পুলিশ ও আমি - ৮

আজমীর এর ছবি
লিখেছেন আজমীর (তারিখ: বুধ, ২৮/০১/২০১৫ - ৭:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পুলিশ যে আমাকে কেন এত ভালোবাসে তা আমি আজ অব্দি বুঝতে পারলামনা। কারণে অকারণে আমাকেই ধরে। আরে ব্যাটা চোর ধর। মানে বড় চোর ধর। আমিতো খালি চুরি করে সিগারেট খেতাম, তাও আজকাল ছেড়ে দিয়েছি। আরে ভাই, আপনারাই বলুন, আমার চেহারাটা একটু খারাপ বলে কি আমাকে অযথাই ধরতে হবে??!! এটা কোন কথা হল? দেশে কি আইন বলে কিছু নাই? মানে আমাদের দেশে যদিও খুব একটা নাই, তারপরও আমিতো খারাপ মানুষ না, মানে অতটা খারাপ না। যাই হোক, অনেক আজেবাজে কথা বললাম, মূল প্রসঙ্গে আসি।

আমার কাজ হল সারাক্ষণ কম্পিউটার নিয়ে। সারাদিন বসে বসে কাজ করতে করতে কোমর বেচারা হয়রান হয়ে যায়। তখন একটু চলাফেরা করলে আরাম পাওয়া যায়। এমনি একদিন হয়রান হয়ে ভাবলাম, যাই নিচে থেকে একটু ঘুরাঘুরি করে আসি। আমি থাকি ধানমন্ডিতে। ভাবলাম একটু লেকের পার ধরে হেটে আসি আর মাগরিবের নামাযও পড়ে আসি। ধানমন্ডি ৭ নম্বরের মসজিদে বহু যুগ ধরেই বন্ধুদের একত্রে নামায পড়া হয়। তাই সুন্দর মত গায়ে কাপড় চড়িয়ে বের হয়ে গেলাম।

রাস্তায় নেমে দেখি এক মেয়ে মোহাম্মদপুর যাবে বলে রিক্সা ঠিক করছে। এবং তাদের মধ্যে দরদাম হচ্ছে -
- কত নিবেন আপনি?
- আফা শাইট টেহা লাগব
- No no আমি fifty taka দিব
- লাষ্ট আফা পঞ্চাশ টেহা লাগব, গেলে কন
- ok ok চলেন
আমি হাহা করে হাসতে হাসতে রওনা দিলাম পার্কের দিকে। যেতে যেতে আযান হয়ে গেল বলে সরাসরি মসজিদে গিয়ে নামায পড়ে নিলাম। নামায পড়ে বের হয়ে আস্তে আস্তে হাটা শুরু করলাম। কিছু দূর যেতেই দেখি অন্ধকারে চিপায় চাপায় বিভিন্ন ঝারের আড়ালে আবডালে জোড়ায় জোড়ায় ছেলে মেয়ে বসা এবং চুটিয়ে চলছে প্রেম এবং কেউ কেউ আবার টুকটাক চুমুও চালিয়ে দিচ্ছে। এমনি সময়ে ২ পুলিশ অত্র এলাকায় এসে হাজির। এসেই তারা চিপা থেকে ২ জোরাকে ধরে ফেলল। ধরেই –
-অই শালার হারামিরা, পার্কে বইয়া খুল্লমখুল্লা ফিষ্টিনষ্টি করস, লজ্জা শরম করেনা। (আরে বোকারা শরম করলে কি আর করত নাকি??!!) তোগোরে লইয়া এখনি চালান দিমু। চল থানায়।
- (ভীত সন্ত্রস্ত কণ্ঠে জোড়ার ছেলেরা) ভাই ভাই একটু শুনেন, একটু সাইডে আসেন।
বলেই ছেলে ১০০ টাকা এগিয়ে দিল। ঠোলা মামাদের সাথে সাথে উত্তর –
- ১০০ দিয়ে কি হবে? ফকির পাইস? ১০০০ দাও।
- জ্বি স্যার। এই নেন ১০০০ টাকা।
- ঠিক আছে। আপনারা ভদ্র ঘরের লোক বলে ছেরে দিলাম। আর কইরেননা এসব। এসব করা ভালনা। চলে যান।
বাহ্‌, টাকার কি চমৎকার action দেখেন, তুই থেকে আপনিতে নিয়ে আসল এবং বেচারাদের প্রতি চুম্বন মূল্য অনেক পড়ে গেল ওইদিন। এইসব দেখে এবং ভেবে আমি আবারও হাহা করে হেসে দিলাম। এমনি সময় ঘারে হাত (থাবাই বলা যায়) পড়ল। দেখি ওই ২ হাবিলদারের boss আমাকে ধরেছে। ধরেই চিৎকার –
- অই হারামজাদা এখানে হাসির কি আছে? মজা লস? দাড়ি রাকসস ক্যান। জে.এম.বি করস নাকি? চল থানায়। ক্যালানি বাইর করতাসি তোর।
- (মাথার মধ্যে ঘুরতেসে কিভাবে পার পাওয়া যায়। দ্রুত বেগে মাথার মাঝে কিছু চাপা ঘুরে গেল। এবং শুরু করে দিলাম আমার নাটক) হ ভাই, আমি জে.এম.বি, জামাত সব করি, আমি এক মহা সন্ত্রাস, অনেক খুন, চুরি, ডাকাতি করসি। আমারে নিয়া সিধা জেলে ঢুকাইয়া দ্যান। এমন কিছু লেহেন যেন ফাঁসি।
- মানে? তোর কি মাথা খারাপ নাকি?
- হ ভাই, মাথাই খারাপ। এই দেহেন আমার বউ বাচ্চা (দ্রুত স্মার্ট ফোন বের করে ছবি দেখালাম)। কামাই কম বইলা বউ গালি দেয়। আবার ওবার টাইম কইরা বাড়তি কামাইতে গেলে কয় বাইরে বলে ফষ্টিনষ্টি করি বইলা আসতে দেরি হয়। আর মাইনষে কামাই করেনা। ভাই, আমিতো মানুষ, আমি যামুটা কই। নামায পইরা বাইর হইলাম, আর আপনেও ধরলেন। আল্লায় আপনেরে পাঠাইসে আমারে মুক্তি দেওনের জন্য। ভাই, আমারে জেলে ঢুকাইয়া বাঁচান। এই জন্যই হাসতেছিলাম যে সব যাগাতেই ভেজাল। আর ভাল্লাগেনা।
- আহহারে। ভাই আপনেরে আর কি বলব, আমার বাসাতেও একই কাহিনী। অই আমার আর এই ভাইর জন্য চা দিবার বল (চিৎকার করে)। এইজন্যতো হতাশ হইলে হইবনা। ধৈর্য্য ধরেন, সব ঠিক হবে।
- (মামায় story খাইসে। এবার চিপা গইলা বাইর হবার system করতে হবে।) জ্বি। ভাই আপনি কি করেন?
- আমিতো যা বলে চুপ কইরা শুইনা যাই। কোন উত্তর দেইনা। বেশি মাথা খারাপ করলে বাসায় যাইনা, বলি night duty আছে। হাহাহাহা।
- (মুখটা যতখানিক সম্ভব করুণ করে) ভাই আমি কিভাবে night duty বলব? আমারতো ঐ option নাই। আপনের ভাই ভাগ্য ভাল। যাই, দেরি হইলে আবার চিল্লাবে। ভাই একটু দুয়া করবেন আমার জন্য। আমি যেন এই ঝামেলা থেকে উদ্ধারের উপায় পাই। আপনার সাথে কথা বলে ভাল লাগল। আবার দেখা হলে ভালই হয়।
- ঠিক আছে। সাবধানে যান আর ধৈর্য্য রাখেন। সব hopefully ঠিক হইয়া যাবে।

অতঃপর কিসের কি, দ্রুত হাটা দিয়ে ভাগলাম। অবশ্য তার সামনে একটা হতাশ look দেবার চেষ্টা করেছিলাম।
মুসলিম ধর্মাবলম্বি বলে আগের জন্ম বলে কিছু বিশ্বাস করিনা। নাহলে বলতাম, আগের জন্মে মনে হয় কোন পুলিশের জামাই ছিলাম, যে কারণে পুলিশ আমাকে অযথাই ধরে এবং ছেড়েও দেয়।

** বানান ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন।
** আমার লেখা পরে বিরক্ত হলে দুঃখিত। নিজগুণে ক্ষমা করে দিবেন। এমনিতেই আমার লেখার হাত ভালনা, তার উপর ১০০ বছর পর লিখতে বসে সব তালগোল পাকানের দশা।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আগের জন্মে মনে হয় কোন পুলিশের জামাই ছিলাম, যে কারণে পুলিশ আমাকে অযথাই ধরে এবং ছেড়েও দেয়।

ইয়ে মানে,ধরার খবর তো ফুতুমালুতে লিখে। ছাড়ার খবর তো খপরের কাগজে নাই !

রাজর্ষি

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

মাঝে মাঝে লিখে তালগোল ছাড়িয়ে ফেলুন। শুভকামনা।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

অতিথি লেখক এর ছবি

"আগের জন্মে মনে হয় কোন পুলিশের
জামাই ছিলাম, যে কারণে পুলিশ
আমাকে অযথাই ধরে এবং ছেড়েও দেয়।"

হলেও হতে পারে

আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।