লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে -২

দীক্ষক দ্রাবিড় এর ছবি
লিখেছেন দীক্ষক দ্রাবিড় (তারিখ: বুধ, ২২/০৩/২০০৬ - ৯:৫৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


একাত্তরে পাকসেনারা নৃশংস তাণ্ডবের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে যতোগুলো বধ্যভূমি সৃষ্টি করেছে তার অন্যতম একটি হলো কুমিল্লা জেলার লাকসাম রেল জংশনের বেলতলী বধ্যভূমি। এই বধ্যভূমিতে 8 থেকে 10 হাজার নিরীহ-নিরপরাধ বাঙালিকে পৈশাচিক অত্যাচারের মাধ্যমে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। এই গণহত্যার শিকার হতভাগ্যরা অধিকাংশই চাঁদপুর, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের বাসিন্দা। বেলতলীর এই বধ্যভূমিটি প্রায় 4 হাজার বর্গমিটার সীমানা বিসত্দৃত।
মূলত, এপ্রিলের শুরুতেই রেল জংশনের অতি সনি্নকটে অবস্থিত একটি সিগারেট কারখানাকে হানাদার পাকসেনারা টর্চার সেলে পরিণত করে। এই টর্চার সেলেই অকথ্য নির্যাতন করে হত্যা করা হতো হতভাগ্য বাঙালিদের। যুবতী ও নারীদের ওপর চালানো হতো পৈশাচিক নির্যাতন। যুবক ও পুরুষদের হাত-পা ভেঙে জীবনত্দ মাটি চাপা দেওয়া হতো। স্কুল-কলেজের মেয়েদের ধরে এনে দিনের পর দিন পাশবিক নির্যাতন করে এক সময় তাদেরও হত্যা করা হয়েছে। এতোসব নির্মম ঘটনার মূল হোতা বিহারি বকাউল হাবিলদার। তার নেতৃত্বে কয়েকটি গ্রুপ বাঙালি নারী-পুরুষদের ধরে আনার কাজটি করতো। আর হত্যার মিশন সমাপ্ত হওয়ার পর লাশগুলোকে বধ্যভূমিতে টেনে নিয়ে গর্ত খুঁড়ে মাটি চাপা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতো রেল জংশনের ডোম শ্রীদাস চন্দ্রদাস ও তার দুই আত্মীয়। আত্মীয়রা গত হয়েছেন, কিন' শ্রীদাস ডোম এখনো বেঁচে আছেন একাত্তরের সেই ভয়াবহ দুর্বিষহ স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে।
এতো বড়ো ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বধ্যভূমি স্বাধীনতার 35 বছর পরও রয়ে গেছে লোকচক্ষুর অনত্দরালে। দেশবাসীর তা জানাই নেই। 35 বছর অনেক দীর্ঘ সময়। কিন' কোনো সরকারই এই বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। 2000 সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর একবার বধ্যভূমিটি খননের বিষয়ে সরজমিন সমীক্ষা চালায়। এ কাজে তাদের সহায়তা করে ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অফ হিস্টোরিক সাইড মিউজিয়াম অফ কনসেস। কিন' ঐ সমীক্ষা পর্যনত্দ। 2001-এর অক্টোবরে সরকারের পটপরিবর্তনের পর এই সমীক্ষার সুপারিশ আজ পর্যনত্দ আর আলোর মুখ দেখেনি। এই বিশাল বধ্যভূমিটি অনতি বিলম্বে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। কেননা, দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে বধ্যভূমির সব স্মৃতিচিহ্ন মুছে যেতে বসেছে। গাছ, লতাপাতা আর আগাছায় ছেয়ে গেছে এলাকাটি। গা শিউরে ওঠা ভয়ে মানুষ দিনের বেলাতেও বেলতলীর এই বধ্যভূমির পাশ দিয়ে যাতায়াত করে না। সবাই এলাকাটি এড়িয়ে চলে। আর এই নির্জনতার অবসরে প্রকৃতি বধ্যভূমিটিকে প্রতিনিয়ত আড়াল করে চলছে।

গবেষক: ড. আবুল আজাদ


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।