প্রথম মৃত্যুর পর দ্বিতীয় জন্মের ভোর

আহমেদুর রশীদ এর ছবি
লিখেছেন আহমেদুর রশীদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৩/১০/২০০৮ - ২:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ডা.পি ভেনুগোপাল আপনি এখন কোথায় আছেন-জানি না।তারপরো বছরের এই দিনটিতে আপনার জন্য শ্রদ্ধা ও শুভ কামনা প্রকাশ করি আমি বিশেষ ভাবে।

১৯৮৬ সালের এই দিনটিতে এই ভদ্রলোক দিল্লীর AIIMS এ আমার জান কবজ করেছিলেন সাথে থাকা বড়দাকে মাত্র ৭ভাগ ফিরে আসার নিশ্চয়তা দিয়ে।
ঘটনার শুরু তারও বহু আগে।আমি তখন ক্লাস থ্রি থেকে ফোর না পড়েই লাফ দিয়ে ফাইভে উঠে গেছি।একদিন দুপুরের খাওয়ার পর মাঠে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছি,এমন সময় দেখি ডাক্তারদা আম্মার ব্লাড প্রেসার মাপছেন।আমারও সখ হলো ঐ যন্ত্রটি হাতে লাগিয়ে দেখার।সখ পুরা করতে গিয়ে দেখি ডাক্তারদা একবারে শেষ নাকরে বারবার আমার দুইহাত, এমনকি পায়েও যন্ত্রটি লাগিয়ে পরীক্ষা করলেন।পরদিন সকালে আমার আর স্কুলে যাওয়া হলো না।গেলাম হাসপাতালে।একসাথে অনেক ডাক্তার মিলে আমাকে পরীক্ষা করলেন।তারপর ঢাকা।তখন মার্চ মাস।দেখা করলাম ব্রিগেডিয়ার ডাক্তার মালিক সাহেবের কাছে।কয়েকটা পরীক্ষা দিলেন তিনি।পরদিন রাস্তায় বেরুতেই দেখি-মোড়ে মোড়ে অস্ত্র তাক করে আছে আর্মি বহর।তখনো ঢাকার হেন রাস্তা ছিলো না যেখানে রিকশা যেতো না।এরই মধ্যে এক্সরে-ব্লাড টেস্ট সাড়া হলো।সন্ধ্যায় রিপোর্ট নিয়ে গেলাম ডাক্তারের চেম্বারে।ডাক্তার রিপোর্ট দেখেই বললেন- অপারেশন লাগবে।কথাটা শুনার পর থেকেই শুরু হলো আমার কান্না।(বুঝে-নাবুঝে কান্নার এই অভ্যাসটা আমার বড় মেয়েটা কেমন করে যেনো পেয়ে গেছে)।এরপর শুরু হয় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি।আমি রাজী হই না ভর্তি হতে,আবার সিটও পাওয়া যায় না।এমনি করতে করতে আব্বা-আম্মা একদিন রাজী হয়ে গেলেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায়।এইভাবে শুরু হলো বংশাল থেকে ঢাকাদক্ষিন,পূর্বজিন্দাবাজার থেকে চিটাগাং পর্ব।চিটাগাং পর্ব শেষ করে বাসায় ফিরে আবারো স্কুলমুখি হলাম।ওষুধ খেতে খেতে একসময় ভুলে গেলাম অসুখের কথা।ভুলে থেকে পার করলাম সিক্স -সেভেন।তারপর ক্লাস এইট।এইটে উঠে কেমন যেন নিজেকে বড় বড় লাগছিল।ভালো লাগা-মন্দ লাগা গুলো বদলে গেলো।স্কুলে দেয়াল পত্রিকা বের করলাম।একুশে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্টানের জন্য নাটক লিখলাম।ঐ নাটকের একটা অংশ ছিলো ছাত্রনেতার বক্তৃতা।বক্তৃতাটা কেমন হবে এর জন্য দিনকয়েক জাকির ভাইয়ের পেছন পেছন ঘুরলাম।জাকির ভাই ছিলেন ঐসময়ে আমাদের শহরের সবগুলো দেয়ালে যার নাম লেখা ছিলো সেই বিপ্লবী ছাত্রনেতা।কিন্তু জাকির ভাই শেষ পর্যন্ত আমাকে বক্তৃতা লিখে দেন নাই।এই এইটে থাকতেই আমার একটা কবিতা ছাপা হয়েছিলো তৎকালীন সাপ্তাহিক বর্তমান দৈনিক যুগভেরী'তে।সন্ধানী নামের একটা নাটক দলের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে আমার তখনই।ঐ বছরই আমি অর্জন করেছিলাম কারো প্রেষণা ছাড়াই শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারার স্পর্ধা।কিন্তু হঠাৎ করেই একটা এক্সরে করাতে গিয়ে ভুলে যাওয়া অসুখটার কথা মনে করিয়ে দিলেন ডাক্তার।অসুখটার নাম 'কোয়ার্কটেশন অব এয়োর্টা'।জন্মগত ভাবে সংকুচিত এয়োর্টাই এই অসুখের কারণ।দেরী না করে ঢাকায় এসে সোহরাওয়ার্দীতে ভর্তি হয়ে গেলাম।এনজিওগ্রাম করে ডাক্তাররা বললেন -এই অপারেশন এদেশে সম্ভব নয়।অসুখটা ধরা পরার সময় যাদেরকে দেখেছিলাম-মোড়ে মোড়ে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে,তারা ততদিনে সিভিল ড্রেস আর গণতন্ত্রে হাত পাকানো প্লেয়ার।হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে সেইসব ভাড়দের দেখা হয়ে গেলো।আমার পাশের বেডে ছিলেন,হাজী দানেশের ছেলে।তার কাছে শুনেছি কেনাবেচার নানান কাহিনী।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ফিরে আসি বাসায়।পরীক্ষা না দিয়েও নাইনে প্রমোশন পেয়ে যাই।বাইরে কোথায় অপারেশনটা করানো যায় এ নিয়ে খোঁজ খবর করতে করতে সময় পেরিয়ে যায় বেশ।আমরা যখন ভেলোর যাবার জন্য মোটামোটি প্রস্তত,তখন আমার স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল প্রণতি দত্ত-আমরা যকে ছবি টিচার নামে ডাকতাম,তিনি খবর দিলেন পি ভেনুগোপালের আর দিল্লীর AIIMSর।চিঠি লেখার পর ১৫ দিনের মধ্যে পেয়ে গেলাম উত্তর।......................................................
(চলবে)


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পুরোটা শোনার অপেক্ষায় রইলাম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কীর্তিনাশা এর ছবি

পরবর্তি পর্ব দ্রুত ছাড়েন রশীদ ভাই। অপেক্ষায় থাকলাম।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

আকতার আহমেদ এর ছবি

শিরোনাম দেখে মনে করছিলাম কবি শামসুর রাহমানকে নিয়ে কোন লেখা (প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে'র সাথে মিল খুঁজছিলাম) । পরে এবং পড়ে দেখি অন্য কাহিনী । শুনতেছি টুটুল ভাই.. আপনি বলে যান

মুজিব মেহদী এর ছবি

কান পেতে রইলাম।
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

আলমগীর এর ছবি

ঢাকাদক্ষিণ যাওয়া হয়েছিল কয়েক বার, পাহাড়লাইনে।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

পান্থ রহমান রেজা [অতিথি] এর ছবি

এই পান্থ'ও পরের পর্বের অপেক্ষায়।

রণদীপম বসু এর ছবি

সিরিয়াল টিরিয়াল না হলে জমে না দেখছি ! চলুক তাহলে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ধুসর গোধূলি এর ছবি
শেখ জলিল এর ছবি

পড়ছি। চলুক পর্ব...

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

পুতুল এর ছবি

রশিদ ভাই, খুব অপ্রচলিত শব্দ যেমন "এয়োর্টা" শব্দটা বাংলায় কি হবে জানিনা তবে প্রধান রক্তবাহী নালী ব্রেকেটে বা পাদটিকায় লিখে দিলে মনে হয় ভাল হয়। এভাবে এনজিওগ্রাম শব্দের মানেটা আমি আন্দাজ করতে পারছি না।
খুব ভাল লাগছে, লেখাটা চলুক।
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।