গল্প নয়, হয়তো কোনো গল্পের শুরু হতে পারে

অনিশ্চিত এর ছবি
লিখেছেন অনিশ্চিত [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০১/০৯/২০০৮ - ১:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাত ১২টায়ও ঢাকার রাস্তাগুলোর শান্তি নেই। এখনও কাঁটাবন মোড় থেকে শাহবাগের দিকে কিংবা উল্টোপথে ছুটে চলচে শত শত গাড়ি। এদের মধ্যে অবশ্য ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। কিছু কিছু প্রাণীর জীবন শুরুই হয় তখন, যখন সবার শেষ হতে থাকে।

শাহবাগের খুব কাছেই একটি আঠারোতলা ভবনে থাকে পূষণ। কদিন যাবত ঘুমের দেখা নেই চোখে। আজও ঘুম আসবে না বলে মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে তাই সে ছাদে উঠে আসে। এতো বড় ছাদ রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী মানুষজনের হই-হল্লায় মুখরিত থাকলেও পুরো ছাদে এখন পূষণ একা। একদম রাতের মতো একা।

প্রচণ্ড এক অস্থির সময় পার করছে সে। অস্থিরতার দুটো দিক থাকে- একটা দিকে থাকে অস্থিরতার উপাদান, আরেকদিকে যে অস্থির হয় সে। আজ একটু আগে এই ছাদে বসে পূষণ হঠাৎ করেই আবিষ্কার করে- তার অস্থিরতার উপাদান আসলে একটি- সে নিজে। কোনো নির্দিষ্ট উপাদান নেই তার অস্থির হওয়ার। কিন্তু আপাদমস্তক কার্যকারণে বিশ্বাসী পূষণ বিশ্বাস করতে চায় না, একটিমাত্র উপাদানে তার জীবনটা এরকম অস্থির হতে পারে!

সম্পর্কের ঝুলানোর সুতোর একদিকে সে লটকে ছিলো অনেকদিন। সম্প্রতি সেই ধাপও সে পার হয়ে এসেছে। যে আবেগ কিংবা আবেগীজীবন নিয়ে সে পার করছিলো গত দেড়টি বছর; সেটি আসলে এখন পাষাণ হয়ে বসে আছে তার পুরো অস্তিত্বেই। জীবনটাকে নিজের মতো করে দেখে বলে অপরদিকের আয়নায় একইরকমের আবেগ আশা করেছিলো। কিন্তু হঠাৎ পাওয়া আবেগ যেমন দ্রুত শেষ হয়ে আসে, কিন্তু হঠাৎ বড় আঘাত চিরজীবন থেকে যায়- এই বৈপরীত্য উপলব্ধি করে সে অসম্ভব দ্রুতবেগে স্তিমিত হতে থাকে। মনের ভেতর ফোলানো বেলুন চুপসে যেতে থাকে আস্তে আস্তে। বাইরে থেকে বুঝার উপায় নেই, কিন্তু সেই বেলুনের চামড়ায় ভাঁজ পড়া প্রতিটি কুঁচকি জানান দিতে থাকে পূষণের নিভে যাওয়া অন্তরচাপল্যের ঘুমন্ত দিকটিকে।

নিষ্ক্রান্ত অতীতের সামনে থেকে এই আঁধার রাতে পূষণ নিতে থাকে একটির পর একটি কঠিন সিদ্ধান্ত। প্রতিশোধ নেবার সময় এসেছে তার। নিজের ভেতর জ্বলা হাজার হাজার বাতির একটির পর একটি নিভিয়ে দিবে সে। যান্ত্রিক মানুষ কিংবা মানবিক রোবট হয়তো বিজ্ঞানীদের কাছে আরো শতাব্দীর ব্যাপার, কিন্তু পূষণ নিজেই যে উদ্বায়ী বাতিগুলো নিভিয়ে শতাব্দী আগেই নিজেকে বানিয়ে নিচ্ছে! কেউ যদি কখনো পূষণের খুব কাছে আসে, তাহলেই হয়তো দেখতে পাবে নরম চামড়ার নিচে কী এক ধাতব শীতল যন্ত্রের নাম- পূষণ।


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

পূষণ আপনার পরিচিত কেউ?
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

অনিশ্চিত এর ছবি

পরিচিত কিনা জানি না, তবে তার বোধগুলো ধরা দেয় আমার মাঝে, মাঝে মাঝে।

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

ধুসর গোধূলি এর ছবি
অনিশ্চিত এর ছবি

পাষাণ হৃদয় বুঝলাম, কিন্তু দূষণ ক্যাম্নে?
‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।