পুলিশ ও আমি – ২

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ২৩/০৩/২০০৮ - ৫:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পছন্দ করি বা নাই করি, পুলিশ আমাকে ধরবেই এবং ছেড়েও দিবে। এক রাতের অভিযানে আমার পুলিশের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হলেও সেটি আমার শেষ সাক্ষাৎ ছিল না। আমার পরবর্তী সাক্ষাৎ পুলিশের সাথে হয় ঢাকার এক কলঙ্কিত অংশে। আমরা চার বন্ধু মিলে একদিন চিন্তা করলাম নিষিদ্ধপল্লীকে কেন নিষিদ্ধ বলা হয় এবং সেখানে কি আছে সেটা আমাদের দেখা দরকার। জানার কোন শেষ নেই, তাই আমাদের জানতেই হবে সেখানে এমন কি আছে যে সবাই খারাপ বলে। আমার এক বন্ধু জামাল (ছদ্মনাম) বলল,
- গতবারের রাতের কাহিনী কিন্তু ভুইলা যাইস না। পুলিশের কাছে প্রায় ধরা খাইয়াই গেসিলি। আল্লাহর রহমতে কোন রকম বেঁচে গেলাম সেবার। তার মানে এই না যে বারেবারে আমরা বেঁচে যাব, আর তুইও চাপাবাজি কইরা পার পাবি।
- দেখ জামাল, কষ্ট না করলে মামা কেষ্ট মিলেনা। তোর যদি এত ভয়ই লাগে, তাইলে তোর যেয়ে কাজ নাই। আমরা তিনজন মিলেই যাব।
বাকি দুইজন আমার সাথে সম্মতি প্রকাশ করল। তখন জামাল আর আপত্তি না করে আমাদের দলে ভিড়ে গেল। প্রথমেই আমরা গবেষণা করতে গিয়ে শুনলাম ইংলিশ রোডের কথা। ইংলিশ রোডের পাশাপাশি শুনলাম মগবাজার চৌরাস্তার খবর। আমা্দের বাসা কাছাকাছি থাকাতে এবং তা ধানমন্ডি ও তার আশেপাশে হবার কারণে সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা সবাই মিলে মগবাজার চৌরাস্তার আবাসিক হোটেলগুলোতেই হানা দেব এবং দেখব যে সেখানে কি আছে।

আমাদের পরিকল্পনা হয়ে গেল যে একদিন সুবিধা করে স্কুল পালাতে হবে সেখানে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সমস্যা হলো যে, স্কুলের পোশাকে সেখানে যাওয়া সম্ভব না। আবার বাসা থেকে অন্য কাপড় নিয়ে বের হতে গেলে বাবা-মার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এ সমস্যার সমাধান কিভাবে করা যায় তাই নিয়ে আমরা চিন্তা করতে লাগলাম। অবশেষে সেই বিশেষ দিনটি এসে পড়ল। আমাদের স্কুল থেকে বিতর্কের জন্য বাইরে নিয়ে যাবে বলে অতিরিক্ত কাপড় নিতে হবে, এমনটি ধারণা দিয়ে দিলাম আমাদের অভিভাবকদের। তারপর স্কুলে সবাই মিলিত হলাম। সামনের দরজা দিয়ে মিলিত হয়ে সবাই মিলে একত্রে পিছনের দরজা দিয়ে ভেগে গেলাম। সেখানে কাপড় বদলে নিলাম এবং আরেক বন্ধুর বাসায় গিয়ে বাকি কাপড় ও ব্যাগগুলো রেখে দিয়ে এলাম। এবার শুরু মগবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা। রিক্সা করে পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যস্থলে। এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে ঢোকা যায় এখানে। এই নিয়ে কথা চালাচালি শুরু হল নিজেদের মধ্যে। একই সাথে এটাও প্রশ্ন যে প্রথমে কে ঢুকবে, এবং ঢুকতে পারলে কি করবে। এরকম একথা সেকথার পর আমাদের জামাল নামক বন্ধুটি বলে উঠল যে একটা কাজ করলে কেমন হয় যদি আমরা একটা interview টাইপ কিছু নিয়ে ফেলি। কারণ, আমরাতো এমনিতেও কিছুই করবনা। শুধুই কৌতুহল মেটাবার ইচ্ছা থেকে এই যাত্রা। এই সিদ্ধান্ত নেয়া, খাওয়া-দাওয়া, এবং camera প্রস্তুত করতে করতেই আমাদের বিকাল হয়ে গেল। তাই আমরা একেবারে মাগরিবের নামাজ পরেই আমাদের মিশনে যাব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।

মাগরিবের নামাজ পরার পরে চলে গেলাম আবার চৌরাস্তায়। হাতের বামের প্রথম হোটেলে ঢুকে গেলাম। তারপর জামাল এগিয়ে গিয়ে সোজাসুজি প্রশ্ন করল,
- তা ভাই রুম ভাড়া কত?
- কেমন রুম লাগবে?
- ভাল, বড়। তিনজন। ভাড়া কত?
- কেমন quality চান?
- মালসহ কত? নাকি মাল আলাদা?
- মানে?
- সাধু সাইজ্জ্যা লাভ নাই। মানে আপনেও জানেন, আমিও জানি। এখন বলেন মালসহ কত লাগবে?
- কেমন মাল চান?
- নতুন।
এই পর্যন্তই কথা হলো। তার পর পরই হঠাৎ করে কোথা থেকে একদল পুলিশ এসে ঢুকে গেল, এবং সবাইকে ঘেরাও করে আটকে উপরে উঠে গেল বাকিদের ধরে নিয়ে আসার জন্য। তারপর আমরা আমাদের ছোট দলটিকে খুঁজে পেলাম মগবাজার থানাতে। আমাদের সবার ভয়ে অবস্থাতো একদম খারাপ। কি করব বুঝে উঠতে পারছিনা। একি বিপদে পরলাম ভেবে কুলাতে পারছিনা। হঠাৎ একটা idea আমার মাথায় খেলে গেল। আমি উঠে গিয়ে যে inspector আমাদের ধরে নিয়ে এসেছিল, তাকে বললাম,
- দেখুন, আমাদের বৃথাই এখানে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা গিয়েছিলাম ঠিকানা জানতে, কিন্তু বুঝতে পারলামনা কি থেকে কি হয়ে গেল।
- শোন, তোদের মত শয়তান বহু দেখসি। ন্যাকা কান্না আমার সামনে কাইন্দা কোন লাভ নাই। ধরা পড়লে পরে সবাই এমুনি কয়। এখন আর মাথা খাইস না। যা ভাগ।
- দেখুন, তাহলে গাজীপুরের DIG আমার আপন চাচা। উনি এসব থানা পুলিশ ভাল বুঝবেন। আমি কি উনাকে একটা ফোন করতে পারি? যাতে উনি এসে এসব ঝামেলা দেখতে পারেন, এবং আমাদের একটু সাহায্য করতে পারেন।
- গাজীপুর কোন সেক্টর?
- ৩ নম্বর।
- ও। স্যারতো আমার পরিচিত মানুষ। আফনেরা উনার পোলাপাইন আগে কইবেননা? (একথা শুনে আমারতো দেহ থেকে আত্মা উড়ে যাবার যোগাড়। কারণ, পুরাটাইতো আমার স্রেফ চাপাবাজি। এখন ধরা পড়লে আমার খবরই আছে।)
- তাহলেতো ভালই হলো। আপনে কি কষ্ট করে উনাকে একটু ফোন করবেন? আপনার কাছে না থাকলে আমার কাছে ফোন নম্বর আছে।
- না থাক। স্যার এখন কই?
- উনি এখন বাসায়। একটু অসুস্থ কিনা, তাই হয়তো ঘুমাচ্ছেন। তবে আমাদের কথা বললে রাগ করবেননা, ঠিক ঘুম থেকে উঠে আসবেন।
- না থাউকগা। খামাখা ঘুম ভাঙ্গাইয়া লাভ নাই। যাওগা ভাতিজারা, তোমরা এমনি যাওগা, আর স্যারেরে আমরার সালাম দিও।
- কিন্তু আমরাতো আপনার নাম জানিনা।
- এইটা ভাল কথা মনে করস ভাতিজা। এক কাজ কইর, বইল যে মগবাজারের সফিক দারোগা, তয়লেই স্যার চিনবেন।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আচ্ছা যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটি প্রশ্ন করি?
- হ কর।
- মানে চাচা যদি আবার জিজ্ঞেস করে বসে যে, কোন সফিক, তাহলে কি বলব? আপনাদের এখানে আবার একাধিক সফিক নেইতো?
- হাহাহাহা। ভাল বলস ভাতিজা। আরে নাঃ, এখানে আমি একলাই একটাই সফিক। যাউকগা, এখন যাওগা, অনেক কাজ পইরা আছে। এগুলার কাহিনী শেষ করতে হবেতো। আর সাবধানে থাইকো, এসব জায়গায় আর আইওনা। এসব জায়গা ভাল মানুষের জায়গা না।
- জ্বি আচ্ছা।
তারপর আমরা তিনজন বের হয়ে এসে তাড়াতাড়ি রিক্সা ধরে সোজা যে যার বাসাতে। বাপরে বাপ, যে ভয়টাই পেয়েছিলাম সে দফায় যে প্রতিজ্ঞাই করে ফেললাম যে আর কখনই উলটা পালটা কাজে যাওয়া যাবেনা।

আজমীর


মন্তব্য

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হাহাহা এটা কি সত্যি ঘটনা? এত সহজে ছেরে দিল?

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

কেমিকেল আলী এর ছবি

চাচার কাহিনীটা অবিশ্বাস্য মনে হল আমার কাছে।

শেখ জলিল এর ছবি

যাক, চাপাবাজিতেও তাহলে পুলিশ ভেজে তাহলে!

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

যতসব হুজ্জতি কারবার!

অতিথি লেখক এর ছবি

পাকনাদের বয়স কত আছিল তখন? (!!) বাংলার পুলিশ এতো বেক্কল হয়!!

কল্পনা আক্তার

...........................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাচেঁনা

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি যদি একের পর এক পুলিশের সাথে আমার দেখা-সাক্ষাতের কথাগুলো বলতে থাকি, তাহলে প্রায় সবই চাপাবাজি মনে হবে। যারা আমার সাথে থেকে ঘটনা সামনাসামনি দেখেছে, তারাই অনেক সময় বিশ্বাস করতে চায়না যে আমি কিভাবে এই ধরনের ফালতু কথা বলে বা চাপাবাজির মাধ্যমে পার পেয়ে যাই। আমি দেখতে পারছি যে ইশতিয়াক রউফও মন্তব্য করেছে। সেও আমার সাথে পুলিশের এক ঘটনার সামনে ছিল। সাথে না থাকলে সেও মনে হয় বিশ্বাস করত না সেদিনের সে ঘটনা। ওটা অবশ্য আরেক কাহিনী। অপেক্ষা করলে ওটাও জানতে পারবেন।

আজমীর

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

হু, অপেক্ষায়ই থাকুন সবাই। আমি আজও সেই ঘটনা হজম করে কুলাতে পারিনি, এটুকুই বলতে পারি আগাম। চলুক বদমায়েশীনামা। (ইয়ে, ঈ-কার তো?)

অতিথি লেখক এর ছবি

অসম্ভব কথাবার্তা। ঘটনা সত্যি হলে আমি লেখকের বয়স কত ছিল তা জানতে আগ্রহী।

অতিথি লেখক এর ছবি

পাকনারা তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। তাহলে আন্দাজ করে নিন বয়স কত ছিল।

আজমীর

বিপ্লব রহমান এর ছবি

শাবাশ! চলুক বদমায়েশীনামা। (ইয়ে, ঈ-কার তো?) চোখ টিপি


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

অকালপক্ক ছেলের দল !

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতিথি লেখক এর ছবি

তাহলে চাপাবাজি আমরা একদম পাকা কি বলেন?

-নিরিবিলি

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হে হে:

ধুসর গোধূলি এর ছবি
সাইফ তাহসিন এর ছবি

বস, হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেল, "শফিক কয়জন" গড়াগড়ি দিয়া হাসি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।