ডাক দেয় দীক্ষক দ্রাবিড়

দীক্ষক দ্রাবিড় এর ছবি
লিখেছেন দীক্ষক দ্রাবিড় (তারিখ: রবি, ২৬/০২/২০০৬ - ৮:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


মাদলের দ্রিমিকি দ্রিমিকি ছন্দে রক্তের গভীর থেকে ডাক দেয় দার্ঢ্য দ্রাবির। আমার এই পলল মাটির উপত্যকায়, আমার এই অসীম ভূ-সৌন্দর্যের লীলাক্ষত্রে আরব, হুন, শক, আর্য শকুনেরা হানা দিয়েছে বারংবার। সুফলা শ্যামল মৃত্তিকায় তারা হানা দিয়ে জন্মভূমিকে বানিয়েছে লু-হাওয়ার মরুভূমি আর নামিয়ে এনেছে সমাধির নিস্তবদ্ধতা।

অপরাধী ছন্নছাড়া ব্রিটিশরা যেমন সাগর পাড়ি দিয়ে ভূমিপুত্রদের পাখির মত গুলি করে হত্যা করেছে লাখে লাখে এবং দখল করেছে অস্ট্রেলিয়া তাদের রাণীর নামে কিংবা অতলান্তিক পার হয়ে নিষ্ঠুর শ্বাপদের মত নিধন করেছে রেড ইন্ডিয়ানদের আর শঠতায় দখল করে নিয়ে তাদের প্রকৃতি-দত্ত-ভূখন্ড কালিমা ছুঁড়ে দিয়েছে তাদের তিলকে বর্বর বন্য হিসেবে তেমনি কৌশলে বিচিত্র সব খুন লোভী তাতারের দল সর্বশান্ত করেছে আমার ভূমিপুত্র জাতিকূলকে। আমরা শান্তিপ্রিয় ছিলাম বলে, আমরা জঙ্গলের অশ্বকে বশ করে তার গতির সুবিধায় ভিন্ন দেশের মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন করিনি বলে, নিজস্ব মৃত্তিকার উর্বরতায় ফসল ফলিয়ে সুখের নীড় গড়ে তৃপ্ত ছিলাম বলে হার্মাদের দল, বেদুইনের দল, তাতারের দল মাংসপেশি আর অমানবিক সব অস্ত্রের শক্তিতে ছিনিয়ে নিয়েছে আমাদের জন্মভিটা, ফসলের মাঠ,সম্পদের গোলা আর ধ্বংস করেছে আমাদের সাংস্কৃতিক অর্জন ও সভ্যতার নজির। পাশবিক রমণে ও ধর্ষণে গর্ভবতী করে আমাদের নারীদের জন্ম দিয়েছে পাপাচারী সন্তান আর বাড়িয়েছে তাদের তথাকথিত উঁচু ধর্মের হানাদার অনুসারী। কিসের সভ্যতা, ধর্ম আর কোন ঈশ্বরের বড়াই করে তারা?

শেকড়ের মধ্য থেকে জেগে ওঠা দ্রাবিড়েরা ডাক দেয় নতুন দীক্ষায়। অনাদিকালের সুপ্ত প্রাণবীজ জেগে ওঠো সনাতন প্রাণস্পন্দনে, পবিত্র হও স্নান করে মানবিকতার ঝর্ণায়, আর ধুয়ে ফেলে তোমার যত শ্বাপদের রক্ত-সূত্র উচ্চারণ করো নতুন স্বাধীনতার মন্ত্র। পুনর্বিজয়ের যুদ্ধে জয় করে নাও হারানো জমিন, বাস্তুভিটা, গলার গান আর বিস্তীর্ণ নদীতীর। ধনুকের ছিলায় রাখো হাত, সুতীক্ষ্ণ করো নিশানা আর দখলদার জাতিসত্তার রক্তবীজে ছুঁড়ে মারো নির্বংশকারী তীর। ডাক দেয় ডাক দেয় দীক্ষক দ্রাবিড়।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আমরা তো দ্রাবিড় পরিচয় দিতে অপছন্দ করি। কেউ পারসি, কেউ আরব, কেউ বোগদাদি, কেউ আর্য এসব পূর্বপুরুষের রক্ত গায়ে আছে মনে করেতো আমাদের বরং গর্বই হয়। তাতারের দল যে মন্ত্রে এদেশের সহজতা আর সরলতাকে নষ্ট করে ক্রূরতা, রূঢ়তা এবং বিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের লুটেরা স্বার্থ হাসিল করে গেছে সেই মন্ত্রে আজো আমরা দীক্ষিত। সেজন্যেইতো আজ কৃষক তার জমির মালিকানা হারায়। অ্যাপার্টমেন্ট, প্রজেক্টের নামে তাদের করা হয় ভূমিহীন। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসলে তার অধিকার নেই আজ। মহাজনের দাদনের কবল থেকে কোনদিন বেরোতে পারে না জেলে, তাঁতী, কামার, কুমোরেরা। যে মেরুদণ্ডের ওপর জাতির ভিত ছিল তাকে আজ মেকি বেনিয়ার ভূষণে সজ্জিত করে বেনিয়ার বিলাসিতায় মত্ত হতে চাই আমরা। আমরা দ্রাবিড় পরিচয় কেন দিতে যাব। আমরা কোল, মুণ্ড, সাঁওতাল, দ্রাবিড় এইতো আমাদের পরিচয়। নিজের পারদর্শিতাকে আমরা ভুলে গিয়ে বেনিয়ার ভাষা ও পারদর্শিতা অর্জনে নিয়োজিত হয়ে সময় ও শ্রমের অপচয় করেই বরং নিজেদের সর্বনাশ করেছি আমরা। এখন সব ধার করতে হয়। সব। অথচ সবই আমাদের ছিল। যা ছিল তাকে সমৃদ্ধ করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আবারো যদি আমরা জেগে উঠতে পারতাম! জাগো বাহে কুন্ঠে সবাই...

ধন্যবাদ দীক্ষক দ্রাবিড়।
জিজ্ঞাসু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।