কাতারের ডায়রী-৩

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: শুক্র, ২০/০৭/২০০৭ - ১১:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৫.
মাটির তলে তেল আর গ্যাসের ভুসভাস শব্দে ইউরোপ-আমেরিকার সকলে এসে হাজির মিডিল ইস্ট। কাতারেও। এদের দেখলেই আমার ক্যালিফোর্নিয়ায় সোনার খনির মালিক হবার লোভে মত্ত গোয়ার পশ্চিমা পাপীদের কথা মনে পড়ে যায়। সবাই যেন জিহবা বের করে আছে। কাতারীরা তো নিশান ফোর হুইল ড্রাইভ, এসির বাতাস আর আলিশান বাড়ি পেয়েই খুশী। এই ফাঁকে এমন কোনো এম.এন.সি. নাই দুনিয়ায় যে কাতারে আসে নাই। শেল,শেভরন, সেসল, এক্সনমোবিল, জি ই, কোনোকোফিলিপস, ডলফিন, টোট্যাল, আরো কত অয়েল মেজর, গ্যাস মেজরে দেশটা ভর্তি। কথা সেটা না।
কথা হলো, উঠতি দোহা সিটি। কে জানি বলছিল, মনে হয় দুনিয়ায় যত ক্রেন আছে তার চার আনাই এখন দোহায়। কারন, কন্সট্রাক্শন। এমনিতে সুন্দর সুন্দর একতলা, দোতলা বাড়িই বেশি চোখে পড়ে। তবে নতুন নতুন টাকা হলে যা হয়, মানুষকে দেখাতে হবে না! আমির বলেছে, বানাও উঁচু উঁচু বিল্ডিং। ত্রিশ তলা, চল্লিশতলা, আরো বেশি উঁচু হওয়া চাই। দেশের লোকসংখ্যা মোটে আট লাখ (দুই লাখ কাতারী, বাকি অন্যদেশী শ্রমজীবি), কে থাকবে ঐ আকাশছুয়ে যাওয়া ইমারতে! তবু এশিয়ান গেমস দেখতে যারা এসেছিল, তেলের টাকা কামড়াকামড়ি করতে যারা আসে,গলফ আর টেনিস ওপেন দেখতে যারা আসবে,যেই আসুক তাদের দেখাতে তো হবে যে এখন এই দেশ আর বেদুইন জাতি নাই, এই দেশ এখন আলো ঝলমলে 'গ্যাস ক্যাপিটাল'!

দোহার শপিংমলগুলো দেখেও ধাক্কা খেয়েছি। এর অবশ্য কারণও আছে। লোকজন সাধারণ মুদির দোকানকেও এখানে বলে সুপারমার্কেট। তাই প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম,সুপারমার্কেটেরই যে অবস্থা, সপিং মলগুলো আর কত ভাল হবে। 'সিটি সেন্টার' নামে দোহায় একটা শপিং কমপ্লেক্স আছে। তাতে ঢোকার আগমুহুর্ত পর্যন্ত এই ধারণা ছিল। কিন্তু ভেতরে ঢোকার পর ভুল ভেঙ্গেছে। আলিশান বললে কম বলা হয়। পশ্চিমের মেসি'স কিংবা সিংহপুরের ভিভোসিটিও তো এর কাছে হার মানবে মনে হয়। কি নেই! দুনিয়ার সব ব্র্যান্ড এসে হাজির। শুধু সিটি সেন্টার নয়, এরকম আরো কি কি যেন আছে, ভয়ে আর যাই নি। পকেটের যে অবস্থা!

৬.
যেখানটায় এসে উঠেছি সেটাকে বলা যায় বেশ ডাকাবুকো এলাকা। জায়গার নাম আল-সাদ। পাশেই ফিলিপিনো স্কুল। কাতারে প্রচুর ফিলিপিনি নাগরিক; অফিসে, হাসপাতালে, শপিংমলে। বেশির ভাগই ক্লার্ক জব করে। তাদের বাচ্চাদের জন্যই এই স্কুল। কাউকে এই স্কুলের কথা বললেই আল-সাদ এলাকার কোথায় থাকি তা চিনে ফেলে। সকাল-বিকাল অভিভাবকেরা বাচ্চাদের আনা-নেওয়ার সময় এলাকাটাকে আর মিডিল ইস্ট বলে মনে হয় না। কারণটা পোষাক। কাতারে শপিংমলের বাইরে বোরকা-হেজাব ছাড়াও যে মেয়েদের দেখা মেলে সেটা এখানেই। প্রায়শই দেখি, পথ চলতিরা হা করে তাকিয়ে আছে। এখানে অবশ্য বলে নেয়া ভাল, দোহার পথে পথিক খুবই কম। এই গরমে রাতে ছাড়া আর গাড়ি ছাড়া কে বের হয়! তাই পথিকদের বেশিরভাগই শ্রমিক। অন্তত দুই সামারে তাই দেখলাম। অন্যসময়ের কথা জানি না।
দোহার রাস্তাঘাটগুলো পরিস্কার। তবে আইল্যান্ড বা মোড়গুলোতে জোর করে গাছ বা ঘাস লাগানোর চেষ্ঠা দেখলে সত্যিই হাসি পায়। সকাল সন্ধ্যা এই যে পানি ঢালছে, তবু সব গাছের জন্ডিস আর সারে না। আর ঘাসগুলো যে কেন লাগায়! লাগানোর ঘন্টাখানেক পরই মনে হয় রোদে পুড়ে শেষ। যা থাকে তা ঐ এক ও অদ্বিতীয় খেজুর গাছ। তবে বলতেই হয়, এখন এই খেজুড়ের মোসুমে বাটু বাটু গাছগুলো যেভাবে খেজুড়ের ভারে রাস্তায় নুয্যমান, মনে হয় গাড়ি থামিয়ে মুঠো মুঠো খেজুর মুখে দিয়ে মুখ ভরে ফেলি।

কাতারের ডায়রী-৪


মন্তব্য

??? এর ছবি

ভালো আগাচ্ছে দিনলিপি। কাতার তো প্রায় চিনেই ফেলছি। চলুক।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হ্যাঁ চালুক। ঘাসের একই অবস্থা আমাগো এইখানেও।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মাশীদ এর ছবি

চলুক আরো। বেশ জমছে!


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

ফারুক হাসান এর ছবি

পরের পর্বে জমা বাইর হবে আপামণি। এমন টিউটোরিয়াল আনতেছি!

-----------------------
এই বেশ ভাল আছি

মাশীদ এর ছবি

তোর লেখা পড়ে তোর কথা মনে পড়ল। ফেসবুকে অরিজিতের সাথে কথা হয়ে তোর সাথে নবীনবরণও মনে পড়ল। তাই এখন বসে বসে আবার 'রক্তের বদলা' দেখলাম। হা হা হা! তোর সে কি দুর্দান্ত পারফর্মেন্স! আহা! এবার নাকি অগাস্টের ১৯ এর দিকে হতে পারে নবীনবরণ। আবার একটা ঝাক্কাস কিছু করিস। পারলে এসে দেখে যাব।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

ফারুক হাসান এর ছবি

সেই রামও (পড়ুন মাশীদ)নাই, সেই অযোধ্যাও নাই।
তুমি খালি দেখতে না আইসা কয়দিন টাইম হাতে নিয়া আইসা কইরাও যাও।

কে যেন বলছিলেন (whittman নাকি?)
behold, i dont give a little charity
when i give, i give myself.
মনে নাই?

কুলসুমের পারফর্মেন্সে যে হাততালি পড়ছিল, সেইটা?

-----------------------
এই বেশ ভাল আছি

মাশীদ এর ছবি

বেশি প্যাঁচাল পারিস না। গুরু বলেছেন,'the show must go on!' কারো জন্যই কিছু থেমে থাকে না রে। আমি সামনে নেই তো কি, পিছে আছি অলওয়েজ। তোরা চালা, আবার তোদের পরে অন্য কেউ।

জট্টিল একটা শো ছিল। যতবার দেখি ততবারই হাসি পায়।
ইইইয়াহ্!


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

রেজওয়ান এর ছবি

ধনের পরিমান প্রয়োজনাতিরিক্ত হলে মানসিকতার কি পরিবর্তন আসে তা জানার খুব আগ্রহ।

ছোটকাল একবার সৌদি আরব হয়ে দেশে আসার সময় আমার বাবার সাথে এয়ার্পোর্টের লোকটি যেমন খারাপ ব্যাবহার করেছিল (সবুজ পাসপোর্ট দেখে) তা কচি মনেই দাগ কেটেছিল..ভেবেছিলাম তোদের দেশে আর না...

অতি সম্প্রতি আমার অর্ধাঙ্গিনী একটি ওয়ার্কশপে পরিচয় হওয়া কাতারের এক সরকারী কর্মচারীর কথা বলছিল। বেচারী বার্লিন থেকে তার কাতারবাসী মায়ের জন্যে ৩০০ ইউরো দিয়ে সুন্দর একটি গিফট কিনল কিন্তু তার মনটা খচ খচ করছিল। তাদের জার্মান গাইড জিজ্ঞেস করল সমস্যা কি? বলল জিনিসটি সুন্দর কিন্ত দাম শুনে কি আমার মা এটি পছন্দ করবে? স্বাভাবিকভাবে পরবর্তী প্রশ্ন ছিল কত হলে তোমার মা পছন্দ করত? সরল উত্তর ছিল ৩০০০ ইউরো।

এসব লোকদের কাছ থেকে যত দুরে থাকা যায় ততই ভাল।
××××××××××××××××××××××××××××××××××××
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

রেজওয়ান এর ছবি

ও হ্যা লেখাটা বেশ মজার হচ্ছে। আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর পাব মনে হয় আগামী লেখাগুলিতে।

××××××××××××××××××××××××××××××××
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

অপালা এর ছবি

চালান রে ভাই

কেমিকেল আলী এর ছবি

কাতারের দোহায় ছিলাম ২ বার হোটেল রিজাইনা'তে। পুরা দোহা খুব একটা দেখা হয়নি, তবে অনেক কিছুই ভাল লেগেছে।

আর মেজাজ খারাপ লেগেছে ঐখানকার লোকের একচাটিয়া ভাবে হিন্দি বলাটাকে।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পড়ছি । রেজওয়ান ভাইয়ের মতোই চোখ রাখছি

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ফারুক হাসান এর ছবি

সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। পড়ছেন ও মন্তব্য করছেন বলে।
রেজওয়ান ভাই, আপনার মন্তব্য ও পর্যবেখখন ঠিক। সবুজ পাসপোর্টের দাম কোথায় দেয় বলেন! তারওপর যাদের নতুন টাকা হয়েছে তাদের ভাব দেখলে তো গা জ্বলে যায়।
আর এদের টাকার গরমের কথা আর কি বলবো!
সবমিলিয়ে আমার উপলব্ধিও আপনার মতনই। কিন্তু আসতে ইচ্ছা না করলেও এবার আসতে হয়েছে। হাজার হলেও নিজের কাজ এর সাথে সম্পর্কিত। তবু আমার লেখায় হয়ত খেয়াল করেছেন, একটা প্রচ্ছন্ন খোঁচা আছে, ইচ্ছা করেই রেখেছি। মাশিদ বলছিলেন ঐদিন, কেন একটু কথ্য ভাষায় লিখছি। তার কারণও এই।

-----------------------
এই বেশ ভাল আছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।