নতুন ভেলকি - কৃষি ক্ষেত্রে কর

দুর্দান্ত এর ছবি
লিখেছেন দুর্দান্ত (তারিখ: শুক্র, ১৮/১২/২০০৯ - ৫:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দেশজ উতপাদনের ২৪% আসে কৃষিখাত থেকে, তাই নাকি আমাদের সরকারের উচিত এই খাতের আয়কে করের আওতায় আনা। একথা বলছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা।

অর্থনীতির সাথে আমার পরিচয় সীমিত। তবে পারিবারিক ভাবে কৃষিকাজের সাথে অল্পবিস্তর পরিচয় আছে। সারা বাংলাদেশের খবর আমি জানিনা। তবে উত্তর কুমিল্লার বিল এলাকায় ধান, গম, পাট, আখ, আলু, কাওন, সবজি, মুরগি, মাছ, ছাগল এর কোনটাই যে লাভজনক নয় সেটা আমি নিজের অভিগ্গতা থেকে জানি। আমাদের দাদার আমলে পাট আর গমের প্রচলন ছিল, এখন এগুলো আর কেউ করে না। ভাল বছরে একটি ইরি ও একটি বোরো ফসল, বন্যার বছরে শুধু ইরি। রাবি মৌসুমে সখ করে কাওন আর সবজির চাষ করেন অনেকে। ডিজেলের ভর্তুকির কথা শোনা যায়, কিন্তু সেটা কখনো কেউ চোখে দেখেনি। দুবেলা দুমুঠো তাদের জুটে যদিবা যায়, কর দেবার মত অবস্থা কি তাদের এক দু'দশকে হবে?কুমিল্লার কৃষকের অবস্থা কি দেশের আরসব কৃষকের চাইতে খুব বেশী খারাপ? মনে হয় না।

দেশে নাকি ২২ লাখ টিন নম্বরধারি আছে। বড়, মাঝারি, ছোট ব্যাবসায়ীরাই মূলত নিবন্ধিত হন, বানিজ্যের খাতিরেই। এবছর রিটার্ন জমা দিয়েছে মাত্র সাড়ে ৭ লাখ, মানে নিবন্ধিত করদাতার দুই তৃতিয়াংশই বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছে। এই নচ্ছাড়দের মধ্যে সরকারের হোমরাচোমরা আছে, সেটা চোখবুজে বলা যায়। যেখানে বাংলাদেশ সরকারের গেজেটেড অফিসার, শিল্পমালিক, বড় চাকুরেদের একটা বড় অংশ থেকে সরকার কর আদায় করতে ব্যার্থ হচ্ছে, সেখানে কিনা আমাদের উপদেষ্টা কৃষকের কাছ থেকে কর আদায় করার খোয়াব দেখেন।

এই লোক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন। তার কথার কিছু ওজন আছে, এমন কথাও জোর দিয়ে বলা যায় না। মন্ত্রনালয়ে একজন আস্ত ডিজিটাল মন্ত্রী যেখানে বেশ চড়ে খাচ্ছেন, সেখানে কেন আলাদা করে মন্ত্রীপদমর্জাদার আরেকজন উপদেষ্টা লাগে সেটা আগে বোঝা যায় নি। এখন একটু একটু করে বোঝা যাচ্ছে। পাজেরো আর প্রটোকলে ঠাসা ব্যাস্ততার অবসরে এনারা ভুখা কৃষক পিষে ট্যাক্সো আদায়ে মক্শো করেন।

এ বড় পরিশ্রমের কাজ।


মন্তব্য

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আপনি কি সংবাদটা পড়েছেন? পড়ে বুঝেছেন?

নাকি বুঝে শুনেই বিষয়টাকে ট্যুইস্ট করেছেন?

আপনার লিংকে গিয়ে তো আমি কৃষিখাতে বা কৃষকদের ক্ষেত্রে নতুন কোনো করারোপের কথাই দেখলাম না। একটা ভাসা ভাসা কথা দেখলাম তা হলো কৃষি খাতের শিল্পের ওপর করারোপ।

কোথাকার জল আপনি কোথায় গড়িয়ে আনলেন?

আপনার কি-বোর্ডের জোর আছে। দুর্দান্ত।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

দুর্দান্ত এর ছবি

আপনি বোধহয় পুরোটা পোস্ট পড়েননি। ছোট পোস্ট, বেশী কষ্ট হবে না, পুরোটা পড়ুন।
পোস্টে কথাও আমি লিখিনি যে কর আরোপ করা হচ্ছে। উপদেষ্টা কৃষিশিল্পে করারোপের কথা ভাবছেন, সিম্পোজিয়ামে গিয়ে এ নিয়ে কথা বলছেন, সেটাই আমার আপত্তি, এই পোস্টের উদ্যেশ্য সেটাই।

রাজস্বের যেসব রাস্তা তৈরী আছে সেগুলো থেকে সংগ্রহ বাড়ানো, অথবা অন্যান্য খাতের কথা ছেড়ে কৃষিখাত নিয়ে লাড়ছেন কেন তিনি? কৃষিশিল্পের করখরচা বাড়লে এই শিল্পের গোড়ায় যে ক্ষুদ্র কৃষক, তার অবস্থাটা কি হবে এটা কি তার অজানা?

সারা দুনিয়ায় যেখানে ভর্তুকি দিয়েও ছোট আকারের কৃষিশিল্পগুলোকে টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না, সেখানে আমাদের এই উপদেষ্টার (আপনার ভাষায়) ভাসা ভাসা কথার জল বেশী দুরে গড়াতে দেখতে চাই না।

উপদেষ্টার যে কৃষিশিল্পে করারোপ কথা বলছেন, এতে কি দেশের ভাল হবে বলে আপনার মনে হয়?

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

আসলে প্রথম আলোর রিপোর্টটা অস্পষ্ট। এখানে শিরোনাম আর ভেতরের আলোচনার মধ্যে অনেক ফারাক। আর যে মন্তব্যের ওপর শিরোনামটা নির্বাচন করা হয়েছে সেটাও সেমিনারের মূল আলোচনার একটা ক্ষুদ্র অংশ। সেই অর্থে এই পোস্টটাকে আমি টুইস্ট বলবনা।

এখানে বক্তা কৃষি খাতের কোন কোন কার্যক্রমকে করের আওতায় আনার কথা বলেছেন সেটা অস্পষ্ট। মনে হচ্ছে তিনি কৃষিনির্ভর শিল্পের কথা বলছেন। সেটা অবশ্যি ২৪% এর পুরোটা নয়। কৃষিখাত আর কৃষিনির্ভর শিল্প এক নয়।আর কৃষি নির্ভর শিল্পের উপর করারোপের প্রশ্ন আসলেও অনেক কিছুই দেখার আছে। কৃষি নির্ভর শিল্প বলতে যদি আমরা সেসব শিল্পকে বুঝি যেখানে কৃষিজ পন্য কাচামাল হিসাবে ব্যবহার করা হয় সেক্ষত্রে তাকে করের আওতায় আনার প্রভাব কৃষিতে কি হবে সেটা ভাবার বিষয়। ব্যপারটা ব্যস্টিক এবং সামষ্টিক অর্থনীতির দিক থেকে বিচার করলে বেশ কিছু প্রশ্ন এসে যায়

  • পন্যটির চাহিদা এবং যোগান কতটা স্থিতিস্থাপক। অর্থাৎ কস্ট বেড়ে গেলে চাহিদা বা যোগানে ফলাফল কেমন পড়বে। এটা সব কৃষিজ পন্যের ক্ষেত্রে এক হবে না। কিন্তু যেটা ঝুকি পূর্ণ সেটা হচ্ছে যদি উৎপাদন কারিরা দেখে করের দরুন তাদের পন্যের চাহিদা দেশের আর দেশের বাইরের বাজারে কমে যাবে তাহলে তারা বিপাকে পড়বে এবং যদি শিল্পগুলো বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কৃষকেরা বিপদে পড়বে কোন সন্দেহ নেই।
  • স্থিতিস্থাপকতার আরেকটা প্রভাব হচ্ছে কর আদায়ের পরিমান কি হবে। স্থিতিস্থাপকতার উপর কর আদায়ের পরিমানও অনেকটা নির্ভর করবে। যদি করারোপের দরুন চাহিদা অনেক কমে যায় তাহলে কর আদায় আসলেকি বাড়বে? যদি শিল্পটি বন্ধই হয়ে যায় এত লাভ কার হবে? এই রিপোর্টের বর্ণনা অনুযায়ি সেমিনারে ইউএসএইডের প্রতিনিধিও ছিলেন। তিনি এই মন্তব্যের উত্তরে কি বলতেন? আমেরিকার মত কৃষিখাতে ভুর্তকি দেয়া দেশ আরেকটা আছে কিনা জানি না, কিন্তু তারা অন্য দেশকে কৃষিখাতে করা আরোপের পরামর্শ দিয়ে থাকে।
কিন্তু রিপর্টটি সন্দেহ জাগায় এটুকু বলতে বাধ্য হচ্ছি।
পোস্টের জন্য দুর্দান্তকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের অর্থনীতিবিদেরা বিষয়টি নয়ে কি ভাবেন সেটা দেখার বিষয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

তবে উত্তর কুমিল্লার বিল এলাকায় ধান, গম, পাট, আখ, আলু, কাওন, সবজি, মুরগি, মাছ, ছাগল এর কোনটাই যে লাভজনক নয় সেটা আমি নিজের অভিগ্গতা থেকে জানি। আমাদের দাদার আমলে পাট আর গমের প্রচলন ছিল, এখন এগুলো আর কেউ করে না। ভাল বছরে একটি ইরি ও একটি বোরো ফসল, বন্যার বছরে শুধু ইরি। রাবি মৌসুমে সখ করে কাওন আর সবজির চাষ করেন অনেকে।

ঠিকই বলেছেন দুর্দান্তদা।

একতা ব্যক্তিগত প্রশ্ন - আপনি কুমিল্লায় কোন এলাকার?

- বুদ্ধু

দুর্দান্ত এর ছবি

মুরাদনগর।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

আমার চোদ্দগ্রাম

অতিথি লেখক এর ছবি

হে.... হে.... বস্‌ , আপনিও ।
চোদ্দগ্রাম > চৌদ্দগ্রাম

-বুদ্ধু

অতিথি লেখক এর ছবি

হেঃ হেঃ বস্‌ , আমিও ।

- বুদ্ধু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।