লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে-৭

দীক্ষক দ্রাবিড় এর ছবি
লিখেছেন দীক্ষক দ্রাবিড় (তারিখ: মঙ্গল, ২৮/০৩/২০০৬ - ৬:০২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার দূরবতর্ী পাকুরিয়া গ্রামে '71-এর আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে সংঘটিত হয় ভয়াবহ এক গণহত্যা। দিনটি ছিল শনিবার, তারিখ 28 আগস্ট। হানাদার পাকবাহিনী ও রাজাকাররা প্রথমে চারদিকে থেকে পাকুরিয়া গ্রামটি ঘিরে ফেলে এবং গান পাউডার ছিটিয়ে বেশ কিছু বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনায় অগি্নদগ্ধ হয়ে মারা যান বুলন খেওয়া নামক এক বৃদ্ধা। আরো অনেকেই আহত হন।
অগি্নসংযোগের মহোৎসবের পর শুরু হয় বর্বর পাকহানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের গুলিবর্ষণের পালা। হামলাকারীরা নর্িির্বচারে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। জীবন বাঁচাতে গ্রামবাসী দৌড়ে পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ পাখির মতো ছটফটিয়ে মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়ে। অনেককে আবার লাইন ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। বহুসংখ্যক গবাদিপশুও হামলাকারীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে মৃতু্যবরণ করে।
পাকুরিয়া অপারেশন শেষ করে পাকহানাদার বাহিনী চলে যাওয়ার পর বেঁচে যাওয়া গ্রামবাসী 128টি মৃতু্যদেহ উদ্ধার করে 20 শতাংশ জমিতে সমাহিত করে। স্থানীয় জনগণ এই বধ্যভূমিটি চিহ্নিত করে রাখার জন্য ইট দিয়ে একটি বাউন্ডারি নির্মাণ করেছে। এখানে অবাধে গবাদিপশু বিচরণ করে। বধ্যভূমিটির গেটে স্থানীয় উদ্যোগে একটি তোরণও নির্মিত হয়েছে। তোরণের দুধারে লেখা রয়েছে 73 শহীদ ও 18 আহতের নাম। পাকুরিয়ায় এই বধ্যভূমিকে ঘিরে যা-ই কিছু ঘটেছে তার সবটাই স্থানীয় গ্রামবাসীর উদ্যোগ ও সহায়তায় সম্পন্ন হয়েছে। সরকারি সহায়তার কোনো ছিটেফোঁটাও পেঁৗছেনি পাকুরিয়ার বধ্যভূমিতে। এলাকাবাসীর এ জন্য কোনো আক্ষেপ নেই। তাদের ক্ষোভটা অন্যত্র।
নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার এই পাকুরিয়া গ্রামটি বেশ দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের মান্দা উপজেলার দেলুয়াবাড়ি হয়ে পশ্চিমদিকে 3 কিলোমিটার উঁচুনিচু কাঁচা-ভাঙা পথ পেরিয়ে তবে পেঁৗছানো যায় পাকুরিয়া গ্রামের বধ্যভূমিতে। পাকুরিয়াতো বটেই, মান্দা উপজেলাবাসী তথা নওগাঁর জনগণ 3 কিলোমিটারের এই দুর্গম পথটি পাকাকরণের দাবি জানিয়ে আসছে বহুদিন যাবৎ। কিন' সরকারের কোনো মহলেই এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না দীর্ঘদিন যাবৎ। যাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে দেশ, তাদের সমাধিতে যাওয়ার একটা রাসত্দা পর্যনত্দ নেই। অথচ এই দেশেরই রাজধানী ঢাকাকে বিউটিফিকেশনের নামে খরচ করা হয় কোটি কোটি টাকা। একই রাসত্দা ভেঙে বছরে একাধিকবার নানা আঙ্গিকে নির্মাণ করা হয়। রাসত্দার ওপর নানা ডিজাইনের আইল্যান্ড ভাঙাগড়া হয়। অথচ এ দেশেরই বধ্যভূমিতে যাওয়ার একটি রাসত্দা পর্যনত্দ নেই। হায়রে দুর্ভাগা জাতি!

গবেষণা: ড. আবুল আজাদ


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।