মানুষের পয়গম্বর হয়ে ওঠার সুলুক-সন্ধান-৩

দীক্ষক দ্রাবিড় এর ছবি
লিখেছেন দীক্ষক দ্রাবিড় (তারিখ: শুক্র, ৩০/০৩/২০০৭ - ৫:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


মানুষের কখনও না-দেখা ঈশ্বরকে অস্তিত্ব দিয়েছেন পয়গম্বররা। তারা দাবী করেছেন যাবতীয় ব্রহ্মান্ড ঈশ্বরের সৃষ্টি -- চাঁদ, সূর্য, পাহাড়, সাগর, বাতাস, রোগ-জীবাণু, এমনকি শয়তান ও ভূত-প্রেত-- এবং যদিও সৃষ্টিগুলোকে আমরা দেখতে পাই, অনুভব করতে পারি, তবু ঈশ্বরের অসত্দিত্ব নিশ্চিত করতে পয়গম্বর লাগে। মানুষ একা একা পারে না। মানুষের যুক্তি-বুদ্ধি পারে না, মানুষের বিজ্ঞান পারে না। কোনো কোনো মানুষ শুধু পয়গম্বর হয়ে ওঠে আর তাদের সাথে ঈশ্বরের দেখা হয়ে যায়, কথা হয়ে যায়। আমরা পয়গম্বরে আস্থা এনে পুরনো জপমালা বদলে বাজার থেকে কিনে আনি নতুন ধরনের তসবিহ।

ঈশ্বর তার অসত্দিত্ব নিশ্চিত করতে কিছু পয়গম্বরের - কেউ গ্রন্থসহ, কেউ গ্রন্থছাড়া- বেশি পৃথিবীতে কিছুই পাঠাতে পারেন না। সেসব পয়গম্বররা, কুষ্ঠরোগীকে রোগমুক্ত করে দেয়ার, চাঁদকে আঙুলের ইশারায় ভাগ করে দেয়ার, সূর্যকে মাঝ আকাশে থামিয়ে দেয়ার, সাগরের মাঝ বরাবর রাসত্দা করে হেঁটে যাওয়ার, দেবদূতের সঙ্গে উধ্র্বাকাশে উড়াল দেয়ার, বিচিত্র ঘটনা ঘটিয়ে ঈশ্বরের ক্ষমতার প্রমাণ দেখান পৃথিবীতে। ঈশ্বর তার ক্ষমতার তার অসত্দিত্বের তেমন প্রমাণ দেখাতে পারেন, যতটা পারেন পয়গম্বররা; ইতিহাস তাই বলে। তা কিছু অনুসারীরা হয়তো দেখে, অধিকাংশ লোক না দেখেই, পয়গম্বরের ক্ষমতার বর্ণনা শুনে মুগ্ধ হয়ে তার ধর্মকে, তার ঈশ্বরকে, তার গ্রন্থকে বিশ্বাস করে। তারপর কবুল করা ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করতে পৃথিবী জুড়ে ভিন্নধর্মের, বা বিধর্মীদের মুন্ডুপাত করে।

পয়গম্বর মুসা তার জাতিকে জানান যে; পাহাড়ে তার সাথে ঈশ্বরের কথা হয়, - ঈশ্বর যদি তার সাথে কথা কইতে পারেন তবে অন্যের সাথে কইতে অসুবিধা কী? অত:পর অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর বৃষ্টি-বাদলের রাতে ঈশ্বর নবী মুসাকে দেখা দেন - ঈশ্বর আগুনের, তাই পাহাড় পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুন কি শুধু মুসাই দেখতে পেতেন সেই কালে, আর কেউ পেত না? তবে ঈশ্বর সেই কালেও আর কারো সামনে আসেন না। দুই খন্ড পাথর দেন তিনি নবী মুসাকে। সেই পাথর খন্ডে ঈশ্বর নিজ হাতে লিখে দেন দশটি নির্দেশনামা। একটি পাথর ভেঙে যাওয়ার পর ঈশ্বর আবার নতুন করে মুসাকে আরেকটি পাথর দেন। সেসব গল্প আমরা শুনি। কিন্তু পাথর খন্ডগুলো আর পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাই না। ঈশ্বরের চাঁদ, ঈশ্বরের সূর্য তেমনই আছে, কিন্তু তার স্বহসত্দলিপি, তার নির্দেশনামা লেখা পাথরখন্ড পৃথিবী থেকে উধাও হয়ে যায়, কি বিস্ময়কর!

যেসব মানুষরা এরকম পয়গম্বর হয়ে ওঠে, তারা ঈশ্বরের সাথে তাদের সোল এজেন্সির এমন সব গল্প-গাঁথা বলে তা শুনে আমরা শিহরিত হই, কিন্তু আশ্বসত্দ হতে পারি না। ঈশ্বর কি তবে শুধু পয়গম্বরদের? কেন ঈশ্বর মানুষে মানুষে আসতে পারেন না, জনে জনে নির্দেশ নামার পাথর বিলাতে পারেন না, দেশে দেশে পাহাড়ে পাহাড়ে এসে উঁকি দিয়ে যান না।

পয়গম্বরদের গাল-গল্পের সাথে এই যে আমাদের যুক্তি-বুদ্ধি মেলে না সে দোষ কার? ঈশ্বরের নাকি মানুষ হয়ে ওঠা পয়গম্বরের। যেহেতু ঈশ্বর আমাদের কাছে আসেন নি, যেহেতু পয়গম্বররাই বিভিন্ন দাবী নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, সেহেতু দায়ভার মানুষের পয়গম্বরদের ওপরই বর্তায়। তবু জরুরি প্রশ্নটাই পয়গম্বরদের করা হয় না;

ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, তবু মানুষের কাছে তার পরিচয় তুলে ধরতে কেন তার পয়গম্বর লাগে?


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।