:: রুহী ঠাকুর: গানের এই মানুষটা আজ মরে গেল ::

নজমুল আলবাব এর ছবি
লিখেছেন নজমুল আলবাব (তারিখ: মঙ্গল, ০১/০৫/২০০৭ - ১১:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আমাদের প্রাণের রুহী দা। রুহী ঠাকুর। লোক গান, বিশেষ করে সিলেটের আঞ্চলিক গানের এক প্রাণময় পুরুষ। আজ তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ভাবশিষ্য ছিলেন রুহী ঠাকুর। ব্যক্তিগতভাবে আমি অসংখ্যদিন খুব কাছে থেকে তার গান শুনেছি। তার স্নেহ পেয়েছি। সহজিয়া এই মানুষ বড় মমতায় বলতেন, 'আইজ্ঞা, অপুভাই বালা আছুইন!' আমরা লজ্জায় পড়ে যেতাম তার বিনয়ে। বলতাম, দাদা আপনারা গুরুজন হয়ে যদি এভাবে কথা বলেন তা হলে শরম লাগে। তিনি আরও বিনয়ি হয়ে যেতেন। বলতেন, মানুষতো 'ঠুল' মাত্র। ভেতরটা আসল, তারে ইজ্জত দেইগো দাদা!
গানের আসরে ডুবে তাঁর কত রাত হয়েছে ভোর। দেহঘড়ির সন্ধান খুঁজে খুঁজে রোজই হয়েছেন কান্ত। একরাশ কান্তি আর দেহঘড়িরর চলা এবার আচমকাই বন্ধ হয়েছে তাঁর। আজ সোমবার বিকেলে স্থানীয় একটি কিনিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি।
গত ২১ এপ্রিল থেকে নগরীর এখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। লাশ দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করেন হাজারো মানুষ। রাতে রুহী ঠাকুরের লাশ দাহ করার জন্য সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার ধল গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই ক’দিন আগেও সংসারের অভাব-অনটন আর মনের দুঃখ ভুলে রুহী ঠাকুর মানুষকে ভাসিয়েছেন সুরের সুধায়। বিপ্তি মনে দিয়েছেন অমৃতের সন্ধান। বিনিময়ে মানুষের ভালোবাসা ছাড়া অর্থকড়ি তেমন জুটেনি। স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে সংসারটা চলেছে খুঁড়িয়েই। চলতোও আরো কিছুদিন। পাখির বাসার মতো দুরন্ত ক্যান্সারটা যদি তাঁর দেহে বাসা না বাঁধতো! বাউলের জীবন বোধ করি এমনই। ধুপের মতো সুগন্ধ ছড়িয়ে কেবলই জ্বলে পুড়ে য়ে যাওয়ার।
অর্থ-কড়ি বিহীন এ যুদ্ধে লড়াই করার সামর্থ্য ছিলনা রুহী ঠাকুরের। তার শুভানুধ্যায়ী, বাউল প্রেমিকজন তাঁর সহায়তায় এগিয়ে এসেছিলেন। এ টাকায় প্রথমে ভারতে পরে ঢাকায় চিকিৎসা করা হয় শিল্পীর। পর থেকে ছিলেন নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকার বাড়িতে।
সিলেট অঞ্চলের বাউল গানের মূল স্রোতের অসুস্থ শিল্পী রুহী ঠাকুরের চিকিৎসা সহায়তায় চ্যানেল এস ইউকে এগিয়ে এসেছিলো। তার চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য প্রবাসী বিত্তবানদের নিকট আবেদন জানিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রচার করা হয়েছিল। এই আবেদনে প্রবাসীদের মধ্যে ব্যপক সাড়া পড়ে। তাদের পাঠানো ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা গত ২০ মার্চ তাঁর হাতে তোলে দেওয়া হয়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের ভাব শিষ্য পঞ্চাশোর্ধ রুহী ঠাকুরকে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।