বেদের মেয়ে জোছনা-- ইহাকে ব্যান করুন ডিজটাল সরকার

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: সোম, ৩১/০৫/২০১০ - ১১:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বরিশালের লোকজনের মত এত রসিক লোক পৃথিবীতে নাই। এবং বরিশালের মত এত ভাল এলাকাও পৃথিবীতে নাই। পানশিরের আব্দুর রহমানের পূর্বপুরুষ এইখান থেইকাই হিজরত করেছিল। সৈয়দ মুজতবা আলীর শবনম পড়ে আমার অন্ততঃ তাই মনে হয়েছে। আমার ধারণা : শবনমের তুল্য প্রেমের উপন্যাস পৃথিবীতে নাই। এ ব্যাপারে ভোট নিয়ে দেখতে পারেন। বক্তব্যের স্বপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা ১০০%।
আমি দীর্ঘকাল বরিশালে বাস করেছি। বরিশালের এক বন্ধু আলোচ্য রচনাটি লিখেছিলেন। পড়ে বলুনতো আমার প্রথম বাক্যটি সঠিক কিনা?

..............................................................................................
সিম সিম খুলজা--
[b]বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না[/b]
কেউ আহত হলে আমিনী সাবরে বলতে পারেন। অথবা জব্বার কাগু অথবা ঢাবির ভিসি আরেফিন স্যারকে বলতে পারেন। তাদের কথা ডিজিটাল সরকার শোনে। তারা এইটারে ব্যান কইরা দেবেখন।
..............................................................................................
[b]বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না : আইসা পড়েন--হাইসা পড়েন[/b]

autoকাউয়ার চরে একদিন একটি ছৈয়া নৌকা থামল। নৌকার ভেতর থেকে একটি রমনী রত্ন বেরিয়ে লাফ দিয়ে কুলে এসে নামল। তার শ্যমলা বরণ, চাপা নাক- নাকে আবার রসকলি, ঠোটে পানের রসে- টুকটুকে লাল। শাড়িটা মাজায় টানটান করে বাঁধা এবং হাঁটুর উপরে উঠে এসেছে। মাথার উপরে একটি ঝাপি। দুই হাত উচু করে ঝাঁপির দুপাশে ধরা। এই মেয়েটি যখন চর থেকে রাস্তায় উঠে এল, কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে হাটা শুরু করলগ্রা মের পথের দিকে- তখন বাতাসে একটি বিশেষ আলোড়ন উঠল। আর তখনি তিনটে পাঠা কাঠাল পাতা খাওয়া ছেড়ে তারস্বরে ব্যা ব্যা করে উঠল।
এই সময় অনতিদূরে একটি শ্যাওড়া গাছের নীচে ছিরু, ভিরু ও খিরু- তাস পেটাচ্ছিল। তিনজনেরই মন খারাপ। বয়স রসে পড়েছে। কিন্তু কোন অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় নাই। কবে হবে তাও ঠিক নাই।
এর মধ্যে ছিরুর আবার কান খাড়া বেশি। সে তাস পিটানো বন্ধ করে অবাক হয়ে দূরে তাকিয়ে রইল। ভীরু আবার কানে খাটো। বলল, কি হইছে ছিরু? থামলি ক্যান?
ছিরু বলল, গান শুনবার পারছি একটা।
- কি গান?
- বেদের মেয়ে জোছনা আমি-
কথা দিয়েছি,
আসি আসি কইরা আমি আইসা পইড়াছি...
খিরু আবার চোখে কম দেখে। সে বলল, খালি গান, নাকি আরও কিছু দেখতে পারতিছিস?
এরই মধ্যে ঝামটি গাছের আড়াল থেকে বেদের মেয়ে জোছনা তিনটি সবে হয়ে ওঠা যুবকের সামনে দাড়িয়ে হাসি হাসি করতে লাগল। হাত দুটো মাথার উপরেই রাখা। বিপজ্জনক দৃশ্য। ছিরু, ভিরু ও খিরু তড়াক করে উঠে পড়ল তাসটাস ফেলে। এর মধ্যে খিরুর লুঙ্গিটা প্রায় খুলে পড়ে যাচ্ছিল। ধাই করে না ধরলে বিপদ ঘটতে পারত।
ছিরু আবার ঢাকা শহরে দুবার ঘুরে এসেছে ফ্রি সাগর লঞ্চের ছাদে চড়ে। সে কিছুটা স্মার্ট। সে এই দোদুল্যমান বেদের মেয়ে জোছনা নামের পরীটিকে দেখে বলল-কী তোমার পরিচয় বালা?
- আমি বেদের মেয়ে জোছছোনা।
-কোন ঝোছনা?
-কেনো, দ্যাখো নাই তোজ্জাম্মেল হোসেন বকুলের হট ফিলিম বেদের মেয়ে জোছছনা, ইলিয়াস কাঞ্চন হিরো। ইন্ডিয়ায় এক হিন্দু নায়ক। এই ফিলিম এত হট হইল যে এই হট খাইয়া বাংলাদেশের এক জানোয়ার (যিনি খেলেন- তিনি খেলোয়ার, যিনি জানেন- তিনি- জানোয়ার) পরহাদ মজহার আমারে নিয়া একখান পোরবন্ধও লিখ্যা ফালাইল-আর ব্যাত্য রাইসু নামে একজন সমজদার আদমী ফেসবুকে তা ছাপাইয়াও ফেলল কদিন আগে। তোমরা পড়ো নাই?
ছিরু, ভিরু ও খিরু পড়ার কথায় একটু ঢোক গিরল। একটু শরমও পেল।
এইবার জোছনা তার হাতদুটো মাথা থেকে থেকে নামিয়ে কোমরে রাখল। বলল, তোমরা মাইন্ড খাইও না। আমি তোমাগো মতন মুর্খ লোকদেরই খুজসি। তোমরাই আমার ফেবারিট- সুইট ডার্লিং।
ছিরু, ভিরু ও খিরু এবার কিছুটা জানে পানি পেল। ছিরু বলল- ডার্লিং জোছছোনা, তুমি কি পারো?
-আমি সাপ খেলা দেখাতে পারি।
-আর কি পারো?
-আমি দাঁতের পোকা ফেলাইতে পারি।
- আর কি পারো?
-আমি শরীরের বিষ বেদনা থামাই।
এই কথায় এরা তিনজনেই চোখাচোখি করল। বিষ বেদনা? এই জিনিসটাই তো কুরে কুরে দিনরাত ওদের খেলো।
ভিরু বলল, আর কি পারো তুমি জোছছোনা?
জোছনা এইবার একটু থামল। মুচকি হেসে বলল, তোমরা কয়জন?
-তিনজন।
-ঠিকাছে। ৫০ টাকা ধরে ১৫০ টাকা দাও। তারপর আর কি পারি- দেখামুনে।
ছিরু, ভিরু আর খিরু অতিশয় ভালো ছেলে। নতুন রসস্থ হয়েছে। বাবাদের পকেটের কন্ডিশনও মাশাল্লাহ ভাল। তিনজনই ঝটপট ১৫০ টাকা জোছনার হাতে গুজে দিল। জোছনা টাকাগুলো বেদের মেয়েদের মতো ব্লাউজের ভিতরে গুজে রাখল। বলল, আর কি পারি তাতো যেখানে সেখানে দেখানো যায় না। আইজ সন্ধ্যার আগে আমার নৌকায় আইসো। দেখায়া দিমুনে। বাই।
বলে কিছুটা এগিয়ে আবার ফিরে এলো। ওর ঝাপি থেকে তিনজনকে তিনটে রঙিন কাচের শিশি এবং একটা চটি বই দিল- মজার প্রণীত সেবাদাসনামা। বলল, ডার্লিং, এই শিশির দাওয়াই মেড ইন ইন্ডিয়া। কামরুপ কামাখ্যা থেকে আনা। সুনিতা পালের তৈরি ফেরেস মাল। বেশি নতুন আর বেশি পুরনোদের জন্য লাগে। আমার কাছে আসার আগে খাইয়া আসিও। বাই, বাই, বা-ই।
ওদেরকে কাপিয়ে দাপিয়ে জোছনা ছৈলা গাছের আড়াল দিয়ে চলে গেল। ছিরু, ভিরু আর খিরু অনেকটা টাসকি খেসে দাড়িয়ে রাইল। মাথা ঠিক হতে অনেকটা সময নিল। যখন মাথাটা ঠিক হল- তখন তিনজনেরই লুঙ্গি মাটি থেকে টেনে উপরে তুলতে হল। আর ওদের টাকাও বেদের মেয়ের জোছনার বেলাউজের নিচে অদৃশ্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু জোছনার দেওয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ শক্তি বর্ধক দাওয়াই আর সেবাদাসনামা ওদের হাতের মধ্যে গরম হচ্ছে।
ভিরু শিশিটা একটু টেরা চোখে দেখছিল। ছিরু বলল, দোসত, দাওয়াইটা ইন্ডিয়ান। হিন্দুগো তৈরি। ভেজাল নাই। মাইয়াডাও ফেরেস। ভয় খাইস না। পয়লা পয়লা এই রকম কিছু লাগে।
সেদিন সন্ধ্যা আর আসেই না। এত দেরী করে সেদিন সন্ধ্যা এলো ওদের জীবনে এরকম কোনোদিন ওরা দেখেনি। ওরা অপেক্ষা করতে করতে লবেজান হয়ে হয়ে গেল। ছিরু, ভিরু একটু পারফিউম মাখল। খিরুতো চোখে কম দেখে। সে পারফিউমর বদলে কেরাসিন ত্যাল মেখে নিল। আর রওনা হওয়ার আগে বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে গানটা গাইতে গাইতে শিশির দাওয়া গলায় ঢেলে গিলে ফেলল। গিলে ফেলে মাথাটা ঝাকিয়ে নিল নিল সাকিব খানের স্টাইলে।
ছিরু, ভিরু আর খিরু যখন নদীর পাড়ে পৌছালো তখনো সূর্য পাটে নামে নাই। কনে দেখা আলো চারিদিকে। মৃদু মন্দ হাওয়া। নদীর পানিতে হালকা ডেউ। নৌকা একটু একটু করে দুলছে। নৌকার উপরে জোছনা দাড়িয়ে আছে। পরণে ঝালকাঠির ঝ্যালঝ্যালে একটা গামছা। উর্ধাঙ্গ একদম সিনেমা হল। ওরা তিনজনেই ইয়াহু বলে লাফ দিয়ে জোছনার কাছে একেবারে উড়ে যেতে চাইল। জোছনা ওমের থামিয়ে দিল। বলল, ডার্লিং, আসো, তবে একখান কথার পরে আসো।
- কি কথা?
-কথা না। একটা জিনিস তোমরা দেইখা লও।
- কি জিনিস?
- জিনিসটা তেমন কিছু না। । আবার সব কিছু।
-কই আছে জিনিসখান?
-তোমাগো প্যান্টের মধ্যে। দেখো তো জিনিসটা ঠিক টাক আছে কিনা?
ওরা তাড়াহুড়া প্যান্ট হাতাহাতি করতে লাগল। একসময় ওরা চমকে উঠল। এবং ঘেমে উঠল। ওরা তো তো করে বলল, যন্ত্র নাই।
-যন্ত্র গেল কই!
এবার জোছনা হাসি থামিয়ে বলল-হুম, যন্ত্র যখন নাই তাইলে আর আমার কাছে আইসা আর কি করবা। ফিরা যাও।
-যন্ত্র ছাড়া ফিরি ক্যামনে?
-তাওতো সত্যি। জোছনা চিন্তিত হল। তারপর কিছুক্ষণ ভেবে বলল, ঠিকাছে। তোমরা আরো ১৫০ টাকা দ্যাও। তাইলে তোমরা যন্ত্র ফির্যা পাবা।
এবার আর কোনো ধানাই পানাই করার কোনো চেষ্টা করল না ওরা তিনজন। ঝটপট করে টাকাগুলো জোছনার হাতে গুজে দিল। বলল, জোছনা তাড়াতাড়ি আমাগো যন্ত্রগুলান ফেরত দাও। আর কিছু চাই না। ভিক্ষা চাই না, কুত্তা ঠেকাও।
জোছনা টাকাগুলো লুফে নিল। টাকা নেয়াই তার একমাত্র কাজ। জোছনা টাকাগুলো কোথায় রাখল তা বলা যাবে না। এটা সেন্সর করা হল। তারপর পরণের গামছাখানা খুলে ছুড়ে মারল হাওয়ার ভিতর। হাওয়ায় ভেসে চলল লাল দোপাট্টা মল মল করে। সূর্য ডোবার আগে দেখা গেল- তারও কোনো যন্ত্র নাই। শুধু ষড়যন্ত্র আছে।
জোছনার নৌকা মাঝ নদীতে গেল। মাঝনদীতে পৌছাতে পৌছাতে জোছনা একটা দোররা কাউয়ায় রুপান্তরিত হল। সেই দোররা কাউয়াটা উড়ে গেল গভীর অন্ধকারের দিকে। আর মাঝে মাঝে শোনা গেল- কু কু ধ্বনি...।
আর ওরা তিনজন ছিরু, ভিরু আর খিরু কাউয়ার চরে ভিমরি খেয়ে পড়ে রইল। সেদিন ওরা ওদের যন্ত্র ফেরত পেয়েছিল কিনা জানা যায় নি। কারণ ওরা তিনজনই উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল। নিরুদ্দেশ হওয়ার আগে যারা ওদেরকে দেখেছে তারা বলেছে, এরা বিড় বিড় করে কিছু একটা বলছিল- তা হল মজারের সেবাদাসনামার চটি পোদ্য। আর কিছু জানা যায় নাই। কেবল জানা গেছে- ঐ শিশি তিনটিতে পপি ফুলের নির্যাস ছিল। উহা আফগানিস্তানে চাষ হয়। যদি কেউ দাওয়াইটা পাইতে চান, তাহলে নারী ভ্রান্ত কোবতর্নাতে খোজ নিতে পারেন। পাইলেও পাইতে পারেন।


মন্তব্য

বিভ্রান্ত পাঠক এর ছবি

গল্পটা পড়িয়া ব্যাপক মজা প্রাপ্ত হয়েছি, কিঞ্চিৎ ইয়ে টাইপ তো, তাই!! কিন্তু ইহার অন্তর্নিহিত ভাবার্থ আমার দুর্বল মস্তিষ্কের ততোধিক দুব্বল রাডার সনাক্ত করিতে পরিপূর্ণরূপে ব্যর্থ হইয়াছে! এইরূপ বিভ্রান্তি প্রদানের জন্য লেখক মহোদয়কে আমার বিনীত শুভেচ্ছা!!

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই আমিও ব্যাপক আনন্দ পাইছে। তবে কী কারণে এই লেখা সেইটা বুঝতে পারলাম না। মাথায় শুধু গোবর কঠিন কথা উপরে দিয়া যায়। ধন্যবাদ।

কামরুজ্জামান স্বাধীন।

সোহাগ এর ছবি

তোজাম্মেল হক বকুল হওয়ার কতা যদি বেরেন না গুলায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পের সচলে নাজুলটা ঠিক ধরতে পারলাম না!

---থাবা বাবা!

অতিথি লেখক এর ছবি

মারহাবা! মারহাবা! পপি ফুলের নির্যাস হামাইতে গিয়া বাংলার প্রায় সকল আদম নপুংসক হইবার যোগাড় হইয়াছে! এইভাবে আর কিছুদিন চলিলে দেশে যন্ত্রবান পুরুষ পাওয়াটা দুষ্কর হইয়া পড়িবে। কেবলই রাজত্ব করিবে ষড়যন্ত্রী পুরুষ আর নয় তো যন্ত্রহীনা নারী! মজারের সেবাদাসনামার চটি পোদ্য অথবা ইন্ডিয়ার বিশেষ শক্তিবর্ধক দাওয়াইও আর যন্ত্র তুলিতে পারিবে না। দেশ যদি সত্যই উন্মাদ হয়ে যায় তাইলে নারী গ্রন্থ প্রবর্তনা কী দাওয়াই দিবে সেটাই শুধু বুঝিতে পারিলাম না।

---------------------------------------
কুটুমবাড়ি

লেনিন [অতিথি] এর ছবি

আফগানিস্তানের পপি ফুল হাসি

"নৌকা মাঝ নদীতে গেল। মাঝনদীতে পৌছাতে পৌছাতে জোছনা একটা দোররা কাউয়ায় রুপান্তরিত হল।" ব‍্যান করার তেব‍্য দাবী জানায়া গেলাম!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হা হা হা হা... মজা পাইলাম। বরবাদ মাজহার সাহেব ফেসবুক বন্ধ করা নিয়া কোনো বাণী দেয় নাই?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।