তাঁদের মুখচ্ছবি

সৌরভ এর ছবি
লিখেছেন সৌরভ (তারিখ: শনি, ১৬/০৬/২০০৭ - ১১:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই লিংকটা কেন যে বুকমার্ক করেছিলাম, জানি না।

ছবিগুলো সাদা-কালো, খুবই প্রফেশনাল হাতে তোলা অবশ্যই। আলো-আধাঁরির সমন্বয়ের অভাব অনুভূত হবার কোন সুযোগ নেই।
অল্প কিছু মুখ, অনেকগুলো মুখের প্রতিনিধি।

কোনটাতে ফটোগ্রাফার এর ইচ্ছাকৃত শৈল্পিক অস্পষ্টতা, চোখের দৃষ্টি কারও অনেকদূরে - জীবনযুদ্ধটা জিততে পারেননি অনেকে - সেই বোধও স্পষ্ট।
একজন শ্মশ্রুমণ্ডিত, দুহাত তুলে অপার প্রার্থনা স্রষ্টার প্রতি । পাশেই আরেকজন ধূমপান করছেন। অদ্ভূত সহবাস

অনেক গল্প।
আমাদের জন্মের সাথে জড়িত।
আমাদের এবং ৩৬ এর তরুণ এই ভূ-খন্ডের।

১৯৯৮র ডিসেম্বর উনিশে চলে যাওয়া আবুল হোসেইন র হাস্যোজ্জ্বল চেহারা আমাদের মনে করিয়ে দেয় - যে আবেগ দিয়ে তিনি চিৎকার দিয়েছিলেন "জয় বাঙলা", তার জন্যে তিনি কোনদিন অনুতাপবোধ করেননি।
চশমার ভিতর থেকে আবু সুফিয়ান এর যে দৃষ্টি, তাতে অবশ্য নিজেদের হাতে জন্ম নেয়া রাষ্ট্রের পচনে তাঁর হতাশাই আমি অনুভব করি।
কিংবা নিজেকে হারিয়ে ফেলা খালেদ - যাঁকে ২৫শে মার্চের রাতে গান গাওয়ার অপরাধে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাঁর দৃষ্টি ক্যামেরা ছাড়িয়ে ধরা থাকে অন্য কোথাও। স্থিরচিত্রে শব্দ থাকেনা, কিন্তু আমার কানে তাঁর গান বাজতে থাকে।
ধীরেন্দ্র কুমার দেব রেন্টগেন ছবি দেখাতে থাকেন। তাঁর তীব্র দৃষ্টির কাছে আমি ক্ষুদ্র হয়ে যেতে থাকি।

আমি এই ছবিগুলো বারবার দেখি, সহ্য করতে পারি না, তারপরও।
কেনো, বলতে পারবোনা।

আমার জন্ম মুক্তিযুদ্ধের এক যুগ পরে, আমার সহোদরদের সবার জন্ম একাত্তুর বা তার পরবর্তী সময়ে।
আমার বাবা সত্যিকার অর্থে মুক্তিযোদ্ধা নন, শুনেছিলাম - শেষ সময়ে ট্রেনিং নিতে গিয়েছিলেন, সম্মূখযুদ্ধে অংশ নেননি। আমার পরিবারে নেই কোন যুদ্ধের ক্ষত। তবু্ও আমার নার্ভ এই ছবিগুলো মেনে নিতে পারেনা।
আমার লজ্জ্বা হতে থাকে।

আচ্ছা, যুদ্ধটা যদি এই মূহুর্তে হতো, আমি অথবা আমরা কি গাইতাম "মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি" ।
যে হাতে আমরা ধরি প্রিয়জনের নরম হাত, সেই নীরিহ-রুক্ষ হাতে তুলে নিতাম কি কোন অস্ত্র?
অথবা, একাত্তুরে এই আমিই যদি হতাম ২৪-২৫ এর তরুণ, তাহলে?

আবু সুফিয়ান বা ধীরেন্দ্র কুমার দেব দের আবেগ বা ভালোবাসার কাছে নিজেকে পিঁপড়াসম তুচ্ছ মনে হতে থাকে।

-----------------------------------
সবগুলো ছবির লিংক: দৃক গ্যালারি

দৃক গ্যালারির আবীর আবদুল্লাহ এই ছবিগুলো তুলেছিলেন,
কলেজগেট মোহম্মদপুরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বিশ্রামাগার থেকে, ১৯৯৭ তে।
ছবি কপিরাইট : আবীর আবদুল্লাহ।


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

লিংকগুলো এখনো একই জানালায় খোলে। এতে করে কোন লিংকে ক্লিক করলে সচলায়তনের পেইজ ডাইভার্ট হয়ে সেই লিংকে চলে যায়।

যেকোন লিংক নতুন জানালায় খোলার বন্দোবস্ত করা যায় না মোটারাম বাবু!
_________________________________
<স্বাক্ষর দিমুনা, পরে জমিজমা সব লেইখা লইলে!>

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

দেখবো ধুসর গোধুলী।

====
মানুষ চেনা দায়!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মূল লেখাটা এতো ভাল লাগল যে কি বলব। তারউপর ছবি গুলাও অসাধারন। এট্টু পিঠ চুলকানি।

====
মানুষ চেনা দায়!

কনফুসিয়াস এর ছবি

চমৎকার সব ছবি তুলে আনলা। দেখছিলাম,আর সাথে সাথে তোমার লেখাটাও পড়ছিলাম। ছবি গুলো আরো বেশি আপন হয়ে উঠলো তোমার লেখার কল্যাণে।
অনেক ধন্যবাদ।

-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

উৎস এর ছবি

নতুন উইন্ডো না করে নতুন ট্যাব হলে ভাল হয়।

সৌরভ এর ছবি

দুটো-একটা খুব অদ্ভূত পোস্ট ছাড়া সবগুলোতে অ্যানোনিমাস কমেন্ট করতে পারার কথা তো!
এক্ষুণি টেস্ট করে দেখলাম।
ক্যাপচা টেস্ট দিতে হবে অবশ্য। এটা না থাকলে আগে স্প্যাম আসতো।

------ooo0------
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ...


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নজমুল আলবাব এর ছবি

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।