Warning: Creating default object from empty value in theme_img_assist_inline() (line 1488 of /var/www/sachalayatan/s6/sites/all/modules/img_assist/img_assist.module).

সারে সারে কফিন আসছে, বাংলাদেশি শ্রমিকরা কি বিশ্বায়িত দুনিয়ার শ্রমদাস?

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: রবি, ১৯/০৪/২০০৯ - ৮:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

‘খুঁজিয়া দেশের ভুঁই,/ ও মোর বিদেশি যাদু/ কোথায় রহিলি তুই।’
পোড়োজমি, টি এস এলিয়ট

বড় যুদ্ধের শহীদ
পেটের যুদ্ধ বড় যুদ্ধ। সেই যুদ্ধের শহীদেরা দলে দলে ঘরে ফিরছে। দেশে মরলে খাটিয়া পেত, বিদেশে মরায় কফিন পেয়েছে, বিমানের দোলায় চড়ে ফিরতে পেরেছে, এই যা সান্ত্বনা। এর আগেও লাঞ্ছিত-বহিষ্কৃত শ্রমিকদের রক্তাক্ত প্রত্যাবর্তন আমরা দেখেছি। এখন লাশ হওয়াও দেখতে হলো। গত সপ্তাহে এসেছে ৪২ জনের লাশ। বছরের প্রথম তিন মাসে এসেছে ৬৩৫ আর গত বছর এসেছে দুই হাজার ২৩৭ জনের মৃতদেহ। এগুলো সরকারি হিসাব। হিসাবের বাইরে আরও মৃত্যু থাকা অসম্ভব নয়। বড় বৃ পড়লে মাটি কেঁপে ওঠে, বিদেশ-বিভুঁইয়ে অসহায় অবস্থায় লাঞ্ছনা ও নির্যাতনে মরে যাওয়া এত স্বদেশি শ্রমিকের মৃত্যুতে জাতি কি কেঁপে উঠেছে? ইরাক যুদ্ধের সাত বছরে নিহত হয়েছে চার হাজার ২৭৪ জন মার্কিন সেনা। তাতেই কি কাঁপন মার্কিন সমাজে! আর কি অনড় অকম্পিত আমাদের মহাশয়েরা। টনক নামের একটা বস্তু নাকি কর্তাব্যক্তিদের থাকা লাগে, এত মৃত্যু দেখে সেই জিনিসটি কি সামান্যমাত্র নড়েছে? মাছের মায়ের নাকি পুত্রশোক থাকতে নেই। মাছপ্রিয় বঙ্গের ভ্রাতারা তাই কাঁদেনওনি, নড়েনওনি। ওই লাশগুলো তাই অনাদরে নেমেছে বিমান থেকে, অনাদরেই রওনা হয়েছে নিজ নিজ গ্রামের মেঠো পথে। এ দেশে সব মৃত্যু সমান নয়। তাই বলে কারও কান্না লোনা আর কারও কান্না কষা, তা তো নয়!

যার দান বেশি সে নয়, যার ভোগ বেশি সে-ই ভিআইপি
যুগটা বাজারের। বাজারে সবাই সমান নয়, তেমনি সব মরণও নয়। এখানে যার অবদান বেশি সে নয়, যে বেশি ভোগ করে সে-ই মর্যাদাবান-ক্ষমতাবান। খাপছাড়া শোনালেও কথাটা সত্যি। বাংলাদেশে এককভাবে প্রবাসী শ্রমিকেরাই সবচেয়ে বড় বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে তাঁরা সরকারিভাবে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা (পাঁচ বিলিয়ন ডলার) পাঠিয়েছে, যা ওই সময়ের বিদেশি সাহায্যের তিন গুণ এবং জিডিপির ৭.৭৩ শতাংশ। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে এ অঙ্ক প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা (ছয় বিলিয়ন ডলার) ছাড়ায়। বেসরকারি পথে হুন্ডি ইত্যাদি দিয়ে আসা টাকা যোগ করলে অঙ্কটা আরও বাড়ে।

কিন্তু এ তথ্য দাবিয়ে রেখে ফাটানো হয় যে গার্মেন্ট মালিকেরাই সবেচেয়ে বেশি ডলার আনেন। গত বছরে গার্মেন্টস থেকে রেমিট্যান্স এসেছে সাত বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। এই টাকার অর্ধেকই আবার ওই শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাবদ বিদেশেই ফেরত যায়। এ ছাড়া শৌখিন ভ্রমণ ও বিলাসী দ্রব্য ক্রয়সহ বহু পথে ওই খাতের আরও টাকা দেশছাড়া হয়। তা বাদ দিলেও এ খাতে আমরা পাচ্ছি ৩.৫ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে প্রবাসী শ্রমিকদের থেকে এসেছে ৬.৪ বিলিয়ন ডলার। এর পুরোটা থেকে যাচ্ছে, খাটছে ও অর্থনীতির আকার বাড়াচ্ছে। অথচ গার্মেন্ট মালিকদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়া হয়, আয়কর মওকুফ করা হয়, তাঁদের কারখানা পাহারা দেয় র‌্যাব, বিডিআর। আর্থিক মন্দার অজুহাতে তাঁদের আবদার মেনে ৬০০ কোটি টাকা তিপূরণ দেওয়া হয়, দেওয়া হয় জমি-ঋণ কত কী! অথচ বিশ্বমন্দার দিনে তিপূরণ পাওয়ার হক দেশের গার্মেন্ট শ্রমিক আর প্রবাসী শ্রমিকদেরই বেশি। গার্মেন্টস খাতের এহেন কদর বিজিএমইএর জন্য। তাদের নিজস্ব বাহিনী পর্যন্ত আছে, আছে এমপি-মন্ত্রী, সরকার। দরিদ্র কিছু গ্রামীণ আত্মীয়-পরিজন ছাড়া প্রবাসী শ্রমিকদের আর কেহ নাই। তাই রক্ত-ঘাম পানি করেও তাদের সেবায় বরাদ্দ কেবল কাঁচকলা!

‘আমি বন্দী কারাগারে...’
তাদের উপার্জনে ভাগ বসায় রিক্রুটিং এজেন্সি নামের নতুন মধ্যস্বত্বভোগী। এত দিয়ে-থুয়েও চাকরি নামের সোনার হরিণের খোঁজ সবাই পায় না, তাদের স্থান হয় বিদেশের কারাগার বা শ্রমশিবিরে। গত শনিবারও এ রকম একজন প্রতারিত শ্রমিক ইখতিয়ার মালয়েশিয়া থেকে লাশ হয়ে ফিরেছেন। মালয়েশিয়ায় তাঁর ঠাঁই হয় বন্দিশিবিরে, অতঃপর নির্মম প্রহার ও পোকামাকড়ের মতো মৃত্যু। আশির দশকের শেষে মুজিব পরদেশীর ‘আমি বন্দী কারাগারে...’ গানটি প্রবাসীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। এতেই প্রমাণ, পরবাস তাদের কাছে কারাবাসের থেকে বেশি কিছু মনে হতো না।

অন্তহীন দুর্দশার অফুরান ফজিলত
তাই যার দুঃখ-যন্ত্রণার শেষ নেই, তারই নাম প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক। তাদের অন্তহীন দুর্দশার গল্প কি কাউকে ব্যথিত ও লজ্জিত করে? যে শর্তযুক্ত বিদেশি সাহায্যের জন্য আমাদের অঢেল সুদ ও নানা ধরনের তি পুষতে হয়, সেই সাহায্যকারীদের আমরা ডাকি ‘দাতা’ বলে। দাতাদেশগুলোর হেজিপেজিরাও এখানে রাজকীয় অভ্যর্থনা পান। অথচ বিদেশি সাহায্যের তিন গুণ বেশি দিয়েও শ্রমিকেরা পায় চাকরের ব্যবহার। এদের বেশির ভাগই সেই কৃষকদের সন্তান, যাদের কল্যাণে দেশবাসী আজও খেতে পায়। তা করতে গিয়ে এই প্রাচীন জীবটি দিনকে দিন শুকিয়ে যায়, ভিটেমাটি হারায়। যতবারই গ্রামে গেছি, দেখেছি হাড্ডিসার, সামান্য বস্ত্র গায়, খাটতে খাটতে কুঁজো হওয়া কৃষকদের। এদের সন্তানেরাই ভিটামাটি বেচে ভাগ্য ফেরাতে বিদেশে পাড়ি জমায়। এবং তারা তাদের পিতা-পিতামহদের মতোই প্রকৃত দাতা। তাদের পাঠানো টাকায়ই যাবতীয় আমদানি হয়ে থাকে, শোধ করা হয় তথাকথিত দাতাদের ঋণ ও এর সুদ। এই খাতকে ঘিরে প্রায় ২০ লাখ লোকের প্রাইভেট সেক্টর গড়ে উঠেছে। গ্রামে নগদ টাকার যোগানও এরাই যোগায়। তাতে কর্মসংস্থান হয়। আজকাল গ্রামে গ্রামে যে খামার, পোল্ট্রি, ফিশারি ও পাকা বাড়ি-ঘর-বাজার উঠছে, তাতেও এদেরই ষোল আনা অবদান। তাদের টাকায় পরিবারের লোকজন জোত-জমি বাড়ায়, কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি আসে। ব্যয়বহুল কৃষির যুগে চাষাবাদের বিকাশে রেমিট্যান্সের কাঁচা টাকার অবদান বিপুল।

পরিত্যক্ত ও দুঃখী এ তরুণরাই আমাদের সময়য়ের নায়ক
সাধারণত তরুণেরাই বিদেশে যায় এবং এদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৫ থেকে ৩০। এরা রাষ্ট্রের পরিত্যক্ত সন্তান। এরা ভাল মতো শিক্ষার সুযোগ পায়নি। তাই আগের চেয়ে এখন অদক্ষ শ্রমিক যাওয়ার হার বেশি। যাওয়ার আগে বা প্রথম দফায় ফিরেই তারা বিয়ে করে। বিয়ের পর আবার চলে যায়। এদের স্ত্রীরা তাদের তরুণ স্বামীদের মতোই দুঃসহ ও নিঃসঙ্গ জীবন কাটায়। তার পরও রোজগেরে স্বামী তার হাতেই টাকা পাঠায় বলে পরিবারে ও গ্রামে ওই স্ত্রীরা আলাদা মর্যাদা ভোগ করে। তাদের ওপর হম্বিতম্বি কমে এবং তারাও ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠায় এবং পরিবারের স্বাস্থ্য নিয়ে মনোযোগী হয়। বিদেশে শ্রমবাজার সৃষ্টিতেও তাদের অবদান অসামান্য। এদের সঞ্চিত টাকায়ই গ্রামীণ সমাজে গতি আসে আর গঞ্জ হয়ে যায় ছোটো শহর। এভাবে নগরায়ণেও এদের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। এতসব আয়োজনে জাতীয় উৎপাদন বাড়ে এবং বেকারত্বের চাপ কমে। কিন্তু দেখার দৃষ্টি নেই বলে সব কৃতিত্ব চলে যায় এনজিওগুলোর কোলে। তারাই বাহবা পায় আর চাষার ঘরের সোনার সন্তানেরা পায় অপমান-নির্যাতন আর উপেক্ষা।

পরের ধনে পোদ্দারি
দেশের প্রায় ৫০-৬০ লাখ প্রবাসি শ্রমিকদের টাকা পাঠানোর সুবন্দোবস্ত পর্যন্ত সরকার করেনি। তাদের কর মওকুফ হয় না, কিন্তু তাদের ডলার দিয়েই এমপি-আমলাদের জন্য বিনা শুল্কে গাড়ি আসে। আইএলওর দাবি, রেমিট্যান্সের পাঁচ শতাংশ ওই সব শ্রমিকদের অধিকার রায় ব্যয় করতে হবে। আজকে শ্রমিকদের নিজস্ব সংস্থা থাকলে তার মাধ্যমে তারা বাজেট প্রণয়ন কিংবা সরকারি নীতি প্রণয়নের সময় চাপ প্রয়োগ করতে পারতো। অনুৎপাদনশীল সেনাবাহিনীরও নিজস্ব ব্যাংক থাকতে পারলে প্রবাসীদের তা থাকবে না কেন? সেই ব্যাংকে তারা টাকা জমা রাখত, ঋণ নিত এবং তাদের সঞ্চিত টাকায় বড় বড় বিনিয়োগ ও প্রকল্পও হতে পারত। কিন্তু যে লোকটি ৫-১০ বছরের জন্য বাইরে থাকছে, যার সব সুতো ছিঁড়ে গেছে, সে কীভাবে দেশে ফিরে বড় কিছু করার চিন্তা করতে পারে? তাই বিদেশে খেয়ে না-খেয়ে জমানো টাকার সর্বোত্তম ব্যবহারের সুযোগ তাদের হয় না। কিন্তু তাদের ধনে পরের পোদ্দারি ভালই চলে।

তারা সার্বভৌমত্বহীন রাষ্ট্রের শ্রমদাস
এখানেই আমি গুরুতর একটি অভিযোগ তুলতে চাই। যে দেশের নাগরিকেরা বিদেশ-বিভুঁইয়ে হাজারে হাজারে অপঘাতে মরে, যাদের জীবন কেবলই ‘দাসজীবনের’ করুণ আখ্যান, সেই দেশ ও সেই রাষ্ট্র সার্বভৌম ও কার্যকর হয় কী করে? নাগরিকদের সঙ্গে এই শর্তেই রাষ্ট্রের চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক যে রাষ্ট্র সব নাগরিককেই সমান চোখে দেখবে এবং সবারই জীবনের সুরক্ষা, স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা এবং সম্পদ অর্জন ও জীবিকার নিরাপত্তা দেবে। এটাই সার্বভৌমত্বের গোড়ার কথা। প্রবাসী শ্রমিকদের বেলায় এর গুরুতর বরখেলাপ হয়েছে। রাষ্ট্র দেশে বা বিদেশে তাদের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তারা মারা যাচ্ছে অন্য দেশের মালিকের শোষণে ও পুলিশের নির্যাতনে। অর্থাৎ অন্য রাষ্ট্রের সার্বভৌম মতা তাদের জীবন নিচ্ছে, শোষণ করছে। রাষ্ট্রের সার্বভৌম মর্যাদার প্রতিফলন হয় তার নাগরিকদের সার্বভৌম অধিকারের মধ্যে দিয়ে। অথচ এ রাষ্ট্র বিদেশে তার নাগরিকদের অধিকারের রক্ষাকবচ হিসেবে অকেজো। তাহলে প্রশ্ন, এই রাষ্ট্র কার এবং তা কোন বিচারে কার্যকর? কার সার্বভৌমত্বের অধিকার এখানে রক্ষিত হয়, আর কার সার্বভৌম দাবি এখানে বাতিল হয়, তার নিরিখেই এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে। প্রবাসীদের লাশের মিছিল বলছে, রাষ্ট্র তাদের পাশে নেই। ঠিক যেমনটা ঘটছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বেলায়। তাদের রাষ্ট্র তাদের ত্যাগ করেছে। প্রবাসে আমাদের শ্রমিকদেরও আজ রোহিঙ্গা-দশা। কোনো দায়িত্বশীল রাষ্ট্র তার নাগরিকদের এমন অমানবিক পরিণতিতে উদাসীন থাকার অর্থ সেই রাষ্ট্র সার্বভৌম নয়, সেই রাষ্ট্র ব্যর্থ রাষ্ট্র। এ রকম অবস্থায়ই সেই রাষ্ট্রের গরিব নাগরিকেরা বিশ্বায়িত দুনিয়ার সুলভ শ্রমদাস বনে যায়, তারা হারায় স্বাধীন মানুষের আইনী অধিকার। এই শ্রমদাসদের রক্ত-মাংস খেয়েই বিশ্বায়িত পুঁজিবাদের সৌধ আরো উঁচু হয়।

কিন্তু এটা আমাদের জাতীয় লাঞ্ছনা ও জাতীয় ট্র্যাজেডি। আমরা এর বিহিত চাই। আমরা মনে করি, সব মৃত্যুই সমান এবং সবার অশ্র“ই সমান লোনা। নওগাঁর পত্নীতলার মালয়েশিয়া ফেরত ইখতিয়ারের মা-বউ এই সত্য জানেন, কিন্তু মহাশয়েরা মনে হয় জানেন না।


মন্তব্য

গৌতম এর ছবি

যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছি, মানুষ আর দশটা বস্তুর মতোই, কেনা যায়-বেঁচা যায়, সেদিন থেকে এসব দেখেশুনে আর অবাক হই না। আচ্ছা, দাস সমাজের দাস আর জনশক্তি রপ্তানির নামের তৃতীয় বিশ্বের এই দাসপ্রথার মধ্যে কি আদৌ কোনো পার্থক্য আছে?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

আহসান হাবিব এর ছবি

@গৌতম ; না, নাই।
আচ্ছা, দাস সমাজের দাস আর জনশক্তি রপ্তানির নামের তৃতীয় বিশ্বের এই দাসপ্রথার মধ্যে কি আদৌ কোনো পার্থক্য নাই।

হঠকারি চিন্তা আসলেও আমরা নিতান্তই ভিরু।নইলে এতো লাম্পট্যের পরও কিভাবে সরকার মহাশয়, বিদেশি দুতাবাস আর রিক্রুটিং এজেন্সী হাত কেলিয়ে মিডিয়া সবক দেয় আর আমরা চুপ করে থাকি।

সবশুওরের বাচ্চাদের মানববোমা হয়ে উড়িয়ে দিতে পারতাম যদি!

বাংলাদেশ এক ব্যার্থ রাষ্ট্র।যে দেশ যাদের টাকায় চলে তাদের সম্মান দুরে থাক, ন্যুনতম নিরাপত্তা দিতে পারেনা, সে রাষ্ট্রের পরিচালকদের মুখে আমি পেচ্ছাব করি।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এক হিসেবে দেখলে দেখবেন, দেশের গার্মেন্ট শ্রমিক আর প্রবাসী শ্রমিকরা প্রায় এক ট্রিটমেন্টই পান। প্রবাসী শ্রমিকদের আয়ের সুফলও এদের হাতেই যায় রাষ্ট্র প্রদত্ত বিভিন্ন সুবিধা আকারে। এই রাষ্ট্রে এরাই একক ক্ষমতাশালী স্টেকহোল্ডার। এদের শানশওকত, বিলাস আর দাপটের কোনো সীমাপরিসীমা নাই। জরুরি অবস্থার সময় অনেক শিল্পপতি হয়রান হয়, কিন্তু এই দাসব্যবসায়ীদের কিছুই হয় না। তারা প্রটেকশন পায়। জরুরি অবস্থা এদের শোষণ-নির্যাতনকে আরো নিরাপদ করে।
প্রতিদিনই এদের হাতে শ্রমিকের মৃত্যু হয়, কিন্ত খবর হয় না। মাসের পর মাস এরা শ্রমিকের বেতন দেয় না, যা দেয় তা তাদের বাড়ির পোষা কুকুরের খরচের থেকে কম। পেচ্ছাপটা এদেরই প্রাপ্য।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের সরকার দেশের ভেতরই জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা দিতে পারে না দেশের বাইরে কি দেবে..
অবৈধ ভাবে অনেকে দেশের বাইরে যান যার হিসেবও সরকারের কাছে নেই
তার থেকে বড় কথা গরীব ঘরের সুন্দরী বিধবা সম্পর্কে সবার ভাবী হন ।.....
আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ সমস্যার সমাধান কি হওয়া উচিত বলে আপনার মনে হয়?
প্রশ্নটি আমি অনেককে করি কিন্তু উত্তর পাই না ... সবাই জানে সমস্যা কি কিন্তু জোড় করেই যেন সবাই এড়িয়ে চলতে চায়...
আসলেই কি এড়ানো সম্ভব?

(জয়িতা)

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমার লেখার মধ্যেই নিহিতভাবে কিছু প্রস্তাব আছে।

এখানে তার বাইরে আরো কিছু যোগ করি:
১. শ্রমিকদের সঙ্গে অন্যায় হলে বাংলাদেশ যাতে আন্তর্জাতিক আইনের সুবিধা পায়, তার বন্দোবস্ত করা। অভিবাসনের বিষয়ে তিনটা কনভেনশন খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটা হচ্ছে জাতিসংঘের কনভেনশন অন দি রাইটস অব অল মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স এন্ড দেয়ার ফ্যামিলিজ ১৯৯০। এই কনভেনশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানেই প্রথম বৈধ-অবৈধ সকল অভিবাসী শ্রমিকের অধিকারের স্বীকৃতি আসে। প্রথমবারের মতো নারীকেও অভিবাসী শ্রমিকের মর্যাদা দিয়েছে এই কনভেনশন। অথচ ১৯৯৭ সালে এই কনভেনশনে সই করলেও আজ পর্যন্ত একে র‌্যাটিফাই (অনুমোদন) না করে বসে থেকেছে সব সরকার। অথচ তা করায় কোনো অসুবিধা ছিল না। এছাড়া আইএলও-র দুটো কনভেনশন ও রিক্রুটিং এজেন্সিদের নিয়ে একটা কনভেনশন আছে। আজকে সরকারকে ১৯৯৭-এর কনভেনশনসহ অন্য দুটি কনভেনশনে সই করে তা কার্যকর করার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। অনেকে বলবেন, এসবে করলে আমরা বাজার হারাব। এটা একেবারে বাতিল কথা। শ্রিলঙ্কা তো সই করেছে, ফিলিপিন করেছে, তারা তো বাজার হারায়নি। আমাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী নিজে বলেছেন, শ্রমিক গ্রহণকারী দেশের সঙ্গে দরকষাকষির সময় কনভেনশন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবেই আসেনি। কেউ বলেনি, তোমরা কনভেনশনে সই করেছ, তোমাদের থেকে লোক নেব না।

২. আশির দশকে মধ্যপ্রাচ্যে নির্মাণ কাজের বিশাল বিস্তার ঘটেছিল। সেজন্য তারা টাকা দিয়ে লোক নিয়েছে। ২০০৫ সালের পর থেকে সেখানে আরেকটা বিনিয়োগের বিষ্ফোরণ ঘটেছে। আগামী ১০/২০ বছরে উপসাগরীয় দেশগুলোর বিশাল বিশাল অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প অজস্র শ্রমিকের দরকার হবে। কিন্তু সেখানকার কিছু ব্যবসায়িরা যেহেতু ভিসা বিক্রির অসুস্থ ব্যবসা শিখে ফেলেছে, তাই তাদের সঙ্গে আমরা পেরে উঠছি না। আমাদের লোকেরা ঠকছে।
এটার বিরুদ্ধে এককভাবে কোনো দেশ পারবে না। আজকে যদি সার্কের সবগুলো দেশ মিলে একটা সার্ক চার্টার করে বলতো যে, এর কমে আমরা লোক দেব না, তাহলে কিন্তু শ্রমের বাজারটা আবার শ্রমিকের অনুকূলে চলে আসতো। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো কিন্তু ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়ার থেকে দণি এশিয়ার লোকই বেশি চায়। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের লোকই তারা চায়।
তাই দক্ষিণ এশিয় ফোরাম তথা সার্কের মাধ্যমেই আমাদের একযোগে বলতে হবে যে, ভিসা-ট্রেডিং একটা হারাম ব্যবসা, অন্যায় ব্যবসা। এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে উচ্চবাচ্য করতে হবে। বাজার হারানোর ভয়ে একা কোনো দেশ করবে না। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো একাট্টা হয়ে বললে কাজ হবে। এটা জরুরি।

৩. রাজনৈতিক দল, মিডিয়া, মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং তার সঙ্গে ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে সোচ্চার হতে হবে। তাদের জন্যও ট্রেড ইউনিয়ন ধরনের প্রতিষ্ঠান বানাতে হবে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এই যে দিতে না পারা এটাই তার ব্যর্থতা বা না চাওয়া। কিন্তু এই আমাদের বুঝতে হবে যে, নাগরিকদের দিক থেকে এটা রাষ্ট্র না। কিন্তু দেশি-বিদেশি লুন্ঠকদের কাছে এটা অতি কার্যকর রাষ্ট্র। নাগরিকদের জীবনে এর নিয়ন্ত্রণ অনেক পোক্ত। কিন্তু উৎপাদন ও অধিকার বন্টনের বেলায় তা ঢনঢনা।

মোদ্দা কথা এই রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে হবে। সেটা বড় আকারের আন্দোলন-বিপ্লব ছাড়া সম্ভব না। সেদিকে যাওয়ার আগে জানা চাই, এই রাষ্ট্র কী, কোথায় এর গলদ এবং কেমন রাষ্ট্র আমরা চাই, তা নির্মাণের প্রক্রিয়া কী? সে অতি কষ্টকর ও কঠিন পথ। কিন্তু কঠিনেরে ভাল না বেসে আমাদের উপায় কী?
আপাতত এটুকুই বলবার আছে।

*** লেখাটায় কিছুটা সম্পাদনা দরকার ছিল। করলামও, কিন্তু সার্ভারের কারণে হয়তো নিল না, হারিয়ে গেল। এখন এটারে মানুষ করে কে? অনেক জায়গায় 'ক্ষ' হারিয়ে গেছে। আর ''যাদের আয় বেশি তারা নয়, যারা খরচ করে বেশি তারাই এখানে ক্ষমতাবান'' এই লাইনটাকে পড়তে হবে ''যাদের অবদান বেশি তারা নয়, যাদের ভোগ বেশি এই বাজারে তারাই ক্ষমতাবান।''

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নাহার মনিকা [অতিথি] এর ছবি

সরকারী অবহেলার কথাতো সর্বজনবিদিত।বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ইংরেজী শিক্ষিতদের যা হোক একটু পাত্তা দেন, বাকীদের জন্য তারাই হর্তাকর্তা বিধাতা কিন্তু তাদের ত্র্রাণকর্তা হবার সংবাদ শুনতে পাই না ।

ব্যথিত হবার মত আরেকটা বিষয় হচ্ছে, স্বল্প শিক্ষিত এই প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে তথাকথিত শিক্ষিত বাঙ্গালীদের মনোভাব - প্রায়ই অচ্ছুত উপেক্ষার গল্প শোনা যায় -প্লেনে উঠে এদের ভদ্রতা বোধ, পরিচ্ছন্নতা জ্ঞান ইত্যাদি নিয়ে হাসিঠাট্টা শোনা যায়, কিন্ত তাদের কেউ সহযোগিতা, সাহায্য করেছে এমন গল্প বেশী নাই, আমি অন্তত শুনি নি। কেউ ভাবে না অজ পাড়াগায়ের ছেলেটি যে জীবনে প্রথমবার মানচিত্র পেরিয়েছে তার এই ট্রেনিংগুলো না থাকা কত স্বাভাবিক।
এই প্রসঙ্গটি টানলাম এ কারনে যে, প্রবাসী শ্রমিক নিয়ে সরকারের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নাগরিক মনোভাব, দেশে এবং বিদেশে পরিবর্তিত হওয়াও ভীষন দরকারী ।

ওয়াসিফ, হৃদয় বিদারক বিষয়টি নিয়ে যথারীতি ক্ষুরধার লেখনি।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

জাতিগঠন ও গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন না হওয়ায় এখানে এখনো সামন্ত ও উপনিবেশিক মানসিকতা কাজ করছে। কৃষক-শ্রমিক শ্রেণী থেকে আগত লোকদের দাস মনে করার সনাতনি সংস্কৃতি এখনো বহাল। শহর গ্রামের ওপর, সম্পত্তিবানরা সম্পত্তিহীনদের ওপর এক ধরনের জমিদারি সংষ্কৃতি চর্চা করে। বলার কোনো জায়গা নাই যে, তারা ও এরা এক জাতিভুক্ত। যেটা ব্রিটেন বা আমেরিকায় বলা চলে। সেখানেও শোষণ আছে, কিন্তু সেটা দাস আর মালিকসুলভ নয়, প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক তারা ছাড়িয়ে এসেছে। সেই সম্পর্কটা তারা আমাদের এখানেই আবার পুনরুৎপাদিত করছে। এর বদল এমনিতে ঘটবে না। নিম্নবর্গীয় শ্রেণীগুলোর উত্থান এবং তাদের সঙ্গে মধ্যবিত্তদের একাংশের সহযোগে বিপ্লব ছাড়া সাধারণত এ ধরনের বদল ঘটে না।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

স্বাধীন [অতিথি] এর ছবি

মোদ্দা কথা এই রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে হবে। সেটা বড় আকারের আন্দোলন-বিপ্লব ছাড়া সম্ভব না। সেদিকে যাওয়ার আগে জানা চাই, এই রাষ্ট্র কী, কোথায় এর গলদ এবং কেমন রাষ্ট্র আমরা চাই, তা নির্মাণের প্রক্রিয়া কী? সে অতি কষ্টকর ও কঠিন পথ।

ঠিক এই কথাটিই বলতে চাই, কিন্তু আপনার মত করে লেখার ক্ষমতা নেই। আমরা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের কথা চিন্তা করি। এখন সময় এসেছে সেই সকল ছোট ছোট চিন্তাগুলোকে একত্র করার। আমরা কি ধরনের রাষ্ট্র চাই। বর্তমান রাষ্ট্রের গলদগুলো কি কি তা খুজে বের করি। তারপর সবাই তার সমধান কি হতে পারে সেটা বের করি। ঠিক এরকম একটি চিন্তা থেকেই সুবিনয় ভাইকে বলেছিলাম আমাদের দেশের অর্থনীতির ব্যাপার গুলো আলোচনা করতে, যা তিনি এর মাঝেই শুরু করেছেন। ইশতি দিয়েছেন নিজস্ব ধাঁচের গণতন্ত্রের ধারনা।

আমার কাছে সকল সমস্যার মূল হল আমাদের একটি যোগ্য নেতৃত্বের অভাব। যোগ্য নেতা উঠে আসছেনা কারন আমাদের দেশের এবং দলগুলোর দুর্বল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং আমাদের দেশের শিক্ষার হার। বর্তমান দুই দল থেকে যে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসবে না তা সহজেই অনুমেয়। আর বাকিদলের উপরও তেমন ভরসা পাচ্ছিনে।

আমার মতে দরকার একদম নুতন দল, নুতন চিন্তাধারনা। যার চালিকা শক্তি হবে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম। কঠিন পথ কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কোথাও থেকে শুরু তো করতে হবে। সচলয়াতন হতে পারে সেই আন্দোলনের শুরু। সকলে আমরা যার যার দেশ নিয়ে চিন্তাগুলো শেয়ার করতে পারি। সেটা নিয়ে ই-বুক করা যেতে পারে। সর্বোপরি একটি নুতন মডেল দাড় করানো যেতে পারে যা নিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারবো।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমার মতে দরকার একদম নুতন দল, নুতন চিন্তাধারনা। যার চালিকা শক্তি হবে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম। কঠিন পথ কোন সন্দেহ নেই।

এটাই শুরুর কথা। যোগ্য নেতা নতুন পথ ও দল ছাড়া হজম হয়ে যাবেন আগের দলগুলোর পকেটে। কিন্তু সেই নতুন মতাদর্শ কী হবে, কারা তার ভিত্তি হবে সেটা স্পষ্ট করতে হবে।

আমার কাছে একধরনের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক মডেলই অনিবার্য বিকল্প। কিন্তু সেই সমাজতন্ত্রকে দেশে বা বিশ্বের ভুল গুলো থেকে শিখতে হবে। ওপর ওপর বোলচাল বা কঠিন আত্মত্যাগ থাকলেই হবে না, দেশের অস্থিমজ্জায় মিশে তাকে জানতে হবে, বুঝতে হবে জনগণ কী চায়, কীভাবে চায়। আমাদের মতাদর্শ জনগণের সঙ্গে যোগাযোগে সহায়তা করতে পারে, কিন্তু সত্যিকার রাজনীতি গড়ে উঠবে সেই যোগাযোগের মিথষ্ক্রিয়া থেকে। সেখানে আমাদের শিক্ষক হলে চলবে না, শিখতেও হবে জনগণে থেকে। আর অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অবস্থান নিতে হবে, সেটা কল্পিত ইঙ্গ-মার্কিন বললে হবে না, আজ মার্কিন-ভারত-ইইউ যে কায়দায় দেশটাকে চুষে খাচ্ছে, তার সুলুকগুলো বুঝতে হবে, এবং দেখতে হবে যে, বিদেশিরা এমনি এমনি পারছে না, সাম্রাজ্যবাদ কেবল বহিরাগত নয়, তা দেশের বিত্তবান-মধ্যবিত্ত শ্রেণীগুলোর সঙ্গে বিশ্ব পুঁজির অরগানিক সম্পর্কের ফল।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

স্বাধীন [অতিথি] এর ছবি

আমার কাছে একধরনের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক মডেলই অনিবার্য বিকল্প। কিন্তু সেই সমাজতন্ত্রকে দেশে বা বিশ্বের ভুল গুলো থেকে শিখতে হবে।

কি ধরনের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক মডেল আমাদের দেশে সম্ভব, বর্তমান পূজিবাদী ব্যবস্থা থেকে সেই ধরনের সমাজতান্ত্রিক মডেল এ কিভাবে যাওয়া সম্ভব, পূর্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর কি কি ভুল ছিল, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের অবস্থান কি, এই বিষয়গুলো বিষদ আলোচনা করে যদি কিছু লেখা দিন তাহলে মনে হয় সকলে উপকৃত হবে। অনেকেই আমার মত হয়তো জানতে চায়, কিন্তু দৈনন্দিন কাজের চাপে পড়ার সময় পায়না অথবা পড়িলেও বিষদ জ্ঞান রাখে না।

নীড় সন্ধানী [অতিথি] এর ছবি

সেনাবাহিনীরও নিজস্ব ব্যাংক থাকতে পারলে অভিবাসীদের নিজস্ব ব্যাংক থাকবে না কেন?

কথাটা সম্ভবতঃ প্রবাসী হবে। সেই হিসেবেই বলি। প্রবাসীদের ব্যাংক থাকার দরকার নেই। দরকার নেই গার্মেন্টস শিল্পের মতো ঋন সুবিধা বা নগদ সহায়তা, তারা কখনো সেরকম কিছু চায়ও নি।

প্রবাসী শ্রমিকদের বিদেশ যাওয়াটা একটা বিনিয়োগ। অনেকেই এই বিনিয়োগটা করে নিজের সর্বস্ব বিক্রি করে। আশা করে বিনিয়োগ থেকে সর্বোচ্চ আয়। কিন্তু আয়ের বদলে প্রতারনার সম্মুখীন হয় বিরাট একটা অংশের মানুষ। সেই সময়ই তারা সরকারের সুনজর চায়, দুতাবাসের ভুমিকা চায়। দুর্ভাগ্যজনক সত্যি হলো প্রয়োজনের সময় 'সুনজর-সহানুভুতি' পাওয়াও কঠিন হয়। বরং উল্টো হয়রানির সম্মুখীন হয়।

সরকার নামক প্রতিষ্ঠানটি অস্তিত্ব যখন দরকার তখন তা থাকে অদৃশ্যে, ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সরকারের কর্তাদের মুখে যখন বৈদেশিক মুদ্রার পরিসংখ্যানের গালগল্প শুনি লজ্জাই লাগে।

কল্পনা আক্তার এর ছবি

অভিবাসী শব্দটিও সঠিক

........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা


........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সকল মৃত্যুই সমান এবং সবার অশ্রুই সমান নোনা।

পুরো লেখার সাথে সর্বাংশে সহমত। বিশেষ করে এই কথাটির সাথে।

দেশটা এই মন্দার বাজারেও বেশ টিকে আছে শুধুমাত্র বাইরে থেকে পাঠানো রেমিটেন্সের টাকায়। বিনিময়ে এঁদের কী পরিমাণ অসম্মান ও অবহেলা করি আমরা, তা নিজের চোখে না দেখলে বোঝা দুষ্কর। মধ্যপ্রাচ্য হয়ে দেশে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে, কী অমানুষিক বঞ্চনা আর অপমান সয়ে এই মানুষগুলো দেশটা বাঁচিয়ে রাখছেন। মানুষ হিসেবে নিজের উপর ঘেন্না এসে যায়, বাংলাদেশি হিসেবে তো বটেই।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

দুনিয়াতেই একটা সিভিলাইজেশনাল সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তারই উপজাত এসব সমস্যা। মানুষের গঠন বদলে যাচ্ছে, আমরা একধরনের সিন্থেটিক গঠন পাচ্ছি, সমাজ-প্রকৃতির সঙ্গে লিপ্ত জৈব মানুষ আর নাই।
এ সময়ে অনেক কিছু নড়ে যায়. বিশ্বাস ও ভালবাসাও। মানুষ তখন অমানুষ হয়ে ওঠে। সেই অমানুষ থেকে আবার মানুষ হওয়াই নতুন মানবিকতার কাজ। সে কাজই আমাদের সামনে। নইলে হারিয়ে যেতে হবে। অনেকেই এভাবে বিলীন হয়েছে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

খুব ঠিক। দুনিয়াটা যখন "শেড্‌স অফ গ্রে"-তে ভরে যায়, তখন সাদা হোক কিংবা কালো, নিজের একটা রঙ ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এই কাজটুকু করতে না পেরেই ভেসে যায় জাতির পর জাতি।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

যাদের অবদান বেশি তারা নয়, যাদের ভোগ বেশি এই বাজারে তারাই ক্ষমতাবান।

এদের সঞ্চিত টাকাতেই গ্রামে নতুন পাকা বাড়ি ওঠে, গঞ্জ হয়ে যায় ছোটো শহর। এভাবে নগরায়নেও এদের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। কিন্তু দেখার মতো দৃষ্টি নাই বলে বা সেই দৃষ্টি একচোখা বলে সব কৃতিত্ব চলে যায় এনজিওদের কোলে।

যে দেশের নাগরিকেরা বিদেশ-বিভুঁইয়ে হাজারে হাজারে অপঘাতে মরে, যাদের জীবন কেবলই ‘দাসজীবনের’ করুণ আখ্যান, সেই দেশ ও সেই রাষ্ট্র সার্বভৌম ও কার্যকর হয় কী করে?

আমরা নাগরিকরা মনে করি, এটা আমাদের জাতীয় লাঞ্ছনা ও জাতীয় ট্র্যাজেডি। আমরা এর বিহিত চাই। আমরা মনে করি, সকল মৃত্যুই সমান এবং সবার অশ্রুই সমান নোনা। নওগাঁর পত্নীতলার মালয়েশিয়া ফেরত ইখতিয়ারের মা-বউ এই সত্য জানে, কিন্তু মহাশয়েরা মনে হয় জানেন না।

দেশি-বিদেশি লুন্ঠকদের কাছে এটা অতি কার্যকর রাষ্ট্র। নাগরিকদের জীবনে এর নিয়ন্ত্রণ অনেক পোক্ত। কিন্তু উৎপাদন ও অধিকার বন্টনের বেলায় তা ঢনঢনা।

এই রাষ্ট্র কী, কোথায় এর গলদ এবং কেমন রাষ্ট্র আমরা চাই, তা নির্মাণের প্রক্রিয়া কী? সে অতি কষ্টকর ও কঠিন পথ। কিন্তু কঠিনেরে ভাল না বেসে আমাদের উপায় কী?

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

দিগন্ত এর ছবি

কমেন্টে সবাই কিছু প্রস্তাবনা দিলে ভাল হয় - মানে কি কি ভাবে প্রবাসী শ্রমিকদের অবস্থা ভাল করা যায় এ নিয়ে। আমার মাথায় এখন একটাই পরিকল্পনা আসছে - শ্রম-বিমা ব্যবস্থা। লেখা সুন্দর হয়েছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

শ্রম-বীমা কে করবে শ্রমিক নাকি তাদের অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্র? ওপরে কিছু প্রস্তাবের কথা বলেছি।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

প্রথমত প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। যারটায় খাই, তাকেই উঠতে-বসতে নিগৃহিত করি আমরা।

বিভিন্ন মাধ্যমে প্রবাসী শ্রমিকদের অবদানের সুষ্ঠু প্রচার চাই। প্রবাসী "শিক্ষিত"রা বাইরেই থেকে যাই। এখানেই ঘর-বাড়ি তুলি, ছেলেমেয়ে বড় করি। অথচ দেশ নিয়ে আমাদেরই ঠাঁট-বাট বেশি, বিমানবন্দরে আমাদেরই সম্মান বেশি।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশগামী যেকোন ফ্লাইটের অ্যাটেন্ডেন্ট বা বিমানবন্দরের অফিসারকে ইচ্ছামত থাবড় দেওয়ার অধিকার চাই। এই ইতরগুলো যে কীভাবে শ্রমিকদের অপদস্থ করে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা দুষ্কর।

সবশেষে চাই দূতাবাসগুলোয় রাজনৈতিক নিয়োগ বন্ধ করা। নিদেনপক্ষে শ্রমিকদের জন্য দেন-দরবারের জন্য নেগোসিয়েশন-বিশেষজ্ঞ কাউকে চাই। আমাদের দূতাবাসের হোঁদল কুতকুতগুলো একটা সালাম আর এক বোতল ওয়াইন দিলেই গলে যায়। শান্ত কিন্তু কঠোর ভাবে আমাদের শ্রমিকদের অধিকারের জন্য কথা বলার মত মানুষ চাই।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

দূতাবাস কর্মকর্তা, রিক্রুটিং এজেন্সি (দেশের বা বিদেশের), মন্ত্রনালয়ের ঘোটটাই মূল সমস্যা। এটা ভাঙ্গা কঠিন।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

কল্পনা আক্তার এর ছবি

একটি প্রস্তবনা:

স্থানী অধিকার রক্ষাকারী সংগঠনের (আমাদের শ্রমিকরা যে দেশে কাজ করেন) সাথে শক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং আমাদের শ্রমিকদের তাদের সাথে লিংকআপ করে দেওয়া যেতে পারে।

........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা


........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

দেশেও কিছু এনজিও এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে, বিদেশেও, যেমন সিঙ্গাপুরে তারা তেমন সহায়তা পেয়েছে। এ বিষয়ে গ্লোবাল ক্যাম্পেইন না করলে তো স্থানীয় নাগরিক সংগঠনরা জানবে না। সেই ক্যাম্পেইনের দায়িত্বটা কিন্তু সরকারের ও মিডিয়ার।

যেখানেই আমাদের অনেক শ্রমিক আছে সেখানেই তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য কল্যাণমূলক অধিকারবাদী সংস্থা সৃষ্টি করতে হবে। ঠিক এনজিও-নয়। এগুলো হবে সরকারেরই তৈরি করা আউটফিট। কে কাজ পেল, কে পেল না, কার কী অসুবিধা, এসব দেখভাল করার জন্য এরা হবে আমাদের নিজস্ব সেবামূলক সংস্থা।
তাদের সঙ্গে যোগযোগ থাকবে দূতাবাসের ও দেশের সংস্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের। দূতাবাসের লেবার অ্যাটাশেসহ লোকবল বাড়াতে হবে। এত টাকা যারা পাঠাচ্ছে, তাদের জন্য আমরা কিছু টাকা খরচ করে দূতাবাসের লোকবল বাড়ানো তো কঠিন কিছু নয়! আমি এত লোক পাঠাব, তারা বিপুল টাকা পাঠিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মেটাবে আর তাদের জন্য প্রায় কিছুই করব না? এটা হয় না।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আচ্ছা, দাস সমাজের দাস আর জনশক্তি রপ্তানির নামের তৃতীয় বিশ্বের এই দাসপ্রথার মধ্যে কি আদৌ কোনো পার্থক্য নাই

না, দুইটা এক নয়।

জনশক্তি রপ্তানি কখনও খারাপ কিছু নয়, অসম্মানেরও কিছু হওয়ার কথা নয়। সবই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। কৈ, আমাদের গবেষকরা যখন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে, কিংবা প্রকৌশলীরা যখন ইউরোপে কোনো পাওয়ার প্ল্যান্টে কাজ করে, তখন তো তাদের আমরা দাস বলি না। মেধা, জ্ঞান, কৌশল, বুদ্ধি বিপনণে বেজায় সম্মান, আর শ্রম, সেবা বিপনণেই যত বিপত্তি। অথচ, উভয়ের কারণ কিন্তু একই। দেশে পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ না থাকা। বাজার অর্থনীতির এই যুগে এ দুয়ের মধ্যে আদতেই পার্থক্য করার সুযোগ কম, কারণ দুটোতেই অর্থ উপার্জিত হয়।

সমস্যা হলো, শ্রমজীবি মানুষ, তা সে দেশেই হউক কিংবা বিদেশে, তাদের আমরা কখনই সম্মানিত ভাবতে পারি না। বিদেশের মাটিতে যা কিছু হউক, অন্তত নিজ দেশের মানুষ হিসাবে আমরা যাতে ওদের অসম্মান না করি। তাদের স্বার্থ রাষ্ট্রকে দেখতেই হবে, কারণ তারাই রাষ্ট্রের বেশ বড় অংশ অর্থের যোগানদাতা।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

একদিক থেকে পার্থক্য আছে, আরেকদিক থেকে নাই। দাস বা শ্রমিক বা কর্মচারি এই স্ট্যাটাসগুলো নির্ভর করে নিয়োগদাতার সঙ্গে শ্রমদানকারীর দরকষাকষির ক্ষমতার ওপর, স্থানীয় আইনের ওপর। সেভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলনগুলো দুর্বল হওয়ায় এই দরকষাকষির ক্ষমতাটা কমেছে। অন্যদিকে নব্য-লিবারেল পুঁজিবাদ শ্রমকিদের আবার ঊনিশ শতকীয় বাস্তবতায় ঠেলে দিচ্ছে প্রান্তিক দেশগুলোকে। ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের খাতিরে ট্রেড উইনিয়ন বাতিল হচ্ছে, ইডিজেড, এসইজেড ইত্যাদি নামে নতুন শ্রমশিবির হচ্ছে। আর এসবই হচ্ছে, উন্নত পুঁজিবাদের প্রয়োজনে। ফলে শ্রমিকদের প্রগতির উল্টো পথে ঠেলে দেওয়া বিশ্বপ্রগতির উল্টোযাত্রার সমান্তরালে ঘটছে। তাই, আমার কাছে এটা মালিকদের খারাপ স্বভাবের ফল নয়, এটা পুঁজির বর্তমান চালচলনেরই রিফ্লেকশন।

আরেক দিক থেকেও দেখা যায়, পশ্চিমা পুঁজিবাদ তার উত্থানের সময় অভ্যন্তরীণভাবে কৃষক-কারিগর শ্রেণী এবং বাইরে উপনিবেশিক লুন্ঠন ও দাসব্যবসা করে প্রাথমিক পুঁজি সঞ্চয় করেছিল। এখন তাদের সেটা নিজ দেশে তেমন করতে হয় না, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং যুদ্ধ-লুন্ঠনের মাধ্যমে তারা সেটা বিদেশ থেকে করতে পারে। কিন্তু মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর-দুবাই-সৌদি আরবের মতো নব্য পুঁজিবাদী দেশগুলোর স্থানীয় ভাবে শোষণ করার তেমন কিছু অবশিষ্ঠ নাই, আবার অন্য দেশের বাজার বা কাঁচামাল দখলের ক্ষমতাও তাদের হয় নাই। তাই তারা আউটসোর্সিংয়ের নামে বাইরের শ্রমিকের শ্রম-উদ্বৃত্ত চোষণ করে মুনাফা বাড়িয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকে। বাংলাদেশের নব্য পুঁজিবাদীদেরও দেখা যায় নদী-বন-জমি-প্রাণসম্পদ এবং কৃষক-শ্রমিক-আদিবাসীদের সম্পদ ও শ্রম লুন্ঠন করেও হচ্ছে না, তারা রাষ্ট্রকেও লুন্ঠন করছে সরকারি ক্ষমতার বলে। এভাবে তারাও চেষ্টা করছে পুঁজিগঠন করতে। এরা পৃথিবীর নিকৃষ্ট শ্রেণীর শাসক ও ব্যবসায়ী। এরা উৎপাদন বাড়িয়ে আপেক্ষিক শোষণ বাড়ানোর মুরদ বা উদ্যোগ নাই বলে, সরাসরি লুন্ঠন ও দুর্নীতিকেই পুঁজিবাদের নিয়ম বানিয়েছে। অবশ্য এটাই পুঁজির নিয়ম, সব দেশে সব যুগে। এদের মাধ্যমে বিদেশিরাও সহজে দেশটাকে চুষতে পারে বলে, তারাই এদের রক্সা করে, প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা ও সামরিক শাসন জারিতে মদদ দেয়।

উৎপাদনী উপায়ে শোষণ নয়, লুন্ঠনী সম্পদ আহরণই এই পুঁজিবাদের তরিকা। তারই ফল বর্তমান সংকট।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নজমুল আলবাব এর ছবি

এইসব বিষয় ভাবলে মুখে খালি গাইল আসে। ভালো কোনো চিন্তা মাথাতে থাকে না।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

তারপরও চিন্তা না করলে তো সমস্যা কাটবে না। তবে গালির বদলে যদি মাইরের রাস্তায় আসেন, তবে আমিও আছি।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সবুজ বাঘ এর ছবি

একটা দল খুলেন। দ্যাশটা আমরা চালামু, নিজেগো মতো কইরা। কারো কুনো কতা আছে?

পলাশ দত্ত এর ছবি

আচ্ছা, একটা বিষয় বুঝলাম না। এই তথাকথিত আধুনিক যুগে মানুষের জীবনধারণের যে মূল পুজি- মানে টাকা- সেই টাকা আয় করার জন্য বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষকে শৃঙ্খল ধারণ বলেন দাসত্ব মেনে নেয়া বলেন যাই বলেন তা মেনে নিতে হচ্ছে। এই যুগে মানুষ বেচে থাকার টাকা আয় করার জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরের অফিসে খেটে মরতেছে। খাটাখাটনি যে করে তার- মানে তার চাকরির- নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজ দেশেও তো নাই তেমন। বসের আজ পছন্দ হলো না তো কাল বলে দিতে পারে যে পরশু থেকে আর অফিসে আসবেন না; অথবা আজ থেকে আর আপনার অফিস করার দরকার নাই। এই পরিস্থিতিতে
বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যুকে মহিমান্বিত করার তো কিছু নাই। দেশের ভেতর গার্মেন্টসে কাজ করে যারা তাদের জন্যই তো কোনো সুবন্দোবস্ত হলো না এখন পর্যন্ত। বর্তমান বিশ্বের জীবনযাপন ব্যবস্থাটাই তো দাড়ায়ে আছে এই দাস-হয়ে-থাকার দাস-করে-রাখার বাস্তবতার ওপর। এ অবস্থায় বিষয়টাকে সমগ্র মানুষের অনুভবের ও বাস্তবতার অবস্থান থেকে না দেখে এইভাবে কোনো একটি বিষয়ে প্রগাঢ় গুরুত্ব আরোপ কি ঠিক? আমি লাশ হয়ে বিদেশ থেকে ফিরে আসছি না বলে আমার জীবনের দাসত্ব তো ভুল নয়, মিথ্যা নয়।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

অতিথি লেখক এর ছবি

কিছু মানুষের পান্তা ভাতের নুন অথবা নোনতা জলের অসহায় চাহনি...আর কিছু মানুষের ঘামে ভেজা শরীরের ছোপ ছোপ সাদা নোনা দাগ......এই সব লবণাক্ততাই প্রতিদিন আমাদের আহারগুলোকে এমন স্বাদু করে দেয় ! ! ! আর আমারা শুধু তৃপ্তির ঢেকুর তুলি...বাহ...বাহ...।। # অনার্য #

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

প্রিকারিয়েত আর প্রলেতারিয়েতের যে পার্থক্য আমার আপনার সঙ্গে গার্মেন্ট বা প্রবাসী শ্রমিকদের সেই পার্থক্য।

আমরা শোষিত আর ওরা লুন্ঠিত ও নিহত। এটাকি আপনার কাছে গুরুতর পার্থক্য মনে হয় না?

আমি কোনো নৈতিক প্রশ্ন তুলিনি, আমি কেবল দেখাতে চেয়েছি: জাতীয় অর্থনীতিতে যাদের অবদান বেশি তারাই সবচেয়ে উপেক্ষিত।

দেড় বছরে প্রায় তিন হাজার লোকের মৃত্যুকে আপনার কাছে সাধারণ ঘটনা মনে হলো? আমরা যারা একটা ভাল থাকার জন্য অফিসে কাজ করি, তারাও ভাল নেই সত্যি। আমাদের জীবনের সেরা সময় ও সেরা চিন্তাগুলো এদের কাছে বন্ধক রাখতে হয়। তারপরও আমরা কিছুটা চলতে পারি, খেতে পারি। ওরা তাও পারে না। সবচেয়ে বড় কথা অভাবের থেকে মান হারানোটা বেশি লাগে, আমাদেরও তাদেরও। আর যে দাস, সে বোঝে দাসত্বের কী মানে।

গার্মেন্ট শ্রমিকদের প্রসঙ্গটা কিন্তু আমার লেখাটায় এসেছে। আজকের প্রথম আলো দেখুন।

এই লেখাটা পড়ে আমাদের বেশ কিছু প্রবাসী বাঙালি মেইল করেছেন। সবাই যে শ্রমিক তা নয়। শ্রমিকের কাজ করেন এরকম কয়েকজনের যৌথ প্রতিক্রিয়াটি আপনার সমীপে পেশ করলাম।

''জনাব,
আজকের প্রথম আলোয় আপনার প্রবাসীদের নিয়ে লিখা পড়লাম।ইদানীং শত শত প্রবাসীর লাশ দেশে আসছে,পত্রিকার পাতায় এ খবর দেখে বিস্মিত হচ্ছি কি করে এ সম্ভব।দেশের পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে কেউ বড় লিখছেনা,প্রতিবাদ ও নেই।সরকারী কোন বক্তব্য চোখে পড়ছেনা।সবাই যেনো এটাকে অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিচ্ছে বলে মনেহচ্ছে।আমাদের দূতাবাসগুলোও নির্বাক বলেই মনে হয়।কারন তারাও সেসব দেশে চাকুরী করতে কিছু বাড়তি কামাতে গেছেন,দেশের গরীব প্রবাসীর খোজখবর রাখা কর্তব্য বলে মনে করছেনকি? মনে হয় না।বাংলাদেশ বিমান ঐসব দেশে যায় বলে সেইসব দূর্ভাগাদের লাশটা দেশে গেছে,আমার ভয় হয় আমার মৃত্যু হলে আমার লাশটা দেশে যাবেকি,আমার বউ-বাচ্চারা আমাকে শেষ বিদায়টা দিতে পারবেকি?এসব প্রশ্ন মাথায় ঘোরপাক খায়।আমরা এমনই এক নিমকহারাম দেশের বাসিন্দা,যে দেশের বড় বড় রাজনীতিক এসবকে অত্যন্ত তুচ্ছ বিষয় বলে আমল দেয়না,শুধু নিজের আখের নিয়েই ব্যস্ত।আপনারা যারা দেশছাড়া ঐসব গরীব লাশকে নিয়ে ভাবেন,ওদের পরিবারকে একটু সান্তনা দেবার চেষ্টা করুন এই অনুরুধটুকু রইল।আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য দুঃখিত।''

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

পরবাসী  এর ছবি

লেখার সাথে শতভাগ সহমত
প্রবাসী শ্রমিকদের সমস্যা সামাধানকল্পে বিদেশের দুতাবাস গুলির মাদারচোদ কেরানীদের বাদ দিয়া যোগ্য চৌকষ তরুন কিছু পোলাপান নিয়োগ দিলে দেশি প্রবাসী সবার জন্যই ভালো হতো।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগোলোতে ইউনিয়ন বা এনজিও কোনোটারেই পাত্তা দিবো না।
অন্য কোনো দেশ লাগে না শুধু বাংলাদেশ সরকার একটু শক্ত হইলেই প্রবাসীরা বুকে অনেকটা শক্তি পায় আর
রিক্রুটিং এজেন্সি প্রথা বাদ দিয়ে সরকার সামান্য একটা ফি নিয়ে যদি বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করে দেয় মানে যার যে কয়জন শ্রমিক দরকার বিদেশিরা এসে সে কয়জনের সাক্ষাতকার নিয়ে সাথে করেও নিয়ে চলে যাবে তাতেও বিশাল লাভবান হতো বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষ।
কেডা হোনে কার কতা
তাওত আপনে ফারুক ওয়াসিফ কিছুটা লিখলেন
ধন্যবাদ

স্বাধীন [অতিথি] এর ছবি

আমার কাছে একধরনের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক মডেলই অনিবার্য বিকল্প। কিন্তু সেই সমাজতন্ত্রকে দেশে বা বিশ্বের ভুল গুলো থেকে শিখতে হবে।

কি ধরনের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক মডেল আমাদের দেশে সম্ভব, বর্তমান পূজিবাদী ব্যবস্থা থেকে সেই ধরনের সমাজতান্ত্রিক মডেল এ কিভাবে যাওয়া সম্ভব, পূর্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর কি কি ভুল ছিল, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের অবস্থান কি, এই বিষয়গুলো বিষদ আলোচনা করে যদি কিছু লেখা দিন তাহলে মনে হয় সকলে উপকৃত হবে। অনেকেই আমার মত হয়তো জানতে চায়, কিন্তু দৈনন্দিন কাজের চাপে পড়ার সময় পায়না অথবা পড়িলেও বিষদ জ্ঞান রাখে না।

মন্তব্যটি আগেই দিয়েছিলাম। কিন্তু আপনার চোখে পড়েছে কিনা বুঝতে পারিনি তাই আবার দিলাম, কিছু মনে করবেন না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।