একটি দুর্ঘটনা অতঃপর

বন্দনা এর ছবি
লিখেছেন বন্দনা [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ১২/০৫/২০১১ - ৭:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চেতনার গভীর থেকে বণ্হি জেগে উঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে।কিন্তু বারবার যেনো আর ও গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে।কিছুতেই যেনো আর জেগে উঠবেনা সে।চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করলো মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোকের দুহাতের মাঝে।কি হচ্ছে বুঝে উঠতে পারছেনা। কিন্তু সহজাত প্রবৃওি থেকেই বোধকরি লোকটাকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলো আর আনমনে বলতে লাগলো আমাকে ছেড়ে দিন, আমি ঠিক আছি।কিন্তু লোকটা তাকে বলছে মা আমি তোমাকে কাশেম ভাই এর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি, ভয়ের কিচ্ছু নাই। কি হয়েছে আ্মার, এক মুহূর্তের জন্য ওর কাছে মনে হল লোকটাকে জিজ্ঞেস করি।কিন্তু কেনো যেন আর জিজ্ঞেস করা হোলনা।এত ক্লান্তি লাগছে কেনও তার।আস্তে আস্তে সে লোকটাকে চিনতে পারলো, ওর স্কুল এর ক্লাসমেটের বাবা।ওদের এই-গলিতেই কোনও একটা বাড়িতে থাকেন । বণ্হি তার শরীরের ভার ছেড়ে দিলো চাচার হাতে।তাকে নিয়ে শুইয়ে দেয়া হলো কাশেম চাচাদের বাড়িতে। ক্লান্তিতে ওর চোখ বুজে আসতে চাইছে বারবার, আশপাশে কি হচ্ছে দেখতে ইচ্ছে করছেনা।কতক্ষণ সময় গিয়েছে তাও বলতে পারবেনা,বিছানার পাশে সে পাড়ার ডাক্তার চাচাকে দেখতে পেলো। আর ও দেখলো ওর পাড়ার একজন স্যারকে যার কাছে ও পদার্থবিদ্যা পড়তো।ওর মাথায় আসলোনা স্যার এখানে কি করছেন। ডাক্তার চাচা ওর পায়ে হাত দিতেই বণ্হি একটু ককিয়ে উঠলো।এতক্ষণ পরে সে নিজের পায়ের দিকে তাকালো,রক্তাত্ত পায়ে রক্তের বহমান ধারা দেখে অজান্তেই নিজের চোখ সরিয়ে নিল সে। রক্ত, কাটা ছেড়া বরাবরই ওর ভয় লাগে। ডাক্তার চাচা বুঝতে পেরেছেন কিনা জানেনা বণ্হি, তবে ড্রেসিং করার সময় অযথায় এটাসেটা বকে ওকে অন্যমনস্ক করে দিলেন। ড্রেসিং শেষে বললেন তেমন কিছুই হয়নাই, তবু ও কাল একটা এক্সরে করিয়ে নিতে বলে খসখস করে প্রেসক্রিপশন লিখে যেতে লাগলেন।এই ফাঁকে বণ্হির সেই স্যার বললেন ও আমার মেয়ের মতো কোন ও সমস্যা নাই,ওর সবকিছু আমরা দেখবো।এর মাঝে কে যেনো বণ্হির বাসায় খবর দিয়েছে ততক্ষণে। ওর বাবা, বর্ষা আপু আর ছোট ভাইয়ের ছাই-মাখা পাংশু মুখগুলোকে পাশেই দেখতে পেলো ।আশেপাশে অনেক অপরিচিত মুখ, বণ্হির কোন কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা,শুধু বললো বাসায় যাবো।হাটতে পারছিলোনা,সবাই মিলে কোনোরকম রিকশায় উঠিয়ে দিলো। বাসার সামনে নেমে ওর ছোটো ভাই বণ্হিকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠে এলো। রুমে ঢুকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। উৎকণ্ঠিত মুখে মা এসে পাশে বসলেন।সবার একটাই প্রশ্ন কিভাবে কি হলো। বণ্হি নিজে ও কি জানে পুরোটা।

মাকে বললো মা ড্রেসটা চেঞ্জ করবো, গা ঘিন ঘিন করছে।ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় এসে সটান শুইয়ে পড়লো।শারীরিক যন্ত্রণা ও মানসিক কষ্টের কাছে কেমন মিইয়ে গেছে। ওর সমস্ত চেতনা জুড়ে শুধু বিশ্রী একটা অবসাদ।এর মাঝে সেই স্যার এলেন তার এক বন্ধুকে নিয়ে।উনি এসেই পরিচয় করিয়ে দিলেন উনার বন্ধু অমিও বুয়েট থেকে পাশ করা মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার।উনার গাড়ির সামনে পড়েই না আজকে বণ্হির এই দুর্ঘটনা।উনার ছোটো ভাই ড্রাইভ করছিলো, দুর্ভাগ্যবশত ব্রেকে একটু সমস্যা হওয়াতে গাড়ি ব্রেক-ফেল করে দেয়ালে বারি মারছে। বণ্হি পড়ে গেছিলো দেয়াল আর গাড়ির মাঝে। এতক্ষণে স্যার এর এইখানে আসার মাজেজা বুঝতে পারলো সবাই।উনারা অনেক দুঃখ প্রকাশ করে চলে গেলেন। বণ্হি মাকে বললো মা আমি ঘুমাবো, ভালো লাগছেনা। মা বললো কিছু খেয়ে নে তারপর ঔষধটা খেয়ে শুয়ে পড়িস।তর্ক করতে ইচ্ছে করলোনা, লক্ষীমেয়ের মত সব করে গেলো।খাবার ঘরে আপু মাকে ওর ব্যপারে কি কি যেন জিজ্ঞেস করছিলো।টুকরো টুকরো কথা শোবারঘর থেকে ও শোনা যাচ্ছিলো।শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো। আজ সারাদিন ওর উপর অনেক ধকল গেছে।এইটুকু ঘুম আসলেই দরকার ছিলো।
রাত কটা বাজে বলতে পারবেনা বণ্হি, কিন্তু ঘুম ভেঙ্গে গেছে কোনো একটা কারণে। হঠাৎ তার মনে পড়ে গেলো বিকেলের সেই দুর্ঘটনা তারপর তার ভাঙ্গা পায়ের কথা।পায়ে খুব ব্যথা করছে, এইজন্য ঘুম ভেঙ্গে গেছে। আস্তে আস্তে মাকে ডাকতে লাগলো ও। পাশের বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা বর্ষা আপু উঠে এলো।বণ্হি বললো ব্যথা করছে আপু।আপু আলো জ্বেলে মশারী উঠিয়ে ওর বিছানায় এসে বসলো। তোর পা দেখি বলি পায়ে হাত দিয়ে অস্ফুট একটা চিৎকার করে উঠলো।সেই চিৎকারে নিজের পায়ের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো পায়ের ব্যান্ডেজ ভেদ করে আসা রক্তে বিছানা ভরে গেছে ।আপুর ডাকে মা বাবা ভাই সবাই ঘুম থেকে উঠে এলো। আবার ফোন করা হোলো পাড়ার সেই ডাক্তার চাচাকে । উনি এসে ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করে দিলেন, নতুন করে পেইনকীলার ও দিলেন।সেই পেইনকীলার খেয়ে বণ্হি ঘুমোতে গেলো আবার।ব্যথাটা একটু কমে আসছে ঠিকই কিন্তু ওর ঘুম আসছেনা।

চুপচাপ শুয়ে আজকের এই দিনের কথা ভাবতে থাকে বণ্হি ।সামনে ওর টার্ম ফাইনাল।পি-এল চলছে, কিন্তু পড়াশোনা সব শিকেয় তুলে আবজাব কাজ করে বেড়াচ্ছে।কয়দিন ধরেই মন খারাপ ওর, বাসায় কাউকে বলেনি।তবে সবাই বুঝে ও না বোঝার ভান করে গেছে, কিছু জানতে ও চায়নি ওর কাছে। ভালো লাগছিলোনা বাসায় থাকতে, তাই দুপুরে মাকে বলে বেরিয়ে গেলো।গন্তব্য ছাত্রীহলের উদ্দেশ্যে রিকশায় চেপে বসলো।রিকশায় চড়তে ওর সবসময়ই ভালো লাগে। কারণ না থাকলে অকারণেই রিকশায় করে এদিক সেইদিকে ঘুরতে যায়।তবে আজকে তাও ভালো লাগছেনা।হলে গিয়ে দেখলো ওর বন্ধু জারা রুমে নাই। ওর মন আরও খারাপ হয়ে গেল।বুয়েটের পোলাপান পিএল আসলেই বিকেল বেলা সব বন্ধুর সাথে ঘুরতে বের হবে, আর রাতে এসে পিএল ফাইট দিবে।এই বিকেলের সময়টা কাউকে তাই রুমে পাওয়া যায়না।জারাকে ফোন করে জানতে পারলো সেও তার বয়-ফ্রেন্ডের সাথে বাইরে,তবে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে তার দেখা মিলতে পারে।কি আর করা, ওর রুমে বসে গল্পের বই পড়ার চেষ্টা করলো বণ্হি।এরপর জারা এলে দুজনে মিলে বের হয়ে গেলো।রিকশায় করে পাবলিক লাইব্রেরিতে চলে গেলো। ওখানে গিয়ে সিঁড়িতে বসতেই জারা বললো কি হয়ছে তোর, মুখ হাঁড়ির মত করে রাখছিস কেন।দোনোমনা করে বণ্হি বলে ফেললো সুহানের সাথে তার ঝগড়া হইছে।জারা বললো সেতো প্রায়ই হয় নতুন কি।বণ্হি বললো না এবার সিরিয়াসলি হইছে, ও আমাকে অনেকগুলা এসএমএস করছে, কল ও করছে, রিপ্লাই করিনাই। সে পরে এসএমএস করে বলছে সে আমার বন্ধু হবার যোগ্য না হয়তো, তাই সে আমার সাথে আর যোগাযোগ করবেনা বলছে।জারা আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করলো, পরে বললো এখন এগুলা নিয়ে ভাবিস নাতো।এইসব ছোটখাটো জিনিস নিয়ে কান্নাকাটি করে সময় নষ্ট করিসনা, বাসায় যা।বাসায় আসার জন্য রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে হলের দিকের চলে গেলো জারা। মতিঝিলের কাছে এসে অনেক ট্রাফিক দেখে রিকশা ছেড়ে দিলো বণ্হি। হাঁটতে লাগলো বাসার দিকে।ওর দুইটা টিউশনি ছিলো আজকে। একটাতে যাবেনা ঠিক করলো। কিন্তু ওর স্কুল-বন্ধুর ছোটো ভাই সৈকতকে পড়াতে যেতেই হবে।সামনে সৈকতের টেস্ট, আজকে না গেলেই না।ওদের গলিতেই থাকে সৈকতরা। বণ্হি ওকে ম্যাথ পড়ায়।গলিতে ঢুকতেই দেখলো বর্ষা আপু বাসায় যাচ্ছে অফিস থেকে, ওকে ডেকে রিকশায় উঠতে বললো। বণ্হি বললো তুমি যাও, আমি সৈকতকে পড়াতে যাবো।আর তারপর আনমনা হয়ে হাঁটতে থাকা বণ্হির সামনে কখন যে গাড়িটা এসে পড়লো ও নিজে ও বলতে পারবেনা।মায়ের ডাকে ওর চিন্তার সুতা ছিঁড়ে গেলো।কখন যে সকালে হয়ে গেছে টের পায়নি বণ্হি।চা আর টোষ্ট দিয়ে গেছে মা, হাতমুখ ধোবার জন্য তাড়া দিয়ে মা চলে গেলেন।যাবার আগে পায়ের ব্যান্ডেজটা ও দেখে গেলেন একবার। বণ্হি বিছানা থেকে উঠে দেয়াল ধরে ধরে ওয়াশরুমে গেলো, ফ্রেশ হয়ে এসে টোষ্ট খেলো চাতে ভিজিয়ে।ছোটো ভাই এসে বললো আমি রিকশা ডেকে আনছি, তুই তৈরি হয়ে নে আপু, আমরা কাছের একটা ক্লিনিকে যাবো তোর চেক-আপ করাতে।বর্ষা আপুর আজকে অফিস নাই তাই সে ও চললো সাথে।নিচে নামতেই দেখি অমিও-দা ওনার গাড়ি নিয়ে হাজির, উনি ও যাবেন ক্লিনিকে। বণ্হির রীতিমত লজ্জা লাগছিলো ওনাকে দেখে।ক্লিনিকে যাওয়া পর ডাক্তার পা চেক করে ওকে ভীষণই একটা ঝাড়ি দিলেন দেরি করে আসার জন্য ।এরপর এক্সরে করিয়ে দেখলেন পায়ের গোড়ালির হাড় ফেটে গেছে।উনি এবার মোটামুটি পায়ের নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত প্লাস্টার এঁটে দিলেন। বণ্হি দেখলো তার পা লোহার মত ভারী হয়ে গেসে। বেশি নড়াচড়া করা বারণ করে দিলেন ডাক্তার। এই ভারি পা নিয়ে চাইলে ও মনে হয়না বেশি নড়তে পারবে বণ্হি।বাসায় ফিরে দেখলো ওকে দেখতে ওদের বিল্ডিং এর আংকেল আন্টিরা চলে আসছেন।একে একে মানুষজন আসে, আফসোস করে,ইশ কি হলো সুস্থ সবল মেয়েটার,আবার সামনে নাকি পরীক্ষা ও।এত বিরক্তি লাগছিলো ওর, কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেনা।সবাই চলে গেলে মা এসে পাশে বসলেন।ওনার চোখ ভর্তি জল।বাসার সবার মন খারাপ বণ্হির পায়ের এই অবস্থা দেখে।ডাক্তার বলছেন, এক মাস কমপ্লিট বেড রেস্ট, নট নড়নচড়ন, এক মাস পর প্লাস্টার খুলে দেবে, এক্সরে করে যদি পায়ের অবস্থা ভালো পাওয়া যায় তাহলে এরপর দুই সপ্তাহ ক্রেপ ব্যান্ডেজ পরতে হবে।আর এর মাঝে এক সপ্তাহ অন্তর প্লাস্টার খুলে ভিতরের কাটা জায়গাটা ড্রেসিং করতে হবে।বণ্হি মাকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বসে রইলো।ওর চোখে ও জল, তবে সেই জল ওর ভাঙ্গা পায়ের জন্য না, সেই জল সুহানের জন্য।
ওর সাথে যদি আর কখনও দেখা না হয়, সুহান বলছে ও আর বণ্হির বন্ধু না, ও আর কখনো ওর সাথে যোগাযোগ করবেনা।আর কখনো ওর সাথে রিকশায় করে একসাথে বাসায় ফেরা হবেনা।আর কখনো একসাথে বুমার্স,অষ্ট ব্যঞ্জন, চিংড়ি কিংবা বিগবাইটে খেতে যাওয়া হবেনা।যখন তখন জোর করে ওকে ধরে শপিং এ নেয়া যাবেনা। এইসব হাবিজাবি ভেবে বণ্হির খুব কষ্ট হতে লাগলো।কেনো যে ওকে বন্ধু দিবসে একটা মেয়ের পায়ের শোপিস দিতে গেলো।ওটা নিয়েই না এত ঝামেলা হলো। ও বলছে আর কিছু পাইলানা গিফট দেয়ার জন্য, এই পা দিয়ে আমি কি করবো, কাজে লাগবে এমন একটা কিছু দিতা। ওমনি বণ্হি রেগেমেগে গিয়ে বলে ফেললো আমার দেয়া কোন জিনিস কবে তোমার পছন্দ হয়ছে। এরপর যা মুখে আসছে তাই বলছে সুহানকে।সুহান ওকে আর ও খেপাচ্ছিল। এরপর ও রেগে গিয়ে একা রিকশায় করে বাসায় চলে আসতে চাইছিলো,সুহান লিফট চাইলো ওর মেডিক্যল কলেজের গেইট পর্যন্ত। বণ্হি কিছুতেই ওকে লিফট দেবেনা আর সুহান জোর করে লিফট নেবেই।অগত্যা পেঁচার মত মুখ করে রিকশায় পাশাপাশি বসে ছিলো দুজন।সুহান নেমে যাবার পর বণ্হি ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো।তারপর থেকে এ কয়দিন ওর মন ভীষন খারাপ ছিলো।ওর জন্য নিজের ভিতরে কেমন যেনো একটা তীব্র টান অনুভব করছে।কিন্তু অভিমানী বণ্হি নিজের কাছে ও সেটা স্বীকার করতে পারছিলোনা।ওর এসএমএস আর ফোন এর রিপ্লাই না করে ওর কষ্টটা আর ও কয়েকগুন বেড়ে গেছে ।আর যখন শেষ এসএমএসটা এলো বণ্হি পাগলের মত ভেউভেউ করে কেঁদে ফেললো সুহান কে হারাবার ভয়ে।কিন্তু কেউ শুনে ফেলবে এই ভয়ে জোরে কাঁদতে ও পারছিলোনা।আজকে মাকে জড়িয়ে ধরে সেই কান্নাটা কেঁদে নিলো বণ্হি।

দুপুরে আজ অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে নিলো বণ্হি।রাতে কম ঘুম হবার জন্য হোক কিংবা মেডিসিন এর জন্য ই হোক বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে ওর ঘুম ভাঙ্গলো।পাশের ঘর থেকে হইচই এর শব্দ পেলো।ওর ছোটো খালা এসেছেন ওকে দেখতে। ওর সমবয়সী খালাতো ভাইটা বণ্হির পছন্দের কর্ণালি আইসক্রিম নিয়ে আসছে।সবার সাথে বসে ছোট্ট একটা আড্ডা হয়ে গেল সাথে মগ ভর্তি চা।এর মাঝে হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ শোনা গেলো। বণ্হিকে অবাক করে দিয়ে সুহান এসে রুমে ঢুকলো খানিক পরেই।সবার সামনে বণ্হি ওর সাথে স্বাভাবিকভাবেই কথা বললো। ছোটো খালারা চলে গেলো কিছুক্ষণ পর। এবার বণ্হি তার স্বরূপে ফেরত আসলো। জিজ্ঞেস করলো কেন আসছো, তুমি তো বলছিলা আর যোগাযোগ করবানা।সুহান কোনো কথা বললোনা, ফেলফেল করে বণ্হির দিকে তাকিয়ে থাকলো।সুহান ওর এক্সরে রিপোর্ট আর প্রেসক্রিপশন দেখতে চাইলো। বণ্হি বললো ডাক্তার দেখানো হইছে তোমাকে আর কিছু করা লাগবেনা।ভিতরটা আশ্চর্য ভালোলাগায় ভরে গেলেও বাইরে বণ্হি কিছুই বলছিলোনা। দুজনে চুপচাপ বসে রইলো অনেকক্ষণ।সুহান ধীরেধীরে বললো এই কয়দিন তোমাকে অনেক মিস করেছি।ফোন হাতে নিয়েছি অনেকবার তোমাকে ফোন করার জন্য, কিন্তু করা হয়নি।তুমি ছাড়া জীবনটা কেমন ছন্নছাড়া মনে হচ্ছিলো।তোমার এক্সিডেন্টের খবর শুনে আর পারলামনা, তোমাকে দেখার জন্য চলে আসছি। ভুল হয়ে থাকলে চলে যাচ্ছি।ওর চোখের কোনে চিকচিক করা জল বণ্হির নজর এড়ায়না।হাত দিয়ে সুহান চোখের জল লুকাতে চাইছিলো।সুহান উঠে দাঁড়া্লো চলে যাবার জন্য। বণ্হি বললো যাও চলে যাও, আর এসোনা কখনো, তুমি কখনো আমাকে বোঝনা,কখনো না।আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা বণ্হি, কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।সুহানের পাগুলোতে কেউ যেন একশো মণ পাথর বেধে দিয়েছে, ওগুলো আর সামনে এগোতে চায়না। বণ্হির কাছে ফিরে এসে ওর হাত ধরে আস্তে আস্তে বলে ফেললো তোমার না বলা কথাগুলো যেমন আমি বুঝতে পারি, তোমার অভিমানী মেঘের আড়ালে লুকানো ভালোবাসা ও আমার দৃষ্টি এড়ায়না।এই কথাগুলা শোনার জন্য বণ্হি যেনো অপেক্ষা করে ছিলো অনন্তকাল।
বন্দনা


মন্তব্য

আপনার নাম লিখুন এর ছবি

এক রকম ...ভাল।

বন্দনা- এর ছবি

ধন্যবাদ।

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

গল্পে দুজনের অনুভুতিই খুব সুন্দর ভাবে এঁকেছেন। চমৎকার লেখা। খুব ভালো লাগলো।

বন্দনা- এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপা।আপনার মন্তব্য খুবই প্রেরনাদায়ক।

বইখাতা এর ছবি

বিরাম চিহ্ণের ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকুন। প্রতিটি বিরাম চিহ্ণের পর একটি করে
স্পেস দিলে পড়তে আরাম লাগে।

বন্দনা- এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।ভবিষ্যতে আপনার পরামর্শ মেনে চলার চেষ্টা করবো।

মোঃ ইমরান, খুবি এর ছবি

ভালো লেগেছে তবে গাথুনিটা আর একটু মজবুত হলেনা আরও ভালো লাগত। ধন্যবাদ

বন্দনা- এর ছবি

ধন্যবাদ, চেষ্টা থাকবে ভালো গাথুনির কিছু লিখার।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।