মাটি ও ফসলের কাছে প্রণত হবার দিন

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: রবি, ২০/০৪/২০০৮ - ৬:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

'দূরে-কাছে কেবলি নগর, ঘর ভাঙে; গ্রামপতনের শব্দ হয়;' বহু বছর আগে লিখে গিয়েছিলেন এক বাঙালি কব_জীবনানন্দ দাশ। গ্রামপতনের সেই শব্দ এখনো থামেনি, বরং বেড়েছে। একেকটা দুর্যোগ আসে আর গ্রাম আরও ক্ষয়ে যায়। সেই ক্ষয়গ্রস্ত গ্রাম তখন আর তার লোকদের ধরে রাখতে পারে না, তারা দেশান্তরী হয়। যাদের কাছে 'ঘর হইতে আঙিনা বৈদেশ' তারাও শহর-নগর-বন্দরে ভিড় জমায়। ভাসতে ভাসতে ইহকালে তাদের শেষ মঞ্জিল বস্তি ও ফুটপাতে এসে ঠেকে। পরাজিত সেনাদলের মতো নত হয়ে দলে দলে তারা আসে। তখন আর বোঝার উপায় থাকে না, ঘর-ফসল-মাঠ-বৃক্ষ-গবাদিসমেত একটা আস্ত জগত ছিল এদের। এরা একটি সভ্যতার অবশেষ। ইতিহাসের সব থেকে বিরাট ও প্রাচীন উতপাদিকা শক্তি ছিল তারা। এদের পতন গ্রামের পতন, কৃষির পতন। কিন্তু এই পতন রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের মনে কোনো দাগ কাটে না। তাঁরা পাষাণ মনে এমন এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন, যাতে গ্রামের ওপর শহরের প্রভুত্ব এবং কৃষকের ওপর বণিকের জোর জারি থাকে। এটাই নাকি প্রগতি!
কিন্তু এখন, যখন খাদ্য সংকট তুঙ্গে, তখন আবার ফেলে আসা গ্রামের কথা, কৃষির কথা উঠছে। এ ঘোর অকালে আমাদের হুঁশ হয়েছে যে 'সভ্যতার' তলানিতে গাদ হয়ে পড়ে থাকা কৃষকপুঞ্জই আমাদের অন্নদাতা। অন্নের অভাব এক টানে উঠিয়ে এনেছে সেই পুরাতন প্রশ্ন: জাতীয় অর্থনীতিতে কী হবে কৃষির ভূমিকা? কাজেই দুনিয়া জুড়ে কৃষি অর্থনীতি বিকাশের খাত খতিয়ে দেখছেন অল্প কিছু মানুষ। কারো কাছে এটা সঙ্কট আবার কারো কাছে এটা ফন্দিবাজির নতুন মওকা।
বাণিজ্যিক কৃষির কাছে পারিবারিক কৃষি পরাস্থ হলে পর দেখা গেল, মাটি ও ফসলকে ঘিরে বিরাট বাণিজ্য হতে পারে। সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন যে চাষ পদ্ধতি চালু হলো, তা অতি ব্যয়সাপে। এর জন্য যে বীজ, সেচ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে, তার কোনোটাই গ্রামের কৃষকের এখতিয়ারে পয়দা হওয়া সম্ভব নয়। এগুলো বানায় কোম্পানি, বেচে শহরের ডিলার। এত কিছু নিয়েও আমাদের মতো দেশের কৃষক বিশ্ববাজারে দাঁড়াতেই পারল না। ইউরোপ-আমেরিকার উচ্চ পুঁজিঘন খামারজাত শস্য তাকে হটিয়ে দিল। একটা উদাহরণ দরকার। ১৯৯৮ সালে আমেরিকার সয়া বীজ ও ভোজ্য তেল কোম্পানিগুলো ভারতে ঢোকে। দাম হয় টনপ্রতি ১৫০ ডলার। স্থানীয় সয়ার থেকেও সস্তা করতে মার্কিন সরকারের ভর্তুকি পড়েছে টনপ্রতি ১৯১ ডলার। ধনী রাষ্ট্রের এই ভর্তুকিরই অপর নাম 'বাজারের অদৃশ্য হস্ত'। এই হস্তের আদরে মার খাওয়া বিশ্বের কোটি কোটি দরিদ্র কৃষক জোত-জমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যায়। এভাবে একদিকে আমাদের মতো দেশের জমি ও ফসলকে রাসায়নিক সার-কীটনাশকে আসক্ত করা হলো, অন্যদিকে তার খরচ কুলাতে না পেরে সনাতন কৃষক পরাজিত হলো। স্থানীয় রাষ্ট্র স্থানীয় কৃষি ও কৃষকের পক্ষে দাঁড়াল না। অথচ এখনো এ দেশে ১০০ জনে ৭০ জন কৃষিকাজে জড়িত। ব্রিটেন কিংবা আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ায় কৃষিকাজে জড়িত মানুষের হার জনসংখ্যার মাত্র .০১ শতাংশ। কিন্তু নিজ রাষ্ট্রের মদদে তারাই হয়ে উঠল বিশ্বের কৃষি বাণিজ্যের বিরাট অংশের চালক।
এসব প্রকাণ্ড খামারের যান্ত্রিক কৃষির উতপাদনশীলতার ধারে-কাছেও আমাদের সনাতন কৃষকেরা যেতে পারে না। সেখানে একজন কৃষিমজুর বছরে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার কুইন্টাল শস্য ফলায়। আর আমাদের দেশের একজন কৃষক সবুজ বিপ্লবের পরও ফলায় মাত্র ১০০ থেকে ৫০০ কুইন্টাল। আর যে কৃষকের জীবনে সবুজ বিপ্লবও আসেনি তার উৎপাদন বছরে মাত্র ১০ কুইন্টাল। তাহলে অনুপাত দাঁড়াল ২০০০ ১। ১৯৪০ সালের আগে এ অনুপাত ছিল ১০ : ১। এর ফলে আগে যার আয় ছিল পাঁচ টাকা এখন সে পায় এক টাকা। অর্থাত ঐ কৃষকের আয় কমে গেছে পাঁচগুণ। এর সঙ্গে রয়েছে রাষ্ট্র, ব্যাংক, বাজার ও রাজনীতির নানান বাধা। তৃতীয় বিশ্বের সনাতন কৃষির অবয়ের কারণটি এই। অথচ আশি ভাগ কৃষকের দেশে রাষ্ট্রই হওয়ার কথা ছিল কৃষকের সব থেকে বড় উৎপাদনী সংগঠন। তা হয়নি। উপরন্তু সম্বলহীন কৃষককে বাজার ও বহুজাতিক কোম্পানির মুনাফার মুখে উদোম করে ছেড়ে দিয়েছে। কৃষক একা একাই অতি সামান্য উপকরণ সম্বল করে বারবার বাম্পার ফলন ফলিয়ে গেছে। কিন্তু লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে গেছে। আর দিন দিন সে নিঃস্ব ও রোগা হয়েছে।
কৃষকের নিঃস্বকরণের এ সময়ে, ১৯৭৪-২০০৫ পর্যন্ত খাদ্যের দাম কমেছে ৭৫ শতাংশ। আর বাণিজ্যিক কৃষির রমরমা সময়ে অর্থাত ২০০৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত খাদ্যের দাম বেড়েছে সেই ৭৫ শতাংশ। এর সুফল কৃষকের ঘর পর্যন্ত কেন পৌঁছায় না তার একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশ্ব খাদ্য সংস্থার বর্তমান ডিরেক্টর অব লিয়াজোঁ ড্যানিয়েল গুস্তাফসন। তিনি বলেছেন, 'খাদ্যের দাম বৃদ্ধি কৃষকের উপকার করবে না, কারণ তাদের বেশির ভাগকেই সেই খাদ্যই আবার কিনে খেতে হয়।' অর্থাত উতপাদনের খরচ ওঠাতে একদিকে তাকে উতপাদনের বেশির ভাগটাই বিক্রি করে দিতে হয়, অন্যদিকে জমানো খাবার ফুরালে সেটাই আবার বাজার থেকে চড়া দামে কিনতে হয়। এভাবে দুবার মার খায় সে। এ নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়ারই ফল আজ আমরা হাতেনাতে পাচ্ছি। ক্ষুদ্রঋণসহ রকমারি এনজিও আয়োজনের পরও গ্রামাঞ্চলের দারিদ্র্য ও ভূমিহীনতার ঢল কেন থামছে না, তা বিশ্লেষণ করলেই শুভঙ্করের ফাঁকিটি ধরা পড়ে।
প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ অর্থাত মানবজাতির অর্ধেকই আজও গ্রামে থাকে। আধুনিক সমাজের আগের সব সমাজের ভিতও ছিল গ্রামে ও কৃষিতে। সেই সমাজের ধ্বংসের ওপরই আধুনিক পুঁজিবাদ দাঁড়িয়েছে। একদিকে এই ৩০০ কোটি পরিত্যক্ত মানুষ অন্যদিকে মাত্র কয়েক কোটি ধনী পরিবার। বর্তমান মুনাফাখোরি ব্যবস্থায় এই ৩০০ কোটি মানুষের বাঁচার কোনো সুযোগ তারা রাখেনি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ২০০ কোটি শহুরে শ্রমজীবী। বিশ্ব অর্থনীতি যে পথের পথিক তাতে জমি-জলা কিংবা পেশা হারানো এসব মানুষের রোজগারের বন্দোবস্ত হওয়া সম্ভব নয়। এক কথায় এরা ও এদের সমাজ এমনতিইে দাঁড়িয়ে ছিল বিপর্যয়ের খাদে। এ অবস্থায় ঘনিয়ে এল বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট, মন্দা ও জলবায়ু বিপর্যয়। সহসা এর কোনো সমাধান কেউ দিতে পারবে না। খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে, এর পেছনেও রয়েছে অতি মুনাফার লালসা। আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া-ব্রাজিলের মতো খাদ্য রপ্তানিকারক দেশগুলো তাদের উতপন্ন খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশই জ্বালানি তৈরিতে নিয়োজিত করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় অস্ট্রেলিয়া-আফ্রিকায় বন্যা এবং এশিয়ার কোথাও কোথাও খরায় ফসল মার খেয়েছে। জৈবজ্বালানির জন্য খাদ্য তৈরিতে লাভ বেশি দেখে অজস্র কৃষক সেদিকে ঝোঁকায়ও খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। একই সময়ে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারে উঠে রেকর্ডর করে বসে আছে। তেলের দাম বাড়া মানে খাদ্য পরিবহন, সেচ ও সার ও বীজসহ সবকিছুর দাম বাড়া। কথায় বলে মড়ারে মারো ক্যা, বলে লড়ে-চড়ে ক্যা। বিপন্ন ও ঋণগ্রস্ত কৃষকের এখন নড়বারও উপায় নেই।
এর ফেরে পড়ে ভারতে ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ কৃষক আতহত্যা করেছে। কেউ তাকায়নি। কিন্তু এখন যখন কৃষির কদর বেড়েছে তখন কৃষককে সহায়তার কথা মনে পড়েছে রাষ্ট্রের। এর মধ্যেই ভারত সরকার ৬০ হাজার কোটি রুপি (আমাদের হিসাবে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা) কৃষিঋণ মওকুফের সিদ্ধান্ত নিয়েছে (৪ মার্চ, ২০০৭, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া)। চীন, জাপান, তাইওয়ান ও দণি কোরিয়া ছোট ছোট কৃষি জোতকে আরও সবল করায় নেমেছে। এসবের লক্ষ্য কেবল খাদ্য নিরাপত্তা নয়, জীবনযাত্রার নিরাপত্তাও। কৃষি মানেই পশ্চাদ্পদতা, স্থবিরতা এই সাবেকি তত্ত্বে ফাটল ধরেছে। যান্ত্রিক কৃষি খামার ও বাজারকেন্দ্রিক চাষবাস এবং বণিকের অর্থনীতি যে কোটি কোটি কৃষক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত কৃষি কাঠামোকে তছনছ এবং ধরিত্রীকে টালমাটাল করে; এ সত্য দিনে দিনে ফুটে উঠছে। প্রবৃদ্ধি বাড়লেও দারিদ্র্য বিমোচন না হয়ে বরং বাড়ে বলে রায় দিয়েছে ভারতের একটি সরকারি সমীক্ষা কমিশন। এ প্রসঙ্গেই এখন খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি জীবনযাত্রার নিরাপত্তার কথা উঠছে। সম্প্রতি বৈশ্বিক কৃষি-শিল্প ফোরামের সভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যা বলেছেন, তার মর্ম এই : কৃষকের জমি হারানোর মধ্য দিয়ে কৃষিক্ষেত্রে বহুজাতিক কোম্পানির একচেটিয়া, ভূমির পুঞ্জিভবন এবং করপোরেটের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা বাস্তবও নয়, সামাজিকভাবে কাম্যও নয়। মনে রাখতে হবে, কথাটি তাঁরই, যিনি রাষ্ট্রীয় খাতগুলোর বাণিজ্যিকীকরণ তথা মুক্তবাজারের প্রবক্তা ছিলেন ও আছেন। তিনিই যখন বলছেন ভারতের মতো দেশে কৃষি কেবল খাদ্য তৈরির যন্ত্র নয়, তা জনগণের তিন ভাগের দুই ভাগের জীবনযাত্রার নিরাপত্তার মেরুদণ্ড। একে অস্থিতিশীল করলে সমগ্র সমাজের খাদ্য নিরাপত্তাই কেবল নয়, স্থিতিশীলতাও বিপন্ন হতে বাধ্য। ভারতের জন্য যা সত্য বাংলাদেশের জন্যও তা সমান সত্য। উভয় দেশেই কৃষকেরাই এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং তারা এক বিপন্ন প্রজাতি। জীবনযাত্রার নিরাপত্তা না থাকায় একটি দেশ কেমন নাজুক অবস্থায় পড়ে, বাংলাদেশ তার মোম উদাহরণ। যে সমাজে গ্রামীণ উৎপাদনের উপযুক্ত পরিবেশ থাকে, থাকে কৃষিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং বাজার ও রাষ্ট্র যেখানে কৃষকবান্ধব হয়, সেখানে উদ্বৃত্ত জনগোষ্ঠী পঙ্গপালের মতো শহরে ছোটে না। সে রকম সমাজে বিপর্যয় মোকাবিলার তাকত নিজের মধ্যেই রাখে। আমাদের দেশে খাদ্য এখনো দুর্লভ হয়নি, তবু মানুষ ভুখা থাকার কারণ, তাদের জীবনযাত্রার নিরাপত্তা নেই। কাজ বা পুঁজি বা সঞ্চয়হীন মানুষ সামান্য দুর্যোগেই কাবু হয়ে পড়ে। খাদ্য থাকা সত্ত্বেও তারা তা কিনতে পারে না। প্রতিটা ঝড়-বন্যা-মঙ্গায় গ্রামের মানুষ যে বাইরের খয়রাতি দানের দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকতে বাধ্য হয়, তার কারণও এই জীবনযাত্রার অনিরাপত্তা।
সব সংকটেরই কিছু না কিছু ভালো দিক থাকে। ষাটের দশকের খাদ্য সংকট ভাল হোক মন্দ হোক, সবুজ বিপ্লবের জন্ম দিয়েছিল। এখন জরুরত আরেকটি কৃষি বিপ্লবের। এই বিপ্লবকে কেবল সবুজ হলেই হবে না, হতে হবে 'চিরসবুজ' অর্থাত প্রকৃতিবান্ধব ও অমুনাফামুখী। খাদ্য পণ্য হতে পারে না, তা অধিকার। যেমন জমিও কৃষকের অধিকার। তার অধিকার রার ওপরই এখন অনেক কিছু নির্ভর করছে।
যদি আমরা দিনকানা না হয়ে থাকি, তবে জমি ও কৃষকের কাছে, মাটি ও ফসলের কাছে প্রণত হওয়ার দিন এসেছে।
**লেখাটি আজকের প্রথম আলোর সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত হয়েছে। আমি জানি না দৈনিকে প্রকাশিত লেখা এখানে দেয়া যায় কি-না। কিন্তু এক বিষয়ে দুটি লেখা কি সব সময় সম্ভব হয়?


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

চমৎকার ঝরঝরে লেখা।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালোই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে...।
-নিরিবিলি

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বানিজ্যিক কৃষির রমরমা এ সময়ে আমার তীব্র আশংকা হচ্ছে আমাদের মৃতপ্রায় কৃষকদের অবস্থা আরো করুন হয়ে উঠবে । আবহমান কাল থেকে কৃষি এদেশের কৃষকদের জন্য শুধু পণ্য নয় তার জীবনাচারন ও বটে ।
আজকে যখন দেখা যাচ্ছে একমণ ধানের দাম উঠছে ৮০০ টাকা ধান উৎপাদন একটা বড় লাভজনক ব্যবসা হয়ে উঠার সম্ভাবনা দাঁড়ায় । প্রান্তিক কৃষক কিন্তু সেই লাভের গুড় খেতে পারবেনা,পারেনা ও কোনদিন ।
আমি ভয় পাচ্ছি আমাদের দেশেই কর্পোরেট রাক্ষসেরা এখন কৃষিকে ও গিলে খাবে । বিশাল চাষের জমি নিয়ে তারা বানিজ্যিক ভাবে ফসল উৎপাদন করবে, তাদের বীজ সার সেচের অভাব হবেনা, খামার থেকে সরাসরি বাজারে ভোক্তার কাছে তারাই পণ্য পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করবে । এর ফলে কৃষকেরা আরো বেশী বেশী করে ভূমি হারাবে,কৃষি থেকে উৎখাত হয়ে যাবে কারন এই অসম প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্র তার পাশে এসে দাঁড়াবেনা ,দাঁড়ায়নি কখনো ।

বানিজ্য ব্যবস্থাপনার ছাত্র হিসেবে আমার একটা সরল ভাবনা হচ্ছে যদি ন্যুনতম একটা পিরিয়ড সরকার কৃষকদের সার বীজ সেচ কৃষিঋনের সুবিধা দিতো আর কৃষকদেরকে সরাসরি বাজারে ঢোকার সুযোগ করে দিতো-মাঝখানের ফড়িয়াদের বলয়টাকে ভেংগে ফেলা যেতো তাহলে দ্রুত অনেক কিছু বদলে যেতো ।

কিন্তু এও আমি জানি এ হবার নয় । কৃষিব্যাংকের ঋন প্রকৃত কৃষক পাবেনা,বাধ্য হয়ে সে চড়াসুদে দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঋন নেবে, অগ্রীম ফসল বিক্রী করে দেবে ফড়িয়া-দালালদের কাছে । ফড়িয়ারা পানির দামে ফসল কিনে চুড়ান্ত ভোক্তার কাছে বিক্রী করে আগুন দামে । উৎপাদক আর ভোক্তা দুজন ভুক্তভোগী । ডিম পাড়ে হাঁসে আর খায় বাগডাশে ।
কি আর করা , ঐ কৃষিব্যাংক,ফড়িয়া দালাল বাগডাশরা মিলেই যে মহামান্য সরকার ।
xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

ফারুকের লেখা আর হাসানের মন্তব্য দুটোই ভাল লাগল ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

সৌরভ এর ছবি

ভাল্লাগলো।
দোভাষীর কাজের সুবাদে সামান্য সময়ের জন্যে জাপানের তৃণমূল পর্যায়ের প্রশাসনের কাজ নিয়ে জানার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা থেকে দুই পয়সা।

জাপানে, স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসনের দায়িত্বে, কোন কৃষক সামনের মৌসুমে তার জমির কতটা চাষ করবেন, আর ফলাবেন সেটা ঠিক করে ফসলের পরিমাণের ব্যালান্স আগেভাগেই মোটামুটি ঠিক করে রাখা হয়।(অবশ্যই দুর্যোগ বা অন্য ব্যাপারগুলো মাথায় রেখেই)

ধান বা খাদ্যশস্যের ব্যাপারে, পরিমাণের ব্যালান্স ঠিক রাখতে গিয়ে অনেক কৃষককে বাধ্য হয়ে কোন কোন মৌসুমে ধানী জমি ফেলে রাখতে হয়। বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ পান সেই কৃষকেরা সরকারের কাছ থেকে।

বাজারে দাম আর মান দুটোই তাতে বজায় থাকে।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমি ভয় পাচ্ছি আমাদের দেশেই কর্পোরেট রাক্ষসেরা এখন কৃষিকে ও গিলে খাবে । বিশাল চাষের জমি নিয়ে তারা বানিজ্যিক ভাবে ফসল উৎপাদন করবে, তাদের বীজ সার সেচের অভাব হবেনা, খামার থেকে সরাসরি বাজারে ভোক্তার কাছে তারাই পণ্য পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করবে । এর ফলে কৃষকেরা আরো বেশী বেশী করে ভূমি হারাবে,কৃষি থেকে উৎখাত হয়ে যাবে কারন এই অসম প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্র তার পাশে এসে দাঁড়াবেনা ,দাঁড়ায়নি কখনো ।

হাসান মোরশেদের এই ভয় থেকেই এই লেখা।
সাহস দেন তো বলতে চাই, আমাদের শিক্ষা ও ‌'সভ্যতা' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কৃষক সমাজের বিরুদ্ধে। তাদের ওপরই আমরা শহুরে লোকেরা পশ্চিমা বণিজ পুঁজির উপনিবেশ কায়েম করেছি। আমাদের ভদ্রলোকি নাগরিক সংষ্কৃতিতে কৃষক হচ্ছে এক অবান্তর চরিত্র, আলুর বস্তা। আমরা যা হতে চাই না তা-ই কৃষক, যে জীবনকে আমরা অবজ্ঞা করি তা-ই গ্রাম। এই সংস্কৃতিই কি কৃষক-শোষণে সহযোগিতা করে না?
;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

আমাদের ভদ্রলোকি নাগরিক সংষ্কৃতিতে গালি হিসেবে বলা হয় "গেয়ো ভুত'', "আনকালচারড '',"ক্ষেত" ।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ এর "আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি " (আমার অত্যন্ত প্রিয় কবিতা) একটা চরন মনে পড়ে গেল ঃ

"যে কর্ষন করে তার প্রতিটি শ্বেদবিন্দু কবিতা
কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।"

কবিতাকে অস্বীকার করেই আমদের শহরের ভদ্রলোকেরা লিখে ফেলে "কবিতা" ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

অতিথি লেখক এর ছবি

যুক্তি আর আবেগ এ দুটি একসঙ্গে খুব কম মানুষের কাছেই ধরা দেয়। আপনার লেখায় মনে হয়েছে আপনি তেমন দূর্লভ একজন মানুষ।
ক্লান্ত পথিক

[restrict]
চোখের সকল খুধা মিটে যায় এইখানে এসে
এখানে কাটিবে সময় জেগে থেকে ঘুমাবার স্বাদ ভালবেসে

সুমন চৌধুরী এর ছবি

কর্পোরেট রাক্ষসরা তো কৃষিকে গিলেই বসে আছে। ভুলে কখনো ধান-চালের উৎপাদন বেশী হলে দ্রুত নানান আবজাব দিয়ে আবার নশু পাগলাকে দিয়ে পানি মাপানো হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেই ফেলেছিলেন যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ হওয়া আমাদের মতো দেশের জন্য অনুচিত কারণ তাতে খাদ্যবাবদ সাহায্য আসে না।

কৃষিকে মুক্ত করতে গেলে যারা সামনে বাঁধা হিসেবে আসেন তাঁরাই ফি টার্ম সংসদে বসছেন। তাঁরাই আবার বড়মুরুব্বির ইশারায় গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে কুমিরের মতো কেঁদে ফেলছেন। আইয়ুব খানের আশি হাজার ফেরেশতা এখন কত লক্ষ ছাড়িয়েছে জানি না। এই ফেরেশতা খেদাতে যজ্ঞে বসা এখন জরুরি। কিন্তু এখন শালার শকুনও বাড়ন্ত।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

ফারুক ভাই, দরকারী লেখা। লেখার বিস্তৃতি অনেক - তবে আমার কিছু প্রশ্ন বিশেষত বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে। এই বিষয়ে আরো আগ্রহ কারন আমি 'না বলা কথা' ব্লগে কৃষিখাত নিয়ে একটা সিরিজ শুরু করেছিলাম - এখনো চলছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা যে অবশ্য কাম্য, এইটা সাইফুর রহমানের মত লোকও আশা করি বুঝতে পারবে।

প্রশ্নটা হলো মূলত তিনটা জিনিসকে ঘিরে - আমাদের জন-বিস্ফোরণ, সবুজ বিপ্লব আর উদ্বৃত্ত জনবল নিয়ে।

- আমাদের মত ছোট এবং জনবহুল দেশে সবুজ বিপ্লবের কি ভূমিকা থাকতে পারে? আমি যতদূর বুঝি সবুজ বিপ্লব একদিকে ফলন বাড়াতে সক্ষম কিন্তু অপরদিকে তার একটা বড় সড় labour-displacing effect থাকতে পারে। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে উচ্চ ফলনশীল বীজ সার সেচ ট্রাকটর - এসবের সাথে কৃষিখাতে বর্তমানে নিয়োজিত ৬০-৭০% জনবল কিভাবে সহবাস করতে পারবে?

আপনার মতামতের অপেক্ষায়।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমার কথা নিছক খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে নয়। ওটা বলার পেছনে কিছু পলেমিকাল কারণ ছিল। আমাদের এখানে নব্বই দশক থেকে বিশ্বব্যাংক-গং এর তরফে বলা হচ্ছিল যে, বাংলাদেশ যেহেতু ভারতের কাছ থেকে সস্তায় খাদ্য পেতে পারে তাই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার থেকে প্রবৃদ্ধিমুখী তথা রপ্তানীমুখী কৃষি দরকার। চিংড়ি-রাবার, ভূমির অকৃষি ব্যবহার ইত্যাদির প্রচলন তারই ফল। সুতরাং এর বিরোধিতা দরকার ছিল।
তারওপর খেয়াল করে দেখবেন আমি এমন একটি পত্রিকার জন্য লেখাটি লিখেছি যেখানে এ জাতীয় কথা আসে না এবং যার পাঠকদের বেশিভাগই লেম্যান। সুতরাং তথ্য ও যুক্তির প্রাথমিক পাঠ লেখায় আনার ব্যাপার ছিল এবং ছিল কৌশল, যাতে একে রাজনৈতিকভাবে চড়া সুরের লেখা মনে না হয়। সবচেয়ে বড় কথা, এ বিষয়ে আমি কতটা বুঝি? বাদবাকি অপূর্ণতা ওই অল্প বোঝার ফল।
আমাদের এখানে কৃষির ওপর শিল্প এবং শিল্পের ওপর তথ্যপ্রযুক্তি এরকম এক থাকবিন্যাস আছে। এর সমালোচনাও একটা বিষয় ছিল।
সবুজ বিপ্লব ও জিএমও কে এড়িয়ে আজ কিছু বলা সম্ভব নয়। আমার ঝোঁক মুনাফামুখী প্রযুক্তির বদলে উতপাদক ও প্রকৃতিবান্ধব প্রযুক্তির দিকে। কিন্তু মধ্যবিত্ত মহল নিজের মাপে সবাইকে মাপতে চায় যে! তারা মনে করে জমি ও কৃষককে দিয়ে যা খুশি তা করা যায়। সেকারণে এই চিন্তাকে সরাসরি মোকাবেলা না করে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছিলাম।
তবে আমার মত হচ্ছে, সবুজ বিপ্লব থেকে শুরু করে এখনকার হাইব্রিড প্রযুক্তির গুণগান যতটা প্রচার ততটা বাস্তব নয়। জমির উতপাদন বৃদ্ধি কেবল প্রযুক্তির জন্য হয় না। দ্বিতীয়ত এ বিষয়ে প্রকৃত তথ্য কম। এটা বলা যায় যে, সবুজ বিপ্লবের ফলে আর্সেনিক সহ যে পরিমাণ পরিবেশ দূষণ হয় তার মূল্য উচ্চফলনের সুবিধার থেকে বেশি। অন্যদিকে হাইব্রিড যে সবক্ষেত্রে পলন বেশি দেয় তাও প্রমাণিত নয়। এ বিষয়ে আজকে গ্লোবাল রিসার্চ ও বিডিনিউজ অনলাইনে দুটি নিবন্ধ আছে। বিষয়টা আমিও আরো বুঝে দেখতে চাই।

আমাদের মত ছোট এবং জনবহুল দেশে সবুজ বিপ্লবের কি ভূমিকা থাকতে পারে? আমি যতদূর বুঝি সবুজ বিপ্লব একদিকে ফলন বাড়াতে সক্ষম কিন্তু অপরদিকে তার একটা বড় সড় labour-displacing effect থাকতে পারে। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে উচ্চ ফলনশীল বীজ সার সেচ ট্রাকটর - এসবের সাথে কৃষিখাতে বর্তমানে নিয়োজিত ৬০-৭০% জনবল কিভাবে সহবাস করতে পারবে?

হ্যাঁ সেক্ষেত্রে কৃষিভিত্তিক শিল্প এবং উদ্বৃত্ত জনসম্পদ শিল্পে স্থানান্তরের ক্লাসিকাল পন্থা প্রচলিত। কিন্তু আমার অনুমান পারিবারিক কৃষি এবং গ্রামকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিণত করলে গ্রামেই অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। দ্বিতীয়ত দারিদ্র্যমুক্তির সঙ্গে সঙ্গে জনসংখ্যাও কমবে। কিংবা কিউবা বা ভারতের মতো তাদের প্রশিক্ষিত করে বিদেশে পাঠানো যায়। তবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। আমার মনে হয় আমাদের একটা প্যারাডাইম শিফট ঘটা দরকার।
তার আগে আপনার লেখাগুলো পড়তে হবে। আপনি নিশ্চিত আমাকে সহায়তা করতে পারবেন।
আচ্ছা, সিডস অব ডেস্ট্রাকশন বইটা দেখেছেন? আমি পাই নাই। জানার ইচ্ছা আছে।
আর জানিয়ে রাখি, ছিলাম সাহিত্যের লোক এখন সব বিষয়েরই হাতুড়ে বদ্যি। কী করা যাবে? অষুধ পাব কোথা!

;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

ফারুক ভাই, কৃষি বিষয়ে আমার লেখাগুলো এখানে পাবেন - একদম নীচের চারটে। আমি গুগল গ্রুপ্স-এর bdinvest গ্রুপেরও সদস্য। সেখানের কিছু লেখকের মন্তব্য যে বিশ্বব্যাপী কৃষিতে উৎপাদনের কোন কমতি নেই, বরং সমস্যা হলো সাপ্লাই-সাইডে এবং হালের মজুতদারীতে। আপনি একবার জ্যোতি ভাইয়ের লেখাগুলোও দেখে নিতে পারেন - উনি অস্ট্রেলিয়া নিবাসী, সরকারী ম্যাক্রো-ইকনমিস্ট - দেশীয় অর্থনীতি এবং কৃষি নিয়ে কিছু ভাল ভাল লেখা লিখেছেন এখানে এবং এখানে। ওনার আর আপনার মতের সিন্থেসিস/সংঘর্ষ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবো মনে হয়।

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ধন্যবাদ সুবিনয়। আপনার লেখাগুলো পড়ে আবার কথা বলবো।
;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

তানভীর এর ছবি

লেখাটা ভালো লাগল।

শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে কৃষিভিত্তিক দেশগুলোর বারোটা বাজিয়ে যাচ্ছে। আমি আগে জানতাম না আমেরিকার কৃষিখাত বিশাল ভর্তুকি দেয়ার কারণে পুরোটাই লসের ওপর চলে। এই লস তাদের গায়ে লাগে না, কারণ শিল্পের আয় দিয়ে তারা সেটা পুষিয়ে দিচ্ছে। উলটো রির্ভাস হিসেবে তারা যে ভর্তুকি দিয়ে বিশ্ববাজারে কৃষিপণ্যের দাম কম রাখছে, তাতে কৃষিভিত্তিক দেশগুলো আর নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারছে না। আপনি গরীব দেশের কৃষককে সরকারের সহায়তার কথা বলছেন। কিন্তু শিল্পোন্নত দেশগুলোর এজেন্ট বিশ্বব্যাংক/আইএমএফ গরীব দেশগুলোতে ঢুকে নানা প্যাঁচ কষে সরকারকে কৃষিতে ভর্তুকি দিতে সবসময় বাধা দেয় (উলটো যেখানে শিল্পোন্নত দেশগুলোরই যেখানে কৃষিতে কোন ভর্তুকির প্রয়োজন নেই সেখানে কিছু বলে না)। ফলে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও তারা কৃষককে সহায়তা করতে পারে না। এটা একটা বিশাল চক্র। এই চক্র ভাংতে হলে যেমন সরকার দরকার তেমন মানুষ কই বাংলাদেশে?

আমিও এ বিষয়ে হাতুড়ে বদ্যি। মন্তব্যটা তাই হয়ত হাতুড়ে মার্কা শোনালো।

=============
"আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম"

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমাদের সরকারগুলো নির্দিষ্ট কোনো উতপাদক শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করে না, করে অন্যদেশের উতপাদকের। আর গঠনগতভাবেই তারা কৃষকবিরোধী। এখানে আধুনিকতা শিক্ষা প্রগতির গতি সর্বদা কেন কৃষকরে ধ্বংসের ওপর দাঁড়ায়, তার সাংষ্কৃতিক ব্যাখ্যা এ ছাড়া আর কী?
আসলে বিষয়গুলো অত গুঢ় নয়, কিন্তু সেগুলো ঘটে চলে আমাদের আড়ালে (আমলাতান্ত্রিক যোগযোগ ও পুঁজির অদৃশ্য চলাচলে) বলে রহস্যময় ও দুর্বোধ্য মনে হয়।
;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।