আন্দালুসি লেম্বুচিপা - বাস্কো থেকে গ্রানাডা

দুর্দান্ত এর ছবি
লিখেছেন দুর্দান্ত (তারিখ: বুধ, ০৯/১২/২০০৯ - ৪:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগের কিস্তি

হাসিয়েন্দা হেসুস্কোয়া - বাস্কো দেশে আমাদের থাকার জায়গা। সবুজ পাহাড়ঘেরা উপত্যকায় ছোট্ট ছিমছাম খামারবাড়ি। আপেল, আখরোট আর পেস্তাবাদাম (আল্মন্ড) এর চাষ হয়। মা আর দুই ছেলের সংসার। খামারবাড়ি দোতলার ফ্ল্যাটে আমাদের ঠাঁই হল।

ঘরে ঢুকেই পরিছন্ন উষ্ণতায় মন ভরে উঠল। বিশাল বাথরুম, তাতে আবার চারপাশথেকে পানি বেরুনো ঝরনা। গুষ্টি সহ...আগের কিস্তি

হাসিয়েন্দা হেসুস্কোয়া - বাস্কো দেশে আমাদের থাকার জায়গা। সবুজ পাহাড়ঘেরা উপত্যকায় ছোট্ট ছিমছাম খামারবাড়ি। আপেল, আখরোট আর পেস্তাবাদাম (আল্মন্ড) এর চাষ হয়। মা আর দুই ছেলের সংসার। খামারবাড়ি দোতলার ফ্ল্যাটে আমাদের ঠাঁই হল।

ঘরে ঢুকেই পরিছন্ন উষ্ণতায় মন ভরে উঠল। বিশাল বাথরুম, তাতে আবার চারপাশথেকে পানি বেরুনো ঝরনা। গুষ্টি সহ একসাথেই চান সেরে বেরিয়ে আসতে না আসতেই দরজায় টোকা। বাড়ীর বড় ছেলে হুয়ান রাতের খাবারের এত্তেলা জানাতে এসেছে।

আখরোট আর পেস্তাবাদামের বাগান।
auto

সদলবলে এসে ঢুকলাম খামারবাড়ির বৈঠক খানায়। এককোনায় আগুন জ্বালছে হুয়ান। বিশাল হলঘরের মত বৈঠক খানা। দেয়ালে নানান আকারের বরাহ ও হরিনের মাথা ঝোলানো। এখানে সেখানে বনমুরগির স্টাফকরা ঝলমলে মুর্তি মাথা বা লেজ উঁচিয়ে আছে। ইয়াব্বড় সব গোঁফ ওয়ালালোক আর বিকটদর্শন ভদ্রমহিলাদের পুরাতন সাদা কালো ছবিতে সনাতন কালের পরিচিতি। লাগোয়া ঘর থেকে বেরিয়ে এল খামারের মালকিন এজমারেরল্ডা। তার পেছন পেছন বিশালবপু মেয়ে এলসেশিয়ান বিয়ান্কা আর চিহুয়াহুয়া রাম্বো। আকারের চাইতে তাদের হাবে ভাবে নামের প্রভাবই বেশী। রাম্বো ঘরে ঢুকেই আর কাউকে নয় আমার স্ত্রীকে তাড়া করা শুরু করে দিল। বোধ করি সে ঘরেই সেই একমাত্র মানুষ যে কিনা কুকুরের ছায়া মাড়ায় না।

এজমারেরল্ডা যেন আমাদের কত চেনা। এক ফোট আংরেজী জানে না। স্প্যানিশে ও কড়া বাস্কো টান। এই নিয়েই সে আমার মেয়েদের মন জয় করে ফেলল। তার সাথেই ঘুরে ঘুরে আমার মেয়েরা এই মৃতদের চিরিয়াখানার সাথে পরিচিত হতে লাগলো।

আমরা ছাড়াও আরেকটি পরিবার সেই সপ্তাহান্তে খামারের অতিথি। আগুনের সামনে বসে কাঠ পোড়ার পট পট শব্দ শুনতে শুনতে আর টুক টাক গল্প করতে করতেই টেবিলে বসার ডাক এসে গেল। প্রথমেই সিরকায় ডোবানো তাজা লাল টুনার টুকরোর সাথে কচকচে লেটুস এল। সাথে ভাপ ওঠা রুটির টুকরো। প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে প্লেট ফরসা করে দিলেম। এরপরে যে আরো খাবার আসতে পারে ভাবিনি। একে একে ভ্যাড়ার ঝোল, হাঁসের কনফি' আর শেষ পাতে ছাগেলের দুধের পনির আর মধু। খামারেই চোলাই করা আপেলের সিডার চলল পুরোটা সময়। দেশে গেলে মা যেমন যত্ন করে খাওয়ান, খামারের মালকিন এজমারেরল্ডা ঠিক তেমনি সামনে বসে বেড়ে বেড়ে খাওয়ালেন। শেষটাতে রান্নাঘর থেকে তাদের ছোট ছেলে ফিলিপ আর তার বান্ধবি ফিওনাও এসে আমাদের সাথে বসল। খুব সুন্দর একটা সন্ধ্যা কাটল। এতটা পথ পেরিয়ে এসেছি মনেই হল না।
-----
এরপরের দুটো দিন কেটেছে ঘোরাঘুরি করেই। বিলবাও, সান সাবাস্তিয়ান আর বিস্কে উপসাগরের ছোট ছোট জেলেগ্রামগুলো।
auto

বিলবাও এর বিশেষ আকর্ষন ছিল এর অদ্ভুত দর্শন গুগেনহাইম আধুনিক শিল্প যাদুঘর। যাদুঘর ভবনটাই দেখায় মত। আগাগোড়া টাইটানিয়ামের পাতে মোড়া ভবনটি থেকে একটি আভা যেন ঠিকরে বেরুচ্ছে। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন চীনা শিল্পী চাই গো কিয়াং এর কাজ দেখানো হচ্ছিল। সোজা কথায় অসাধারন। এই বান্দা কাগজ ভিজিয়ে তার ওপর চীনা বাজীপটকা পুড়িয়ে শিল্পরচনা করেন। শুধু বাজীপটকার মশলায়, কাগজের আরদ্রতায় হেরফের করে রং, আকার, বিন্যাসের কি অসাধারন ব্যাপ্তি দেখানো যায়, তাই দেখে এলাম। এছাড়াও এখান মার্কিন শিল্পী ডিক সেরার একটি স্থায়ী প্রদর্শনী আছে। বিশাল সব লোহার কাঠামো, যেগুলোর ভেতরে হেটে চলে বেড়ানো যায়। এক একটি দৃষ্টাকোন তখন হয়ে ওঠে একটি পরাবাস্তবতা, যেখানে ব্যাক্কল দ্রষ্টারও নিজের অজানা শিল্পবোধ চাগান দিয়ে ওঠে।
----
আবার পথে। আরো দক্ষিনে। মাদ্রিদের কাছাকাছি যতই আসছি পরিবেশের রুক্ষতা ততই বাড়ছে। সুবিশাল সমতলের ঠিক মাঝে উচু মাচার মত একটি জায়গায় দাড়িয়ে আছে মাদ্রিদ। আত্যাধুনিক শহর। কাচ কংক্রীট পাথর আর অগনিত স্যুটকোট। টানেনি।

মাদ্রিদ থেকে দক্ষিনে লামান্চা। এখনো আছে এখানের হাওয়া কলগুলি।
auto

সন্ধ্যা নাগাদ পৌছে গেলাম গ্রানাডা।
----

গ্রানাডা নিয়ে কথা বলার ভাষা আমি হারিয়েছি আলহামরায় ঢোকার পর। কেন? কিছু ছবি দেখুন।
auto
auto
auto
auto

auto

auto

auto

auto

auto


মন্তব্য

সিরাত এর ছবি

'ব্যাক্কল দ্রষ্টা' ভাই, এই লেখাটা কি নীড়পাতায় নেন নাই? বেশ ভাল লাগলো তো! বে-এ-শ ভাল!

দুর্দান্ত এর ছবি

নিতে তো চাই, কিন্তু ছবিগুলো গুবলেট করে দিল।
তুমি জানো নাকি, কিভাবে ছবিগুলিকে সাইজ করা যায়?

রেশনুভা এর ছবি

রবিন ভাই, ছবিগুলো আগে ফ্লিকারে আপ করেন। তারপর দেখবেন ডান দিকে 'Share this' এ ক্লিক করেন। তারপর যে নতুন বক্স আসবে ওটার মাঝে 'Grab the HTML' ক্লিক করেন। কোডটা কপি করে পোস্টের এডিটিং উইন্ডোতে পেস্ট করেন।
আর না বুঝলে এইটা দেখেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।