পুলিশ ও আমি - ৪

আজমীর এর ছবি
লিখেছেন আজমীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/০৬/২০০৮ - ২:৫৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"আমাদেরকে শেষ পর্যন্ত কিনা সমকামী ভেবে বসল? - এই ছিল আমার আর আমার ভাইর প্রশ্ন।"

মাত্রই এসেছি স্বপ্নের দেশ আমেরিকাতে। লেখাপড়া বটে শুরু করেছি, কিন্তু মন কেবল ছুটে যায় বাংলা মায়ের কাছে। এরই মাঝে আমার বড় ভাই প্রস্তাব করে বসল শিকাগো শহর ঘুরে আসার জন্য। আমিতো সারা জীবনই ঘুরাঘুরির জন্য আগ্রহী। তাই বলা মাত্রই আমি রাজি হয়ে গেলাম। তারপর এক শুক্রবারে ক্লাস শেষে বের হয়ে গেলাম।

যাত্রা শুরু কিন্তু আমরা দুজন না, তিনজন মিলে করলাম। কারণ, আমার এক বন্ধু আমাদের সংগী হয়েছিল। তিনজনের এই যাত্রাপথে গাড়িচালক শুধুই আমার বড় ভাই। কেননা, আমার বন্ধুটি এবং আমি লাইসেন্সহীন ছিলাম। ভার্জিনিয়ার ব্ল্যাক্সবার্গ থেকে শিকাগো এর দীর্ঘ ১৪ ঘন্টার যাত্রাপথ ভাইজানকে একাই গাড়ি চালাতে হত। তাই মাঝপথে আমরা একটা হোটেলে উঠে গেলাম। উদ্দেশ্য - রাত্র যাপন করে পরদিন সকাল আবার যাত্রা শুরু করা।

হোটেলে যাবার পর আমরা একটু বিশ্রাম করব ভাবছিলাম। কিন্তু তখনই আমার মা আমাদের ফোন করলেন খোঁজ-খবর নেবার জন্য। কিন্তু ভাইজান আবিষ্কার করল দুইটি সমস্যা। প্রথম সমস্যা ওর ফোনে charge নাই, এবং দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে ওর সাথে শুধুই car charger আছে। তাই কি আর করার, বাধ্য হয়ে গাড়ি চালু করে সেখানে গিয়ে বসতে হল। ভাইজান বসল চালকের আসনে, আর আমি বসলাম ওর পাশের আসনে। এর মাঝেই আমি খোঁজা শুরু করলাম ওর car charger কোথায় আছে। তখনই আবিষ্কার করলাম charger খানা পড়ে আছে চালকের আসনের পায়ের কাছে। আমি সেখানা তুলতে গেলাম সেখান থেকে। আমরা দুজনের কেউই দেখিনি যে আমাদের পিছনে একটি পুলিশের গাড়ি বসে বসে আমাদেরই দেখছে। সে মহিলা পুলিশ ভেবে বসল যে আমি মনে হয় পাশের আসনে বসা ছেলেটিকে কোন বিশেষ সুখ দিচ্ছি। পিছন থেকে দেখে সেরকমই লাগছিল কিনা। কেননা, সে দেখছিল যে, একজন ছেলে বসা, আর আরেকজন ছেলে হঠাৎ এসে পাশে বসে পাশের আসনের দিকে নিচু হয়ে ঝুঁকে পড়ল। বেচারীরতো আর বোঝার উপায় নেই যে আমি charger খুজছি। তাই সে উঠে এসে পাঁচ ব্যাটারির টর্চ জ্বালিয়ে আমাদের মুখের উপরে মারল, এবং প্রশ্ন করে বসল, "Hey guys, what's going on here? What are you guys doing inside the car?" আমরাতো প্রথমে বুঝতেই পারিনি কি হলো। তারপর আমরা বুঝতে পারলাম যে পুলিশ পোশাক পরা এই মহিলাটি আমাদের সমকামী ভেবে বসে আছে, আর সেজন্যি এই ধরনের প্রশ্ন করছে।

কি আর করার হাত উঁচু করে বের হয়ে আসতে হল গাড়ি থেকে। তারপর তাকে দীর্ঘ ২০ মিনিট ধরে বোঝাতে হল যে আসল ঘটনাটি কি।

পরে আমরা তিনজন মিলে খুব হাসাহাসি করলাম এই নিয়ে। আমাদেরকে শেষ পর্যন্ত কিনা সমকামী ভেবে বসল? - এই ছিল আমার আর আমার ভাইর প্রশ্ন।


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

হা হা হা ! কী কান্ড। এইটারেই বলে কপাল খারাপ।

প্রথম পর্বের সিরিয়াল ৪ দিয়ে শুরু করলা যে? সবাই কেমন আছে ব্ল্যাক্সবার্গে?


কি মাঝি? ডরাইলা?

আজমীর এর ছবি

পুলিশ ও আমি - এই পর্বটা যখন শুরু করি তখন আমি সচলে অচল ছিলাম বলে অতিথি লেখক হিসাবে লিখতাম। সেখানে আছে বাকি তিনটি।

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ভুলটা আমারই বোধহয়। আমিই বলেছিলাম যে ৩ পর্ব হয়েছে আগে। পর্ব একদুই খুঁজে পেলেও ৩ পেলাম না। এটা ৩ হবে, বোধহয়।

আজমীর এর ছবি

ঠিক আছে, পরবর্তী ঘটনাকে ৩ করে দেবখন। হাসি

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

অতিথি লেখক এর ছবি

যে যেইটার তালে থাকে। পুলিশনীর আর কি দোষ! বেচারি!
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

রায়হান আবীর এর ছবি

হা হা সেই রকম তো...

---------------------------------

অতিথি লেখক এর ছবি

আমেরিকার পুলিশ বলে কথা। এসব দেখে ওরা অভ্যস্ত কিনা???? বাংলাদেশের পুলিশ হলে বলতো: ‌ভাইজানের শইলডা ভালা? লাইসেন্সটা দেখান। নইলে কিছু বকশিশ দেন।

-বিধান রিবেরু

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আহারে !
আমি যাই বঙ্গে
তো কপাল যায় সঙ্গে...
পুলিশরা তো আপনাকে বরাবরই ভাল পায় দেখি !

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সাইফ তাহসিন এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি ফাটাফটি, আসলেতো মনে হইল, পুলিশীনি এসেছিল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। তার মনে হ্য় কাউকে সুখ দেবার ইচ্ছা হয়েছিল চোখ টিপি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

তিথীডোর এর ছবি

আসলেতো মনে হইল, পুলিশীনি এসেছিল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। তার মনে হ্য় কাউকে সুখ দেবার ইচ্ছা হয়েছিল

ঠু চিপ হিউমার। সমবেদনা। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।