জেগে আছি তেভঙ্গ মূর্তি

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: শুক্র, ০৯/১১/২০০৭ - ৮:১৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কোথায় যেন কারা বিশ্বকর্মা। তারা করে যাচ্ছে করে যাচ্ছে, সরছে না। এটা ওটা সেটার ভেতর করার আওয়াজ আলাদা করে পাই। মিস্টির মধ্যে নিম, নিমকির মধ্যে চুন। একটা ঢন্ ন ন্ ন্ । রেডিওর গানের ভেতর যেমন খবর ঢুকে পড়ে। কড়া নাড়ার আওয়াজ পাই। বুঝি যে কোথাও কারা যেন বিশ্বকর্মা। সব কিছু তারা করে দেবে। তার জন্য খবর নিচ্ছে। নাম-ধাম সাকিন। কেউ লিখছে, তাকে করে দেবে। কেউ ভাবছে, তাকেও করে দেবে। কেউ করছে তাকে চড়িয়ে দেবে। যাকে দেবে না তাকেও দেবে। কর্মারা সব খাঁচা ছেড়েছে।
কেউ কেউ নাই। কেউ কেউ বেশি আছে। আজিজ মার্কেটের শফি নাই। কর্ণেল রশীদ আছে। গোপন বেতার থেকে নয়, মধ্যরাতে সচিত্র মাজেজা হয়ে আসে। কোথাও কালো চশমা’র চল হয়। তাকালে সব ভূলে যাই। কিছু কিছু স্মৃতি মনেও রাখা নিষিদ্ধ। রাখার ঠাঁই নাই। যা রাখার জায়গা নাই তা-ই ভয়। কিছু স্মৃতি নষ্ট করে ফেলতে হয়। কিছু মানুষ এমননিতেই খরচ হয়। সবাই ফেরে না ক্লাসে। বুঝি কোথাও বিশ্বকর্মা বিশ্ব সাজাচ্ছে। সেলের থেকে দূরে বারান্দার খুঁটিতে ঘন্টা বাজছে। গরাদের শিকের গায়ে কেউ থালা বাজাচ্ছে। কেউ যাচ্ছে কেউ আসছে। ইলাত-বিলাত মুসলিম মিল্লাত। মিল্লাত বামে মাথা সারে। টাইগারে আরো সারে। সারে সারে বাঁধা পড়ে। সার নাই শিবচরে। এবার লেফট রাইট লেফট রাইট, লেফট লেফট রাইট রাইট। অল কোয়াইট, নন হোয়াইট। ঝুপ!
মাঝরাতে গাড়ি থামে গলির ভেতর। ভোর রাতে গাড়ি থামে বাঁধের ওপর। সকাল বেলা পত্রিকা আসে ঘরের ভেতর। নাহ্, কোথাও কিছু হয়নি! কর্মার কর্মফলে এখন কোথাও কিচ্ছু হচ্ছে না। সব বন্ধ। ওগো ! আমায় বন্ধ করে আগুন দিও না। দিস না দিস না। ওরে আমি তোদের মা, ওরে এ এ এ...যশোরে। প্রান্তরের মধ্যে বুড়ির ঘর। শুধু ঘর নয়, জমির ওপর ঘর। একা থাকে, একা ঘুমায়, একা খায়। পড়শীরা চিতাকাঠ সাজায়। বুড়ি মরলে কি আর জমি মরবে, ঘর ধসবে? বুড়ি আর ঘুমায় না। রাতে দূরে দূরে লণ্ঠন চলতে দেখে। দেখে সলতে জাগায়_ জেগে আছি তেভঙ্গ হয়ে। সারা রাত গীত গায় আর কাঁসার কলস পেটায়। আমি মরলে বাজনা থামবে। বাজনা থামলে আমি মরবো। বুড়ি গায় আর ডঙ্কা বাজায়। লোকে কান পাতে। নাহ! আওয়াজ আছে। বুড়ি বাজছে। বুড়ি আছে। বুড়ি সশস্ত্র। বুড়ি সদা সতর্ক। বুড়ি অতন্দ্র।
ওদিকে কোথাও বিশ্বকর্মার ছেলেরা সব করতে করতে করতে করতে...আচ্ছা! আমরা কি শুনতে পাই,ঘন্টা বাজছে।
আমরা কি আছি, আমরা কি বাজি?


মন্তব্য

মুজিব মেহদী এর ছবি

লেখাটা আক্ষরিকভাবে যা বলছে, কেবল তাই-ই নয়, প্রকৃতপক্ষে বলছে আরো অধিক কিছু। নয়কি?

কখনো কবিতাও মনে হচ্ছে, আবার ধন্ধ ছাড়ছে না, কারণ ট্যাগ দেয়া আছে খবরের (ট্যাগ আসলে সমস্যাউদ্রেককারী, মনে হওয়ার উপরে খবরদারি করে)। ওতে যেমন আজিজ মার্কেটের শফি ঢুকে যাচ্ছে, ঢুকছে কর্ণেল রশীদও। কেমন জানি বহুবার পাঠের জিনিস হয়েছে একখান। পলিফোনিক, তবে কলস পেটানোর জন্যে নয়, শক্তিটা এর সর্বত্রই নিহিত আছে বোধকরি।

কনফুসিয়াস এর ছবি

বিপ্লবীয়!
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সুমন চৌধুরী এর ছবি

বিশ্বকর্মার মাথায় মাল উঠছে কিংবা উইঠাই আছে....চোখ টিপি



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

সৌরভ এর ছবি

বিশ্বকর্মা মরছে বইলাই মন কয়


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নিঘাত তিথি এর ছবি

মাই গড! মারাত্মক লেখা। কিসে যেন ভর করেছে লেখককে, ওমনি করে লিখেছে মনে হচ্ছে। ফাটাফাটি।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ঐ যারা করে, তারাই ভর করে। যাহোক, শফি'র কথা এ তিন বছরে প্রথম উচ্চারণ করলাম। ও মারা যাওয়ার অনেক পরে জানতে পারি। কেউ যদি কফিল আহমেদের গান শোনেন, তাহলে কোরাসের মধ্যে ওর গলা পাবেন। কেউ যদি লিটল ম্যাগ ওল্টান, তাহলে হয়তো কোনো সংখ্যায় আচানক ওর নাম পাবেন। আর কেউ যদি কখনো ... তালিকায় চোখ বোলান সেখানেও সে আছে।
কিন্তু এ কেবল শফির কথা নয়....
""""""""""""""""""""""""""""""""""""
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

??? এর ছবি

শফি-কে "ক্রসফায়ার" করা হয়েছিল শুনেছিলাম।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ডেভিলস রিপাবলিক অব ভয়ংকর বাংলাদেশ ।
আজ নুরহোসেনের এই দিনে মনে পড়ে, ৯০'র ডিসেম্বরের পরের কয়েকটা দিন ছাড়া এইদেশে আর কোনদিনই নিঃশ্বাস নিতে পারিনি ।
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

শফি কে? আমি দীর্ঘদিন ঘরছাড়া। কি হয়েছিল?



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

শফি গান গাইতো, ভাল গিটার বাজাতো আর কবিতা লিখতো। কথা বলতো কম। অনেক সময়ই মনে হতো ও বোধহয় সেরকমই যেরকম ‌'কবিরা' হয় আর কি। গুছিয়ে কোনো কিছু আলোচনাও করতে দেখি নাই। কেবল শুভবোধ কেবল শুভবোধ, কেবলই কাতর। আজিজ মার্কেটের এক দোকানে ও কমো্পজিটর ছিল। পোস্টার ডিজাইনও করতো বোধ হয়। ওকে ধরা হয়, গোপন বিপ্লবী দলের কর্মী হওয়ার অভিযোগ। তা যদি সত্য হয় তাহলে ওকে আর কেবলই কাতর কেবলই শুভবোধ কাতর মনে হয় না। ওর সঙ্কল্প কারো থেকে কম ছিল না।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।