এবার রাজাকার হত্যার বিচার? সাপ কুণ্ডলী খুলছে...

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: মঙ্গল, ১৩/১১/২০০৭ - ৭:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একেই বলে উলটপুরাণ। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি যখন রাজনীতি ছাপিয়ে সাংস্কৃতিক, সামাজিক এমনকি বৃহত্তর নাগরিক পরিমণ্ডলে উচ্চারিত হচ্ছে, তখনই বেসুরো ঘণ্টা বাজল। দৈনিক সমকালে মঙ্গলবার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ঝিনাইদহের এক রাজাকারপুত্র তার মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা তার পিতা হত্যার বিচার চেয়ে স্থানীয় থানায় মামলা করেছে। অভিযুক্ত চার আসামির দু’জনেরই বয়স ১৯৭১ সালে ছিল যথাত্রক্রমে ৩ ও ৫। থানা মামলা নিয়েছে এবং ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার দাবি করেছে তারা নিরপরাধ। আইন এবার তার নিজস্ব গতি খুঁজে নেবে! তবে এর মধ্যে যুদ্ধারাধের বিচারের বিপরীতে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠা নিরাপদ করবার পাল্টা আয়োজনের বিকাশ লক্ষ করা যেতে পারে। আদালতের বিচার আদালতের এখতিয়ারে। কিন্তু নৈতিক বিচার চলে জনগণের বিবেকে।
অপরাধী নির্ণয়ে আলামতের পাশাপাশি মোটিফও বিবেচ্য। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের মোটিফ ছিল জনগোষ্ঠী ও ভূখণ্ডের রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে ধ্বংস করা। অন্যদিকে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মোটিফ ছিল স্বাধীনতা রক্ষা এবং নবীন রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান। সেনা ও নাগরিক সমাজের ঐক্যে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী ছিল তারই বৈধ কর্তৃপক্ষ। কথিত রাজাকার হত্যার মামলাটির মোটিফ তাহলে কি সেই বৈধতাকে আইনের ফোকর গলিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা? ২য়ত, যুদ্ধপরাধের বিচারে ১৯৯২ সালে গঠিত গণআদালতের লক্ষ মানুষের সমাবেশে এবং আরো লক্ষ লক্ষ মানুষের দাবিনামার সমর্থনে কতিপয় ব্যক্তি ও দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ তোলা হয়েছিল। সাধারণভাবে জনগণের কোনো অংশ যদি কোনো দাবি তোলেন বা কোনো বিষয়ের আইনি ব্যাখ্যার আর্জি জানান, উচ্চ আদালতে তা আপনাআপনি রিট হিসাবে গৃহীত হওয়ার বিধান আছে। কিন্তু আদালতের তরফে ওই অভিযোগের কোনো ব্যাখ্যা আসেনি। এ রকম অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে একজন রাজাকার হত্যার কথিত অভিযোগ আদালত পর্যন্ত গড়ালে প্রশ্ন উঠতে পারে, আদালত কি এটা ফৌজদারি বিধিতে বিচার করবে? নাকি পাল্টা যুদ্ধাপরাধ অর্থাত মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধাপরাধ সংজ্ঞায়িত করে ‘বিচার’ করবে? মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক পটভুমি বাদ দিয়ে এর সুষ্ঠু বিহিত কি সম্ভব? এর জন্য দরকারি আইন কি আছে? ঝিনাইদহে সাধুহাটি এলাকার পাকিস্তানপন্থি শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মৃত ইলিয়াস হোসেনের নামে যুদ্ধাপরাধী বলে শক্ত অভিযোগ রয়েছে। তাকে যদি অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়ে থাকে তার বিচার অবশ্যই দরকার। কিন্তু তার কৃতকর্মের আইনি সংজ্ঞা নির্ধারণ ছাড়া সে কাজটি যথাযথ হবে কেন?অর্থাত ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের চরিত্র নির্ণয় এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌম শক্তি জনগণ তা সম্পর্কে কী মত পোষণ করে; তার মূল্যায়ন ছাড়া ওই মামলার বিহিত হয় না। অন্যদিকে আইন থাকা সত্ত্বেও যুব্দাপরাধী বিচার হয় না এবং থানায় এ বিষয়ক মামলা তামাদি হতে বসে। শহীদ বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গিয়াসউদ্দিন আহমেদকে হত্যার অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরে রমনা থানায় তার বোন একটি মামলা দায়ের করেন। অদ্যাবধি তার বিহিত হয়নি।
পাশাপাশি কোনো অসাধু চক্র যাতে একে ঘিরে অহেতুক সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে তাও দেখা সমীচীন। কারো কারো কাছে একে ঔদ্ধত্য বলে মনে হতে পারে। কিন্তু কেবল ঔদ্ধত্য হিসাবে না দেখে এর মধ্যে গভীর অমঙ্গলের বীজ রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা দরকার।
এ পর্যন্ত সাংবাদিকতার সীমা মেনে লেখা। আগামিকাল বুধবার তা প্রকাশিতও হবে। কিন্তু এতে করে আমার পূর্বধারণাটি আরো পোক্ত হলো। ‘একাত্তরের এ্যান্টিথিসিস এবং রাজনীতির ‘এক্স’ ফ্যাক্টর’ শিরোনামে এই ¦ব্লগেই আমি আগে লিখেছিলাম যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি তুলে সংঘাতসৃষ্টি করে আখেরে যুদ্ধাপরাধীদের চিরতরে প্রতিষ্ঠা করা এবং এই রেজিমকে অক্ষত রাখার আয়োজন চলছে। যাকে বলে বুমেরাং। পানিতে জন্মানো লতার মুখ যেখানে ভাসে, তার গোড়া পোঁতা থাকে অন্য জায়গায়। মুখ দেখে গোড়ার আন্দাজ নিতে গেলে ভুল হতে পারে। এর সঙ্গে কোনো একটি মহলের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার সম্পর্ক আছে। মার্কিনপসন্দ সরকার মার্কিনিদের কৃপাধন্য জামাতকে নিষিদ্ধ করবে, এটা ভাবা মূঢ়তা।
নিশ্চয়ই মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু কিছু যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কেও আমাদের একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে কিন্তু তার আগে জাতীয় গণহত্যার বিচার চাই। আর একটা আরেকটার পাল্টাপাল্টি হতে পারে না।


মন্তব্য

ভাস্কর এর ছবি

এই সম্ভাবনার কথাই কইছিলাম আমার শেষ পোস্টে...যেই পোস্টের জীবনীশক্তি রহিত হইছে...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

তাই যদি না হবে, তাহলে সরকার বলছে বিচারের কথা, এমন ঘটনা কি ঘটেছে? সব ভাল'র দেশ এত তাড়াতাড়ি? আওয়ামী লীগও সরকারে এসে এমন কথা বলেও নি, তুলতেও দেয়নি কাউকে।
যাহোক, জীবনীশক্তিরহিত মানে?

::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে একটা লাভ হয়েছে, রাজাকার-বদর-শামসদের চেহারা বিকশিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধকে এভাবে আর কখনো ওপেন চ্যালেজ্ঞ জানানোর পথে তারা যায় নি। সামনে ধর্মের পোস্টার আর পিছনে জিয়া থেকে শুরু করে সমস্ত সামরিক সরকার এবং বর্তমান অনির্বাচিত উড়ে এসে জুড়ে বসা অবৈধ সঙদের সহযোগিতায় তাদের অগ্রযাত্রা যে প্রকৃতই বাংলাদেশকে অস্বীকার করা, সাধারণ মানুষের কাছে এটা পরিষ্কার হওয়া দরকার ছিলো। বিএনপির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে; কিন্তু হাসিনার আওয়ামী লীগও যেভাবে সাধারণ মানুষের স্বপ্নে লাথি মেরেছে, তাতে মানুষ এইসব দেশদ্রোহীদের প্রতি সফট হয়ে পড়ছিলো। যুদ্ধাপরাধী সম্পর্কিত তাদের আউটবার্স্ট শেষ পর্যন্ত তাদের পাছায়ই লাথি মারবে। আবারও। বাঙালিকে শোষণ করা যায়, অবৈধভাবে শাসনও করা যায়; কিন্তু তারা কখনো ঘুমিয়ে যায় না, একসময় জেগে ওঠে প্রচন্ড শক্তিতে।

অতএব, এভাবে আরো মামলা হোক, মুক্তিযোদ্ধাদেরকেই দেশদ্রোহী বলুক শুয়োরের বাচ্চারা। এ মুহূর্তে এটা অনেক দরকার।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বলাই-এর সাথে একমত। সাপ কুন্ডলী থেকে বের না হলে তো ধরা কঠিন।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

আরেক রাজাকারপুত্রের অনুকরণীয় কীর্তি দেখুন।

ঠাট্টা নয়। আসলেই অনুকরণীয়।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অ্যানোনিমাস এর ছবি

বলাইয়ের সাথে একমত নই। একাত্তরে যারা বিশ বছর বা তার চেয়ে বড় ছিলেন, তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক পটভূমি পরিষ্কার ছিল। কিন্তু পরের প্রজন্মের কাছে ছিল না। মুজাহিদ এখন যা বললো, বা শাহ আবদুল হান্নান যা বললো, তা নতুন প্রজন্ম 'কখনও শুনে নি'। মুক্তিযুদ্ধকে এই ভাবে কেউ কখনও দেখে নি। এখন সময়টা এমন যে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে 'আওয়ামী লীগ' নামটার উপর থেকে, আমাদের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধ যেভাবে আছে, সেরকম য়ুটোপিক এটা ব্যাপার এই রকম একটা দল থেকে এসেছে, সেটা কেবল 'বিশ্বাস' করে, কিন্তু চক্ষুশ প্রমান ওদের জুটে নি, যা মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা ছিল তাদের জুটেছিল। বিএনপি'র নেতাদের অবস্থাও একই, দুর্নীতিতে জর্জরিত। এমতাবস্থায় জামাত হোক বা মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, ওরা যদি নিজেদের তখনকার অবস্থান যে আসলে ভুল ছিল না, এটা জোর গলায় বলে, চ্যালেঞ্জ করে, তাহলে নতুন প্রজন্ম একটু থমকে দাঁড়াবেই। এটাকে বেনিফিট অফ ডাউট দিবে, কারণ যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাদের জন্য এটা ইমোশনাল স্ট্রাগল, খুব ডিপ রুটেড ইনজুরি, যা নতুন প্রজন্মের জন্য না। নতুনটা 'প্রচলিত' সব কিছুকে প্রশ্ন করতে ভালোবাসে। মুক্তিযুদ্ধের 'প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস' 'প্রচলিত ইতিহাস'ই। প্রশ্ন করা একদল হয়তো খুব দ্রুতই বের হয়ে আসবে, যারা ধার্মিকও না। হয়তো মানবিকতার দোহাই দিয়েই সমর্থন করবে ওই রাজাকারের হত্যার বিচারের। বলাই যা বললেন, তা খুব উইশফুল থিংকিঙের মত শোনালো। অতটা সরল ভাবে সব আগাবে না মনে হয়। 'গর্জে' উঠছে না বাঙালি অনেকদিন। পেটে ভাত না থাকলে 'গর্জানো' কঠিন। পাকিস্তানিরা তখন ভাত দিত না, বাঙালি ভাতের আশাতেই 'গর্জিয়েছে'। কিন্তু ভাত এখনও জুটে নি, আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টি, ভাতের স্বপ্ন দেখিয়েও কিছু করে নি। যারা বিচার চাইছে, ওরাও সবার ভাত জুটানোর জন্য কিছু করছে না। ধর্মভিত্তিক দলগুলো অন্তত: এই জীবনে ভাতের স্বপ্ন না দেখালোও পরলৌকিক ভাত স্বপ্নে দেখায়। তাই বলছি, নতুন প্রজন্ম, যাদের কাছে একাত্তরের অতীতটা বাস্তবতা নয়, কিংবা খুব ডিসট্যান্ট পাস্ট, সামথিং দ্যাট ডাজ নট এফেক্ট দেম নাউ, তাদের কাছে হিসাবটা এত সহজ হবে না।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

অ্যানোনিমাস ভাই,

এখন সময়টা এমন যে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে 'আওয়ামী লীগ' নামটার উপর থেকে, আমাদের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধ যেভাবে আছে, সেরকম য়ুটোপিক এটা ব্যাপার এই রকম একটা দল থেকে এসেছে, সেটা কেবল 'বিশ্বাস' করে, কিন্তু চক্ষুশ প্রমান ওদের জুটে নি, যা মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা ছিল তাদের জুটেছিল।

মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের ভূমিকা অসামান্য; কিন্তু যুদ্ধটা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। বাংলার মানুষ তখন আওয়ামী লীগকে দেখেছিলো পাকিস্তানীদের দুঃশাসন থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে। অ্যান্ড দ্যাট'স অল। যুদ্ধটা আলটিমেটলি সাধারণ মানুষের। অতএব, আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা হারালেই মুক্তিযুদ্ধ একটি বাজে ব্যাপার হয়ে যাবে, এরকমটা হলে আমার মুখ থেকেও ওই কমেন্ট বেরোত না। আই ডোন্ট গিভ আ ফাক টু দ্য কারেন্ট আওয়ামী লীগ।

এমতাবস্থায় জামাত হোক বা মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, ওরা যদি নিজেদের তখনকার অবস্থান যে আসলে ভুল ছিল না, এটা জোর গলায় বলে, চ্যালেঞ্জ করে, তাহলে নতুন প্রজন্ম একটু থমকে দাঁড়াবেই। এটাকে বেনিফিট অফ ডাউট দিবে,

আপনি ব্যাপারটাকে রাজনৈতিক দলের তুলনামূলক আচরণ বিচারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিচার করেছেন। জামাত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করায় স্বভাবতই স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমে ভদ্র ছেলের অভিনয় করবে, বিনয়ে গলে পড়বে, বেহেশতের টিকিট বেঁচবে, এটাই স্বাভাবিক। এবং এজন্যই তাদের প্রকৃত রূপ মানুষের সামনে আসা দরকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের অবস্থান সঠিক ছিলো, তারা যুদ্ধাপরাধী না, এ কথা শুনলে নতুন প্রজন্ম থমকে দাড়াবে কথাটা পুরোপুরি সত্য; তবে সেটা তাদেরকে বেনিফিট অফ ডাউট দেয়ার জন্য নয়; ধর্মের লেবাস পরে তাদের জলজ্যান্ত মিথ্যা বলার প্রতিভা দেখে। জামাতের প্রকৃত রূপের সাথে নতুন প্রজন্মের পরিচয় খুব একটা নেই। তাদের এই স্টেটমেন্ট-এ সেই পরিচয়টাই পরিষ্কার হবে।

একটা অলটারনেটিভ, যেটা বোধ হয় আপনি বলতে চাইছেন, তা হলো, নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধ এসবকে একেবারেই থোড়াই কেয়ার করে, সবাই-ই সামী ইউসুফের পাগোল, অতএব, স্বাধীনতার বিরোধিতা করে মহান পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষায় জামাত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে সঠিক কাজ করেছিলো - এটাই তাদের ধ্যান-জ্ঞান, তাহলে বলতে হবে বাংলাদেশের এই নতুন প্রজন্ম পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেকুব প্রজন্ম। না ভাই, নতুন প্রজন্মকে এতটা বেকুব মনে হয় না। নির্লজ্জ মিথ্যাচারীকে বেনিফিট অফ ডাউট দেয়ার প্রশ্নই আসে না।

'গর্জে' উঠছে না বাঙালি অনেকদিন। পেটে ভাত না থাকলে 'গর্জানো' কঠিন। পাকিস্তানিরা তখন ভাত দিত না, বাঙালি ভাতের আশাতেই 'গর্জিয়েছে'।

আমি আগেই বলেছি, ভাতের সমস্যা নতুন না। এবং সে সমস্যার জন্য অতীতে আন্দোলন কখনো থেমে থাকেনি। বরং আন্দোলনের জন্য ভাতের সমস্যাও একটি পজিটিভ অনুঘটক। পেটে ভাত না থাকলেই মানুষ গর্জায় বেশি - ভাত থাকলে বরং ম্যান্দা মেরে যায়। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি এই সরকারের জামাতপ্রীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের গর্জানোকে আরো শক্তিশালীই করবে।

প্রশ্ন করা একদল হয়তো খুব দ্রুতই বের হয়ে আসবে, যারা ধার্মিকও না। হয়তো মানবিকতার দোহাই দিয়েই সমর্থন করবে ওই রাজাকারের হত্যার বিচারের।

ধর্ম আর রাজাকারকে আপনিও এক করে ফেলেছেন। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই ধার্মিক; কিন্তু রাজাকার কতোজন? আর রাজাকার সবাই কি ধার্মিক? অন্তত ইসলামকে মানলে কারো পক্ষে 'দেশদ্রোহীতা' করা সম্ভব?

ধর্মের নামে অধার্মিক জামাতিদের হায়েনার রূপ, চরম মিথ্যাবাদীর রূপটা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে অন্যদেরকে যতোটা বেগ পেতে হতো, জামাত নিজেরাই সেই কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে। কোনটা নির্লজ্জ মিথ্যা এটা শিশু এবং পাগোলেরাও বুঝে, হয়তো কিছু ছাগোল বুঝে না। সেই ছাগোলরা অবশ্যই নতুন প্রজন্মকে রিপ্রেজেন্ট করে না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধ এবং তার সংগ্রামকে এখন ঐতিহ্যে পরিণত করা হয়েছে। এটা আর জীবন্ত দৈনন্দিন প্রণোদনা বা কর্মসূচি হিসাবে নাই। আর সকল সময়ই মানুষ বর্তমানের নিরিখেই অতীতকে দেখে। আমাদে বাস যেহেতু বর্তমানে, সেহেতু এ প্রজন্ম বর্তমানের মুক্তিযোদ্ধাদের দেখেই অতীতের মুক্তিযুদ্ধকে দেখবে। তারপরও আমি আশাবাদী, তরুণ প্রজন্মের বড় অংশই একাত্তরের গণহত্যার বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের একটা সঙ্কল্পে জড়ো করতে হলে কেবল ঘৃণা দিয়ে হবে না। চিন্তা-বিশ্লেষণ, সঠিক তথ্য ও ইতিহাস দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধওয়ালারা তা করেন না। তারা কেবল নিজেদের বাহাদুরির কথা শোনান।
আর দ্বিতীয়ত ১৯৭১ কেবল আওয়ামী লীগের কাজ ছিল না, একটা পর্যায়ে মুক্তযুদ্ধের গতি আওয়ামী লীগের কাঠামোর বাইরে চলে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। তখনই তড়িঘড়ি ভারতীয় সেনারা এসে যুদ্ধ জয় করে দিয়ে গেল।
অচ্ছ্যুৎ বলাই ঠিক বলেছেন, পুরনো দ্বন্দ্ব নতুন করে আসায় মানুষের কাছে সব পরিস্কার হবে।
তবে এটা তো বোঝা গেল, আওয়ামী লীগ গর্তে পড়লে মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ রব করে আর করে ভোটের আগে। আর একদল যেমন ধর্মের আড়ালে আশ্রয় য়ে অগণতান্ত্রিক সরকার তেমন এখন আশ্রয় নিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের আড়ালে।
তবে মোড় যেভাবে ঘুরছে, তাতে এটা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সংঘাতের ঘোলাজলে মাছ শিকার করার কৌশল। এখন মাছটা কী এবং শিকারি কারা তা বুজলে কাজ কিছুটা এগোয়। কেবল গালিগালাজ করলে ওটা তো ধরতে পারবো না।

::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।