মাধবী আর আমিঃ ভালোবাসার অণুগল্প

এস এম নিয়াজ মাওলা এর ছবি
লিখেছেন এস এম নিয়াজ মাওলা [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ১১/০৩/২০১৬ - ১০:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দ্বিতীয় অঙ্কঃ

মাধবীলতাকে দেখে আমার চমকে যাওয়ার কথা ছিলো না। অনেক বছর আমি এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করেছিলাম। আমি জানতাম একদিন দেখা হবে মাধবীর সাথে। আমি খুব স্বাভাবিক স্বরে বলবো, ‘কেমন আছ তুমি?’ আমার হৃদয়ের গোপন প্রকোষ্ঠে লুকিয়ে থাকা একটি প্রশ্ন করবো তাকে। জানতে চাইবো, ‘কেনো? কেনো, মাধবী!’ মাধবীর সাথে দেখা হলে কি কি করবো, সব যেনো আমি সাজিয়ে রেখেছিলাম।

মাধবীর সাথে হঠাৎ করেই দেখা হলো সেদিন! আঠার বছর পর! দেড় যুগ! হাসপাতালের করিডোরে এভাবে দেখা হবে, চিন্তাই করিনি আমি। কিন্তু দেখা হয়ে গেলো! বেশকিছু দিন যাবত আমার খুব মাথা ব্যথা হচ্ছিল। যন্ত্রণা হচ্ছিল চোখেও। ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম এখানে। সিটি স্ক্যান করে রিপোর্টের জন্য যখন অপেক্ষা করছিলাম- সামনে এসে দাঁড়ালো মাধবী!

‘নিয়াজ! তুমি নিয়াজ তো!’ মেয়েলি কন্ঠের অস্ফুট স্বরে তাকিয়ে যেনো আমিও হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। সেই মাধবী! আঠারটি বছর আগের সেই মাধবী। আমি জানতাম একদিন দেখা হবে মাধবীর সাথে। কিন্তু এভাবে দেখা হবে আমি জানতাম না! আমার চমকে যাওয়ার কথা ছিলো না, কিন্তু আমি চমকে গেলাম। আমার বলার কথা ছিলো, ‘কেনো? কেনো, মাধবী!’ আমি বলতে পারলাম না।

প্রথম অঙ্কঃ

মাধবী আমার খুব প্রিয় বন্ধু ছিল। কখন কিভাবে আমাদের বন্ধুত্ব ভালোবাসায় গড়িয়েছিলো আমরা বুঝতে পারিনি। মাধবীকে ভালোবাসতাম খুব। বোধহয় মাধবীও ভালোবাসতো আমায়, খুউব। স্বপ্ন দেখতাম আমরা দু’জনে- অনেক স্বপ্ন। ভালোবাসার স্বপ্ন, একসাথে ঘর করার স্বপ্ন। একটা ছোট্ট পরীর স্বপ্ন!
স্বপ্নের শেষ ছিলো না! কিন্তু ভালোবাসার শেষ ছিলো!

যে মাধবীর চলে যাবার কথা ছিলো না, সেই একদিন অনেক দূরে চলে গেলো।

শেষ অঙ্কঃ

‘আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাই নি! কিন্তু যেতে হয়েছে। ভালোবাসি তোমায়, কিন্তু সেই অধিকার দিতে অনেকের আপত্তি। সে তুমি বুঝবে না, কোনোদিন বুঝতেও চাও নি। তাই আঠার বছর একই শহরে থেকেও তুমি কখনই দেখা করো নি! কিন্তু দেখো, আজও আমি অপেক্ষা করে আছি তোমার দেওয়া পাঁচটি নীল পদ্ম হাতে নিয়ে!’, মাধবীর কোনো কথাই যেনো আমি বুঝতে পারছিলাম না। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে। আমার আর বলা হয় না, আমিও যে তোমার অপেক্ষায় আছি এতোটা বছর!

ডাক্তারের চেম্বারে ডাক পড়লো আমার। বয়স্ক নামকরা ডাক্তার। আমাকে দেখে সিটি স্ক্যানের দিকে তাকিয়ে খুব মৃদু স্বরে বলছেন, ‘খুব ভালো রিপোর্ট নয়। আপনাকে মিথ্যা আশ্বাস দিবো না। একটা টিউমার দেখা যাচ্ছে। বায়োপসি করলে বোঝা যাবে কতোটা খারাপ। তবে সিটিতে দেখে খুব ভরসা পাচ্ছি না। আপনি অপারেশনের আগে সব লেখালেখির কাজ শেষ করে ফেলেন’। ইঙ্গিতটা খুব পরিষ্কার।

চেম্বার থেকে বেরিয়ে দেখলাম মাধবী দাঁড়িয়ে আছে আগ্রহ দৃষ্টিতে। হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘চলো, কফি খাবো একসাথে’। মাধবীর বাড়ানো হাতটা ধরে এগিয়ে যেতে যেতে মনে হচ্ছিল ‘ভালোবাসার শেষ ছিল না! কিন্তু জীবনের শেষ আছে!’


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চলুক

এস এম নিয়াজ মাওলা এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া।

-------------------------------------------
এমনভাবে হারিয়ে যাওয়া সহজ নাকি
ভিড়ের মধ্যে ভিখারী হয়ে মিশে যাওয়া?
এমনভাবে ঘুরতে ঘুরতে স্বর্গ থেকে ধুলোর মর্ত্যে
মানুষ সেজে এক জীবন মানুষ নামে বেঁচে থাকা?

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্যি গল্প এটি?
এ্যানি মাসুদ

এস এম নিয়াজ মাওলা এর ছবি

গল্প- গল্পই! তবে গল্প তৈরী হয় জীবন থেকেই, তাই না?
ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
এমনভাবে হারিয়ে যাওয়া সহজ নাকি
ভিড়ের মধ্যে ভিখারী হয়ে মিশে যাওয়া?
এমনভাবে ঘুরতে ঘুরতে স্বর্গ থেকে ধুলোর মর্ত্যে
মানুষ সেজে এক জীবন মানুষ নামে বেঁচে থাকা?

যাযাবর জোনাক এর ছবি

ভালো লাগছে। ভালো লাগছে শব্দচয়ন, গাঁথুনি।
হ, সব স্বপ্নগুলাই মাঠে মারা যায় এইরকম- কোনো না কোনোভাবে।
শেষটা যদিও সিনেম্যাটিক বেশ খানিকটা, ভালো লাগছে তারপরও

এস এম নিয়াজ মাওলা এর ছবি

প্রিয় যাযাবর,
আমার বলার কিছুই নেই! চেয়ে চেয়ে দেখলাম- তুমি কমেন্ট লিখে গেলে!

-------------------------------------------
এমনভাবে হারিয়ে যাওয়া সহজ নাকি
ভিড়ের মধ্যে ভিখারী হয়ে মিশে যাওয়া?
এমনভাবে ঘুরতে ঘুরতে স্বর্গ থেকে ধুলোর মর্ত্যে
মানুষ সেজে এক জীবন মানুষ নামে বেঁচে থাকা?

তাহসিন রেজা এর ছবি

ভাল লাগল!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

এস এম নিয়াজ মাওলা এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
এমনভাবে হারিয়ে যাওয়া সহজ নাকি
ভিড়ের মধ্যে ভিখারী হয়ে মিশে যাওয়া?
এমনভাবে ঘুরতে ঘুরতে স্বর্গ থেকে ধুলোর মর্ত্যে
মানুষ সেজে এক জীবন মানুষ নামে বেঁচে থাকা?

আয়নামতি এর ছবি

হাসি

এস এম নিয়াজ মাওলা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-------------------------------------------
এমনভাবে হারিয়ে যাওয়া সহজ নাকি
ভিড়ের মধ্যে ভিখারী হয়ে মিশে যাওয়া?
এমনভাবে ঘুরতে ঘুরতে স্বর্গ থেকে ধুলোর মর্ত্যে
মানুষ সেজে এক জীবন মানুষ নামে বেঁচে থাকা?

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালোবাসার শেষ ছিল না! কিন্তু জীবনের শেষ আছে!’
চমৎকার!

সত্য ও কল্পনার মিশেলে তৈরি অনুগল্পটা ভালো লাগলো।
গল্প চলুক... সাথে আছি নিয়াজ ভাই।

জিল্লুর রহমান সোহাগ
Email:zillur.rahman@banglacat.com

এস এম নিয়াজ মাওলা এর ছবি

সোহাগ,
আরে ভাই তোমাকে কে বলেছে এটা সত্য আর কল্পনার মিশেলে তৈরী! তুমি তো আমার সংসার ভাঙ্গবা বোঝা যাচ্ছে!

-------------------------------------------
এমনভাবে হারিয়ে যাওয়া সহজ নাকি
ভিড়ের মধ্যে ভিখারী হয়ে মিশে যাওয়া?
এমনভাবে ঘুরতে ঘুরতে স্বর্গ থেকে ধুলোর মর্ত্যে
মানুষ সেজে এক জীবন মানুষ নামে বেঁচে থাকা?

দেবদ্যুতি এর ছবি

‘ভালোবাসার শেষ ছিল না! কিন্তু জীবনের শেষ আছে!’

চলুক

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

এস এম নিয়াজ মাওলা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-------------------------------------------
এমনভাবে হারিয়ে যাওয়া সহজ নাকি
ভিড়ের মধ্যে ভিখারী হয়ে মিশে যাওয়া?
এমনভাবে ঘুরতে ঘুরতে স্বর্গ থেকে ধুলোর মর্ত্যে
মানুষ সেজে এক জীবন মানুষ নামে বেঁচে থাকা?

কর্ণজয় এর ছবি

আশার চেয়ে ভালো।।।

এস এম নিয়াজ মাওলা এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকেও।

-------------------------------------------
এমনভাবে হারিয়ে যাওয়া সহজ নাকি
ভিড়ের মধ্যে ভিখারী হয়ে মিশে যাওয়া?
এমনভাবে ঘুরতে ঘুরতে স্বর্গ থেকে ধুলোর মর্ত্যে
মানুষ সেজে এক জীবন মানুষ নামে বেঁচে থাকা?

নীড় সন্ধানী এর ছবি

কেমন অন্য রকম একটা গল্প! হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তিথীডোর এর ছবি

টিপিক্যাল ক্লিশে প্যাকেজ নাটক টাইপ।
ভাল্লাগেনাই, সরি।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।