শীতের পাখি

জিপসি এর ছবি
লিখেছেন জিপসি [অতিথি] (তারিখ: রবি, ০৬/১১/২০১৬ - ৬:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্যাডমিন্টন কোর্ট

বদলে গিয়েছে আমার জন্মভূমি, সেটাই অতি স্বাভাবিক। দশটি বছর পর মাত্র দশ দিনের অবস্থানে পরিবর্তনের সেই হাওয়ার রেশ কিছুটা অবশ্যই অনুভূত হয়েছে। শৈশব-কৈশোর আর যৌবন প্রারম্ভের চারণভূমি আমার অতিপ্রিয় ঢাকা শহরের সাদাকালো ছবির এ্যালবাম যা হৃদয়ে ছিল তার অনেকগুলি হয়ত আরও মলিন হয়ে গেছে। দীর্ঘ আকাশ ভ্রমনের ক্লান্তি হার মেনেছে ভোর সকালের অকল্পনীয় যানজটের পীড়নে। লোহার প্রবেশদ্বারের বাইরে দাঁড়িয়ে চিন্তে কষ্ট হয়েছে জীবনের প্রথম তেইশটি বছর যাপিত আমাদের সাদা বাড়িটিকে।

পশ্চিমমুখী বারান্দার ঠিক উল্টো দিকেই ছিল আমাদের মহল্লার ছেলেদের শীতকালীন ব্যাডমিন্টন কোর্ট। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সবার স্কুল ফাইনাল শেষ হওয়া মাত্রই গজ-ফিতা আর কোদাল নিয়ে এক সকালেই মেপেঝুকে বানিয়ে ফেলতাম ডাবল কোর্ট। ফিলিপ্সের ২০০ ওয়াটের গোটা দশেক বাল্বের আলোয় প্রজ্বলিত আলোকসজ্জা আর তারুণ্যের উদ্দীপনায় মেতে উঠত কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকা মহল্লার সন্ধেবেলা।

সেই ডাবল কোর্টে আজ দাঁড়িয়ে আছে ডাবল চারতলা বিল্ডিং। 'আশীর্বাদ' আর 'মায়ের আশীর্বাদ' নামধারী ষোলোটি ফ্ল্যাটের ইট ,বালু আর সিমেন্টের আস্তরে চাপা পরে গেছে আমাদের কৈশোরে শাবল-কোদাল দিয়ে আঁকা সমান্তরাল সীমারেখা।

বৃক্ষকথন

মফস্বল ঢাকার সবচেয়ে হৃদয়গ্রাহী আকর্ষণ ছিল তার সবুজ। গাছগাছালিতে ঢাকা মনোমুগ্ধকর সেই শান্ত নগরী খুঁজে ফেরাটা যে বোকামি হবে তা আগেই ধারনা করে নিয়েছিলাম। এক দশক পর খুব ভোরে বাড়ির ছাদে উঠে দেখি বার্ধক্যে জর্জরিত আমাদের আম আমগাছগুলিতে কাকের বাসা ঠিকই আছে, পেয়ারা গাছে এক জোড়া দোয়েল লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। নারিকেল গাছ থেকে যখন একসাথে অনেকগুলি টিয়াপাখি ছুটে উড়ে যায় তখন বাক্রুদ্ধ হয়ে যাই। ফিঙ্গে, দোয়েল, টিয়া হয়ত বেশ কিছুকাল থেকেই লোকালয়ে বসবাস শুরু করেছে যা আমার জানা ছিল না। নাগরিক বর্জ্য খেতেও হয়ত অভ্যস্ত হয়েছে।

বৃক্ষের সংখ্যা একদিকে আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে কিন্তু নগরে লোকালয়বাসী পাখির আনাগোনা কিভাবে বেড়েছে সেই সমীকরণ বুঝিনি।

কেতলির চা

আমাদের স্কুলে ছিলেন এক বজলুর রহমান স্যার, অন্যমনস্ক হয়ে কোন ছাত্রকে ঝিমুতে দেখলে দড়াম করে পিঠের উপর দেড় মণি কিল মেরে বলতেন "কেতলির মত বসে আছিস ক্যানো? " টিফিন পিরিয়ডে ক্যান্টিনে গিয়ে দেখি সিলভারের এক বড়সড় কেতলির পাশে স্যার ঘুরঘুর করছেন এক কাপ গরম চায়ের নেশায়।

দশ বছর পর বাংলাদেশে গিয়ে বন্ধুদের আড্ডায় আমার প্রথম আবদারই ছিল এক কাপ কেতলির চা। রহস্যময় কারণে কক্সবাজারের সেই বাজারে কোথাও পাওয়া গেল না কেতলির চা। সব দোকানেই শুধু মিলে ফ্লাস্কের গরম চা। ঢাকায় ফিরে এসে এক সন্ধ্যায় আবার দাওয়াত মিলল বন্ধুদের চায়ের আড্ডায়। শিহরিত হয়ে উঠি আমি, আমার কাছে চায়ের আড্ডা মানেই তো সন্ধ্যের আলোআঁধারিতে মদিনা হোটেলের কোনায় দাঁড়িয়ে চীনা মাটির ছোট্ট কাপ হাতে নিয়ে হাসি-ঠাট্টায় কাটিয়ে দেয়া স্বপ্নিল কিছু ঘণ্টা। নির্দিষ্ট দিনে বন্ধুরা যখন চা খাওয়াতে নিতে আসলো ততক্ষণে আমার রাতের আহার হয়ে গেছে! আজকাল নাকি উইকেন্ডের আগের রাতে আড্ডাবাজি শুরুই হয় ডিনারের পর।

গাড়ি থেকে নেমে নিজেকে আবিষ্কার করি ঢাকার অভিজাত এলাকার এক গলিতে। মেটাল ডিটেক্টরের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করা মাত্রই আমার চায়ের তৃষ্ণা উবে যায়। বুঝে নিই কেতলির চায়ের দর্শন এখানে সুদূরপরাহত; সেই স্কুল জীবনের মত কেতলি স্টাইলে ঝিম মেরে বসে থাকি।

লঞ্চঘাট

মামাবাড়ি যাবো মানেই তো ঝালমুড়ি আর লঞ্চের ডেকে দাঁড়িয়ে পাইনেপেল বিস্কিট সহকারে চায়ের পেয়ালা। সাত সকালের নাস্তা দিয়ে তো আর ছয় ঘণ্টার লঞ্চ জার্নির ক্ষুধা কাটবে না।

এবার গিয়ে শুনি ঐসব ধীর গতির লঞ্চ-ট্রলার সব উঠে গেছে। তাই বলে সকালের নাস্তা ঠিকমত হজম হবার আগেই গাড়ি নিয়ে মামাবাড়ি পৌঁছে যাব তা স্বপ্নেও ভাবিনি। দুঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে গ্রামে গিয়ে দেখি অনেকের এখনও ঘুমই ভাঙেনি ঠিকমত। সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা যে এতটা ছড়িয়ে পড়েছে তা ছিল আমার কল্পনার বাইরে; যদিও রাস্তার বেহাল অবস্থা ঠিকই অনুভূত হয়েছে। জীবনে প্রথম ব্যাটারি চালিত নসিমন টাইপের গাড়িতে চলার সৌভাগ্যও(!!) মিলেছে গ্রামে।

লঞ্চঘাট হারিয়ে গেছে, শহরের সাথে নৈকট্য অনেক বেড়েছে কিন্তু তারপরও গ্রামবাংলা আমার অনেক ভাল লেগেছে। আধুনিকতা আর যান্ত্রিক সভ্যতা পারেনি এখনও কৃষকের সরলতার সবটুকু লুটে নিতে।

বড়দিন

ঢাকায় পৌঁছেছি ২৪শে ডিসেম্বর প্রত্যুষে। দীর্ঘ বিমান ভ্রমণের ক্লান্তি থাকা সত্ত্বেও বড়দিনের রাতের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করব বলে মধ্যরাতে ছুটে গেলাম মহল্লার গির্জায়। গির্জা প্রাঙ্গণে অবস্থিত মিশনারি প্রাইমারি স্কুলে শুরু হয়েছিল আমার ছাত্রজীবন। ফেলে আসা হাজারো সুখস্মৃতি নতুন করে আবার গায়ে মাখাবো বলে শারীরিক অবসাদকে পাত্তা না দিয়েই ছুটে গেলাম গির্জা প্রাঙ্গণে। গেটের নীল রঙটা দেখি আজও বদলায়নি, উৎসব উপলক্ষে বানানো হয়েছে নতুন তোরণ। দুইশত গজ দূরত্বে মহল্লার ঐতিহ্যবাহি মসজিদ। জীবনের প্রথম তেইশটি বসন্ত কাটিয়েছি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ ঐ এলাকায়। বিন্দুমাত্র ধর্মীয় বিদ্বেষ অথবা বিশৃঙ্খলা কোনদিন চোখে পড়েনি।

শৈশবে যেমন একদিন মিশনারি স্কুলের নীল গেটটা ডিঙ্গিয়ে শুরু করেছিলাম শিক্ষাজীবন ঠিক সেভাবেই এতগুলি বছর পরে নীল গেটটা আবার ডিঙ্গিয়ে ভাঙ্গে আমার বিশ্বাসের দেয়াল। যে গির্জার গোড়াপত্তন হয়েছে আমার চোখের সামনে, যার সামনের প্রাঙ্গণে টিফিন পিরিয়ডে নানা ধর্মীয় বিশ্বাসী আমরা নিষ্পাপ ছোট্ট শিশুরা ছুটে বেড়িয়েছে................. সেই মধুর অতীতের মুখোমুখি হতে হল আমাকে মেটাল ডিটেক্টর পেরিয়ে। স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি মাঠের এক অন্ধকার কোনায়। অচেনা উর্দি পরিহিত সশস্র বিজিবি সেনা সদস্যদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি ফিরে যাই হারানো সোনালি অতীতে যখন বড়দিনে ডাকপিয়ন দুটি ঝোলা কাঁধে ঝুলিয়ে হাসিমুখে ঘুরে বেড়াত মহল্লার অলিগলি ; একটা ঝোলায় থাকতো প্রিয়জনের চিঠি আর খালি ঝোলাটিতে মিষ্টান্ন ভরে নিয়ে ফিরে যেত নিজের বাড়ি। শবে বরাতের দিন আমরা সূর্য ডোবার অপেক্ষায় থাকতাম, কাজের বুয়া শাপী'র মার ছেলে কখন আসবে চালের রুটি আর হালুয়ার ডিব্বা নিয়ে?

গভীর রাতে মাথা হেঁট করে বাড়ি ফেরার সময় সারাজীবন ধরে পরম আবেগে তোষণ করা শান্তি ও সম্প্রীতির অহংকারটুকু মেটাল ডিটেক্টরে বিসর্জন দিয়ে আসি।

ফেরিওয়ালা

আমার শৈশব-কৈশোরের স্মৃতির পাতায় পাতায় আছে শহুরে ফেরিওয়ালাদের সরব উপস্থিতি। যে শহরে আমার শৈশব কেটেছে সন্ধ্যে বেলায় শিয়ালের হুক্কাহুয়া শুনে, ছুটির দিনে ঘুম ভেঙ্গেছে লেসফিতাওয়ালার দরাজ কণ্ঠে তা বিশ্বায়নের মোড়কে যে অনেকখানি ঢেকেছে তা প্রতিদিন টের পেয়েছি। নতুন ধারার নব্য ফেরিওয়ালাদের উপদ্রবে নাগরিক জীবনের যন্ত্রণা দেখি আরও বেড়েছে।

ফুটপাথের দুধারের হকারের সাথে তো পরিচয় আগেই ছিল কিন্তু তার সাথে দেখি এবার নতুন যোগ হয়েছে মহল্লার অলিগলিতে স্থায়ী সব্জি/মাংশ/মুরগি বিক্রেতার। পাশাপাশি দুটি রিক্সা টেনেটুনে চলাচল করতে পারে এমন গলিতেও এইসব নব্য বিক্রেতারা হয় ভ্যানগাড়ি আর নয়ত টুকরি সাজিয়ে দিব্যি সকাল-সন্ধা রাস্তা আটকিয়ে ব্যাবসা করে যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই, কেউ কিছু বলছেও না। সবার মনে হয়ে ব্যাপারটা সয়ে গেছে।

ঢাকায় আমাদের বাড়ির সীমানা প্রাচীরে জনৈক 'মিয়া ভাই' লাল কালি দিয়ে চিকা মেরে রেখেছেন । উনি একাধারে কবিরাজ এবং ঘটক। বিনা মূল্যে প্যারালাইজড রোগীর চিকিৎসাও নাকি করান অর্থাৎ না বললেও বুঝে নিতে হবে উনি একজন দানশীল মানুষ। কিন্তু প্রশ্ন হল এত বড় দানবীর নিজের বাড়ির দেয়াল রেখে কেন আমার বাড়ির দেয়ালে চিকা মারতে গেলেন? ব্যাটাকে কিছু কঠিন কথা শোনাবো বলে দুটি মোবাইল নাম্বারই টুকে রাখলাম।

দশটা দিন পেরিয়ে গেল খুব তাড়াতাড়ি, আমার স্মৃতির জন্মভূমি ঢাকা শহরকে মনের অজান্তে অনেক খুঁজেছি , ফিরে পাইনি অনেককিছুই। অন্যভুবনের এক বাসিন্দা বলে মনে হল নিজেকে। ইচ্ছে হল না আর মিয়া ভাইকে ফোন করে রুষ্ট কথা বলতে। বিদায় বেলায় প্রিয়জনদের কিছু কথা বলতে চাইলাম সেটাও বলা হল না; আমি কারও মায়া চাইনা, আমি কারও ক্ষমা চাইনা…… আমার কোন স্বদেশ নেই। আমি কে? আমি পাখি, শীতের পাখি। গ্রীষ্ম একখানে, শীতে আরেক খানে, বর্ষায় আরও দূরে…… কত দূরে?


মন্তব্য

কনফুসিয়াস এর ছবি

ভাল লেগেছে লেখা।
বছরে একবার দেশে গেলেও অনেক কিছুই বদলে যেতে দেখি, দশ বছর পরে যদি যান তাহলে তো পুনর্জন্মের অনুভূতি হবার কথা!
আরও লিখুন।

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

জিপসি এর ছবি

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! সত্যি বাংলাদেশটা অনেক বদলে গিয়েছে, আমিই তাল মেলাতে পারিনি; সেকেলেই রয়ে গেলাম।

------------------------------------------------------------------------------
জিপসিরা ঘর বাঁধে না,
ভালবাসে নীল আকাশ

কর্ণজয় এর ছবি

খুব ভাল লাগলো। শান্ত নদীর মতো বয়ে গেলাম-

জিপসি এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ জানবেন। ভালো থাকুন, সাথে থাকুন।

------------------------------------------------------------------------------
জিপসিরা ঘর বাঁধে না,
ভালবাসে নীল আকাশ

তাহসিন রেজা এর ছবি

আপনার তোলা ফটোগ্রাফের মতোই চমৎকার লেখাটি। নস্টালজিক লেখা।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

জিপসি এর ছবি

হা হা, আপনার মন্তব্য পড়ে মনে পড়ল যে একটা সময় ক্যামেরা নিয়ে বেশ দৌড়-ঝাপ করতাম। এখন আর হয়না।

------------------------------------------------------------------------------
জিপসিরা ঘর বাঁধে না,
ভালবাসে নীল আকাশ

জিজ্ঞাসু এর ছবি

স্বপ্নের শহর ঢাকা শহর। মালিবাগ মোড়, শাহজাহানপুর, কমলাপুর, সায়দাবাদ, কাকরাইল, ৬ নম্বর বাস, বিআরটিসির লাল টাটা বাস। শাপলা চত্বর, গুলিস্তান সিনেমা হল, প্রশস্ত ফুলবাড়িয়া, ঠাটারি বাজার, নবাবপুর, পুরান ঢাকা। এদিকে রামপুরা টিভি ভবন শহরের শেষ মাথা, তারপর বেইলি ব্রিজ পেরিয়ে বাড্ডাতো গ্রাম এলাকা ছিল। ওদিকে ঝিগাতলা, মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, কলেজ গেট, শ্যামলী, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল, বাংলা কলেজ, মিরপুর ১ নম্বর, গাবতলী শহরের শেষ মাথা, তারপর মিরপুর ২ নম্বর, ১০, ১১, পল্লবী শেষ। তারপর ১৪ নম্বর, ক্যান্টনম্যান্ট, বনানী, গুলশান। এখনও সবই আছে কিন্তু চেনা যায়না। একবার মরে গিয়ে ফিরে এসে দেখার মত। সব বদলে গেছে।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

জিপসি এর ছবি

একটা সময় ছিল যখন ঘণ্টা হিসেবে রিকশা ভাড়া করে সন্ধ্যেবেলা ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াতাম। কোন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়াই নীলক্ষেত/নিউ মার্কেটের এ মাথা থেকে ও মাথা হেঁটে পার হতাম।
ঢাকা শহরটাকে একান্ত আপনজন বলে মনে হতো, যেন ছিল আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এতগুলি বছর পর নিজেকে এক শীতের পাখি বলে মনে হয়েছে, হয়ত এটাই বাস্তবতা।

------------------------------------------------------------------------------
জিপসিরা ঘর বাঁধে না,
ভালবাসে নীল আকাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।