একটা বই ছিল। খুব সম্ভবত রাদুগা প্রকাশনীর। লাল মলাটের শক্ত মোড়কের হাফ ডিমাই বই। আধুনিক ধাঁচের কাল-লাল-সবুজ কাঠখোদাই বা কালি-কলম ইলাস্ট্রেশানে শক্তপোক্ত কালো বুট আর চশমা পড়া একটা স্কুল পড়ুয়া ছেলের যত ছবি - নানান আকামে ব্যস্ত। ছেলেটা বড় হয়ে যখন বাবা হল, তার কন্যা পরিবারের সবার কাছ থেকে শোনা তার বাবার ছোটবেলার গল্পগুলো বেশ আদর করে লিখে রেখেছে।
বাবার ছোটবেলার গল্পগুলো দিয়ে সে তার নিজের জীবনকে চিনে নিয়েছে, সেদিনের দুনিয়াটা দেখে নিয়েছে বালক বাবার চোখ দিয়ে।গল্পগুলোকে আলাদা করে আর মনে পড়েনা। বইটার নাম ছিল "বাবা যখন ছোট" বা এরকম কিছু একটা।
ইদানীং ছোটবেলাকে মনে পড়ে খুব। অনেকটা হঠাৎ করেই।
হয়তো আউটোবানে বেশ জোরেই ছুটছি, ঝাঁ করে একটা কালো ৭ সিরিজ পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেতে টের পাই, গত কয়েক কিলোমিটার আমি স্টিয়ারিং এ ছিলাম না। শরীর এখানেই, এসময়েই ছিল। মন ছিল ১৯৮০ সালে। ধানমন্ডি সাত নম্বর। রোদ, হালকা বাতাস, জামগাছ। জামপাতার ঝাঁঝালো গন্ধ। কিন্ডারগার্টেনের ক্লাসরুমে। সাদা লোহার গ্রিল। নরম সবুজ ডিসটেম্পার দেয়া দেয়ালে আমাদেরই করা কাটিং-পোস্টিং। খাটো টেবিলের চারপাশে খাটো চেয়ারে বসা কিছু ছোটছোট ছেলেমেয়ে। তেল দিয়ে পরিপাটি আঁচড়ানো মাথা, হাফপ্যান্ট, চক দেয়া হকি বুট। কমলার গন্ধ ওয়ালা হলুদ রাবার। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ছবি বদলানো রুলার। হলুদ কালো লাল স্টেডলার এইচ-বি। রেডিয়েন্ট ওয়ে। ফ্লাস্ক, টিফিন-বাক্স। বাটার-বন, ক্রীমরোল।
রেস্কিউ।
এসবের ফাঁকে ফাঁকে শিখে নিয়েছিলাম জীবনের দরকারি কিছু কথা। এগুলোর পরে জীবনের জন্য দরকারি আর কী শিখলাম? এর পরে দরকারি আর কিছু শিখলাম কি?
সময়মত কাজ শেষ করতে হয়। অন্যের জিনিস ধরতে হয় না। পাশের জনকে খামাখা খোঁচাতে করতে হয়না। নিজের জিনিস অন্যের সাথে শেয়ার করতে হয়। খেলায় চুরি করতে নেই। কাউকে কষ্ট পেতে দেখলে সরি বলতে হয়। নিজের তৈরি জঞ্জাল নিজেকেই সাফ করতে হয়। অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলতে হয়না।
গাপ্পিমাছ, টমেটো গাছ, কবুতরের বাচ্চা, সবাই মরে যায়।
একদিন আমিও যাবো।
মন্তব্য
ভালো লাগলো লেখাটা।
যুক্তাক্ষর আর য-ফলা তে মনে হচ্ছে আপনার বেশ সমস্যা হচ্ছে টাইপ করতে।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
পুরোন রোগ। অফিসের ল্যাপিতে এই সমস্যাটা তাঁর দীর্ঘদিনের। এটা নিয়েই উনি আছেন। বাসার ল্যাপিতে আবার কোন সমস্যা নেই। তাই ওঁর লেখায় দুই ধরনের আবেশই পাওয়া যায়।
অগ্রজ সঠিক বলেছেন।
বাবা-মার বালকবেলার ছবি দেখলে নিজের সাথে খুব নিবিঢ় ভাবে দেখা হয়ে যায়। আমার বাবামার দুজনই এখন ওপারে (কিসের ওপারে তা অবশ্য জানি না, যাই হোক)। এখন যখন এলবামে তাদের শৈশব বা তারুণ্যের স্বপ্নমাখা সরল মুখচ্ছবি দেখি, বা এমনকি প্রাণবন্ত প্রাথমিক মধ্যবয়সের ছবিও - তখন সেই সারল্য, তারুন্য, স্বপ্ন আর ব্যস্ত-নিশ্চিন্ত প্রাণবন্ততার পরিণতির কথা মনে পড়ে যায়। যা যা নিয়ে তারা এত স্বপ্ন দেখতেন; ব্যস্ত, উদ্বিগ্ন, আসক্ত, আশ্লিষ্ট, ব্যাকুল বা প্রাণময় হতেন সারাটা জীবন ধরে - তার সবই পড়ে আছে তাদের ছেড়ে। দিব্যি, নির্বিকার চিত্তে, চলে যাচ্ছে তাদের বাদ্দিয়েই। যেন ঐ মানুষগুলি কোথাও ছিলেনই না। এবং না থাকলেও চলত। আমার হাতে মাথা রেখে আমার মা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। ঐ মুহূর্তে আক্ষরিক অর্থেই মনে হয়েছিল পুরো পৃথিবীর ঘূর্ণন যেন হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেছে। সব কিছু একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু না, পৃথিবী ঘুরছেই! সব কিছু আগের মতই চলছে। শুধু মা-ই যেন কোথায় বুদ্বুদের মত মিলিয়ে গেছেন, এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না। এখন মাঝেমধ্যে মনে হয়, এই মানুষটা আসলেই কি কোনদিন এই পৃথিবীতে ছিলেন ?! নাকি সবই আমার কল্পনা!!!
আমারও একদিন এমন হবে। বুদ্বুদের মত চিহ্ণ না রেখেই মিলিয়ে যাব অস্তিত্ত্বহীণ অনন্ত নিরুদ্দেশের জগতে। যেন কোনদিন ছিলামই না। কোনদিন আর থাকবও না। অথচ আজ যা এত গুরুত্বপূর্ণ, তার সবই বহাল তবিয়তে থাকবে পিছনে পড়ে। যেমন ছিল তেমনই। বেশির ভাগ মানুষেরই বোধহয় এই-ই পরিণতি।
ভাবতে কেমন যেন হাসি পাচ্ছে, আবার পেটের ভিতর শিরশিরানি অনুভূতিও হচ্ছে। ফানি
****************************************
ধন্যবাদ।
কেন জানি লেখাটি পড়ে বুকের মাঝে ধাক্কা খেলাম।
ভালো থাকবেন।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ধাক্কা লাগলেই কিন্তু সমস্যা রে ভাই। আমরা মরনশিল, এটা সত্য ধরে নিলেই আর এটা বড় কোন ঘটনা নয়।
এরচেয়ে সহজ সত্য আর কি হতে পারে ?
তবুও জানতে ইচ্ছে করে ! ! !
ঠিক। আমিও সেই রাবারের গন্ধ পেলাম। খাঁজকাটা হলুদ/কমলা রঙের নতুন দুই টাকার চ্যাপ্টা রাবার। আর টিফিনে বাটার বন।
"জাহাজীর কাছে ভীষণ সত্য সেই। পথটাই যাওয়া, এর আর কোন ফিরে আসা নেই"...(শিরোনামহীন)
..................................................................
#Banshibir.
গানটা আগে শুনিনি। আপনার উল্লেখ শুনে ইউটিউবে খুজে শুনলাম। খুব সুন্দরলেখা খাসা বাজনা, কিন্তু নিতান্তই 'পদাতিক' গলা আর সুর সংযোজন। গায়ক তেলাওয়াত করার লোভ সামলে যদি শুধু কথা গুলো পাঠ করতো, তাহলে কিছুটা ভাল হত।
হা হা হা, পদাতিক কন্ঠ। হ্যাঁ ভদ্রলোকের গলা খুব চড়া, আমার বেশ লাগে। এইটা শুনে দেখতে পারেন, মিউজিক্যাল নাম্বার। এছাড়া এটা ওদের ইউটিউব চ্যানেল। হাসিমুখ বা ইচ্ছেঘুড়ি বা বন্ধ জানালা, শুভ্র রঙিন বা বাংলাদেশ গানগুলোও সময় থাকলে শুনতে পারেন।
..................................................................
#Banshibir.
..................................................................
#Banshibir.
ভীষন মিলে গেল - কয়েকদিন ধরে আমার ও খুব মনে পড়ছিল ছোটবেলা - লিখতে পারিনা, তাই একটা ব্যানার এর চেষ্টা করেছিলাম - তারপর ই তো পীর সাহেব এর সুপারিশ এল
অনেক অনেক ভালো লাগলো।
আবিরাম লিখতে থাকুন, আমাদের জন্যে।
শুভ কামনা রইলো।
লেখাটা পড়ে বড্ড আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লুম। আমিও যাব এবং সেটা আর খুব দূরবর্তী নয়।
"সেটা আর খুব দূরবর্তী নয়।"
সময় নাকি গন্তব্য়?
বইটার নাম বাবা যখন ছোট ।
facebook
বইটার কোন অনলাইন সংস্করনের খোজ দিতে পারেন? একান্ত বাধিত হব।
ইমেইল পাঠিয়ে দ্যান রে ভাই।
facebook
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বাবা যখন ছোট গতবছর স্ক্যান করে পিডিএফ বানিয়েছিলাম। বইটা ছোটচাচা, ছোটফুফু হয়ে আমার হাতে পৌঁছেছিল, অন্তত ৪০ বছর আগেকার সংস্করণ।
এখানে পাবেন।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
এই যে পিডিএফ লিঙ্ক :--
'বাবা যখন ছোট'
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
এটাই আসল কথা !!
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
অটোবানে গাড়ি চালাতে চালাতে যদি মন স্টিয়ারিং থেকে উধাও হয়ে যায়, তবে আপনার সেই আশঙ্কা দ্রুতই বাস্তবে রূপায়িত হতে পারে
"মাটির তৈরি ময়না বলে,
'তাইলে কেনে মনটা দিলে,
না দিলে জোড় যদি ডানায়',
ও তার ভবের বেড়ী পায়ে জড়ানো,
উড়তে গেলে পড়িয়া যায়
পাখিটা বন্দী আছে দেহের খাঁচায়"
খুব ভাল লাগলো।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আপনিই অনুপ্রেরণা।
ধানমণ্ডী সাত-এর কোন্ কিন্ডারগার্টেন? লোরেটো/মেপল্লীফ/সেন্ট প্ল্যাসিড? '৮০-তে তুমি কি স্কুলে যেতে? আমিই তো তখন ক্লাস ফোর! ক্লাস ফোর, জুতাচোর!! ১৯৮০ সালে আমাদের দেশে প্রথম শিশুপার্ক উদ্বোধন হয়েছিল; নিমতলী থেকে শাহ্বাগে মিউজিয়াম সরে এসেছিল; শেরেবাংলানগরের রপ্তানীমেলাতে বড় বড় ম্যাচবক্স, ছোট রঙিন সাবানের বার আর মোমের পুতুল পাওয়া যেতো; দু'একটা জায়গায় কোন্ আইসক্রীমের দোকান হয়েছে বলে শুনেছি কিন্তু খেতে পাইনি; কাগজের প্যাকেটেভরা ইগলু'র আইসক্রীম খেয়েছি কেবল; কুর্মিটোলাতে নতুন এয়ারপোর্ট হয়েছে - মামা'র সাথে সেটা দেখতে গেছি........
ক্লাস এইটের পর বাংলা, ক্লাস টেনের পর ইংরেজী আর ক্লাস টুয়েলভের পর গণিত কিছু শিখেছি বলে মনে হয় না। বিশ্বকর্মার পাঠশালা আর বৈশ্যবিদ্যার টোলে শেখা বাজারচলতি পাঠ বাজারেই ফেলে এসেছি। তাহলে নীতিশিক্ষাটা হলো কবে? ওটা কিন্ডারগার্টেনের পর আর শেখা হয়নি। এরমধ্যে দরকারী কোন্গুলো? যেগুলো পেটের ভাত যোগায় সেগুলো, নাকি যেগুলো মানুষ হতে শেখায় সেগুলো!
ঠিক্ এই মুহূর্তে মরে গেলেও কোন আফসোস্ থাকবে না। আমার মতো অপদার্থকে আরো এক লক্ষ বছর আয়ু দিলেও অসম্পূর্ণ কাজগুলো শেষ করে যেতে পারবো না। তাই প্রতিনিয়ত মৃত্যুচিন্তা এক রকমের স্বস্তি দেয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কিন্ডারগার্টেনটার নাম ছিল রেইনবো।
পেটের দায়ে সচরাচর নানান লোকের কাছে যে কথাগুলো বলি, বলতে শুনি, সেগুলোকে ভাবনার চালুনিতে ফেললে যা রয়ে যায়, সেগুলো কিন্তু সেই কিন্ডারগার্টেনে শেখা কথাগুলোই। তখন, কিন্ডারগার্টেনের পর দরকারি কিছুই কি তাহলে আর শিখিনি? এই প্রশ্নটাই সামনে চলে আসে বারবার।
আফসোস থেকে এই লেখাটা আসেনি, জীবনের প্রয়োজনীয় কথাগুলো কত সরল আর কতে পুরাতন, সেই অনুধাবন থেকে এসেছে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আহ্, বইটা আমারও ছিল। গতবছর বাড়িতে গিয়ে আর খোঁজে পাইনি। লেখাটা ভাল লাগল।
কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক নোট। মাত্রই রোজায় ‘জনহীন’ কক্সবাজারে তিনটা চমৎকার দিন কাটিয়ে আসলাম। আহ্, শুধু বই, কফি আর ল্যাপটপ। আমার ল্যাপটপে কিছু কিছু ডেটা আছে যা হয়ত সেখানে থাকার কথা না । সার্চ দিয়ে কিছু খোঁজতে গিয়ে এগারো বছর আগের ‘জনৈক R.V.E’ র লেখা শর্ট-টার্ম-অ্যাসাইনমেন্টের একটা নোট এবং চিঠি পেলাম... রিঙস অ্যা বেল!!!
ডিং-ডং। রেমেল্টের সাথে দেখা হয়েছিল এ বছরের শুরুতে।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আহা বাটার-বন, ক্রীমরোল, সেই সময়ের কথা মনে পড়ে গেল।
মৃত্যুচিন্তা, বুঝলেন মৃত্যুচিন্তা! এই দুনিয়া কিছুই না, শুধুই মায়া, শুধুই মিছার স্বপন। আইজ আছি, কাইল ঠুশ... পরশু রিটার্ন টু দ্য ইনোসেন্স। তরশু যখন মুখোমুখি হতে হবে নিজের ফেলে আসা ছোট্ট অবয়বটার সাথে- কী জবাব দেয়ার থাকবে, যখন জিজ্ঞেস করবে, তার ইচ্ছেগুলো পূরণ করা হয়েছে কিনা! তখনকার মানইজ্জতের ফালুদা বাঁচাতে ছোটবেলার ইচ্ছেগুলো পূরণ করা শুরু করে দিয়েছি, আপনিও শুরু করে দেন। কী আছে জীবনে...
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ছোটবেলার ইচ্ছেগুলো পূরণ করা শুরু করে দিয়েছি, আপনিও শুরু করে দেন। কী আছে জীবনে...
চমৎকার লাগলো এই স্বগতকথন। আমিও ফিরবো।
লেখাটা পড়ে অনেক কিছু একবারে মনে পড়ে গেল, বাবাকে, আমার স্কুলটাকে, ছোটবেলার আমাকে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
নতুন মন্তব্য করুন