: আমাদের ক, খ, গ, ঘ, এবং ঙ :

নজমুল আলবাব এর ছবি
লিখেছেন নজমুল আলবাব (তারিখ: সোম, ৩০/০৪/২০০৭ - ১২:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ক.

বাড়ির সামনেই কবরটা। সাদা মার্বেল দিয়ে বাঁধিয়ে রাখা। আগে ছিল লাল রংএর ইটের দেয়াল। তিন বছর আগে দাদা যখন সার্টিফিকেটধারী রাজমিস্ত্রি হল তখন মার্বেল দিয়ে বাঁধিয়ে দিল। এতে নাকি তার মেধার উন্নতি হবে। আগামিতে সে হবে ফাঁটাফাঁটি ইঞ্জিনিয়র। এমনই আমাদের বিশ্বাস। আমরা সবাই বিশ্বাস করি। যতকিছু আছে আমাদের ভালো সবই তার দোয়ায়। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের বিপদ আপদ সবই হয় যখন তিনি রেগে যান।

খ.

আমাদের মূলত নির্ভেজাল জিবনযাপন। আমদের বাড়ির ছেলে মেয়েরা পড়ালেখায় ভাল। পাশ করার আগেই তারা কাজ পেয়ে যায়। ভালো ভালো সব চাকরি। ভালো সব ব্যবসা। সবই আছে আমাদের।

গ.

রোজ স্কুল, কলেজ অথবা অফিস যাওয়ার পথে আমরা শান বাঁধানো কবরটার সামনে দাড়াই। নতজানু হই। আমরা নিজেদের জন্য সুভসময় নিশ্চিত করে সেই কবরের সামনে থেকে যার যার গন্তব্যে রওয়ানা দেই। বাবা বলেছেন, মা-ও বলেছেন কবরের সামনে নতজানু হই বলেই আমরা নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারি।

ঘ.

শাহানা একবার স্কুলে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছিল। কিভাবে তা জানিনা। তবে মা বলেছিলেন, সেদিন নাকি ওর কবরের কাছে যাওয়া নিষেধ ছিল। তবুও গিয়েছে তাই এই শাস্তি। এভাবে প্রতি মাসে নিয়মিত শাহানার উপর কবরে যাওয়ার ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা থাকে! সেই কবরের এমনই অলৌকিক মতা! তাকে মেনে চলতেই হয়। তার কথা না মানলে নিশ্চিত শাস্তি। যখন বেঁচে ছিলেন তখন তা আরও কঠিন ছিল। ছোট চাচা তার কথা না শুনায় কোথায় যে হারিয়ে গিয়েছেন কেউ জানেনা।

ঙ.

৭১ সালে দাদাজান বলেছিলেন, মহান ইকবাল আর কয়েদ এ আজমের স্বপ্নের দেশ কখন্ও ব্যর্থ হতে পারেনা। কাফেরদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে। ছোটচাচা সেটা মানেননি। তিনি যুদ্ধে গিয়েছিলেন। সে খবর শুনে ক্ষেপে গিয়েছিলেন দাদাজান। অভিশাপ দিয়েছিলেন। ছোট চাচা সেই অভিশাপ কাটাতে পারেননি। তিনি ফিরে আসেননি। বড়চাচা ভাইয়ের পক্ষে কথা বলেছিলেন। তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। তিনি আর এ বাড়িতে ঢুকতে পারেননি। আব্বা দাদাজানের কথা শুনেছিলেন। আমাদের সময় এখন সবসময় সূর্যরাঙা। আমরা ভাল আছি, ভাল থাকি...


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।