স্বাদ

নজমুল আলবাব এর ছবি
লিখেছেন নজমুল আলবাব (তারিখ: রবি, ০৯/০৭/২০১৭ - ১:০৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শুক্রবারের সকালটা বড় অলস। সারা সপ্তা'র ঘুম এসে যেনো চোখে ভর করে। বিছানা ছাড়তেই ইচ্ছে করেনা। কিন্তু তাহমিনার জন্য সেটা সম্ভব হয়না। নানা কাজ ঠিক করে রাখে সে শুক্রবারের জন্য। এম্নিতে সে নিজেই বাজার করে। ঘরের বিন্দু বিসর্গ সব কাজ নিজেই সামলায়। সেই অর্থে আসিফের আরামের জীবন।

সব শুক্রবারেইযে আসিফের জন্য কাজ রাখে তাহমিনা, তেমনটা নয়। কোন কোনদিন তার নিজেরই কাজ থাকে, বেরিয়ে যায়। কোনদিন হয়তো দেখা গেলো সেও পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। ওদের একটা সামাজিক সংগঠনও আছে। তিন সপ্তা পরপর সেটার মিটিং থাকে। ওই শুক্রবারটা আসিফের সবচে প্রিয়। তাহমিনা সকালেই বেরিয়ে যায়। ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়ায়। বিছানাটা আসিফের দখলে। কেউ নাই ডিস্টার্ব করার। আজ সেই শুক্রবার।

বেড সাইড টেবিল থেকে ঘড়িটা তুলে নিতে নিতে আসিফকে ডাকতে থাকে তাহমিনা, "শোন, আমি বেরুচ্ছি। তোমার নাশতা টেবিলে রেখে গেলাম, উঠে পড়ো। নয়তো ঠান্ডা হবে। আর শোন, ঘরে মাছ প্রায় শেষ, মুরগিও নাই। কটা মুরগি আর মাছ নিয়ে আসোনা বাবু আজ। প্লিজ প্লিজ..." তাহমিনা বলেই যায়। আসিফ শুধু হ্যাঁ-হুঁ করে। ওতে ক্ষতি নেই। তাহমিনা জানে ঘুমের ঘোরে শুনলেও আসিফ ঠিকই কাজটা করবে। সাথে টুকটাক সব্জি, মাছও নিয়ে আসবে। সে নিশ্চিত হয়ে বেরিয়ে যায়।

আসিফের প্রিয় রুমালি রুটি আজ। সাথে আলুর দম। রুটির সাথে মাংস খেতেই তার বেশি ভালো লাগে। কিন্তু ডাক্তারের সাথে তাহমিনার গভীর প্রণয়। প্রেশার একটু উপরের দিকে বলে এরা ষড়যন্ত্র করে ইদানিং তাকে মাংস খেতে দিচ্ছেনা। কিন্তু আসিফকে রুখে সাধ্য কার।

ফ্রিজ ভর্তি বাক্সো। রান্না করে করে বাক্সো ভর্তি করে ফ্রিজে রাখা তাহমিনার অভ্যাস। আসিফকে এখন এইসব বাক্সের ভিড় থেকে তার উদ্দিষ্ট বস্তু বের করতে হবে। টার্গেট সাধারণত মিস হয়না। কিন্তু তাহমিনাওতো বোকা না। সে জানে এইসব হবে। আসিফ একটা একটা করে বাক্স নামিয়ে টেবিলে রাখে। একটা ভাত ভর্তি বোল, ক্লিং ফিল্ম লাগানো দুটো বাটি। একটা চায়ের কাপে দুধের সর তুলে রাখা। আসিফের জিভে জল আসে, কিন্তু সামলে নেয়। বড় কিছুর জন্য, ছোট ছোট ত্যাগ স্বিকার করতে বলে গেছেন গুরুজনে। আজকের বিষয় রুমালি রুটি উইথ গোমাংশ। দুধের সর, তুমার জন্য কৃষ্ণ হবো অন্য ভোরে... এই বলে লোকেশন ঠিক রেখে রেখে বাক্সগুলো আবার আগের যায়গায় রেখে দেয় সে।

আহ্... কাহাতক আলুর দম গেলা যায় রোজ! স্বাদ না বদলালে কিসের জীবন? এজন্য অফিসে বসে সুযোগ মতো কাচ্চি বিরিয়ানি মেরে দেয় আসিফ। কিন্তু রুমালি রুটিতো বাড়ি-ঘর ছাড়া মেলেনা। তাই মাঝে সাঝে এমন কমান্ডো অভিযান চালাতে হয়।

বাজারে যেতে একদমই ইচ্ছা করছিলোনা। বিছানার মজা ছাড়তে ভালো লাগেনা। কিন্তু ঘড়ি দৌড়াচ্ছে। তাহমিনা আসার সময় হলো বলে। তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে পড়তে হয়। তার আগে ঘরের চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে নেয়। অনভ্যস্থ কিছু আছে কি না। টেবিলটা দেখে নেয় এক পলকে। ঝোল টোল পড়ে থাকলে সমস্যা। নাহ, সন্দেহ করার মতো তেমন কিছু নেই।

গাড়িতে উঠে জিজ্ঞেস করে, কোথায় নামিয়ে দিতে হবে তোমায়, নাকি সোজা তোমার বাসায়?- উদ্দেশ্যমূলক চোখ নাচায় আসিফ। "বদের মতো ইশারা করো না" বলে প্রশ্রয় মাখা হাসি হাসে নিতু। বেশি বেশি পেলে আবার খারাপ লাগা শুরু হবে। মেঝো আপার বাড়িতে যাবো, ওদিকটায় চলো। আসিফ মাথা দোলায়, "আবার কবে আসছো?" নিতু বলে, আর আসাআসি নাই। তুমি চাইলে আসতে পারো। মা কাল থেকে মেঝো আপার বাসায়। বাবুর জন্ম হওয়া পর্যন্ত আসা যাওয়া করবে! ইয়াহু বলে চিৎকার করে উঠে আসিফ। কাল সকালেই ফোন করছি তাহলে তোমাকে।

গাড়ি থেকে নামার পাঁচ মিনিটও হয়নি, নিতুর ফোন। আবার কি হলো বলে ফোন ধরে আসিফ। কাঁপা কাঁপা গলায় নিতু বলে, সর্বনাশ হয়ে গেছে আসিফ। আমার বাম কানের দূলটা নেই... আসিফের শরীরে একটা ঝাকুনি লাগে যেনো! বালিশের নিচে, নাকি ঘরের আর কোথাও পড়লো সেটা... আসিফের মাথাটা ঝিমঝিম করছে।


মন্তব্য

আয়নামতি এর ছবি

শেষটা এমন হবে বুঝিনি! মেদহীন সুন্দর গল্পের জন্য ধন্যবাদ। হাসি

নজমুল আলবাব এর ছবি

পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

নীলকমলিনী এর ছবি

অনেক দিন পর তোমার লেখা দেখে সচলে ঢুকলাম। ছোট্ট সুন্দর গল্প। শেষটা এমন হবে ভাবিনি। ভাল লাগলো।

নজমুল আলবাব এর ছবি

ধন্যবাদ আপা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যে বাড়ীতে রুমালী রুটি বানানো হয় সে বাড়ীতে যে কোন কিছু রান্না হওয়া সম্ভব। রুমালী রুটির জন্য আমাদের মতো মানুষদের রেস্টুরেন্টই ভরসা, তাও আবার খুব হাতে গোনা কয়েকটা, বাকী রেস্টুরেন্টগুলো তাও বানাতে পারে না। আসিফ সব দিক দিয়েই মহা ভাগ্যবান। নিজের ঘরের খাবার টেবিলে ঘরেবানানো রুমালী রুটি, নিজের বিছানায় প্রেমিকা!

গল্পটা আপনার অন্য গল্পের তুলনায় 'নেট প্রাকটিস' বলে মনে হলো। একান্তই আমার অভিমত, গায়ে মাখার দরকার নেই। আদর্শ টেস্ট ক্রিকেটারের মতো ব্যাটিং করে যান, আপনার হাত দিয়েই ঘরে ট্রফি আসবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নজমুল আলবাব এর ছবি

রুমালী রুটি কিন্তু এখনও অনেক বাড়ীতেই হয়। ঢাকার বাইরেতো অহরহ।

বিষয়টাকে শুধু রুটি-মাংসে না রেখে যদি চিন্তা করা যায় তখন সম্ভবত আরেকটু সহজ লাগতে পারে। তবে এটা ঠিক অনভ্যাসের প্রভাব পড়েছে লেখায়। টেস্ট খেলা আর হবেকিনা জানিনা। মাঝে সাঝে টিটুয়েন্টি খেলার ট্রাই মারবো।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ব্যাপারটা হচ্ছে কী, ঐ উলটানো লোহার কড়াই সিস্টেম কায়দা করতে এলেম লাগে। রুটি আধা-বেলা করে হাতে ঘুরিয়ে বড়, পাতলা করতে আরও এলেম লাগে। সবার দ্বারা এটা হয় না। এটা যারা পারে না তাদের জন্য রেস্টুরেন্টই ভরসা।

বিষয়টা যে শুধু রুটি-মাংসে সীমাবদ্ধ নয় সেটার যথেষ্ট ইঙ্গিত আপনি গল্পে দিয়েছেন। যেমন বলেছেন,

স্বাদ না বদলালে কিসের জীবন?

আমার পয়েন্টটা সেখানে না। আপনার গল্পের কোনও না কোন জায়গায় সাধারণত একটা মুহাম্মাদ আলী স্টাইলের পাঞ্চ/জ্যাব/হুক থাকে যেটাকে শুধু ট্যুইস্ট বলা যথেষ্ট হয় না। এখানে সেটার অভাব বোধ করেছি। সেটা হয়তো আপনার বলা অনভ্যাসের কারণে হতে পারে, অথবা আপনি এই গল্পটা এভাবেই বলতে চেয়েছেন বলে হতে পারে।

প্যাঁচাল বাদ। আপাতত মাসে একটা লেখা দেবার নিয়্যত করেন। পরে দাবীনামা পরিবর্ধণ করা হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আলুর দম থেকে ভূনা মাংসে যাবার জাম্পিংটা কখন ঘটে গেল টেরই পেলাম না। যখন টের পেলাম তখন দেরী হয়ে গেছে। আবার ফিরে পড়তে হলো। এই জায়গায় ইচ্ছে করে ধোঁয়াশা রেখেছেন নাকি। পাঠক একটু ঘোল খাবে শেষটায় এসে। হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নজমুল আলবাব এর ছবি

চিন্তিত

লেখার কারিকুরি সব মাথা থিকা বিদায় নিছে। মন খারাপ

সুমন চৌধুরী এর ছবি

উদোর পিণ্ডি আসিফের ঘাড়ে? এই করেন?

কইয়া দিমু ! শয়তানী হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কইয়া তো দিলেনই চোখ টিপি ! এখন ধরেন দাবী করা যাইতে পারে গল্পের শিরোনাম পাল্টায়া 'জীবন থেকে নেয়া' করা হউক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নজমুল আলবাব এর ছবি

অ্যাঁ

তিনিও কিন্তু আছেন সচলে।
চিন্তিত

ইয়ামেন এর ছবি

গল্পের টুইস্টটা আনেক্সপেক্টেড ছিল একেবারেই, অপু ভাই। তবে ক্লাইম্যাক্সে যাওয়ার ট্রাঞ্জিশনটা একটু অকওয়ার্ড লেগেছে। প্রথমে কখন কই থেকে কি হলো (নিতুর আবির্ভাব) বুঝতে সময় লেগেছে। তারপরেও বলবো ভালো ছিল। বেচারা আসিফের ভাগ্যে কি আছে চিন্তা করে মতিকন্ঠ স্টাইলে হুহু করে কেঁদে দিলাম! হো হো হো

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

নজমুল আলবাব এর ছবি

সব কথা কইয়া দিলে, সব বাঁক স্পষ্ট করলেতো উপন্যাস হয়ে যাবে। ওতো ধৈজ্জ আছেনাকি!

যেইলোক টেবিল ঠিক রেখে মাংস খেতে পারে, বিরিয়ানি খায় অফিস ঠিক রেখে, একটামাত্র কানের দূল ম্যানেজ করাতো তার কাছে অতি সহজও হতে পারে। চাল্লু

মন মাঝি এর ছবি

তবে ক্লাইম্যাক্সে যাওয়ার ট্রাঞ্জিশনটা একটু অকওয়ার্ড লেগেছে। প্রথমে কখন কই থেকে কি হলো (নিতুর আবির্ভাব) বুঝতে সময় লেগেছে।

হে হে, একেই তো "টুইস্ট" বলে! টুইস্টের আগে প্রপার ট্রাঞ্জিশন থাকে না বলেই সেটা 'টুইস্ট' হয়ে উঠে। আর এখানেই তো টুইস্টের মজা!! এত ব্যাখ্যা করলে টুইস্ট থাকে না, আর এটাও তখন গল্প থাকবে না, বরং নিউজপেপারের গসিপ কলামে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রতারণা্র চিরপুরাতন রিপোর্ট হয়ে যাবে। হাসি

****************************************

মন মাঝি এর ছবি

হায়রে দূল, শালার দূল!!! রেগে টং রেগে টং রেগে টং ওঁয়া ওঁয়া

****************************************

নজমুল আলবাব এর ছবি

শালার কানের দূল নাতো। পেমিকার।

সত্যপীর এর ছবি

..................................................................
#Banshibir.

নজমুল আলবাব এর ছবি
মন মাঝি এর ছবি

ইংরেজিতে তো মন্তব্যে কিছু দেখছি না! হাসি

****************************************

নজমুল আলবাব এর ছবি

আপনে বলতেছেন, এই ইংলিশ বেডা বাংলায় কানতেছে!

দেবদ্যুতি এর ছবি

পড়ছিলাম রুমালি রুটি আর আলুর দমের গল্প- হয়ে গেল কী!!! গল্প সুন্দর, লেখা আরও সুন্দর।

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

নজমুল আলবাব এর ছবি

ধন্যবাদ দেবদ্যুতি

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

এডা কেমুন বিচার!

রুটি মাংসের গল্প পড়ে একটু খিদা খিদা লাগতাসিলো আর দিলা সব মাইরা! মন খারাপ

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

নজমুল আলবাব এর ছবি

খালি খানাদানার চিন্তা!

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

ভালো লাগলো। চমকটা দারুণ।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

অতিথি লেখক এর ছবি

সচলায়তনে অনেকদিন পরে এসে আপনার গল্পটা চোখে পড়লো। স্বাদু গল্প, দারুণ লিখেছেন।

--মোখলেস হোসেন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।