অর্থনীতি , বাংলাদেশ, এবং কিছু এলোমেলো ভাবনা

রাগিব এর ছবি
লিখেছেন রাগিব (তারিখ: রবি, ০১/০৬/২০০৮ - ১০:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অর্থনীতি সম্পর্কে আমার পড়াশোনা একেবারেই কম ... প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা কোর্স নিয়েছিলাম, প্রয়াত গোলাম মহিউদ্দিন স্যারের কাছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশনের আরেকটা কোর্সেও কিছু পড়েছিলাম। ব্যস, এখানেই আমার অর্থনৈতিক পড়াশোনা শেষ। নিতান্তই অর্থমূর্খতার কারণে অনেক কিছুর শানে নযুল বুঝতে পারিনা। কারিগরি বিদ্যার দৌড়ে যোগ বিয়োগের হিসাব মিলাতে চেষ্টা করি, সব সময় মিলেনা ...

এরকম বড় একটা না বোঝার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের অর্থনীতির হালের দশা। প্রকৌশলী বন্ধু বা অনুজদের যারাই দেশে রয়েছে, প্রায় সবাই শুনি কোনো না কোনো মোবাইল ফোন কোম্পানিতে কাজ করছে। দেশে গত বছর দুয়েকে যে দুবার গেছি, পত্র-পত্রিকা, রাস্তা ঘাট, টিভি/রেডিও সর্বত্র মোবাইল ফোন কোম্পানির গুনগান, প্রচারণা, এসব দেখেছি। প্রায় সবার হাতেই একটা বা দুটো মোবাইল/ সিম তো আছেই।

আমার স্বল্প জ্ঞানে যা বুঝি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মূলত দুই রকমের ... উৎপাদন-ভিত্তিক, এবং সার্ভিস ভিত্তিক (সার্ভিসের বাংলা করা হয় "সেবা", কিন্তু এ ক্ষেত্রে "সেবা" বলাটা একেবারেই বেমানান লাগছে)। কলিমুদ্দিন সার/বীজ/বর্গার পেছনে বিনিয়োগ করে এবং গতর খেটে ধান চাষ করে বাজারে বেচে যে মুনাফাটা করছে, সেটা উৎপাদন। গার্মেন্টসের ব্যবসায়ীরা কাপড় আমদানী করে সেলাই করে বিদেশে রপ্তানী করে যে টাকাটা কামাচ্ছে, সেটাও উৎপাদন। এসব খাতের আয়টা দেশের লোকেই পাচ্ছে।

কিন্তু সার্ভিস ভিত্তিক কোম্পানীর ব্যাপারটা আলাদা ... মানুষের কাছে সার্ভিস বেচে টাকা কামানোর বড় উদাহরণ হলো মোবাইল কোম্পানি। আমার চিন্তাটা তখনই আসে, যখন দেখি, ভোডাফোন থেকে শুরু করে জাপানের এনটিটি পর্যন্ত সবাই হন্যে হয়ে বাংলাদেশের মোবাইল খাতে ঢুকতে চায়। এরা কেউ যেহেতু দাতব্য তহবিল খুলে বসেনি, তাই সহজ মুনাফা না থাকলে এদের এপথে যাওয়ার কথা না।

দক্ষিণ এশিয়াতে, এমনকি সারা বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল মোবাইল ফোন সার্ভিসের বাজারগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আগে থাকছে, এতে আনন্দিত হওয়া দরকার কি না, আমার কারিগর-মস্তিষ্কে তা ঢোকে না, পরিচিত সবাই চাকুরি পেয়ে সুখে আছে ঠিকই, কিন্তু মোবাইল কোম্পানিগুলোর খরিদ্দার বাংলাদেশের আম জনতা, আর মালিক সব বিদেশী কোম্পানি, এটা দেখে চিন্তা বাড়তে থাকে। কলিমুদ্দিনের কাছ থেকে আগে নরওয়েজীয়/জার্মান/আরব/জাপানি কোনো ব্যবসায়ীর পক্ষে ১০টাকা বের করে নেয়া অসম্ভব ছিলো হয়তো, কিন্তু এখন কলিমুদ্দিন মাঝা সাজে কাউকে মোবাইলে ফোন দিচ্ছে, আর প্রতি কলেই জার্মান/আরব/জাপানি/নরওয়েজীয়/ কোনো বণিকের হাতে মোটা অংকের টাকা চলে যাচ্ছে। ব্যাপারটা সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের মতো বলে ঠাহর হয় ... কিন্তু অর্থনীতিতে নিতান্তই অশিক্ষিত আমি সাহস করে জোর গলাতে বলতে পারি না। যেখানে মোবাইল কোম্পানিরা চুরি করে ধরা পরে বিনা বাক্যব্যয়ে ১৫০ কোটি টাকা জরিমানা বের করে দিতে পারে, সেখানে তারা বছরে কতো হাজার কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে, তা আন্দাজ করতে পারি।

তাই বাংলাদেশের মোবাইল ফোন আর তার কল্যাণে গাড়ি বাড়ি হাঁকানো প্রকৌশলীদের চকচকে চেহারা দেখে ভয় হতে থাকে, গাড়ির কাঁচের ফাঁক দিয়ে কেনো যেনো দেখতে পাই ছিবড়ে হয়ে যাওয়া কলিমুদ্দিনের রক্ত চুষতে থাকা নরওয়েজীয়/জাপানী/মিশরী ভ্যাম্পায়ারগুলোকে। নীলচাষীদের রক্তখেকো নীলকরেরা লজ্জ্বায় মুখ লুকোয়, কিন্তু হায়, দীনবন্ধু মিত্র কোথায় আজ, নীল দর্পন কে লিখবে? আজকের আজম খান/বাচ্চু/হায়দার হোসেনেরা তো বিক্রি হয়ে গেছে মোবাইল কোম্পানির নব্য নীল কুঠিতে।

--------

(ভুট্টা ক্ষেতের মাঝে পথচলা এক গণক মিস্তিরির নিতান্তই এলোমেলো ভাবনা। গুরুতরভাবে না নিলে আর অর্থনৈতিক জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে বাধিত হবো)


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

অসাধারণ একটা লেখা। শেষের আশংকাটা আসলেই সত্য। যাদের প্রতিবাদ করার কথা ছিল তারা সবাই বিক্রি হয়ে গেছে মোবাইল কোম্পানীগু্লার কাছে। নীল দর্পন লেখার মানুষের বড় অভাব আজ।

কিন্তু মোবাইল কোম্পানীগুলো কি আসলেই কলিমুদ্দিনের রক্ত শুষে খাচ্ছে? টাকা ওরা অনেক কামাচ্ছে এইটা ঠিক...কিন্তু কমি্মুদ্দিনের কাজেও তো লাগছে। প্রতি মিনিট ১ টা করে কলিমুদ্দিন ঘরে বসেই কতো কিছুর খোঁজ নিতে পারছে। এতে তো তার সুবিধাই হচ্ছে।
--------------------------------

রাগিব এর ছবি

আমি আসলে অর্থনৈতিক অংকে খুব কাঁচা। দেশের সব টাকা পয়সার হিসাবটাকে যদি ডেবিট-ক্রেডিট স্টাইলে হিসাব করতে যাই, এইখানে কলিমুদ্দিনের ঘরে বসে খোঁজ পাওয়াতে দেশের অ্যাকাউন্টে কিছু ডেবিট হচ্ছে কি না, তা বুঝতে পারি না। কিন্তু ফোন করার খরচ বাবদ যে টাকাটা কলিমুদ্দিন দিচ্ছে, সেটা ক্রেডিট হিসাবে যোগ হচ্ছে, তা বুঝতে পারছি সহজেই। সবকিছু যোগ করলে বিয়োগের খাতায়ই বেশি হচ্ছে বলে হালকা হালকা মালুম হয়।

দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের কথা বিশ্বাস করবো কি করবো না, তা বুঝতে পারিনা ... ফরমায়েসী বুলি একাডেমিক ক্ষেত্রে এতো দেখছি যে, বিশেষজ্ঞদের বিবৃতি আর বিশ্বাস করতে পারিনা আজকাল।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

রায়হান আবীর এর ছবি

অর্থনীতি আমিও বুঝিনা। খুব সাধারণ সেন্সে সেবা দানকে শোষণ মনে হয়নি। অবশ্য শোষণ ওরা করেছিল। যখন শুধুমাত্র গ্রামীন, সিটিসেল ছিল। ৭ টাকা মিনিটে কথা, ৩০০ টাকার কার্ডের মেয়াদ ২১ দিন আরও কতো নিয়ম। এখন আরও অনেক কোম্পানি আসাতে প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। এই প্রুতিযোগীতার ফলে আমারাও কিছুটা লাভবান হচ্ছি।
তবে একটা জিনিস আমিও মানি ওরা আমদের যা দিচ্ছে তার চেয়ে অনেকগুন হাতিয়ে নিচ্ছে।

রাগিব এর ছবি

সেবাদানকে শোষণ আমিও বলছি না। কিন্তু বাংলাদেশে অন্য খাতে বিনিয়োগ আনতে যেখানে প্রধানমন্ত্রী/অর্থমন্ত্রীদের রীতিমত ভিক্ষা করতে হয়, সেখানে যেচে পড়ে ভোডাফোন বা এনটিটি ছুটে আসলে সন্দেহ জাগে, ঘটনা কোথায়।

মোবাইল ফোনের ফল্গুধারা প্রবাহিত হচ্ছে ঠিকই দেশে, কিন্তু আপনি,আমি, কলিমুদ্দিন -- এরা ফোনে কথা বলে ট্যাকের পয়সা দিচ্ছি, এই পয়সাটা বেরিয়ে যাচ্ছে দেশ থেকে, বিনিময়ে সারারাত কথা বলা কপোত-কপোতি বা কলিমুদ্দিনের অর্থনৈতিক ডেবিট কী হচ্ছে, তা বুঝতে পারছি না। বাজেট পড়ার সময়ে দেখেছিলাম, দেশের বাজেটের বিশাল অংশ আসে টিএন্ডটিতে লোকে কথা বলায়। কিন্তু বিদেশী মোবাইল কোম্পানীকে মিনিটে ১ টাকা হোক বা ৭ টাকাই হোক, যেটুকু কলিমুদ্দিন দিচ্ছে, তার কতো অংশ ফিরে আসছে দেশে?

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

রায়হান আবীর এর ছবি

হুম। এইটাই আসলে সমস্যা। বিশাল অংকের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।

সালেহীন এর ছবি

শ্রদ্ধেয় রাগিব ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি,
আপনার প্রবন্ধের বিষয়বস্তুর সাথে একমত হতে পারছিনা।
বিষয়টা দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পন পর্যন্ত টেনে নেয়ার মত গুরুতর নয় বলেই আমার বিশ্বাস।
ঢাকা শহরে কাজের সন্ধানে আসা গ্রামের যুবকের কাছে এক টাকা খরচ করে বাড়ির খবর নেয়াতে দেশের এক টাকা নরওয়ে তে চলে যেতে পারে, কিন্তু ঐ যুবকের কাছে তা একশ টাকার স্বস্তি দেবে।
আর দেশের টাকা রাখার জন্য Teletalk তো রয়েছেই।
আপনার প্রবন্ধ, ৫ বছর আগে এসব কথার উদ্রেক করত না। আজকে ওয়ারিদ এর মত আরো বিনিয়োগ আসলে আখেরে লাভ হবে দেশের মানুষের ই। দেশের ২ টাকা এক দেশে যাবার বদলে ২৫ পয়সা, ৫ দেশ ভাগ করে নেবে।
অতিরিক্ত মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।

রাগিব এর ছবি

সালেহীন, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। স্বস্তি টাকা দিয়ে হিসাব করা যায়না, intangible ব্যাপার। যেটা হিসাব করা চলে, সেই জিনিষটাকেই মাপতে চাইছি।

পুরো ব্যাপারটাকে একটা accounting problem হিসাবে দেখুন। "আখেরে লাভ হবে" - কীভাবে সেটাই বুঝতে চাচ্ছি। ওয়ারিদ কেনো বাংলাদেশে টাকা খাটাবে যদি যা খাটাচ্ছে তার চেয়ে বেশি লাভ পেতে না পারে? টাটার সাথে এখানে একটা বড় পার্থক্য আছে ... টাটার মিল খুললে তার ভোক্তার বিশাল অংশ হবে বিদেশী। সেই তুলনায় ওয়ারিদের ভোক্তারা সবাই বাংলাদেশী। এখন, ওয়ারিদ যদি x dollar বিনিয়োগ করে, তাদের লক্ষ্য হবে y dollar তুলে নেয়া, যেখানে y>x। সুতরাং, মোটের উপরে দেশের অ্যাকাউন্টে পরিবর্তন (y-x)। তাহলে দেশের লাভ কোন দিক থেকে? স্বস্তি দিয়ে তো পেট ভরে না ... টাকার অংকে অ্যাকাউন্টের হিসাবটা কীভাবে মিলবে তা একটু ব্যাখ্যা করবেন?

আপনার ব্যাখ্যা নির্ভয়ে পেশ করুন ... আমি পেশায় মিস্তিরি, ... অর্থনৈতিক কোনো ব্যাপার নিশ্চয় আপনি বুঝতে পারছেন যা আমি বুঝতে পারছিনা, তাই একটু হিসাবটা ব্যাখ্যা করে দিলে খুব ভালো হবে। ধন্যবাদ।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

অর্ক [অতিথি] এর ছবি

রাগিব ভাই আমি অর্থনীতির প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র মাত্র। তবু এখন পর্যন্ত যদ্দুর পরেছি তা হতে বলতে পারি, দেশের টেলিকম ব্যবসার মত একটি পারফেক্টলি কম্পিটিটিভ বিজনেসের লং রানে একসময় অবশ্যই y=x ( বলতে বুঝাচ্ছি গড় রেভিনিউ = গড় খরচ)হবে যাকে zero economic profit(normal profit) বলা হয়। এরফলে সে না পারবে ব্যবসা হতে বের হতে (কারণ এতে সে x হারাবে) না পারবে সেরকম লাভ করতে;এসম্পর্কে উইকি থেকেই তুলে দিচ্ছি কিছু লাইনit is impossible for a firm in perfect competition to earn economic profit in the long run, which is to say that a firm cannot make any more money than is necessary to cover its economic costs আরও বলা হয়েছে if a firm is earning abnormal profit in the short run, this will act as a trigger for other firms to enter the market. They will compete with the first firm, driving the market price down until all firms are earning normal profit only

।আর শর্ট রানে সে লাভ তো করতে চাবেই। লাভ করার জন্যই তো তার ব্যবসায় আগমন। হ্যা সে না হয় মিনিটে এক টাকা নিয়ে নিল; কিন্তু এভাবে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সেই কলিমুদ্দিন কোথায় কোন দামে তার ফসল কেনাবেচা হচ্ছে তা সম্পর্কে জানতে পারছে, ঘরে বসেই পাচ্ছে প্রাথমিক চিকিৎসা ,কৃ্ষি এমঙ্কী ইংরেজী শিক্ষা !! এতে টাকা খরচ হলেও লাভের পাল্লাটাই বেশী ভারী। এ কারণেই একটি গবেষণায় বলা হয়েছে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ১০ শতাংশ বাড়লে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বার্ষিক জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে বাড়বে।

আর যদ্দুর জানি এখন একমাত্র গ্রামীন ছাড়া সবাই লস করছে। তবু কেন তার ব্যবসা করে যাচ্ছে তার উত্তর পাবেন এই উইকি আর্টিকেলে http://en.wikipedia.org/wiki/Perfect_competition#The_shutdown_point আর রাগিব ভাই টাকা দিয়ে মাপা যায় না মানে accounting problem দিয়ে সল্ভ করা যায়না এমন খারাপ এবং ভালো দুই ইফেক্টই অর্থনীতিতে externality র মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে http://en.wikipedia.org/wiki/Externalities

তো এ থেকে বোঝা যাচ্ছে এখন তারা লাভ করলেও আমাদের লাভের পাল্লাই ভারী থাকবে।

তীরন্দাজ এর ছবি

তাই বাংলাদেশের মোবাইল ফোন আর তার কল্যাণে গাড়ি বাড়ি হাঁকানো প্রকৌশলীদের চকচকে চেহারা দেখে ভয় হতে থাকে, গাড়ির কাঁচের ফাঁক দিয়ে কেনো যেনো দেখতে পাই ছিবড়ে হয়ে যাওয়া কলিমুদ্দিনের রক্ত চুষতে থাকা নরওয়েজীয়/জাপানী/মিশরী ভ্যাম্পায়ারগুলোকে। নীলচাষীদের রক্তখেকো নীলকরেরা লজ্জ্বায় মুখ লুকোয়, কিন্তু হায়, দীনবন্ধু মিত্র কোথায় আজ, নীল দর্পন কে লিখবে? আজকের আজম খান/বাচ্চু/হায়দার হোসেনেরা তো বিক্রি হয়ে গেছে মোবাইল কোম্পানির নব্য নীল কুঠিতে।

১০০ ভাগ সহমত আপনার সাথে। "সেবা" হাস্যকর একটি শব্দ। আজাকালকার মুক্ত বিশ্বে সেবা বলতে কিছুই নেই। সারা পৃথিবীতে ক্রেতা-বিক্রেতা ছাড়া যে কোন সংজ্ঞা বানানো মাত্র।

*********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

কিছু মন্তব্য -

- এই বিষয়ে সঠিক নির্ভূল তথ্য যদি পেশ করা যায়, তাতে আলোচনা আরো ফলপ্রসূ হতে পারে। কে কতো টাকা বিনিয়োগ করেছে, আর লাভের মধ্যে কতোখানি দেশেই reinvest হয়েছে আর কতোখানি বিদেশে repatriate হয়েছে, তার সঠিক হিসাব কেউ জানেন কি?

- মোবাইল ব্যবহারের জন্যে কারো উপর জোর-জবরদস্তি করা হচ্ছে না। মোবাইল ছাড়াও অনেক লোক দিব্বি বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন। কিন্তু যারা মোবাইল সার্ভিস কিনে কিনে বিদেশী কম্পানীদের পকেট ভারী করছেন, তারা নিশ্চয়ই তাদের ব্যক্তিগত সুবিধা অসুবিধা জেনেই সেই ব্যবহারটা করছেন। শেষ বিচারে দোষ তাহলে কার উপরে বর্তায়? সেইসব 'স্বার্থপর' ক্রেতার উপরেই নয় কি? আর যারা বিদেশী বেনিয়ার বিরুদ্ধে সমানে গালি দেয়, তাদের পকেটেও দেখবেন নোকিয়া বা মটোরোলাই ঘুরে। এটা কি এক রকম ভন্ডামি বলা যায়? কিন্তু অতখানি চারিত্রিক শুদ্ধি কে অর্জন করতে যাবে?

- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্মই হয় লাভের উদ্দেশ্যে। লাভ বিনা কেউ সামাজিক সেবা দিতে আসে না। সেটা দেশীয় ব্যবসা হোক বা বিদেশী। বিশ্বায়নের যুগে বিদেশী বিনিয়োগ একটা প্রায়-অনিবার্য ব্যাপার। সেটার সদব্যবহার করে আমরা আমাদের নিজেদের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চালন করতে পারি, সেটার অপব্যবহার রোধ করে আমরা আমাদের সম্পদের সুরক্ষা ও সুবন্টন করতে পারি। কিন্তু সেই সদব্যবহার বা অপব্যবহার কন্ট্রোল করার মালিক দেশের সরকার এবং অর্থনীতির নীতি নির্ধারকরা। তাদের দৃঢ়তা আর দক্ষতা অনেক বড় জিনিস। তারা যদি মেরুদন্ডহীন হয়, দুর্নীতিপরায়ন হয়, দেশের স্বার্থ বেঁচে দেয়, তাহলে এমএনসি-রা তার সুবিধাই নেবে। অপরদিকে তারা দেশপ্রেমী হলে, দেশের স্বার্থ আগে দেখলে দেশ সেই বিনিয়োগ থেকে লাভবান হবে। দুয়ার বন্ধ করা লাগে না, দুয়ার বন্ধ করার দরকারও নেই। এভাবে করেই পূর্ব এশিয়ার ডজনখানেক দেশ উন্নয়ন লাভ করেছে, এবং আরো নতুন কিছু দেশ বর্তমানে এগিয়ে যাচ্ছে। ইদানীংকালের বড় উদাহরন ভিয়েতনাম। আমাদের থেকে ফকির ছিল, কিন্ত আমাদের থেকে অনেক বেশী স্বচ্ছল হতে যাচ্ছে। এবং সেটা বিনিয়োগকে সাথে নিয়েই, দরজা জানালা সব আটকে দিয়ে নয়। (সম্পূর্ন বন্ধ করা যায় অবশ্য - যেমন বার্মা।)

- ২০০০-০৩ সময়ে প্রবাসী অনেক বাংলাদেশী ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারদের চিনতাম। তাদের বড় আক্ষেপ ছিল যে একটা বিবিএ পাশ ছেলে ২০,০০০ টাকা বেতনের চাকরি পায়, আর একটা বুয়েটের গ্র্যাজুয়েট ৫,০০০-৭,০০০ টাকার বেশী বেতন পায় না। তাই ভাগ্যের খোঁজে আমেরিকা যাত্রা, ইন্টেল বা মাইক্রোসফটে ক্যারিয়ার। কিন্তু সেই দিনও পাল্টেছে কিছুটা। কত ছেলেপেলে দেশেই থাকছে, সেটা কি একটা লাভ নয়? তাদের মেধা, তাদের পেছনে খরচ করা সরকারের লাখ লাখ টাকা দেশেই ব্যবহার হচ্ছে। আরো অন্যান্য ব্যাপার আছে - তার মধ্যে ভোক্তার লাভ একেবারে ছোট করে দেখার মত নয়। সেটা কলেজের প্রেমিক বলেন, কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী বলেন, গার্মেন্টসের মালিক বলেন। এইসব spillover benefits মাপা কষ্ট, কিন্তু বেনিফিটগুলা সত্য। সেবার ধর্মই এমন যে তার উপর টাকার অংক সহজ়ে বসানো যায় না। কিন্তু তাতে সেবার গুণগত মান বা প্রয়োজনীয়তা কমে না, বা অস্বীকার করা যায় না।

- নীল দর্পণের সাথে তুলনা কিছুটা অতিরঞ্জিত ঠেকেছে, কারন মোবাইল ব্যবহার মানুষের উপর অনিচ্ছাকৃতভাবে আরোপ করা হয় না। অর্থনীতিতে রক্তচোষা খুঁজতে গেলে নিজেদের ভেতরেই অনেক পাবেন। সেটা ন্যায্য বেতন দিতে অস্বীকার করা ফ্যাকটরি মালিক বলেন, বা দেশের সম্পদ বিদেশে চালান করে দেয়া দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ বলেন।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

রাগিব এর ছবি

আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। অর্থনীতির দৃষ্টিতে ব্যাপারটা কী হবে, তা একটু ব্যাখ্যা করে দিবেন কি? মানে, আমাদের দেশে টাটার ফ্যাক্টরি বসানো আর গ্রামীনের টাওয়ার বসানো - দুইটার মধ্যে আমাদের অর্থনীতির মোদ্দা লাভ কী, প্রভাব কী, তা একটু সহজ কথায় যদি বুঝিয়ে দিতেন, ভালো হতো।

একজন দুজন প্রকৌশলী এখানে মুখ্য ব্যাপার না, সামগ্রিক অর্থনীতির ব্যাপারটা কী দাঁড়াচ্ছে? মানে, ১০০ জনে আগে ফোনে কথা বলতো না, এখন ৫ টাকা করে কথা বলাতে ৫০০ টাকা আসলো মোবাইল কোম্পানীর হাতে। তারা সেই টাকার অর্ধেকটা দিয়ে দেশের ৫ জন প্রকৌশলীকে ৫০ টাকা বেতন দিলো। দেশের অ্যাকাউন্টে তাহলে কী দাড়ালো? -৫০০+২৫০ = -২৫০? এমন যদি হতো যে বিদেশী ১০০ লোকে এই ৫০০ টাকার কথাটা বলে দিচ্ছে, তাহলে অন্য কথা, কিন্তু এখানে আমাদের দেশের টাকা দিয়েই আমরা দেশের কিছু প্রকৌশলী কিছু এক্সিকিউটিভদের বেতন দিচ্ছি, বাকিটা বিদেশী কোম্পানি গুলোর অপারেটিং প্রফিট। এখানে কি তাহলে দেশের মোট সম্পদের বিয়োজন হচ্ছে না? দেশের সম্পদকে একটা হালখাতা হিসাবে ধরে ডেবিট ক্রেডিট ধরলে, কার টাকা কই যাচ্ছে সেই হিসাব করলে পরিশেষে হিসাবে কী দাঁড়াচ্ছে?

পোস্টটাকে অভিমত হিসাবে না নিয়ে একটু প্রশ্ন হিসাবে চিন্তা করুন। আমার অর্থনৈতিক জ্ঞান সীমিত, তবে যোগ বিয়োগ ভালো পারি। সেটা দিয়ে একটু ব্যাখ্যা করে দিবেন?

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

বিপ্রতীপ এর ছবি

তাই বাংলাদেশের মোবাইল ফোন আর তার কল্যাণে গাড়ি বাড়ি হাঁকানো প্রকৌশলীদের চকচকে চেহারা দেখে ভয় হতে থাকে

মোবাইল কোম্পানি'র চাকরি এখন দেশের তড়িৎ এবং কম্পিউটার কৌশলীদের স্বপ্নের চাকরি। যেখানে একজন সদ্য পাস করা অন্যন্য গ্রাজুয়েটরা ১২ হাজার টাকা দিয়ে কাজ শুরু করছে সেখানে মোবাইল কোম্পানি স্টার্টিংয়ে ৩০ হাজার দেয়। আমি নিজে তড়িৎ কৌশলী হলে আমার স্বপ্নও তাই হতো। দেশের প্রতিটি গ্রুপ (মোবাইল কোম্পানি ছাড়া) প্রচুর লাভ করছে সেটার অংক অনেক মোবাইল কোম্পানির তুলনায় একেবারে কম না। কিন্তু ওরা বেতন দিতে নারাজ। যতো কম পয়সায় ইঞ্জিনিয়ার পাওয়া যায়। কই ওদের কথা তো কেউ বলে না যে এদের বেতন বাড়ানো দরকার... । ভালো জীবনযাত্রার আশায় একজন মোবাইল কোম্পানিতে চাকরি করতেই পারেন। সেটা মোটেও দোষের কিছু নয়। সত্যি কথা হলো দেশের টাকা বাইরে না গেলেও কিছু মানুষের হাতেই থাকবে, এবং ধনী গরীবের ব্যবধান ক্রমাগত বাড়বে। তাই দেশের টাকা দেশে থাকাতে আমার আপাতদৃষ্টিতে কোন লাভ নেই (কারন আমি অর্থনীতি কম বুঝি, আমি চোখের সামনে যে লাভ দেখবো তাই গ্রহন করবো)। তাহলে আমি আমার লাভটুকু কেন বুঝবো না।

আর দেশের টাকা রাখার জন্য Teletalk তো রয়েছেই।

টেলিটকে দেশের টাকা দেশে এই ব্যাপারটায় আপত্তি আছে...কোন কোন জায়গায় টেলিটকের অবস্থা খুব খারাপ, বার বার লাইন কাটে। এক্ষেত্রে দেশের টাকা দেশে রাখার জন্য টেলিটক ব্যবহারের কোন মানে নাই। ভোক্তা হিসেবে আমি অবশ্যই সেবার উপরেই বেশী গুরুত্ব দেব। কারন, আমারে কেউ বসাইয়া বসাইয়া খাওয়ায় না...আমাকে নিজের টাকা খরচ করেই সেবা নিতে হবে। তাহলে আমি খারাপটা নিবো কেন?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিপ্রতীপ ব্লগ | ফেসবুক | আমাদের প্রযুক্তি

রাগিব এর ছবি

বিপ্র, পুরো পোস্টটা ৫ মিনিটে লেখা, তাই হয়তো পরিষ্কার করতে পারিনি, এটা অভিমত না, বরং "প্রশ্ন"। আর এখানে প্রকৌশলীরা কে কোথায় কাজ করবে, সেটা একেবারেই প্রতিপাদ্য বিষয় না। +- এর হিসাব মিলানোটা নিয়ে চিন্তা করছিলাম, সেই হিসাব মিলাতে পারিনি, আর অর্থনীতির কোর্সের প্রায় সবটাই ভুলে বসে আছি বছর দশেক পরে ... সেটার ফলই হলো এই পোস্ট। হাসি

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

পুতুল এর ছবি

নীল দর্পন কে লিখবে?

আপনার পক্ষেই সম্ভব।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সালেহিন এর ছবি

দেশের অ্যাকাউন্টে পরিবর্তন (y-x)

যে y-x টাকা দেশের account থেকে চলে গেল, তার কিন্তু কিছু রূপান্তর ঘটল।
এর একটা অংশ দিয়ে, রাত জাগা কপোত-কপোতীদের তেষ্টা মিটলো।
আরো একটা অংশ দিয়ে কলিমুদ্দীরা তাদের শহরের কাজ করা ছেলের খবর নিয়ে স্বস্তি পেল।
আর খানিকটা অংশ কিন্তু দেশের উতপাদন ব্যবসায় কাজে লাগল। কিভাবে? ধরুন, আপনি কোনো একটি garments industry এর ওপর দিকের কর্মকর্তা। আপনার অধীনে আছে ৫ টা factory. আপনি দেশপ্রেমিক হলে (অর্থাত cell-phone ব্যবহার না করলে) প্রতিটি factory তে সশরীরে উপস্থিত থেকে কাজ তদারক করবেন। অবশ্যই নিষ্ঠার সাথে কাজ করবেন।
প্রতিটি factory তে যাতায়াতে কত সময় লাগবে, তা নিশ্চয় হিসেব করেছেন। একটা cell-phone আপনার productivity কত খানি বাড়াবে, তা একটু হিসেব করে দেখুন, আখের কিছু লাভ থাকে কি না !

আলমগীর এর ছবি

আমিও অর্থনীতির ছাত্র নই তাই মন্তব্যটাকে সেভাবে নিলে খুশী হব।

১. আমরা বিদেশী বিনিয়োগ চাই, যেখানেই হোক। আমাদের গ্যাস.তেল তুলতে পারিনা, সেখানে বিনিয়োগ চাই। যে গ্যাস তেল বিদেশিরা বের করে সেটাই আবার আমরা নিজেরা কিনে নিই। এখন যদি বলেন আমার নিজের জিনিস আমি কিনব কেন? তাদেরকে ফাউ ফাউ টাকা দিব কেন? উত্তর হলো তারা যে টাকাটা বিনিয়োগ করেছে তাতে অনেক লোকের কর্মের যোগাড় হয়েছে। দেশের অর্থনীতি গতিশীল থেকেছে।

২. বিদেশী ব্যাংকগুলো তাদের লাভের পুরো টাকাই নিয়ে যায়। আমাদের কী নিজেদের ব্যাংক নেই? স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ডএ টোফের ডিডি করতে গিয়ে মনে আছে ৭৫০টাকা ফি দিয়েছি। তার পুরোটাই ফাউ। এরা লাভের উপর ট্যাক্স হলিডে পায়। সাইফুর রহমান এ সুবিধব দিয়ে গেছে।

৩. টেলিনর লাভের ক্ষুদ্র একটা অংশ নিয়ে গেছে, বাকীটা গ্রামীণের অবকাঠামোতে ব্যায় করেছে। এ বিনিয়োগের বিনিময়ে যদি টেলিনরকে কিছু দিতে আমাদের বাধে তবে টেলিনর টাকাটা কেন আমাদের দেশে খরচ করবে? সারা পৃথিবী জুড়েই তা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বড় কোম্পানি হলো অপটাস, এর সিংহভাগ শেয়ার সিংগাপুরের সিংটেলের। কদিন আগে সবচেয়ে বড় দুধ সরবরাহকারীকে কিনে নিল জাপান। ভেজিমাইটে আমেরিকা। এখন অস্ট্রেলিয়ান তা ঠেকাবে কেমনে?

৪. অর্থ যেন নিজদেশে থাকে তা নিশ্চিত করতে হলে বড় কোম্পানিগুলোকে পাবলিক লিমিটেড করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের আয়কর আইন মতে পাবলিক লিমিটেড হলে বেশী ট্যাক্স দিতে হয়।

(অনেক বড় একটা মন্তব্য লিখলাম, শালা এরো কিতে চাপ পড়ে হাওয়া হয়ে গেল। পরে আবার লিখছি। প্রথম বার আরো কী কী পয়েন্ট লিখেছিলাম মনে নেই।)

রাগিব এর ছবি

আপনার দ্বিতীয় দফার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। জ্বি, পয়েন্টগুলোর সাথে আমিও একমত। তবে তেল-গ্যাসের সাথে পার্থক্য আছে ... তেল গ্যাস আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনের চাহিদাগুলা মেটাচ্ছে, যে চাহিদা আমাদের হাজার বছর ধরে রয়েছে এবং পরেও থাকবে। টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে ফোনে কথা বলে আমাদের লাভ একই রকম কি না, তা বুঝতে পারছি না। দশ বছর আগে আমরা ফোনে কথা বলে মাসে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করিনি, এখন করছি, এতে করে এখন আমাদের হাজার কোটি না হোক, ৫০০ কোটি টাকারও কি লাভ/সাশ্রয় বা এজাতীয় কিছু হচ্ছে? মানে, যারা মোবাইলের ভোক্তা শ্রেনী, মোটের উপরে তাদের কোনো অতিরিক্ত আয় - ক্যাশ ইনফ্লো হচ্ছে?

নাহ, আমার আসলে এখানে প্রশ্ন না করে ইকনমিক্স ১০১ টাইপের কোনো একটা কোর্স নেয়া দরকার। :)। অর্থনীতির ব্যাপারে আমার জ্ঞানের প্রচুর সীমাবদ্ধতা আছে, বুঝতে পারছি।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

আলমগীর এর ছবি

প্রশ্ন হলো, ফোন ব্যাবহার করে কী লাভ হচ্ছে? উত্তর হচ্ছে। ছেলেমেয়েরা প্রেম করে আর কত টাকা খরচ করে? মোবাইলের সাথে সংশ্লিষ্ট নতুন কাজের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক কাজে দক্ষতা বেড়েছে। টাকার অংকে সেগুলো মাপা কঠিন।

বাস্তবতা হলো এখন চীন ছাড়া আর কোথাও কি উৎপাদনমূখী কোন শিল্প আছে? চীনের সাথে সারা পৃথিবীর বাণিজ্য বৈষম্য। আমি মার্কিন দেশের খবর অত ভাল রাখি না (কেবল সাম্প্রতিক সাবপ্রাইম সংকট ছাড়া), অস্ট্রেলিয়ার কথা বলতে পারি। অস্ট্রেলিয়ার মূল রপ্তানি হচ্ছে মাইনজাত ধাতু। ওল, তুলা, গম বেচে কিছু আসত সাদ্দাম যাবার পর সেটাও গেছে। মিডলইস্টে গাড়ী যায় এখান থেকে। কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদনের সুযোগ আছে, কিন্তু একই সাথে সেচের পানির সংকটও আছে। কৃষিপণ্য রপ্তানি করে তেমন কিছু আসে না।

অর্থনীতি তাহলে কীসের উপরে টিকে আছে? কাপড় চোপড়, নিত্য ব্যবহার্য সব থেকে শুরু করে শাকসব্জি পর্যন্ত আসছে। স্মল বিজনেস হচ্ছে সরকারের ইনকাম ট্যাক্সের চালিকাশক্তি। বড় বড় কর্পোরেশন বরাবরই ট্যাক্স ফাঁকি দেয় (এরা আইনের চিপা বের করবেই করবে)।

স্টেট সরকার সবচেয়ে বেশী টাকা কামায় পকি মেশিন থেকে। ক্যাসিনো আর পকি মেশিন অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখতে পারে?

বাংলাদেশ কী দিয়ে টিকবে? টেলিনরের টাওয়ার বানানো আর টাটার প্লান্ট বসানোর মধ্যে কোন পার্থক্য আমি দেখি না। দুটোরই ধরা যাক আপাত মূল্য সমান। টেলিনরের খুটি দিয়ে কথা বলে মানুষ ব্যবসায়িক সুবিধা পাবে, নিজের কাজের গতি বাড়বে। অপরদিকে, টাটার প্লান্টে কাজ করে কেউ একজন দুপয়সা পাবে। দুটোই নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

আমার ধারণা, মোবাইল অপারেটররা যে পয়সা নিয়ে যায় তার চেয়ে অনেক বেশী আমরা ব্যয় করি প্রসাধন আমদানীতে।

সিংগাপুরের কী প্রাকৃতিক সম্পদ আছে? পুরো ব্যবসা আর পরিসেবার উপর একটা দেশ চলছে।

ব্যবসা মানেই মুনাফা। এটা নীতির প্রশ্ন না। মুনাফা করা দুর্নীতি নয়। যারা টাকা খাটাবে তারা বিনিময়ে মুনাফা প্রত্যাশা করবে- সহজ হিসাব। বাংলাদেশে খাটাক আর ভিয়েতনামে খাটাক।

আজ খবরে দেখলাম, কয়েকটা দ্বীপ সরকার লিজ দিয়ে দেবে; এগুলোতে পাশ্চাত্যের সব সুবিধা সৃষ্টি করা হবে; দেশী লোকজন প্রবেশ করতে পারবে না। ক্যাসিনো, পাব, পুল সব থাকবে। পর্যটন কর্পোরেশন বিলোপ করে দিয়ে একটা রেগুলেটরি কিছু বানাবে। সহজ হিসাবে ব্যপারটা দেশের ক্ষতি। কিন্তু শেষ হিসাবে যদি মানুষের কাজের যোগান হয় তবেই দেশের অর্থনীতির জন্য মংগল।

আরেকটা কথা যোগ করি:
শ্রমঘন বলতে যা বোঝায় সেটাই আমাদের মতো জনবহুল দেশের জন্য দরকার। কৃষি শ্রমঘন কিছু না। কৃষির সেকেন্ডারি শিল্পগুলোও না। একমাত্র তৈরী পোষাক হচ্ছে শ্রমঘন যেখানে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হয়। সেরকম শিল্প আর বেশী নেই। পর্যটনে অনেক লোকের কাজের যোগাড় হওয়ার খুব ভাল সম্ভাবনা আছে।

তানভীর এর ছবি

প্রথমেই বলে রাখি আমিও অর্থনীতি বিষয়ে অকাট মূর্খ। কিন্তু বিদেশী মোবাইল কোম্পানীগুলো কেন দলে দলে ছুটে আসছে তা বুঝতে বোধহয় অর্থনীতিতে বিশেষজ্ঞ না হলেও চলে। এর প্রথম কারণ হল- আমাদের দেশে প্রচলিত ‘নিজের পায়ে কুড়াল মারা’ টাইপ বিনিয়োগ নীতি এবং দ্বিতীয়ত- বিশাল ভোক্তা শ্রেণী।

প্রথমটাই আসলে মূল আকর্ষণ। পৃথিবীর আর কোন দেশে মনে হয় বিদেশী কোম্পানী বিনিয়োগ করে মুনাফার পুরোটা তাদের দেশে নিয়ে যেতে পারে না, যেটা একমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব। গত বছর অন্য ব্লগে এটা নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম মনে পড়ছে। সে সময় বিনিয়োগ প্রসঙ্গে আমার সাথে স্থানীয় এক নন-রেসিডেন্ট ভারতীয় ভদ্রলোকের সাথে আলাপ হয়েছিল। তিনি আমেরিকা থেকে ভারতে পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। তাঁর কথানুসারে প্রবাসী ভারতীয়রা এখন তাদের দেশে প্রচুর বিনিয়োগ করছেন। ভারতের বিনিয়োগ নীতি অনুযায়ী মুনাফার ন্যূনতম ৫০ ভাগ দেশেই পুনর্বিনিয়োগ করতে হয়, দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই প্রবাসীরা ঐ টাকা দিয়ে দেশে জমি-জমা, ফ্ল্যাট ইত্যাদি কেনেন, বিদেশী কোম্পানীগুলো নানা উন্নয়নমূলক খাতে বা তাদের ব্যবসা প্রসারে দেশেই ঐ ৫০ ভাগ মুনাফা ব্যয় করে; বাংলাদেশ যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই অর্থের পরিমাণ কিন্তু মোটেও কম নয়। এক হাজার কোটি টাকা মুনাফা হলে, পুরো টাকাই তারা দেশের বাইরে মানে তাদের দেশে নিয়ে যেতে পারে। এই টাকা এই গরীব দেশের গরীব মানুষের টাকা, যা নরওয়ে, আবুধাবী ইত্যাদি দেশে চলে যাচ্ছে। এক সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী আমাদের যেভাবে শোষণ করত, তাদের চেয়ে এরা কোন অংশে কম নয়। ধরণটা শুধু পাল্টেছে, শোষণ পাল্টায় নি। তাই রাগিবের নীল কুঠির তুলনাটাকে আমি মোটেও অতিরঞ্জিত বলছি না।

ব্রিটিশ আমলে আমরা সবাই যে খুব খারাপ ছিলাম তা কিন্তু না। আমাদের মধ্যে থেকেই তো রায় বাহাদুর, খান বাহাদুর এরা ছিল, সুবিধাভোগী শিক্ষিত কেরানীগোষ্ঠী তো ব্রিটিশরাই তৈরী করেছিল। এই আমলেও দেখা যায় মোবাইল কোম্পানীগুলোর পক্ষে সাফাই গাওয়ার লোকের অভাব নেই। প্রকৌশলীরা আগে ৫ হাজার টাকা বেতন পেত, এখন এসব কোম্পানীতে ঢুকে ৩০ হাজার টাকা বেতন পায়। পত্রিকাগুলো এদের কাছ থেকে অনেক বিজ্ঞাপন পায়, তাই এদের নিয়ে কোন রা করে না। চুরি করে ধরা খেলে এরা সাথে সাথে ১৫০ কোটি দিয়ে দেয়। হাজার হাজার কোটি টাকা এই গরীব দেশ থেকে নিয়ে গিয়ে অল্প কিছু টাকা বিলিয়ে দিতে এদের কোন গায়ে লাগে না।

মোবাইল কোম্পানীগুলোর প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। বেনিয়ারা তো ব্যবসা করতেই এ দেশে এসেছে, এখানে দান-খয়রাত করতে আসে নি। দুঃখ শুধু এটাই- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আমলে নিয়ম-কানুনগুলো তারাই বানাত, কিন্তু এই স্বাধীন দেশে আমরা আমাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নিয়ম-কানুনগুলো বানাতে পারি না। আমাদের সরকার, রাজনীতিবিদ, নীতি-নির্ধারকদেরও তারা কিনে নিয়ে যায়। আমাদের বিনিয়োগ নীতি তাই হয়ে যায় বিদেশী কোম্পানীর স্বার্থ-রক্ষার নীতি! আমি এই দেশী কুকুরদেরকেই বেশী ঘৃণা করি।

= = = = = = = = = = =
তখন কি শুধু পৃথিবীতে ছিল রং,
নাকি ছিল তারা আমাদেরও চেতনায়;
সে হৃদয় আজ রিক্ত হয়েছে যেই,
পৃথিবীতে দেখ কোনখানে রং নেই।

দিগন্ত এর ছবি

রাগিবভাইকে আমার একটা প্রশ্ন - দেশের উন্নতি বলতে কি বোঝেন? আমি দেখেছি এই প্রশ্নটাতে সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ আর রাজনীতিবিদেরা আলাদা আলাদা উত্তর দেন, তাই বিদেশী বিনিয়োগের প্রশ্নেও উত্তর আলাদা পাবেনই।

এখন আপনার মূল প্রশ্নে যাওয়া যাক। আমি একটা বক্তব্য মনমহন সিংহ, প্রণব মুখার্জী আর চিদাম্বরমের মুখ থেকে শুনেছি - যে বিদেশী বিনিয়োগ হল দরাদরির খেলা। ১০০ টাকা বিনিয়োগ হলে তার কত শতাংশ আপনার নিজের দেশে থেকে যাবে সেটা আপনি কতটা দরাদরি করতে পারেন তার ওপর নির্ভর করে। এই দরাদরির জন্য মাপকাঠি হল - অর্থনীতির আকার, স্থিতিশীলতা, দেশের রাজনৈতিক প্রভাবক্ষমতা আর সবশেষে মিলিটারী (হাস্যকর শোনালেও সত্যি)।

এবার দুটো পথ খোলা আছে। প্রথম হল বিদেশী বিনিয়োগ আনো, তাদের পুরো লাভ দিয়ে দাও। অন্যেদের দেখাও যে তুমি বাজার হিসাবে খুব ভাল। লোভে লোভে অন্যেরাও আসবে বিনিয়োগ করতে। কিন্তু তখন তুমি আর তাদের সেই সুবিধা দেবে না যা প্রথম দিকের বিনিয়োগকারীদের দিতে। আস্তে আস্তে হারা খেলা তোমার হাতের মুঠোয় আসবে। প্রথমদিকের বিনিয়োগকারীদের জন্য কর মকুব করা হত, বিনিয়োগ তুলে নিয়ে যাবার জন্য সহজ শর্ত থাকত। পরে আর সেটা থাকবে না, কারণ অনেক বিনিয়োগের ফলে বিনিয়োগকারীদের কনফিডেন্স এসে গেছে আপনার দেশের ওপর। এই পথটাই সিঙ্গাপুর, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া নিয়েছে গত কয়েক দশকে।

এখন দেখা যাক আরেকটা পথের কথায়। আমি স্বাবলম্বী হব, বড় হব। দরাদরি করার ক্ষমতা এলে তবেই আমি বিদেশী বিনিয়োগ আনতে শুরু করব। যাতে আমার দেশীয় কোম্পানীরাও পাল্লা দিয়ে বিদেশে থাকতে পারে। আর দরাদরি করার সময় আমি নিজের পকেটে ৫০% র বেশী লাভ রাখতে পারি। এই পথটা নিয়েছে চিন, ভারত।

আর আছে এদের মিশ্র পথ, যেটা নিয়েছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার (কিছুটা কোরিয়া আর তাইওয়ানও) অর্থনীতিগুলো। তারা অনেকেই বিনিয়োগ এনেছে কিছু কিছু সেক্টরে বাকি সেক্টরে নিজেদের প্রভাব কায়েম রেখেছে। এদের দেশী কোম্পানীগুলো কিছু কিছু সেক্টরে খুবই নামজাদা আর বাকি সেক্টরে অস্ত্বিত্বহীন।

আমি পুরো লিখতে বসলে আমার একটা বইয়ের আকারে লেখা হয়ে যাবে কারণ আমি নিজে সমাজতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে বড় হয়েছিলাম এবং বিদেশী বিনিয়োগকে খারাপ বলে মনে করতাম। আস্তে আস্তে অনেক ভেবে দেখেছি এটাও ব্যবসার খেলা, লাভ করতেও পারো, লোকসান করতেও পারো (নাইজেরিয়া লোকসানের একটা উদাহরণ, আরেকটা দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার ক্রাইসিস পিরিয়োড)।

সবশেষে, একটা পার্সোনা দিই। করিম একটা বাংলাদেশের কোনো গ্রামের গরিব ঘরের বুদ্ধিমান ছেলে। সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার মত যোগ্য নয়, কিন্তু আরো অনেক কিছু ঝটপট শিখে ফেলে। এবার বলুন তার ক্ষেত্রে লাভ-লোকসানটা কেমন দাঁড়ায়। সে হয়ত একটা সাধারণ মোবাইল স্টেশনে মেকানিকের কাজ শিখে তার ওপর ভর করে বিদেশে পারি দিতে পারে। আগে হলে তাকে কোনো দক্ষতা ছাড়াই বিদেশে পাড়ি দিতে হত (দক্ষিণ এশিয়া বা বাংলাদেশের অনেকেই বিদেশে পাড়ি দেন ভাগ্য ফেরাবার জন্য - সে হিসাবেই বলছি)। এই যে নতুন দক্ষতা আর নতুন টেকনোলজিতে কাজ করার সুযোগ আসছে সেটার দাম আপনি কি ভাবে দেবেন? আমি হয়ত একটু বায়াসড কারণ আমাদের দেশে এটাকেই বিদেশী বিনিয়োগের সবথেকে বড় সাফল্য হিসাবে দেখানো হয়। কিন্তু এই ব্যাপারটাও ভেবে দেখার মতই, তাই না?


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

dinmojur এর ছবি

মোবাইলের একটা কল মানে...........
২২ শে নভেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:৪০

আগের খবরঃ বিশ্বব্যাংক পৌনে দুই হাজার কোটি টাকার ত্রান সহযোগীতা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকারকে!
এবারের দূর্যোগে সব মিলিয়ে প্রাপ্ত বৈদেশিক সহযোগীতা প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে!!!!

আসুন অংক কষি।
পাটীগণিত।
কিছু যোগ-বিয়োগ-গুন-ভাগ।

কয়েকটি মোবাইল কোম্পানি(অপারেটর) দিয়ে শুরু করি। নরওয়িজান গ্রামীণ ফোন, ইজিপশিয়ান বাংলালিংক, মালয়েশিয়ান একটেল, সিঙ্গাপুরিয়ান(সিংটেল) সিটিসেল(বাংলাদেশী শেয়ারও অবশ্য কিছু আছে)। .............

গ্রামীন ফোনের ঘোষিত গ্রাহক সংখ্যা ১৬ মিলিয়ন,
বাংলালিংকের ৫.৫ মিলিয়ন,
একটেলের ৫ মিলিয়ন,
সিটিসেলের ২মিলিয়ন......

সর্বমোট ২৮.৫ মিলিয়ন। মানে ২কোটি ৮৫ লক্ষ।
ধরি ৩৫ লক্ষ সিম আনইউজড।
তাহলে, অ্যাকচুয়াল গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ২.৫ কোটি।

এবার আসি কলরেটে.......
সিটিসেলের ২৫ পয়সা/মিনিট বা বাংলালিংকের ২৯ পয়সা/মিনিট বা গ্রামীনের ৬০ পয়সা/মিনিট স্পেশাল অফার থেকে শুরু করে নানা রকমের বাহারি প্যাকেজে নানা ধরনের কলচার্জ। ওয়ান টু ওয়ান বা ফ্রেন্ড এন্ড ফ্যামিলি নাম্বার ছাড়া অন্য মোবাইলে কল চার্জ ৯৯ পয়সা/ ১.৫০ টাকা/ ১.৭৫ টাকা (একই অপারেটর নম্বরে) থেকে ২.৫ টাকা/ ৩.০ টাকা/ ৩.৫০ টাকা (ভিন্ন অপারেটর নম্বরে) পর্যন্ত। ধরি, সরকারের ট্যাক্স ছাড়াই গড়ে কল প্রতি মোবাইল কোম্পানি গুলো নেয় ১.৫০ টাকা।

এবার তাহলে, আরেকটা এজাম্পসান করি। ধরি, প্রতি মোবাইল(প্রতি গ্রাহক) থেকে গড়ে দিনে ১০টি কল হয়। .........

তাহলে, একটি মোবাইল থেকে প্রতিদিন কলচার্জ বাবদ গ্রাহকের পকেট থেকে দিতে হয় ১.৭৫*১০= ১৭.৫০ টাকা।

২.৫ কোটি গ্রাহক প্রতিদিন দিচ্ছেন, ১৭.৫০*২.৫কোটি= ৪৩.৭৫ কোটি টাকা। ........

প্রতি মাসে আমরা দিচ্ছি ৩০* ৪৩.৭৫ কোটি= ১৩১২.৫ কোটি টাকা.........

মোবাইল কোম্পানি গুলো এটাকা আমাদের পকেট হাতিয়ে নিয়ে বিনিময়ে আমাদের কি কি দিচ্ছে?

কর্মসংস্থান।
ধরি, ঐ চারটি কোম্পানিতে সরাসরি চাকরি করছেন ১০ হাজার জন। গড়ে প্রতিজনের বেতন ৫০ হাজার টাকা। তাহলে, আমরা ওদের কাছ থেকে মাসে পাচ্ছি, ১০ হাজার* ৫০ হাজার= ৫০ কোটি টাকা।

ওদের কাছে তারপরও থাকে, ১৩১২.৫ কোটি - ৫০ কোটি= ১২৬২.৫ কোটি টাকা। ...........

ঐ কোম্পানী গুলো ইকুয়েপমেন্ট কিনে সুইডিশ এরিকসন, জার্মান সিমেন্স, চাইনিজ হুওয়ায়েই, ফিনীশ নোকিয়া, আমেরিকান মোটরোলা..... থেকে।

ফলে, এই টাকার একটা বড় অংশ যাচ্ছে এসব ভেন্ডর কোম্পানির হাতে। এসব ভেন্ডর কোম্পানী গুলো আমাদের কি কি দিচ্ছে?

কর্মসংস্থান।
আবারো ধরি, এই কোম্পানি গুলোতেও বেতন বাবদ মাসে আমরা (মোট ১০ হাজার জন কর্মরত, মাথাপিছু বেতন গড়ে ৫০ হাজার টাকা) পাই ৫০ কোটি টাকা। .............

তারপরেও, আমরা প্রতিমাসে ঐসব বিদেশী বেনিয়াদের হাতে তুলে দিচ্ছি, ১২৬২.৫ কোটি - ৫০ কোটি টাকা= ১২১২.৫ কোটি টাকা। ...............

......................................
..........................................

বিঃ দ্রঃ
১। সবই এজাম্পশান।
২। ভ্যাট বাবদ সরকারকে যা দেয় সেটাও কলপ্রতি গ্রাহকের কাছ থেকে কেটে নেয়, কলচার্জ ১.৫০ টাকা ধরা হয়েছে সেই ভ্যাট ছাড়া।
৩। প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ।
৪। পরে আরো লিখবো, আরো কিছু ফিগার সহ।

অনুশীলনীঃ
১। হিসাব করুন তো- বিশ্ব(ঘাতক)ব্যাংকের প্রদত্ত ভিক্ষা না নিতে আমাদের কয় মাসের মোবাইল খরচ উত্সর্গ করা দরকার?
২। সকল বিদেশী ভিক্ষা ত্যাগ করতে আমাদের কয় মাসের মোবাইল খরচ উত্সর্গ করতে হবে?

সালেহিন এর ছবি

পাটীগণিত।
কিছু যোগ-বিয়োগ-গুন-ভাগ।

শুধু পাটি গণিতে জীবন চললে তো ভালই হত!! সিদ্ধান্ত নিতে আর কোন সমস্যা থাকত না। একটা calculator, নিদেন পক্ষে একটা খাতা আর কলম দিয়ে কিছু যোগ-বিয়োগ করেই জীবনের গুরত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গুলি নেয়া যেত।

সকল বিদেশী ভিক্ষা ত্যাগ করতে আমাদের কয় মাসের মোবাইল খরচ উত্সর্গ করতে হবে?

মোবাইল খরচ উৎসর্গ করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের productivity কতখানি হ্রাস পাবে, সেটাও একটু হিসেব করা উচিত ছিল।

আলমগীর এর ছবি

আমি ধরেন অংকে আরো কাঁচা:
আমাদের বাৎসরিক খাদ্য চাহিদা কত?
আমাদের বাৎসরিক উৎপাদন কত?
আমাদের বাৎসরিক আমদানি কত?
ফলাফল কী হয়? ধণাত্বক না ঋণাত্বক?

আরেকটা ছোট অংক:
ইউরোপ আর আমেরিকা বাদে প্রতিটি দেশের সাথেই আমাদের আমদানি-রপ্তানি বৈষম্য।
2004 সালে:
ভারত রপ্তানি করেছে ১৭০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
বাংলাদেশ করেছে ৮০ মিলিয়ন।

ভারতের সাথে প্রতি বছর আমাদের বৈষম্য কত?
কয় বছর পর ভারত আমাদের গায়ের সুতোটাসহ কিনে নিতে পারবে?

রাগিব এর ছবি

একটা ছোট্ট প্রশ্ন, মোবাইল কোম্পানী গুলোর আয় ও বিনিয়োগের কোনো পরিসংখ্যান কোথায় পাওয়া যাবে, তা কি কেউ জানেন?

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

সুমন এর ছবি

আপনি গ্রামীণফোনের ওয়েবে পাবেন।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

দুই বছর আগের একটা হিসাব করেছিলেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ_তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ রক্ষা এবং ফুলবাড়ী আন্দোলনের অন্যতম নেতা_ আমি আপনাকে পরে পাঠাব।


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সবজান্তা এর ছবি

মূল লেখা পড়লাম।

মন্তব্যগুলি সব পড়ে শেষ করতে পারলাম না। আমার একটা পয়েন্ট বলার ছিলো, জানি না আগেই কেউ মন্তব্যের ঘরে বলে দিয়েছেন কিনা।

মোবাইল ফোন কোম্পানি বিশেষত সদ্য আসা ওয়ারিদ টেলিকম তাদের মূলধনের উল্লেখযোগ্য এক অংশ হিসেবে বিশাল অংকের টাকা কর্পোরেট লোন নিয়েছিল, আমাদের দেশের ব্যাংকগুলি থেকে।
তারা ব্যবসা করে সে টাকা শোধ করে দিচ্ছে এবং লাভের টাকা নিজের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যদি আমরা ওদেরকে আমাদের দেশ থেকে টাকা ধার নিতে না দিয়ে, বাধ্য করতাম ওদের দেশ থেকেই টাকা নিয়ে আমাদের দেশে এনে ব্যবসা করার জন্য, তাহলে কি আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়তো না ? এতে কি আমাদের অধিক লাভ হতো না ?

বলা বাহুল্য মাত্র, আমিও একজন প্রকৌশল বিদ্যার ছাত্র, এবং অর্থনীতি জ্ঞান আমারও তলানীতে।


অলমিতি বিস্তারেণ

অয়ন এর ছবি

৪০০ বছর আগে ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানী যেই আইডিওলজীতে ব্যবসা করতো আজকের মাইক্রোসফট, শেভরন কিংবা রেগুলেশনের ভয়ে NASDAQ থেকে ডিলিস্টেড হওয়া টেলিনর একই আইডিওলজী অনুসরণ করে। কিন্তু তাতে দোষের কি আছে? মসজিদের গেটের ঠিক পাশের জায়গাটা বৃদ্ধ ভিখারী করিমউল্লাহর খুব প্রিয়, কাজেই একপা অচল কিশোর ভিখারী সাদ মিয়া যখন সকাল বেলা এসে সেই জায়গাতে বসে থাকে, করিমউল্লাহর তখন সাদ মিয়ার গায়ে একটা লাঠির বাড়ি মারতে কোন সমস্যা হয় না। মনোপলিতে সবাই এক, শুধু প্রেক্ষাপট ভিন্ন। মোবাইল কোম্পানীকে দোষ দেয়াটা আসলেই অর্থহীন মনে হয়।

আর আমি প্রতি ছয় মাসে ৩০০ টাকার মোবাইল কার্ড কিনি। প্রতি মাসে ৫০ টাকা দিতে হয় মোবাইল কোম্পানীকে। খুব বেশী দেই বলে তো মনে হয় না।

দুর্দান্ত এর ছবি

টেলেনর কি নাসডাক থেকে ডিলিস্টেড হয়েছে নাকি নাসডাক টেলেনর কে কাস্টমার হিসাবে হারিয়েছে?

ঢাকার স্টক এক্সচেঞ্জ যেরকম মাতবরি করে দেশী কম্পানির ওপর লাঠি ঘোরায়, পশ্চিমের স্টক এক্সচেঞ্জের সেলসের লোকের তেমনি কমিশন/ভল্যুমের টানে দৌড়ের উপর থাকে। মার্কিন পুঁজির মিঠা ভাব কমে আস্তে শুরু করাতেই অনেক ইউরোপিয়ান কম্পানিই নাসডাক, এন ওয়াই এস ই ইত্যাদি ছেড়ে গেছে, আর তাদের পেছন পেছন দুবাইওয়ালাদের কাঁধে ভর করে নাসডাকই ইউরোপ আর মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমিয়েছে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

পোস্টের সাথে একমত।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

চাপা ১: বৈদেশিক বিনিয়োগের ফলে রপ্তানী বাড়ে, আমদানী কমে এবং এর মাধ্যমে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষা হয়।

খন্ডন: প্রকৃতপক্ষে বৈদেশিক বিনিয়োগ কোন একটি দূর্বল অর্থনীতির দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যকে আরও বেশি সংকটাপন্ন করে তোলে। কিভাবে ? আমদানী করা যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল, নকশা, প্রকৌশল-জ্ঞান ইত্যাদির খরচ উত্পাদী পণ্যের রপ্তানীর ফলে প্রাপ্ত আয়ের চেয়ে বেশি দেখানো হয়। ফলে একদিকে আমদানি খরচ বাবদ বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা সরাসরি বিদেশে পাচার করা হয় অন্যদিকে লোকসান দেখানোর মাধ্যমে বাঁচা যায় ট্যাক্সের হাত থেকেও।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলো উত্পাদিত পণ্যটিকে অন্যকোন দেশে অবস্থিত তাদেরই কোন শাখা/সহযোগি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। আর এই আন্তঃকোম্পানি লেনদেনের মাধ্যমে রপ্তানী পণ্যের মূল্য তুলনামূলকভাবে কম দেখানো হয়, ফলে সংশ্লিষ্ট দেশটি বৈদেশিক মুদ্রা এবং ট্যাক্স বাবদ বিপুল আয় থেকে বঞ্চিত হয়। এই পদ্ধতিটি করপোরেট দুনিয়ায় 'ত্রিভুজ বাণিজ্য' হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। কম মূল্যেও এই রপ্তানিটি করা হয় এমন এলাকায় যেখানে ট্যাক্সের হার কম বা একেবারে নেই, যেমন সিঙ্গাপুর বা বারমুডা। তারপর সেই ট্যাক্সস্বর্গ থেকে পণ্যটিকে প্রকৃত বাজারমূল্যে তার চুড়ান্ত গন্তব্যে রপ্তানি করা হয়।
আন্তঃকোম্পানি লেনদেনের ক্ষেত্রে ত্রিভুজ বাণিজ্য করা হয় পণ্য উত্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানির বেলায়ও। তবে এ ক্ষেত্রে পণ্যের অব-মূল্যায়নের পরিবর্তে করা অতি-মূল্যায়ন। উদ্দেশ্য কিন্তু একই- ট্যাক্স ফাঁকি। এভাবে বিনিয়োগ যত বাড়তে থাকে তার সাথে বাড়তে থাকে পাচার হওয়া বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ। ২০০৫ সালের মে মাসে ভেনিজুয়ালার সরকার নব্বই দশকের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বৈদেশিক কোম্পানিগুলোর ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি ট্যাক্স-ফাঁকির এক হিসাব প্রকাশ করে। রাশিয়ার পুরো তেল এবং গ্যাস সেকটরটিকেই হজম করে ফেলেছে বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং তাদের স্থানীয় দালাল চক্র। এরকম দুটি চক্রের হোতা প্লাটোন লেবেডেফ ও মিখাইল খদরকভস্কি কে ২৯ বিলিয়ন ডলার ট্যাক্স ফাঁকির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

চাপা ২: বৈদেশিক বিনিয়োগ একটি দেশের রপ্তানী খাতকে অধিকতর প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে এবং স্থানীয় বাজারেরও বিকাশ ঘটায়।

খন্ডন: প্রকৃতচিত্র হলো বিনিয়োগকারীরা স্বল্পমূল্যে লোভনীয় খনিজ সম্পদ কেনে এবং অতি অল্প মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে বা কোন মূল্য সংযোজন ছাড়াই বিদেশে রপ্তানী করে। এভাবে কোন মূল্যসংযোজন ছাড়াই মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ বিদেশে পাচার করার মধ্যেই রপ্তানী খাতে প্রতিযোগিতামূলক হওয়ার সকল মহিমা নিহিত!
আর স্থানীয় বাজার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে দেখা যায় বিভিন্ন সেবাখাত যেমন: টেলিকমিউনিকেশন ইত্যাদি পুঁজিঘন খাতের ব্যাপক বিকাশের মাধ্যমে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা স্রেফ সামান্য ট্যাক্সের বিনিময়ে বিনিয়োগকারি বহুজাতিক কোম্পানিটি তুলে নিয়ে যায়। আর পানি, বিদ্যুত, যাতায়াত ও পরিবহন ইত্যাদি খাতে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার ফলে স্থানীয় বাজারের সংকোচন ঘটে যার ফলাফল স্বরূপ একদিকে যেমন লোকবল ছাটাই করা হয় অন্যদিকে তেমনি এই সেবাগুলো ক্রমশঃ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরেও চলে যায়। বলিভিয়ায় নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল খাতের বেসরকারিকরণ এইসব খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের ফলাফল স্বরূপ বিনিয়োগকারি বিপুল পরিমাণ মুনাফা লুটে নিলেও স্থানীয় অর্থনীতিতে এর প্রতিক্রিয়া হয় ভয়ংকর। গ্যাস ও পেট্রলিয়াম-জাত পণ্যেও প্লান্টগুলোতে হাজার হাজার শ্রমিক চাকুরিচ্যুত হয়। অন্যদিকে স্থানীয় নিম্ন আয়ের ভোক্তাদের আওতার বাইরে চলে যায় এসব পণ্য।

চাপা ৩: বৈদেশিক বিনিয়োগের ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়, শ্রমিকের মজুরী বাড়ে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়।

খন্ডনঃ যে কোন বিনিয়োগের ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি অনেকগুলো সূচকের উপর নির্ভরশীল: বিনিয়োগের ধরণটি কি শ্রমঘন না পুঁজিঘন, সংশ্লিষ্ট খাতটিতে বিদেশী বিনিয়োগের ফলে দেশীয় শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো এর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকবে কি না, যদি না টেকে তবে সে ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান হারানো শ্রমিকের তুলনামূলক সংখ্যা ইত্যাদি।
সাধারণভাবে উন্নত পুঁজিবাদী দেশে শ্রমিকের উচ্চ মজুরীর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ তৈরী হওয়া পুঁজিঘন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ও চালনার জন্য তুলনায় অনেক কম শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। ফলে বিনিয়োগের সার্বিক প্রতিক্রিয়া হয়ে দাঁড়ায় ঋণাত্মক।
আর মজুরিরি উচ্চহারের ব্যাপারে বলা যায় তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত একটি দেশের অনুন্নত একটি কাঠামো থাকা সত্বেও সেসব দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আসার গুটিকয়েক কারণের মাঝে একটি হলো সস্তা-শ্রম। যে বিনিয়োগকারী সস্তা শ্রমের জন্য সাত-সমুদ্দর পাড়ি দিয়ে অন্য একটি দেশে আসে সেই বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগের সুফল হিসেবে মজুরীর উচ্চারকে উপস্থাপন করা স্রেফ হাস্যকর। এ প্রসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে টাটার প্রস্তাবিত মোটর গাড়ি কারখানায় যে বিশেস পদ্ধতিতে গাড়ি তৈরী করা হবে সেই 'ম্যানটেক' পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। পেন্টাগণের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৮ সালে সালে 'ম্যানটেক' নামক প্রকল্পে উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে বাড়তি মুনাফার উদ্দেশ্য কী, তা টাটাদের সিঙ্গুর মোটরগাড়ি প্রকল্পের পটভূমিতে একটু দেখে নেয়া যেতে পারে।
টাটার প্রস্তাবিত মোটর গাড়ি কারখানার মূল কারখানাটি হবে স্রেফ একটি যন্ত্রাংশ জোড়া দেয়ার কারখানা। কোন যন্ত্রাংশই টাটা কর্তৃপক্ষ উত্পাদন করবে না। সেগুলো উত্পাদন করবে বিভিন্ন ছোট ছোট ভেন্ডর কোম্পানী। প্রচলিত শিল্প আইন অনুসারে সব যন্ত্রাংশ যদি টাটার মূল কারখানায় তৈরী হয় তবে এর সঙ্গে জড়িত সব শ্রমিককেই (যার সংখ্যা সরকারি হিসাবে ১১ হাজার হওয়ার কথা) মোটর গাড়ি শিল্পের প্রচলিত মজুরি দিতে হতো এবং অন্য সংগঠিত ক্ষেত্রের মত তাদেরও কিছু কিছু অধিকারও সুরক্ষিত থাকতো। ম্যানটেক ব্যবস্থায় সেদেশের সরকারের বক্তব্য ঠিক হলে ৮০০ জন হবেন মোটর গাড়ি শিল্পের শ্রমিক, বাকি প্রায় ১০০০০ জন হবেন অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক যাদের মজুরি, কাজের সময়, চাকুরির নিরাপত্তা বলতে কিছুই থাকবে না। লেদ মেশিনে যে শ্রমিক কাজ করবেন, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী তাঁর দৈনিক মজুরি হবে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। মটর গাড়ি শিল্পের মজুরি ব্যবস্থা অনুযায়ী দু থেকে আড়াই গুন পাওয়ার কথা। শুধু ভারতের টাটা কেন, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিদেশী বিনিয়োগকারী বহুজাতিক মোবাইল কোম্পানিগুলোও ঠিক এই পদ্ধতিতে শ্রম শোষণ করে বিপুল মুনাফা কামিয়ে নিচ্ছে।
বিদেশী বিনিয়োগের ফলে সৃষ্ট কর্মসংস্থান বিষয়ে জাতিসংঘ একটি গবেষণা চালায়। রিপোর্টটির কিছু অংশ এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে:
"বিদেশী ফার্ম সমযোগ্যতার শ্রমিককে স্থানীয় ফার্মেরও চেয়ে বেশী মজুরী দিতে পারে। এফডিআই যেহেতু দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করে সেহেতু এর ফলে দরিদ্র অদক্ষ শ্রমিকের কোন উপকার হয় না বরং দক্ষ/অদক্ষ শ্রমিকের শ্রম-পার্থক্য বেড়ে যায়............।"
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে:
"বৈদেশিক ফার্ম স্থানীয় ফার্মের চেয়ে বড় হয় এবং ফলে এটা ধরে নেয়া স্বাভাবিক যে নতুন নতুন ক্ষেত্রে বৈদেশিক বিনিয়োগ স্থানীয় বিনিয়োগের চেয়ে অধিক কর্মসংস্থান করবে। কিন্তু বৈদেশিক বিনিয়োগ ছুটতে থাকে স্থানীয় শিল্পগুলোর একীভবন ও আত্মীকরণের পেছনে। ফলে কর্মসংস্থান বাড়বেই একথা বলা যায় না। যদি বিদেশী কোম্পানীগুলো অধিকতর পুঁজিঘন হয় তবে শিল্পখাতে কর্মসংস্থান কমে যাবে(যদিও কিছু শ্রমিকের আয় বাড়তে পারে!)। যদি সেই কোম্পানী স্থানীয় কোম্পানীর সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় তবে অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও কর্মসংস্থান কমে যাবে.............।"

চাপা ৪: বৈদেশিক বিনিয়োগের ফলে গ্রহীতা দেশটি প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত হতে পারে। বৈদেশিক বিনিয়োগ না হলে একটি অনুন্নত দেশের পক্ষে যা অসম্ভব।

খন্ডনঃ বাস্তবে "প্রযুক্তি স্থানান্তরের" মানে হলো পুঁজিঘন জটিল যন্ত্রপাতির স্রেফ ব্যবহারের কলাকৌশল রপ্তানী। আর কোন একটি প্রযুক্তি গুটিকয়েক শ্রমিক স্রেফ ব্যবহার করা শিখলেই সে দেশ প্রযুক্তিতে উন্নত হয় না। এর প্রয়োজন দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নিজস্ব গবেষণাকে শক্তিশালী করা। বহুজাতিক কোম্পানী কেবল তার মুনাফার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রপ্তানী করে, সেসব যন্ত্রপাতি চালনা ও মেরামতের জন্য বিদেশী পরামর্শ নিয়োগ করে কিন্তু কখনই তার গবেষণাগারটিকে স্থানীয় পর্যায়ে সম্প্রসারিত করে না। যে কারণে গ্রহীতা দেশটি সেই প্রযুক্তির জন্য বিভিন্নভাবে বিনিয়োগকারী কোম্পানী এবং তার দেশের উপর আরো বেশী নির্ভরশীল হয়ে পড়তে থাকে। ফলে, বিনিয়োগের ফলে প্রযুক্তি স্থানান্তর বলতে যা ঘটে তা হলো বিনিয়োগকারী কোম্পানীর সহযোগী যন্ত্র উত্পাদনকারী কোম্পানীর আরেকটি নতুন বাজার সৃষ্টি হয়।
আবার অনুন্নত অবকাঠামো থাকা সত্বেও যে কয়টি কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগ একটি অনুন্নত দেশে আসে তার একটি কারণ ইতিপূর্বে বলা হয়েছে- শ্রমের নিম্ন মূল্য। আরেকটি বড় কারণ হলো বিশ্বজুড়ে ক্রমশ গড়ে উঠা পরিবেশ সচেতনতা। বিনিয়োগকারী কোম্পানী যখন নিজ দেশে ক্রমাগত পরিবেশের হুমকি স্বরূপ প্রযুক্তিটি ব্যবহারে বাঁধা পেতে থাকে এবং ফলত: কারখানার বর্জশোধনে উত্পাদন ব্যয় ক্রমাগত বাড়তে থাকে তখন সেই কোম্পানীটি বৈদেশিক বিনিয়োগের মহান কর্মটি সম্পন্ন করে।

এসকল কারণে যতদিন যাচ্ছে ততই বৈদেশিক বিনিয়োগ নিয়ে বিশ্বব্যাংক, আই.এম.এফ., বহুজাতিক কোম্পানী ও তাদের স্থানীয় দালালদের করা চাপাবাজি জনগণের কাছে পরিস্কার হয়ে আসছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে জনগণ বৈদেশিক বিনিয়োগের নামে প্রাকৃতিক সম্পদ লুন্ঠন, সস্তা-শ্রম শোষণ, আর জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি সাধনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। বিশেষত ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে একের পর যে গণজাগরণ ঘটে চলেছে তার অন্যতম অনুঘটক হলো বিনিয়োগের নামে এই সম্পদ লুন্ঠনের বিরুদ্ধে জনগণের পুঞ্জীভুত ক্ষোভ। যেহেতু জনগণ উপলব্ধি করছে যে এই বিনিয়োগের নামে সম্পদ লুন্ঠন অনুমোদনের সিদ্ধান্তটি একান্তই রাজনৈতিক এবং এর সাথে রাষ্ট্রক্ষমতার সম্পর্কটি যুক্ত, তাই সেই গণ আন্দোলন গুলো স্বাভাবিকভাবে চালিত হচ্ছে চুড়ান্ত অর্থে রাষ্ট্র-ক্ষমতা দখল এবং তার মাধ্যমে একটি সামাজিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা যার মূলনীতি মুনাফার বদলে হবে সাম্য ও ন্যায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

********দিনমজুর*****
(dinmojur@yahoo.com)

অতিথি লেখক এর ছবি

*********দিনমজুর******

বর্তমানে গ্রামীণ ফোনের ইয়ারলি নেট অপারেটিং প্রোফিট ৮০০ মিলিয়ন ইউএসডি, বাংলালিংক ও একটেল উভয়ের ২০০ মিলিয়ন ইউএসডি করে। একসময় জিপি'র মান্থলি অপারেটিং প্রোফিট ২০০ মিলিয়ন ইউএসডি বেশী ছিল!

(অপারেটিং প্রোফিট মিনস আফটার কাউন্টিং ভেরিএবল কস্ট, বেতন-ভাতা, ট্যাক্স, বিপনন-এডভার্টাইজমেন্ট, স্পন্সর- বিসিসিবি সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রদানকৃত ভিক্ষাদি ইত্যাদি।)

রাগিব এর ছবি

তাহলে এই ১২০০ মিলিয়ন ডলার (১২০ কোটি ডলার, ৮৪০০ কোটি টাকা? ঠিক আছে তো হিসাব?) হলো আমাদের উন্নয়নের জোয়ারের মূল্য?

এই খানে এসেই আমার হিসাবে গিট্টু লেগে যায়। যতো যুক্তিই শুনি না কেনো, এতো টাকার বিপরীতে সমপরিমাণ না হোক, এক দশমাংশ "উন্নয়ন" দেখতে পেলেও খুব ভালো লাগতো।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

শামীম এর ছবি

গণকের মাস্টার তো ঝটিল প্রশ্ন করেছিলেন!!

দিনমজুর ভাইকে জাঝা।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সিরাত এর ছবি

ইন্টারেস্টিং! হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।