অনামা গল্প - ৩

বইখাতা এর ছবি
লিখেছেন বইখাতা (তারিখ: বিষ্যুদ, ৩১/০৩/২০১১ - ১১:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মনোরম একটি সন্ধ্যা। অভিজাত এলাকার বিস্তৃত মসৃণ সড়ক। দু' একটি ছিমছাম বহুতল বাড়ি। গোছানো মানানসই পরিপাটি ঘাস ও গাছ। বহুতল আবাসগুলোর পাশে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে কিছু সুদর্শন দোকানপাট, চীনা রেস্তোরা, অভিজাত স্কুল, আত্মসম্মানবোধে দৃঢ় বইয়ের দোকান, অত্যাধুনিক ও স্মার্ট যন্ত্রাদির স্টোর। সড়কে সাঁই সাঁই করে ছুটে চলছে চকচকে গাড়ি, রাগী বড়সড় বাস, ক্বচিৎ ক্ষ্যাপা হলুদ-সবুজ ট্রাক। এদের পাশ দিয়ে চিপা চাপায় মিশে গিয়ে জোরসে ছুটে চলে রিকশা। তবে বেশিদূর যাওয়ার অনুমতি নেই তাদের। মাঝরাস্তায় থেমে যাত্রী নামিয়ে দেয় তারা।

সড়ক বাতি জ্বলে উঠেছে একটি দুইটি করে। কিছু বাতিতে আলো নেই। এ বাতিগুলো অন্ধ। হলদে কনফিউজড আলোয় মানুষের মুখ ঝাপসা হয়ে যাবে খানিক পরেই। এখনও নীলচে বেগুনি আকাশ থেকে নানা রঙের মিশ্র আলো ছড়িয়ে আছে সন্ধ্যার সড়কময়। এই সড়কের তিনটি চীনা রেস্তোরার প্রথমটির পাশে তিনটি গাড়ি অবস্থান নিয়েছে। একটি বেশ বড়, সাদা রঙের। এটি আহসান পরিবারের। অপর দুটি ছোট। একটি লাল। অন্যটি সাদা।

রেস্তোরাটি দুইতলা। ভেতরে নিষ্প্রভ অনুত্তেজক সাদা আলো। নিচের তলায় গোল টেবিলগুলো এলোমেলো উত্তরাধুনিক প্যাটার্নে ছড়ানো। সবুজ হলুদ চেক কাটা টেবিল ক্লথ। এককোণে দোতলায় যাবার বাঁকা সিঁড়ি। সিঁড়ির গোড়ায় সোনালী ঢেউ-খেলানো পাত্রে গ্রামবাংলার চিহ্ন সগৌরব বহন করছে তালপাতা সদৃশ পাতাসমূহ। বিশাল ঘন পাতাগুলো আড়াল করেছে সিঁড়ির বাঁক। দোতলায় উঠলে মনে হবে এ যেন একটি সুসজ্জিত ডাইনিং রুম। মাঝে একটি বড়সড় টেবিল পাতা, তাতে সেই একই সবুজ হলুদ চেক কাটা টেবিল ক্লথ। টেবিল ঘিরে বেশ অনেকগুলো গাঢ় লাল গদি আঁটা চেয়ার। সিলিং এর ঠিক মাঝ বরাবর ঝুলছে এক জমকাল ঝাড়বাতি। চারদিকের দেয়ালে আটকে আছে রাজকীয় ঢাল, তলোয়ার, নানা-রঙা পাথর-খচিত ছড়ি। টেবিলটি এখন আহসান পরিবারের দখলে। আহসানের মেয়েটির আজ প্রথম জন্মদিন।

সন্ধ্যার হিম আঁধার আরও একটু জমাট বেঁধে এলে একটি দুটি করে ছোট বড় মাঝারি আকারের কালো, সাদা, রঙিন, আদুরে, বেয়াড়া গাড়ির ঝাঁক চীনা রেস্তোরার পাশে এসে থামে। গাড়ির দরজা খুলে নামে সুসজ্জিত পুরুষ, সুরভিত নারী ও রঙিন কাপড়ের প্যাকেট মোড়া বাচ্চারা। তাদের মার্জিত লেভেলের কলতানে রেস্তোরাটি জেগে ওঠে আড়মোড়া ভেঙে। রেস্তোরার জমকাল দরজার সাথে জমকাল ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ইউনিফর্মধারীদ্বয় দীর্ঘ জড়তা ভেঙে তৎপর হয়। তাদের প্লাস্টিকের মুখ গলে সুড়ুত করে বেরিয়ে পড়ে সযত্ন রচিত প্লাস্টিক হাসি। সে হাসি আবার একই বেগে মাপমতো ফাঁক করা মুখগহ্বরে তলিয়ে যায় রেস্তোরার দরজা বন্ধ হবার সাথে সাথে। তাদের ভ্রু কুঞ্চিত। চোয়াল কঠিন, শক্ত। দৃষ্টি রাস্তায় এক ভবঘুরের শীর্ণ শরীরে পতিত।

রাস্তায় ইতস্তত হেঁটে বেড়ানো লোকটির বয়স অনুমান করা অসম্ভব। তা হতে পারে তিরিশ বা চল্লিশ বা পঞ্চাশ। এই রাস্তায় সচরাচর ভিক্ষুক দেখা যায় না। এই লোকটি হয়তো ভিক্ষুক নয়। স্পর্শ বাঁচিয়ে হেঁটে যাওয়া নারী-পুরুষদের প্রতি তাকে কণা পরিমাণ মনোযোগও দিতে দেখা যাচ্ছে না। এই রাস্তায় সচরাচর বেপরোয়া মাদকাসক্তদের ঘোরাফেরা নেই। লোকটি মাদকাসক্ত কি? এইরকমও বোধ হচ্ছে না। রাস্তার ধুলা মেখে সাদা হয়ে যাওয়া তেলচিটে ময়লা কালো মাদকাসক্তদের সাথে তার সাদৃশ্য নেই। খুব সম্ভবত তার শার্টটা কাঁধের কাছে ছেঁড়া। বার বার এক হাতে কাঁধ ঢেকে রাখার প্রয়াস থেকে তার অস্বস্তি টের পাওয়া যায়। হালকা নীল শার্ট অতি পুরাতন। রঙ ওঠা। খয়েরী ঢোলা প্যান্ট। স্যান্ডেলের এক পাটির একটা ফিতা ছেঁড়া। গালে খোঁচাখোঁচা দাড়ি। একমাথা রুক্ষ, সামান্য জটপাকানো কোঁকড়া চুল ঘাড় ছুঁইছুঁই। লোকটি এতক্ষণ গুটি গুটি পায়ে রেস্তোরার পানে এগুচ্ছিল বেশ। কিন্তু কিছুটা পথ পেরিয়ে যাবার পর ইউনিফর্মধারীদ্বয়ের নীরব হুমকিতে নিরস্ত হতে হলো। একটি অদৃশ্য সীমানা নির্ধারণ করে নিয়ে লোকটি গ্যাঁট হয়ে বসে পড়লো রাস্তার ধারে, পাথর ফুঁড়ে সটান দাঁড়িয়ে থাকা উদ্ধত গাছটির গোড়ায়। জমকাল দরজার সামনের নির্দিষ্ট-প্রকারে-কেতাদুরস্ত লোক দুটি এতে অসন্তুষ্ট বোধ করলেও লোকটি রেস্তোরা হতে সম্মানজনক দূরে অবস্থান নেয়ায় অচিরেই এ ব্যাপারে তাদের উৎসাহ হারিয়ে ফেললো। লোকটির নিবিষ্ট চোখ রেস্তোরায় সেঁটে আছে এখন। সহনশীল ভঙ্গিতে অপেক্ষমাণ।

সন্ধ্যার লালচে বেগুনি আলোর রাশি বিলীন হয়ে গেছে নীলচে কালো আঁধারের সাথে। তবে এখনও সামান্য পরিমাণ ঝাপসা আলো কোনোমতে ঝুলে আছে আকাশের সাথে, সড়ক বাতির গায়ে, বহুতল ভবনগুলোর কোনাকানচিতে। চীনা রেস্তোরাটি এখন জেগে উঠেছে পুরোপুরি। দোতলায় হলরুমটিতে রাউন্ডেড রেকট্যাঙ্গল টেবিল ঘিরে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, সোনালী, কালো, সাদা, ম্যাজেন্টা, গোলাপি, কমলা মানুষ। ...আহসান ভাই, দুই নাম্বারটা নিয়ে নেন। ...আরে, মিনহাজ ভাই, আপনি আসতে পারবেন আমি তো ভাবতেই পারিনি। ...ভাবী স্লামালিকুম, আপনি এসেছেন খুব খুশি হয়েছি।...আরেহ, কী কিউট বাচ্চা। ...ভাবী আপনার মেয়ের চোখটা কিন্তু একদম আপনার মতো হয়েছে, আপনার মতো বড় বড় আর সুন্দর। ...এসব কেন আনতে গেলে রুমানা...আমি কী বলেছিলাম! নো গিফট।...শানু লাফালাফি কোরোনা...আরে আস্তে ঢালো...নাদিরা আপা এখনো রাস্তায়...আজকে যা জ্যাম...। আহসান ক্লান্ত বোধ করে বলে মনে হয়। সবাই যখন খাওয়া ও আলোচনার মাঝামাঝি অবস্থানে সেট হয়ে গেছে এবং ছোট ছোট আলোচনা দল গঠন করে ধর্ম, রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি নিয়ে তুমুল বিতর্কে লিপ্ত, আহসান তখন বেরিয়ে আসে হলরুম থেকে। একটা সিগ্রেট খাওয়া দরকার।

রেস্তোরার বাইরে তখন শিরশিরে হাওয়া বইছে। আসি আসি করছে কুয়াশা মোড়া শীত। আহসান বাইরে বেরিয়ে জোর শ্বাসে টেনে নেয় উত্তুরে হাওয়া। তারপর সিগ্রেট না ধরিয়ে সামান্য এগিয়ে স্থির তাকিয়ে থাকে এতটা সময় ধরে রাস্তার ধারে লেপটে বসে থাকা লোকটির দিকে। লোকটি অবশ্য এখন আর বসে নেই। পুনরায় লজ্জিত, দ্বিধাগ্রস্ত পায়ে এগিয়ে আসছে রেস্তোরার দিকে। সে এসে সামনে দাঁড়াতেই আহসানের ঘষামাজা চেহারা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে গেলো চকচকে সড়কে। রীতিমত খেঁকিয়ে উঠলো আহসান।

হইসে কী তোমার! ক্যান আসছো এইখানে? ঢাকায় কবে আসলা?

লোকটি পিছিয়ে গেলো খানিক। আচমকা আক্রমণে থতমত অবস্থা। চোখে ভয়, দ্বিধা ও একটি মরিয়া ভাব। আহসান কী ভেবে পকেটে হাত দিতেই লোকটি তড়বড় করে কথা বলে ওঠে।

আমি তো তোর কাছে টাকা চাইতে আসিনি বাবু।

তাইলে ক্যান আসছো?

লোকটির চেহারায় এবার মরীয়া ভাব আরও জোরদার হয়।

তোর মেয়েটাকে একবার দেখা যায়না বাবু? একবারও দেখিনি।

কী আজব! তিন্নিকে এখন কীভাবে বের করে নিয়ে আসি। এইসব উলটাপালটা কথা বলে লাভ নাই। এখন তুমি বিদায় হও। এইখানে আমার কলিগরা আসছে সবাই।

আহসানকে কিছুটা সন্ত্রস্ত দেখায়। কেমন একটা চোর চোর ভাব নিয়ে সে আড়চোখে তাকায় রেস্তোরার দিকে। ইউনিফর্মধারী দুজন কিছুটা বিস্ময় ও সন্দেহ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে টের পেয়ে সংকুচিত বোধ করে। তার সামনে দাঁড়ানো লোকটি এই অবসরে নিজের লম্বা অবয়ব কীভাবে ভেঙ্গেচুরে অর্ধেক করে ফেলা যায় সেই চেষ্টায় রত। যেন ছেঁকে ধরা আঁধারের রাশির সাথে মিশে যাওয়াতেই সব সমস্যার সমাধান নিহিত। আর এসব দেখে আহসানের মাথার ভেতরে পাকিয়ে ওঠে বন্য রাগ। রাগ থেকে জাত আঠালো ধোঁয়া পাক খেয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলে তার আঁচে আহসানের চোখ জ্বালা করে ওঠে। গলার ভেতর শুকনো ঠেকে। ধোঁয়া ছড়িয়ে গেছে মাথা থেকে চোখে, গলায়, পাকস্থলীতে। জিভ শুকিয়ে খরখরে। প্রাণপণ চেষ্টায় মরীয়া আহসান অবশেষে গলায় স্বর ফোটাতে সক্ষম হয়।

কী হইলো! এখনো যাও নাই ক্যান! আমারে বেইজ্জত না করলে তোমার শান্তি হবে না নাকি!

লোকটি একথায় আহত চোখে তাকায়। তার আহত, করুণ দৃষ্টিতে আহসান বিপন্ন বোধ করলেও মুখের ভাব এতটুকু পরিবর্তন হয় না। আহসানের কঠোর মুখভাব উপেক্ষা করে লোকটি এবার অনুনয় করে।

আব্বায় আসছে দেখলাম! একবার দেখা যায় না!

ফালতু কথা বইলো না। জানোনা আব্বায় তোমারে ত্যাজ্য করসে! তুমি আবার আব্বারে স্ট্রোক করাইতে চাও!

লোকটি একথার প্রতিবাদ না করে অতি ধীরে ঘাড়টা ফেরায় সড়কের ধুলাবালিতে। আহসান গজগজ করা থামায় না। সাবধানে ছিপি খোলা সেভেন আপের বোতল থেকে হিস হিস শব্দের মতন শব্দ রাশি অবোধ্য উত্তেজনায় কেঁপে কেঁপে বেরিয়ে আসে।

দেশোদ্ধার হইসে তোমার! কিছু করতে পারসো? নিজের লাইফটা নষ্ট করা ছাড়া? এখনো যে মরো নাই, গায়ে আঁচড় একটাও লাগে নাই এইটা ভাবলে আশ্চর্য লাগে! আসছেন একজন বিপ্লবী! বিপ্লব করে দেশোদ্ধার করবেন তিনি!

আমি তো অনেক আগে থেকেই আর ওদের সাথে নাই, তুই জানিস!

লোকটির ম্লান নিস্তেজ কণ্ঠস্বর বাতাসে দ্রুত মিশে গেলে শেষের কয়েকটা শব্দ হয়তো শোনা যায় কি যায় না!

নাই তো কী! আজাইরা ঝামেলা গায়ে মাখার স্বভাব তো বদলাও নাই। বদলাইলে কি আর ...

ঝাঁজাল হিস হিস ক্রমে চাপা গর্জনে বদলালে লোকটির মুখে একটুখানি বিব্রত হাসি ঝুলে পড়ে।

ওই মেয়েটার সাথেই থাকো?

লোকটি এবার ধুলাবালি থেকে দৃষ্টি সরায়। মুখ তোলে। তবে তার চোখে কোনো দৃষ্টি আছে এমন প্রতীয়মান হয় না। চোখ ভরা শুধু অন্ধকার। মুঠো মুঠো অন্ধকার। সেই অন্ধকার গুঁজে দেয়া চোখ মেলে লোকটি স্বগতোক্তি করে।

ও তো আর নাই!

এ কথায় আহসান তার শরীরে এক অভূতপূর্ব কাঁপুনি টের পায়। একাগ্র চেষ্টায় যাবতীয় ইচ্ছাশক্তি নিয়োগ করে আহসান কাঁপুনি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে। তাকে ঘিরে থাকা বায়ুতরঙ্গ নিয়ন্ত্রণহীন কাঁপতে থাকে। কাঁপতে থাকে ধবধবে সাদা শাড়ি। পাতলা সাদা হাত। সাদা শাঁখা। সাদা মুখ। সাদা চোখ। ধীরে......অতি ধীরে কাঁপুনি থিতিয়ে এলে আহসান আরও সন্ত্রস্ত বোধ করে। এখুনি যদি বেরিয়ে আসে তার কোনো কলিগ! ছেঁড়া জামা পরা দুস্থ চেহারার লোকটির দিকে তাকিয়ে আহসান একইসাথে প্রবল রাগ ও অসহায়তা বোধ করে।

তুমি এখন যাও মিয়াভাই।

লোকটি এই চিরপুরোনো তথাপি আজকের প্রেক্ষিতে নতুন সম্বোধনে হাত দুটি মুষ্টিবদ্ধ করে।

আম্মারে একবার দেখা যায় না!

কী শুরু করলা! জানোই তো সব! যাও বলতেসি!

লোকটি এই খেঁকিয়ে ওঠা বাক্যে আহত বোধ করে বলে মনে হয় না। শুধু হতাশ চোখে একবার রেস্তোরার দিকে তাকায়। অতঃপর পিছু হটে। এই পিছু হটা দেখে আহসান ত্বরিত পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগ বের করে কিছু টাকা খামচে তুলে নেয় ও বাড়িয়ে ধরে লোকটির দিকে। রাস্তার হলদে বিভ্রান্তিকর আলোয় শ, পাঁচ শ টাকার নোটেরা বিভ্রান্ত হয়ে লোকটির দিকে এগিয়ে যায়। অথচ লোকটি শুধুমাত্র একটিবার আস্তে করা মাথা নাড়ানো ছাড়া আর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। আহসানের মুখটা সে একবার দুচোখ মেলে দেখে নেয়। বোধ করি এটিই তার ক্যামেরা। আহসানের মুখের ছবি তুলে মাথার ভেতরের গলিঘুপচিতে জমা করে রাখে এবং পেছন ফিরে অলস ভঙ্গিতে হেঁটে যায় সড়কের ওপাশে। একটি সিনেমা-দৃশ্যের মতো এই দৃশ্যটি আহসান মনোযোগ দিয়ে দেখতে দেখতে সিগারেট বের করে ও ধরিয়ে ঠোঁটে ঝুলায়। চোখের সাদা অংশের ক্রমশ লাল হয়ে যাওয়া ঠেকাতে না পেরে সে সন্ত্রস্ত বোধ করে। অবশেষে কয়েকটা সজোর টানে ধোঁয়া গিলে নিলে এর সুফল পাওয়া যায়। চোখের লাল অংশ সাদা হতে শুরু করে।

পুরো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুই ইউনিফর্মধারী ঘটনার মাথামুণ্ডু বুঝতে না পেরে সঙ্গত কারণেই নিদারুণ হতাশ। তারা বেজার মুখে দরজা টেনে ধরে। আহসান দোতলার হলরুমটিতে পৌঁছালে তাকে ঘিরে হালকা মনোযোগের বলয় তৈরি হয়। আহসান ভাই কই গেসিলেন? ...কী ধোঁয়া টাইনা আসলা নাকি? ... আরে তুমি তো কিছুই খাওনাই...আর বইলেন না, মাথাটা জ্যাম হয়ে গেসিলো...সকাল থেকেই ব্যথা করতেসে...খাওয়াটা ভাল ছিল...থ্যাংকস...

রাত এখন জাঁকিয়ে বসেছে এই শহরে। আহসানদের দলটা বাইরে বেরিয়ে এলে ঈষৎ শীতল হাওয়ায় তাদের শরীর জুড়িয়ে যায়। দুঃসহ গরম শেষে আসছে আপাত আরামদায়ক শীত। কেউ কেউ কেঁপে ওঠে অজান্তে। ওড়নাটা, শাড়ির আঁচলটা জড়িয়ে নেয় গায়ের সাথে। তথাপি আরামবোধ করে। আকাশের একটা পাশ দখলে নিয়েছে পূর্ণাকৃতির চাঁদ। তার জোরালো, কাচের মতো স্বচ্ছ আলোয় ভেসে যাচ্ছে মসৃণ কালো সড়ক। সড়ক বাতির আলো পরাজিত এখন। আহসান চকিতে দৃষ্টি মেলে দেখে নেয় সড়কের এপাশ ওপাশ। কোনো ছেঁড়া-ময়লা জামার হদিস পাওয়া যায় না। তার প্রশস্ত কপাল কেটে বসে যাওয়া চিকন চিকন দাগ এতে সামান্য পুরু হয়। সড়ক জুড়ে তীব্র বেগে ছুটে যাচ্ছে গাড়ির ঝাঁক। আলো ঝলমল সুদৃশ্য দোকানগুলোর পেট থেকে বেরিয়ে আসছে ব্যস্ত-সমস্ত মানুষেরা। মোবাইল ফোনের সার্ভিস সেন্টারের কাচের ওপাশ থেকে স্মার্ট, হাসিখুশি তরুণটিকে এখান থেকেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সঙ্গীত সম্ভার মিউজিক সেন্টার থেকে লো ভল্যুমে ভেসে আসছে জীবনানন্দ হয়ে সংসারে আজও আমি সবকিছু ভুলে যেন করি লেনদেন... গায়কের ভরাট কণ্ঠ সুন্দর মিশে যাচ্ছে ঝরে পড়া বিন্দু বিন্দু চাঁদের আলোর সাথে। কী মনোরম একটি রাত!

৩১/০৩/২০১১


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পের শরীরে সামান্য মেদ জমেছে। আসলে আপনার লেখা আগের কিছু অসাধারণ গল্পের সাথে তুলনা চলে আসে কেন জানি! সেগুলোর তুলনায় এ গল্পটা একটু দুর্বল মনে হলো। তবে আপনি পরিবেশের বর্ণনা চমৎকার দেন! সত্যিই নাকি সিগারেট টানলে চোখের লাল অংশ সাদা হয়( গল্পের বর্ণিত অংশের কথাই মূলতঃ জানতে চাইছি)?
আরো লেখুন। আপনার জন্য শুভকামনা।

- আয়নামতি

বইখাতা এর ছবি

লেখাটা পড়বার জন্যে ধন্যবাদ আপনাকে। আমি লিখতে বসলেই কীভাবে যেন শেষপর্যন্ত একটা মেদবহুল লেখা বের হয়। এটা আমার একটা পুরোনো সমস্যা।

আপনার জন্যেও শুভকামনা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার গল্প পড়লে মাথা ঝি ঝি করে ! মাথার ভেতর কাঁপনি টের পাই !এখানেই গল্প পড়ার সর্থকতা ামার !
-গুল্লা সাঃ

বইখাতা এর ছবি

গল্প পড়বার জন্যে ধন্যবাদ। কিন্তু আমার গল্প পড়লে মাথা ঝিঁ ঝিঁ করে! হায় হায়!

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

ছোট ছোট ডিটেইলিং খুব ভাল লেগেছে। অনান্যদের কথাবার্তার অংশটুকু খুব স্বাভাবিক লেগেছে। কিন্তু দুই ভাইয়ের কথোপকথন একটু আড়ষ্ট মনে হয়েছে।

বইখাতা এর ছবি

সময়, পরিবেশ, সামাজিক-পারিবারিক অবস্থা ইত্যাদি কারণে আমি চেয়েছিলাম দুই ভাইয়ের কথোপকথনে কিছুটা অস্বাচ্ছন্দ্য থাকুক। কিন্তু এটা করতে গিয়ে খুব সম্ভবত কথোপকথনের স্বাভাবিক ভাবটুকুই নষ্ট করে ফেলেছি। ধন্যবাদ আপনাকে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভাষাটা সাবলীল লাগলো না...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বইখাতা এর ছবি

এরপর লিখলে চেষ্টা করবো সাবলীল ভাষায় লিখতে। আপনাকে ধন্যবাদ।

বইখাতা এর ছবি

ধন্যবাদ স্পর্শ। উপন্যাস!! হাসি না না, সেই ক্ষমতা তো আমার নেই। গল্পই হয়না, পারিনা, আর উপন্যাস!

স্পর্শ এর ছবি

আপনার লেখনী শক্তিশালী। বড় উপন্যাস লিখবেন কখনো আশাকরি।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।