ছাগল নড়ে খুঁটির জোরে কিংবা এটি কেবল আতরের জন্মকথা

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: শনি, ১২/০৪/২০০৮ - ৮:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাকিস্তানের লাল মসজিদ কাণ্ডের একচোট মহড়া হয়ে গেল বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গনে। তারই প্রতিধ্বনি উঠল চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে। একদিনে একই লগ্নে। ছকটা ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে কি? এই গোষ্ঠীই তো মোহাম্মদপুরে মসজিদে পুলিশ জবাই করেছিল। তারা কি অমিত শক্তিশালী? আমার তা মনে হয় না। ছাগল নড়ে খুঁটির জোরে।
এটা নিয়ে আগেও বলেছি, আবারও বলি: যুদ্ধাপরাধীদের সত্যিকারভাবে শাস্তি দেয়ার জন্যও যেমন সেনাপ্রধান উক্তি প্রদান করেন নাই তেমনি নারীদের অধিকার দেয়ার জন্যও নারী নীতির পয়দা হয়নি। এগুলো হলো একটি বড় সংঘাতের মালমশলা। যদি প্রয়োজন পড়ে, তাহলে উভয় পরে হারে রে রে'র ভলিউম বাড়িয়ে দিলেই কাণ্ড যা ঘটার ঘটা শুরু হবে। চাইকি একে উসিলা করে ইলেকশন রদ হওয়াও বিচিত্র নয়!
এই সরকার এসে দুটি শক্তির কেশটিও স্পর্শ করে নাই। একটি এনজিও তথা সিভিল সোসাইটি অন্যটি ডানপন্থি ইসলামী গোষ্ঠী। এর কারণ হিসাবে আমার মনে হয়, সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক সমর্থনহীন এই মসনদের ভেতর যে পাকপন্থি (পাকিস্তান-সৌদি আরব-আমেরিকা) কানেকশন রয়েছে, তারা ইসলামওয়ালাদের মজুদ শক্তি হিসাবে ব্যবহার করে সরকারের ভেতর পশ্চিমাপন্থি (ভারত-ইইউ-ইউএসএ) অংশকে কাণঠাসা করতে চায়। আবার পশ্চিমাপন্থি এনজিও ও মুক্তিযুদ্ধওয়ালাদের ব্যবহার করে এদেরকে চাপে রাখতে চায় অপর কানেকশনের হোমড়াচোমড়ারা। প্রমাণ: কার্টুনকাণ্ডে হিজবুত তাহরীরকে মাঠে নামানো এবং আইন উপদেষ্টার দূতিয়ালি। এসব সবার জানা। তার সঙ্গে এবারে প্রথমে বায়তুল মোকাররমের বিক্ষোভ এবং চার উপদেষ্টার স্বউদ্যোগী হয়ে পুনর্বিবেচনা কমিটি করার ঘোষণা দেয়াকে মিলিয়ে দেখলেই চলে। প্রতিটি পদক্ষেপেরই ইঙ্গিত হচ্ছে, ''তোমাদের প্রতিবাদ আমলে নেয়া হচ্ছেÑ আগে বাড়ো''। তারা আগে বাড়ছে। নইলে নারী নীতিতে কী আছে তা জানার আগেই কীভাবে হুজুরেরা মাঠে নামার সুযোগ পায়! কেন তারা জরুরি অবস্থায়ও এত ছাড় পায়।
এর ফলে যা ঘটে তা হলো:
এক. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও নারী নীতির বিরুদ্ধে তথাকিথত ইসলামী শক্তিকে দাঁড় করিয়ে দিলে একদিকে পশ্চিমাদের কাছে এই সরকার দেখাতে পারে মোল্লাদের জন্য পারছি না। কিন্তু কার্যত ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ অক্ষতই থাকে এবং আখেরে সরকারের রাজনৈতিক ভিত হিসাবে কাজে লাগে। ঠিক একই কাজ পাকিস্তানে মোশাররফ সরকার করেছিল। তারা এরকম একটি আপাত প্রগতিশীল নারী নীতি ঘোষণা করে মোল্লাদের প্রতিকুল পরিস্থিতিতে মাঠে নামার সুযোগ করে দেয়। একটা পর্যায়ে মোশাররফ সেই নীতি প্রত্যাহার করে আগের থেকেও পশ্চাদপদ জায়গায় বিষয়টিকে স্থাপন করে। বিনিময়ে মোল্লারা তাকে সমর্থন দেয়। রচিত হয় লাল মসজিদ পরিণতির পথ। বাংলাদেশেও কি তারই পুনরাভিনয় হচ্ছে না?

দুই. আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে তলে তলে যে ঐক্য গঠনের আলোচনা শুরু হয়েছিল যুদ্ধাপরাধ ইস্যু আসার সঙ্গে সঙ্গেই তা ভেস্তে যায়। কারণ, বিএনপি জামাতকে ছাড়বে না আর এ অবস্থায় আওয়ামী লীগও স-জামাত বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করে (১৯৯৬ সালের মতো) সরকারের বিরুদ্ধে জোট গঠনে ব্যর্থ হবে। অন্যদিকে ভারতীয় জেনারেলদের সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সম্বর্ধনায় নিয়ে আসার মাধ্যমে জনগণের একাংশের কাছে হলেও এই আন্দোলন সন্দেহযুক্ত হয়ে যায়।

তিন. এভাবে যারাই এ সরকারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারত একে একে তাদের সবারই কাবু হয় :প্রথমে দুর্নীতির দায়ে রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়িরা, পরে ছাত্র-শিক্ষকেরা এবং এখন পাশ্চাত্য এলিট বনাম ইসলামী এলিটের দ্বন্দ্বে এক ঢিলে উভয় তরফই।
চতুর্থত. আমি বিশ্বাস করি সরকারের ওপরের খোসার অনেক নীচে যে কোর রয়েছে, তাতে নিরন্তর একটা ক্ষমতার প্রতিযোগিতা চলছে। একটা ভারত-মার্কিনপন্থি আরেকটা পাকিস্তান-মার্কিনপন্থি। এরা একে অপরকে কোণঠাসা করার জন্য গণআন্দোলন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন) ও গোষ্ঠীগত আন্দোলনকে (নারী-নীতির বিরুদ্ধে) ব্যবহার করে নিচ্ছে।

চার. জামায়াত হুজুরদের এ আন্দোলনে প্রকাশ্যে না থাকার কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের গুড বুকে নিজেদের মডারেট ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী খেতাব অক্ষত রাখা। আবার সেকুল্যারদের ক্ষমতাবৃদ্ধির সময় গোটা ইসলামী রাজনীতিকে নের্তৃত্ব দেয়ার সুবাদে সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করা।
এসবের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলাম বনাম সেকুল্যারিজম, সৌদি-পাকিস্তান মদদপুষ্ট আরবি শিক্ষিত এলিট বনাম পাশ্চাত্যের মদদপুষ্ট ইংরেজি শিক্ষিত এলিটদের মধ্যে দ্বন্দ্ব পাকিয়ে উঠবে। প্রতিটি মুসলিম দেশেই এই কৌশল কাজে লাগানো হচ্ছে। এটাই তাদের এখনকার ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি। ইসলামপন্থিরাও একে সুযোগ মনে করছে। কারণ এভাবে তারা জনগণের সামনে নিজেদের ‌'খ্রীস্টান' পাশ্চাত্যের প্রতিপক্ষের স্বীকৃতি নিচ্ছে এবং দেশের রাজনীতিতে আগে যেটা ছিল সফট ডান আর সফট সেকুলারের প্রতিযোগিতা, তা হয়ে উঠছে ইসলামী র‌্যাডিকাল ও সেক্যুলার র‌্যাডিকালদের দ্বন্দ্ব। কিন্তু এগুলো কি দেশের প্রকৃত ইস্যু?

দেশে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। ইলেকশন নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। বিশ্বব্যাংক এখন কৃষিতে কর্পোরেটের নিয়ন্ত্রণ কায়েমের প্রেসক্রিপশন লিখছে। সেনা-অর্থনীতি ছড়িয়ে পড়ছে। বিদেশী কূটনীতিক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পরিস্থিতির মধ্যে অন্তর্ঘাত চালাচ্ছে। কয়লা-গ্যাস-বন্দর-ট্রানজিট নিয়ে হরিলুটের আয়োজন তলে তলে পাকা হচ্ছে। লুটেরা রাজনীতিবিদ কিংবা ডোনার নির্ভর সিভিল সোসাইটি কিংবা বিশ্বায়নের সুবিধা নিয়ে পুঁজি ও প্রতিষ্ঠানে নিরন্তর শক্তিশালী হয়ে ওঠা ইসলামী স্ট্যাবলিশমেন্ট কেউই এসব নিয়ে চিন্তিত নয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তারা এসবেরই সুবিধাভোগী ও সহায়ক।
এরই ফেরে পড়ে জেরবার হবে গরিব-মেহনতি মানুষ, কৃষক সমাজ এবং দরিদ্র মাদ্রাসা ছাত্ররা। ভেড়ার পালের মতো তাদের ছুটিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে সংঘাতের ময়দানে এবং তারা 'শহীদ' হবে। কিন্তু অক্ষত থাকবে আমিনী-নিজামীদের বেহেশতি মসনদ। এরা আরব গেরিলাদের সমগোত্রীয় নয়, এরা সৌদি রাজতন্ত্র আর মার্কিন পুঁজিতন্ত্রের সহযোগী। এদের সঙ্গে হিজবুল্লাহ ও হামাসের প্রতিরোধের গণতান্ত্রিকতার কোনো সম্পর্ক নাই। কিন্তু বাংলাদেশেই কেউ কেউ আরবের প্রতিরোধ দেখিয়ে বাংলাদেশের কায়েমী স্বার্থের সেবক ইসলামপন্থিদের জায়েজ করতে চান। এর ফল অতি মারাত্মক। যারা তা করেন তাদের একটা বিষয় পরিষ্কার করতে হবে যে, বাংলাদেশে পরিচিত প্রতিষ্ঠিত ইসলামী শক্তি কী অর্থে জনগণের স্বার্থের পক্ষে এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে? কবে তারা সেই বিরোধিতা অর্থপূর্ণভাবে করেছেন। যারা নিজ ধর্ম ও নিজ জাতির বিরাট একটি অংশকে শরিয়ার নামে নিজেদের মনগড়া সামন্তীয় নিগড়ে বন্দি রাখতে চায় তারা কীভাবে এই জনগণকে সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে মুক্ত করবে? আমরা পড়েছি উভসঙ্কটে। একদিকে লুটেরা বহুজাতিক পুঁজি ও তার সামরিকায়ন আরেকদিকে 'নিপীড়তের দীর্ঘশ্বাস' হয়ে ওঠার ছলে নিপীড়িতকে আরো চেপে ধরার ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ। একদিকে নারীকে পণ্যের বাজারে আরো বেশি করে প্রবেশ করানোর এনজিওদের নারী নীতি আরেকদিকে সামন্তীয় বিধিবিধানের খাঁচা। প্রথমটার থেকে দ্বিতীয়টা হয়তো 'প্রগতি' কিন্তু বাংলাদেশে এখন যা ঘটছে তা প্রগতির নামে নয়, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের ফন্দি। ধর্মের নামে ক্ষমতা অর্জনের ফন্দিফিকিরের থেকে মিথ্যা প্রগতির ছল কম ধ্বংসাত্মক নয়!
অন্যদিকে বাংলাদেশে গরিব মাদ্রাসা ছাত্রদের যে অংশ ভোগ বেসাতি মুনাফা ও মার্কিন-ইসরাইলের বর্বরতার বিরুদ্ধে লড়াইয়রে আশায় টুপিওয়ালা গডফাদারদের পেছনে জমায়েত হয়, তারাও রাজনৈতিকভাবে 'আত্মঘাতী' হওয়ারই (অর্থাত নিজ জনগোষ্ঠীর স্বার্থের বিরুদ্ধে যাওয়ার) পথ নেয়। এ প্রবণতাকে আতর তৈরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করা চলে।
মিলটা প্রতীকী কিন্তু তাতপর্যহীন নয়। সিলেটের পাহাড়ে এখনো আতরের চাষ হয়। স্থানীয়রা ওইসব পাহাড়কে আতর পাহাড় বলে ডাকেন। আতর পাহাড়ে সারি সারি আতর গাছ। বয়স্ক গাছে দা দিয়ে কুপিয়ে রেখে দিলে সেখান থেকে রক্তের মতো ঘনরস পড়ে। গাছের সেই রক্ত বা রস থেকেই পরে তৈরি হয় সুবাসিত আতর_ পবিত্র ও সুন্দর। ঠিক তেমনি সাম্রাজ্যের আঘাতে তার শরীরের রক্তরণ থেকে জন্মায় পবিত্র ও সুন্দর এক স্বাধীনতা স্পৃহা। তা আতরের মতো সুবাসিত করে দেশ ও মাটিকে। আবার শরিয়ার নামে তারা নিজ সমাজের মজলুমেরও রক্তরণ ঘটায়। তা থেকে জন্ম নেয়া আতঙ্ক মৃত্যুর মতো। মৃতের একমাত্র প্রসাধনও কিন্তু সেই বেহেশতি আতর।
তালাল আসাদ নামের এক মার্কিন নৃবিজ্ঞানী দেখিয়েছেন যে, শরিয়া অভ্রান্ত ও অবিমিশ্র কিছু নয়। নানান সময়েই রোমান আইনের সঙ্গে তার মিশ্রন ঘটেছে এবং এর সংস্কারও হয়েছে। অনেক মুসলিম সংস্কারক এর সংস্কারও ঘটিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন যতক্ষণ না শরিয়া প্রবর্তনের দাবি ত্যাগ করবে ততক্ষণ তার পক্ষে গণতান্ত্রিক হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। মুক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত অপরকে মুক্তি দিতে পারে না, যতক্ষণ না সে নিজে মুক্ত না হয়। এই কথা ইসলাম, পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র সকলের বেলায় প্রযোজ্য।
আজকের মুসলিম সমাজের লড়াই যেদিন শরিয়া নামের ওই আতর পাহাড় থেকে নেমে আসবে, নিজ সমাজদেহকে পীড়ন করার ‌ঐ 'আতর চাষ' বন্ধ করবে, সেদিনই তা পথ খুঁজে পাবে মুক্তির_নিজের ও বিশ্বের।


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

বাংলাদেশের জিওপলিটিক্যাল গুরুত্ব যেই জায়গায় পৌছেছে তাতে কাকাদের কাছে টোট্যাল নিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নেই।পলিটিক্যাল ইসলাম ইতোমধ্যেই তাঁদের পরিক্ষিত মসলা, সুশীল সমাজ তুলনায় নবীন, তবে ওয়াফাদার। যেই বিষয়টা খিয়াল কৈরা.......কালনেমির লঙ্কা ভাগে সুশীলরা দৃশ্যত বেশী পাইলেও কামে দেখবেন ডেগচিতে নিজামী সাহেবরাই খিচুড়ি বেশী পাইছেন।
আমার আক্ষেপ একটা জায়গাতেই। এত পয়সা দিয়া কাকারা থিঙ্কট্যাঙ্কগুলা পোষে...কিন্তু কাজে এক্কেবারেই সৃষ্টিশীলতা নাই। পাকিস্তানে দুইদিন আগে যা কইরা আইছে সেইটাই আবার বাংলাদেশে চালাইতে চায়। পাকিস্তানে একটা জিনিস কিন্তু বাংলাদেশের মতো না। সেইটা হইল বারে বারে খল নেতৃত্বের হাতে পড়লেও বাংলাদেশের জনগণ প্রতিরোধপ্রবণ। এইটা উচ্চমধ্যবিত্তরা দেখতে পায় না। তারা ক্যাওস দেখে। আরেকটু নিচে নামলেই দেখা যায়। কালকে যারা বায়তুল মোকাররমে বা চট্টগ্রামে জেহাদের মহড়া দিছে তারা কিন্তু প্রকৃত প্রতিরোধের সময় মাঠে থাকে না। সেইখানে থাকে নিম্নআয়ের মানুষদের মূলস্রোতটা। শুধু লকআউট কইরা ট্যাকা লইয়া লন্ডন জামে মসজিদে দান কইরা সেই স্রোত ঠেকানো অতীতে যায় নাই। ভবিষ্যতে যাবে কি?



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এই জিনিষটা কম লোকই খেয়াল করে যে, আজ পর্যন্ত সরকারি মদদ কিংবা তসলিমার মতো অবিমৃশ্যকারীদের ছুতানাতা জুগিয়ে দেয়া ছাড়া এই ইসলামপন্থিরা নিজেরা কোনো ইস্যু সৃষ্টি করতে পারে নাই। এদের আজকের বলবৃদ্ধি নামে-বেনামে রাষ্ট্রীয় মদদ এবং বিদেশি পুঁজির পুষ্টি। কেবল সৌদি রিয়ালই নয়, বাংলাদেশের নব্য পুঁজির সুধা কেবল এনজিও ও উঠতি বড়লোকেরাই পায় নাই, এরাও তার বেনেফিশিয়ারি। জামাত তো ইসলামের পুঁজিবাদী ভার্সনই বানিয়ে ফেলেছে। কওমি অলারাও নানান পথে অর্থবিত্ত সংগ্রহ করে এখন রাষ্ট্রক্ষমতার হিস্যা দাবি করছে। তারা এখন শাসকশ্রেণীর উপাঙ্গ হয়ে উঠেছে। উপাঙ্গ দিয়ে ধর্ষণ করা যায় কিন্তু গণআন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার ক্ষমতা রাখে না। পাকিস্তানের থেকে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত বড়, শ্রমজীবীরা অনেক মুক্ত ও লড়াকু, অন্যদিকে এখানকার বাজারি স্ট্যাবলিশমেন্ট এত পাওয়ারফুল যে, এসব ডিঙ্গিয়ে যাওয়ার সাধ্য হুজুরদের নাই। সেই ইমানি জোর তাদের নাই। তারা তা চায়ওনা।
তবে এদের মধ্যে থেকে মার্কিন-ভারত প্রতিরোধ দাঁড়াতে পারে না যে তা নয়। কিন্তু দেখা গেছে স্বাধীনভাবে কাজ করার বদলে প্রতিবারই তারা কায়েমি শক্তির হাতের পুতুল হয়েই জীবন সাঙ্গ করে।
......................................................................................
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দিগন্ত এর ছবি

আমি একটা জিনিস বুঝি সেটা হল মানুষ তৈরী হয় শিক্ষায়। এখন বাংলাদেশে সমান্তরালে দু'রকম শিক্ষাব্যবস্থা চলে। কিছু শিক্ষাব্যবস্থা (শিক্ষা = স্কুল, মাদ্রাসা, বাড়ির পরিবেশ, সংবাদপত্র ... ) গোঁড়া আর কিছু উদার। এবার তার ফলশ্রুতিতে তো দু'গোষ্ঠী জন্মাবেই, তার জন্য সৌদি, পাকিস্তান, ভারত বা আমেরিকার প্রভাবের কি দরকার আছে? যারা ঝামেলায় বিবাদী, তারা কোনোদিনও ওই দেশের কারোর সাথে সরাসরি পরিচিত হবার সুযোগ পেয়েছে বলেই মনে হয় না - সংবাদপত্র ছাড়া আর কোনো উপায়ে খবরও পায় না।

আরেকটা ব্যাপার হল, আপনি যতই রাজনীতিবিদ আর সুবিধাবাদী মোল্লাদের দোষ দিন, তাদের জায়গা থেকে তারা চট করে নড়বেন না। আপনি যে প্রতিবাদী বাংলাদেশী মধ্যবিত্তের কথা বলছেন, তারা কি পারবে এই হামলার প্রতিবাদে কালকে বেরিয়ে একটা মিছিল করতে? সবাই নিজের স্বার্থে চলে ... কেই বা অন্যের সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝামেলায় যেতে চায়। মধ্যবিত্তরা সুবিধাবাদী বলেই জ্ঞানের আলো আর নিচে যেতে পারে না। নিচের তলায় মারামারি করে মরে মানুষ।

আর আপনি যে পোলারাইজেশনের কথা বলছেন, সেটা আমি আমাদের দেশেও (আমেরিকাতেও হয়েছে, ব্রিটেনেও হয়েছে) দেখি - সেক্যুলার বনাম ধর্মপন্থী। কিন্তু কারণটা আপনি যেমন বিদেশী শক্তির কথা বলছেন, আমি বলি সেটা দেশের লোকজনের মূর্খামি আর গোঁড়ামি। যতই বলেন, আমাদের এখানে লোকজনের মধ্যে এখনও যুক্তির চেয়ে অন্ধ ধর্মবিশ্বাস এখনও প্রাধান্য পায়। আর সেটাকে একটু ম্যানিপুলেট করতে পারলেই ... কেল্লা ফতে। তাহলে দোষটা কাদের? যারা ম্যানিপুলেট করে তাদের না যারা যুগ যুগ ধরে জিইয়ে রেখেছে অন্ধ ধর্মবিশ্বাসকে? আমি তো কাররই কম দোষ দেখি না। স্যেকুলারের সাথে ধার্মিকের লড়াই এখনো অনেককাল চলবে - গ্যালিলিও, ডারউইন, আতাতুর্ক, স্ট্যালিন, মাও সে তুং ... মোদী, জর্জ বুশ ... এখনও অনেককাল।

---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

দুরকম শিক্ষা টিকিয়ে রেখেছে কারা? যাদের নিজেদের সন্তানেরা সেখানে পড়ে না। গত অর্ধশতকে ইসলাম এখানে মুষ্ঠিমেয়র স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তারাই এটাকে টিকিয়ে রেখেছে। সত্তর/আশির দশকে এমনকি ইউনিসেফও এখানে টাকা ঢেলেছে। মার্কিনিদের সেভিয়েত মোকাবেলার কৌশল তো ছিলই । এসব সবাই জানে।
তবে আমার প্রস্তাব হচ্ছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক ইসলামের প্রধান ধারাটি মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত নির্ভর। জামাতের বেশিরভাগই ইংরেজি শিক্ষিত। এরা সুবিধাবাদী ও সংস্কারবাদী। ক্ষমতায় যাবার জন্য এরা পেছনের দরজায়ই বিশ্বাসী। আবার একইসঙ্গে এটাও বলতে হয় যে, তারা মধ্যপন্থায় নিজেদের মডার্নিটি সৃষ্টি করতে চায়। বিশ্বায়ন পরবর্তী আত্মরিচয় সংকটও এদের ইসলামের দিকে ঝুঁকিয়েছে। আমার একটা সন্দেহ ধর্মের বৈষয়িক ভিত সরে যাওয়ায় রাজনীতির মাধ্যমেই সে আবার নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। রাজনীতি ছাড়া তা সম্ভবও নয়। এটা সকল ধর্মের বেলাতেই কমবেশি সত্য। ফলে এদের আঁতাত রাখতে হয়।
এমনকি আমিনী গংও কিন্তু এখানকার বিত্তবানদের মধ্যেই পড়ে। মধ্যবিত্তের অপর অংশ কর্পোরেট পুঁজি ও তার বাজারের মধ্যে এতই আত্তীকৃত হয়ে গেছে যে, এদের কোনো প্রতিবাদ করার ক্ষমতাই নাই। প্রতিবাদে এরা বরং দেশ ছেড়ে যাবে অথবা দেশে মার্কিন বাহিনীকে স্বাগত জানাবে। কিন্তু আমি বলছি এ অংশটির সুবিধাবাদীতাই তাদের ধর্মীয় পথে বা সেকু্লার পথে সংগ্রামী হতে বাধা দেবে।
আপনি কি জানেন, ব্রিটেন আমেরিকায় যত লোক চার্চে যায় বাংলাদেশে তত ভাগ লোক মসজিদে যায় না। তারা ধর্মভীরু সত্য। তবে নিম্নবর্গের ধর্মচর্চা অপ্রাতিষ্ঠানিক ও খোলামেলা হওয়ায় তা মানবিক সংস্কৃতিতে বাধ সাধে না বরং তা ধারণ করে। উচ্চবর্গ জ্ঞান, বিত্ত, অবস্থান সবকিছুকেই সামাজিক সাংস্কৃতিক পুঁজি বানিয়ে নিজেদের ক্ষমতায়ন ঘটায়। ধর্ম তাদের বাহন। উভয়ের ধর্ম আপাতভাবে মিললেও সংগ্রাম জারি থাকলে তার মধ্যে ভেদ আনা সম্ভব।
আর কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের প্রতি আমার সহানুভূতি আছে। তারা একদিকে মানবতের জীবন-যাপন করে। সবকিছু থেকে বঞ্চনার পর ধর্ম ছাড়া তাদের আর কিছু থাকে না। তারওপর তাদের একটা গহ্বরের মধ্যে আমরাই তো আটকে থাকতে দিয়েছি। তাদের সুপ্ত শ্রেণীক্রোধ বিকৃতপথে জেহাদের মধ্যে ভাষা খুঁজে পায়। এইটুকু না থাকলে তারা নিজেকে মানুষই বলে গণ্য করতে পারতো না। আর মানুষ হওয়ার পর তারা দেখে কিছুই তাদের নয়। তখন তাদের ক্ষেপিয়ে চালনা করা কারো কারো পক্ষে সম্ভব হয়।
যেমন একাত্তরে রাজাকারদের মধ্যে গ্রামীণ সর্বহারারাই ছিল বেশি (আফসান চৌধূরী: বাংলাদেশ ১৯৭১)। যুদ্ধের সময় রাজাকারবাহিনীতে যোগ দেয়া একটা অংশের জন্য সাবসিসন্টেন্স স্ট্র্যাটেজি হয়ে উঠেছিল। নিঃসন্দেহে তারা অপরাধী কিন্তু তার কার্যকারণ না বুঝলে তো মোকাবেলা করা কঠিন হবে।
'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দিগন্ত এর ছবি

তাদের সুপ্ত শ্রেণীক্রোধ বিকৃতপথে জেহাদের মধ্যে ভাষা খুঁজে পায়।

আপনার এই মন্তব্যে বিপ্লব। আমিও একই মত পোষণ করি। শ্রেণীক্রোধটাই বেরিয়ে আসে ধর্মীয় প্রতিহিংসায়।

কিন্তু আমেরিকা বা ইউনিসেফ টাকা ঢেলেছে সোভিয়েতদের আটকাতে, এটা খুব সরলীকৃত হয়ে গেল না? ইউনিসেফ সংস্থাটাকে আমি অনেকদিন কাছ থেকে দেখেছি, এরা (এবং এদের ভলান্টিয়াররা ) সত্যিই ভাল অনেক কাজ করে এবং তা নিঃস্বার্থভাবে। হতে পারে আমিই ভুল বুঝেছি ...
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমেরিকা ফোর্ড ফাউন্ডেশন ইত্যাদির মাধ্যমে ঐ কাজ তো করেছে। আর ইউনিসেফ সাধারণভাবে শিক্ষায় সহযোগিতার উদ্দেশ্যে অনেক দান করে থাকে। নিয়ত কী ছিল জানি না, কিন্তু তথ্য সত্য। আমি বইপত্র ঘেঁটে পরে আপনাকে জানাতে পারব। আর এদেশে চোরবাটবারও ওইসবে টাকা দেয়।
যাহোক, আপনি হয়তো জানেন দেওবন্দ ট্র্যাডিশনের বাইরে উপমহাদেশের প্রথম মাদ্রাসা কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসা কিন্তু ইংরেজদেরই প্রতিষ্ঠিত এবং তার প্রধানও ছিলেন একজন ইংরেজ।
...........................................................................................
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দিগন্ত এর ছবি

হ্যাঁ জানি এবং আমাদের সরকার সেই মাদ্রাসাকে গত সপ্তাহে তুলেও দিল। বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিকে আগেই তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়া বলতে আমি বোঝাতে চাইছি পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে তার মধ্যে ধর্মীয় পঠনপাঠনকে একটা ছোটো অংশ বানিয়ে দেওয়া ... দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য এটা খুব দরকারী।

এখানে একটা খুব ভাল খবর পড়ে দেখতে পারেন। মহম্মদ সাবের খান তার জমানো প্রায় কোটি টাকা নবগঠিত বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে যাচ্ছেন।
পড়ুন

---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

ইউনিসেফ সংস্থাটাকে আমি অনেকদিন কাছ থেকে দেখেছি, এরা (এবং এদের ভলান্টিয়াররা ) সত্যিই ভাল অনেক কাজ করে এবং তা নিঃস্বার্থভাবে। হতে পারে আমিই ভুল বুঝেছি ...

@ দিগন্ত

এক - দেড় দশক আগে ইউনিসেফ পুরো গ্রাম-বাংলায় প্রচার করেছে, ডিপ টিউবয়েলের পানি খান, এটি নিরাপদ। এ জন্য কোটি কোটি টাকা অনুদান দিয়ে গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র তারা টিউবয়েলও বসায়।

আর এখন, এই ইউনিসেফই উল্টো প্রচার করছে, টিউবয়েলের পানিতে আর্সেনিকের বিষ!

এরই মধ্যে দেশের মানুষের যে অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার, তা তো হয়েই গেছে। ...এ থেকে খুব সহজেই নিস্তারও ঘটছে না।

ক্ষমতাধর অন্য কোনো দেশ হলে, অনেক আগেই ইউনিসেফ এর কাছ থেকে মোটা অংকের ক্ষতিপূরণ আদায় করে তাদেরকে তারা ঘাড় ধরে দেশ থেকে বের করে দিতো।

তাই -ইউনিসেফ- আসলে কতোটা সেফ, তা আপনাকে ভেবে দেখতে অনুরোধ জানাই।
---
@ ফারুক ওয়াসিফ
চমৎকার রাজনৈতিক বিশ্লেষণ! লেখনিটাও খুব মারাত্মক রকমের ধারালো। সব বিষয়ে একমত।।

ধন্যবাদ।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

দিগন্ত এর ছবি

দেখুন আপনি যেটা বললেন সেটা হল ভুলের কথা। ভুল তো সবারই হয়। ইউনিসেফ ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশের লোকজনকে আর্সেনিক খাইয়েছে সেটা নিশ্চয় আপনি বলছেন না।

আরেকটা কথা, বাংলাদেশ ইউনিসেফে কাজ করে কারা? বাংলাদেশের লোকই না বিদেশী? আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে বিদেশীরাই কাজ করে ইউনিসেফে ...


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

দেখুন দিগন্ত, জিনিষগুলোকে এইভাবে ভাগ করে নিই না কেন?
ইউনিসেফ একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। সেখানে কোনদেশী লোক কাজ করে সেটা বিষয় না। যারা সিদ্ধান্ত নেয় সাধারণত তারা বিদেশিই হয়, বা এদেশিও যদি হয় তাদের কার্যক্রম নির্ভর করে আন্তর্জাতিক একটা বডির ওপর। তারা যদি কোনো প্রকল্প নেয় তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তাদেরই খুঁজে দেখা উচিত। এ বিষয়ে তাদের দায়ই ষোল আনা। এটাই কি পদ্ধতি হওয়া উচিত নয়?
আজকের বিশ্বব্যবস্থায় দেশ-বিদেশ খুব একটা ধর্তব্য নয়। পুঁজি ও কর্পোরেটের যে জাল, আমাদের এরা তার দূর্বল গ্রন্থি, আপনাদের দেশ তার থেকে সবল গ্রন্থি।
এবার আসি আমাদের দোষের কথায়। আমাদের সরকার আমাদের বিশেষজ্ঞরা যাচাই করে নিতে পারতো। কিন্তু এরা অযোগ্য, নতজানু এবং সহজেই ক্রয়যোগ্য। এদের দূর্বলতা কি বিদেশিদের কাজের জাস্টিফিকেশন হতে পারে?
তুলনায় ইউনিসেফ অনেক নিরীহ। বাংলাদেশের তেল-গ্যাস ক্ষেত্রে কী করা হয়েছে। এদেশে অনেক সংস্থা কাজ করে যাদের এককথায় বলতে হয় গণ-নাশকতামূলক। কিন্তু এদের সম্পর্কে খবরটাও প্রকাশ করা কঠিন।
যাহোক, আমাকে বা আমাদের আপনার সিনিক মনে হতে পারে, কিন্তু এটা সত্যি এবং এত অনাচারের দংশন হয়তো আপনাকে সইতে হয় নাই।
...................................................................................
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

রাসেল এর ছবি

চমৎকার লাগলো পড়ে। রাজনীতির সুবিধাভোগীরাই নিজেদের ভেতরে সব সম্পদ বাটোয়ারা করে নিতে চায়। আমরাই নানান মোড়কে সেগুলোর বাস্তবায়ন করি।

-------------------------------------------------------
বাংলায় হাগি, মুতি, বাঁচি

------------------------------------

আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

বাসায় আনন্দবাজারের ফন্ট আসে না। দুঃখিত। এটাই দেখেন না, হাজি মহসিনের টাকায় সব ধর্মের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি শিক্ষা নিতে গেল কিন্তু মুসলমানদের একটা বিরাট অংশ সেখানে না গিয়ে মাদ্রাসায় গেল। আমার মনে হয়, অন্য একটা ব্যাপারও আছে। কওমি মানে জাতীয়। তারা মনে করছে তারাই জাতীয় শিক্ষা করছে। আর ইংরেজি শিক্ষা পরজাতীয় বিদেশি। অথচ অন্য সময়ে এরাই সংস্কৃত পাঠ করেছে, মজেছে, গ্রিক পাঠ করেছে তাকে বৈশ্বিক করেছে। ষষ্ঠ থেকে ষোল শতাব্দি পর্যন্ত তারা একটা বিশ্বায়ন এবং কৃষি-বাণিজ্য ও চিন্তায় বিপ্লব করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু আজ তারাই ইতিহাসের সূত্রটা হারিয়ে ফেলেছে। কেননা কোরানই তার দর্শন সুন্নাহই তার ইতিহাস আর রাজনীতি তার চর্চা। তার অধপতন এ পর্যন্ত হয়েছে যে, ইতিহাস বললেই তার তরবারির কথা মনে পড়ে আর নৈতিকতা প্রয়োগের একমাত্র ক্ষেত্র হলো নারী।
আবার নিজস্ব জাতীয়তাবাদ আর অহংবোধ থাকার কারণে এদের বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় আত্মস্থ করা যাচ্ছে না। আবার বিশ্বায়ন রাষ্ট্র, অস্ত্র সকল ক্ষমতা পেরিয়ে এখন এর মধ্যে দিয়ে সবথেকে বিরাট শক্তির মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সেটা হলো সমাজ। এসব ইসলামী দেশের সমাজের বড় অংশ নিপীড়িত এবং তারা পথ খুঁজছে। এই খোঁজার সুযোগ নিচ্ছে একে একটা এস্টাবলিশমেন্টের মতো করে ব্যবহার করে রাষ্ট্রের কাছে ক্ষমতার হিস্যা চাইছে। তার জন্য তাদের ঘটনা দরকার। ক্ষমতা কারো কাছে থাকে না। ইসলামকে ঘিরে একটা ক্ষমতা এদেশে থাকবেই। ধর্ম বা সংস্কৃতি বা জাতীয়তা বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতার রূপ পরিগ্রহ করবেই। তারা এই সুযোগই নিয়েছে। এবং তারা ভাবছে বিদেশীদের থেকে তাদের এদেশের ওপর হক বেশি। অন্যরা তো দেশটাকে বেচেই দিয়েছে।
..........................................................................
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দিগন্ত এর ছবি

ইন্সটল করে নেন না ... হাসি ... আরেকটা খবরের কাগজ মাঝে মাঝে চোখে পড়লে ভালই ... আমি তো এখন প্রথম আলো আর ডেইলি স্টার পড়ি, সিয়াটেল নিউস, আনন্দবাজার আর টাইমস অব ইন্ডিয়া ছাড়া ... আর গুগল নিউস তো সবসময়।

আর আনন্দবাজার কোনোকালে নিজেদের সাইটটাকে ইউনিকোডে দেবে না। সার্চ ও করতে পারি না। তাই আনন্দবাজারের ভাল খবর পড়লে লিঙ্কটা জমিয়ে রাখি হাসি.
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

সেগুলো পড়ি। অফিসে বসে দৈনিক ভারতের বাংলা ইংরেজি সহ দৈনিক ১০/১৫ টায় চোখ বুলাই।
ও আচ্ছা, আমি প্রথম বুঝতে পারি নাই আপনি বাংলাদেশি নন।
.........................................................................................
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দিগন্ত এর ছবি

আগের বারেই বোঝা উচিত ছিল হাসি ...
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

.......................................................কী করা যাবে বলেন।
]মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

কবে আনন্দবাজারের সম্পাদকীয় স্টাইল বেশ।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দিগন্ত এর ছবি

আমি সময় না পেলে এখন শুধু ওটাই পড়ি। বিদেশে থাকলে ইন্টারনেটে পড়া ছাড়া উপায় নেই। আর্কাইভে সার্চও করা যায় না। কোনো উপায় নেই।
শেষ কদিন দেখলাম একটা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে আর একটা নিকাহনামা নিয়ে সুন্দর সম্পাদকীয় দিয়েছে। ভাল লেগেছে ...

ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয়ও ভাল। তাও অনেক কাল আগে একবার পছন্দ হয়নি দেখে লম্বা চিঠি দিয়েছিলাম। ডেইলি স্টার সেটা ছাপিয়েওছিল হাসি.


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ডিটেইলে যাচ্ছি না। বিশ্লেষণটা আগুন হয়েছে। পাঁচ দিতে কার্পণ্য হলো না মোটেও। বাকী কথা সুমন চৌ. বলেছেন।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

কিন্তু পরসমাচার তো শোনা হলো না।
..............................................................................
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

শেখ জলিল এর ছবি

যুদ্ধাপরাধীদের সত্যিকারভাবে শাস্তি দেয়ার জন্যও যেমন সেনাপ্রধান উক্তি প্রদান করেন নাই তেমনি নারীদের অধিকার দেয়ার জন্যও নারী নীতির পয়দা হয়নি। এগুলো হলো একটি বড় সংঘাতের মালমশলা। যদি প্রয়োজন পড়ে, তাহলে উভয় পরে হারে রে রে'র ভলিউম বাড়িয়ে দিলেই কাণ্ড যা ঘটার ঘটা শুরু হবে। চাইকি একে উসিলা করে ইলেকশন রদ হওয়াও বিচিত্র নয়!
.....যুক্তিযুক্ত কথা। বিশ্লেষণটা বেশ ভাল্লাগলো।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

লগ অন করি লিখব কিছু লিখব বলে কিন্তু দেখি ব্যটা ফারুক আমার সব কথাই লিখে ফেলেছে ।
শাবাস ফারুক । লও সালাম ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

মাসুদা ভাট্টি এর ছবি

কিছুদিন ধরে একটি কথা মনে হচ্ছে খুব, কথাটি এমন:

বাংলাদেশ না গণতন্ত্র, না সেনাতন্ত্র, না মোল্লাতন্ত্র - বরং এই তিনের এক অদ্ভূত ত্রিশঙ্কুবস্থায় ঝুলে আছে। পাকিস্তানের নির্ভরশীলতা তিন-এ "আল্লা আর্মি এ্যান্ড আমেরিকা" , কিন্তু বাংলাদেশে এর মাঝে স্যান্ডউইচের পুরের মতো বিশাল এক জনগোষ্ঠী আছে, যারা পুরোপুরি রাজনৈতিক ভাবে সচেতন তা বলা যাবে না, তবে প্রতিবাদী, রাজনীতির নামে তাদের অন্তর নাচে, এটা রক্তগতভাবে প্রাপ্ত। এদেরকে নিয়েই সংশয় এবং শঙ্কা এই তিন "এ"-র, ফলে তারা এরমাঝে সুশীল নামে এক ধরনের মৌল ঢুকিয়ে দিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য সফল করাতে চাইছে।
আমার অনেক লেখাতেই আমি লিখেছি যে, বাংলাদেশে আজকের অবস্থাটা খুব একটা সরল নয়, বরং অনেক পক্ষ-বিপক্ষের মিশেল-ভিয়েনে জারিত এক জগাখিচুরি সংকট। এতোকাল যে বিশাল মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিতরা মিলাদ কিংবা মসজিদের হুজুর-মুয়াজ্জিনের কাজ করে পেট চালিয়ে আসছিলো, আজকাল আর তাদের এই লিল্লাহ্-য় পোষাচ্ছে না। তারা এখন সরাসরি রাষ্ট্র ক্ষমতার ভাগ চাইছে। রাজনৈতিক ইসলামের ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ তাই ঘটতে বাধ্য, যে কোনও সময়, যে কোনও মুহূর্তে।
খুব বড় বিষয়কে ছোট করে বললে একথা বলতেই হবে যে, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্তরে-বাহিরে সর্বত্রই তিনটি (আপাতভাবে) পক্ষ সক্রিয় ভাবে কাজ করে চলছে। একপক্ষ এই মাদ্রাসা শিক্ষা এবং রাজনৈতিক ইসলামের ধ্বজা ওড়াতে চাইছে এই সুযোগে; দ্বিতীয় পক্ষ চাইছে ক্ষমতাকে অগণতান্ত্রিক কাঠামো তথা সামরিক কাঠামোর ভেতর পুরোপুরি আটকে রাখতে, তবে তাদের বিদেশি পেট্রনরা হয়তো এখনও তাদেরকে পুরোপুরি ছাড়পত্র দিচ্ছে না, তাই তারা এখনও দোদেল বান্দা হয়ে ধীরে ধীরে সুতো ছাড়ছে; একেবারে শেষোক্তরা চাইছে বাংলাদেশে সের-মেপে হলেও খানিকটা গণতান্ত্রিক অবস্থা বিরাজ করুক এবং তারাই হোক সেই মেপে দেওয়ার মালিক, ড. কামাল হোসেনসহ সুশীল সমাজ এই পক্ষের হয়ে কাজ করছেন, কারণ তারা জানেন যদি রাষ্ট্র ক্ষমতা পুরোপুরি ওপরোক্ত দুই পক্ষের হাতে গেলে তাদের হাতে ঝুলবে রাঙা মুলো, কিংবা তারা পুরোপুরি এলিমিনেটও হয়ে যেতে পারেন, সবচেয়ে বড় কথা ওপরের দুই পক্ষের সঙ্গে ক্ষমতার ভাগাভাগির একটা অলিখিত চুক্তি হলে, এই তৃতীয় পক্ষ ছাগলের তৃতীয় বাচ্চার মতো লাফালাফি করবেন কিংবা গেস্টাপোর বাংলাদেশ সংস্করনের হাতের বেঘোরে প্রাণও হারাতে পারেন।
আমি জানি না, হয়তো আমার সঙ্গে অনেকেই একমত হবেন না, কিন্তু আমার বিশ্লেষণটা খানিকটা এরকম, যদিও সবটা এখানে বোঝানো গেলো কি না জানি না, হয়তো পরে এ নিয়ে আলাদা একটি রচনা লিখতে হবে।

ধন্যবাদ, ফারুক, এই সময়ে এই চমৎকার রচনার জন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ লেখা। সিম্পলি অসাধারণ

---আশফাক আহমেদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।