আমার কিছু এলোমেলো সরল মৌলবাদী ভাবনা

নজমুল আলবাব এর ছবি
লিখেছেন নজমুল আলবাব (তারিখ: শনি, ২৩/০৬/২০০৭ - ১১:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই লেখাটা সামহোয়ারে দিয়েছিলাম। সেই ভাবনার দুটি লেখা এখানে হাজির হয়েছে, তাই একেও যোগ করলাম।

auto

আমার কিছু সমস্যা আছে। অনেকেই বলেন। আমিও মাঝে মাঝে অনুভব করি। তবু সমস্যাগুলো পুষে রাখি। গোয়ার্তুমি ধরে রাখি।

আমার একটা গোয়ার্তুমি লোকগান বিষয়ক। বলা যায়, লোক কবি বিষয়ে। এদরকে যখন ভাংচুর করা হয়। তাদের গান চুরি করা হয় কিংবা একটু আধুনিক প্রলেপে হাজির করা হয়, আমার সেটা খারাপ লাগে। আমি অশ্লিল হয়ে উঠি।

মরমি সাধক হাছন রাজা। এ নামেই পরিচয়। আলাদা সূর আর ভাব নিয়ে তিনি বিরাজ করেন আমাদের গ্রাম্য জীবনে। মফস্বলি আমরা তাকে মনে করি আমাদের একান্ত মানুষ। যদিও তিনি ছিলেন জমিদার, রাজা রাজড়া, সামন্ত প্রভু। তবু ভাবের মানুষটা হয়ে যান আমাদের মতো প্রান্তজনদের।

আমরা শুনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুশিলের দরবারে (তখনও কী এভাবে সুশিল সমাজ বলে চিৎকার চলত ) হাছনকে পরিচিত করেছিলেন। আমার কেমন লাগে। কবি গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেও মানতে পারিনা তার জবানিতে বলা পূর্ববঙ্গের গ্রাম্য কবি শব্দ গুলো। কেমন এক বেদনা জাগায় মনে। মন বলে, তুমি কি কবি আমার গ্রাম্যতাকে হেলা করলে।

অপ্রাসঙ্গিক হল কিনা বুঝতে পারছিনা। আমি শুধু আমার বোধের কথা বলি। ব্যক্তিগত বোধ।

গেল কয়েক বছরে একটা বিষয় আমাকে খুব পিড়া দেয়। সেটাও হাছন কেন্দ্রিক। ল করে দেখবেন, কবির নামের বানারিতি এখন দু'রকম হয়ে গেছে! হ্যা দুরকম। এই আমি যে বানানে লিখছি, আদি বানান, যা কবি নিজে মানতেন, এটাতো আছেই। সাথে আছে আধুনিক রীতি। সেটা লেখা হয় দ্বন্তস দিয়ে। অনেক জ্ঞানি, গুনি এই রিতিতেই লিখেন কবির নাম। আমার খুব অবাক লাগে। আমি আমার হেড়ে গলায় যদি দুই লাইন রবীন্দ্র/নজরুল গাইতে চাই রে..রে.. করে এগিয়ে আসেন সকল আলেম সমাজ। আর এই প্রান্তজনের নামটা বদলে যায়, কারন বাংলা বানানের শুদ্ধিকরনের জন্য হাছনকে হাসন বানাতে হবে। তবু রা হাসান করা হচ্ছেনা।

একই ভাবে গায়কিতেও আনা হচ্ছে আধুনিকতা। হাছনের গানের প্রধান উপাদান হল একবারেই আঞ্চলিক কিছু শব্দের ব্যবহার। এই শব্দগুলোর উচ্চারনে হেরফের হলে অর্থই বদলে যায়!!! আমাদের শিল্পিরা, উর্দু হিন্দি, ইংরেজী গানগুলো গাইতে মাখরেজ আদায়ে চরম সতর্কতা নিলেও এমনতরো আঞ্চলিক গানগুলোতে তারা বড় বেশি নিরিক্ষক!!! নিরিক্ষার কবলে পড়ে গানগুলোর বারটা বাজে!!! দেশের সকল আঞ্চলিক গানের ক্ষেত্রেই এমনটা প্রযোজ্য।

আরও একটা কাজ হয় আমাদের এখানে। দেদারছে 'সংগ্রহ' বলে চালিয়ে দেয়া হয় লোক কবিদের রচনা। পলাশ নামের মহান গায়ক প্রবর কোন কালে লোক গীতির সংগ্রাহক ছিলেন আমার অন্তত জানা নেই। এটা আমার জানার সিমাবদ্ধতা হতে পারে। কিন্তু বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম এর গান তিনি সংগ্রহ বলে চালিয়ে দেন। মাকসুদ যখন গলায় ধারন করেন রবীন্দ্র সুর তখন জাত গেল বলে রব উঠে! কিন্তু প্রান্তবর্তি গানের মানুষ শাহ আব্দুল করিম বেঁচে থাকতেই যখন সংগ্রহের খাতায় চলে যান তখন কোন খানকির পোলা মাইয়াই কোন কথা বলেনা।

শাহ আব্দুল করিমের গান বিক্রি করে হুমায়ুনরা যখন টাকার সাথে মহান মানুষের তকমাটাও বাগিয়ে ফেলেন, করিম তখন সাদা জমিনের ২৮০ টাকা দামের লুঙ্গি আর সফেদ পাঞ্জাবীর পেকেট ছেড়া ব্যাগে ভরে সিলেট রেল স্টেশনে নেমে পুত্র নূর জালালকে জিঙ্গেস করেন, বাবা রিক্সা ভাড়া আছেনি ফকেট, না আটিয়া যাওয়া লাগব...


মন্তব্য

ঝরাপাতা এর ছবি

দুর্দান্ত লিখেছেন। ৫টা স্টার দিলাম।
_______________________________________
পোড়াতে পোড়াতে ছাই, ওড়াতে ওড়াতে চলে যাই . . .


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনার সাথে একমত হতে পারলাম না। আধুনিকায়ন সভ্যতারই একটা অংশ। রিমিক্স আর আধুনিকায়ন হবেই। নইলে মূল স্রষ্টা এমনিতেই কালের স্রোতে হারিয়ে যাবেন। সেই তাগিদ থেকেই এগুলো চলা উচিত।

গ্রাম্য শব্দটাকেও আপনি যেভাবে দেখেছেন সেভাবে নিতে পারলাম না। আসল কথা হচ্ছে শব্দটাকে আপনিই ঋণাত্বক ভাবে দেখছেন। নইলে "অমূক গ্রাম্য কবি" এইটা আমার কাছে অনেক ধণাত্বক মনে হয়, কেননা গ্রাম্য শব্দটাকে আমি ধণাত্বকভাবে দেখি।

আমার দু পয়সা...
====
মানুষ চেনা দায়!

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

নজমুলের লেখা পড়ে মনে হচ্ছিল, ঠিকই কইতাছে।
এখন এসএম৩-র মন্তব্য পড়ে মনে হইলো, হেও ঠিক কইতাছে।

আসলে ঠিক জিনিসটা কী?

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নজমুল আলবাব এর ছবি

মা.মু. মানতে পারলামনা। চিরন্তন বলে একটা কথা আছে। ইংরেজিতে মনে হয় ক্লাসিক বলা হয়। যেভাবে রিমিক্সকে সাপোর্ট করছেন এতে কিন্তু চিরন্তন বিষয়টা হুমকি পাচ্ছে।

আমি মূলত ঢালাওভাবে সুর বিগড়ানোটারে ফোকাস করতে চেয়েছি। বাংলাদেশে যেটা হচ্ছে সেটা রিতিমত মাৎস্যান্যায়।

লোক কবিদের গান হরদম চুরি হচ্ছে। যেন এই গান ও সুর চুরির জন্যই পয়দা হয়েছে!

গ্রাম্য শব্দটা আমি যে অর্থে নিছি সেইটা মনে হয় ভুলনা। কবিগুরু এই শব্দটা খুব ইজ্জতের সুরে ব্যবহার করেছেন বলে আমার মনে হয়নি। এটা অবশ্য আমার মনোবৈকল্যের জন্যও হতে পারে। আমি একেবারেই প্রান্তবর্তী মানুষ। আমার নিবাস এখনও এই আধুনিক জামানায় অনাধুনিক গায়ে। শহুরে মানুষরা এই জামানায় যেইভাবে বাকা চোখে, নিগ্রহের সুরে গ্রামরে উপস্থাপস করেন... তাই গ্রাম্য শব্দটায় কেন যেন অবজ্ঞা খুজে পাই। আর শব্দটাতো ঋনাত্মক না কোনমতেই। মৌলবাদ শব্দ কিন্তু আমি এই লেখায়ই ঋনাত্মক হিসাবে নিইনি।

গ্রামের মানুষ সব কালেই এদেশে নাগরিক মর্জাদার বাইরে বাস করে। লেখার শেষে শাহ আব্দুল করিমের বিষয়টা সবকালেই খুজে পাওয়া যাবে।

শোহেইল ভাই আপনার ভাবনা নিয়ে এখন একটা লেখা ঝাড়েন। তাইলেই সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।