সদ্যজাত কোম্পানির সফল উদ্যোক্তা কীভাবে হবেন?

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: শনি, ১৭/১২/২০১১ - ১২:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নতুন যে কোনো সদ্যজাত (start-up) কোম্পানিই শুরু হয় কিছু “অসাধারণ” আইডিয়া থেকে। আনিসের কথা মনে আছে আপনাদের? ঐ যে হুমায়ূন আহমদের 'বহুব্রীহি' নাটকের জনপ্রিয় চরিত্র (আসাদুজ্জামান নূর অভিনীত) যে কিনা 'উপদেশকেন্দ্র' নামে একটি কোম্পানি দিয়েছিলো। টাকার বিনিময়ে সে সমস্যাগ্রস্ত মানুষকে বুদ্ধি বাতলে দিতো।

১.
যার কাছে চমৎকার কিছু আইডিয়া আছে, তার নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণার অভাব হয় না। ব্যবসায় সাফল্য বলতে মূলত অর্থনৈতিক মুনাফাকে বোঝালেও সদ্যজাত কোম্পানির সাফল্য কেবল অর্থনৈতিক উন্নতিই নয়, আরো অনেক কিছু। নতুন কিছু করতে পারা, নতুন পথের সন্ধান দেয়া, নিজের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন, কাছের মানুষদেরকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দেয়া, সামাজিক দায়বদ্ধতা মেটানো, এরকম অনেক কিছুই একজন সফল উদ্যোক্তার পক্ষে করা সম্ভব। অনেক সময়ই দেখা যায় যে, নিজের জন্য নয় বরং কাছের মানুষকে সাহায্য করতে গিয়েই অনেকে শিল্পোদ্যোক্তা হয়েছেন। হয়তো নিজের পরিবারে এমন কেউ আছে যাকে আপনি সাহায্য করতে চান। আপনার বুদ্ধি, মেধা, শিক্ষা আর দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে একটি সদ্যজাত কোম্পানি গড়ে তুলুন, তারপর সেই মানুষটিকে আপনার কোম্পানির কাজে খাটান। আপনি যেমন উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হবেন, তেমনিভাবে আপনার দায়বদ্ধতাও আপনি মেটাতে পারবেন। উদ্যোক্তা হবার কোনো বয়স নেই, অন্যক্ষেত্রে সফল মানুষও শিল্পোদ্যোক্তা হতে পারেন।

আমি মনে করি, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মানুষের উদ্যোক্তা না হয়ে উঠা তার সম্ভাবনার এক চরম অপচয়।

এতকিছুর পরও সৃষ্টিশীল উপায়ে উদ্যোক্তা হবার পথে আমাদের অদৃশ্য সব জুজুর ভয়। অনেকে বাপ-দাদার দাড় করানো পারিবারিক ব্যবসাকে পেশা হিসেবে নেন, যত না আগ্রহে তার চেয়ে বেশি জীবিকার তাগিদে। অন্যথায় সহজে এই পথে হাটার লোক পাওয়া মুশকিল। ষোলো কোটি মানুষের এই দেশে হয়তো হাতে গোনা কিছু লোক পাওয়া যাবে যারা একেবারে শুরু থেকে, যাকে বলে ফ্রম স্ক্র্যাপ, কোনো প্রতিষ্ঠান দাড় করিয়েছেন। তা না হলে এখনো কেন একজন বিল গেটস, স্টিভ জবস, এন্ড্রু কার্ণেগি, হেনরি ফোর্ড, ডব্লিও কে কেলোগ, ওয়াল্ট ডিজনি, রালফ লরেন, টমাস এডিসন, জামশেদ টাটা কিংবা জন রকফেলার পেলাম না আমরা?

এখনো পাই নি তাই বলে যে কখনোই পাবো না, তা তো নয়। যদি বলি, আপনি নিজেই একজন টমাস এডিসন কিংবা একজন হেনরি ফোর্ড কিংবা আমাদের পরবর্তী স্টিভ জবস?

বিশ্বাস হচ্ছে না? সেটাই তো সমস্যা।

আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। দুনিয়ার তাবত প্রভাবশালী, সম্পদশালী আর ক্ষমতাবান মানুষের মধ্যে যদি একটা মিল থাকে তো ঐ আত্মবিশ্বাসের জোর। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে আত্মবিশ্বাসের এভারেস্টে চড়ে বসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সেটা থাকলে এরপর চাই শুধু এক মুঠো গুড় আর একটি চিমটি লবণ। হাসি

সেই গুড় আর লবণের খোঁজ করাই এই লেখার উদ্দেশ্য। লক্ষ্যণীয়, এই লেখার বিষয়বস্তু কেবলমাত্র সদ্যজাত কোম্পানি।

২.

যাই হোক, উদ্যোক্তা হবার জন্য আবশ্যকীয় কোনো পূর্বশর্ত নেই। যে কোনো অভিজ্ঞতাই মূল্যবান, কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, সাফল্যের কোনো সুনির্দিষ্ট ফর্মুলা নেই। যে কারো পক্ষেই সদ্যজাত কোম্পানির উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব। মাত্র কয়েক হাজার টাকা বিনিয়োগ করে যে লোকটি ভাতের হোটেল দিচ্ছে সেও একজন উদ্যোক্তা। হতে পারে লোকটির একটা দারুণ আইডিয়া আছে মাথায়, তার হোটেলটি আর সব হোটেলের মতন হবে না, একটু আলাদা হবে। সেই আলাদা ব্যাপারটা কতটা চমকপ্রদ ও আনকোড়া তার উপরে নির্ভর করবে সদ্যজাত কোম্পানি হিসেবে হোটেলটির ভবিষ্যৎ।

একটি সদ্যজাত কোম্পানির নিচের বৈশিষ্ট্যগুলি থাকেঃ

  • আইডিয়ার দিক থেকে এখনো এরকম কোনো কোম্পানির অস্তিত্ব নেই।
  • যে পণ্য বা সেবাকে লক্ষ্য রেখে কোম্পানিটি শুরু হতে যাচ্ছে সেটি একদম আনকোড়া, কিংবা এই ব্যবসার ধরণটা একদম নতুন, কিংবা ব্যবসাটা কিছু ব্যতিক্রমী ও আনকোড়া ধারণার (idea) উপর প্রতিষ্ঠিত।
  • অতিসত্ত্বর রাজস্ব অর্জনের সম্ভাবনা কম
  • ধরেই নেয়া যায় যে কোম্পানিটি শুরু থেকেই ক্ষতির মুখ দেখবে এবং কিছুদিন পর্যন্ত লস দিয়েই চলবে। সেই ‘কিছুদিন’ আসলে দিন মাস পেরিয়ে কয়েক বছরও হতে পারে।
  • ব্যবসার শুরুর মূলধন জোগাড় করা হবে মূলত জমানো এবং ধার করা টাকায়, ব্যাংক লোন নিয়ে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে। কাছের ও পরিচিত মানুষেরা (Family, Friends & Fools হাসি ) এইক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা রাখবেন। তবে নিজের ও পরিবারের সর্বস্ব কখনোই খোয়ানো যাবে না হাসি
  • বেশি ঝুঁকি, যেহেতু সদ্যজাত কোম্পানির সূদুরপ্রসারী লক্ষ্য বেশি উপার্জন

শুরুতেই বলেছি, সদ্যজাত কোম্পানির শুরু হয় এক বা একাধিক “অসাধারণ” আইডিয়ার ফলাফল হিসেবে। ধরুন আপনার একটি দারুণ আইডিয়া আছে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, আপনি পত্রিকায় দেখলেন যে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে আলু উৎপাদিত হচ্ছে কিন্তু তার দাম খুবই সস্তা। কৃষকদেরকে কীভাবে আলুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা যায় সেই ব্যাপারটা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আপনার মাথায় এক সমাধান উঁকি দিলো। আপনি চিন্তা করলেন যে যদি কোনোভাবে আলু থেকে নতুন একটি পণ্য তৈরি করা যায় যেটির চাহিদা উন্নত বিশ্বের এক বা একাধিক দেশে খুব বেশি, তাহলে ন্যায্যমূল্যে কেনা আলুকে কাঁচামাল হিসেবে নিয়ে একটা সদ্যজাত কোম্পানি শুরু করা যায়। এই ব্যাপারটা আপনার নিকটজনদের সাথে আলোচনা করলেন, জার্মানপ্রবাসী আপনার বন্ধু হিমু আপনাকে জানালো যে জার্মানিতে "কার্টোফেলপুরে" নামে আলুর তৈরি নতুন এক খাদ্যপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই পণ্য যেমন জার্মানিতে রপ্তানি করা যায়, তেমনিভাবে দেশেও এক অভিনব নতুন খাবারের ব্র্যান্ড হিসেবে চালু করা যায়। আরো খোঁজখবর নিয়ে জানলেন যে এই পণ্যটির শেলফ লাইফও বেশ ভালো, বাংলাদেশে আর কেউ পণ্যটি তৈরি করছে না, আপনার আরেকজন জার্মানপ্রবাসী ব্যবসায়ী বন্ধু জার্মানিতে পণ্যটির বিপণনের সার্বিক দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। এদিকে মুন্সিগঞ্জের আলুচাষীদের একটি সমিতির সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানালো যে যদি কোনো কোম্পানি ফসল উঠার সাথে সাথেই সেটি কিনতে আগ্রহী হয় তাহলে বাজারমূল্যের চেয়েও কম মূল্যে সেই কোম্পানির কাছে তারা তাদের উৎপাদিত আলু বিক্রি করবেন। এতে তাদেরও লাভ, কারণ এর ফলে আর আলুর সংরক্ষণ নিয়ে ভাবতে হবে না, হিমাগারের ভাড়া ও পরিবহন খরচও বেঁচে যাবে, এবং নিয়মিত আলু বিক্রির নিশ্চয়তা থাকলে তারা প্রতি মৌসুমেই আরো বেশি আলু চাষে উৎসাহী হবেন। সর্বোপরি, আপনি প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখলেন যে যদিও আপনার আইডিয়াগুলি ব্যবসায়িক দিক থেকে যথেষ্ট যৌক্তিক, দেশের বেশিরভাগ আলুশিল্পের কোম্পানিগুলিই কখনো এইভাবে তাদের কাঁচামাল সংগ্রহের কথা ভাবে নি।

এই আইডিয়াগুলি নতুন, কারণ এভাবে কেউ আগে ভাবে নি, কিংবা ভাবলেও কেউ কোম্পানি পর্যন্ত যায় নি। ফলে, সদ্যজাত কোম্পানির বৈশিষ্ট্যগুলি আপনি পূর্ণ করতে পেরেছেন। এই পর্যন্ত যা বললাম, সেটা হলো ধারণা স্তর, আপনি ধারণা করছেন যে একটি সফল উদ্যোক্তা হবার সুযোগ আপনি দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু ধারণাই সব নয়। এর জন্য চাই প্রচুর চিন্তাভাবনা, যাকে বলে “ব্রেইন স্টর্মিং”। “Spend time on business plan before you spend a dime of your money”.

আর দরকার প্রচুর তথ্য। আপনার পণ্যের পুরো যোগান শৃংখলের প্রতিটা ধাপ- কাঁচামাল সংগ্রহ, উৎপাদন, প্রযুক্তি, বাজার, বিপণন – সব সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তারিত তথ্য আপনাকে জোগাড় করতে হবে। আর ব্যবসায়িক খসড়া, পরিকল্পনা, প্রযুক্তিগত নকশা, ধারণাগত নকশা, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ, সম্ভাব্যতা যাচাই, সব করতে হবে দারুণ দক্ষতার সাথে। প্রয়োজনে যারা বিশেষজ্ঞ তাদের সাহায্য নিন, কিন্তু যতটুকু সম্ভব নিখুঁতভাবে করুন।

এই পর্যায়ে আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় কি কি জিনিস অন্তর্ভুক্ত থাকবে তার একটা লিস্টই না হয় করা যাক।

  • মিশনের বিবরণ
  • পণ্য/সেবার বিস্তারিত বর্ণনা
  • পণ্যের সম্ভাব্য বাজার
  • ব্যবসায়িক খসড়া/মডেল
  • মোট বিনিয়োগের সম্ভাব্য পরিমাণ
  • খাতওয়ারী প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ
  • সম্ভাব্য প্রতিযোগিতা
  • ব্যবস্থাপনা এবং অভিজ্ঞতা
  • অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত তথ্যাবলী

এবং অতি অবশ্যই, যদি ব্যবসা ধরা খায়, তাহলে নিরাপদে কীভাবে গুটিয়ে নেবেন (Exit Strategy) তার পরিকল্পনা।

এবার নিচের গ্রাফটা দেখুন।

importance of idea

গ্রাফটিতে সময়ের সাথে সাথে একটি শিল্প (বিশেষ করে সদ্যজাত শিল্প) যে ৬টি ধাপ পেরিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করে তা দেখানো হয়েছে। ধাপগুলি হচ্ছে, (১) গবেষণা ও বিকাশ (Research & Development), (২) ধারণাগত নকশা (Conceptual design), (৩) বিস্তারিত নকশা, (৪) কারখানার প্রকৌশলগত নির্মান (Engineering construction), (৫)কোম্পানির রক্ষণাবেক্ষণ, এবং (৬) ব্যবসার সম্প্রসারণ। গবেষণা ও বিকাশ এবং ধারণাগত নকশা প্রণয়ন – এই দুই ধাপেই আপনি আসলে আপনার ব্যতিক্রমী/অভূতপূর্ব ধারণাগুলিকে জন্ম দিয়েছেন, যা আপনার প্রকল্পের মূল চালিকাশক্তি। তারপর ৩ এবং ৪ নম্বর ধাপে আসলে আপনার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এই পর্যায়ে আপনি প্রযুক্তি কিনেছেন, কারখানা তৈরি করেছেন, জিনিসপত্র, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি কিনেছেন, মোটকথা আলু থেকে খাবার তৈরির প্লান্টটা দাড়িয়ে গেছে, লোকজন ভাড়া করে সেটা চালুও করে দিয়েছেন। অর্থাৎ, উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে। এদিকে কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে পণ্যের উৎপাদন, বিপণন সব চলছে পরিকল্পনা অনুযায়ী। এই দুটি ধাপের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে পরিশ্রম, প্রযুক্তি, লোকবল ও বিনিয়োগ। সবশেষে আসে সম্প্রসারণের বিষয়টি। কোম্পানি সাধারণত মুনাফার মুখ দেখে ৫ ও ৬ নম্বর ধাপে এসে।

গ্রাফটিতে আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার দেখানো হয়েছে। প্রথমত, ব্যবসার বিভিন্ন ধাপে নেয়া সিদ্ধান্তগুলির গুরুত্ব এবং কোম্পানির ভবিষ্যতের উপর তাদের প্রভাব কতটুকু তা দেখানো হয়েছে নীল কালিতে আঁকা রেখার মাধ্যমে। আর লাল রেখাটি দিয়ে দেখানো হয়েছে প্রকল্পের একদম শুরু থেকে মোট বিনিয়োগ (cumulative investment flow)। দেখা যাচ্ছে যে শুরুর দিকের ধাপগুলিতে নেয়া সিদ্ধান্তের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। যতই সময় যাচ্ছে, সিদ্ধান্তের গুরুত্ব ও প্রভাব কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে, শুরুতে খুব বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় না বললেই চলে। বুদ্ধি কিনতে খুব বেশি পয়সা লাগে না। আর সেটা যদি নিজের হয়, তাহলে তো কোনো খরচই নেই। গবেষণা ও ধারণাগত নকশা প্রণয়নের খরচ সবচেয়ে কম, কিন্তু এই সময়ে নেয়া সিদ্ধান্তগুলির প্রভাবই সবচেয়ে বেশি, এগুলোই আপনার কোম্পানির ভবিষ্যত নির্ধারন করবে। সুতরাং, সদ্যজাত কোম্পানির জন্য শুরুতে বিনিয়োগের চাইতেও হোম ওয়ার্ক অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেবল সদ্যজাত কোম্পানিই নয়, যে কোনো ব্যবসার জন্যই প্রারম্ভিক কাজগুলিই আসলে ভবিষ্যতের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতাকে নির্ধারণ করে দেয়। যত পারুন বন্ধুত্বের সীমানা বাড়ান। আপনার বিজ্ঞানী বন্ধুরাই হয়তো দিতে পারে দারুণ সব ব্যবসায়িক পণ্যের সন্ধান, তাদের নিজেদের আবিস্কার হয়তো খুশি মনেই আপনার বিশ্বস্ত হাতে তুলে দিতে চায় এই বিশ্বাসে যে আপনিই পারবেন নৈতিকতার সাথে সেই আবিস্কারকে জনমানসের সামনে আনতে। প্রকৌশলী বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিন, একদিন হয়তো তারাই আপনার পুরো কারখানার নকশা তৈরি করতে সাহায্য করবে। ব্যাংকার বন্ধুদেরকে মনে রাখুন।

শেষ করতে চাই আরেকটি গ্রাফ দিয়ে।

financial cycle

এই গ্রাফটিকে বলা যায় সদ্যজাত কোম্পানির অর্থনৈতিক চক্র। লাল রেখাটি দিয়ে সময়ের সাথে সাথে একটি সদ্যজাত কোম্পানির উপার্জন দেখানো হয়েছে। সাধারণত, শুরুতেই উপার্জনের আশা করাটা বৃথা। এই পর্যায়ে বরং খরচ করতে হবে। মেনে নিন। উপরে যে ৬টি ধাপের কথা বলেছি, তাদের প্রথম ৪টি ধাপে উপার্জনের চেয়ে খরচ বেশি হবে সেটাই স্বাভাবিক। একে বলা যায় ঋণাত্মক উপার্জন। ঝরে যাওয়া বেশিরভাগ সদ্যজাত কোম্পানির ইতি ঘটে এই পর্যায়েই। হয়তো সেজন্যই একে বলা হয় “মৃত্যু উপতক্যা”। সঠিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনা এবং চমকপ্রদ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কোম্পানির বিলীন হয়ে যাওয়া ঠেকানো সম্ভব। কোম্পানির কর্ণধার হিসেবে আপনি কতটুকু যোগ্য তার পরীক্ষাও হয়ে যাবে এই কঠিন সময়ে।

ধৈর্য্য এবং প্রস্তুতি – এই দুই হচ্ছে বিপর্যয় ঠেকানোর মূল অস্ত্র। আপনার স্বপ্নের কোম্পানিটি মৃত্যু উপতক্যা পেরিয়ে পরিপূর্ণ স্তরে পৌছাক, সেই কামনা করি।

কৃতজ্ঞতাঃ
(১) Dr. John A. Sofrankoর সাথে আলাপচারিতা।
(২) বাংলা প্রতিশব্দের জীবন্ত ভাণ্ডার সহসচল হিমু


মন্তব্য

মেঘদূত দ্যা ব্লগার এর ছবি

সুন্দর লিখেছেন। অনেকের উপকারে আসবে। আমি একটি বিজ্ঞাপন ফার্ম করতে চাই। এই সম্পর্কিত কোন লিখার সন্ধান দিলে খুশি হব। ধন্যবাদ।

ফারুক হাসান এর ছবি

মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো, উদ্যোক্তা হিসেবে নিশ্চই সফল হবেন।

নিচে স্পর্শ যেমন বলেছে, আপনি ইংরেজিতে লেখা অনেক বই হয়তো পাবেন আপনার কাজের বিষয়ের উপর। এরপর আপনার অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের জন্য কোনো এক সময় বাংলায় লিখবেন আশা করি হাসি

স্পর্শ এর ছবি

স্টার্ট-আপ বা সদ্যজাত কোম্পানি নিয়ে দারুণ একটা লেখার জন্য ধন্যবাদ হাসি

এ নিয়ে আরেকটু সাধারণীকৃত একটা কথা বলি। নতুন উদ্যোগ-উদ্যোক্তা, ইত্যাদি নিয়ে বাংলাতে অত না হলেও প্রচুর বিদেশি বই পাওয়া যায়। এবং যতটুকু পড়েছি, তাতে বুঝি গাইডলাইন হিসাবে সেগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ আর কাজেরও। তবে আমার (এবং সম্ভবত আমার মত আরো অনেকেরই) এক ধরনের দ্বিধা কাজ করে মনে। যেমন আমার মনে হয়, আমি যদি একটা ব্যবসা শুরু করি তাহলে বেশ কিছু 'নন স্টান্ডার্ড' সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। সেগুলো মোকাবেলা করবো কীভাবে? (যেমন প্রতিযোগী কোম্পানীর 'ধুর্ত ষড়যন্ত্র'/ চাঁদাবাজি/ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা/রাজনৈতিক প্রভাব... ইত্যাদি, ইত্যাদি) এসবের ভয়েই হয়তো দেশে নতুন উদ্যোগ কম। কারণ দেশের মানুষের মাথায় 'আইডিয়া' কম তেমন ভাবার কারণ নেই। আমেরিকা বা সিঙ্গাপুরের মত যায়গায় উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে কিন্তু এ ধরনের 'নন স্টান্ডার্ড' সমস্যা কম মোকাবেলা করতে হবে। এসব ব্যপারে আলোকপাত করে লেখা আসা দরকার...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ফারুক হাসান এর ছবি

দারুণ মন্তব্য। নন স্ট্যান্ডার্ড সমস্যাগুলির ব্যাপারে আমি নিজেও হতাশ। এই সব ব্যাপারে আলোকপাত হওয়া দরকার।

তবে আমি বলবো, এইসব সমস্যা এড়ানোর জন্যই সদ্যজাত কোম্পানির দিকে আমাদের বেশি করে নজড় দেয়া উচিত। যেমন প্রতিযোগী কোম্পানির ব্যাপারটা। সদ্যজাত কোম্পানির বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে যে বাজারে এদের তেমন কোনো প্রতিযোগিতা থাকবে না। এইখানেই 'আইডিয়া'র মূল্য। এমন এক আইডিয়া/প্রযুক্তি/মডেল আনতে হবে যা বাজারে কোম্পানিকে আলাদা আসনে বসাবে। সাধারণ কোম্পানি বা সহযোগি কোম্পানির চেয়ে সদ্যজাত কোম্পানিই আমাকে আকর্ষণ করে বেশি মূলত তাদের ঐ নন-স্ট্যান্ডার্ড সমস্যা কম থাকার কারণে।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়ানোর সবচেয়ে সহজ বুদ্ধি হচ্ছে আমলাদের কাজে লাগে এমন সদ্যজাত কোম্পানি খোলা। হাসি

আমাদের হতশ হলেও চলবে না। নন স্ট্যান্ডার্ড সমস্যা কিন্তু সব জায়গাতেই থাকে। কিন্তু এদের ধরণটা আলাদা। বাংলাদেশে যেমন সেগুলি প্রকট, তেমনিভাবে জাপান, সিঙ্গাপুর কিংবা আমেরিকাতে যে ননস্ট্যান্ডার্ড সমস্যা নেই তা তো না। প্রতিযোগী কোম্পানির সংখ্যা ও শক্তি ঐসব দেশে আরো অনেক বেশি হবার কথা। আমরা বাংলাদেশে যেমন প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করতে পারি, সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীরা কিন্ত সেটা তত সহজে পারে না। তাদেরকে সম্পদ/কাঁচামালের জন্য যেমন সিঙ্গাপুরের প্রতিযোগী কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়, তেমনিভাবে করতে হয় পাশের দেশগুলির সাথেও।

দিগন্ত এর ছবি

উন্নত-বিশ্বে সমস্যা হল মনোপলির। আপনি নতুন ব্যবসা করছেন মানেই কারও ব্যবসা আপনি ছিনিয়ে নেবেন। অথবা কিছুটা বড় হলেই অন্যেরা আপনার কোম্পানী কিনে নিতে চাইবে। কিনে নেওয়ার মধ্যে লাভ থাকতে পারে কিন্তু অনেকসময়েই থ্রেট দিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়।
উদাহরণ - ড্রপবক্সকে অ্যাপল কিনে নেবে বলার পরে ড্রপবক্স রাজী হয় না, প্রতিক্রিয়া হিসাবে স্টিভ জবসের বক্তব্য ছিল উনি ড্রপবক্সের কমপিটিটরদের সাহায্য করে ড্রপবক্সকে তুলে দেবেন।
ইয়েল্প গুগলের কাছে বিক্রি হতে রাজী না হওয়ায় গুগলের বক্তব্য ছিল ইয়ল্পকে তারা গুগল সার্চ রেজাল্ট থেকে মুছে দিতে পারে।
নেটস্কেপ ওয়েবকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য ওয়েব ব্রাউজার বাজারে আনলে মাইক্রোসফট প্রথমে তাদের কিনতে চায়, পরে ব্যর্থ হয়ে বিনামূল্যে ওয়েব-ব্রাউসার বিতরণ করতে থাকে (নেটস্কেপ অল্প কিছু পয়সা নিত) - যাতে কিছুদিনের মধ্যে নেটস্কেপ প্রায় উঠে যায়।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

শ্যামল এর ছবি

নতুন চিন্তার খোরাক দিলি।
চিন্তা কইরা দেখলাম সদ্যজাত কোম্পানীর সফল উদ্যোক্তা হওয়ার আপাতত আত্মবিশ্বাস আমার নাই। মন খারাপ

ফারুক হাসান এর ছবি

উদ্যোক্তা হইতে না পারলে কারো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারিস ইচ্ছে করলেই। তবে বিনিয়োগ বিফলে যাবার ঝুঁকি এড়াতে যে পরিমাণ জানাশোনা, অভিজ্ঞতা, আর পরিশ্রম করতে হবে সেইটা করলে একসময় দেখবি নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে গেছিস। হাসি

শ্যামল এর ছবি

কামলা খাইটা অভ্যাস হইয়া গেছে। আউট অফ দ্য বক্স চিন্তা করতেই ভুলে গেছি।
তোর আইডিয়াটা আসলেই ভাল লাগছে। চিন্তা কইরা দেখতে হইব।
আরেকটা কথা উদ্যোক্তা ঋণ সুবিধা নিয়ে একটু আলোকপাত করলে মনে ভাল হইত।

অফটপিকঃ সাকিব বেইবি ফাটাইতেছে, সাথে নয়ুন উদ্যোক্তা নাফিস।:)

ফারুক হাসান এর ছবি

আমিও আগ্রহী, কেউ যদি উদ্যোক্তা ঋণ সুবিধা নিয়ে লেখেন।

অটঃ খেলা দেক্তেছি... সাকিব, বরাবরেই মতই। আর, বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ঋণ সুবিধা তো সাইফ মামা আর মিথুন মামা ভালো বলতে পারবে হাসি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তাপস শর্মা এর ছবি

দারুন একটা লেখা। তবে সবার দ্বারা ব্যবসা বানিজ্য হয়না। যেমন আমার দ্বারা হবেনা।

ফারুক হাসান এর ছবি

জাস্ট আগ্রহ থেকে জানতে চাচ্ছি, আপনার এই ধারণা কি এজন্য যে আপনি অর্থ ব্যবস্থাপনায় নিজেকে অদক্ষ মনে করেন? নাকি, নিতান্তই ঝামেলা পোহানো মনে হয়?

প্রশ্নটা এজন্যই করলাম যে, সবাই যে সব ব্যাপারে সমান দক্ষ হবে সেটা নয়। কেউ কেউ হয়তো দারুণ সব আইডিয়া দিতে পারেন কিন্তু ব্যবস্থাপনায় ভালো নয়, আবার কেউ হয়তো দারুণ নেতৃত্ব দিতে পারেন, কিন্তু প্রযুক্তিগত ব্যাপার ভয় পান, আবার কেউ দারুণ প্রকৌশলী কিন্তু অর্থনীতি ভালো বোঝেন না। অথচ, এই মানুষগুলি যদি একসাথে হয়ে একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাজ করেন, দারুণ কিছু সদ্যজাত কোম্পানি কিন্তু আমরা পেতে পারি।

আর ঝামেলা তো ভাই আমরা সবসময়ই পোহাই, চাইলে বা না চাইলেও।

তাপস শর্মা এর ছবি

অর্থ ব্যবস্থাপনায় খানিকটা অদক্ষ বলতে পারি কিন্তু নিতান্তই ঝামেলা পোহানো - এমন কিন্তু একেবারেই মনে হয় না। আসলে বিজনেস করতে গেলে এক ধরণের মানসিক প্রস্তুতি লাগে যা আমার নেই।

কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমি ব্যাবসা অপছন্দ করি। মোটেও না । কিন্তু আমি মুদির দোকানের ব্যাবসা করতে পারবো না ঠিকই তবে আমার ভালো লাগার কিছু কাজ অবশ্যই করতে চাইব। কিছু আইডিয়া দিতে পারব, আমার জানা কিছু বিষয়ে ট্যাকনিকেল হেল্পও করতে পারব । কিন্তু একা কোন বিজনেস করার মতো মানসিক দক্ষতা আমার নেই। যেটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। আর অনেক সময় ইচ্ছে থাকলেও হয়ে উঠেনা।

আমি শিপলু এর ছবি

উত্তম জাঝা!

স্বাধীন এর ছবি

দারুন লেখা। কত কিছুই তো করতে ইচ্ছে করে, সব ঐ ইচ্ছে পর্যন্তই।

ফারুক হাসান এর ছবি

নিজে উদ্যোক্তা না হলেও আমরা কিন্তু তাদেরকে আমাদের টেকনিক্যাল স্কিল দিয়ে সাহায্য করতে পারি। একবার ভেবে দেখুন, এই সচলেই কত পিএইচডিধারী/হবু পিএইচডিধারী আছেন? সবাই একটু করে অবদান রাখলেই অনেক কিছু করা সম্ভব।

অন্যকেউ এর ছবি

চলুক

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

নিটোল এর ছবি

দারুণ। চলুক

_________________
[খোমাখাতা]

দুর্দান্ত এর ছবি

চলুক

বিলাস এর ছবি

সাহস জাগানো লেখা । চলুক

নির্ঝরা শ্রাবণ এর ছবি

ফারুক হাসান ভাই,
উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তাটা সবসময় ই মাথায় ঘুরপাক খায়.........এখন যদিও বসে বসে অন্যের টাকা গুনি মন খারাপ
মজার ব্যাপার হল আলু নিয়ে আমার ও ঠিক একই ধরণের ব্যবসার চিন্তা ভাবনা আছে। আমি যতটুকু জানি উন্নত বিশ্বে Mashed potato & hashed potato এর বেশ চাহিদা আছে।

কিন্তু সমস্যা দুইটা। এক, মধ্যবিত্তের চিরচরিত কেরানিগিরির গন্ডি থেকে বের হতে না পারা (পরিবারে বড় সন্তান বলে); দুই, আর্থিক।

তারপর ইচ্ছা আছে বিষয়টা নিয়ে কাজ করার। কিভাবে এগুতে পারি এবং খরচাদির বিষয়ে কেউ কি একটু আওয়াজ দিবেন......

ফারুক হাসান এর ছবি

প্রচুর সময় দিয়ে গুছিয়ে পরিকল্পনা করুন, বিজনেস প্ল্যান করুন। নিয়মিত পোর্টফোলিও আপডেট করুন। যথেষ্ট কনভিন্সিং যখন হবে তখনই কেবল প্ল্যান বাস্তবায়নে নামুন। মনে রাখবেন, প্রাথমিক ধাপ (গবেষণা ও বিকাশ, ধারণাগত নকশা) সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রযুক্তি, খরচাপাতি ও উপার্জন - এইসব বিষয়ে প্রয়োজনে অভিজ্ঞদের মতামত ও বিশেষজ্ঞদের সাপোর্ট নিন।

পথিক পরাণ এর ছবি

খুব চমৎকার উৎসাহব্যাঞ্জক লেখা। ব্যবসায়ের চিন্তায় নতুনত্ব আনয়নের বিকল্প নেই।

দিন কয়েক আগে একটা লেখা পড়েছিলাম। চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী জাপানে গাছের পাতা রপ্তানি করছেন। গাজীপুরের শালগাছের পাতার খুব নাকি চাহিদা ঐদেশে।

নতুন ব্যবসায় পরিকল্পনা খুব বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। শুধু একটা ধারণা যোগ করা যেতে পারে। ব্যবস্থাপনায় SWOT Analysis বলে একটা কথা আছে। এর অর্থ Strength, weakness, Opportunity, threat (সামর্থ্য, দুর্বলতা, সুযোগসমূহ ও ঝুঁকি)। কোন ব্যবসায় পরিকল্পনার শুরুতেই পরিকল্পনার এই চারটি মাত্রা বিশ্লেষণ করে নিলে অনেক সুবিধে পাওয়া যেতে পারে। এগুলো অবশ্য আপনার লেখায় প্রায় সবই চলে এসেছে।

আপনার প্রস্তাবিত 'আলু' বিষয়ক ব্যবসায় পরিকল্পনায় আরেকটি বিষয় মনে হয় যোগ করতে হবে। আলু একটি মৌসুমি ফসল। একটা শিল্প স্থাপন করলে সেখানে সারা বছর কাঁচামাল জোগান না দিতে পারলে শ্রমিক আর যন্ত্রর সর্বোত্তম ব্যবহার (maximum utilization)সম্ভব হবে না। কাজেই একটা হিমাগারের কথাও মাথায় রাখতে হবে যাতে সারা বছর কাঁচামালের জোগান দেবার সুযোগ তৈরি করা যায়।

কোন রকম পরিকল্পনা ছাড়াই অনেকে খুব বড় সফল ব্যবসায়ী হতে পেরেছেন, একথা ঠিক। তবে আরও অধিক সংখ্যক সম্ভাবনাময় ব্যবসায়ী ঝরেও পড়েছেন। আমরা তাদের কথা জানি না। কারণ বই পুস্তক পত্রিকা সফলদের গুণে মুগ্ধ। কেবল তাদেরই জয়গান গায়। কাজেই নতুন ব্যবসায় নামার আগে ভেবে টেবে আটঘাট বেঁধে নামাই উত্তম।

----------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...

ফারুক হাসান এর ছবি

দারুণ কিছু ব্যাপার যোগ করেছেন আপনি মন্তব্য করে। ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্যের মধ্যেও যে ব্যাপারটা ফুঁটে উঠলো তা হচ্ছে, কেবল আইডিয়াই নয়, সেটারপরিশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধনও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

শিক্ষামূলক পোস্ট হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তানভীর এর ছবি

চলুক

কোথায় কোথায় ঋণ, প্রযুক্তি সুবিধা ইত্যাদি পাওয়া যাবে এগুলো নিয়ে আলোকপাত করলেও ভালো হতো। আমার এক বন্ধু দেশে একটা ছোটখাটো কোম্পানি করছে। এবার দেশে গিয়ে তার সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার অভিজ্ঞতা হলো। তার কাছেই শুনলাম বাংলাদেশ সরকার নাকি প্রপোজাল বিবেচনা করে এ ধরনের কোম্পানিগুলোর মূলধনের শতকরা ৫০ ভাগ যোগান দেয় (ওই ৫০ ভাগ সম্ভবত লাভের হিসাব বিবেচনা করে কত বছর পরে ফেরত দিতে হয়, লস হলে দিতে হয় না এইরকম কিছু)। প্রপোজালের কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা লাগে জিজ্ঞেস করে বুঝলাম এটা মূলত ব্যক্তিগত কানেকশনের ওপর নির্ভর করে (প্লাস ঘুষ-টুষ হাসি )। তাই বাইরের লোকজন এসব লোনের ব্যাপারে বেশি কিছু জানে না। কিন্তু সরকারেরই তো উচিত এসব তথ্য সবাইকে জানানো। আমার বন্ধুটির প্ল্যান্টের ডিজাইনও করে দিচ্ছে দেশি এক কোম্পানি যাদের মতিঝিলে অফিস। এরা চায়না বা ফরেন মেড জিনিসের পাশাপাশি নিজেরাও কাস্টম মেইড যন্ত্রপাতি বানায়। তাই খরচ কম পড়ে। আমার মনে হয় বেশিরভাগ লোকের কাছে এসব তথ্য থাকে না বলে তারা উদ্যোগী হয় না।

ফারুক হাসান এর ছবি

সত্যিই নাকি? সরকারের এরকম বিনিয়োগবান্ধব হওয়া তো খুবই আশার কথা!

তানভীর এর ছবি

হ্যাঁ। আমার বন্ধু যে প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছে তার নাম ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ । এদের ওয়েবসাইটে দেখলাম নাগরিকদের লিজ সহায়তা ও বিনিয়োগে বিভিন্ন সহায়তার কথা বলা আছে। এগুলো বেশি বেশি প্রচার হওয়া উচিত।

http://www.icb.gov.bd/cc_leasing.php
http://www.icb.gov.bd/cc_investors.php

ফারুক হাসান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ তানভীর ভাই! সম্ভাব্য শিল্পোদ্যোক্তাদের দারুণ কাজে লাগবে।

সবাই যদিও ICBর লিংকে গিয়ে তথ্যাবলী দেখতে পারবেন, তবু প্রাসঙ্গিক বলে উল্লেখ করছি। ICB প্রতিটি বিনিয়োগ হিসাবের বিপরীতে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ প্রদান করে এবং একজন বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ পাঁচটি বিনিয়োগ হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। অর্থাৎ, একজন বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ ২৫ লক্ষ টাকার ঋণ সুবিধা পেতে পারেন। বাংলাদেশের সদ্যজাত কোম্পানির পরিপ্রেক্ষিতে এই পরিমাণটা যথেষ্টই বলবো। অসাধারণ!

ঋণ সুবিধার পর যে বিষয়টা বাদ থাকে সেটা হচ্ছে প্রযুক্তি সুবিধা। এই বিষয়টা স্বাভাবিকভাবেই কোম্পানির ধরণের উপর নির্ভর করবে। আমাদের একটা প্রবণতা থাকে বিদেশ থেকে রেডিমেড প্রযুক্তি ধার করে আনার দিকে। কিন্তু সেটা করার আগে আমি উদ্যোক্তাদেরকে বলবো, প্রথমেই দেশীয় প্রযুক্তির উপর আস্থা না হারিয়ে তাকে উন্নয়ন করে কাজে লাগানো যায় কিনা সেটা যাচাই করুন। এটা আখেরে কস্ট ইফেক্টিভ হবে। দেশের প্রযুক্তিবিদদের সাথে যোগাযোগ করুন।

আমি নিশ্চিত অন্ততপক্ষে সচলেরই কয়েকশো পাঠক আছেন যারা প্রযুক্তির উপর সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী/অচিড়েই নিতে যাচ্ছেন। প্রয়োজনে এখানেই আপনার পরিকল্পনার বিষয়টা তাদের নজড়ে আনুন। অনেকেই আছেন যারা সাধ্যমত সাহায্য করতে চাইবেন।

তারিক এর ছবি

আপনি সম্ভবত এন্টারপ্রাইজ এন্ড ইকুইটি ফান্ড(ইইএফ) এর কথা বলছেন।
এই ফান্ডের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক ২৫ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা বিনিইয়োগ করে যা সম্পুর্ণ প্রোযেক্টের ৪৯শতাংশের বেশি হবে না। এতে কোন সুদ নেই। ৫/৮ বছর পর সম্পূর্ণ প্রোযেক্টের দাম হিসেব করে আপনাকে সেই ৪৯ সতাংশ কিনে নেয়ার অফার দেবে অথবা আপনি না নিলে খোলা মার্কেটে সরকার বেচে দিবে।

যতদুর জানি কাগজ পত্র ঠিক থাকলে অল্প কিছু ঘুষ দিয়েই এইটা মানুষজন পায় খাইছে

সচল জাহিদ এর ছবি

তোমার আগের লেখাটিও (ঝুঁকি নেয়া শিখতে হবে) পড়েছিলাম। এটাও পড়লাম। চমৎকার পোষ্ট।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ফারুক হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ, জাহিদ ভাই!

দ্রোহী এর ছবি

আমার আইডিয়া বিষয়ক সমস্যা নাই কিন্তু আমি মাত্রাতিরিক্ত অলস এবং ভয়াবহমাত্রায় দীর্ঘসূত্রিতায় আক্রান্ত ব্যক্তি! আমার ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত উপদেশগুলো কাজ করবে না। মন খারাপ

কী করলে অলসতা ও দীর্ঘসূত্রিতা বজায়ে রেখে সফল হওয়া যাবে সেইটা বাতলে দেন।

ফারুক হাসান এর ছবি

বেয়াই, সেই বিষয়ে আইডিয়া থাকলে তো আমি নিজেই কবে কোম্পানি খুলে বসতাম!

মুনির হাসান এর ছবি

চমৎকার লেখ্র জন্য ধন্যবাদ।
অনেকেই এখন উদ্যোক্তা হতে চান, তাদের এটি কাজে লাগবে। আমরা যারা নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে চাই, তাদেরও অনেক কাজে লাগবে।
এই ধরণের আলোচনা যত বেশি হবে ততোই ভাল। প্রযুক্তি পণ্যের পাশাপাশি গ্রামীণ উদ্যোক্তা তৈরি বিষয়ে কোন আলোকপাত করতে পারলে ভাল হয়। আমরা ঐ জায়গাটাতে তেমন কিছু করছি না।
যদিও আমার ধারণা কোন একটা ব্রেকথ্রু করতে পারলে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের একটা উপায় হতো।

আশাকরি আরো লেখা লিখবেন।

মুনির হাসান

হিমু এর ছবি

গ্রামের ৮৭ লক্ষ লোক গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে করে কি তাহলে?

ফারুক হাসান এর ছবি

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। গ্রামীণ উদ্যোগের একটা মাত্রা হতে পারে কৃষিজ শিল্পোদ্যোগ। এই ব্যাপারটা উপেক্ষিত। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে আমাদের প্রচুর ভাবার অবকাশ আছে এতে।

রু (অতিথি) এর ছবি

ভাল লাগলো। তবে আপাতত একটা চাকরি চাই।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গত পনের বছর ধরে যেহেতু কেবল বাংলাদেশেই কাজ করেছি তাই আমি আমার মতো করে বাংলাদেশে নতুন উদ্যোগের পদ্ধতি-সমস্যা-ঝুঁকি ইত্যাদি নিয়ে দুয়েকটা কথা বলবো।

১. ব্যবসা করতে চাই মানে আমি আগামীকাল থেকে কিছু বানিয়ে (পণ্য/সেবা) বা কিনে এনে (স্থানীয়/আমদানী) বিক্রি করা শুরু করে দিলাম - ব্যাপারটা এমন নয়। এর জন্য গোড়াতে কিছু রেগুলেটরি কাজ-কর্ম করে নিতে হয়। ট্রেড লাইসেন্স, জয়েন্ট স্টকের অনুমতি, টিআইএন, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন; দরকার মতো আইআরসি, ইআরসি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পদ এগুলো করা সারতে হয়। এছাড়া বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্রটা কেমন হবে, শ্রম অফিসে কী কী তথ্য দিতে হবে এমন ডজন দুয়েক কাজ আছে। আমি দেখেছি আমার পরিচিত অনেকে এসবের অনেক কিছু ছাড়াই ব্যবসা শুরু করে পরবর্তীতে সরকারী নানা সংস্থার দৌড়ানির মধ্যে পড়েছে। কেউ কেউ শুরুতে এইসব কাজ করতে গিয়ে নানা প্রকার হয়রানীতে হাঁপিয়ে গেছে। এইখানে আমার কথা হচ্ছে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় কিঞ্চিত কৌশলী হন। কাগজ-পত্র ঠিক রাখুন। কাগজ-পত্র ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আর্থিক লেন-দেন শুরু করবেন না।

২. আপনি কোন ব্যবসা করলেন সেটার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনি কোন ব্যবসা করবেন না। অমুকে তমুক ব্যবসা করে লাল হয়ে গেছে জাতীয় কথা কানে তুলবেন না। যে ব্যবসা করতে চান আগে সেই পণ্য/সেবা সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানুন। সেটা নিয়ে মাস দুয়েক সিরিয়াস পড়া-শোনা করুন, যারা ইতিমধ্যেই এই ব্যবসাটাতে আছেন তাদের সাথে কথা বলুন, তাদের প্ল্যান্ট-সেল্‌স সেন্টার-অফিস-ওয়্যারহাউজ এগুলো দেখুন। পন্য/সেবাটি নিজে ব্যবহার করে দেখুন। এটি ডিসেক্ট করুন, এর গঠন বুঝুন, এর টেকনোলজী বুঝুন। বোঝার চেষ্টা করুন এখানে আগামী দুই বছরে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে। এর বিকল্প কী কী হতে পারে। এর পর ঠিক করুন আপনি কোন ব্যবসাটা শুরু করবেন। এখানেই শেষ না, একটা ভালো মার্কেট রিসার্চ কোম্পানীকে দিয়ে এবার একটা ভালোমত মার্কেট সার্ভে করান। সার্ভের ফলাফল নিয়ে ভাবুন, র’ ডাটাগুলো নিজেই অ্যানালাইসিস করুন। এবার আপনি নিজেই জেনে যাবেন এই ব্যবসাটা আপনি করবেন কিনা। পণ্য/সেবাটার গোটা সাপ্লাই চেনের এ’মাথা থেকে ও’মাথা পর্যন্ত ভালোভাবে দেখে নিন। ক্রিটিক্যাল পাথগুলো, বটল্‌নেকগুলো চিনে নিন। সাপ্লাই চেনটি কোথায় কোথায়, কাদের কাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় সেটা জেনে রাখুন। এই চেনের কোথায় আপনি প্রতিপক্ষের সাথে কনফ্লিক্টে যাবেন আর কার সাথে নেগোশিয়েট করবেন সেটাও জেনে রাখুন।

৩. আপনার যদি নিজের পুঁজি না থাকে তাহলে আপনি ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে বিশ বাঁও জলের নিচে আছেন। “সরকারের অমুক সংস্থা বা তমুক ব্যাংক সমুক খাতে ব্যবসা করার জন্য ক্ষুদ্র/তরুণ/নতুন উদ্যোক্তাদের নমুক পরিমাণ ঋণ দেয়” - এটা একটা আরবান মীথ। আপনার যদি সরকারী দলের সাথে যোগাযোগ থাকে বা আপনার নিকটজনের মধ্যে কেউ খুব প্রভাবশালী থেকে থাকেন তাহলে ঋণ-বরাদ্দ-সাহায্য ইত্যাদি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশটা আপনার কাছে স্বর্গতুল্য মনে হবে। নতুবা আপনার কোল্যাটারাল দেবার মতো কিছু না থাকলে আপনার কপালে ব্যাংক ঋণও নেই। মালদার আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে পুঁজি ধার নেবার আগে খোঁজ করে দেখুন আপনি ব্রেক ইভেন পয়েন্টে পৌঁছানো পর্যন্ত তার ধৈর্য থাকবে কিনা। এবং আপনি কোন কারণে ব্যবসায়ে ব্যর্থ হলে তিনি বা তারা আপনাকে কতদিন সময় দেবেন সেটাও জেনে রাখুন। ব্যবসায়ে ব্যর্থ হলে আপনি কী করবেন সেটাও ঠিক করে রাখুন।

৪. ব্যবসা যদি একক উদ্যোগে না করে যৌথ উদ্যোগে করেন তাহলে আগে ভাবুন আপনি আপনার পার্টনারদেরকে আপনি কতটুকু চেনেন - একজন ব্যক্তি/মানুষ হিসেবে, একজন সহযোগী/বন্ধু হিসেবে, একজন উদ্যোক্তা/সম্ভাব্য উদ্যোক্তা হিসেবে, একজন প্রফেশনাল/এক্সপার্ট হিসেবে। ভেবে দেখুন তিনি কতোটা বিশ্বাসযোগ্য, নির্ভরযোগ্য, আস্থার যোগ্য, নৈতিক গুণসম্পন্ন, মানবিক গুণসম্পন্ন এবং সৎ। আবেগাক্রান্ত হবেন না, ক্রিটিক্যাল হন। সব কিছু খুঁটিয়ে দেখুন, ভালোভাবে বিচার করুন - পরে কপাল চাপড়াবেন না।

৫. ব্যবসাটা যেখানে করবেন, মানে যে জায়গায় এবং যে ইন্ডাস্ট্রিতে - সেখানকার গণ্য-মান্য ও প্রভাবশালীদের চিনে রাখুন; তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন। আপনার ব্যবসাতে সরকারী যেসব অফিসের ছোঁয়া থাকবে তাদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সংঘর্ষ এড়িয়ে চলুন, সুসম্পর্কের ওপর জোর দিন। তবে তার মানে এই না যে নিজেকে দুর্বল হিসেবে উপস্থাপন করবেন। তাহলে সবাই আপনাকে বানিয়ে খাবে। সবাইকে শুরুতেই বুঝিয়ে দিন আপনি ‘টাফ গাই’; আপনি এখানে টিকে থাকতে এসেছেন।

৬. শুরুতেই কোম্পানী আইন জানা, ইনকাম ট্যাক্স আইন জানা, শ্রম আইন জানা আইনজীবিদের শরণাপন্ন হন। ভবিষ্যতে অনেক হয়রানীর হাত থেকে বেঁচে যাবেন। ব্যবসার প্রতিটি ট্রানজেকশন, প্রতিটি ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করুন। শুরু থেকেই একটা সুবিধাজনক অ্যাকাউন্টিং সফ্‌টওয়্যার ব্যবহার করুন। প্রতিটি পাই-পয়সার হিসেব রাখবেন এবং আপনার ফাইনানশিয়াল স্টেটমেন্টগুলোতে তার প্রতিফলন থাকতে হবে। প্রয়োজনে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টদের শরণাপন্ন হন।

৭. যেই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করবেন সেখানে আপনি কোন অবস্থানে ব্যবসা করতে চান (উচ্চ মূল্য-উচ্চ মান, নিম্ন মূল্য-নিম্ন মান, মধ্যম মূল্য-মধ্যম মান, মধ্যম মূল্য-উচ্চ মান ইত্যাদি) সেটা ঠিক করুন। একবার আপনার এক ধরনের পরিচয় হয়ে গেলে পরে সেটা মুছে অন্য পরিচয় গড়ে তোলা দুরুহ।

৮. আপনার ব্রান্ডের ট্রেডমার্ক, কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন; আপনার পণ্যের পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন এগুলো শুরুতেই করে ফেলবেন। নয়তো আপনার ব্রান্ড প্রতিষ্ঠিত হবার পর আপনার নকল পণ্যে বাজার সয়লাব হয়ে যাবে - আপনি কিছুই করতে পারবেন না।

৯. যে কাজের জন্য লোক/প্রতিষ্ঠান ভাড়া করতে পারবেন বা বাজারে যে সার্ভিস কিনতে পাওয়া যায় তার জন্য স্থায়ী লোক নিয়োগ দেবেন না। অন্যকে দিয়ে যে গবেষণা করাবেন সেটার ফলাফল নিজে নীরিক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নেবেন।

১০. ব্যবসা ব্রেক ইভেনে যাবার আগে-আগেই পরবর্তী ব্যবসার পরিকল্পনা সেরে ফেলুন।

১১. গ্ল্যামারের মোহে অন্ধ হবেন না। গ্ল্যামার বেকুবদেরকে বিষ গেলানোর জন্য শুগারকোটিং। আপনি বুদ্ধিমান মানুষ - আপনি বাস্তববাদী হন।

১২. আপনি যেদিন থেকে ব্যবসায় নামলেন সেদিন থেকে আপনার জীবন যে কোন শিক্ষার্থী, যে কোন চাকুরীজীবী, যে কোন গবেষকের চেয়ে খারাপ হয়ে গেলো। আপনার দিনের দৈর্ঘ্য এখন ৩৬ ঘন্টাও কুলাবে না। আপনার পূর্বতন সামাজিক জীবন শিকেয় উঠলো। দুনিয়াতে ১০০% বা তারচেয়ে বেশি এফিশিয়েন্সি বলে কিছু হতে পারে না। ব্যবসাতে ১০০ টাকার জিনিসকে ১৫০ টাকায় বিক্রয় করলে আপাত দৃষ্টিতে ৫০ টাকা লাভ হয়। আসলে ঐ প্রক্রিয়াটা ততক্ষণে আপনার শ্রম-মেধা-সময় মিলিয়ে আরো ১০০ টাকা খসিয়ে নিয়েছে - আপনি টের পেলেন কি?

আপাতত এইটুকুই। পরে কিছু মনে পড়লে বলা যাবে’খন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফারুক হাসান এর ছবি

চলুক চলুক চলুক
অমূল্য।

বাংলাদেশে ব্যবসা করার কত যে ঝক্কি! একটা ব্যাপার জানতে চাচ্ছি, বাংলাদেশে মার্কেট রিসার্চ কোম্পানীগুলোর মান কেমন, মানে কতটা রিলায়েবল?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সবার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখে বলছি, বাংলাদেশে কাজ করছে এমন স্থানীয়/বহুজাতিক মার্কেট রিসার্চ কোম্পানীগুলোর বেশির ভাগের সেবার মান প্রশ্নসাপেক্ষ। একটা মার্কেট রিসার্চের বেশি খাটুনির অংশে বা ব্যয়বহুল অংশে অনেকেই ছলচাতুরী করেন। তিন মাস আগে রামের জন্য করা রিপোর্টকে একটু পালটে দিয়ে তিন মাস পর শ্যামকে গিলিয়ে দেয়া, কাস্টমারের মন যোগানো রিপোর্ট বানানো, ভুয়া ফিল্ড স্টাডি - এগুলো খুব সাধারণ ব্যাপার। এ'জন্য কোন মার্কেট রিসার্চ কোম্পানীকে কাজ করতে দিলে তার কিছু ক্রিটিক্যাল অংশ (ঐ কোম্পানীকে না জানিয়ে) নিজেরা বা নিজেদের টিম দিয়ে করে রাখুন। এতে ঐ কোম্পানীর কাছ থেকে যে রিপোর্ট পাবেন সেটার গুরুত্বপূর্ণ অংশে তথ্য যাচাইকরণের সুযোগ থাকবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১৩. লো প্রফাইল মেইনটেন করুন। অযথা নিজের ইন্ডাস্ট্রিতে, নিজের কমিউনিটিতে বা নিজের এলাকায় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবেন না। শুধু নানা রঙের, নানা পর্যায়ের চাঁদাবাজ-ডাকাতদের হাত থেকে বাঁচার জন্যই না অনেক প্রতিযোগীর হাত থেকে বাঁচার জন্যও এটা দরকার।

১৪. ব্যবসা শুরু করার সময় SWOT Analysis (Strength-Weakness-Opportunity-Threat) করা যেমন জরুরী ঠিক তেমন ঐ ব্যবসাটার Entry Barrier ও Exit Barrier হিসেব করে রাখাটাও জরুরী।

১৫. ট্রেড পলিটিক্স, লোকাল পলিটিক্স বা ন্যাশনাল পলিটিক্স এর কোনটাতে আপনি জড়িত থাকলে সেটার সাথে ব্যবসাকে জড়াবেন না। জড়ালে পলিটিক্সটা কতটুকু হবে আমি নিশ্চিত না, তবে ব্যবসাটা যে হবে না এটা নিশ্চিত। একই কথা আপনি যে সব কালচারাল ফোরামের সাথে জড়িত তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অফিসকে ক্লাব-আড্ডার জায়গা হতে দেবেন না। কাউকে এন্টারটেইন করতে হলে হোটেল-রেস্টুরেন্টে নিয়ে যান, অফিসে না।

১৬. পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, দেশের বাড়ির লোকজনকে নিজের ব্যবসা থেকে শতহস্ত দূরে রাখুন। এদের কাউকে নিজের অফিসে রিক্রুট করবেন না। এদেরকে আপনার পণ্য/সেবা কিনতে বা ব্যবহার করতে উৎসাহিত করবেন না। এই সব ঘটনায় পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি হয়, উভয়পক্ষের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয় - ব্যবসায়ের ক্ষতি হয়।

১৭. নিজের ব্যবসা থেকে লাভের অংশ তোলার আগে হিসেব করুন - (ক) এতে ব্যবসায়ের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হবে কিনা (খ) ভবিষ্যতে এই মাপে বা এরচেয়ে বেশি মাপে লাভ তুলতে পারবেন কিনা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দিগন্ত এর ছবি

বলেন কি, আপনি তো খাঁটি পুঁজিবাদী হাসি


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

স্পর্শ এর ছবি

অমূল্য সংযোজন পাণ্ডব দা! চলুক


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ফারুক হাসান এর ছবি

ট্রেড পলিটিক্স, লোকাল পলিটিক্স বা ন্যাশনাল পলিটিক্স এর কোনটাতে আপনি জড়িত থাকলে সেটার সাথে ব্যবসাকে জড়াবেন না।

পাণ্ডব দা, তাহলে ব্যবসাকে ভবিষৎ দখলদারিত্বের হাত থেকে বাঁচাবেন কীভাবে? মানে আমি বলতে চাইছি, একজন ব্যবসায়ীর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা জরুরী কিনা। প্রশ্নগুলো অপ্রীতিকর, কিন্তু বাস্তবতা এমন যে যে কেউ ব্যবসা শুরুর সময় এই নন-স্ট্যান্ডার্ড সমস্যা নিয়েই বেশি ভাবে। নতুন উদ্যোক্তাদের এই গলি-গুপচির খবরাখবর জানা জরুরী।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ব্যবসায়ে রাজনীতি করা আর রাজনীতি নিয়ে সচেতন থাকা এক কথা নয়। ব্যবসায়ে রাজনীতি নিয়ে সচেতন থাকা মানে - আপনি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, কয়েকজন জাতীয় পর্যায়ের নেতা, নিজের ইন্ডাস্ট্রির ট্রেড পলিটিক্সের উঁচু দরের নেতৃবৃন্দ এবং অল্প কিছু রাজনৈতিক দুর্বৃত্তের সাথে সুসম্পর্ক রাখবেন। আপনার নিজের গায়ের চামড়া আর ব্যবসা বাঁচানোর জন্য এটা দরকার। এদের কর্মকাণ্ডের সাথে নিজেকে জড়াবেন না, এদের সাথে ব্যাপক মাত্রায় সামাজিক মেলামেশারও দরকার নেই। শুধু তাদেরকে বুঝিয়ে দিন আপনি তাদের প্রতিপক্ষ নন, আপনি তাদের কিছু উপকার করে দিতে অনিচ্ছুক নন্‌, এবং আপনার দরকারে তাদের সাহায্য আপনি চাইতে পারেন যার উপযুক্ত মূল্য আপনি পরিশোধ করবেন। তবে খেয়াল রাখবেন এরা যেন কোনভাবে আপনার ঘাড়ে চড়ে বসতে না পারে। আপনার মূল ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বা ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের সাথে এদেরকে কখনোই সম্পৃক্ত করবেন না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

নমোনমঃ

রু (অতিথি) এর ছবি

আপনার মন্তব্যটা খুব ভালো লাগলো।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১৮. লোকসান ব্যবসার অংশ। ব্যবসা যখন হবে তখন কখনো কখনো কিছু লোকসানও হবে। লোকসানকে সহজভাবে মেনে নেবার মানসিকতা গড়ে তুলুন। ঘুরে দাঁড়ান, সাহস রাখুন, নতুন পরিকল্পনা করে এগিয়ে যান - সাফল্য আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

১৯. আপনি যে ব্যবসা করছেন সে ব্যবসা নিয়ে সরকারের নীতিমালা, আইন-কানুন বিস্তারিত জেনে রাখুন। সেগুলো নিয়ে নতুন কোন আলোচনা হচ্ছে কিনা সেটা লক্ষ রাখুন। সেখানে সম্ভাব্য কোন পরিবর্তন আসছে কিনা সেগুলো জানার চেষ্টা করুন। তাহলে রাতারাতি নীতিমালা উলটে গেলে আপনাকে হা-হুতাশ করতে হবে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পথিক পরাণ এর ছবি

পাণ্ডব দার বিশ্লেষণে পুরা ফিলিপ কটলার ধরা খাইসে। একেবারে দেশীয় লাগসই বিশ্লেষণ। অসাধারন হইসে দাদা। আমি আর কয়টা যোগ দিয়া দেহি কেমুন অয়।

ক. ব্যবসায় কিছু নিয়ামক চেষ্টা করলে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। যেমন অর্থের জোগান, প্রযুক্তি, উৎপাদনের মাত্রা ইত্যাদি। আরও কিছু নিয়ামক আছে যা আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে। যেমন কাঁচামালের জোগান (মৌসুমি কৃষি পন্য আপনার শিল্পের কাচামাল হলে একথা অধিক প্রযোজ্য), শ্রমিক (লেবার ইনটেন্সিভ বা শ্রমঘন শিল্পে অধিক ঝুঁকি), সর্বোপরি বাজারজাতকরণ বা বিতরণ ব্যবস্থা। দ্বিতীয় প্রকার নিয়ামকগুলোর দিকে শ্যন দৃষ্টি রেখে আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে। আপনি বিকল্প কাঁচামালের উৎসের কথা ভেবে রাখতে পারেন। শ্রমিক জোগান স্বাভাবিক রাখার জন্য সমগোত্রীয় কোন শিল্প আছে, এরকম কাছাকাছি জায়গায় আপনার উৎপাদন ইউনিট স্থাপন করা যেতে পারে। লক্ষ্য করে দেখুন আমাদের পোশাক শিল্পগুলোর অধিকাংশ ঢাকা, গাজীপুর আর চট্টগ্রাম ভিত্তিক। এর কয়েকটি কারণ হচ্ছে এসব এলাকায় প্রচুর শ্রমিক পাওয়া যায়। এসব জায়গায় পোশাক শিল্পের কাঁচামালের জোগান (ব্যবসায় এটি backward linkage নামে পরিচিত) সহজ। এরসাথে উৎপাদিত পন্য বিপননের জন্য চট্টগ্রামের সমুদ্রবন্দরও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। এছাড়া, আমি পরিচিতের কাছে শুনেছি, কারখানার একটা সুচ ভেঙ্গে গেলেও কখনো কখনো ঢাকা দৌড়োতে হয় গাজীপুর থেকে। কাজেই ঐদিনের উৎপাদন মাটি।

খ. আপনাকে উৎপাদিত পন্য বিপননের বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে হবে। আপনার প্রোডাক্ট এ বিষয়টি অনেকাংশে নির্ধারণ করে দেবে। আপনি যদি অনেক ক্রেতার কাছে পন্য পৌঁছাতে চান তবে শুরুতে হোঁচট খেতে হতে পারে। অজগাঁয়ে লিভার ব্রাদার্সের মিনি প্যাক লাক্স সাবান পাওয়া যায়। হাজার হাজার ডিলারের সহযোগিতায় এই বিশাল সাপ্লাই নেটওয়ার্ক তৈরি করতে ওদের অনেক যুগ ধরে চেষ্টা করতে হয়েছে। অধিক ক্রেতার সাথে (আপনার কাছে তারা ডিলার হিসেবে মর্যাদা পাবে) লেনদেনের ক্ষেত্রে অর্থসংক্রান্ত জটিলটায় পড়ার সম্ভাবনা অধিক। বেশ কিছু ক্রেতা আপনার পন্য নিয়ে (খোঁজ নিলে জানবেন দেশের ভেতর বাইরে অনেক ব্যবসা এল সিতে হয় অথবা পুরোই বিশ্বাসের উপর বাকীতে) অর্থমূল্য পরিশোধ নাও করতে পারে। লক্ষ্য করুন আমাদের প্রাইভেট ব্যাংকগুলো ব্যাংকিংএ অধিক সফল। কারণ তারা অনেক কম সংখ্যক ক্রেতা (আমানতকারি ও ঋন গ্রহণকারী) মোকাবেলা করে। কাজেই শুরুতে যত কম সংখ্যক ক্রেতার সাথে লেনদেন হয় ততই মঙ্গল।

গ. ব্যবসায়ে নিজেকেই উৎপাদনে নামতে হবে এমন কোন কথা নেই। পৃথিবীর কোথাও বিশ্বখ্যাত সিঙ্গার বা নাইকি কোম্পানির কোন কারখানা নেই। এরা অন্যর কারখানায় উৎপাদিত পন্যে নিজেদের লোগো ব্যবহার করে চুটিয়ে ব্যবসায় করছে। আমাদের দেশের কিছু মানুষ কোনদিন মাঠে না নেমেও সবজী রপ্তানি করছে, কেউ কেউ কুটির শিল্পের পন্য রপ্তানি করছে। এগুলোকে মার্কেটিংএর ভাষায় আউটসোরসিং বলা হয়। আপনি কেবল একটা আইডিয়া জেনারেট করে অথবা একটা পন্যর নকশা করেও একটা সফল ব্যবসায় শুরু করতে পারেন।

ঘ. ব্যাংক লোন নিতে গেলে আপনাকে প্রজেক্ট প্রপজাল (প্রকল্প প্রস্তাবনা) তৈরি করতে হবে। লোন না নিলেও আপনি একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে নিবেন। এতে আপনার প্রকল্পের আইডিয়া জেনারেসন (কি ও কেন এই প্রকল্প) থেকে শুরু করে এর ভবিষ্যৎ পর্যন্ত সবকিছুই সন্নিবেশিত থাকবে।

ঙ. আপনাকে একটি ফিজিবিলিটি প্লান করতে হবে। এতে প্রকল্পের আর্থিক বিষয়গুলো থাকবে- যেমন অর্থের উৎস (মামা/শ্বশুর, ব্যাংক, শেয়ার মার্কেটের লাভ, অন্য ব্যবসার পুঁজি), পন্যর বিবরন, পন্যর সম্ভাব্য চাহিদা, উৎপাদন ব্যবস্থা, উৎপাদন খরচ, বিপনন ব্যবস্থা, লাভ ক্ষতির অনুমিত হিসাব, ইত্যাদি।

চ. বালক বেলায় অর্থনীতির দুটো শব্দ খুব সহজ মনে হতো- চাহিদা আর জোগান। আজ বুঝি সবথেকে দুরূহতম দুটি শব্দ এগুলো। আপনার পন্য দেশেই বিক্রয়যোগ্য হলে চাহিদা যোগানের হিসেব তুলনামুলকভাবে সহজ হবে। দেশের বাইরে যেতে চাইলে একটু কঠিন, যদি পণ্যটি অপ্রচলিত হয়।

-------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...

ফারুক হাসান এর ছবি

চলুক
আপনি কিন্তু আরো বিস্তারিতভাবে লিখতে পারেন। একটা পোস্টই দিন না।

সদ্যজাত কোম্পানির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো ব্যবসার অনেক নিয়ামককে বরং সুবিধায় রূপান্তরিত করে।

স্বাধীন এর ছবি

আরো একটি চমৎকার লেখা চলুক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অত্যন্ত চমৎকার, শিক্ষামূলক লেখা। মন্তব্যেও অনেক কিছু জানলাম। আইডিয়া তো আছে, কথা হলো টাকা এবং হিম্মত নেই... মন খারাপ

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

পোস্ট আর ষষ্ঠপাণ্ডবদার মন্তব্য দুটোতেই উত্তম জাঝা!

তানিম এহসান এর ছবি

এটি রেফারেন্স ডকুমেন্ট হিসেবে সাথে করে নিয়ে নিলাম।

দুর্দান্ত এর ছবি

আমার তো মনে হয় 'স্টারট-আপ' কথাটির গতানুগতিক উদ্য়োগের থেকে একটু আলাদা একটা মানে আছে।

গতানুগতিক উদ্য়োগের জীবনচক্রে তার মালিকানা উদ্য়্ক্তার হাতছাড়আ হবার সম্ভাবনা নিয়ে কেউ চিন্তিত নয়। ব্য়াবস্থাপনা ও মালিকানা উভয়েই উদ্য়োক্তা নিজেই যতদিন সম্ভব থাকতে চায়। অন্য়দিকে যে উদ্য়োগ 'স্টারটআপ' নাম নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে, সে তার সাফল্য় ও প্রব্ররিদ্ধির সাথে সাথে মালিকানা ও ব্য়াবস্থাপনায় বড় পরিবররতনের ব্য়াপারে নিশ্চিত। বীজ-মূলধন খাটিয়ে শিশুকালীন জটিলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে দিল যে বিনইয়গকারি, সে যখন দেখবে যে উদ্য়োগ সফলভাবে চালু হয়েছে, সেদিনই সে খুজতে থাকবে যে অই উদ্য়োগটিকে তার চাইতে অন্য় কেউ বেশী মূল্য়ায়ন করে কিনা। যদি পায় তাহলে সে এই উদ্য়োগটিকে অন্য় কারো কাছে মুনাফায় বিক্রী করবে। এই বিক্রী অনেকভাবে হতে পারে, যার সবচাইতে এক্স্ট্রীম উদাহরন হল বাজারে শেয়ার ছেড়এ দেয়া।

নতুন মালিকানা ও ব্য়বস্থাপনার সহজ অধিগ্রহনের সুবিধাররথে হোক, অথবা তার পোরটফোলিওর অন্য় উদ্য়োগে প্রতিস্থাপন করতেই হোক, বীজ-বিনীয়োগকারি স্টারট-আপের উদ্য়োক্তাকে তার কন্সেপ্টটিকে 'কোডিফাই' করতে চাপ দেয়। কন্সেপ্ট বলতে আমি বোঝছ্চি পণ্য় (কি?) উদ্ভাবন ও উন্নয়নের পাশাপাশি উদ্য়োগটির নিজস্ব (কিভাবে?) রূপরেখা। এই কোডিফিকেশন প্রক্রিয়াতে মিশন-ভীশন জাতীয় ভারিক্কী কিছুর চাইতে "এই উদ্য়োগে কোন প্রক্রিয়ায় কতটুকু মূলধন থেকে কতটুকু মুনাফা আসে" এই কথাগুলোই বেশী কাজের।

***

উদ্য়োগের আকার নিয়ে হীনমন্য়তা সামনে এগুনোর একটা বড় অন্তরায়। ঠিক আছে উদ্য়োগকে একটা 'ক্রিটিকাল মাস' বা নিজের জোরে বেঁচে থাকার মতা আকারে শুরু করতেই হবে। কিন্তু সেই আকারটি উদ্য়োক্তার ক্ষমতা ও আয়ত্ব থেকে খুব দূরে হলে অসুবিধা।

***

স্টারট আপ মানেই হাইটেক/বিদেশী হতে হবেনা। আবার পন্য়ের নিজস্বগুনাবলীই শুধু নয় তার সাথে সরবরাহ, দাম, উপস্থাপনা - এগুলোর একটি বা অনেকগুলোর পরিবররতন করে একটি বাজারের সফল আইডিয়া আরেকটা বাজারের স্থানান্তর করতে পারাটাও সফল স্টারটআপের গুণ।

ফারুক হাসান এর ছবি

আপনার মন্তব্যের সাথে সহমত। সদ্যজাত কোম্পানি গতানুগতিক উদ্যোগের চেয়ে আলাদা। পোস্টে বৈশিষ্ট্যাকারে কিছু বলেছি। আর কিছু পয়েন্ট আপনি নিজেই বলেছেন।

কিন্তু আপনার বানানের এই দশা কেন? লিনাক্স?

Sohel H Rahman এর ছবি

চমৎকার।

Shahriar Islam  এর ছবি

আমাদের দেশে অনেক ট্যালেন্ট আছে

ফারুক হাসান এর ছবি

তা তো অবশ্যই। প্রতিভার যথাযথ ব্যবহারের জন্য চাই পরিশ্রম, সাহস ও ধৈর্য্য।

Md.Amranul Haque এর ছবি

ভাই গন আমার মূলধন নাই যে টুকু আছে একটা ছোট মোমবাতির কারখানা করতে চাই ....মুল উদেশ্য উতপাদন মুখি কিছু করা । এর আগে ভাবলাম ফ্যান এর রেগুলেটর উতপাদন করব কিন্তু অনেক মুলধন লাগবে যা আমার কাছে নাই। আর একটি কথা উতপাদন মুলক কিছু করতে কি আমাকে কোম্পানি করতে হবে? নাকি শুধু ট্রেডলাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেই হবে? কোন আইনের জটিলতা আছ কি? কি করা উচিত বা কোন ধরনের পন্য উতপাদন বর্তমান পেক্ষাপটে ভাল?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মিস করছিলাম। পড়ি আগে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চমৎকার ফারুক!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।