উলকি আঁকা বৈশাখ।

থার্ড আই এর ছবি
লিখেছেন থার্ড আই (তারিখ: বিষ্যুদ, ০২/০৮/২০০৭ - ৮:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এবারের বৈশাখে নওরিতার আনন্দ একটু বেশী বলে মনে হয়েছে অলেকের। গেল বছর অলক নওরিতাকে নিয়ে বৈশাখী মেলাতে বেড়াতে যায়নি বলে সেই অপরাধবোধ থেকেই এবারের বাড়তি প্রস্তুতি। গেলো বছর এক অনুচ্ছেদ ফিচার লেখার উপজিব্য খুঁজতে অলক পালিয়ে গিয়েছিলো বান্দরবান,বৈসাবি জল উৎসব দেখতে। নওরিতার সেবার খুব অভিমান হয়েছিলো। নওরিতার অপেক্ষা অলক হলিডেতে আসবে , নওরিতা আটপৌড়ে শাড়ি শাড়ি পড়বে, পায়ে আলতা দেবে, কাঠ বেলী দিয়ে গড়া গাজরা পড়বে খোপায়। সব কিছুই আগে থেকে গোছানো ছিলো নওরিতার। তবে অলকের পাঞ্জাবী কেনা হয়নি। চৈত্র সংক্রান্তীর আগের রাতে আড়ং এ ভীরের মধ্যে অলকের চোখে পরলো গেরুয়া রঙ্গের সর্ট পাঞ্জাবী।

বাবা মারা যাবার পর অলক কোন উৎসবে কিছু কেনে না । অলকের উৎসব বলতে এক বৈশাখী মেলা। বছরের ঐ একদিনই অলক খুব ঘটা করে একটা পাঞ্জাবী কেনে। নওরিতা মুগ্ধ হয়ে অলকের পাঞ্জাবি কেনা দেখে। শুধু অলকই না সাধারন মানুষের শপিং দেখে মনে হচ্ছে যেন ঈদের শপিং করছে সবাই।

ভোর হতেই ঢাকাবিশ্ব বিদ্যালয় এলাকায় মানুষের উপচে’ পরা ভীর। চারদিক থেকে স্রোতের মত মানুষ আসছে। এবারের মানুষের ভয়মনে হচ্ছে অনেক কম। তত্বাবধায়ক সরকারের সামগ্রীক উদ্যোগ মানুষের আত্নবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। রমনা বটমূল ও বিশ্ব বিদ্যালয় এলাকার আশে পাশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পায়ে হাঁটা ছাড়া গত্যান্তর নেই। সমস্যা হলো নওরিতাকেনিয়ে।শাড়ি পরে নওরিতা বেশীন হাটতে পারেনা। একটু পর পর অলকের পাঞ্জাবী টেনে ধরে নওরিতা। ” -এই অলক একটু আস্তে হাটোনা, আমার শাড়ি খুলে যাবে তো। খানিকন থেমে অলক আবার লম্বা পা বাড়ায়। নওরিতা এবার অলকের হাত টেনে ধরে বললো আমাকে ফেলে একা একা হাটছোকেন? আমার হাত ধরে হাটতে কি তোমার লজ্জ্বা লাগছে নাকি? নওরিতাকে থামিয়ে অলক কাঁধ থেকে হাতে তুলে নেয় তার শখের ক্যামেরা। ক্লিক ক্লিক শব্দের সাথে বিদ্যুতের মতো কয়েক ছটা আলোর ঝলক।
উলকি আঁকা বৈশাখদেখো নওরিতা কি অসাধারন ছবি । দেখো মেয়েটির গালে আঁকা উলকিটা কি অসাধারন হয়েছে! থামো, আরো কয়েকটা ছবি তুলে নেই...
নওরিতা চারু কলার বকুল তলের সবুজ ঘাসে বসে পড়ছে,”
- তুমি তোমার ছবি তুলো ,আমার সাথে বেড়াতে হবেনা” নওরিতার মুখে অভিমানী সুর। অলক নওরিতাকে ছাড়িয়ে খানিকটা দুরে সরে এসেছে,নওরিতার অভিমানী মুখ খানিকটা আড়াল হলেও অলকের ক্যামেরার সার্টার চলছে।
আমের চাটনি বিক্রেতা, বেলুন ওয়ালা,চরকি ওয়ালা কিংবা রাজপথে শসা বিক্রির দৃশ্য নিশ্চই বিলেতের লোকজনের কাছে আকর্ষনীয় হবে। এই ছবি তুলতেই হবে। বাংলাদেশের বৈশাখের একটা খন্ড চিত্র পাবে বিলেতের নতুন প্রজন্ম। রাস্তার মোড়ে মোড়ে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো দল বেঁধে গান গাইছে। মেয়েরা হাতে আর গালে সমানে উলকি আকছে। ছেলেরা বাংলাদেশের পতাকা মাথায় দিয়ে কাঠ ফাটা রোদে হেটে বেড়াচ্ছে , কি অসাধারন আবহ!!

ফুদিয়ে যে ছেলেটি স্বপ্নের বুদ বুদ ছড়াচ্ছে অনন্ত আকাশে, সে হয়তো জানেনা দৃশ্য টি দেখতে কতটা অসাধারন! সে শুধু এই টুকু জানে এই স্বপ্নের বুদ বুদ তাকে রাতের খাবার জোগার করে দেবে। এবারের বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির পিছনের দিকে একটা বিশাল আকৃতির ক্রিকেট ব্যাট রাখা হয়েছে। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম ক্রিকেট ব্যাট । সবাই ঐ ক্রিকেট ব্যাটে স্বার করছে, ব্যাটের এক জায়গায় লিখা,” হাবিবুল এখনও খেলে” ? অলক দীর্ঘতম ক্রিকেট ব্যাটে স্বার করলো।

নওরিতার এসব নিয়ে ভ্রপে নেই ,তার আনন্দ অলককে একটু ছুঁয়ে থাকা, একটু পাশে বসে থাকা, বেশ কিছু সময় এক সাথে কাটানো। বৈশাখী মেলায় নাগর দোলা চড়া, কিংবা দুপুরে একসাথে ভর্তা দিয়ে ভাত খাওয়া।
নওরিতা একটু তাকাওতো ,তোমার অভিমানী রক্তীম মুখের একটা ছবি তুলি। অলক শোন, ন্যাকামো করবে না। তোমার এইসব ঢং আমার অসহ্য লাগছে,তুমি বরং উলকি পরা মেয়েদের ছবি তুলো, আমার ছবি তুলতে হবেনা। অলকের মুখে অপরাধের ছায়া। চোখ ঢেকে দেয়া চুলের গুচ্ছ সরিয়ে নওরিতার পাশে বসলো অলক। ক্যামেরার ডিসপ্লে অপশনে গিয়ে অলক একে একে সব ছবি নওরিতাকে দেখাতে লাগলো।দেখো কি অসাধারন সব ছবি। নওরিতা তুমি কি জানো লণ্ডনেও বৈশাখী উৎসব হয়। ওখানের ছেলেমেয়েরা যারা বাংলাদেশের বৈশাখী মেলার এই আনন্দ উপভোগ করতে পারেনা তারা যদি এইসব দেখে কত খুশি হবে।

-অলক তুমি হলিডেতে এসেও বিলেতের মানুষকে খুশি করার এসাইনমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত, আর যে নওরিতা তোমার জন্য এক বছর অপোক্ষা করে থাকে তাকে খুশি করতে কি করছো শুনি?
-অলক ক্যামেরা বন্ধ করলো। নওরিতার হাত ধরে টেনে তুললো , চলো আজ তোমাকে নাগর দোলা চড়াবো। যতক্ষন আমাদের মাথা না ঘুরে আমরা ততক্ষন নাগর দোলা চড়বো।
-না না আমার ভয় লাগে। চলো আমরা আমের চাটনি খাই।
নওরিতার হাত ধরে অলক বললো চল......

প্রথম প্রকাশঃ ৯ মে ২০০৭ সামহোয়্যার ইন


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

নাগর দোলায় চড়ে ও আমের চাটনী খেতে পারে অলক ও নওরিতা ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

থার্ড আই এর ছবি

নওরিতা একটু ভীতু স্বভাবের মেয়ে,এর আগে অলকের সাথে যথবার নাগর দোলায় চড়েছে, ততবার নওরিতা অলককে ধরে রেখেছিল। আমের চাটনি হাতে নিয়ে নাগর দোলায় চড়লে অলকে ছুঁয়ে থাকা যাবেনা যে...
---------------------------
জল ভরো সুন্দরী কইন্যা, জলে দিছ ঢেউ।
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

নওরিতা বাদ দিয়ে অন্য মেয়েদের ছবি তোলাটা বেশ রোমান্টিক মনে হচ্ছে!!!
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

থার্ড আই এর ছবি

উলকি আঁকা মেয়েটা অলকের কাছে কলসিতে তোলা জল,তৃষণা পেলেই কেবল যে জল সাময়িক তৃপ্তি মেটায়।
আর নওরিতা তো অলকের কাছে দিঘী,যাতে অলক সাতার কেটে বেড়ায়।
----------------------------
জল ভরো সুন্দরী কইন্যা, জলে দিছ ঢেউ।
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।