একুশের শহীদ মিনার: বিশ্বের সবচেয়ে বন্দিত ও জনপ্রিয় সেক্যুলার স্থাপত্য

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: সোম, ২৩/০২/২০০৯ - ৪:৪২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কোনো এক মফস্বল শহরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত তিনটা। ভাই-বোন বেরিয়েছে রাতের অভিযানে। ভাইটি সাত আর বোনটি কেবল চার। আজ রাতে তারা চুরি করবে ফুল। পাড়ায় প্রতিবেশীদের মধ্যে গাঁদা আর গোলাপের বাগান আছে তিনটি বাড়ীতে। বাড়ীর সামনের চত্বরে এক চিলতে বাগান। তাতে কটি ফুলই বা জোটে? বেড়া ডিঙ্গিয়ে, হাঁটু ছিলে, আঙ্গুলে কাঁটা ফুটিয়ে ভাইটি বৃন্ত থেকে একটি একটি করে ফুল ছোটায় আর বোনটি ফ্রকের কোলে তা জমায়।
শিউলি তো এমনিতেই পথের পাশে পড়ে থাকে। প্রতিদিন ভোরে ওরা সেসব ঝরা শিউলি কুড়ায়। কিন্তু একুশের মালা কি কেবল কুড়ানো শিউলিতে হয়? তাই-ই এই ফুল চুরির অভিযান।
সারাদিন ধরে ওরা আর রুমন, ময়না, খোকন, জিয়া, নোটন মিলে বাড়ীর সামনের খেলার জায়গায় বাঁশের বাতা দিয়ে শহীদ মিনার গড়েছে। আজ ২১শের ভোরে তাতে ফুলমাল্য দেওয়া হবে। কে কার থেকে ভাল মালা বানায়, চলবে তারও অঘোষিত প্রতিযোগিতা। তা-ই ভয়ে ভয়ে মধ্যরাতে ফুল চুরি করতে আসা।
দৃশ্য দুই: ২০০৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারির বিকাল। মগবাজার রেললাইন বস্তির পাশের পুকুর পাড়ে পাঁচ/ছয়টি শিশু ইট দিয়ে বানানো কী একটা জিনিষের ওপর পলিথিন ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। শীতের বৃষ্টি ঝরছে, সঙ্গে দমকা বাতাস। ওরা কাঁপছে, ওরা ভিজছে। তবু পালা করে মশারির মতো চারদিকে চারজন বৃষ্টির ঝাপটা থেকে জিনিষটাকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই চালাচ্ছে। সেই বিকাল থেকে। ওমা! এটা দেখি একটা শহীদ মিনার। ধার করে আনা ২৪টি ইট আর কাদামাটি দিয়ে ওরা বানিয়েছে ২০০৮ সালের একুশের প্রথম শহীদ মিনার।
বায়ান্নর রক্তমাখা ২১ ফেব্রুয়ারির পরদিন ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ নানান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা একুশের প্রথম স্মৃতি স্তম্ভ বানিয়েছিল। মগবাজার রেললাইন বস্তির পাঁচটি শিশু সেভাবেই মনের মুকুরের ভালবাসায় বানিয়েছে নতুন এক শহীদ মিনার। ইতিহাসের কী অমোঘ কাকতাল! ৫২-এর ২২ ফেব্রুয়ারিতে বানানো প্রথম শহীদ মিনার চার দিনের মাথাতেই বর্বর পুলিশি দাপটে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল। আর ২০০৮-এ পলাশ-সালমা-সজল-কালু-আলী আকবরদের ইট-কাদায় বানানো শহীদ মিনারের দাঁড়িয়ে থাকা বরবাদ করে দিল সন্ধ্যার পরের ঝড়। তবু ওরা থামেনি, শুনেছি সেখানে আজ আবার মাথা তুলবে আরেকটি নতুন শহীদ মিনার।

ঠিক এভাবেই বাংলার অজস্র কিশোর-তরুণদের উদ্যম ও ভালবাসায় প্রতি একুশের ভোরে বাংলার মাটিতে মাথা তোলে হাজার হাজার নতুন শহীদ মিনার। হোক তা ক্ষণিকের, কিন্তু যারা বানায় তাদের কাছে এর মূল্য অসীম। কিশোর-কিশোরীদের হাতে গড়া জাতীয় শহীদ মিনারের আদলের এ আনাড়ি স্থাপত্যই প্রমাণ, শহীদ স্মৃতি আজো অমর আজো অমলিন। ৫৬ বছরে তার ধার কিছুমাত্র ক্ষয় হয়নি।

দৃশ্য তিন: চাকুরে বাবা-মা একুশের ছুটিতে গ্রামে যাবার তোড়জোড় করছেন। ওদিকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়া আদিবের মন ভীষণ খারাপ। সইতে না পেরে একসময় সে বলেই ফেলল, ''বাবা, তাহলে কাল আমার শহীদ মিনারে ফুল দেয়া হবে না?'' মুহূর্তেই বাবা-মায়ের দুজোড়া হাত থমকে গেল। বাবা পরক্ষণেই বলে ফেললেন, ''না বাবা, আমাদের গ্রামেও তো শহীদ মিনার আছে। তুমি যেখানেই যাবে, সেখানেই শহীদ মিনার!''

এ এক বিষ্ময়, বাংলাদেশের যেখানেই যাও সেখানেই শহীদ মিনার! শহর তো দূরের কথা শহীদ মিনারহীন কোনো গ্রাম বাংলাদেশে আছে কি-না সন্দেহ। দেশে বা বিদেশে যেখানেই বাঙালির আস্তানা, সেখানেই মাথা তুলেছে একটি বা দুটি বা অনেক কটি শহীদ মিনার। ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটের আলতাব আলী পার্কে দাঁড়িয়ে আছে জাতীয় শহীদ মিনারের আদলের একটি শহীদ মিনার। লন্ডনের ওল্ডহ্যামেও তৈরি হয়েছে আরেকটি শহীদ মিনার। প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে বরফ পড়া শীতের মধ্যে নিউইয়র্কের জাতিসংঘ প্লাজা ও ইস্ট রিভার নদীর তীরে বাংলাভাষীরা জড়ো হয় শহীদস্মৃতির সম্মানে। এরকম আরো আছে। বাংলাদেশ যদি শহীদের দেশ হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ শহীদ মিনারেরও দেশ। এ সত্য রটতে আর বাকি নেই।
এর থেকেও বড় সত্য, পৃথিবীতে আর কোনো দেশে আর কোনো জাতীয় ঘটনার স্মরণে এত বেশি সেক্যুলার স্থাপত্য নির্মিত হয়নি। উপাসনা কেন্দ্র ছাড়া আর কোনো সাংস্কৃতিক প্রতীককে এত বেশি ভালবাসা ও বন্দনা দেয়নি কোনো জাতি। এ বোধ হয় আজ বিশুদ্ধ বিশ্বাসে বলা যায়।
পশ্চিমা দুনিয়ায় সবচেয়ে নন্দিত সাংস্কৃতিক স্থাপত্য আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের স্ট্যাচু অব লিবার্টি। কিন্তু এটি এক ও অনন্য। কিন্তু বাংলাদেশের ভালবাসার শহীদ মিনার একটি ও অনন্য হলেও গ্রামে-গঞ্জে, স্কুল-কলেজে, পার্কে-উদ্যানে এর যত প্রমাণ আকারের অনুকৃতি হয়েছে তার সঙ্গে তুলনীয় আর কিছু নাই।
আরেক দিক থেকেও শহীদ মিনার অতুলনীয়। শহীদ মিনার আমাদের সংস্কৃতির মানবিকতা-অসাম্প্রদায়িকতা ও অন্যায় বিরোধিতার জীবন্ত প্রেরণা। তাই প্রতিবাদের প্রয়োজনে, শোকের নীরবতায়, বিজয়ের উদযাপনে মানুষ ছুটে আসে দেশব্যাপী ছড়ানো সকল শহীদ মিনারের পদতলে। কী রাজনৈতিক সভা কী সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান আর কী জাতীয় বীরদের অন্তিম শ্রদ্ধাপ্রদর্শন; সব ক্ষেত্রেই শহীদ মিনারের বেদীতলই প্রিয় ও পবিত্র স্থান। এভাবে দিনে দিনে শহীদ মিনার স্মৃতির মিনার থেকে হয়ে উঠেছে অসাম্প্রদায়িকতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী চেতনার প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের সম্মানে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধের সঙ্গে এখানেই এর ফারাক। জাতীয় স্মৃতিসৌধ স্মৃতির প্রতীক, আর শহীদ মিনার চেতনাকে শাণিত করার মঞ্চ। একটি অতীত অন্যটি নিত্য বর্তমান। জাতীয় স্মৃতিসৌধ রাষ্ট্রিক, শহীদ মিনার সামাজিক।
দেশের প্রতি দশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাতটিতেই শহীদ মিনার মিলবে। সরকারি হিসাবে দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে ২,৮২৮০৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, থানা ও ইউনিয়নের মিলিত সংখ্যা ৫৯৪৭টি। এসবের সত্তর শতাংশেও যদি শহীদ মিনার স্থাপিত হায়ে তাকে তাহলে বাংলাদেশে শহীদ মিনারের আনুমানিক সংখ্যা প্রায় দুই লাখেরও বেশি। পাড়া-মহল্লার কাবগুলোর সামনেও শহীদ মিনার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ এবং ১৬ ডিসেম্বরে এসব মিনারে এলাকাবাসীরা পুষ্পমাল্য দিয়ে ভালবাসা জানায়। একুশের প্রভাতে দেশব্যাপী ছাত্র-তরুণেরা আবেগ ও ভালবাসা ঢেলে ইট বা বাঁশ দিয়ে ণিকের জন্য হাজার হাজার শহীদ মিনার সৃষ্টি করে। এভাবেই তারা একুশের চেতনাকে জাগ্রত রাখে জনগণের হৃদয়ে এবং সমাজের মূল্যবোধে। সেই বায়ান্ন থেকে একাত্তরে যেমন আজো তেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং তরুণ শিক্ষার্থীরাই ছিল গণতান্ত্রিক ও মানবিক সংস্কৃতি ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠার অগ্রণী লড়াকু। আজো তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীরাই একুশের বিশ্বস্ত আশ্রয় হয়ে আছে। এখনও দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় তারা শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছে। এরই মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মেনে নিয়ে সেখানকার প্রশাসন দেশের সব থেকে উঁচু শহীদ মিনার গড়া শেষ করেছেন কয়েক দিন আগে।
শহীদ মিনার পূর্ব-বাংলার রেঁনেসার প্রাণভোমরা। পশ্চিমে (পশ্চিমবঙ্গ ও পাশ্চাত্য উভয়ই) রেনেসাঁ ও এনলাইটেনমেন্টের প্রতীক ব্যক্তিপুরুষ। যেমন পেত্রার্ক, ভলতেয়ার, রুশো বা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর প্রমুখ। পূর্ববাংলায় ৫০ এর দশকেও ব্যক্তির থেকে সমাজ বড় ছিল। তাই ব্যক্তি ধরে নয়, একেকটা আন্দোলনই আমাদের রেনেসাঁর একেকটি ধাপ। তাই আমাদের প্রথম আলোকদীপ্তিই বলি আর প্রথম সেক্যুলার জাগরণই বলি সেটা ৫২, ৬৯, ৭১ হয়ে বয়ে চলছে। ব্যক্তি এখানে মুখ্য নয়, জাগ্রত জনগণের বলিষ্ঠ প্রতিবাদই আমাদের আত্মপ্রকাশের দলিল। পৃথিবীতে এমন ঘটনাও দ্বিতীয়টি নাই।

১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সৈন্যরা দেশের সব শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলেছিল। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলার সময় তারা দম্ভ করে বলেছিল, ''হার ঘর শহীদ মিনার বানা দেঙ্গা''। অর্থাত প্রতিটি ঘরকেই শহীদ মিনার বানিয়ে দেব। হ্যাঁ, তারা প্রায় প্রতিটি ঘরেই কাউকে না কাউকে শহীদ করেছিল। আর সেই শহীদদের উত্তরসূরীরা প্রতিটি প্রাঙ্গনে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে স্থায়িভাবে, এমনকি যার যার আঙ্গিনায় ক্ষণিকের জন্য হলেও একটি করে শহীদ মিনার বানিয়ে জবাব দিয়েছে, ''আমাদের প্রতিটি ঘরেই শহীদ, আমাদের প্রতিটি প্রাঙ্গনেই শহীদ মিনার।''

** গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে প্রথম আলোর বিশেষ একুশের প্রতিবেদন হিসেবে প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত।


মন্তব্য

নজমুল আলবাব এর ছবি

আগে পড়া হয়নি। আজ পড়লাম। ভালো লাগলো। অন্যরকম ভাবনার লেখা।ি নজেরে অহংকার করতে শেখায়।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমাদের অর্জনগুলো সম্পর্কে আমরা সজাগ নাই বলেই দিনে দিনে তা ফিকে হয় বা বেহাত হয়ে যায়।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

খুঁজলে দেখা যাবে, স্কুল কলেজে পড়ার সময়ে আমাদের সবার-ই একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফুল চুরির অভিজ্ঞতা আছে। আর এই চুরির কথা আমরা পরে ফলাও করে বলেছি, তা নিয়ে গর্ব কুড়িয়েছি।

চিন্তিত এর ছবি

ভাষা আন্দোলন খুব বড় কথা। কিন্তু এই যে খালি পায়ে একটা সিমেন্টের স্তুপে ফুল দিয়ে পৌত্তলিকতার সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা, দেশের বিপুল অধিকাংশ ধর্মপ্রাণ মুসলমান তাকে কীভাবে মেনে নেবে? ভাষা আন্দোলনের পরে ৫৭ বছর পেরিয়ে গেছে। এখনো দরিদ্র মানুষের কাছে ২১ ফেব্রুয়ারীর কোন আবেদন নেই। আপনি সম্ভবত অতিরিক্ত নগরকেন্দ্রিক মানুষ। সেকুলার শব্দটাকেই মানুষ শত্রু মনে করে। অন্যদিকে ক্রিটিক্যাল জাজমেন্টে গেলে দেখবেন শহীদ মিনার সংস্কৃতি কতটা সেকুলার তা অত্যন্ত প্রশ্নসাপেক্ষ।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

জনাব চিন্তিত,

শহীদ মিনার সংস্কৃতি কেন সেকুলার নয় একটু ঠিকঠাক মতো বুঝিয়ে বলবেন কি?



অজ্ঞাতবাস

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনার কথার স্পিরিটটা ধরতে পেরেছি মনে হয়। তাই আগাম ঐকমত্য জানাচ্ছি। দেশের অধিকাংশ ধর্মপ্রাণ মুসলিম এটাকে তাদের ধর্মভাবের সমস্যা যদি বোধ করতো, তাহলে শহীদ মিনারের সংখ্যা না বেড়ে বরং কমতো। কিন্তু তা বাড়ছে।
এদেশের মুসলমানদের বিরাট অংশই কিন্তু আপনার ভাষায় পৌত্তলিক ছিল ও আছে, কেননা তারা একটা সময় পর্যন্ত মাজার পূজা করেছে এখনও করে।
শহীদ মিনার, সেক্যুলারিটি এসব জাতীয়তাবাদী উনিশ শতকীয় প্রগতির আখ্যান। এখন মধ্যবিত্ত সমাজেই এর প্রচলন। কিন্তু মধ্যবিত্তীয় বলেই সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক হিসেবে গুরুত্ব খর্ব হয় না। জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক আনতে গেলে প্রতীক লাগবেই। সেদিক থেকে শহীদ মিনার নিরাপদ। কেননা এ প্রতীককে কোনোভাবেই আধিপত্যের জন্য ব্যবহার করা যায় না। যেটা অনেকসময় স্বাধীনতার প্রতীকগুলোকে করা গেছে। ৫২-তে অনেক জায়গায় ছাত্র-শ্রমিক-কৃষকের ঐক্য হয়েছিল। বদরুদ্দীন উমরের তিন খণ্ডের ইতিহাসে তার বিবরণ রয়েছে। কিন্তু আজ গরিবরা এই প্রতীকে আন্দোলিত হয় না, কারণ প্রতীক ও অধিকার দুটোই তাদের হাতছাড়া। আমার বক্তব্য এই যে, সবচেয়ে জীবন্ত প্রতীক হিসেবে ২১ ও তার মিনারকে আমাদের আবার অধিকার করে নেবার দরকার আছে। বিশেষত কর্পোরেট সংস্কৃতির আগ্রাসন ও সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের এই যুগে। তার মানে এটাই প্রধান প্রতীক হবে তা নয়। ভাষা আন্দোলন মূলত মধ্যবিত্ত সমাজের আন্দোলন হলেও তার মধ্যে কৃষক সমাজের স্বার্থও জড়িত ছিল। জাতীয় ভাষার প্রতিষ্ঠা জাতির সকলকেই কমবেশি লাভবান করে।
সেকু্লার শব্দকে মানুষ শত্রু মনে করে, বা বন্ধু মনে করে, এ দুটোই গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ। আদতে বিভিন্ন অংশের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকম মত রয়েছে। তবে ৩শ বছরের সেকুলারিজমের অভিজ্ঞতা বলছে, বুর্জোয়া-ইওরোপীয় সেক্যুলারিজম থেকে সেক্যুলারিটিকে আলাদা করে নিতে হবে। এটা আজ প্রগতির বাহন নয়, অনেক ক্ষেত্রেই দখলদারদের অস্ত্র, সাম্রাজ্যের ত্রিশূল। কিন্তু তাই বলে মানুষকে তার নিজের বিচারে, পৃথিবীকে জাগতিক-মানবিক বিষয় হিসেবে দেখবার সেকু্লারিটি আমাদের ছাড়তে হবে। মুঘলরা ধর্মবিরোধী না হয়েও সেকুল্যার রাষ্ট্র চালিয়েছে।

আর পৌত্তলিকতা যদি বলেন, সে তো পশ্চিমমুখে নামাজ পড়া, ব্র্যান্ডকে ভালাবাসা, প্রিয় লেখকের ছবি রাখা, জাতীয়তাবাদের নামে গদগদ হওয়া থেকে শুরু করে আমাদের যে তীব্র আত্মপ্রেমের সংস্কৃতি, তা কি?

বাকি কথা পরে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

চিন্তিত এর ছবি

ধন্যবাদ ফারুক ওয়াসিফ। আপনার জবাবটি সুচিন্তিত হলেও স্ববিরোধীতাপুর্ন। শুরুতে আপনি আগাম সহমত জানিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত তালগাছটি নিজের হাতে রেখেদিয়েছেণ। আপনি শুধু আপনার তথাকথিত আধুনিকতায় শেখা আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের কথা ভাবছেন। এই ভাবনাটা হচ্ছে সেকুলারিজমের মা। মাজার পুজা এদেশে এখনো আছে কিন্তু আপনাদের ভাষায় মৌলবাদী ধারার ওলেমা মাশায়েখদের তৎপরতার কারনে নিম্নবর্গের মানুষ এইসব থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে। আপনি সঠিকভাবেই উনিশ শতকীয় প্রগতির কথা বলেছেন কিন্তু এই মন্তব্যে

আমার বক্তব্য এই যে, সবচেয়ে জীবন্ত প্রতীক হিসেবে ২১ ও তার মিনারকে আমাদের আবার অধিকার করে নেবার দরকার আছে।

নিম্নবর্গের মানুষের মৌলবাদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া কে মনোযোগের কেন্দ্রে না রেখে পুনরায় সেই তথাকথিত প্রগতির কাছে ফিরে গেলেন। তারপর সেকুলারিজম-সেকুলারিটিকে আলাদা করে দুর্বোধ্য প্রপঞ্চ সৃষ্টি করলেন। আবার মুঘলদের খানিক সাফাই গাইলেন।

আর সবশেষে যা বললেন ,

আর পৌত্তলিকতা যদি বলেন, সে তো পশ্চিমমুখে নামাজ পড়া, ব্র্যান্ডকে ভালাবাসা, প্রিয় লেখকের ছবি রাখা, জাতীয়তাবাদের নামে গদগদ হওয়া থেকে শুরু করে আমাদের যে তীব্র আত্মপ্রেমের সংস্কৃতি, তা কি?

এতো জাগতিকতার নামে পৌত্তলিকতার সাফাই।

গ্রামের মানুষ সেকুলারিজম বিরোধী এটা স্বীকার করেছেন সেজন্য ধন্যবাদ। কিন্তু যার বয়ানের কাঠামো সেকুলার তার বাহাস লোকে কেন শুনবে?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমার মনে হয় আমি আপনার ফোকাসটা ধরতে পারছি। স্বভাবত:ই তাতে তীব্র মতানৈক্য জানাচ্ছি। আপনার শহীদ মিনার বিরোধীতার মূলে যে রাজনীতি রয়েছে তা কিন্তু রাজনীতির যেকোন প্যারমিটারের বিচারে, অন্তত বাংলাদেশে বিশেষভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে তার গ্রহনযোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ। লোক-সংস্কৃতিতে পৌত্তলিকতার যে উপাদানগুলি রয়ে গেছে তাঁর বিরুদ্ধে লোকসমাজে মৌলবাদী জোয়ার সৃষ্টি হলে দেশে আর কোন শহীদ মিনারই থাকতো না। যে যুক্তিতে ২০০৮ এর নির্বাচন ইসলামবিরোধী গণজোয়ার নয়, সেই একই যুক্তিতে ২০০১ এর নির্বাচন ইসলামের পক্ষে গণজোয়ার নয়। কিন্তু এই দুটি নির্বাচন প্রমাণ করছে নির্বাচনী রাজনীতিতে জনগণের অংশগ্রহণ এবং ভোটের মাধ্যমে পূর্ববর্তী ক্ষমতাসীনদলকে প্রত্যাখ্যানের ইহজাগতিক প্রক্রিয়াটির লোকসমাজে অস্তিত্ব থাকার কথা। সার বা বিদ্যুতের মতো প্রবল ইহজাগতিক বিষয়ে প্রান্তিক মানুষদের যেভাবে যে ধরনের অংশগ্রহন দেখা যাচ্ছে, লালনের ভাস্কর্যে দড়ি বেঁধে টানাটানি করতে কিন্তু সেই পরিমান মানুষকে দেখা যাচ্ছে না। শ্রমিক আন্দোলনে তো মৌলবাদীদের টিকিটাও দেখা যায় না। শুধুমাত্র সাবোট্যাজ ছাড়া আর কোন ধরনের কাজে, অন্তত বাংলাদেশে, মরতে দম সেকুলারিজম বিরোধীদের কোন রকম অংশগ্রহন কোয়লিটেটিভ/কোয়ান্টিটেটিভ কোন মেথডেই প্রমাণ করা অসম্ভব। আপনার কথার বিপরীতে আমি বরঞ্চ প্রান্তিক মানুষের জীবনের অনুশীলনেই সেকুলারিজমের প্রবল গ্রহনযোগ্যতা দেখতে পাচ্ছি। আমার মতে গ্রামসী কপচে মৌলবাদের সামাজিক ভিত্তি প্রমাণ করতে চাওয়ারাই বরং গণবিচ্ছিন্ন এবং কল্পনাবিলাসী।



অজ্ঞাতবাস

গৃহান্তরী এর ছবি

জনাব চিন্তিত, আপনার প্রথম বক্তব্য লেখক ফারুককে একটা প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে উদ্বুদ্ধ করেছে, এটা ঠিক। কিন্তু পরের মন্তব্য দেখে বোঝা হল আপনি ধর্মপ্রাণ মুসলমান আর ভাড়াটে মৌলবাদীদের এক কাতারে গুলিয়ে ফেলছেন, যেটার জবাব সুমঞ্চৌধুরী দিয়েছেন। সাঈদীর ওয়াজ মাহফিলে যে লক্ষ লোকের সমাবেশ হত, সেটা আমি নিজের চোখে দেখেছি ৯০ দশকে, নিজেও ভিড় ঠেলাঠেলি করে আখেরী মোনাজাতে যোগ দিয়েছি, বিশাল জামাতে নামাজ পড়ার সোয়াবের ভাগী হয়েছি। সেটার কার্যকারণের কিছু ব্যাখ্যা বোধ হয় পাচ্ছি আপনার বক্তব্য থেকে।

ফারুকের বক্তব্যে -

জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক আনতে গেলে প্রতীক লাগবেই।
সহমত। শহীদ মিনার ঐ ঐক্যেরই প্রতীক হয়ে কাজ করেছে সব সময়ে, ওটাকে বুর্জোয়া সেকুলারদের দখলে পুরোপুরি ছেড়ে দেয়া থেকে বাচাতে হবে তাই। আর তাদেরই দোসর জামাতীরা যখন মাঠের আরেক কোণায় চিল্লাপাল্লা করে শরিয়ত গেল গেল কৈরা, ওদেরও গলা চিপে ধরতে হবে একই সাথে।

আর পৌত্তলিকতা যদি বলেন, সে তো পশ্চিমমুখে নামাজ পড়া, ব্র্যান্ডকে ভালাবাসা, প্রিয় লেখকের ছবি রাখা, জাতীয়তাবাদের নামে গদগদ হওয়া থেকে শুরু করে আমাদের যে তীব্র আত্মপ্রেমের সংস্কৃতি, তা কি?

হ্যা, সেটাই। আর সব পৌত্তলিকতারই তো ইহজাগতিক কার্যকারণ আছে।

(অফটপিকঃ সুমন চৌধুরী, নামের বানানে রাগ করেননি নিশ্চই, সুমঞ্চৌধুরী মনে হল আপনারই করা ব্লগীয় মিনিমালিস্ট বানান। আজকাল আবার লোকজন কথায় কথায় রাগ করেন কিনা!)

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

সুমন চৌ্ধুরীর মন্তব্যে (গুল্লি )
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

গৃহান্তরী এর ছবি

এভাবে দিনে দিনে শহীদ মিনার স্মৃতির মিনার থেকে হয়ে উঠেছে অসাম্প্রদায়িকতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী চেতনার প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের সম্মানে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধের সঙ্গে এখানেই এর ফারাক। জাতীয় স্মৃতিসৌধ স্মৃতির প্রতীক, আর শহীদ মিনার চেতনাকে শাণিত করার মঞ্চ। জাতীয় স্মৃতিসৌধ রাষ্ট্রিক, শহীদ মিনার সামাজিক।

ব্যক্তি এখানে মুখ্য নয়, জাগ্রত জনগণের বলিষ্ঠ প্রতিবাদই আমাদের আত্মপ্রকাশের দলিল। পৃথিবীতে এমন ঘটনাও দ্বিতীয়টি নাই।

চলুক

রণদীপম বসু এর ছবি

জনাব চিন্তিত'র মন্তব্য পড়ে আমিও খানিকটা চিন্তিত। ফারুক ওয়াসিফ বা সুমন চৌধুরী'র মতো এতো গভীর থেকে না দেখে এক্কেবারে উপরতলে ঘটে যাওয়া প্রাত্যহিকতাগুলো মধ্যে কিছু পুরনো প্রশ্ন ফের আমার মনে এলো জনাব চিন্তিত'র কল্যাণে।
প্রশ্ন ক'টা চিন্তিতকে-
১.০ আপনি কি ফুল ভালোবাসেন ? কেন ?
২.০ আপনি কি কখনো কোন প্রিয়জন বা শ্রদ্ধেয় কাউকে ফুল দিয়েছেন ? কেন ?
৩.০ কাউকে ভালোবেসে বা শ্রদ্ধায় ফুল দেয়া কি পৌত্তলিকতা ?
৪.০ পুজা অর্থে পৌত্তলিকতাকে ধরে নিলে ভালোবাসা এবং পুজার মধ্যে কি কোন তফাৎ নাই ?

আপাতত এ দিয়েই শুরু করা যাক্ । প্রশ্ন আরো অনেক রয়েছে। একে একে তা আপনার কাছ থেকে জেনে নেয়ার চেষ্টা করবো....

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নদী এর ছবি

প্রশ্নগুলো অসাধারণ। মনের কোঠায় রেখে দিলাম।

নদী

তানবীরা এর ছবি

রনদা, যেকোন কারনেই হোক চিন্তিত গোষ্ঠীকে আমি ভালো চিনি। আমি সেই গোষ্ঠীর হয়ে আপনাকে উত্তর গুলো দিচ্ছি।

১. ফুল কোন ভালো বাসার জিনিস না। বেহুদা জিনিস, পুংগটা পুলাপাইনের ব্যাপার। তাই ফুল ভালো বাসি না। বেহেস্তী ফুল যখন দেখপ, তখনকার কথা আলাদা।

২. ভালো বেসে কাউকে কখনও ফুল দেই নাই, এটা দিয়া কি কাম হইব? ভালো বেসে উপহার দিতে হয় তজবী, কোরান এর উন্নত কপি নিদেন পক্ষে জায়নামায বা টুপী

৩. অবশ্যই পৌত্তলিকতা। ফুলটা কি মৃত ব্যাক্তির কোন কাজে আসে? কবর জিয়ারত করেন ঘরে বসে তেলাওয়াত করেন মৃত ব্যাক্তির পানাহের জন্য আল্লাহার দরবারে কান্নাকাটি করে মাফ চান কাজে আসবে।

৪. না নাই, দুইটাই বেদাতী কাম।

পরিশেষে, গায়ে হলুদ, পহেলা বৈশাখ, স্বাধীনতা - বিজয় দিবস এগুলা জনগনের কি কামে লাগে শুনি? পালন করবেন মহরম, ইজতেমা, রমজান, ঈদে মিলাদুন্নবী। দুজাহানের অশেষ ছোয়াব হাসিল হবে।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

এনকিদু এর ছবি

লেখা খুব ভাল লেগেছে, ফারুক ভাই ।

প্রতীক ছাড়া যদি পৃথিবীর সবকিছুকেই প্রকাশ করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে আর কিছুই প্রকাশ করা যাবে না ।

এই যে লিখলাম, "ক" । ত্রিভুজের সাথে আরো কিছু সরল রেখা বক্ররেখা মিলে যে একটা ধ্বনিকে বুঝাচ্ছে, কেউ শিশুকালে (অথবা বুড়োকালে) না শিখিয়ে দিলে কারো সাধ্য নাই দেখেই বুঝবে যে এটা 'ক' ধ্বনির প্রতীক । আমাদের সামাজিকীকরন থেকে আমরা জানি যে এটা 'ক' ।

প্রতীক এর উপর ভিত্তি করেই আমাদের বুদ্ধিমত্তা, সভ্যতা, সংস্কৃতি - সব কিছু । প্রতীক ব্যবহার করলেই যদি পৌত্তলিক হয়, তাহলে আমরা এমনিতেও পৌত্তলিক ওমনিতেও পৌত্তলিক । এটা কেউ মানুক আর নাই মানুক । এটা নিয়ে লজ্জিত হওয়ার কিছুনাই । আমার দুইটা হাত আছে এই জন্য তো আর আমি লজ্জিত না । তাহলে আমার বুদ্ধিমত্তার মডেলটা প্রতীক ভিত্তিক - এখানে লজ্জা কেন পেতে যাব ?


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

সাজেদ এর ছবি

পোস্ট ভারীদার হইছে।
আচ্ছা আপনি না কইছিলেন, ইন্ডিয়া নিজেরাই মুম্বাই এর সেই এ্যাটাকে ইনভলব্‌, স্যাবোটাজ আরকি। কিন্তু পাকিস্তান এখন কইতাছে তারা বাঙলাদেশী কয়েকজন ইসলামী বিপ্লবীরে নিয়া নিজেরাই কান্ডটা ঘটাইছে - এ ব্যাপারে আপনার আপডেটটা জানতে মঞ্চায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ব্যক্তি ধরে নয়, একেকটা আন্দোলনই আমাদের রেনেসাঁর একেকটি ধাপ। তাই আমাদের প্রথম আলোকদীপ্তিই বলি আর প্রথম সেক্যুলার জাগরণই বলি সেটা ৫২, ৬৯, ৭১ হয়ে বয়ে চলছে।

অসাধারণ

---আশফাক আহমেদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।