শুনতে কি পাও

সৌরভ কবীর এর ছবি
লিখেছেন সৌরভ কবীর [অতিথি] (তারিখ: সোম, ২৪/০২/২০১৪ - ৩:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

‘শুনতে কি পাও’ দেখলাম। একেবারেই আমাদের কাদামাটির চলচ্চিত্র। আমাদের কতশত সমস্যা আছে। দুর্যোগ এসে বারবার হানা দেয় তবুও জীবন থেকে প্রাণশক্তি টলাতে পারেনা। বিপত্তি আসে, বিচিত্রতা আসে ঘুরে দাঁড়াবার প্রত্যয় আর রসবোধ অমলিন থেকে যায়। ‘Beasts of the Southern Wild’ এর মতো সিনেমার কালে পৃথিবীর এই অংশের মানুষের জীবনসংগ্রামকে প্রতিনিধিত্ব করবার জন্যে এই প্রামাণ্যচিত্রের চেয়ে যোগ্যতর উপস্থাপন আর কী হতে পারতো!

‘শুনতে কি পাও’ প্রমাণ করেছে এই প্রতিনিধিত্ব করবার জন্যে বাঙ্গালির কল্পনাপ্রবণ হয়ে সাহিত্য, রূপকথা বা দুর্যোগগাঁথা সৃষ্টির দরকার নেই। করুণা, দাক্ষিণ্য চেয়ে বেড়ানো নয় বরং সাধারণ বাঙ্গালির বছরের পর বছর ধরে করা লড়াই তার বড় পরিচয়। চিরাচরিত ফিল্মের নায়কনায়িকারা ফিল্মেরই আসলে, জীবন থেকে দূরে। আইলা’র মতো দুর্যোগের কবলে পড়ে প্রতিদিন জয়ী হওয়া রাখী-সৌমেনদের কাছে ওসব সাজানো কল্পিতরা নিতান্তই মামুলী যেন।

দেখতে বসলে প্রথমে যে জিনিসটা নির্মাতার প্রতি আপনাকে কৃতজ্ঞ করে তুলবে তা হলো সিনেমাটোগ্রাফী। প্রতিকূলতা ও সংগ্রামকে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে এত শৈল্পিকভাবে চিত্রায়ন অবশ্যই মনে রাখার মতো ব্যাপার। বৃষ্টি, মানুষ, নদী, ইশকুল, শিশুর দৌড়াদৌড়ি থেকে শুরু করে দুর্যোগ, কাদা, কোদাল, মাটি সরানো, জমায়েত সব স্বরূপে দারুণ মূর্ত ও প্রামাণ্য হতে পেরেছে।

রেডিওতে জলবায়ু নিয়ে আন্তর্জাতিক খবর থেকে শুরু করে সমস্যা সমাধানের প্রায়োগিক ও দীর্ঘস্থায়ী দিক নিয়ে নিজেদেরই এগিয়ে আসা, ভারত মানেই ভালো ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার আকুতি, গানের ব্যবহারসহ ছবিটি জুড়ে নানা বিষয় তুলে আনবার মধ্যে পরিমিতবোধের উপস্থিতি আমার ভালো লেগেছে। বাংলা সাবটাইটেল যুক্তকরায় চলচ্চিত্রটার সাথে যোগাযোগ স্থাপন সহজ হয়েছে।

আমাদের অনেক কথিত ভালো চলচ্চিত্রেরও বড় সমস্যা হলো নারীকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়া হয়না। জীবনযুদ্ধে তার অবদানকে, মানুষ হিসেবে তার স্বাধীন স্বত্বার উপস্থিতিকে ছোট করে দেখানো হয়। ‘শুনতে কি পাও’-এ নারীদের উপস্থাপন সে গৎবাঁধা ফ্রেমে না।

যে কথা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো দেশের ছবি ভালো হবার কিছুটা সম্ভাবনা আছে জানলেই সেটা হলে যেয়ে দেখা উচিৎ। ভালো ছবি এসে হল ঘুরে চলে যাবে আর আপনি দেখতে না যেয়ে পরে এখানেওখানে কান্নাকাটি করে বেড়াবেন যে আমাদের দেশে কেন অমুক সিনেমার মতো যুদ্ধের সিনেমা হয়না, তমুক সিনেমার মতো বাস্তবধর্মী সিনেমা আসেনা... তা বেমানান ঠেকবে।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

দেখবো অবশ্যই কিন্তু ছবির নাম নিয়ে আমার একটু খটকা রয়েছে, কলকাতার একটি সস্তা ধারার জনপ্রিয় ছবি আছে খুব সম্ভব এই নামে। সেই ছবির শুনতে কি পাও গান টিও মোটামুটি বিখ্যাত হয়েছে বাংলাদেশে। তাই সেই একি নামে ছবি হতে হবে কেন? অন্য কোন নাম কি হতে পারতো না?

মাসুদ সজীব

সৌরভ কবীর এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
আপনি বলাতে মনে পড়লো যে গানটা শুনেছি আমি। হাসি
নামের ব্যাপারটা নিয়ে আমি তেমন ভাবিনি। তবে আমাদের এই কমেন্ট অংশের নিচের দিকে দেখতে পাচ্ছি সিনেমার ফেসবুক পেজ থেকে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

ছবিটা দেখার পরে কেমন লাগলো জানালে ভালো লাগবে।

__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

দেখার আগ্রহ হল, দেখব অবশ্যই। হাসি
আমি মূলত দেশের তৈরি কিছুটা ভিন্ন ধারার হলেই যে কোন মুভি দেখার চেষ্টা করি। (কমার্শিয়ালগুলাও করি মাঝে মাঝে মানে যতক্ষণ নিতে পারি আর কি। মন খারাপ )

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

সৌরভ কবীর এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
সিনেমা যতোটা দেখতে চাই নানা কারনে তার সামান্যই দেখা হয়। কমার্শিয়াল সিনেমা সর্বশেষ দেখতে গিয়েছিলাম 'চোরাবালি'। সিনেমায় হতাশ হলেও কয়েকজন মিলে গিয়েছিলাম বলে চরিত্রগুলো নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে সময় পার হয়ে গেছে ভালোই।

__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে

আয়নামতি এর ছবি

অনেক দেরিতে হলেও শুনলাম। আমি সিনেমার কথা বলছি না, বলছি আপনার পোস্টের কথা।
এটার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের একটা ছোট্ট ক্লিপ দেখে সিনেমা দেখবার আগ্রহ জন্মেছে।
আজকে আপনার কথা শুনে সেটা আরো জোড়ালো হলো। 'শুনতে কী পাও'র জন্য অনেক শুভকামনা থাকলো।
আপনি একটা জায়গায় বলেছেন

আমাদের অনেক কথিত ভালো চলচ্চিত্রেরও বড় সমস্যা হলো নারীকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়া হয়না।

দু'একটা উদাহরণ দিতে পারতেন কিন্তু!
ঢালাও ভাবে প্রশংসা কিংবা নিন্দা আসলে সেভাবে উপকারে আসে না বলেই মনে করি।
যদিও আমি নিজেও এই গণ্ডীর বাইরের নই। কিন্তু ভালোর পাশাপাশি যদি ত্রুটিগুলো বলা না হয় তবে শেখবার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতা আসেনা সেভাবে। কোনভাবেই 'শুনতে কী পাও'র সাথে সংশ্লিস্ট কাউকে খাটো করতে এটা বলছি না।
সামগ্রিকভাবে যেকোন বিষয়ের ক্ষেত্রেই বলা। তাই কেউ দুঃখ পাবেন না প্লিজ! অনেক অনেক শুভকামনা থাকলো।

সৌরভ কবীর এর ছবি

অনেক দেরি আর কই!

আমাদের ভালো চলচ্চিত্র বলতে যা বুঝায় তার একটা বড় অংশই তো হলো মুক্তিযুদ্ধের উপর। মুক্তিযুদ্ধে নারীরা সরাসরি অস্ত্রহাতে অংশ নিয়েছেন একথা জানা আমাদের। আপনি কয়টা চলচ্চিত্রের কথা মনে করতে পারবেন যেখানে যোদ্ধা হিসেবে নারী দেখানো হয়েছে? বেঙ্গল পাবলিকেশন্স এর কাবেরী গায়েনের 'মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রে নারী নির্মান' বইটা পড়েছিলাম কিছুদিন আগে, ব্যাপারটা নিয়ে তিনি দারুণ বিশ্লষণ করেছেন। অভিযোগের তীর যখন বেশি সংখ্যক জিনিসের দিকে থাকে তখন একটা-দুইটার নাম উল্লেখ করা কঠিন লাগে আমার কাছে। সুযোগ হলে বইটা পড়ে দেখতে পারেন।

ঢালাও প্রশংসা আমারো ভালো লাগেনা। কিন্তু এখানে হয়তো সেটাই করেছি। আমি আসলে আগে এটার কোন ক্লিপ দেখিনি বা রিভিউও পড়িনি। সন্ধ্যায় দেখে রাতে এসে লিখেছি এখানে শুধু এজন্যেই যে কাজটা মহৎ লেগেছে। এধরনের কাজের তেমন কিছু চোখে লাগলে সেটা দুর্বলতা (নাকি বিশেষ দিক) বলে পাব্লিকলি বলার আগে মনে হয়েছে আরেকবার দেখতে পারলে ভালো হতো। আপাতত যেতে পারছিনা বলে লেখা এপর্যন্তই রেখেছি।

সমালোচনা এড়ানোর উপায় একটাই, কোনকিছু না করা। ভালোর পাশাপাশি নিন্দেটা না নিতে পারলে এসব না বানানোই ভালো। দেখে কেমন লাগলো সম্ভব হলে জানাবেন।

__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে

আয়নামতি এর ছবি

ধন্যবাদ জানুন। খুব খুশি হয়েছি আপনি এতটা বিস্তারিত বলেছেন দেখে। সমালোচনা এড়ানোর জন্য কিছু করবো না এটা খুব বোকামি ভাবনা যা আজকের সময়ে একদমই মানায় না। মানায় বলুন? তাহলে 'শুনতে কী পাও' এর জন্মই হতো না হয়ত। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এত বড় একটা পটভূমি থাকা সত্ত্বেও চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রটা বেশ পিছিয়ে আছে মনে করি। সাহিত্যে যতটা মুক্তিযুদ্ধ এসেছে সেভাবে চলচ্চিত্রে আসেনি। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক হয়ত। তবে হতাশ হইনা। কারণ কামার আহমেদের মত কেউ না কেউ নিশ্চয়ই এগিয়ে আসবেন। তবে আতংকগ্রস্হ হই যখন শুনি 'চোরাবালি'র পরিচালক শহীদ রুমীকে নিয়ে চলচ্চিত্রায়ন করতে আগ্রহী( খবরটি আমি কোথাও পড়েছি, সঠিক মনে করতে পারছি কোথায় তাই উৎস দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছি-দুঃখিত) আতংকটা 'চোরাবালি' দেখবার ফলেই সৃষ্ট স্বীকার করছি। মূল কথায় আসি বরং। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের উপরে সিনেমাই নিমির্ত হয়েছে অতি সামান্য এবং সরাসরি রণাঙ্গে যুদ্ধরত পুরুষ চরিত্রেরও খুব বেশি চিত্রায়ণ হয়েছে বলে মনে করিনা। মাত্র কিছু ঝলকে একটা মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি দেখিয়ে দেয়া হয় মাত্র। সেখানে অস্ত্রহাতে যুদ্ধরত নারীর চরিত্র চিত্রায়ন এখন পর্যন্ত দেখিনি সেটা স্বীকার করছি। তবে শুধু অস্ত্রহাতে নারীকে যুদ্ধ করতে দেখিনি বলে কী নারী চরিত্রগুলোকে অবহেলা করা হয়েছে এমনটা মনে করিনা। 'জীবন থেকে নেয়া' 'গেরিলা' 'খেলাঘর'সহ বেশ কিছু সিনেমায় নারীচরিত্রকে গুরুত্বের সাথেই দেখানো হয়েছে। কাবেরী গায়েনের বইয়ের নাম উল্লেখ করবার জন্য আবারও ধন্যবাদ নিন ভাইয়া।
এমন চমৎকার বিষয় নিয়ে বই লিখেছেন যিনি তাঁর প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা। সুযোগ পেলে পড়ে নেবার চেষ্টা থাকবে সর্বাত্মকভাবে। কোনভাবেই তর্ক করছিনা আমি। এবিষয়ে তর্ক করবার জন্য যতটা জ্ঞান দরকার আমি তার চৌহদ্দির অনেক বাইরের লোক। বিশেষ কৌতুহলী বলেই হুট করে এসে ফস্ করে এত সব বলে বসি।
দেশের চলচ্চিত্র নিয়ে আরো বেশি বেশি লিখুন। শুভকামনা জানবেন।

সৌরভ কবীর এর ছবি

নারীকে কম গুরুত্বের সাথে দেখান হয়েছে আমি সেটা বলতে চাইনি, বলতে চেয়েছি নারীর শক্তিকে অবহেলা করা হয়েছে। তবে 'গেরিলা' ব্যতিক্রম লেগেছে। বলেছেন, সাহিত্যে যতটা মুক্তিযুদ্ধ এসেছে সেভাবে চলচ্চিত্রে আসেনি। আসলে আমাদের চলচ্চিত্র কি সাহিত্যের মতো এগিয়েছে? আমি জানিনা ঠিক। তবে যতোটা চলেছে চলচ্চিত্র সেই অনুসারে মুক্তিযুদ্ধ হয়তো কম আসেনি।

আর আমিও চৌহদ্দির ভেতরের কেউ না যে দূরে ঠেলে দেবেন। কবির সুমনের গানটার মতো শুধু মনে হয় যে সব আমাদের জন্য...

__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ উৎসাহ পেলাম। বসুন্ধরায় কি এটা দেখা যাবে? কাহিনিটি না বলে মতামত দেওয়ার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ। আনন্দপথিক

সৌরভ কবীর এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
আমি বসুন্ধরাতেই দেখলাম। এই যে সিনেপ্লেক্স শো-টাইম এর লিংক। এর বাইরে কোথায় কবে চলবে জানতে সিনেমার ফেসবুক পেজে নক করতে পারেন।
আনন্দময় হোক পথচলা।

__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।