পুনর্বার বিশ্বাসের মড়কঃ১

দীক্ষক দ্রাবিড় এর ছবি
লিখেছেন দীক্ষক দ্রাবিড় (তারিখ: রবি, ০৪/০৬/২০০৬ - ৬:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


1. দুর্যোগ নামে পৃথিবীতে ঈশ্বরের হাত ধরে প্রকৃতির রূপে আর প্রাণ হারায় লক্ষ লক্ষ লোক ও প্রাণী। মানুষের কেউ কেউ অবিশ্বাসী ছিল নিশ্চয়ই কিন্তু প্রাণীদের? সুনামি আসে নিস্তরঙ্গ সমুদ্রের জল থেকে দক্ষিণ এশিয়া ও পাশর্্ববর্তী অঞ্চলে আর মারা যায় অজস্্র নিষ্পাপ শিশু-নারী-পুরুষ-পশু-পক্ষী-কীট-পতঙ্গ। এ হত্যাকান্ডের পেছনে যদি থাকতো মানুষের হাত তবে তাকে চিহ্নিত করা হতো সর্বশ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসী হিসেবে। কিন্তু ঈশ্বর এই বিরাট ধ্বংসযজ্ঞের পরও থেকে যান পরম করুণাময়। বিশ্বাসীরা চোখ বুঁজে হাতে তুলে নেয় জপমালা আর গুণকীর্তন বাড়িয়ে দেয় অযুত লক্ষ নিযুত গুণে বরং তার কাছেই মুক্তি চায় এই ধ্বংস থেকে আর জানতে চায় বান্দার কী অপরাধ? বিশ্বাসীদের মন ও চোখ বড় তীব্র তারা সাগরের জলে আর আকাশের মেঘে দেখতে পায় ক্রোধান্ধ ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড -এর শুভনাম।

2. কেন এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ পাঠান ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড, কেনো এই গজব পৃথিবীর গরীব কোণায়, কেনো গজব পৌঁছায় না যেখানে ধনীরা বাস করে নিরাপদ সীমানায়? গরীবের ঈশ্বর কেন শুধু পরীক্ষা এই অসহায় বান্দার? যেমন বলা আছে ধর্মগ্রন্থের হরফে হরফে অবিশ্বাসীদের ধ্বংস করতে আমরা নামাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নিশ্চয়ই তিনি পাঠিয়েছেন সুনামি দক্ষিণ এশিয়ায়, নিশ্চয়ই তিনি ভূমিকম্প ঘটিয়েছেন সাধের পাকিস্তানে, নিশ্চয়ই তিনি সাগরের শান্ত পানিকে উত্তাল করেছে ন হারিকেন ক্যাটরিনা হয়ে আঘাত করতে যুক্তরাষ্ট্রকে। যদিও ধনী, সাদা ও অবিশ্বাসীদের দেশেই হয়েছিল আঘাতটি কিন্তু ধ্বংসের কবলে পড়েছে গরীব, কালো ও বিশ্বাসীরা। সমুদ্র কূলের বিপদজনক জায়গা ছাড়া যাদের বসবাসের ভূমি কেনার সামর্থ্য নেই। তিনি নিশ্চয়ই জানতেন শিশুটি ঘুমিয়ে আছে ঘরের মধ্যে। নাকি এই সত্য তার রাডারে ধরা পড়েনি যে তার নাম জপতে জপতে বৃদ্ধ, বৃদ্ধারা যারা সরকারের সরে যাবার আদেশকে পালন করতে না পেরে আশ্রয় নিয়েছিল ঘরের চিলেকোঠায় এবং সেখানেই ঘটে তাদের কষ্টকর সলিল সমাধি। মরিস বুকাইলি এত বিজ্ঞান বুঝলো আর ঈশ্বরকে সরবরাহ করলো না একটি আধুনিক রাডার। যারা মারা গেলো, যারা ঘর হারালো, যাদের কোল শূন্য হলো, যারা ধ্বংস্তুপের মধ্যে আটকে থাকলো দিনের পর দিন আর মানুষ এসে যন্ত্র দিয়ে কেটে উদ্ধার না করা পর্যন্ত কেউ তাদের উদ্ধারে সিং্গা ফুঁকলো না। শুধু ধ্বংসের সিংগা থাকে, বিশ্বাসীরা কল্পনায় উদ্ধারের কোনো সিংগা থাকে না। এরা সবাই অবিশ্বাসী বলে কি এই গজব? নাকি তারা ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড এবং আরো তাবৎ পরমশক্তিতে চরম বিশ্বাসী বলে এই গ্রিনকার্ডের লটারি। চলে আয় আমার কাছে! তারা তো তাদের জীবনভর ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড-এর কাছে প্রার্থনায় নতজানু হয়েছে, শতনামে ডেকেছে তাকে, মুগ্ধ হয়েছে তাঁর ক্ষমতার ফুলঝুড়ি দেখে আর শুধু কাঙালের মত চেয়েছে নিজেদের দীর্ঘ জীবন। শুধুমাত্র, কেবলমাত্র অবিশ্বাসীরাই সাহসের সাথে বলে অনিবার্য সত্যটি: এই সব দরিদ্র লোকেরা বৃথাই জীবন কাটিয়ে গেছে তাদের কল্পিত বন্ধুর ভরসায়। আর ভুল ব্যাকরণে আজীবন মেনে গেছে তাদের ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড সর্বজ্ঞানী/সর্বশক্তিমান এবং পরম করুণাময়।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।