ঋণে নয় , নিজের টাকায় হতে পারে পদ্মা সেতু ।

থার্ড আই এর ছবি
লিখেছেন থার্ড আই (তারিখ: বুধ, ২২/০২/২০১২ - ৭:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তানভীর আহমেদ
পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে সরকারের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করা দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশকে মালয়শিয়া , চীন , কোরিয়া কিংবা ইংল্যান্ড পেয়ে বসেছে। বিশ্ব ব্যাংকের দাদাগিরি, শর্ত আরোপ, তথাকথিত প্রমাণহীন দূর্নীতির অভিযোগ ও সেতুর অর্থায়ন প্রত্যাহারের ঘোষণার পরও পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়শিয়ার প্রস্তাব মেনে নিলে মোটা দাগে আসলে ক্ষতিটা হচ্ছে বাংলাদেশের।

১৯ ফেব্রুয়ারীর প্রথম আলোর সংবাদ পড়ে মনে হলো বাংলাদেশের মথায় কাঁঠালটা ভাঙ্গতে চাচ্ছে মালয়শিয়া। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সেতুতে মালয়েশিয়া বিনিয়োগ করতে চায় ২৩০ কোটি মার্কিন ডলার , আর ৩৪ বছরে লগ্নীকৃত অর্থের বিনিময়ে তারা টোল আদায় থেকে তুলে নিবে প্রায় ১২০০ কোটি ডলার, বিনিয়োগের পাঁচ গুণ লাভ! সেতুর আয়ু ১০০ বছর ধরে, শর্ত অনুযায়ী ৫০ বছর সেতুর মালিকানা থাকবে মালয়শিয়া সরকারের। সেতু নির্মাণ হলে তার আশেপাশে অন্য কোন সেতু নির্মাণ করা যাবেনা, ফেরী চলাচলও বন্ধ রাখতে হবে, আয়ের উপর কর মওকুফ , প্রত্যাশিত গাড়ী চলাচল না করলে আবার ভর্তুকি গুণতে হবে বাংলাদেশকে ! এতো কিছু সহ্য করে তবুও কেন নিজের দেশের অর্থ মালয়শিয়ার হাতে তুলে দিতে হবে ?

বাংলাদেশের সমস্যা বাংলাদেশের ২৩০ কোটি ডলার ক্যাশ নেই, নেই সেতু বানানোর প্রযুক্তি আর পরিকল্পনা। বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা যদি শিকাগোর জন হ্যানকক সেন্টার কিংবা সিয়ার্স টাওয়ারের মতো বিশ্বের সেরা নির্মাণশৈলীর কারিগর হতে, পারেন তাহলে নিজের দেশের একটা সেতু বানাতে পারবে না কেন ? তাও যদি না পারে তাহলে বিশ্বের যেকোন দেশ থেকে প্রকৌশলী কিংবা পরামর্শক নিয়ে আসা যায়, দরকার শুধু টাকা।

যদি সরকার মালয়শিয়াকে ৫ গুণ লাভ দিতে পারে তাহলে নিজ দেশের ব্যাংক কিংবা প্রবাসীদের দ্বিগুণ লাভ দিলেই অনায়াসে সরকার ২৩০ কোটি ডলার অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। প্রবাসীরা দেশে কোটি কোটি টাকা জলে ফেলছে শুধু বাড়ী আর ফ্ল্যাট কিনে। যে সকল বাড়ীতে তারা বছরে একবার হলিডে করতে আসেন বাকী ১১ মাস এই ফ্লাট ও বাড়ী নামমাত্র মূল্যে ভাড়া দিয়ে রাখেন। আমি ব্রিটেনের প্রেক্ষাপটে প্রবাসীদের বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বাড়ী ভাড়া থেকে যে আয় হয় সেই আয় পুরোটাই খরচ হয়ে যায় যিনি সেই ফ্লাট কিংবা বাড়ী রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন তার পিছনে। তাহলে কোটি টাকা লগ্নি করে বানানো বাড়ীর ফলাফল হলো এলাকায় তার নাম ডাক হয়, অমুক একটা বাড়ী বানিয়েছেন । সরকার যদি এমন প্রবাসীদের আকৃষ্ট করতে পারে যারা দেশে বিনিয়োগ করতে চায়, তারা অন্তত বলতে পারবে আমি দেশের পদ্মা সেতুর মালিক , দেশে বিনিয়োগ করেছি। হিথ্রো বিমান বন্দরের নতুন এক্সটেনশন নির্মাণে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এমন পরিকল্পনা করে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে। আমাদের দেশে যেহেতু সাধারণ মানুষ ঝুঁকিহীন বিনিয়োগের পথ খোজে এক্ষেত্রে সরকারী তত্বাবধানে পদ্মা সেতু প্রকল্প হতে পারে একটি ঝুঁকিহীন বিনিয়োগ।


সরকারকে প্রকল্প তৈরী করে প্রাথমিক বিনিয়োগটা করতে হবে । নির্মাণ ব্যায়, নকসা তৈরী, শেয়ার মূল্য ও লাভের হিসাব করে সরকার হাই কমিশনগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের কাছে পদ্মা সেতুর শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব করতে পারে। অন্যদিকে ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে সরাসরি অর্থ সংগ্রহ করতে পারে সরকার। দেশে যে সকল বেসরকারী ব্যাংক রয়েছে তারাও সরকারকে অর্থ সহায়তা দিতে পারে, বিনিময়ে সরকার তাদের বছর বছর মুনাফা দেবে। মোট কথা, সরকার জনগের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে যৌথভাবে কাজ করলে ২৩০ কোটি ডলার সংগ্রহ সময়ের ব্যাপার মাত্র। ১০০ টাকা বিনিয়োগ করে যদি কেউ ২০০ টাকা লাভের নিশ্চয়তা পায় তাও আবার সরকারের কাছ থেকে তাহলে যিনি হিসাব কিংবা বাণিজ্য বোঝেননা তিনিও বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন। রাজউকের প্লট পাবার জন্য যেমন মানুষের মধ্যে প্রবল উৎসাহ আছে তেমনি প্রকল্প নিয়ে রয়েছে নানান অভিযোগ। এধরণের প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে দীর্ঘসূত্রীতা ও দূর্নীতি হবেনা, সরকারকে এই বিশ্বাসের জায়গাটা তৈরী করতে হবে। দেশের প্রয়োজনে দরকার হলে জনগন আরো ৫ বছর কষ্ট করবে। সরকার আগামী ৫ বছরে অর্থ সংগ্রহ করে সেতুর কাজ শুরু করতে পারে। এখন যদি আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করতে তাদের মেয়াদকালেই পদ্মা সেতুর ফিতা কাটতে হবে, তাহলে আমাদের পরনির্ভরশীলতা কমবেনা। তবে সরকার কতটা দূর্নীতিমুক্ত আর সদিচ্ছা দেখাবে এধরণের দীর্ঘ মেয়াদী ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সেটিই বড় প্রশ্ন।


মন্তব্য

স্বাধীন এর ছবি

সহমত চলুক

থার্ড আই এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

তানভীর এর ছবি

আপনের আইডিয়া ভালু। কিন্তু মালয়েশিয়াকে পাঁচ গুণ লাভে বিনিয়োগ করতে দিয়ে তেনারা যে বখরা পাবে, আমাকে-আপনাকে দ্বিগুণ লাভে বিনিয়োগ করতে দিলে তেনাদের বখরায় কম পড়ে যাবে না! উনি কি আপনার চেয়ে কম বুঝে, নাকি আপনি ওনার চেয়ে বেশি দেশপেমিক? ম্যাঁও

নাফিসা এর ছবি

অসাধারণ মন্তব্য ! বিড়ালটারেও এইখানে হেভী সুইট লাগছে! হাসি

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি
রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

উত্তম জাঝা!

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক

থার্ড আই এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

থার্ড আই এর ছবি

উনি কি আপনার চেয়ে কম বুঝে, নাকি আপনি ওনার চেয়ে বেশি দেশপেমিক?

উনি যে আপনার আমার চেয়ে কম বুঝেন তার প্রমাণ হলো উনি পলিসি মেকিংএ আছেন আর আপনি আমি এর বাইরে, কারণ আমাদের দেশে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সাধারণত কম বুঝা লোক জনই বসেন। আমি অতি দেশ প্রেমিক বলেই তো দেশ ছেড়েছি এটাও বুঝেন না?

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি
থার্ড আই এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

দুর্দান্ত এর ছবি

মাল‌‌য়শিয়ার ব্য়াপারে একটা অসুবিধা। সেখান থেকে যদি কোন বিনীয়োগ আসে, তাহলে সেটা আমাদের কোশাগারের খোয়া যাওয়া টাকা কিনা, সেটা আগে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। শুনেছি দেশনেত্রী ও গণতন্ত্রের মানসকন্য়া উভয়ের অনেকগুলো পারিবারিক সিন্দুকের অবস্থান মালায়শিয়ায়।

বাংলাদেশ সরকার যে উপায়ে সরকারি খরচের জন্য় বাজার থেকে ধারকরয করে থাকে, সেই শরতেই কিন্তু তারা বাজার ও বিদেশ থেকে সেতুর জন্য় টাকা নিয়ে আসতে পারে। অনাবাসি দেশীদের এখা্নে টাকা খাটানোতে উতসাহের কথা তো নতুন কিছু না। তদুপরি আরো কিছু উপায় একটি সেতু ফান্ড গঠন করা যেতে পারেঃ

১) 'জাগো' কে প্রতি মাসে একবার পদ্মা সেতু ফান্ডের টাকা তুলতে নামানো যেতে পারে।

২) মোবাইল ফোন, কেবল অপারেটর, শপিং মল ও বড় আকারের গাড়ির ওপর বিশেষ সেতু ফান্ড শুল্প বসানো যেতে পারে।

২) আরমি অফিসারস ট্রাস্ট, নিরবাচিত সাংসদ (৩০০ জন), বিবিধ চেম্বার কমারস, ডাক্তার-হিসাবরক্ষক-ইন্জিনিয়ার এর মত পেশাজীবিদের সংগঠন ও বিজি/টি এম ই ইত্য়াদি, নিরবাচিত সদস্য়গণ, বাস-ট্রাক মালিক/স্টক বাজারের লাইসেন্সধারি এবং রিয়েল এস্টেট কোম্পানির পরিচালক, দের কাছ থেকে আগামি দুই/তিন বছর মাথাপিছু প্রতিবছর ৫০ লাখ টাকা করে চাঁদা আদায় করা যেতে পারে। বছরে ৫০ লাখ টাকা এদের কাছে পানিভাত হওয়ার কথা।

৩) গণতন্ত্রের মানসকন্য়া, দেশনেত্রী, পল্লীবন্ধু, জাতীর নাতি ইত্য়াকার যাবতীয় উপাধি ব্য়াবহারকারিদের প্রতি ব্য়াবহারের জন্য় বাধ্য়তামূলক এক কোটি টাকা সেতু ফান্ডে জমা রাখা যেতে পারে।

৪) বিবিসি তে যেরকম 'রেড নোজ ডে' তে টাকা ওঠানো হয়, সেভাবে সারা দেশে ও বিদেশে প্রতিটি টেলিভিশন চ্য়ানেলে পর পর দুইদিন একযোগে ফান্ড রেইজিনং ক্য়াম্পেইন করা যেতে পারে।

থার্ড আই এর ছবি

দুর্দান্ত আপনার ফান্ড রেইজিংএর কনসেপ্টও ভালো, কিন্তু গণহারে টাকা তুলতে গেলে সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণটা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। এভাবে ফান্ড রেইজিংএ যারা টাকা তুলবে তাদের ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম হবার সুযোগ উড়িয়ে দেয়া যাবে না। আবেগের কারণে শুরুটা ভালো হলেও দীর্ঘ মেয়াদে কেউ জনসেবায় সময় দিতে চাইবেনা ব্যক্তিগত লাভটা না থাকলে। তবে এই সকল গ্রুপ গুলোকে শেয়ার বিক্রিতে উৎসাহ যোগাতে কাজে লাগানো যেতে পারে। মন্তব্যের জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

তানিম এহসান এর ছবি

এই ধরনের কাজে মূল কাজটা কিন্তু সরকারী বিনিয়োগেই হয়, হয় আমাদের ট্যাক্সের পয়সায়। বকি যা কিছু সব যায় লুটপাটে .. এই লুটপাটে দাতা’রা জড়িত থাকেন অন্যভাবে, তাদের টাকা তারা কড়ায় গণ্ডায় ফিরিয়ে নিয়ে যান, শুধুমাত্র কনসালটেন্সি ফি দিয়েই ওসব হয়ে যায়।

আপনার প্রস্তাবনা ভালো, এবং যথার্থ; সমস্যা হচ্ছে এইসব ভালো প্রস্তাবনায় যাদের খয়রাতি স্বভাব, তাদের ভালো লাগেনা।

বাংলাদেশের সম্পদ বাংলাদেশ পায়না, সবাই ভাগ করে নিয়ে যায় কালো মানুষেরা - আমরাই শুধু বিভক্ত থেকে যাই নিজেদের ভেতর

থার্ড আই এর ছবি

বাংলাদেশের সম্পদ বাংলাদেশ পায়না, সবাই ভাগ করে নিয়ে যায় কালো মানুষেরা - আমরাই শুধু বিভক্ত থেকে যাই নিজেদের ভেতর

ঠিক বলেছেন, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

কুমার. এর ছবি

চলুক সহমত

তারেক অণু এর ছবি
দিগন্ত এর ছবি

আপনার প্রথম ধারণা হল যে ২৩০ কোটি ডলারের বিনিময়ে ১২০০ কোটি ডলার রিটার্ন এলে সেটাতে সবাই আগ্রহী হবে। আরেকটা ব্যাপার বাদ গেছে, সেটা হল রক্ষণাবেক্ষণ - যেটা ধরলে খরচা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫০ কোটি ডলারে। অর্থাৎ, ৫৫০ কোটি ডলারে আয় হল ১২০০ কোটি ডলার, তাও ৩৪ বছরে।

বাংলাদেশে জাতীয় সেভিংস সার্টিফিকেটে ১০০ টাকা ১৫৫ টাকায় রূপান্তরিত হয় মাত্র ৫ বছরে। প্রতি পাঁচ বছরে জমিয়ে গেলে ১০০ টাকা থেকে ২১৫০ টাকা পাওয়া যাবে ৩৫ বছরে। একই হিসাবে ২৩০ কোটি ডলারের রিটার্ণ আসার কথা প্রায় ৫০০০ কোটি ডলারের মত। অর্থাৎ, মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশ সরকার যে হারে সুদ দিচ্ছে, দেশে তার থেকে অনেকগুণ বেশী হারে সুদ দিয়ে টাকা নিচ্ছে সরকার। সেই টাকায় দেশের অভ্যন্তরে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হতে পারে। কিন্তু সেইরকম হলে তো প্রবাসীদের মধ্যে হিড়িক পড়ে যাবার কথা বাংলাদেশের জাতীয় সেভিংস সার্টিফিকেট কেনার জন্য, তাই না? কিন্তু সেরকম কিছু দেখা যায় না। একটা কারণ মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় মূল্য পরিবর্তনশীল। আগামী ৩৫ বছরে ডলারের বিনিময়মূল্য ৮০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা হয়ে গেলে রিটার্ণ কমে ১২৫০ কোটি ডলার হয়ে যাবে, যদিও এরকম কিছু ঘটার সম্ভাবনা কম। (ট্যাক্সের হিসাবটা বাইরে রাখলাম, কারণ তাতে আরও জটিল হবে হিসাবটা)

সহজ কথায় দেশ থেকে টাকা তোলা গেলে বাংলাদেশও সেটাই করত, না করার কোনো কারণ নেই। কিন্তু দেশে টাকার উৎস নেই বলেই বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার কাছে হাত পাতছে।

এইবারে অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। বিশ্বব্যাঙ্ক এর থেকে অনেক সহজে ঋণ দিতে চেয়েছিল, কিন্তু রাজনৈতিক ঘোলা কারণে সরে দাঁড়িয়েছে। এর বিকল্প হিসাবে যারা আসছে তারাও কিছু কম শাইলক নয়। বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে কঠিন শর্ত সাপেক্ষে কেন ঋণ নিতে হয় তার একটা আবছা হলেও উত্তর পাওয়া যাচ্ছে, অন্যান্য ঋণের উৎসও বিশেষ কিছু সুবিধাজনক নয়।

আবার যদি ঋণও নেব না প্রকল্পও এগোবে না - এরকম সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাহলে ভবিষ্যতে পরিকাঠামোগত সব প্রকল্পেই এর ছায়া দেখা দেবে। সেটাও খুব কিছু ভাল হবে না বাংলাদেশের জন্য।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

আপনার প্রথম ধারণা হল যে ২৩০ কোটি ডলারের বিনিময়ে ১২০০ কোটি ডলার রিটার্ন এলে সেটাতে সবাই আগ্রহী হবে। আরেকটা ব্যাপার বাদ গেছে, সেটা হল রক্ষণাবেক্ষণ - যেটা ধরলে খরচা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫০ কোটি ডলারে। অর্থাৎ, ৫৫০ কোটি ডলারে আয় হল ১২০০ কোটি ডলার, তাও ৩৪ বছরে।

বাংলাদেশে জাতীয় সেভিংস সার্টিফিকেটে ১০০ টাকা ১৫৫ টাকায় রূপান্তরিত হয় মাত্র ৫ বছরে। প্রতি পাঁচ বছরে জমিয়ে গেলে ১০০ টাকা থেকে ২১৫০ টাকা পাওয়া যাবে ৩৫ বছরে। একই হিসাবে ২৩০ কোটি ডলারের রিটার্ণ আসার কথা প্রায় ৫০০০ কোটি ডলারের মত। অর্থাৎ, মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশ সরকার যে হারে সুদ দিচ্ছে, দেশে তার থেকে অনেকগুণ বেশী হারে সুদ দিয়ে টাকা নিচ্ছে সরকার। সেই টাকায় দেশের অভ্যন্তরে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হতে পারে। কিন্তু সেইরকম হলে তো প্রবাসীদের মধ্যে হিড়িক পড়ে যাবার কথা বাংলাদেশের জাতীয় সেভিংস সার্টিফিকেট কেনার জন্য, তাই না? কিন্তু সেরকম কিছু দেখা যায় না। একটা কারণ মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় মূল্য পরিবর্তনশীল। আগামী ৩৫ বছরে ডলারের বিনিময়মূল্য ৮০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা হয়ে গেলে রিটার্ণ কমে ১২৫০ কোটি ডলার হয়ে যাবে, যদিও এরকম কিছু ঘটার সম্ভাবনা কম। (ট্যাক্সের হিসাবটা বাইরে রাখলাম, কারণ তাতে আরও জটিল হবে হিসাবটা)

সহজ কথায় দেশ থেকে টাকা তোলা গেলে বাংলাদেশও সেটাই করত, না করার কোনো কারণ নেই। কিন্তু দেশে টাকার উৎস নেই বলেই বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার কাছে হাত পাতছে। মালয়েশিয়া নিজেও কিন্তু বন্ড ছেড়ে বা ব্যাঙ্ক-লোন নিয়েই টাকা আনবে। কিন্তু তারা অনেক সহজে ঋণ পাবে, যেটা বাংলাদেশ পাচ্ছে না।

এইবারে অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। বিশ্বব্যাঙ্ক এর থেকে অনেক সহজে ঋণ দিতে চেয়েছিল, কিন্তু রাজনৈতিক ঘোলা কারণে সরে দাঁড়িয়েছে। এর বিকল্প হিসাবে যারা আসছে তারাও কিছু কম শাইলক নয়। বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে কঠিন শর্ত সাপেক্ষে কেন ঋণ নিতে হয় তার একটা আবছা হলেও উত্তর পাওয়া যাচ্ছে, অন্যান্য ঋণের উৎসও বিশেষ কিছু সুবিধাজনক নয়।

আবার যদি ঋণও নেব না প্রকল্পও এগোবে না - এরকম সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাহলে ভবিষ্যতে পরিকাঠামোগত সব প্রকল্পেই এর ছায়া দেখা দেবে। সেটাও খুব কিছু ভাল হবে না বাংলাদেশের জন্য।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

থার্ড আই এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ

আপনার প্রথম ধারণা হল যে ২৩০ কোটি ডলারের বিনিময়ে ১২০০ কোটি ডলার রিটার্ন এলে সেটাতে সবাই আগ্রহী হবে।

না আমার যুক্তি হলো বিনিয়োগের পাঁচ গুণ লাভ মালয়েশিয়াকে না দিয়ে বরং প্রবাসী বাংলাদেশীদের আকৃষ্ট করা। দেশের ভিতরেই কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়া। লাভের টাকাটা দেশের ভেতরেই রেখে দেয়া।

বাংলাদেশে জাতীয় সেভিংস সার্টিফিকেটে ১০০ টাকা ১৫৫ টাকায় রূপান্তরিত হয় মাত্র ৫ বছরে। প্রতি পাঁচ বছরে জমিয়ে গেলে ১০০ টাকা থেকে ২১৫০ টাকা পাওয়া যাবে ৩৫ বছরে। একই হিসাবে ২৩০ কোটি ডলারের রিটার্ণ আসার কথা প্রায় ৫০০০ কোটি ডলারের মত। অর্থাৎ, মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশ সরকার যে হারে সুদ দিচ্ছে, দেশে তার থেকে অনেকগুণ বেশী হারে সুদ দিয়ে টাকা নিচ্ছে সরকার। সেই টাকায় দেশের অভ্যন্তরে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হতে পারে। কিন্তু সেইরকম হলে তো প্রবাসীদের মধ্যে হিড়িক পড়ে যাবার কথা বাংলাদেশের জাতীয় সেভিংস সার্টিফিকেট কেনার জন্য, তাই না?

একটা কথা আপনি জানেন কিনা জানিনা। সেভিংস কিন্তু করে মধ্যবিত্তরা, যাদের মাস শেষে ৫০০ কিংবা ১ হাজার টকা উদ্বৃত্ত থাকে। যারা কালো টাকার মালিক আর ব্যবসায়ী তাদের সেভিংস থেকে দু'চার পাঁচশত টাকা আয়ের স্বপ্ন নেই, তাদের সবারই আবার কম বেশী ঋণ আছে তারা আজীবণই ঋণী থাকতে চায় সেকারণে তারা ইচ্ছে করেই সেভিংস করে না, আবার যেই ব্যবসায়ীর যতবেশী ঋণ তিনি ততবেশী ধণী। সাধারণ মানুষ যারা ১০০ কিংবা ৫০০ টাকা সেভিংস করে লাভের আশায় বসে থাকে তাদেরকে মোটেও আমি সেতুতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করছিনা বরং একটা তুলনামূলক উদাহরণ দিয়েছি মালয়েশিয়াকে যদি বিনিয়োগের পাঁচগুণ লাভ দেয়ার চুক্তিতে বাংলাদেশ রাজী হয় তাহলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা যারা অকারণে খালে বিলে জায়গা জমি কিনছে, প্রয়োজন নেই অথচ এমন জায়গায় বহুতল ভবণ কিংবা শপিং সেন্টার বানাচ্ছে তাদেরকে দ্বিগুণ লাভের নিশ্চয়তা দিলে তারা দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে। তাছাড়া শুধু মালয়েশিয়ার সরকারী ঋণ কেন বেসরকারী পর্যায়ের বিদেশী বিনিয়োগ কারীরাদেরকেও উৎসাহিত করা যেতে পারে।

আবার যদি ঋণও নেব না প্রকল্পও এগোবে না - এরকম সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাহলে ভবিষ্যতে পরিকাঠামোগত সব প্রকল্পেই এর ছায়া দেখা দেবে। সেটাও খুব কিছু ভাল হবে না বাংলাদেশের জন্য।

ঋণ নির্ভর উন্নয়ন ভাবণা কোন দেশের জন্যই সুখকর নয়। ভিক্ষা করা আমাদের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। ভিক্ষুকের পকেট সব সময় শ্রমজীবীদের চেয়ে ভারী হয়। ঢাকার রিক্সাওয়ালারা দেশের সবচেয়ে পরিশ্রমী শ্রমিক কিন্তু ফার্মগেটের ভিক্ষুক সারাদিন ভিক্ষে করে বাড়ী ফেরে কমিউনিটি সেন্টারের পোলাও কোরমা খেয়ে, আর রিক্সা শ্রমিকের কথা ভাবুণ ! মোট কথা দেশের মধ্যে কর আদায়ে সরকারকে আরো কঠোর ভুমিকায় যেতে হবে। বাংলাদেশে ঠিক মতো কর আদায় হলেই দেশের জনগনের টাকা দিয়েই বছর বছর এই রকম পদ্মা সেতু বানিয়ে দরকার হলে ভারতকে ঋণ দেয়ার মতো অর্থনীতি তৈরী হবে বাংলাদেশের।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

দিগন্ত এর ছবি

"লাভের টাকাটা দেশের ভেতরেই রেখে দেয়া।"

প্রবাসীদের টাকা কিভাবে দেশে থেকে যায় জানা নেই, প্রবাসীরা অধিকাংশই কিন্তু বিদেশেই ট্যাক্স দিয়ে থাকেন।

সেভিংস কিন্তু করে মধ্যবিত্তরা

হতে পারে, কিন্তু প্রবাসীদের সেভিং সার্টিফিকেট কিনতে কোনও বাধা নেই। তাছাড়া সেভিং সার্টিফিকেট নিতান্তই একটা উদাহরণ - আমি দেখাতে চাইছিলাম প্রবাসীরা চাইলে এখনি সরকারী বিনিয়োগে অংশীদার হতে পারেন ও সেই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই প্রকল্পের তুলনায় অনেক বেশী লাভ তুলে নিতে পারেন। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার খুব একটা আগ্রহ প্রবাসীরা দেখাচ্ছেন না। তুলনায় তারা অ্যাসেটে বিনিয়োগে বেশী আগ্রহী।

"বাংলাদেশে ঠিক মতো কর আদায় হলেই দেশের জনগনের টাকা দিয়েই বছর বছর এই রকম পদ্মা সেতু বানিয়ে"

- এটা ঠিক কথা কিন্তু এর একটা কারণ আছে। বাংলাদেশের জনগণের আয়ের একটা বড় উৎস রেমিট্যান্স, কিন্তু দ্বৈত কর মকুফ চুক্তির (ডাবল ট্যাক্সেসন অ্যাভয়েডেন্স) কারণে ওই টাকা ট্যাক্সমুক্ত। সুতরাং, ওই টাকা থেকে সরকারের সরাসরি লাভ সীমিত। আবার বিভিন্ন ট্যাক্স ছাড়ের কারণে দেশের বড় শিল্প গারমেন্টস থেকেও ট্যাক্স রেভেনিউ খুব একটা আসার কথা না। আমি সময় পেলে একটু হিসাবটা দেখব।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আমার নানুর করা দুটো কমেন্ট মনে পড়ছে-

হাত একবার চিৎ হলি আর ভুট হতি চায়না।

একবার হাইটে খাওয়ার অভ্যেস হয়ে গেলি আর খাইটে খাতি ইচ্ছে হয়না।

আমাদের অবস্থা অনেকটা সেইরকম্ হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

থার্ড আই এর ছবি

হুম , ঠিক বলেছেন। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

উচ্ছলা এর ছবি

চলুক

শেয়ার করছি এক্ষুনি।

থার্ড আই এর ছবি

শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।