ইসলাম ও নারী ঃ একটি মোহমুক্ত বিশ্লেষণ -১

দীক্ষক দ্রাবিড় এর ছবি
লিখেছেন দীক্ষক দ্রাবিড় (তারিখ: মঙ্গল, ২১/০৩/২০০৬ - ৮:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


[প্রথমেই বলে নেয়া ভালো যে, কারো প্রতি বিরাগভাজন হয়ে বা কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই প্রবন্ধটি আমি লিখছি না। যারা ধর্ম সম্পর্কে অতিরিক্ত সংবেদনশীল, অল্পেই মনে আঘাত পান ও মুষড়ে পড়েন, সময় ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ধর্মের সংশোধনে বিশ্বাসী নন তাদের এই লেখা না পড়াটাই উচিত। তথ্য ও যুক্তি দিয়ে যারা ধর্মকে জীবন-যাপনের সাথে মেলাতে ইচ্ছুক তাদেরকে স্বাগতম জানাই। আমার লেখায় উল্লেখ করা সব তথ্যের সূত্র দিতে চেষ্টা করবো। তবে সবাই জানেন এ ধরনের তথ্যের সূত্র খুঁজতে গিয়ে লেখাটির গতি কমাতে চাচ্ছি না। আর যারা বিষয়টিকে এ্যাকাডেমিক হিসেবে দেখতে রাজি আছেন তারা পড়ে প্রাসঙ্গিক মন্তব্য করতে পারেন, তথ্য যোগ করতে পারেন বা অস্পষ্ট বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। আর যারা মনে করেন ইসলামে নারীকে অপরিসীম সম্মান দেয়া হয়েছে তাদেরকে বিতর্কে স্বাগতম। তাহলে মূল লেখায় আসা যাক।]
শুরুর কথা: আধুনিক মুসলিম মনীষিরা -যারা ধর্মকে আরো মার্জিত ও যুগোপযুগী করে তোলার পক্ষে- তারা ইসলামের একধরনের সোনালী সময়ের রূপকথা তৈরি করেছেন যে, ইসলাম প্রচারের প্রাথমিক যুগে মুসলিম রমণীরা সমান অধিকার ভোগ করতেন। মিশরের ফেমিনিস্ট নাওয়াল এল সাদায়ি এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলছেন মুহাম্মদের (দঃ) সময়ের তুলনায় মুসলিম রমণীরা এখন অনেক বেশি পরাধীন। একইভাবে অনেকেই বলে থাকেন, আল্লাহর ধর্ম নয় বরং তার ব্যাখ্যাই এজন্য দায়ী (যা ভুল)। মৌলবাদ (যেমন তালিবান) সবচে বেশি ক্ষতি করছে এবং এর ফলে মুহাম্মদের (দঃ) শিক্ষা থেকে সরে এসেছে মুসলিমরা।

এধরনের মুসলিম মনীষিদের বক্তব্য হলো মুসলিম মহিলাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে জীবনযাপনের জন্য ইসলাম দায়ী নয়। এর প্রমাণ হিসেবে তারা অতীতের একটি মিথ দাঁড় করিয়েছেন। এসব মনীষিদের সামনে যখন ইসলামের টেক্সট (কোরান ও হাদিস) তুলে ধরা হয়, যাতে নারী-বিদ্বেষ, নারী-ঘৃণা পাতায় পাতায় রয়েছে, তখন তারা রেগে যান এবং তারা ছাড়া কোরান, হাদিসের ভাষা আর কেউ বুঝে না বলে হুমকি-ধমকি শুরু করেন। একটু মধ্যপন্থী যারা, যারা বিরোধ-বিতর্ক এড়িয়ে চলেন তারা বলেন, খারাপ উদ্দেশ্যে বেপথু কিছু মুসলমানরা এসব প্রথা চালু করেছে।

উগ্র ধার্মিকরা, অবশ্য এসব বিতর্কে কান দিতে নারাজ। যখনই আপনি কোনো টেক্সট তাদের সামনে হাজির করবেন তখনই তারা আরো এক ডজন প্রতি-টেকস্ট হাজির করবেন। কিন্তু এভাবে শুধু টেক্সট হাজির করে ইসলামে নারীর অবমাননাকে চাপা দেয়া সম্ভব নয়। আমার এই লেখার থিসিস হচ্ছে, ইসলাম আদ্যোপান্ত নারী স্বাধীনতা বিরোধী। মুসলিম মহিলাদের দমিয়ে রাখার মূল অস্ত্র হচ্ছে ইসলাম এবং তাদের অবস্থার উন্নতির ক্ষেত্রে ধর্মের বিধি-নিষেধই প্রধান বাধা। ইসলাম নারীকে সবসময়ই পুরুষের তুলনায়, শারীরিকভাবে, বুদ্ধিবৃত্তিগতভাবে ও নৈতিকতার দিক দিয়ে দুর্বল হিসেবেই চিত্রিত করেছে। নারী সম্পর্কে এই নেতিবাচক চিত্র পবিত্র কোরানে বর্ণিত আছে, হাদিস দ্বারা সেগুলোকে সমর্থন দেয়া হয়েছে এবং ইসলামী ধর্মের নেতৃত্বদানকারী বিভিন্ন নীতিবাগীশ ও তফসিরকারকগণ তাদের মন্তব্য ও ব্যাখ্যার মাধ্যমে সেগুলো আরো জোরদার করেছেন। আমার লেখার পরবর্তী অংশে আমার এই থিসিসের পক্ষে কোরান ও হাদিস থেকে উদ্ধৃতি আমি তুলে ধরছি।

যুক্তি প্রদান সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক কথা: যুক্তি উপস্থাপনের বিষয়টিকে মুসলিমরা খুব একটা ভালো চোখে দেখেন না। কোরান হচ্ছে স্বয়ং ইশ্বরের বাণী। সুতরাং এর সংশোধনের কোনো দাবীই খাটে না। অন্যান্য সংশোধনের ক্ষেত্রেও বাধা আসে ব্যাপক। ইসলামে কেনো মুক্ত চিন্তার মানুষের এত অভাব তা আমার, আপনার মত অনেক গবেষককেও ভাবিয়েছে। অনেকের মতে, মোল্লাতন্ত্র একটি বড় কারণ। মুসলিম দেশগুলোতে অশিক্ষার হার মারাত্মক। ঐতিহাসিকভাবে, রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে কখনও আলাদা করা হয়নি। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনাকে দেখা হয়েছে ধর্মের বিরুদ্ধে বক্তব্য হিসেবে। অনেক সদ্য স্বাধীন মুসলিম দেশে (ধরা যাক পাকিস্তান) জাতীয়তার সাথে ধর্মকে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে ইসলামের সমালোচনাকে ঐ দেশের স্বাধীনতার পরিপন্থী হিসেবে দেখা হতো। কোনো মুসলিম প্রধান দেশে স্থায়ী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়নি। পৃথিবীজুড়ে সব মুসলিম দেশে মুসলিমরা জীবনের সকল ক্ষেত্রে নানা ধরনের হস্তক্ষেপ ও বাধার মুখোমুখি হন। এই অবস্থায়, চলমান সমাজের সুস্থ বিতর্ক প্রায় অসম্ভব (এমন কি ইন্টারনেটের এই যুগে পান থেকে চুন খসলেই ব্লগেও বেসবল ব্যাটসহ নানারকমের হুমকি দেয়া হয়)। কারণ পরিপূর্ণ স্বাধীনতা ও মুক্ততা ছাড়া নতুন চিন্তার লালন করা সম্ভব নয়।
একারণে ইসলামে নারীর অবস্থান নিয়ে কোনো সমালোচনা, আলোচনা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা কখনও দেখা যায় না। যেকোনো ধরনের নতুন চিন্তা-ভাবনাকে ইসলাম প্রতিহত করার জন্য মুখিয়ে থাকে। সমাজ বা অর্থনীতি যেকোনো পরিপ্রেক্ষিতের সমস্যাকেই ধর্মের সমস্যা হিসেবে দেখা হয়।

(এই প্রেক্ষাপটে আমি আমার লেখার প্রথমে ইসলামে নারীর ধারণা দিয়েই শুরু করতে চাই। সেক্ষেত্রে রেফারেন্স অবশ্যই কোরান। কারণ ইসলামে প্রথম নারী হচ্ছেন হাওয়া।)


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।