মানুষের পয়গম্বর হয়ে ওঠার সুলুক-সন্ধান-৫: নবী ইজিকিয়েল ও এপিলেপ্সি

দীক্ষক দ্রাবিড় এর ছবি
লিখেছেন দীক্ষক দ্রাবিড় (তারিখ: বুধ, ০৪/০৪/২০০৭ - ১০:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


বহু আগে থেকেই মনোবিজ্ঞানীরা কিছু পয়গম্বরদের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে গবেষণা করছেন। এ বিষয়ে সবচে' বেশি গবেষণা হয়েছে নবী ইজিকিয়েলকে নিয়ে। নবী ইজিকিয়েল প্রায় 2600 বছর আগে বাইবেলের 'ইজিকিয়েলের বই' অংশটুকু লিখেছেন। সানডিয়েগোর ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির নিউরোসাইন্সের অধ্যাপক এরিক আলটশুলার বলছেন ইজিকিয়েল হচ্ছেন এপিলেপটিক রোগীর ক্ল্যাসিক্যাল উদাহরণ (নিউ সাইন্টিস্ট, 17 নভেম্বর 2001)। বাইবেলে বর্ণিত উদাহরণ থেকেই অধ্যাপক এরিক জানাচ্ছেন, ইজিকিয়েল যে ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে পড়তেন বা তার কথা বলা বন্ধ হয়ে যেত, এগুলো হচ্ছে বিশেষ এক ধরণের (টেম্পোরাল লোব) এপিলেপ্সির ( মৃগী রোগ) লক্ষণ। যারা এরকম ঘন ঘন মূচ্র্ছা যান, তারা সবসময় এরকম দু:স্বপ্ন থেকে জেগে ওঠা মানুষের মত আশে-পাশের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলতে থাকেন।

ইজিকিয়েল নিজের মাথার ভেতর ঈশ্বরের নির্দেশ শুনে ডান পাশে কাৎ হয়ে শুয়েছিলেন 390 দিন তারপর পাশ ফিরে শুয়েছিলেন আরো 40 দিন, মানুষের বিষ্ঠা দিয়ে তার খাবার রান্না করেছিলেন, নিজের বাড়িতে গর্ত করে তার ভিতরে লুকিয়ে ছিলেন গজবের ভয়ে (ইজিয়েল, 4:9)। (ধর্মবেত্তারা অবশ্য ইজিকিয়েলের এসব কর্মকান্ডকে সিম্বলিক ও ঈশ্বরের রহস্যময়তা বলে ব্যাখ্যা করার একটা চেষ্টা করে থাকেন)। কিন্তু নিউরোটিক, নিউরোটিকই, সে নেপোলিয়নই হোক, জুলিয়াস সিজারই হোক আর নবী-পয়গম্বরই হোক।

নবী ইজিকিয়েলের মধ্যে এপিলেপ্সির রোগের অন্যান্য লক্ষণও দেখা গেছে। যেমন তিনি বাতিকগ্রস্তের মত লিখতেন শুধু লিখতেন। যাকে বলে হাইপারগ্রাফিয়া। তাছাড়া আগ্রাসী ধরনের ধার্মিক ছিলেন ইজিকিয়েল। ডিলিউশন, ধর্মের বিষয়ে আগ্রাসী মনোভাব ছাড়াও এই ধরনের মৃগীরোগের আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে ধর্মীয় আদেশ-নিষেধ বিষয়ক বক্তৃতাবাজি করা। ইজিকিয়েলের এই সবকিছুই ছিলো বলে জানিয়েছেন প্রফেসর এরিক। নিউরোসাইন্সের এই তত্ত্ব-প্রমাণের পর ইজিকেয়েলের বই পড়তে হবে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। তাহলে এসব ধর্মগ্রন্থ রচনার নতুন একটা অর্থ ধরা পড়বে।

ইজিকিয়েলের মত অনেক পয়গম্বরের ক্ষেত্রেই সাইকোটিক, এপিলেপটিক, সিজোফ্রেনিক, অথবা হিস্টেরিক এসব অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের নিউরোটিকের কাছ থেকে শোনা ধর্মকথার সারবত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন গবেষকরা। তবে মানুষ থেকে পয়গম্বর হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াকে সন্দেহের চোখেই দেখেন নিউরোসাইন্সের লোকজন। তাদের অনেকেরই মতামত ধর্ম মূলত: নিউরোসিস ও পলায়নপর মনোবৃত্তির ফসল (জার্নাল অব বাইবেল এন্ড রিলিজিয়ন, ভলিউম-21, নং-4, পৃষ্ঠা 244) ।

সাইকোলজির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হলে আমরা পয়গম্বরদের প্রফেসির রহস্যের একটা সমাধান পাই। তাদের অস্বাভাবিক সব দাবী আর অসম্ভব সব বিশ্বাস, অদ্ভুত সব শব্দ বা কণ্ঠ শোনা, অবিশ্বাস্য সব দৃশ্য দেখার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এ থেকে। সরাসরি পরীক্ষা করার মত নবী-পয়গম্বর হাতের কাছে এখন পাওয়া কঠিন। তবে মানসিক হাসপাতালের রোগীদের আচরণ থেকে যেটুকু বুঝা যায় তাতে সন্দেহ নেই সাইকোলজির ব্যাখ্যা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য।

তবে কি পয়গম্বরত্ব একধরনের মানসিক ব্যাধি? শ্রুতি ও দৃষ্টি বিভ্রমের শিকার মানুষের বাস্তবতাবর্জিত কল্পনার প্রকাশ।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।