পিপ্পলকুমারী বালা অথবা মিস প্রভা

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ৩০/০৬/২০১১ - ৫:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সপ্তমপর্ব
কোহেতুর পাহাড়ের গান
..............................................

খোঁড়া জামান ঠিক খোঁড়া নয়। একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন। আর হাঁটতে হাঁটতে মাঝে সাজে চিটাগুড়ও চাটেন। এই চাটার আগে ও পরে গুড়ুক গুড়ুক টানেন। কুঁচি কুঁচি করে কাটা চিটাগুড়ে তামাক মাখার কাজটা তিনি নিজেই করেন। মাখতে মাখতে ভাবেন—সীতারামপুর যেতে হবে। দাদাজানের হুকোটি পড়ে আছে কোন আথানে বাথানে। সেটা আনতে হবে। সে হুকোতে গুড়ুক গুড়ুক করতে হবে। আনি আনি করে আনা হচ্ছে না বলে দাদাজান কিড়িমিড়ি করে আছেন। তাঁর বেহেস্ত নসিব হোক।

বেহেস্তের কুঞ্জি কিতাবখানা গেলরাতে পড়ার খায়েস ছিল। পড়ার জন্য বেরও করেছিলেন। সাঁইত্রিশ পৃষ্ঠা খুলেও ছিলেন। হুকো টানতে টানতে এ সময় অন্দরমহল থেকে খবর এলো—বিবিসাহেবার তবিয়ত ঠিক নাই। মাথায় কিঞ্চিৎ দর্দ লেগেছে। যে মেয়েটি খবরটি এনেছে, তার পায়ের পাতা খোলা। কড়ে আঙ্গুলে একটি লোহার আঙটি বসানো। পর্দার ওপাশ থেকে যখন মেয়েটির এই আঙুলটি অদৃশ্য হয়ে যাবে—তখনই তিনি বেহেস্তের কুঞ্জির দুইশত আট পৃষ্ঠা উল্টালেন। লেখা আছে, ‘বিবাহের পর প্রথম সাক্ষাতেই স্বামী-স্ত্রীর অন্তরে মহব্বতের বীজ বপন হয়। তখন থেকেই পরস্পরের হৃদয়ের সাগরে তরঙ্গের মত মহব্বতের ঢেউ খেলতে থাকে। আর দাম্পত্য জীবনের নানা রকম রঙিন স্বপ্ন দেখতে থাকে। আর ঐ স্বপ্নের কারণে এতদিনকার পিত্রালয়ের মায়া-মহব্বতের কথা ভুলে গিয়ে একটা অজানা অচেনা পুরুষকে ভালবাসতে থাকে।‘ ভালবাসা শব্দটিতে এসে তাঁর চোখ আটকে গেল। মনে প্রশ্ন জাগল, মহব্বত আর ভালবাসা কি আলাদা জিনিস? তার এবং বিবিসাহেবার মধ্যে কি ভালবাসা আছে? আর মায়া কি? তার আর বেগমসাহেবার মধ্যে কি মায়া আছে? এইসব মনে হওয়ার কালে কোনো এক মহব্বত এবং ভালবাসার মাঝখানেই মায়াময় মেয়েটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। তার পায়ের আঙ্গুলে আংটা। আংটা দেখে তিনি শুধালেন, তর বাড়ি কুথায় রে?
--তাড়গাঁ।
--তাড়গাঁ মোল্লাবাড়ি। ফুলু মোল্লা মোর বাপজান।
--ফুলু মোল্লা কেমুন আছে?
--তিনি নাই।
--কনে গেছে?

এই প্রশ্নে মেয়েটি নিশ্চুপ। তার আঁচলের শব্দ শোনা যায়। খসখস শব্দ শুনে বোঝা যায় তার হাতটি আঁখির সামনে উঠে এসেছে। ডুকরে কেঁদে উঠেছে। আশু বর্ষিত হচ্ছে। শুনে খোঁড়া জামানের ডান পায়ের আঙ্গুল থেকে একটা শিরশিরাণী উঠে আসছে । আজ পূর্ণিমা—যোগা গোণে গন্ধগোকুল তেল মালিশ করা দরকার। বেহেশতের কুঞ্জি পড়তে গিয়ে তেল মালিশের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন। তাঁকে কেউ মনেও করিয়ে দেয়নি। তাড়গাঁর মেয়েটি পর্দার ওপাশে আছে কি নেই তা বোঝার আগে দেখতে পেলেন নামাজ ঘরে মিটমিট করে বাত্তি জ্বলছে। পাতলা হুজুর কিতাব পাঠে মগ্ন আছে। খোঁড়া জামান গলা খাকড়ি দিলেন। আর বাত্তিটি নিভে গেল। আর তখনি চাননি পশর আসমান থেকে ফকফকিয়ে জমিনে নেমে এসেছে। জমিনে গুবরে পোকা ঘুমিয়েছিল—সেও চক্ষু খুলে লা-জওয়াব। এ রোশনীর তুলনা নাই। সবই তোমার ইশারা হে খোদা। এ রোশনী সারা জাহান মঞ্জিলের গাছে গাছে, ডালে ডালে, পাতায় পাতায় চেকনাই দিচ্ছে। পাতলা হুজুর কেতাবের পাতায় এই রোশনীর ছলকায় গাছগুলিকে দেখতে পাচ্ছে। গাছের আঁখি আছে। সেই আঁখি পিটপিট করে। ডালেরও দীর্ঘ সরু সরু দেহকাণ্ড আছে। দেহকাণ্ড ছিট ছিট করে। আর পাতায় পাতায় লেজনাড়া আছে। লেজনাড়া ফিট ফিট করে। ইহা কি গাছ? না, সর্প? গাছ কি প্রকারে সর্প হয়? অথবা সর্প হয় গাছ? ইহা কঠিন ধন্ধ বটে। এই ধন্ধে বন্ধ হয়ে আছে তার নড়নচড়ন।

তাড়গাঁর মেয়েটির নাম জানার খায়েস ছিল। বহুবার জানতে চেয়েছিলেন। বলেছেও তাকে। কিন্তু মনে রাখতে পারেন নি। কেন পারেননি—এটাও একটা ধুন্ধুমার মহাধন্ধ। ধুন্ধুমার শব্দটির মানে কি তিনি জানেন না। কাউকে জিজ্ঞস করতে হবে। তার গলা শুকিয়ে এলো।

গলা শুকিয়ে এলো বলে তিনি গলা খাকড়ি দেবেন। দিতে গিয়ে দেখতে পেলেন, নামাজ ঘর থেকে পাতলা হুজুর বেরিয়ে আসছে। তার হাতে চটি। কাঁধে পাঞ্জাবী। আঁখি পরে আসমানী ঘোর। এই ঘোরের মধ্যে ভাসতে ভাসতে এক দাঁড়িয়ে পায়ে চটি পরছে। পাঞ্জাবী গায়ে দিচ্ছে। দিয়ে বাইরে থেকে সুরেলা কণ্ঠে সালাম জানিয়েছে। ঘরে এল না। দরোজার বাইরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। গুবরে পোকাটি ঘাসের মধ্যে এগুতে এগুতে কটকট করে ডাকছে। পোকাটা সর্প দেখেছে। সর্প দেখে তাঁর গর্ব হচ্ছে। এই ফাঁকে খোঁড়া জামান জানতে চাইলেন—কী নাম তোমার?
--মুহাম্মদ ফকরুদ্দিন মোল্লা।
--বাড়ি কনে?
--তাড়গ্রাম। হা, জনাব, তাড়গ্রামের মোল্লাবাড়ি।
--ফেলু মোল্লারে চেনো?

ফেলু মোল্লাকে চেনে কি চেনে বোঝা গেল না। তার জবান বন্ধ আছে। গুবরে পোকা চাননি পহরে বুক ঘসে ঘসে এগিয়ে চলেছে। কট কট শব্দ শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে পাতলা হুজুর কাচারি ঘরের বাইরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার মন পড়ে আছে নামাজ ঘরে কিতাবের পাতায়। টিমটিমে আলোর মধ্যে কিতাবের আরও অক্ষরে চোখ রাখতে চায়। এজন্য সন্ধ্যা লাগার আগেই চোখে সুর্মা দিয়েছে। কানে এক ফোঁটা আতর। এর তুল্য আর কিছুই নাই।
তখন কোহেতুর পাহাড়ে সেই পিটপিট করা গাছটিকে দেখা যায়। গাছটিতে পিট পিট করে সর্পটি আর নেই। সেখানে ধিকি ধিকি করে আগুন জ্বলছে।

...আর তখন কিতাবে ছিল শীতকাল। মুসার স্ত্রী ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা এবং তার প্রসবকাল নিকটবর্তী। সকাল বিকাল যে কোনো সময় প্রসবের সম্ভাবনা ছিল। রাস্তা ছিল অপরিচিত। কোনো জনমানব নাই।
হযরত মুসা শুনতে পেলেন, এই গভীর অন্ধকারে তাঁর স্ত্রী কাতরে উঠছে। সারা পথ দাঁতে দাঁত চেপে সে কাতর কষ্ট সহ্য করে এসেছে। এখন সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেছে।

তিনি চলেছেন সেই নিজ দেশের উদ্দেশ্যে। এই দেশে একদা তিনি জন্মেছিলেন। সেখানে তার বনী ইসরাইলী পিতা আছেন। আছেন মা জননী উম্মে মুসা। মাকে তার মনে পড়ে না। আবছা করে জেগে ওঠে সে এক সজল আঁখিপল্লবে ছলছল করছে আশু। নীল নদের জলের হাওয়া আসছে তার গায়ে। তার কপালে সেই আশুর একটি তপ্ত ফোঁটা ঝরে পড়েছে। আর তক্ষুণি ভাসতে শুরু করেছে ঢেউয়ের দোলায়। এই ঢেউয়ের দোলায় এখনও দুলছেন শয়নে-স্বপনে-জাগরণে। থামাথামি নেই। তিনি টের পান—সেই আশুবিন্দু তাকে হাত ছানি ডাকছে। আয় না। আয় না। মেরে লাল, আয় না। এর মধ্য তার কান থেকে তার স্ত্রীর সকাতর ধ্বনি মুছে যায় না। তিনি কাছে এসে জানতে চাইলেন, বিবি, কী কষ্ট?
বিবি উত্তরে বলেন, কোনো কষ্ট না্‌ই।
--তাহলে কঁকিয়ে উঠছ যে?
--কঁকিয়ে উঠব কেন? আপনি আছেন। আমার কোনো কষ্ট নাই।

কিন্তু তারপরই বিবিজন আরও জোরো আহ আহ করে কঁকিয়ে ওঠেন। আর কোনো বাক্য নাই। কাছে এসে মুসা নবী দেখলেন, বিবির দাঁতে ঠকঠকি লেগেছে। হাতপা বরফ। বিবি শুয়ে আছেন—উপরে আসমান, নীচে শূণ্য জমিনের উপর। থেকে থেকে বরফ জমে আছে। আর হিমশীতল হাওয়া। তিনি আবার জানতে চাইলেন, বিবি , তোমার কষ্ট হচ্ছে?
--কী কষ্ট?
--আর কিছুক্ষণে মধ্যে সে আসছে। কিন্তু এই বেশুমার সফরকালে পিছনে ফেরাউন আর উপরে নিচে বরফ। তাকে বাঁচাই কি করে?

মুসা স্তব্ধ হয়ে গেলেন। ফেরাউন আসছে তার নিজের জন্মের আগে থেকেই। ফেরাউনের হাতে চকচকে কৃপান। ঘোষিত হয়েছে, বনী ইসরাইলের ঘরে ফেরাউনের কাতেল জন্ম নেবে। সুতরাং সব শিশুদের কতল কর।

এতেক শুনিয়া কাঁদে মুসা জননী।
আমার পোলারে কেডা রাখে জিয়নী।।
কাবিলা নামেতে এক ছিল দাসিনী।
চাঁদমুখ দেইখা তারে বক্ষে নেয় টানি। ।
ফেরাউন ঘোরো ফেরে খোঁজে শিশুডার।
তাহার হাতে যাবে মহাজান তার।।
এই হেতু দুই নারী পানিতে ভাসায়।
পানির মাছেরা তারে দ্যাখো গো হাসায়।।

সেই হাসির মধ্যে উম্মে মুসার টলটলে আঁখি দুটো শিশু মুসার আঁখিতে ভাসে। আসে আশু। তপ্ত আশু ভাসমান শিশুর কপালে টপ করে ঝরে পড়ে। আর আকাশে কোনো এক পাখি চিঁ চিঁ করে ডেকে ওঠে। সেই আশু এখন দেখা দিয়েছে জওয়ান মুসার বিবির আঁখিতে। মুসা কেঁপে ওঠেন। বলেন, বিবিজান, একটু সবুর করো। আগুন জ্বালাচ্ছি। তিনি চকচকি ঠুকে আগুন জ্বালাতে চেষ্টা করলেন। আগুন জ্বলে না। তিনি দেখলেন, দূরে কোহেতুর পাহাড়ের গাছে আগুনের শিখা। ওখানে আগুন আছে। জনমানবও থাকতে পারে। বললেন, আমি আগুন আনতে যাই।

বিবি শীতে কাঁপে। আর মুসা নবী কোহেতুর পাহাড়ের কাছে যায়। দেখেন গাছে আগুন জ্বলছে। কিন্তু আগুনের এমন মাহাত্ম্য যে গাছ সে আগুনে পোড়ে না। গাছের ডাল পোড়ে না। ডালের পাতা পোড়ে না। তিনি যত কাছে যান—আগুনও তত সরে যায়। তিনি যখন দাঁড়িয়ে পড়েন, তখন আগুনও দাঁড়িয়ে যায়। সামনে এগিয়ে আসে। তাঁর শরীর শির শির করে ওঠে। তিনি আচনক শঙ্কা বোধ করেন। এই শঙ্কার ভেতরে তিনি তাঁর খোদার কাছে মোনাজাত ধরেন। বলেন, ইয়া পরওয়ার দিগার—ইহা কি?
--ইহা আগুন নহে। নূর।

বাহ্‌রে-মুহীত, রূহুল-মা'আনী ইত্যাদি গ্রন্থে আছে, হযরত মূসা (আঃ) এই গায়বী আওয়াজ চতুর্দিক হইতে সমভাবে শ্রবণ করেন। তাহার কোন দিক নির্দিষ্ট ছিল না। শুনিয়াছেনও অপরূপ ভঙ্গিতে; শুধু কানে নহে, সমস্ত অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ দ্বারা শুনিয়াছেন। ইহা ছিল একটা মু'জেযার মতই। আওয়াজের সারমর্ম ছিল এই যে, যে বস্তুকে তুমি আগুন মনে করিতেছ, তাহা আগুন নহে-- আল্লাহ্‌ তাআলার জ্যোতি। ইহাতে বলা হয়, আমিই তোমার পালনকর্তা। রূহুল-মা'আনী মুসনাদে বরাতে ওয়াহাবের রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে যে, মূসা (আঃ)-কে যখন 'ইয়া মূসা' শব্দ প্রয়োগে আওয়াজ দেয়া হয়, তখন তিনি আওয়াজ দেন, লাব্বায়েক। লাব্বায়েক। হাজির আছি। হাজির আছি।

কিয়ৎকাল পরে তিনি কহিলেন, ইহা রহমানুর রহীম, আমি আওয়াজ শুনছি। কিন্তু কোথা থেকে আওয়াজ দিচ্ছেন, তা জানি না। আপনি কোথায় আছেন?
আসমানী জবাব আসিল, আমি তোমার উপরে, সামনে, পশ্চাতে ও তোমার সাথে আছি

তখন মূসা (আঃ) আরয করিলেনঃ আমি স্বয়ং আপনার কালাম শুনেছি, না আপনার প্রেরিত কোন ফেরেশতার কথা শুনেছি? জওয়াব হলঃ আমি নিজেই তোমার সাথে কথা বলছি।

অতপর আল্লাহ তা’লাহ বলিলেন, তোমার ডান হাতে ওটা কি?
মুসা বলিলেন, ওটা আমার লাঠি। আমি এর উপর ভর দেই। এর দ্বারা আঘাত করে আমার ছাগপালের জন্যে বৃক্ষপত্র ঝেড়ে ফেলি এবং এর দ্বারা আমার অন্যান্য কাজও উদ্ধার হয়।
আল্লাহ্‌ তাআলা বলিলেনঃ একে মাটিতে নিক্ষেপ কর।
মুসা মাটিতে লাঠিটি ছুড়িয়া মারিলেন। লাঠিটি আর লাঠি রহিল না। উহা এক সর্প হইল। সর্প হইয়া নড়িয়া চড়িয়া দর্প করিতে লাগিল।
অতপর তিনি সর্পটিকে ধরিলেন। তাহার হাতও উজ্বল সূর্যের ন্যায় আলোকসম্পন্ন হইল। তিনি বলিলেন, হে পরওয়ারদিগার, তোমার মুজেযা বোঝা ভার।

শোনো শোনো মুসা শোনো, ভয় কর জয়।
সর্প তুমি হাতে ধর—লাঠি হৈবে তয়।।
সর্প ছিল লাঠি হৈল--হাতে ঝলে নূর।
মুসা বলে, তুমি খোদা, খেদ হৈল দূর।।

সারারাত ধরে এই আলো হাওয়ার মধ্যে পাতলা হুজুর জামান মঞ্জিলের চৌহদ্দির মধ্যে দাঁড়িয়ে রইল। এই ফাঁকে চাঁন আসমানে শীতল আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আগুনের মধ্যে কয়েকটা বাদুড় উড়ে এসেছে। পেয়ারা গাছে ঝুলে চিবিয়ে চিবিয়ে পাকা গইয়া খেয়েছে। সে গাছেও আগুন। সে গাছ পোড়ে না। আরও লাবণ্যপ্রাপ্ত হয়েছে। কয়েকটা আগুনবর্ণ শেয়াল নদীর চর থেকে বেরিয়ে এসে এদিক ওদিক হেঁটেছে। আগুনের মধ্যেও শেয়ালগুলি দিব্যি চরে খরে বেড়িয়েছে। খোঁড়া জামান কাচারি ঘর থেকে নিন্দ ঘরে চলে গেছেন। আর চান মামু পশ্চিম আসমানে হেলে গেলে নামাজ ঘরে ঢুকে পাতলা হুজুর আজানও দিয়েছে। বলেছে, নিদ্রা হতে নামাজ উত্তম। আস সালাতু খাইরুম মিনান নাউম। ফেলু মোল্লার কথা—তাড়গ্রামের ব্যথা তার আর মনে নাই।
মনে নাই বলেই তার পায়ে কুট কুট করে পিঁপড়ে কামড়ে দিচ্ছে। পিঁপড়ে কামড়ে কামড়ে বলছে, আর কি? আর কি?

আর সেইকালে ফুচ ফুট করে তখন সুর্য উদিত হল। পাখি ডাকল। হাওয়া ছুটল। ফুল ফুটল। পরিমল লোভে অলি আসিয়া জুটিল।

আর হেনকালে যতীন বাকচি বগলে দাগ-পরচা নিয়ে জামান মঞ্জিলের চৌহদ্দিতে পা রাখল। তার চুলে আলো ঝলমলে রঙ। ভালো চনমনে ঢঙ।
এই রঙটি আর ঢঙটি একটি ছোটো মেয়ে ভেতর বাড়ির জানালা থেকে পিটপিট করে ঘুম ভাঙা চোখ মেলে দেখতে পেয়েছে। ঘুম ভেঙে এরকম রঙিলা বুড়োকে দেখে কিছু বিস্ময় ভর করেছে তার মুখে। ভাঙা ভাঙা গলায় বলছে, আম্মিগো, আইসা দেখ—ভুত আইছে। ভুত আইছে।

ছোটো মেয়েটির সামনের দুটো দাঁত নেই। ভাঙা। কিছুদিন পরে গজাবে। ততক্ষণে তাদের আঙিনায় ভুত এসে পড়েছে।

...............................................................................................................................
অন্য পর্বের লিংক :
প্রথম পর্বের লিংক--
দ্বিতীয় পর্বের লিংক--
[url= http://www.facebook.com/note.php?note_id=10150580069565338]তৃতীয় পর্বের লিংক[/url] :
[url= http://www.facebook.com/note.php?note_id=10150586382160338]চতৃর্থ পর্বের লিংক : [/url]
[url=http://www.facebook.com/note.php?note_id=10150625915815338 ]পঞ্চম পর্বের লিংক :[/url]
ষষ্ঠ পর্বের লিংক :

(এই পালাটি কাজী মামুনের তাড়ায় লেখা হচ্ছে। আর এই পালার দোলকাণ্ডটি গুরুপাণ্ডি ইপ্সিতা পালের বায়নায় গড়া হচ্ছে। মেঘ অদিতি তথ্য দিচ্ছেন। এইসব গড়ন পেটন মহাঝামেলা। )


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।