কাতারের ডায়রী-২

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: সোম, ১৬/০৭/২০০৭ - ২:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৩.
বলছিলাম ল্যান্ড ক্রুজারের কথা। এই বিষয়ে আমার থিউরি হলো, হাজার বছর ধরে উট চালানোর পরে নিচু কোনো জিনিস আর বোধহয় শেখ সাহেবদের ভালো লাগে না। তাই উঁচু উঁচু পাজেরো, রাস্তাঘাটে শুধু এই জিনিস। এইচ.আর. এর যে আহ্-লান-ওয়া-সাহ্-লান কাজে নিযুক্ত ইংলিশমূর্খ শেখ সাহেব আমাকে এয়ারপোর্টে নিতে আসলেন, তার পাজেরোখান দেখে মনে মনে বলেছিলাম, ব্যাটা এইটা তোর হতেই পারে না। নির্ঘাত আমিরের বাড়ি থিকা চুরি করে এনেছিস। পরে ইশারা ইঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলাম, এইটা কি তোমার? শেখের ব্যাটা তখন এক পা এক্সিলারেটর আর অন্য পা সীটের তলে মুড়িয়ে ডানহাতে তছবি আর বামহাতে স্টিয়ারিং হুইল ধরে মারহাবা মারহাবা মার্কা গান শুনতে শুনতে যান্ত্রিক উট চালাচ্ছিলো, আমার প্রশ্ন বুঝতে পেরে তছবিওয়ালা হাতটাকে এমনভাবে উপরে তুললো যে আমি বুঝে নিলাম, সবই উপরওয়ালার কুদরত।

দোহার রাস্তাগুলোও মাশাল্লাহ। সিগনালের বদলে খালি ঢাকার শাপলা চত্বর। সারকেলে যে যেভাবে পারে গাড়ি ঢুকাচ্ছে, আবার হুশহাশ বের হয়ে যাচ্ছে। আর সোজা রাস্তায় লেন বলে যে একটা জিনিস আছে সেটা বোধহয় আরবি ডিকশনারিতে নাই। কাতারে প্রাপ্তবয়স্ক মৃতু্র কারণের তালিকায় গাড়ি দূর্ঘটনা তিন নম্বরে। গতবছর প্রোজেক্টের গাড়ি ছিল, সেটা চড়ে দোহা'র রাস্তায় ঘুরাঘুরির পর এবার স্বত:প্রনোদিত হয়ে বলেছি, আমার গাড়ির শখ নাই!
এতে অবশ্য একটু কষ্ট হয়ে যাচ্ছে,কাতার তো আর সিংহপুর না যে, ছায়া সুনিবিড় ছাদওয়ালা করিডর হাটলেই বাসস্টপ যাহাতে পটাপট একের পর এক গাড়ি এসে থামে। প্রায় সকল কাতারীরাই বড় লোক হওয়ায়, আর গাড়ির দাম-তেলের দাম পানিতে এসে ঠেকায় তারা মনে হয় ধরেই নিয়েছে যে, পাবলিক সার্ভিসের কোনো দরকার নাই। জিজ্ঞাসা করলে বলে, বাস, উহা আবার কি?
তাই কলিগদের কাছ থেকে লিফট নিয়ে আর শাটল মাইক্রো দিয়ে ইনডাস্ট্রি-ভার্সিটি-গেস্ট হাউজ করা। ট্যাক্সির চিন্তা না করাই উত্তম, কল করলেই আসে দুই ঘন্টা পর, তারজন্যে মরুভুমির মধ্যে দাড়িয়ে না থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।

৪.
তবে একটা জিনিস ভালো লেগেছে যেটা গতবারো লেগেছিলো, সেটা হলো, খানাদানা। ট্র্যাডিশনাল খাবারের মধ্যে পড়ে শুকনা রুটি কিন্তু ইহা এখন শুধু টেবিলের শোভাবর্ধনের জন্যই ব্যবহৃত। কেউ কেউ খায়, কেউ খায় না। পাশে যদি বিরিয়ানি, রোস্ট, কাবাব থাকে তাহলে ওই রুটি খাবার প্রয়োজনও হয় না। মানুষ কিভাবে এই গরমে এই সব খেয়ে বেচঁে বর্তে থাকে, এটা একটা প্রশ্ন বটে। এর মধ্যে পড়ে বাঙালির হয়েছে মহা মুশকিল। চিজ-বাটার-হানি,মুরগি-দুম্বা-গরুর ভিড়ে সাধু পানির মাছের নামগন্ধ নাই। এইসব বস্তাভারী খাবার খেয়ে তাই প্রথমদিন টানা পনেরো ঘন্টা ঘুমিয়েছি।
তবে শুকনা রুটিটা খাওয়ার মতন। এটা আরবরা খায়ও দারুণ সুন্দর করে। প্রথমে দুই টুকরা করে, তারপর এক টুকরা নিয়ে মাঝবরাবর ফাক করে শুকনা মাংস, রোস্ট, সালাদ, হাবিজাবি যত কিছু আছে ঠেসে ভরে আস্ত একটা স্যান্ডওইচ বানিয়ে ফেলে। সামনে বসে কেউ যখন ধীরেসুস্হে এই জিনিস তৈরী করে, তখন মনে হয় কেড়ে নিয়ে খেয়ে ফেলি। হাত কাটা যাবার ভয়ে অবশ্য তা করা হয়ে উঠে না। (চলবে)
১৬/০৭/০৭
দোহা, কাতার

কাতারের ডায়রী-৩


মন্তব্য

??? এর ছবি

অতিকথন ছাড়াও লেখা উইটি হৈতে পারে।
একই সঙ্গে হৈতে পারে অথেনটিক ফিল্ডনোট।
কাতারের ডায়রিতে এরকম আলামত দেখতে পাইয়া দিলখোশ হৈল খুব।

ফারুক হাসান এর ছবি

বেশী সময় নিয়ে লিখতে পারছিনা। তাই ভয়ে ছিলাম। ভাল লাগছে জেনে আমারও ভাল লাগলো খুব।

-----------------------
এই বেশ ভাল আছি

মাশীদ এর ছবি

তুই আবার কাতারমুখো হয়েছিস সেটা শুনলাম শাহাবুদ্দিন স্যারের কাছে, এই রবিবার। স্যার সপরিবারে এসেছিলেন আমার বাড়ি। বহুতদিন পরে ওনাদের পেয়ে, বিশেষ করে তাফিদাকে পেয়ে খুবই মজা লাগল। একদিন থেকে সোমবারে আবার চলে গেলেন।

কাতারের ডায়রী ভাল লাগছে খুব। চলুক আরো। শুধু তোকে সামনাসামনি চিনি বলেই বোধ হয় এই কথ্য ভাষাটা ঠিক মেলাতে পারছি না। সাদিকের অনেক লেখা পড়ে যেমন একটু আনইজি লাগে, কারণ তোদের সাথে সামনাসামনি ঠিক এভাবে শুনে অভ্যস্ত না।

এবার কদ্দিন থাকতে হবে?


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

অমিত আহমেদ এর ছবি

কাতারে ওল্ড সালাথার মারজুর ইনে ছিলাম ক'দিন।
আমার কাছে কাতার অন্য আরব দেশের চেয়ে ভাল লেগেছে। মানুষ অন্য আরবদের চেয়ে বেশ মিশুক, তুলনামুলক ভাবে ভদ্র। আর কর্নিচ থেকে তাজা মাছ সহ সুস্বাদু খাবার... উমম! হাসি

কানাডা থেকে গিয়েছিলাম, কানাডায় তাপমাত্রা তখন -20 সে. বোঝেন তাইলে কি অবস্থা হয়েছিল আমার!


আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

ফারুক হাসান এর ছবি

এবার কাতার আসতে হয়েছে অনেকটা তাড়াহুড়ার মধ্যে। অনেকে জানেনও না যে আমি এখন কাতার :)। শাহাবুদ্দিন স্যার কে বলে আসতে পেরেছিলাম অবশ্য। তাফিদা অনেক বড় পিচ্চি এখন। ওর মা তো নায়ক মামা বলে চিনায়ে দিছে, খালি হা কইরা তাকাইয়া থাকে, হা হা হা। এইবার নায়িকা খালারেও দেখতে গেছিল তাইলে, বেশ বেশ।
কাতার থেকে আসার পর মালেশিয়া আসতেছি ঘুরতে। @ মাশিদ।

অমিত আহমেদ,
আপনি ঠিক বলেছেন। কাতারের লোকজন আরবদের মধ্যে মিশুক। তবে তা তাদের আমন্ত্রণে আসার কারণেই কি না, কে জানে। গড়পরতায় কাতারীদেরকে নিজেদেরকে নিয়ে থাকতে পছন্দ করা জাতি বলেই মনে হয়েছে। তবে অন্য সবার মতন এরাও সাদা চামড়াদের ভক্ত। আপনি ওল্ড সালাথায় থেকেছেন, তাহলে নিশ্চই বিখ্যাত আরবীয় হুক্কাও টেনেছেন! আর দোহার এরাবিক/পারসিয়ান গালফের(পারস্য উপসাগর) তীর ঘেষা রাস্তা যা কে ওরা বলে কুর্নিশ,সেটাও নিশ্চই দেখেছেন। আমার দারুণ লাগে।
বিষুবের উপর থেকে এসেই আমার যেরকম লাগছে,আর আপনি তো কানাডা থেকে এসেছিলেন, নিশ্চই কালা ভুতুম হয়ে ফিরে গেছেন! এবার সামারের তাপমাত্রা একটু কম, তাই ৩৭/৩৮ ডিগ্রি করছে। গত শীতে নাকি বৃষ্টির পরিমাণো বেশী ছিল।

তবু, মরুভূমি মরুভূমিই।

-----------------------
এই বেশ ভাল আছি

অমিত আহমেদ এর ছবি

কুর্নিশ বলে? আমি তো এতদিন কর্নিচ বলে এসেছি... হাঃ হাঃ হাঃ এমনকি আমার আগের মন্তব্যেও কর্নিচই লিখেছি।

ভাল কথা পাম আইল্যাডে গিয়েছেন? গিয়ে থাকলে ছবি দেবেন প্লিজ! ওটাতে যাবার খুব ইচ্ছা ছিল, কিন্তু তখন কন্সট্রাকশনের কাজে বন্ধ ছিল।


আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

ফারুক হাসান এর ছবি

অমিত আহমেদ,
পাম আইল্যান্ড এ এখনও যাওয়া হয়নি। গতবার কন্সট্রাকশনের কারণে, এইবার ব্যস্ততা এত বেশি যে সময় করে উঠতে পারছি না। যদি যাওয়া হয়, ছবি অবশ্যই দেব।

-----------------------
এই বেশ ভাল আছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।