জেনে রাখুন, ধর্মীয় অবমাননা সংক্রান্ত বাংলাদেশের আইন - ও তার প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ

রাগিব এর ছবি
লিখেছেন রাগিব (তারিখ: সোম, ০৮/০৪/২০১৩ - ১০:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাঁচতে হলে, জানতে হবে।

বাংলাদেশে এখন চলছে হেফাজতের হাওয়া, সুযোগমতো সবাইকে নাস্তিক ট্যাগ লাগিয়ে দিয়ে কল্লা চাই টাইপের দাবি দাওয়ার যুগ। আর হেফাজতের একটা বড় দাবি হলো ধর্মীয় অবমাননার ব্যাপারে আইন করা। ভাবখানা এমন যে, এই দূরাচার সরকারের আমলে বাংলাদেশের আইনে যেনো এই ব্যাপারে কিছুই নাই।

কখন কীভাবে কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত লেগে যায়, কে জানে ... টেকনিকালি বলতে গেলে বিজ্ঞান শিক্ষার অনেকটুকুকেই ধর্মীয় অবমাননা বলে ট্যাগিং দেয়া চলে। ঘাড়ে মাথা একটাই, তাই ভাবলাম ক্লিয়ার হয়ে নেই ব্যাপারটা।

আমি আইনজ্ঞ নই, নিতান্তই যন্ত্রগণকের মিস্তিরি, তাই আদার ব্যাপারী হতে গেলে গুগল মামার দ্বারস্ত হতে হয়। বাংলাদেশের ধর্মীয় আইন নিয়ে খোঁজাখুজি করে পেলাম দুইটা ব্যাপার। প্রথমটাই আগে দেই, ১৮৬০ সালে সেই ব্রিটিশ আমলে করা ফৌজদারী আইনে কী বলা আছে, তার একটা লিস্ট। নিচের তালিকায় সংখ্যাগুলা হলো দণ্ডবিধির ধারার নম্বর, আর অপরাধ/শাস্তির অংশটা আমি বাংলায় লিখে দিলাম।

--

১৮৬০ সালের পেনাল কোড

মসজিদ/মন্দির/ধর্মীয় বস্তু ভাঙা - সর্বোচ্চ ২ বছর

295. Whoever destroys, damages or defiles any place of worship, or any object held sacred by any class of persons with the intention of thereby insulting the religion of any class of persons or with the knowledge that any class of persons is likely to consider such destruction, damage or defilement as an insult to their religion, shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to two years, or with fine, or with both.

ধর্মীয় অবমাননার উদ্দেশ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে খোঁচাখুচিমূলক লেখা বা কথা বলার শাস্তি - সর্বোচ্চ ২ বছর

295A. Whoever, with deliberate and malicious intention of outraging the religious feelings of any class of the citizens of Bangladesh, by words, either spoken or written, or by visible representations insults or attempts to insult the religion or the religious beliefs of that class, shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to two years, or with fine, or with both. (এটা মূল ১৮৬০ আইনে ছিলোনা, কিন্তু ১৯২৭ সালে যোগ করা হয়)

পূজা, নামাজ ইত্যাদিতে বাগড়া দেয়া, সর্বোচ্চ ১ বছর

296. Whoever voluntarily causes disturbance to any assembly lawfully engaged in the performance of religious worship, or religious ceremonies, shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to one year, or with fine, or with both.

কবর ধ্বংস করা, শেষকৃত্যে বাধা দেয়া, সর্বোচ্চ ১ বছর

297. Whoever, with the intention of wounding the feelings of any person, or of insulting the religion of any person, or with the knowledge that the feelings of any person are likely to be wounded, or that the religion of any person is likely to be insulted thereby, commits any trespass in any place of worship or on any place of sepulture, or any place set apart for the performance of funeral rites or as a depository for the remains of the dead, or offers any indignity to any human corpse, or causes disturbance to any persons assembled for the performance of funeral ceremonies, shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to one year, or with fine, or with both.

কাউকে শুনিয়ে শুনিয়ে ধর্ম নিয়ে খোঁচা দেয়া, গালি দেয়া, অঙ্গভঙ্গি করা (সর্বোচ্চ ১ বছর)

298. Whoever, with the deliberate intention of wounding the religious feelings of any person, utters any word or makes any sound in the hearing of that person or makes any gesture in the sight of that person or places any object in the sight of that person, shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to one year, or with fine, or with both.

(মন্তব্য - ফেইসবুকে বা অন্যত্র কাউকে মালাউন, নাসারা, বা নেড়ে টাইপের কথা কেউ বললে মনে হয় তার উপরে এই ধারাটা প্রযোজ্য হবার কথা)

(মন্তব্য - ২৯৫ ধারার সবটা পড়ে যা মনে হলো, সেই দেড়শ বছর আগের আইনেই মোটামুটি সবদিক দেখা হয়েছে। একটু তফাত আছে, এই আইন বাস্তবায়ন হয় কেবল একপেশে ভাবেই, মানে হিন্দু/বৌদ্ধ/খ্রিস্টান ধর্মের ক্ষেত্রে কাজীর গরুটা কাগজেই আছে, গোয়ালে নাই।)
---

এই লেখাটা লেখার পরে দুজন (জাবেদ ও শামীম) আইসিটি আইনের কথা মনে করিয়ে দিলেন, সেটা বাদ গিয়েছিলো।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬

৫৭৷ (১) কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসত্ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান করা হয়, তাহা ইহলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ৷

(২) কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক দশ বত্সর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন৷

বাংলাদেশে ২৯৫ ধারার প্রয়োগ

এবারে আসি পরের ব্যাপারটায়। উইকিপিডিয়াতে পেলাম একটা মাঝারি সাইজের তালিকা - সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশে এই দণ্ডবিধির নানা (অপ) প্রয়োগের একটা তালিকা দেয়া আছে।

এই তালিকায় যেসব মামলার কথা পেলাম, তার মধ্যে ইন্টারেস্টিং লাগলো বুয়েটের অধ্যাপক আলী আসগর স্যারের বিরুদ্ধে মামলার কথা। বিএনপি-জামাতের জোট সরকারের শাসনামলে সংসদ সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি প্রফেসর আলী আসগরের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা ঠুকে দেন। স্যারের "অপরাধ"? ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিৎ না, এই রকমের একটা মন্তব্য করেছিলেন মাত্র!!

বাংলাদেশে এই ২৯১ ধারার নানা প্রয়োগের ইতিহাসের ব্যাপারে ডাঃ রুমি আহমেদ ভাইয়ের একটা বিস্তারিত লেখা এখানে রয়েছে, পড়ে দেখুন


মন্তব্য

শিশিরকণা এর ছবি

বাচতে হলে জানতে হবে।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

দিগন্ত এর ছবি

পাকিস্তানে এর ওপরে ২৯৫বি আর ২৯৫সি - দুটো অতিরিক্ত ক্লস যোগ করেছে। বি ধারা কোরাণের অবমাননার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ও সি ধারা হজরত মহম্মদের সম্পর্কে কটূক্তির ক্ষেত্রে। এর পরে ২৯৮ আছে যাতে অন্যান্য ইসলামী চরিত্র (জ্বীন ?) অবমাননা ও আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার ব্যাপার আছে। উল্লেখ্য যে ২৯৫ সি ধারায় শাস্তি যাবজ্জীবন অথবা মৃত্যুদণ্ড। এই আইনের বলে বলীয়ান হবার ফলে পাকিস্তানে ১৯৮৬ সালের পর থেকে চার হাজারের ওপর ব্লাসফেমি কেস ফাইল করা হয়েছে যেখানে ১৯২৭ থেকে ১৯৮৬ অবধি পাকিস্তানে ব্লাসফেমি কেস দশটিও ছিল না। সুতরাং, ব্লাসফেমি আইন একবার এলে কি ঘটবে বুঝতেই পারছেন। [সূত্র]
ভারতেও একই আইন আছে, মকবুল ফিদা হুসেনকে এই আইনেই দেশছাড়া করা হয়েছে। আমি ফ্যাক্ট শিট পেলেই পোস্ট করছি। ভারতে এই আইনবলে বাল থ্যাকারের সমালোচকদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

কানা বাবা এর ছবি

কন কি ভাই! জ্বীনের অবমাননা করলেও শাস্তি! খাইছে!

অবশ্য আমার চিন্তা নাই, বুদ্ধিমান আমি ফেসবুকে 'জ্বীন জাতির ইতিহাস' পেজে লাইক দিসি অনেক আগেই। এখন জ্বীনানুভূতি অনেক পোক্ত হইছে।

/----------------------------------------------------
ওইখানে আমিও আছি, যেইখানে সূর্য উদয়
প্রিয়দেশ, পাল্টে দেবো, তুমি আর আমি বোধহয়
কমরেড, তৈরি থেকো,গায়ে মাখো আলতা বরণ
আমি তুমি, আমি তুমি, এভাবেই লক্ষ চরণ।।

দিগন্ত এর ছবি

আসলে আমি ভুল বুঝেছিলাম - জ্বিন না, ইসলামী চরিত্র বলতে হজরত মুহাম্মদের সঙ্গীসাথী ও খলিফাদের বোঝানো হচ্ছে। আইনের ব্যাখ্যায় লেখা আছে এইরকম -
"Whoever by words, either spoken or written, or by visible representation, or by any
imputation, innuendo or insinuation, directly or indirectly, defiles the sacred name of any
wife (Ummul Mumineen), or members of the family (Ahle-bait), of the Holy Prophet
(peace be upon him), or any of the righteous Caliphs (Khulafa-e-Rashideen) or companions
(Sahaaba) of the Holy Prophet (peace be upon him) shall be punished with imprisonment
of either description for a term which may extend to three years, or with fine, or with both."


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

স্যাম এর ছবি

খাইসে!

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

টেকনিকালি বলতে গেলে বিজ্ঞান শিক্ষার অনেকটুকুকেই ধর্মীয় অবমাননা বলে ট্যাগিং দেয়া চলে।

- খুব স্বাভাবিক - অটঃ জো নায়েক নিয়ে হেফাজত এর মনোভাব জানতে ইচ্ছা করছে

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

উত্তম জাঝা!
সময়পোযোগী

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

হাসিব এর ছবি

৯২-৯৩র দিকে জামাত চেষ্টা করেছিলো আইনের মধ্যে পাকিস্তানি ঐ ধারাগুলো ঢোকাতে। সফল হয় নাই। আমি সেটার রেফারেন্স খুজে পাচ্ছি না। এখানে যোগ করে দেবো পেলে।

robot  এর ছবি

ওই সময় জামাতের হয়ে ফিল্ডওয়ার্ক (উস্কানি, নৈরাজ্য এইসব আরকি) করসিলেন তিন হক। শা্যখুল হাদিস আজিজুল হক, ফজলুল হক আমিনী আর খতিব ওবায়দুল হক। সেইসময় অবশ্য আমাদের মেইনস্ট্রিম বুদ্ধিজীবিরাও এত মেরুদন্ডহীন ছিলেন না আর আওয়ামী লীগও হারামীপমনায় এত উৎকর্ষ লাভ করেনাই। যেকারণে "জামাত এ‌্যান্ড দ্যা হকস" অত সুবিধা করতে পারেনাই।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

শুধু ব্লাসফেমি না... বাংলাদেশের আইনে ব্রিটিশ আমলের কী কী ধারা আছে তার সবকিছুই রিভিউ করা দরকার। ১৮৬০ সাল থেকে এই ভূ-খণ্ড দুই বার স্বাধীন হয়েছে, তবু কেন এত পুরনো আইন বয়ে বেড়াতে হবে? ঔপনিবেশিক আইনেই যদি চলবো, তাহলে স্বাধীনতার কী দাম থাকলো?

ব্লাসফেমি আইনকে পৃথক ভাবে না দেখে অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইনের মতো বিধিগুলোর অপপ্রয়োগও বিচার্যে নিলে পুরো চিত্র বুঝতে আরও সহজ হবে।

রাগিব এর ছবি

ব্রিটিশ আমলের আইন আছে বলেই কিন্তু এর মধ্যে শরিয়া আইনের কথা ফাকেতালে ঢুকে পড়েনি। তখনকার আইনই বরং অনেকটা ধর্মনিরপেক্ষ। তুমি আসল আইনের সাথে পাকিস্তানের আইনের তুলনা করে দেখো।

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

গুড পয়েন্ট। একদম ধর্মনিরপেক্ষ ভাবে ঔপনিবেশিক সব আইন।

মনি শামিম এর ছবি

চলুক

দ্রোহী এর ছবি

১।
ধর্মানুভূতিতে আঘাতের বিষয়টা নির্ধারণ করা হবে কীভাবে? কোন কাজ একজনের চোখে ধর্মানুভূতিতে আঘাতের সামিল হলে আরেকজনের চোখে তা নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে ধর্মানুভূতিতে আঘাতের বিষয়টাকে কার দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হবে?

ধর্মানুভূতিতে আঘাতের ধুয়া তুলে কেউ যে ফায়দা হাসিল করছে না সেটাই বা কীভাবে নির্ধারণ করা হবে?

২।
দ্বিতীয় পয়েন্ট হচ্ছে যেহেতু নাগরিকত্ব ধর্মের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না তাই শুধুমাত্র ধার্মিকদের অনুভূতি থাকবে কেন? যদি কেউ কোন প্রকারের ধর্ম পালন করায় আগ্রহী না হয় তাহলে তার মত প্রকাশের বিধান কী হবে?

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

কথার কারণে (তা সে যে কথাই হোক) শারীরিক শাস্তি আমার কাছে হাস্যকর আইডিয়া। খুব রেয়ার কেইসের বাইরে কথার ভৌত ক্ষতি মেজার করা একটা অনির্ণেয় ব্যাপার। এই ধরনের ব্যাপার আইনে থাকতে দেয়া মানে রিপ্রেশনের একটা হাতিয়ার বাজারে সুপ্রাপ্য রাখা। সুযোগ বুঝে এটা একবার এর বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে একবার ওর বিরুদ্ধে। একবার আমার শত্রুর বিরুদ্ধে, একবার আমার বিরুদ্ধে।

সাকিন উল আলম ইভান  এর ছবি

চলুক একেবারে সময়উপযোগী পোষ্ট ভাইয়া।

হিমু এর ছবি

সাঈদীর প্রায় সব ওয়াজের সিডিই তো পেনাল কোডের এইসব ধারার কবলে পড়ে বাজেয়াপ্ত হওয়া উচিত।

মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান এর ছবি

সেইসাথে বাঁশেরকেল্লাই অনেক ধারা ভঙ্গ করেছে।

মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান এর ছবি

এই আইনগুলোর একটা বড় সমস্যা হলো সমামাত্রার নন রিলিজিয়াস ফিলিংস নিয়ে কোনো কথা নাই।

তানিম এহসান এর ছবি

সময় উপযোগী পোস্ট। বাঁচতে হলে জানতে হবে।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক চলুক
বাঁচতে হলে, জানতে হবে।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

গতকাল আমারব্লগে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। প্রাসঙ্গিক মনে হওয়াতে এখানে দিলাম মন্তব্য পাওয়ার আশায় হাসি
ব্লগের বিষয়ে কোনো সরকারের আইনি এখতিয়ার প্রসঙ্গে -

(১) ভার্চুয়াল ব্লগ, যার বহুদেশীয় সদস্য থাকতে পারে এবং যার এ‌্যাকসেস বিশ্বব্যাপি, তার কী দালিলিকভাবে কোনো রাষ্ট্রীয় পরিচয় আছে?

(২) ব্লগের রাষ্ট্রীয় পরিচয় থাকা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে কী বাধ্যতামূলক কি না? হলে কিভাবে, মানে একটি ব্লগ চালু করতে কী কোনো নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের নাম উল্লেখ বাধ্যতামূলক? ব্লগের যৌথ কর্তৃপক্ষ কিন্তু কয়েকটি দেশের নাগরিকদের নিয়ে গঠিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে কি হবে? সেই দেশগুলির আইন গুলি কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন এবং সাংঘর্ষিক হতে পারে। কোন ল'টা আ্যপলিকেবল হবে?

(৩) একটি দেশের অন্তর্গত ব্লগের (যদি সত্যিই হয়) ভিনদেশীয় সদস্যের ব্যাপারে, সেই দেশের আইনি এখতেয়ার কি আছে, থাকলে কিভাবে? যখন কিনা ব্লগে সদস্যভুক্তির সময় আবেদনকারীর দেশের পরিচয় উল্লেখ বাধ্যতামূলক না অন্তত এর সত্যাসত্য যাচাইয়ের কোনো উদ্যোগ থাকে না। খেয়াল করার বিষয় কোনো দেশের সরকারের যদি ব্লগের ভিনদেশীয়দের ব্যাপারে আইনি এখতিয়ার থাকতো তবে সদস্যদের জাতীয়তা যাচাইয়ের জন্য আবশ্যিক অনুশাসনও থাকতো। তেমন কিছু তো অন্তত এই বাংলা ব্লগে (বাংলাদেশি ব্লগ বলছি না) দেখি নাই।

(৪) ব্লগের কন্টেন্টের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের যদি আইনি নীতিমালা থাকে, তবে সেটা তদারকির জন্য অডিটিং পলিসি থাকতো এবং ভবিষ্যত আইনি প্রয়োগের স্বার্থে সকল কন্টেন্টের সুরক্ষার জন্য কমপ্লায়েন্স নীতিমালা থাকা উচিত যা আবশ‌্যিক ভাবে ব্লগ কত্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা আইনি বাধ্যবাধকতা হতো (রাগিব হাসান ভাইয়ের কিছু গবেষণা আছে এই ব্যাপারে, আমি রেফারেন্স হিসেবে একটা ক্লাস প্রজেক্টে ব্যবহার করেছি)। সেটা যদি না করে হয়ে থাকে তবে সংশ্লিষ্ট সরকারকে মানতে হবে, ব্লগ বরাবরই তাদের আইনি স্কোপের বাইরে ছিলো এবং আছে। আইন থাকলে তার প্রয়োগে নীতিমালা (কন্টেন্ট সংরক্ষন) থাকবে। অন্যথায় নাই।

(৫) বাংলা ভাষার ব্লগ মানেই কী বাংলাদেশ সরকারের এখতিয়ারভুক্ত?

(৬) কোনো দেশের প্রবাসী নাগরিক কি কোনো খোলা ব্লগে (যার কোনো নির্দিষ্ট জাতীর পরিচয় নাই) সেখানে এমন কিছু লিখতে পারে না যা তার অবস্হানকারী দেশে গ্রহনযোগ্য বা কার্যক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক (মানে ক্রিটিক্যাল কোনো রিসার্চ যেখানে লেখকের মতামতও থাকে), যদিও তা তার নিজ দেশের আইনে সিদ্ধ নয়।

(৭) কোনো দেশের বসবাসরত নাগরিক অন্য কোনো দেশের কোনো ফোরামে বা ব্লগে এমন কিছু লিখতে পারে কিনা যা তার নিজ দেশের আইনে সিদ্ধ নয় (ভিন্ন দেশে কোনো সমস্যা নাই)। সরকার কিভাবে এর প্রয়োগ ঘটাবেন।

- আমি আইনি এক্সপার্ট নই, তাই সবার জন্য প্রশ্নগুলি উন্মুক্ত করলাম। সরকার এমন কোনো আইন করতে পারে না যার বাস্তব প্রয়োগ অসম্ভব। একটি খিয়াল কইরা যখন এটা সাইবার ল'।
মূল লিংক: ব্লগের বিষয়ে কোনো সরকারের আইনি এখতিয়ার প্রসঙ্গে

গোরা

আজিম  এর ছবি

দরকারি পোস্ট, খুব দরকারি!

অতিথি লেখক এর ছবি

সময় উপযোগী পোষ্ট চলুক

পরমার্থ এর ছবি

The more rules the more offense. দুনিয়াটা রেষারেষীতে ভরে গেছে, অধিকন্তু এক দলের বিরুদ্ধাচরণের উদ্দেশ্যে (ল্যাং মারা) আরেক দলের উত্পত্তি ..

বেস্ট_ইন্টেনশন এর ছবি

১।

with deliberate and malicious intention

অভিযুক্তের মনে "deliberate" এবং "malicious" ইন্টেনশন বা ইচ্ছা ছিল কিনা সেটা বুঝা যাবে কিভাবে? আদালতেই বা সেটা কিভানে প্রমান করা যাবে? ইন্টেনশনটা আনডেলিবারেট বা নন-ম্যালিশাসও তো হতে পারে তাই না? অভিযুক্তের নন-ম্যালিশাস, এমনকি সদিচ্ছা ও কল্যানাকাঙ্খী একটা কথা বা কাজ যদি কারও অনুভূতিতে আঘাত করে, তাহলে অভিযোগকারী কি করে অভিযুক্তের মনে যে "deliberate" এবং "malicious" ইন্টেনশন ছিল এটা প্রমান করবেন? আইনানুযায়ী অভিযোগ করতে বা নিদেনপক্ষে শাস্তি দিতে হলে তো এটা প্রমান করতে হুবে তাই না? ধর্মের সাথে যায় না এমন কোন বিজ্ঞানশিক্ষা দিতে গেলে (যেমন বিবর্তন থেকে শুরু করে কসমোলজির বহু কিছু), এমনকি ধর্মকে সমাজের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় বিশুদ্ধ সদিচ্ছা ও বৃহত্তর কল্যানাকাঙ্খা ও শুভাকাংখা দ্বারা তাড়িত হয়ে সমাজের উপকারার্থে কেউ যদি এর সমালোচনা করেন, তাহলে তার ইন্টেনশন deliberately malicious বা শুধুই malicious (অবশ্য ম্যালিশাস মানেই ডেলিবারেট, অর্থাৎ ইচ্ছাকৃত) - এই দাবি কিভাবে করা যাবে বা প্রমান করা যাবে অভিযুক্তের সদিচ্ছার দাবির বিপরীতে?

একই প্রশ্ন নিম্নোক্ত ধারাগুলির ক্ষেত্রেও --

297. ...with the intention of wounding the feelings of any person, or of insulting...
298. ...with the deliberate intention of wounding...

এসব ক্ষেত্রেও একইভাবে, অভিযোগকারীর বা জনসাধারনের wounding the feelings ও insulting -এর deliberate intention-টা কিভাবে প্রমান করা যাবে, যদি অভিযুক্ত উলটো তার সদিচ্ছা, কল্যানাকাঙ্খা, মহৎ ইচ্ছার দাবি করেন? ডারউইনের কি প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসবিরোধী বিবর্তনবাদ প্রকাশের পিছনে জনানুভূতিতে আঘাত দেয়ার ঘৃণ্য deliberate and malicious intention ছিল? কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও, কেপলার, প্রমুখের ক্ষেত্রেও কি তাই? আইন্সটাইন? অন্যান্য বিজ্ঞানী বা তাত্ত্বিকরা? সেই এরিস্টার্কাস অফ সামোস থেকে শুরু করে স্টিফেন হকিং বা অন্যান্য বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে কিভাবে প্রমান করা যাবে এটা? কিম্বা তারা deliberate and malicious intention-এ অপরাধী না হলে অন্যরা কেন অপরাধী হবে? আর এই রকম intention প্রমান না করা গেলে কি আইনানুযায়ী কাউকে অভিযুক্ত বা অপরাধী স্যব্যস্ত করা যাবে?

২।। 'ধর্মানুভূতি' ও 'অপমান'-এর সংজ্ঞা কি? সমাজে একেকজনের অনুভূতিবোধ ও অপমানবোধ একেক রকম। একেকজনের ক্ষেত্রে এই অনুভূতি ও অপমানের চৌহদ্দি বা পরিসীমাটা একেকরকম। কারটা বা কোনটা ঠিক? ঠিক কার অনুভূতির ভিত্তিতে বা অনুভূতির ঠিক কোন বা কোন কোন প্যারামিটার ভায়োলেট করলে অপরাধ সনাক্ত ও শাস্তি প্রদান করা হবে? সুনির্দিষ্টভাবে এগুলি আইনে বলা না থাকলে কি এই আইনের ভিত্তিতে কাউকে অভিযুক্ত করা বা শাস্তি দেয়া যায়, বিশেষ করে যেখানে মানসিক অনুভূতিটা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়?

অতিথি লেখক এর ছবি

আইনের শিক্ষার্থী আমি, তাই বুঝতে পারছি এই লেখাটি খুব দরকারি লেখা। শেয়ার করলাম। লেখককে অনেক ধন্যবাদ। (নিভৃতে যতনে)

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আচ্ছা, ভারতীয় টীভীস্টার জাকির নায়কের ভন্ডামি নিয়ে কথা বলতে গেলে কি কোন ধারা'র আওতায় পড়ব?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।