যে পাহাড় দিতে হবে পাড়ি

তানভীর এর ছবি
লিখেছেন তানভীর (তারিখ: শুক্র, ২৯/০১/২০২১ - ১১:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

The Hill We Climb - Amanda Gorman

যখন দিন আসে আমরা প্রশ্ন করি নিজেদের
এই অনিঃশেষ অন্ধকারে আমরা কোথায় পাবো আলো?
ক্ষতির ভার বয়ে,
এক সমুদ্র পাড়ি দিতে হবে আমাদের।
পাশবিক এক দুঃসময় আমরা মোকাবেলা করেছিলাম,
আমরা জেনেছিলাম শান্ত থাকা মানেই সবসময় শান্তি নয়,
এবং ন্যায়ের নিয়মকানুন মানেই ন্যায়বিচার নয়।
এই ভোর আমাদের, আমরা জানার আগেই।
কোনভাবে আমরাই তা এনেছি।
পোড় খেতে খেতে আমরা দেখেছি
এ জাতি ভগ্ন নয়, শুধু অসম্পূর্ণ।
এমন এক দেশ ও সময়ের আমরা উত্তরাধিকারী
যেখানে দাস-সন্ততি ও একক মায়ের পালিতা
এক কৃশকায় কৃষ্ণাঙ্গ নারী
স্বপ্ন দেখতে পারে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার,
তারপর খুঁজে পায় তেমন একজনের জন্য কবিতা পড়ার।
হ্যাঁ, এখনো আমরা শোভন কিংবা নিষ্কলুষ হওয়া থেকে অনেক দূরে
কিন্তু তার মানে এই নয়, নিখুঁত ঐক্য গড়তে আমরা সচেষ্ট নই।
আমাদের সংগ্রাম একতাবদ্ধ হওয়ার সাথে লক্ষ্য নিয়ে,
এমন এক দেশ গড়ে তোলার যার আনুগত্য থাকবে
সব সংস্কৃতি, বর্ণ, চরিত্র এবং মানুষের অবস্থার প্রতি।
তাই আমরা দৃষ্টিকে আমাদের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখবো না
বরং তাকাবো সমুখ পানে।
বিভেদের সমাপ্তি টেনে আমরা জানি, ভবিষ্যৎকে সামনে রাখতে হবে,
আমাদের মধ্যকার পার্থক্যকে সবার আগে সরিয়ে দিতে হবে।
আমরা অস্ত্র নামিয়ে রাখি
অন্যের দিকে হাত বাড়িয়ে দেব বলে।
আমরা কারো চাইনা ক্ষতি, সবার মাঝে চাই সংহতি।
আর কেউ না হোক, এই পৃথিবী বলুক তা সত্য,
আমরা দুঃখে কাতর হলেও বেড়ে উঠেছিলাম,
আমরা আহত হলেও আশা রেখেছিলাম,
আমরা ক্লান্ত হলেও চেষ্টা করেছিলাম,
আমরা আজীবন বিজয়ী থাকবো, একসাথে।
এ কারণে নয় যে আমরা পরাজয়কে কখনো জানবো না,
বরং বিভেদকে আমরা আর কখনোই বুনবো না।
ঐশীগ্রন্থ আমাদের এমন ভাবে নিজেদের ভাবতে বলে,
যেন প্রত্যেকে যার যার আঙুর আর ডুমুর গাছের ছায়ায় বসে আছি
এবং ভয় দেখানোর কেউ সেখানে নেই।
আমরা যদি নিজ নিজ সময়ের মাপে বাঁচি,
তাহলে তরবারীতে কোন বিজয় থাকবে না।
থাকবে আমাদের সেতুবন্ধনগুলিতে,
এই হোক তবে প্রতিজ্ঞা,
এই পাহাড় আমরা পাড়ি দেব।
যদি আমরা সাহসী হই।
আমেরিকান হওয়া মানে শুধু গর্বের উত্তরাধিকার হওয়া নয়,
এটা অতীতের পথে পদযাত্রা
এবং কীভাবে সেটা সারিয়ে তোলা যায়।
আমরা দেখেছি একটা শক্তি এসে তার অংশীদার হওয়ার বদলে
আমাদের জাতিকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলো।
যদি গণতন্ত্র আসতে বিলম্বিত হতো, তা দেশকে ধ্বংস করে দিতো।
এবং সেই চেষ্টা প্রায় সফল হয়েছিলো।
যদিও গণতন্ত্র কখনো বিলম্বিত করা যায়,
একে কখনো চিরতরে ধ্বংস করা যায় না।
এই সত্যে,
এই বিশ্বাসে আমাদের আস্থা।
যখন আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে,
ইতিহাস তখন দৃষ্টি রাখে আমাদের দিকেই।
এই যুগ পাপমোচনের
যার শুরু থেকে আমরা ভয় করেছিলাম।
এই ভয়ংকর সময়ের উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না
কিন্তু এর মাঝেই আমরা শক্তি খুঁজে পেয়েছি
একটা নতুন অধ্যায় লেখার।
আমাদের মাঝে আশা আর হাসি নিবেদনের।
যখন একবার আমাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো,
দুর্যোগ জয় করে কীভাবে আমরা উঠে দাঁড়াবো?
আমরা এখন বলতে পারি,
দুর্যোগ কীভাবে আমাদের জয় করবে?
যেমন ছিলো সেদিকে আমরা আর পা বাড়াবো না,
বরং যেমন হবে তার দিকে আমাদের যাত্রা।
যে দেশ আঘাতে ছড়ে গেলেও সম্পূর্ণ,
উদার কিন্তু সাহসী,
অদম্য এবং স্বাধীন।
আমরা পিছু হটবোনা
অথবা ভয়ে বাধাগ্রস্থ হবো না,
কারণ আমরা জানি আমাদের নির্লিপ্ততা এবং জড়তা
আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বহন করতে হবে।
আমাদের ভুলগুলো তাদের বোঝা হবে।
কিন্তু একটা বিষয় নিশ্চিত,
আমরা যদি শক্তির সাথে কৃপা মেশাই,
এবং ন্যায়ের সাথে শক্তি,
তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে আমরা রেখে যাব ভালোবাসা
যা তাদের ভাগ্য বদলে দেবে।
চলো তবে আমরা তেমন একটি দেশ রেখে যাই
যা পেয়েছিলাম তার চেয়ে ভালো।
আমার তাম্র-ঘাত বুকের প্রতিটি নিঃশ্বাস থেকে,
আমরা এই আহত পৃথিবীকে গড়ে তুলবো এক বিপুল বিস্ময়ে।
আমরা জেগে উঠবো পশ্চিমের সুবর্ণ-অঙ্গশোভিত পাহাড়শ্রেনী থেকে।
আমরা জেগে উঠবো বায়ুচঞ্চল উত্তরপূর্ব থেকে,
যেখানে আমাদের পূর্বসূরীরা প্রথম বিপ্লবের সূচনা করেছিলো।
আমরা জেগে উঠবো হ্রদে-ঘেরা মধ্যপশ্চিম রাজ্যের নগরগুলি থেকে।
আমরা জেগে উঠবো সৌরতাপিত দক্ষিণ থেকে।
আমরা পুনরায় গড়বো, মিলবো এবং সেরে উঠবো।
এই জাতির প্রতিটি চেনা প্রান্ত এবং
প্রতিটি কোণ থেকে যা আমাদের দেশ,
বৈচিত্র্য আর সৌন্দর্য্য নিয়ে আমাদের মানুষেরা জেগে উঠবে,
আহত এবং সুন্দর।
যখন সেদিন আসবে আমরা ছায়া থেকে বের হয়ে দাঁড়াবো,
প্রজ্বলিত এবং নিঃশঙ্ক,
নতুন ঊষা প্রস্ফুটিত হবে যখন আমরা মুক্ত করবো।
কারণ সেখানে আলো চিরন্তন,
শুধু যদি আমরা সাহস করি তা দেখার।
শুধু যদি আমরা সাহস করি তা হওয়ার।

গত ২০ জানুয়ারী, ২০২১ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি অভিষেক অনুষ্ঠানে পঠিত Amanda Gorman এর “The Hill We Climb” থেকে অনূদিত।

মূল কবিতার লিংক


মন্তব্য

নীলকমলিনী এর ছবি

বাহ কি ভাল অনুবাদ হয়েছে! অভিষেকের দিন অন্য অনেকের মতো মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছিলাম। আমরা আরেকজন মায়া এন্জেলো পেতে যাচ্ছি কি?
ধন্যবাদ এত সুন্দর অনুবাদের জন্য।

তানভীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।