ জীবাণু না হয়ে খাবারের মানও হতে পারে। আবার অনেকক্ষেত্রে সত্যিই কোন বিদেশীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল হতে পারে। সেটা কিন্তু যে কোন বিচ্ছিন্ন বাঙালির ক্ষেত্রেও হতে পারে! আপনি আপনার আশেপাশেই দেখবেন কেউ বেশি সহনশীল, কেউ কম! বাঙালিদের ক্ষেত্রে এটা অনন্য কিছু নয়। বাঙালির পেটের অসুখ অন্যদের চাইতে কম হয় সেটারও কোন প্রমাণ নেই!

এই প্রসঙ্গে যিনি বাঙালির সঙ্গে বিদেশী মিলিয়ে যুক্তি দিতে চেষ্টা করেন তাঁর কাছে আমি ডায়ারিয়া জাতিয় রোগের (Diarrhoeal disease) হিসেবে বাংলাদেশের অতি নিন্ম অবস্থানের কারণটি জানতে আগ্রহী। আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে গেলে আমরা কেন তলানিতে পড়ে আছি? পেটের অসুখের হিসেবে বাংলাদেশ কেন ইউরোপিয়ান দেশগুলোর ধারে কাছেও নেই? এই দেশেই কেন পেটের অসুখে বেশি লোক মরে?

সোয়াইন ফ্লু এবং সার্স প্রসঙ্গে এইখানে ব্যাখ্যা দেয়া খানিকটা মুস্কিল, খানিকটা বিব্রতকরও! যিনি বলছেন, তিনি খুব স্পষ্ট ধারনা না করেই বলছেন বোধ করি। আমি নিজে মূর্খ শ্রেণীর, কিন্তু এইটুকু জানি যে, ইমিউনিটি তৈরি হওয়ার জন্য সংক্রমণ হওয়া প্রয়োজন। যথেষ্ট সংক্রমণ হওয়ার আগে ইমিউনিটি তৈরি হবে না! রোগের সংক্রমণ বিস্তার এবং কমে যাওয়ার হার হবে একটি বেল কার্ভের (bell curve) মত। যেই সংক্রমণ শুরু হয়ে ত্রমশ বেড়ে গিয়ে তারপর কমবে! বাংলাদেশে সেরকম কিছু ঘটেনি। তাছাড়া এই রোগগুলি কিন্তু ফুরিয়ে যায়নি। মহামারীর সম্ভাবণা এখনো রয়েছে। মহামারী যদি হয়, আমি মনে করি, তুলনামূলক এই দেশে লোক অনেক বেশি মরবে। তার কারণ রোগপ্রতিরোধী হয়ে ওঠার ক্ষমতা কম বা ওইরকম কিছু নয়। কারণ হচ্ছে আমার জনসংখ্যার ঘণত্ব, অসচেতনতা এবং চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা। (তবে আবারো বলছি, সংক্রামিতদের মাঝে প্রতিরোধ গড়ে ওঠার সম্ভাবণা অবশ্যই রয়েছে। সেই কারণে রোগ কমে যাবে সেটাও খুবই স্বাভাবিক।)

তাছাড়া সার্স, সোয়াইন ফ্লু তো পৃথিবীর অনেক দেশেই ছড়ায়নি। তাহলে শুধু বাংলাদেশের প্রসঙ্গ কেন আসবে? এই প্রসঙ্গটি বিব্রতকর এইজন্যে যে এটা খানিকটা অন্ধ বিশ্বাসের মত। বিশ্বাসী লোকের শিশু গাড়ি চাপা পড়তে পড়তে বেঁচে গেলে তিনি নিশ্চিত হয়ে যান যে সেটা সাধুর কেরামতিতে হয়েছে। কিন্তু তিনি কখনোই ভেবে দেখন না, তার শিশুটি সৌভাগ্যবশত বেঁচে গেলেও অন্য ১০টি শিশু গাড়ি চাপা পড়েছে। সাধু তাদেরকে রক্ষা করতে পারেনি! তাতে অবশ্য ওই সাধুর অলৌকিক ক্ষমতা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ জাগে না!

আপনার মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো নৈষাদ'দা। আপনার আরো কোন সন্দেহ থাকলে জানান। আমি কোন প্রশ্নের জবাব পরিষ্কার করে না দিতে পারলেও জানান। স্পষ্ট করার চেষ্টা করব। সবার শোনা যুক্তিগুলো জানতে পারলে উপকার হবে। কবিতা ম্যাডামের প্রসঙ্গে ওই মন্তব্যেই আলোচনা করেছি। আরো কোন প্রশ্ন থাকলে জানাতে পারেন।

প্রসঙ্গত, বাঙালি যে অলৌকিক জাতি নয় সেটা কিন্তু কোন খারাপ খবর নয়। বাঙালির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য সব জাতির মতই। পুষ্টিহীনতা সেই ক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে পারে হয়ত। সেই বিষয়েও সচেতনতা দরকার।

আমার জানাশোনা নিতান্ত অল্প। বিজ্ঞানে গরমিল না করে ফেলি সেই চেষ্টা করেছি। কিছু ভুল বলে থাকলে কেউ সেটা ধরিয়ে দেবেন বলে আশা করে আছি হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

নৈষাদ এর ছবি

'সব ঠিকঠাক বলছেন তো' - মজা করে বলেছি। আমার কোন কনফিশন নেই।

অতিথি লেখক এর ছবি

অত্যন্ত চমৎকার লেখা, ভালো লাগলো।

তবে স্থান কাল পাত্র ভেদে একেক জাতি যে একেকটা রোগের বিরুদ্ধে অনেক বেশী প্রতিরোধী হয়ে ওঠে,পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষদের থেকে, এরকম ঘটনা তো ইতিহাসে আছে, তাই না?

এর একটা বিখ্যাত উদাহরণ হতে পারে পঞ্চদশ/ষোড়শ শতাব্দীতে স্প্যানিশ দখলদারদের আমেরিকা অনুপ্রবেশ। এদের সাথে যখন স্থানীয় "রেড-ইন্ডিয়ান"/ইনকা ও অন্যান্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীর যুদ্ধ শুরু হয়, তখন দেখা যায়, ইউরোপিয়ানদের আনা বিভিন্ন রোগজীবাণুই স্থানীয়দের মেরে শেষ করে ফেলছে প্রায়। মূলত স্মলপক্স আর অন্যান্য প্রচলিত ইউরোপইয়ান রোগ যেমন প্লেগ, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদির কারণে।

এর ব্যাখ্যায় জীববিজ্ঞানীরা মোটামুটি সবাই দেখি একমত--- অনেক প্রজন্ম থেকে ইউরোপে চলতে থাকা এই রোগগুলোর প্রতিরোধ ব্যাবস্থা ইউরোপয়ানদের শরীরে অনেকখানই তৈরী হয়ে গিয়েছিল (ন্যাচারাল সিলেকশন?), অন্যদিকে, প্রায় সম্পুর্ণই ভিন্ন একটা বায়োস্ফিয়ারে থাকা আমেরিকান স্থানীয়রা এইসব রোগের কবলেও পড়েনি, তাই রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থাও গড়ে ওঠেনি, তাই এইসব রোগের সংস্পর্শে এসে তাদের গণহারে মৃত্যু ছিল প্রায় অবধারিত।

সেই হিসাবে, আপনার "ভ্রান্তি-১" টা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সত্যি হতেও পারে।

------দিফিও

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

এই প্রসঙ্গে আমি খানিকটা বলেছি। খুব বিস্তারিত বলার উদ্দেশ্য এই লেখাটি ছিলনা। কোন জীবাণুর সংস্পর্শে আসলে ইমিউনিটি গড়ে ওঠার খুবই সম্ভাবণা রয়েছে। আমরা যতক্ষণ বেঁচে থাকি সেই সবকটি মুহূর্ত আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু ইমিউনিটি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াটি জটিল। সেটি সবক্ষেত্রে সমান কার্যকর নয়!

এই লেখাটির উদ্দেশ্য হচ্ছে বোঝাতে চেষ্টা করা যে, ভ্রান্তির বশে কেউ যেন নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত না ভাবেন। কোন ব্যক্তির ভেতরে অসংখ্য রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকতে পারে। আবার অসংখ্য ক্ষেত্রে প্রতিরোধ থাকবে না, সেটাই স্বাভাবিক। বাঙালি বলে কেউ ঝুঁকিমুক্ত নয়।

এই ভ্রান্তি আমি আমার পরিচিত মহলে দেখেছি। ময়লা খাবার খেয়ে নিচ্ছেন শুধু এই বিশ্বাসে যে তিনি বাঙালি! নোংরা পানি পান করছেন ওই একই বিশ্বাসে! শুধু খাবারের কথা উল্লেখ করলাম। সংক্রমণ তো আরো অসংখ্যভাবে হয়!

অথচ সুস্থতার হিসেব করলে আমরা হিসেবেরই বাইরে পড়ব! স্রেফ ডায়ারিয়ায় শিশুমৃত্যুর হিসেবে আমরা সপ্তম দেশ! কোথায় বাঙালির রোগপ্রতিরোধ?

বাঙালিরা জাতিগতভাবে কোন (একটি হলেও) সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়না অথবা তাদের কোন বিশেষ রোগের বিপরীতে ইমিউনিটি আছে সেটা আমি মানতে রাজি নই! কেউ কোন গবেষণা প্রমাণ দিলে মানতে পারি। কিন্তু আমার জানামতে সেরকম কোন পরীক্ষা করা হয়নি। এবং আমার জ্ঞান বলে, পরীক্ষা করলেও সেরকম কোন ইমিউনিটি থাকবার সম্ভাবণা নেই! যদি থাকত, তাতে আমি খুশিই হতাম। হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক ঠিক আছে, আপনার ফোকাসটা বুঝেছি।

--দিফিও

চরম উদাস এর ছবি

চলুক
দারুণ সিরিজ

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ক্লোন৯৯ এর ছবি

(এখানে মেইন ফোকাসটা থাকবে সাধারণ ডায়ারিয়া নিয়ে। আবুল কাকু=বস্তির ছেলেপেল; কালো বিড়াল=গুলশানের ছেলেপেলে)

আবুল কাকু জানে কি করে দেশে ম্যানেজ করে চলতে হয়। তাই হাজারটা দুই নাম্বারি করেও এতদিন কোন সমস্যা হয় নাই, কারণ তার পথঘাট সবই চেনা। অন্যদিকে কালো বিড়াল প্রথম বারের মত মন্ত্রী হয়ে দুই নাম্বারি করতে যেয়ে ধরা খেয়ে নাকানি চুবানি খায়, কারণ তার প্রাইমারি ডিফেন্স অব মেকানিজম সম্পর্কে ঠিকঠাক আইডিয়া ছিল না। তবে পরেরবার আবার যদি সুযোগ পায় তাইলে সে আর এই ভুল করবে না ধরাও খাবে না, কারণ সেও এখন আবুলের মত পথঘাট চিনে ঘাগু হয়ে গেছে। তাহলে ব্যাপারটা কি দাড়াচ্ছে, এক্সপোসার এবং প্রাইমারি ডিফেন্স অব মেকানিজম বা ইনেট ইমিউনিটি আরও স্পেসিফিকালি বললে মিউকোসাল ইমিউনিটি।

আমি যখন প্রথম "সাধারণ" ডায়ারিয়া করে এমন দূষিত পানি/খাবার খাব তখন আমার পেট খারাপ করবে ১ থেকে ১০ এর স্কেলে হয়ত ৮ পরের বার করবে ৬ তার পরের বার করবে ১ অথবা ০। কারণ, এতবার এক্সপোসার হতে হতে আমাদের শরীর জেনে যাবে কি করে সেই "সাধারণ ডায়ারিয়া" -কে মোকাবেলা করতে হবে। তাই এই এঙ্গেলে চিন্তা করলে বস্তির ছেলেপেলে গুলশানের ছেলেপেলেদের থেকে ডিফেন্স অব মেকানিজমের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকবে, কারণ গুলশানের ছেলেপেলে হয় ফিল্টার করা বা ওয়াসার পানি "ফুটিয়ে" পান করবে বা স্বাস্থ্য্ সম্মত খাবার খাবে, তাই তাদের এক্সপোসারটা হবে ইনফ্রিকুয়েন্ট এবং সাথে সাথে ইমুনিটি কমতে থাকবে ঠিক একই সময়ে বস্তির ছেলেপেলদের ইমুনিটি থাকবে প্রায় একই রকম। তাই যখন গুলশানের ছেলেপেলে হঠাৎ করে একদিন টং দোকানের পানি/খাবার খাবে যেটাতে "সাধারণ ডায়ারিয়'' করার মত জীবাণু থাকবে, তখনই ডায়ারিতা ভুগবে ৬/৮ এর স্কেলে, কিন্তু বস্তির ছেলেপেলে ভুগবে না। তাই বস্তির ছেলেপেলে প্রতিদিন সাধারণ ডায়ারিয়ার কারণে পাতলা হাগু করবে না। [ফিল্টার করার থেকে ওয়াসার পানি ভাল করে ফুটিয়ে খাওয়া ভাল, কারণ এটা এক ধরণের ভ্যাকসিন হিসেবে কাজ করে এবং আপনাকে সুরক্ষা দেয় সাধারণ ডায়ারিয়া থেকে]

সেই একই কারণে আবুলকাকু যখন ফরেনে গিয়ে দুই নাম্বারি করতে চার তখন ধরা খেয়ে যায় কারণ সে কানাডার সিস্টেম জানে না। তাই যখন কোন বিদেশী আমাদের দেশে আসে প্রথমেই তারা ডায়রিয়ায় ভুগে যাকে বলে "ট্রাভেলার্স ডায়ারিয়া"। তার মানে এই না যে আমরা বেশী সবল "সাধারণ ডায়ারিয়া" প্রতিরোধে। যেমন ধরুন হাইতিতে যে কলেরা মহামারি হল কবছর আগে, তার কারণ হিসেবে ম্যাকালোনাস দাদু ফতোয়া দিলেন এক নেপালি ভলানটিয়ার পেটে করে যেই স্ট্রেইনটা নিয়ে আসছিল নেপাল থেকে সেটা যখন সে হাগুর মাধ্যমে ছ‌ড়িয়ে দিল, ব্যাস তাতেই কম্ম সাবার, সেই নেপালি বেটা দিব্বি হেসে খেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে এখনও আর এইদিকে ৪,৬৭২ জন হাইতিয়ান পটল তুলে স্বর্গে ধান ভানছেন http://en.wikipedia.org/wiki/2010%E2%80%932011_Haiti_cholera_outbreak

আবার একই রকম ভাবে আপনি যদি জাপানিদের মত কুচ কুচ করে কাচা মাছ খাওয়া শুরু করেন তাহলে আপনি আর বাথরুম থেকে বেরই হতে পারবেন না কয়েকদিন। তাই সব কথার শেষ কথা এক্সপোসার!!

তারমানে এই না যে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যারা থাকে তারা বেশি শক্তপোক্ত হয় সুস্হ পরিবেশ থেকে, কারণ সেই পরিবেশে শুধু সাধারণ ডায়ারিার জীবাণুই না আরও মারাত্বক "অসাধারণ ডায়ারিয়া" করে এমন জীবাণুও থাকে, তবে সেটা সব সময় না। যেমন কলেরা, সিগেলা বা রোটা ভাইরাস জনিত ডায়ারিয়া। সেটা এখম আলোকপাত না করলেও চলবে কারণ এইসব ভাইবেরাদারগণ বড্ড বেয়াদপ। এরা বছরের পর বছর আমাদের হাগিয়েই চলেছে এবং চলবে যতদিন না আমরা একটা ভাল ভ্যাকসিন পাচ্ছি মন খারাপ

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ক্লোন ৯৯ রেগুলার লিখেন না ... ইন্টারেস্টিং লাগল।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ক্লোন৯৯ এর ছবি

নারে ভাই আমারে দিয়ে লেখালেখি হবে না!! আর আমার লেখার যেই স্টান্ডার্ড সেইটা মডুরামের দরজা পার হবে না কনফার্ম।

ইন্টারেস্টিং লাগার জন্য ধন্যবাদ হাসি বি‌ষয়টা আসলেই খুব ইন্টারেস্টিং অনেকটা "অণুজীবের মনোবিজ্ঞান" (মাইক্রোবস সাইকলজি) বলতে পারেন।

ক্লোন৯৯ এর ছবি

(এখানে জিওগ্রাফিকাল ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে ফোকাসটা থাকবে)

আগে সব্বাই ভাবত মশল্লাযুক্ত খাবার খাইলে নাকি পেটের আলসার হয়। তাইলে কি সাদাদের আলসার হয় না, কারণ তারাতো খালি সিদ্ধ খায়। ঐ বেটারা যে মদ খায় তাই ওদের আলসার হয়। সহজ সমাধান!! কিন্তু ১৯৮২ সালে মার্শাল মামু হেলিকোব্যাকটর পাইলরি নামক ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করে দেখাইলেন যে এই বেটারাই নাটের গুরু পেটের আলসার আর স্টমাক ক্যানসারের জন্য মশল্লা বা মদমুদ কিছু না এর ধারে কাছে। http://en.wikipedia.org/wiki/Helicobacter_pylori

ধনী গরীব নির্বিশেষে পৃথিবীর ৫০% লোকের স্টমাকে এই ব্যাকটেরিয়া আছে কিন্তু সবাই আবার ডিসিজ ডেভলপ করে না। আবার দেখা গেছে বাংলাদেশে যেই স্ট্রেইনটা বেশী আলসার করে সেইটা আবার কলকাতার লোকদের করে না যদিও তারা একই এথনিক গ্রুপভুক্ত। তাই ককেশিয়ানদের যেই স্ট্রেইনটা ডিসিজ করবে সেইটা আবার আমাদের বা ক্যালকেশিয়ানদের করবে না। যদিও তারা সবাই একই গ্রুপভুক্ত ব্যাকটেরিয়া তাই তাদের ট্রিটমেন্ট অব রেজিমেন একই হবে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটেরের (এন্টাসিড) সাথে সাথে দুইটা/তিনটা এন্টি-বায়োটিক যেমন ক্লারিথ্রোমাইসিন, টেট্রাসাইক্লিন, এমোক্সিসিলিন বা মেট্রোনিডাজল। এখন আপনে যদি বাংলাদেশের রোগীরে মেট্রোনিডাজল প্রেসক্রাইব করেন তাইলে আমি শরীরের যে কোন জায়গায় হাত দিয়া বলতে পারি সে কোনদিন সুস্থ হবে না এই আলসার থেকে উল্টা আরও খারাপ হবে। বাংলাদেশী আর কোনদিন পেট খারাপের ওষুধ এমোডিস/ফ্লাজিল দুই-একটা খায় নাই আবার হাগু টাইট হয়ে যাবার পরে কোর্স কমপ্লিট করে নাই এরকম উদাহরণ ভুরি ভুরি দেয়া যাবে আর মহিলাদের কথা না হয় বাদই দিলাম উনারাতো এই ঔষধ এমনি এমনি খান। যাইহোক বাংলাদেশের এক গবেষণাতেই সেই রকমই দেখা গেছে যে প্রায় ৮০% বাংলাদেশী মেট্রোনিডাজল রেসিটেন্স। কিন্তু পশ্চিমে আবার এইটা মহৌষধ। এইখানে দুইটা পয়েন্ট আছে:

১) একই ব্যাকটেরিয়া কিন্তু সব স্ট্রেইন সবাইরে এটাক করে না;
২) একই ব্যাকটেরিয়া কিন্তু একই ওষুধ দিয়া সবাইরে মোকাবিলা করা যায় না।

কারণ হইল হোস্ট মানে আমরা। আমাদের ডিফারেন্স এর কারণে ব্যাকটেরিয়ার তরিকাও বদলায়ে যায়। আমরা একজন আরেকজনের থেকে আলাদা তাই সবাই সব রোগে ভুগি না আবার কিওরও হই না। এই যেমন ধরেন নিউমোনিয়ার (স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি) যেই ভ্যাকসিন আমেরিকায় কাজ করে ৮০% বাংলাদেশে সেইটা কাজ করবে ৩০%। কারণ যেসব সেরোটাইপ দিয়ে ভ্যাকসিনটা বানানো হইছে সেইটা আমেরিকায় নিউমোনিয়া করার জন্য বেশী দায়ী। (ওষুধ কোম্পানির কেউ থাকলে আমার মুন্ডুপাত করবে!!)। শুধু তাই না, বাংলাদেশে সেরোটাইপ ৭এফ পয়লা আসামী কিন্তু ভারতে ১৪বি আর ফাকিস্তানে মনে হয় ১৯সি (১৯৯৯ সালের আলোকে বলছি, এখন চেন্জ হতেও পারে প্রিভেলেন্স)। ভাইরাসের ক্ষেত্রেও একই হবার কথা। ধরা যাক রোটা ভাইরাসের যেই স্ট্রেইনটা বাংলাদেশে চাইল্ড ডায়ারিয়া করবে সেইটা হয়ত ভারতে করবে না। (আগ্রহীরা পাবমেড করে দেখতে পারেন http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed)। এইখানে মেজর পয়েন্টটা হইল গিয়া পরিবেশ বাংলায় যারে বলে জলবায়ু। তাই যখন বিদেশী কোন জীবাণু বাংলাদেশেরে আকাশসীমায় প্রবেশ করে তখন এইখানের লোকাল মাস্তানদের সাথে ফাইট করেই তাকে রোগ ছড়াইতে হয়। আসলাম আর সমানে রোগ ছড়ানো শুরু করলাম এত সস্তা না।

যদি ফাইট করে না পারে তাইলে তারা একটা আতাত করে বলে ভাই আসো আমরা অদল-বদল করি, আমি তুমারে একটা জিন দিব আর আর তুমার একটা জিন নিব। তখন তাদের ক্ষতিকর জিনটা আস্তে করে লোকাল ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের মধ্যে "হান্দাইয়া" দেয় আর ভাল জিনটা নিয়া নেয়। তাই সেইসব সোনার টুকরা ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস গুলা যখন বংশবৃদ্ধি করা শুরু করে নিজের অজান্তেই তারা এক-একটা টাইম বোম হয়ে যায় আর আমাদের হাগাইয়া-মুতাইয়া ছাড়ে। আরও একটা জিনিষ প্রকৃতিতে সবসময় ঘটে যেইটারে বলে "হরাইজেনটাল জিন ট্রাস্সফার"। ধরেন একটা ব্যাকটেরিয়া/ভাইরাস ইন্তেকাল করলেন কিন্ত তার ডিএনএ তো আর নাই হয়ে যাবে না মাহফুজ ভাইয়ের মত গোসল করার সাথে সাথে, সেই ডিএনএ তখন খেয়ে ফেলবে তার পাশের বেচে থাকা অন্যকোন ব্যাকটেরিয়া/ভাইরাসে। এই হরাইজেনটাল ট্রান্সফার বা এললিক এক্সচেন্জের ফল ভালও হতে পারে আবার খারাপও। যদি সারসের মত কোন জিন হোমোলোগাস রিকমবিনেশন হয়ে যায় কোন মিউটেশন ছাড়াই তাইলে হবে মহামারী আর যদি না হয় (সেইটাই আমরা সবাই চাই) তাহলে সবাই সুখে শান্তিতে থাকতে পারবো। তাই এই পয়েন্টে বাংলাদেশীদের ইমিঊনিটি বেশির থেকে আমি পরিবেশ পরিস্থিতিকেই বেশি গুরুত্ব দিব।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আপনার দুটি মন্তব্যই আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। কোন কোন ক্ষেত্রে ইমিউনিটি তৈরি হবে কোন কোন ক্ষেত্রে হবে না প্রসঙ্গে দুটি মন্তব্য একত্রে একটা আস্ত ব্লগ হতে পারত। আমার অনেকগুলো লেখা আছে ইমিউনিটি সম্পর্কিত। আমি মূলত ওই প্রসঙ্গেই লিখি। কিন্তু সরাসরি জিউগ্রাফিকাল ডিস্ট্রবিউশন এবং ইমিউনিটি মিলিয়ে কোন লেখা নেই। আপনি এই প্রসঙ্গে (সব প্রসঙ্গেই) আমার চাইতে অনেক ভালো লিখবেন। লেখার আমন্ত্রণ রইল।

আপনার মন্তব্য দুটো বক্তব্যের মত লেগেছে। আমি বুঝতে পারিনি আপনি কোথাও আমার লেখার ভুল সম্পর্কে বলেছেন কিনা। সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় বিস্তারিত বলেছেন, যেটা খুবই চমৎকার লাগল।

কয়েকটি প্রতিমন্তব্য রয়েছে,

- ইমিউনিটির দুইটা পর্যায়কে আলাদা করা কঠিন। কিন্তু সরলভাবে ইনেট ইমিউনিটি 'এক্সপোজারে' কখনো শক্ত হবে না!
- অনেকক্ষেত্রেই কখনো ইমিউনিটি তৈরি হবে না, কখনো খুব ক্ষণস্থায়ী তৈরি হবে। এই প্রসঙ্গটি লেখাতেই উল্লেখ করেছি। এটি কোন অলৌকিক রক্ষাকবজ নয়।
- রেজিস্ট্যান্স এবং জিন ট্রান্সফার বিষয়টা খুব সংক্ষেপে "বিপথগামী ব্যাকটেরিয়া" নামের একটি লেখায় লিখেছিলাম। আগ্রহী হলে পড়ে দেখতে পারেন। তারপর হয়তো নতুন একটা লেখাও দিতে পারেন।

কিছু কিছু স্থানে নতুন স্ট্রেইনের সংক্রমণ এবং তার ফলে গাঁ উজাড় হয়ে যাওয়ার উদাহরণ হচ্ছে বাঙালির পেটে সব সয় ভ্রান্তির পক্ষে সবচে বড় খুঁটি। উদাহরণটা জাঁদরেল এবং আংশিক ভাবে প্রমাণও বটে। একটা আস্ত ব্লগ লিখে এই প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু, ওই উদাহরণের ভরসায় অসচেতন না হওয়ার জন্য সব পাঠককে অনুরোধ করি। জাতিগতভাবে পাওয়া শক্ত রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতার পরেও বাঙালি সংক্রামক রোগে কুপোকাত হওয়ার জাতিগুলোর মধ্যে প্রথম কাতারে আছে। বাঙালিত্ব কাউকে রোগ থেকে বাঁচাতে পারছে না!

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ক্লোন৯৯ এর ছবি

(গতকালের করা মন্তব্য আসে নাই!! আবার দিচ্ছি)

না আপনার লেখার ভুল সম্পর্কে কিছু বলি নাই। তবে বলতে পারেন কিঞ্চিৎ দ্বিমত পোষণ করেছি। আমাদের লাইনটাই যেহেতু একটু হাইপোথেটিকাল তাই একটু ভিন্ন এঙ্গেলে দেখলে বা বললে অন্যরকম শোনায় হয়ত অথবা আমিই হয়ত ঠিকমত লিখতে পারি নাই যা লিখতে চাইছিলাম। আপনার প্রায় সব লেখাই আমার পড়া। আপনি খুব ভাল লেখেন।

তবে আবারও একটু দ্বিমত আছে ইনেট ইমুনিটি বিষয়ে। প্রাথমিক রক্ষাকবচ হিসেবে এরাই কাজ করবে যদি না "ফরেন বডি" এদেরকে বাইপাস করতে পারে। আর যেহেতু ইনেট ইমুনিটি IgG তৈরী করবে না, করবে শুধু IgA তাই কনসাটান্ট এক্সপোসারটা জরুরী যাতে আমরা সবসময় IgA পাই। কিছু রেফারেন্স দেখতে পারেন:
http://www.plosone.org/article/info%3Adoi%2F10.1371%2Fjournal.pone.0031646 ; http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20237063 ; http://www.plosone.org/article/info%3Adoi%2F10.1371%2Fjournal.pone.0027030

তবে আমার কমেন্ট দুটোর শানে নজুল ছিল শুধু বাঙালি না প্রায় সব জাতি গোষ্ঠীই কোন না কোন বিশেষ অণুজীবের বিপরীতে রোগ প্রতিরোধে পারদর্শী, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মানুষরা (এই বিষয়ে একটু ডিটেলস লেখা যেতে পারে। পরে লিখছি)

তবে অবশ্যই আমাদের সচেতন থাকতে হবে, যতটুকু সম্ভব পরিস্কার পানি এবং খাবার খেতে হবে। তবে এখানকার (আমেরিকায় আমার ছেলের ডাক্তারের রেফারেন্সে বলছি) ডাক্তাররা বলেন একটু আধটু "কিচেন ওয়েস্ট" খাওয়া ভাল এতে ইমুনিটি ডেভেলপ করে। যেমন ধরুণ দুধের বোতল বা বাচ্চার প্লেট-চামুচ প্রতিদিন সিদ্ধ বা সাবান-পানিতে না ধুয়ে শুধু কলের পানিতে রিন্স করে ব্যবহার করা।

বাঙালি সংক্রামক রোগে কুপোকাত হওয়ার জাতিগুলোর মধ্যে প্রথম কাতারে আছে।

রোগের স্পেসিফিক নামগুলো দিলে হয়ত বিস্তারিত আলোচনা করতে পারতাম হাসি

ধন্যবাদ।

রিপন মজুমদার এর ছবি

শুধু কলের পানিতে রিন্স করে ব্যবহার করা।

"শুধু" শব্দটির আগে "মাঝে মাঝে" ব্যবহার করতে হবে না?

অর্ফিউস এর ছবি

পচানো পোকা আদিবাসীরা খায় নাকি? ছিছিছি, শুনেই ঘেন্না হচ্ছে। আপনি কি অভ্যাস করলে খেতে পারবেন? আমার মনে হয় না!!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।