ইসলাম ও নারীঃ একটি মোহমুক্ত বিশ্লেষণ-৪

দীক্ষক দ্রাবিড় এর ছবি
লিখেছেন দীক্ষক দ্রাবিড় (তারিখ: সোম, ০৩/০৪/২০০৬ - ১২:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


নারী সম্পর্কে কিছু খলিফার উদ্ধৃতি আমি দিয়েছি আগের লেখাগুলোতে। যে উদ্ধৃতিগুলোতে খুব বেশি ছোট করা হয়েছে নারীকে সেগুলো দেইনি কারণ সেগুলো পড়তে নিজেরও খারাপ লাগে। তবে ইসলামে নারীর অবস্থান ও ভূমিকা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছেন সর্বোচ্চ ইসলামী দার্শনিক ও অধ্যাপক ইমাম আল-গাজ্জালি (1058-1111)। ইমাম গাজ্জালিকে অনেকে নবী মুহাম্মদের পর সবচে' বড় ইসলামী চিন্তাবিদ বলে মানেন। অনেক বই লিখে গেছেন তিনি, যেহেতু শিক্ষকতা ছিল তার পেশা সেসব বই অনেক সুগ্রন্থিত। তার একটি বই আছে "The Revival of The Religious Sciences"। এতে তিনি নারীর ভূমিকাকে এইভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।

"নারীর অবশ্যই ঘরে থাকা উচিত এবং তার প্রায়ই বাইরে যাওয়া উচিত নয়, তার বেশি জানা-শোনার দরকার নেই, এমনকি তার প্রতিবেশিদের সাথে তার বেশি যোগাযোগের দরকার নেই, শুধু অত্যাবশ্যক প্রয়োজনে সে তাদের সাথে দেখা করতে পারে। সে স্বামীর যত্ন নেবে এবং তার উপস্থিতিতে ও অনুপস্থিতিতে তাঁকে শ্রদ্ধা করবে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁকে সন্তুষ্ট রাখতে চেষ্টা করবে। সে তার (স্বামীর) সাথে প্রতারণা করবে না বা তার কাছ থেকে টাকা খসিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে না, সে তার (স্বামীর) অনুমতি ছাড়া অবশ্যই বাড়ির বাইরে যাবে না এবং যদি অনুমতি দেয়া হয় তবে খুব নি:শব্দে বাইরে যাবে। অবশ্যই পুরনো ও বিবর্ণ কাপড় পড়ে সে বাইরে যাবে এবং জনশূন্য রাস্তা বা অলি-গলি দিয়ে সে যাবে, বাজারকে এড়িয়ে যাবে, এবং নিশ্চিত করবে যে কোনো অচেনা ব্যক্তি যেন তার কণ্ঠ শুনতে না পায় বা তাকে চিনতে না পারে। যদি প্রয়োজন হয় তবু সে তার স্বামীর বন্ধুদের সাথে অবশ্যই কথা বলবে না।....তার একমাত্র দুশ্চিন্তা হবে তার ইজ্জত, তার বাড়ি এবং সেইসাথে তার নামাজ ও তার রোজা। স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার স্বামীর কোনো বন্ধু যদি তাকে ডাকে তবে সে অবশ্যই দরোজা খুলবে না বা তার ডাকে সাড়া দিবে না যাতে সে নিজেকে ও তার স্বামীর সম্মান রক্ষা করতে পারে। তার স্বামী তাকে যেটুকু যৌন পরিতৃপ্তি দিতে পারে তাই তার গ্রহণ করা উচিত.....এবং যেকোনো সময় স্বামীর যৌন চাহিদা পূরণের জন্য নিজেকে পরিষ্কার ও প্রস্তুত রাখা উচিত।"

(উপরের লেখাগুলো টাইপ করতে করতে আমার মনে হচ্ছিল কত মুসলিম ভগিনী এগুলো পড়ে হয়তো ভাবছেন তারা না জেনে কত না এরকম পাপ করেছেন। আর আমি তাদেরকে এটা জানানোয় তারা নিশ্চয়ই আমাকে অনেক দোআ' করবেন।)

ইসলামের এই মহান শিক্ষক পুরুষদেরকে নারীদের বিষয়ে অত্যন্ত সাবধান করে দিয়েছেন এই বলে যে, "তারা অত্যন্ত ছলনাময়ী এবং ভীষণ ক্ষতিকর; তাদের নীতিবোধ খারাপ ও নীচুমনা।" গাজ্জালি এই বলেও অনুতাপ করেছেন যে, "পুরুষের উপর যত বিপদ, দুর্ভাগ্য ও গজব নেমে এসেছে তা এসেছে নারীর কারণে"। নিশ্চয়ই এই উক্তি করার পেছনে আদম ও হাওয়ার মিথটিই গাজ্জালিকে উদ্্বুদ্ধ করেছিলো। কারণ বেহেশতের বাগানে হাওয়ার সেই ভুল টির জন্যই পুরুষের এই পতন বলেই ধার্মিকেরা মানেন। গাজ্জালি সে কথাই বলেছেন তার "Book of Counsel for Kings" বইতে: যেসব সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্টের কারণে উধর্্বালোকে অবস্থিত আল্লাহতায়ালা নারীদের শাস্তি দিয়েছেন সেগুলো হলো:

"বেহেশতের গাছ থেকে নিষিদ্ধ গন্ধম যখন হাওয়া খেলেন, তখন আল্লাহতায়ালা নারীকে আঠারোটি জিনিস দিয়ে শাস্তি দিলেন: 1. ঋতুস্রাব বা মিনস্ট্রেশন; 2. গর্ভবেদনা; 3. মা ও বাবার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া ও অপরিচিত ব্যক্তির সাথে বিবাহ; 4. সন্তান জন্মদান; 5. নিজের ব্যক্তিত্বের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকা; 6. উত্তরাধিকার হিসেবে কম অংশ পাওয়া; 7. তালাকপ্রাপ্তা হওয়ার বিপদ ও তালাক দেয়ার অক্ষমতা; 8. পুরুষকে চারটি স্ত্রী রাখার বৈধতা দেয়া হয়েছে কিন্তু নারীর জন্য বরাদ্দ একটি মাত্র স্বামী; 9. ঘরের মধ্যে তাকে আবদ্ধ থাকতে হবে এই নিয়ম; 10. ঘরের মধ্যে তার মাথা সবসময় আচ্ছাদিত রাখতে হবে এই নিয়ম; 11. একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান হবে দুইজন নারীর সাক্ষ্য এই নিয়ম; 12. নিকটাত্মীয়ের সাথে ছাড়া সে কখনো বাড়ির বাইরে যেতে পারবে না এই নিয়ম; 13. পুরুষেরা জুম্মাবারে, উৎসবে এবং জানাজার নামাজে অংশ নিতে পারে এবং নারীরা পারে না এই নিয়ম; 14. শাসনকর্তা এবং বিচারক হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য এই নিয়ম; 15. মস্তিষ্কের 1000টি উপাদান আছে যার মধ্যে একটি উপাদান নারীকে দেয়া হয়েছে আর বাকী 999টি আছে পুরুষের জন্য এই সত্য; 16. যদি কোনো নারী অপব্যয়ী হয় তবে তাকে শেষ বিচারের দিনে সমস্ত সমাজের শাস্তির অর্ধেক শাস্তি ভোগ করতে হবে এই সত্য; 17. যদি তাদের স্বামী মারা যান তবে তাদেরকে পুনর্বিবাহের আগে চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করতে হবে এই নিয়ম, 18. যদি তাদের স্বামী তাদেরকে তালাক দেন তবে তাদেরকে পুনর্বিবাহের আগে তিন মাস বা তিন ঋতুকাল অপেক্ষা করতে হবে এই নিয়ম।"

হা ঈশ্বর! কল্পকথার সেই হাওয়ার গন্দম ছেঁড়া বা খাওয়ার অভিযোগে এই পৃথিবীর কোটি কোটি মুসলিম ভগিনীদের এই শাস্তি। ইমাম গাজ্জালির মত শিক্ষক যাকে ইসলামে সবচে' উজ্জ্বল দার্শনিক বলে সবাই মানে, তিনি এই কথা বলে যেতে পারলেন। এ তো, "জন্মই আমার আজন্ম পাপ" হয়ে গেলো।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।