স্মার্টফোন জার্নালিজম

থার্ড আই এর ছবি
লিখেছেন থার্ড আই (তারিখ: শুক্র, ১৫/০৫/২০১৫ - ৬:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তানভীর আহমেদ।
সম্প্রতি ফেইসবুকে আমার কয়েকটি ভিডিও আপলোড করার পর থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, আমার এক সহকর্মী তো বলেই ফেললেন আমি কি নিজের প্রচারে ব্যস্ত হয়ে গেলাম কিনা? ব্যক্তিগত মতামত প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ভিডিও ব্লগিং করে কেউ কেউ যেমন নিন্দিত হয়েছেন, তেমনি নন্দিত হয়েছেন অনেকেই। ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ কিংবা কোন ঘটনার প্রতিউত্তরে পাল্টা জবাব দিতে এধরণের ভিডিও ব্লগিং শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। যেমনটা আমরা ব্যাপকভাবে দেখেছি বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলাকালে। 'মওকা মওকা' ভিডিওগুলো হচ্ছে ভিডিও ব্লগিংএর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু স্মার্টফোন ব্যবহার করে সাংবাদিকতার ধারণাটি এখনো এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি, সেকারণেই হয়তো আমার বন্ধু ও একাধিক সহকর্মী মনে করেছেন এই ভিডিও হয়তো আমি নিজের প্রচারের জন্যই ছেড়েছি। তবে সেলফি স্টিক ব্যবহার করে স্মার্ট ফোন জার্নালিজমের এই নতুন ধারণাকে আবার স্বাগত জানিয়েছেন আমার সহকর্মী একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মাহবুব স্মারক, দেশ টিভির রির্পোটার ইশরাক সিদ্দিকীসহ বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী। তারা নতুন এই আইডিয়াটি পছন্দ করে বলেছেন, বাংলাদেশে এধরণের স্মার্টফোন দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু হওয়া প্রয়োজন। সহকর্মী ঈশা খান রাশেদ অবশ্য পরে স্বীকার করেছেন তার ধারণাটি ভুল। তাকে বললাম, 'আমাদের দেশে সাংবাদিকতায় এখনো এই বিষয়টি যুক্ত হয়নি বটে, কিন্তু ব্রিটেনের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যাল্যে স্মার্টফোন ব্যবহার করে একজন গণমাধ্যমকর্মী কিভাবে দ্রুত সংবাদ প্রচারে এগিয়ে থাকতে পারেন সে বিষয়ে রীতিমতো পাঠদান শুরু হয়ে গেছে। হয়ত বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাংবাদিকতা শুরু হবে কোন একদিন।'

এবার শুরুর দিকের কথা বলি, ২০১২ সালে আমি তখন একাত্তর টেলিভিশনে লন্ডন প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেছি মাত্র, তখন থেকেই স্কাইপ সংযোগের মাধ্যমে একাত্তর টিভিতে প্রথম সংযুক্ত হই লন্ডন অলিম্পিকের সংবাদ নিয়ে। স্কাইপ সংযোগের মাধ্যমে লন্ডন থেকে সরাসরি সংবাদ প্রচারের সেই ধারণাও বাংলাদেশে পরিচিত করিয়েছে একাত্তর টিভি। তবে মোবাইল ফোনে আনএডিটেড সাক্ষাৎকার সংযুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে তথ্য শেয়ার করা তখনো শুরু হয়নি। চলতি মাসের ৭ তারিখে আমি যখন ব্রিটেইনের জাতীয় নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাই, তখন আমার সহকর্মী ও সামাজিক বন্ধুরা টেলিফোন ও ফেইসবুকে আমাকে একটু পরপরই ক্ষুদে বার্তা পাঠাচ্ছেন টিউলিপ আর রুপা হকের ফলাফল কি সেটি জানতে। বন্ধু বলে মানবো কিন্তু বন্ধুর অধিকার বলে তো একটা বিষয় আছে, সেটাতো অমান্য করা যায় না। ফেইসবুকে হাজার হাজার বন্ধু যেহেতু তালিকায় স্থান দিয়েছি তাই তাদের প্রতি যেমন আমার একটা দায়বদ্ধতা আছে তেমনি গণমাধ্যম কমী হিসেবে আমার কাছে তাদেরও প্রত্যাশা একটু বেশিই বলা চলে। মূলত সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমি প্রথম স্মার্টফোন ভিডিও জার্নালিজম শুরু করি ৭ মে ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনের দিন। যদিও ঘড়ির কাটা তখন রাত ১:৩০ মিনিট, সেই অর্থে ৮ মে প্রথম স্মার্টফোন রিপোর্ট পোস্ট করি ফেইসবুকে। তার পর দেখলাম কয়েকজন সাংবাদিক একই পদ্ধতিতে স্মার্টফোন ব্যবহার করে একাধীক বাংলাদেশী সাংবাদিক ভিডিও ছেড়েছেন। আসলে টেলিফোনে সকলের উত্তর দেওয়া আর ফেইসবুক বন্ধুদের কৌতূহল মেটাতেই তাৎক্ষণিক এই সংবাদ প্রচারের জন্য স্মাটফোনের ব্যবহার করার চিন্তা থেকেই কাজটা শুরু করি। প্রথমবার সেলফি স্টিক ব্যবহার করিনি। দ্বিতীয় দিন ১২ মে যখন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সংবাদ সংগ্রহ করতে ব্রিক লেইন গেলাম তখন প্রথমবারের মতো সেলফি স্টিক দিয়ে ভিডিওটি ধারণ করে ফেইসবুকে ছাড়ার পর পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত পেয়েছি। সর্বশেষ ভিডিওটি পোস্ট দিয়েছি লন্ডনের বৈশাখী মেলার আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে ১৩ মে।

স্বীকার করে নিচ্ছি এই ভিডিওগুলোতে ফলস লুক ছিলো, যা সাধারণত আমরা টেলিভিশন সাংবাদিকরা এড়িয়ে চলি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এখানে রিপোর্টারই সংবাদ প্রচারক ও ক্যামেরাপারসন। সেলফি স্টিকে আটকে রাখা মোবাইল ফোনের দিকে চোখ রাখতে গিয়ে সাক্ষাৎকার গ্রহীতার দিক থেকে বার বার চোখ সরে যাওয়া হয়তো দর্শকদের বিরক্তির কারণ তৈরী করতে পারে, কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন এই ভিডিওর মানের চেয়ে দর্শকদের কাছে তাৎক্ষণিক তথ্যটি অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। নেপালের ভূমিকম্পের সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্র গণমাধ্যমে কিন্তু মোবাইলে ধারণ করা ছবি আর ক্লোজ সার্কিট ক্যমেরার ছবিই প্রচার হয়েছিলো সবার আগে। সাধারণ জনগণের আপলোড করা ছবি আর ভিডিওগুলোই হয়ে উঠেছিলো সংবাদের মূল সোর্স, তাই ছবির মান এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়, বিবচনার বিষয় সংবাদের বিষয়বস্তু ও কতটা দ্রুত সময়ে সেই সংবাদ আপনি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারছেন। প্রচারের এই পদ্ধতিটি আমি শুরু করেছি মাত্র, হয়তো সামনে আরো পরিচ্ছন্ন ভিডিও রেকর্ডিং সহ পোস্ট করা সম্ভব। এখানে ভিডিওর মানের নিশ্চয়তা হয়তো দেওয়া সম্ভব হবে না, কিন্তু সাধারণ জনগনকে সবচেয়ে দ্রুত সংবাদ পৌঁছে দেয়ার নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব। সাধারণত টেলিভিশন সাংবাদিকরা ভিডিও ধারণ করে অফিসে ফিরে দিনের শেষে একটা স্টোরি তৈরী করেন, সেটি প্রচার করতে অন্তত কয়েক ঘন্টা দেরী হয়ে যায়। কিন্তু আধুনিক নেটিজেনরা সংবাদের তথ্য জানতে চায় তাৎক্ষণিকভাবে। এই চাহিদা পূরণে স্মার্টফোন জার্নালিজম হতে পারে অন্যতম বিকল্প। আপনি আপনার টেলিভিশন কিংবা সংবাদ পত্রের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করলেন, সেটি অফিসে ফিরে রিপোর্ট তৈরী করে বিস্তারিত সংবাদ দিবেন ঠিকই কিন্তু তার আগে তাৎক্ষনিকভাবে স্পটে দাঁড়িয়েই আপনার স্মার্টফোন দিয়ে কয়েক মিনিটের ভিডিও আপলোড করে আপনার বন্ধু, ভক্ত কিংবা ফলোয়ারদের সংবাদটা জানিয়ে দিতে পারেন। সংবাদের বিস্তারিত কোন গণমাধ্যমে আসবে সেই সংক্রান্ত একটা ঘোষণা থাকলেও সেটি দেখার জন্য আপনার ভক্তরা অপেক্ষা করবে।

আশা করি যেসকল সাংবাদিকরা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, তারা এখন একটি সেলফি স্টিক কিনে এই স্মার্টফোন জার্নালিজম শুরু করে সাধারণ মানুষের আরো কাছে চলে যেতে পারবেন। বিশ্বজুড়ে চলছে সেলফি যুগ। গণ্মাধ্যম কর্মী হিসেবে আমরা এই স্মার্টফোন কাজে লাগিয়ে শুরু করতে পারি মোবাইল জার্নালিজম । এমন অনেক সংবাদ আছে যা টেলিভিশন কিংবা সংবাদ পত্রের জন্য সংবাদ নয়, অথবা আপনার সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদকীয় নীতির সাথে সাঙহর্ষিক, এমন সংবাদ আপনি স্মার্টফোনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে মনে রাখতে হবে সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে। সাংবাদিকতার সকল নিয়মই আপনাকে এখানে মেনে চলতে হবে। যদিও সংবাদ প্রচার ও সংবাদ সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে আপনি শুধু ব্যবহার করছেন মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, কিন্তু আপনি নিজের ব্যক্তিস্বত্তাকে সাংবাদিক হিসেবে অক্ষুন্ন রেখেই এই প্রযুক্তিটি ব্যবহারে অভ্যস্ত হবেন।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

চলুক

থার্ড আই এর ছবি

হাসি

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

রাইট! এই যুগে এসে তার সাথে তাল না মিলিয়ে পুরোনো পদ্ধতি আঁকড়ে ধরে থাকার কোনো মানে হয় না।

থার্ড আই এর ছবি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ ,সমস্যা হলো টেলিভিশন সাংবাদিকতার মান উন্নয়নের জন্য যে প্রত্যেকটি স্টেশনে রিসার্চ টিম থাকা প্রয়োজন সেটা আমাদের দেশে এখনো গড়ে উঠেনি। ম্যানহোলে মানুষ পড়লেও যেমন ঘন্টার পর ঘন্টা লাইভ সংবাদে আমাদের ক্লান্তি থাকেনা অন্যদিকে মালেয়শিয়া কিংবা থাইল্যাণ্ডে মানুষ ডুবে মড়লেও আমাদের কিছু যায় আসে না, সেখানে সাংবাদিক পাঠানো নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই কারণ বাজেট নাই!

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।