কোনো বর্বরতাই মুক্তির সংকল্প দমাতে পারবে না : খালিদ মিশাল

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: মঙ্গল, ০৬/০১/২০০৯ - ৬:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আঠারোটি মাস আমার জনগণ ঘেরাও হয়ে আছে। তারা বন্দী, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারাগারে। তারা অবরুদ্ধ, স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে। তাদের খাদ্য কেড়ে নেওয়া হয়েছে, কেড়ে নেওয়া হয়েছে চিকিতসার উপায়। খাঁচাবন্দী প্রাণীর মতো তারা ধুঁকছে। বিনাশের এই ধীর কর্মসূচির পর এখন শুরু হয়েছে বোমাবর্ষণ। এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো কোনো কিছুই আস্ত রাখেনি, সরকারি ভবন থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি, হাসপাতাল থেকে মসজিদ, স্কুল থেকে বাজার_রেহাই পায়নি কিছুই। হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে, চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে আরও কয়েক হাজার। নিহতদের তিন ভাগের এক ভাগ নারী ও শিশু। কারও কারও পুরো পরিবারই বিনাশ হয়ে গেছে। অনেকেই মারা গেছে ঘুমের মধ্যে।

এই রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়া হয়েছে মিথ্যা ও শয়তানি অজুহাতে। আমাদের হামাস ছয় মাস অস্ত্রবিরতি পালন করেছে। কিন্তু ইসরায়েল গোড়া থেকেই বারবার তা লঙ্ঘন করেছে। শর্ত অনুযায়ী কথা ছিল গাজার পারাপারের সড়ক খুলে দেওয়া এবং পশ্চিম তীরকেও যুদ্ধবিরতির আওতায় আনা। তার বদলে গাজাকে তারা আরও সর্বনাশা অবরোধে চেপে ধরেছে, বারবার বিদ্যুত ও পানির সংযোগ কেটে দিয়েছে। আমাদের অজস্র নেতা-কর্মী তাদের গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে অজস্র নিরীহ মানুষ। ওই তথাকথিত যুদ্ধবিরতি চলার সময়ও ইসরায়েলিদের গুলি ও বোমায় ৩০ জন গাজাবাসী খুন হয়েছে, সরাসরি অবরোধের কারণে বিনা চিকিতসায় মরে গেছে কয়েক শ রোগী। বিনিময়ে ইসরায়েল উপভোগ করেছে শান্তি। আমার জনগণ মরেছে, তারপরও আমরা ইসরায়েলিদের শান্তিতে আঘাত করিনি।

বারবার ভঙ্গ করা সেই যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার আগে আগে তাদের জানানো হয়, গাজা ও রাফাহর সব সীমান্ত খুলে দেওয়া এবং অবরোধ তুলে নেওয়ার বিনিময়ে আরও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির জন্য আমরা প্রস্তুত। কিন্তু তাদের বধির কান সেই ডাক শোনেনি। তারপরও এখনো আমরা আগের ওইসব শর্তের সঙ্গে গাজা থেকে সব আগ্রাসী বাহিনী প্রত্যাহারের বিনিময়ে নতুন যুদ্ধবিরতিতে রাজি।

পশ্চিম তীর থেকে এ পর্যন্ত কোনো রকেটই ছোড়া হয়নি। কিন্তু গত বছর সেখানেও ইসরায়েলিদের হাতে ৫০ জন নিহত হয়, আহত হয় শত শত। ইসরায়েল এক মুহূর্তের জন্য তার আগ্রাসন ও ভূমি দখল কর্মসূচি থামায়নি। অথচ আমাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে আমার দেশের সামান্য ছেঁড়াখোঁড়া অংশ; চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা পরস্পর থেকে আলাদা কয়েকটি ঘিঞ্জি বসতি। আমাদের রাখা হয়েছে ইসরায়েলের কৃপাপ্রার্থী অবস্থায়। সত্য এই, ইসরায়েল একতরফা যুদ্ধবিরতি চায়। অবরোধ, অনাহার, বোমাবর্ষণ, গুপ্তহত্যা, আগ্রাসন এবং ঔপনিবেশিক বসতি স্থাপনের পরও তারা চায় ফিলিস্তিনিদের অস্ত্র সমর্পণ। চায় আমরা নীরবে মরে যাব, কিন্তু প্রতিবাদ করব না। ইসরায়েল যা চায় তার অর্থ, বিনা চিতকারে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া।

তাই আমাদের প্রতিরোধ থামাতে বলার মতো উদ্ভট যুক্তি আর হয় না। দুনিয়ার ভয়ঙ্করতম অস্ত্রে সজ্জিত, গণহত্যায় সিদ্ধহস্ত ঐ মৃত্যুর মেশিনের বিরুদ্ধে কি তাদের কোনো কথা নেই? তারা আগ্রাসী ও দখলদারকে বলছে নির্দোষ আর বন্দী, নির্যাতিত ও দখলদারির শিকারকে বলছে অপরাধী! আমাদের ঘরে বানানো রকেটগুলো আর কিছু নয়, দুনিয়ার কাছে আমাদের ফরিয়াদ। যাতে তারা শুনতে পায় যে, আমরা আছি এবং আমরা মরে যাইনি। ইসরায়েল ও তার আমেরিকান ও ইওরোপীয় শক্তিদাতারা চাইছে, আমরা মরব কিন্তু আওয়াজ করব না। আমরা বলছি, আমরা মরব তবু নীরব হব না।

গাজা আজ যে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে, আরও আগে ইয়াসির আরাফাতকেও তা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। ইসরায়েলের নির্দেশ মানতে নারাজ হলে তাঁকে রামাল্লায় তাঁর সদর দপ্তরে বন্দী করে রাখা হয়। দুটি বছর ইসরায়েলি ট্যাংক তাঁকে ঘিরে রাখে। তার পরও যখন তিনি নত হলেন না, তাঁকে বিষ খাইয়ে খুন করা হলো।

আমাদের কাছে ২০০৯ সাল এসেছে ২০০৮ সালের মতো করেই; ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের মধ্যে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিমান হামলায় গাজায় ১৪০ জন নিহত হয়। তারপর লেবাননে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঠিক আগে হাজার হাজার বোমা বর্ষণ করে গাজার মাটি তছনছ করে দেয় ইসরায়েল। মারা যায় ২৪০ জন। ১৯৪৮ সালের দায়ের ইয়াসিন থেকে শুরু করে আজকের গাজা পর্যন্ত ইসরায়েলের অপরাধের খতিয়ান দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। তাদের অছিলা বদলেছে, কিন্তু বাস্তবতা থেকেছে একই রকম: সাম্রাজ্যবাদী দখলদারি, দমন-পীড়ন আর অন্তহীন অত্যাচার-অবিচার। এটাই যদি হয় ইসরায়েলের ফেরি করা মুক্ত বিশ্বের তরিকা, তারা যদি হয় এই মূল্যবোধেরই পাহারাদার, যেমনটা তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিপি লিভনি দাবি করেন, তাহলে বলব, আমরা এর পরোয়া করি না।

ইসরায়েলি নেতারা তাদের সংশয়ের ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। এবারের আক্রমণের পরিষ্কার ল্ক্ষ্য এখনও তারা স্থির করতে পারেনি। তারা কি বৈধভাবে নির্বাচিত ফিলিস্তিনি সরকার ও এর অবকাঠামো উচ্ছেদ করতে চায়, নাকি চায় রকেট আক্রমণ থামাতে? গাজার প্রতিরোধ থামানোয় তাদের ব্যর্থতা প্রমাণিত। এখন বলছে হামাসকে দুর্বল করে প্রতিরোধ সংগ্রামকে কাবু করার কথা। কোনোটিই তারা অর্জন করতে পারবে না। গাজাবাসী আগের যেকোনো সময়ের থেকে একতাবদ্ধ। মৃত্যুর মুখেও তারা নতজানু হতে রাজি নয়। স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের অস্ত্রে সজ্জিত আমাদের যোদ্ধারা ইতিমধ্যে দখলদার বাহিনীর অনেক ক্ষতিসাধন করেছে। মাতৃভূমি ও জনগণকে রক্ষায় তারা মরণপণ লড়বে। কোনো কিছুই আমাদের মুক্তির সংকল্প দমাতে পারবে না।

এবং বরাবরের মতোই, আমেরিকা ও ইউরোপ দখলদারকে, কারাপ্রভুকে, আগ্রাসীকে শক্তি ও সমর্থন দেয়ার পথ বেছে নিয়েছে। যারা এর শিকার শতমুখে তাদের নিন্দা করাই তাদের একমাত্র কাজ। আমরা আশা করেছিলাম বারাক ওবামা বোধহয় জর্জ বুশের ধ্বংসাত্মক উত্তরাধিকার ত্যাগ করবেন। কিন্তু তাঁর শুরুটাই হতাশাজনক। মুম্বাই আক্রমণের নিন্দা করতে তাঁর এক মুহূর্তও দেরি হলো না, কিন্তু গাজায় ইসরায়েলিদের কসাইখানা চালু করবার দশ দিনের মাথাতেও তাঁর জবান বন্ধ। কিন্তু আমার জনগণ নিঃসঙ্গ নই। কোটি কোটি মুক্তিকামী নারী ও পুরুষ ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের সাথী। হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন ইসরায়েলের বর্বরতার প্রতিবাদে রাজপথে নামছেন। তাঁরা কেবল আরব নন, নন কেবল মুসলিম, তাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন জাতির বিভিন্ন ধর্মের মানুষ।

কোনো সন্দেহ নেই, গাজায় ইসরায়েল দোজখের চরম রূপ দেখিয়ে ছাড়বে। অবর্ণনীয় হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংস সইতে হবে আমাদের। কিন্তু লেবাননে তাদের যে পরিণতি হয়েছিল, এখানেও তাই হবে। অবরোধ, বোমাবর্ষণ আমাদের কাবু করতে পারবে না। দখলদারদের কাছে আমরা কখনোই আত্মসমর্পণ করবো না। কখনোই না।

খালিদ মিশাল: ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান।
ব্রিটেনের দি গার্ডিয়ান থেকে অনূদীত।

গাজায় অপ্রচলিত অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে নরওয়েজিয় চিকিতসকের সাক্ষাতকার

ফিলিস্তিনী নেতা ও ইসরায়েলি মন্ত্রীর বিতর্ক

গাজা: একটি পূর্বঘোষিত গণহত্যার বধ্যভূমি


মন্তব্য

অবনীল এর ছবি

নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। ওবামার নির্লিপ্ততা সম্পর্কে অবশ্য একটা গ্রহনযোগ্য বিশ্লেষন পেলাম এখানে

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

পড়লাম। ধন্যবাদ। ব্যাখ্যাটা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়, কেন নয় তা গাজা নিয়ে আমার আগের লেখায় বলেছি।
এই অংশটুকু চোখে ধরলো: রয়টার/বিবিসি/ আল জাজিরা ইংলিশ যে কী পরিমাণ পক্ষপাতপূর্ণ তা এ দিয়ে বোঝা যায়। তারা লিখেছে,
The Palestinian death toll in nine days of Israeli attacks has risen to more than 500. Hamas, which ended a six-month ceasefire, has fired rockets deeper into Israel than ever before, hitting major cities and killing four Israelis.

অথচ এটা সত্য নয়। একদিকে মিথ্যা প্রচারণা দিয়ে ফিলিস্তিনী নের্তৃত্বকে অপরাধী বলে দেখানো অন্যদিকে তাদের শিশুদের জন্য মায়াকান্না করা, এই তো পাশ্চাত্য বিবেকের শেষ সীমা। তার দৈর্ঘ্য আমার জুতার ফিতার থেকে দেখি বেশি নয়!!!

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

বুশের বক্তব্য এতই উদ্ধত এবং পক্ষপাতপূর্ণ যে শুনলে অসুস্থ হয়ে পড়ার মতো একটা অনুভূতি হয়! বুশ বলেছে - আমেরিকা যাকে টেররিস্ট গ্রুপ বলে মনে করে তাকেই আগে শান্তির বা সিযফায়ারের শর্ত মানতে হবে!!!!!

আর আমেরিকা কাকে টেররিস্ট গ্রুপ বলে মনে করে সেটা তো প্যালেস্টিনীয় পশুপাখিরাও জানে।

জাতিসংঘকে চাপ দেবার কথা বলছেন, জাতিসংঘের কথা আমেরিকা শোনে? দরকার হলেই তাদের 'আত্মরক্ষা' অথবা 'ওয়ার এগেইন্সট টেররজম' (এটা শুনলেও আজকাল ক্লান্ত হয়ে পড়ি) এর 'যুক্তি' আছে না?

ওবামারও একই পথের পথিক হবার কথা, তারপরও হলে দুঃখ পাবো। এখনও যে চুপ করে আছে, বুশের সাথে গলা মিলিয়ে ফেলেনি এটাই আমার কাছে আশার কথা।

ইসসসস, কোনভাবে যদি এই ভদ্রলোক একটু অন্যরকম, একটু কম ব্যবসায়ী, আর একটু মানবিক হন .........

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

খালিদ মিশালের এই লেখাটাকে কেমন লাগলো, তা জানতে চাই।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

লেখাটা কেমন লাগলো? বলা উচিত আমি লেখাটা 'বুঝতে পারলাম'। আমি গাযায় বসবাস করা একজন ফিলিস্তিনী হলে, আমিও ঠিক এই কথাগুলোই বলতাম! এবং পরিস্থিতি এরকম হলে এভাবেই রকেট ছুঁড়তাম! আজকে বাংলাদেশ স্বাধীন না হয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যদি প্যালেস্টাইনের মতো নিরন্তর সংগ্রামে লিপ্ত থাকতো, তাহলে আমি হয়তো আরো আগেই বুঝতে পারতাম !!

আপনাকে আগেই বলেছি, সাম্প্রতিক এই দীর্ঘ অবরোধের কথা আমি জানতাম না (আমারই অজ্ঞতা)। আপনার লেখা পড়ে আর মুক্তাঙ্গন নির্মাণ ব্লগে আহমেদ মুনিরের লেখাটা পড়ে আমার মনে হচ্ছে - আমরা যে এতসব সাহিত্য, কি গণতন্ত্র, কি লেখালেখি, কি মানবাধিকার এসব নিয়ে মাথা ঘামাই - এগুলো নিছক সময়ের অপচয়। খুব, খুব হতাশ লাগছে!!!

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ওই প্রশ্নটা আমি করেছি অন্য কারণে, খালিদ মিশাল অনেকের চোখে একজন মৌলবাদী। আমি মনে করি তিনি একজন মুসলিম জাতীয়তাবাদী, এইটা লিখবার জন্য যে মনের জোর লাগে, যে মতাদর্শিক স্বচ্ছতা লাগে তা তাঁর আছে। এটাই শেয়ার করতে চাইছিলাম।

একদম ঠিক কথা বলেছেন,
'আমরা যে এতসব সাহিত্য, কি গণতন্ত্র, কি লেখালেখি, কি মানবাধিকার এসব নিয়ে মাথা ঘামাই - এগুলো নিছক সময়ের অপচয়।''
তবে অপচয় নয়, এসবের ঘোরেই তো আমাদের আত্মরতি চলছে। আমাদের এক কবির একটা বইয়ের নাম আত্মরতির খুন। আমরা নিজেদের এভাবে আত্মরতির খুন করে ফেলছি বোধ হয়।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

খালেদ মিশালকে চরমপন্থী ভাববার অবকাশ আছে, বিশেষ করে কেউ যদি প্যালেস্টাইনের সন্ধিশর্ত মেনে নেয়ার পক্ষপাতী হয়। কিন্তু, ওই যে বললাম - আমি নিজে যেহেতু অবরুদ্ধ জীবন কাটাচ্ছি না আমিও তাই মাঝে মাঝে মনে করি, এতসব প্রাণ না হারিয়ে, হিংস্রতা আর না বাড়িয়ে একটা আপোষে আসলেই তো হয়।

খালেদ মিশাল বা তার মতো আরো যাঁরা ঐ বাস্তবতায় বাস করেন (যদিও তিঁনি থাকেন না সেখানে), তাঁরা অন্যচোখে তো দেখবেনই।

আপোষকামী বা প্রতিক্রিয়াশীল কি আমেরিকার দালালের মতো শোনাতে পারে, তাও বলছি - এই অসম লড়াইয়ে 'জেতার' তো কোন সম্ভাবনা দেখি না। হ্যা, আত্মসম্মান বজায় রেখে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ করা হচ্ছে, অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার করা হচ্ছে না - সবই ঠিক। কিন্তু, এই এরকম জীবনের অপচয় (যারা গেলো, তাদের প্রিয়জনেরা বোঝে, তা সে যা 'কারণেই' হোক এই চলে যাওয়া) এটা থামানোর কোন উপায় কি নেই? হামাস নিরুপায় বুঝি, কিন্তু আর কি কোন উপায়ই নেই?

আমরা কি করতে পারি একটু বলেন তো?

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

প্রিয় স্নিগ্ধা,
এই মুহূর্তে আমার পাগল পাগল লাগছে। ৩/৪ প্রায় ঘুমাইনি। লিখছি বিভিন্ন দরকারি জিনিষ আর দৌড়াচ্ছি। এখনও বেরতে হবে, টানা প্রতিবাদ কর্মসূচি আছে। জিনিষটা তো হুজুরওয়ালাদের একচেটিয়া অধিকারে রাখা যায় না!
তাই আপনার কথার উত্তর এক কথায় দিতে পারছি না। করাটা অনেক কঠিন, কিন্তু কঠিনেরে কি ভালবাসবেন? এই পরিস্থিতিতে যে কোনো কিছু করা মানেই নিজেকে চরমে টেনে নিয়ে যাওয়া।
আমি হতাশ নই। মাহমুদ দারবিশ লিখেছিলেন,
আমরা তাই করি, যা বেকারেরা করে,
আমরা তা-ই করি যা বন্দিরা করে
আমরা তাই করি যা যোদ্ধারা করে
আমরা ফলিয়ে যাই আশার আবাদ

আমিও তা-ই করার চেষ্টা করছি।

এখন যাই।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অবনীল এর ছবি

ফারুক ভাই, ড ম্যাডস গিলবার্টের সাক্ষাৎকারের কি আরো অংশ আছে। পূর্নাংগ লেখাটা কোথায় পাব?

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

www.globalresearch.ca

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

s-s এর ছবি

এইমাত্র চ্যানেল টেন দেখালো ছোট্ট বাচ্চাগুলিকে, কি অ সহায়, থরথর করে কাঁপছে একটি ছোট্ট মেয়ে,তার বছর দেড়েকের ভাইটি রক্তগঙ্গায় শুয়ে
কাতরাচ্ছে। আমি চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না। এবং তার পরপরই হামাস নেতার দম্ভোক্তি, অথবা ডেসপারেশন, যেহেতু ইসরাইয়েলিরা আমাদের বাচ্চাগুলোকে মেরেছে অতএব ওদের শিশুদের মারা এবার জায়েজ হলো আমাদের! সকালে দেখিয়েছে ছ'মাসের মৃত এক বাচ্চার দেহ প্যালেস্টাইনের পতাকা মুড়ে বাবা মা মিছিলে উঁচু করে ধরছে!এই বাচ্চারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম জুড়ে যে কুতসিত হত্যাযজ্ঞ দেখে যাচ্ছে, তাতে পৃথিবীর ওপর থেকে তাদের সব বিশ্বাস হারিয়ে যাবে নাতো'কি? একটি চার বছর বয়সী মেয়ে দেখালো কিছুই খেতে পারেনা, সব কাপড় চোপড় খাবার ইত্যাদি থেকে তার বোমার আর গ্যাসের গন্ধ আসে! চীৎকার করে শুধু গ্যাসের গন্ধ গ্যাসের গন্ধ বলে।

হাত পা ভাঙা, দুমড়ে যাওয়া বোমার আঘতে বিক্ষত, আমরা কি আমাদের পোষা প্রাণীদের প্রতিও এর থেকে একটু বেশি সদয় হই না?? জানোয়ার বলতেও কষ্ট লাগে, কারণ জানোয়ার এমন স্ট্র্যাটেজিক্যালি একটা পুরো জেনারেশন নিশ্চিহ্ন করে দেবার জন্য বেছে বেছে বাচ্চাদের এরকম কুতসিতভাবে মারেনা!

আমি কেঁদে কি করবো? কাকে বলবো? কে শুনবে? কে থামাবে????

ইজ গড অন হলিডে???

জীবন জীবন্ত হোক, তুচ্ছ অমরতা

ফাহিম এর ছবি

ইজ গড অন হলিডে???

এভরিডে ইজ আ হলিডে আপ দেয়ার ইন হ্যাভেন... ইট সিওর ইজ...

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

জিজ্ঞাসু এর ছবি

ইট ইজ লং সিন্স গড হেজ্ সিস্ড টু ইন্টারভিন।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

যুধিষ্ঠির এর ছবি

লেখাটা অনুবাদ করার জন্য ধন্যবাদ। এটার মূল সংস্করণটা এইমাত্র আমার আপাত অজ্ঞ মার্কিন সহকর্মীদের কাছে পাঠালাম। কোন কাজ হবে না, তবুও।

লেখাটা আর এই পরিস্থিতি নিয়ে কি আর মন্তব্য করবো। গভীর হতাশা।

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

আমরা যে এতসব সাহিত্য, কি গণতন্ত্র, কি লেখালেখি, কি মানবাধিকার এসব নিয়ে মাথা ঘামাই - এগুলো নিছক সময়ের অপচয়। খুব, খুব হতাশ লাগছে!!!

যতই বুশ-ওবামা-হার্পার-ব্রাউন-সার্কোজীর কথা শুনি ততই মাথাটা বিগড়ে যায়। যতই খবরের চ্যানেলে খবর দেখি -- তাদের ভন্ডামি দেখে মাথার চুল ছিড়ি। আবার আত্মরতিতে নিমগ্ন হই ।

শুধু ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর একটা আশা নিয়ে আত্মতৃপ্ত হই ---

কোটি কোটি মুক্তিকামী নারী ও পুরুষ ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের সাথী। হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন ইসরায়েলের বর্বরতার প্রতিবাদে রাজপথে নামছেন। -----দখলদারদের কাছে আমরা কখনোই আত্মসমর্পণ করবো না। কখনোই না।

দিগন্ত এর ছবি

আমি যা জানি মিশাল হামাসের নরমপন্থী নেতাদের মধ্যে একজন, যিনি ইসরায়েলের অস্ত্বিত্ব মেনে নিতে রাজি আছেন। এই বক্তব্যে সেরকম প্রতিফলনই পেলাম। আমি আগে ওনার সাক্ষাতকার দেখেছি, লাগিয়ে দিলাম এখানে।

সাক্ষাতকার দেখুন -


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ধন্যবাদ দিগন্ত। আলোচনার মধ্যে দিয়েই আমি আপনাকে বুঝতে পারছি। আপনার সহমর্মি প্রশ্ন-বিতর্ক-সংলাপের জন্য কৃতজ্ঞতা ও প্রীতি জানাচ্ছি।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দ্রোহী এর ছবি

লেখাটা সত্যিকারভাবে বুঝতে হলে আমাকে গাজায় বড় হওয়া ফিলিস্তিনী হতে হবে।

ফারুক হাসান এর ছবি

লেখাটা সত্যিকারভাবে বুঝতে হলে আমাকে গাজায় বড় হওয়া ফিলিস্তিনী হতে হবে।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

মোসাদের সফল গুপ্তচরবৃত্তির কৃতিত্ব। নাইন ইলেভেনের জন্ম। ইরাক যুদ্ধ। সাদ্দামের পতন। আজ ডিক্টেটর সাদ্দামের রেজিম বহাল থাকলে ইসরাইলে দুএকটা স্কাড ক্ষেপনাস্ত্র পড়লে এই একতরফা হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা সম্ভব হত না। আজকের এই জেনোসাইড অনেক পূর্বপরিকল্পিত, অনেক ঠাণ্ডা মাথার ধ্বংসযজ্ঞ বলেই মনে হচ্ছে।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

দিগন্ত এর ছবি

স্কাড এখন আর ইসরায়েলের মাটি ছুঁতে পারবে না। পৃথিবীর একমাত্র দেশ হিসাবে অ্যান্টি-মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম আছে ইজরায়েলের। সেজন্য রকেট ছাড়া আর বিশেষ কিছু ফেলার উপায় নেই।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

মুম্বাই হামলার সুবাদে ভারতেও সে ধরনের সিস্টেম বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে শুনেছি। আর এটার সরবরাহকারী সেই ইসরায়েল। আরব-আমেরিকার পর ইসরায়েলের সক্রিয়তার বড় ক্ষেত্র এখন উপমহাদেশ।

তবে, বর্জ্র্য আঁটুনি ফস্কা গেরো বলে যে কথাটা আছে সেটা ভিয়েতনাম ও লেবাননে প্রমাণ হয়েছে। এগুলো বাস্তবে প্রতিরোধকে দমাতে যদি নাও পারে, অস্ত্র ব্যবসাকে চাঙ্গা তো করছে? সেভিয়েতকে দেখিয়ে একসময় অস্ত্র বিক্রি চলতো। এখন চলছে মুসলিম জঙ্গিবাদকে দেখিয়ে। সেকারণেই জঙ্গিবাদকে তারাই রাখবে, অথবা স্বাধীনতা আন্দোলনকে জঙ্গিবাদী তকমা দিয়ে পরাশক্তির পরাক্ষমতাবান মিডিয়া দিয়ে তা প্রতিষ্ঠিত করবে।
নওমি ক্লেইন যথার্থই একে শক ক্যাপিটালিজম বলেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে ফিলিস্তিন হয়ে উঠেছে ইসরায়েলের সমর গবেষণা ও বাণিজ্যের জীবন্ত ল্যাবরেটরি। কোন অস্ত্র কাজ করবে, কোন অস্ত্র দিয়ে কীভাবে মারা যায়, বন্দিদের মুখ থেকে কীভাবে কথা বের করা যায়, কীভাবে তাদের মস্তিষ্ককে পাঠ করা যায়, ফিলিস্তিনীরা সেসব পরীক্ষার জীবন্ত গিনিপিগ।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

একজন [অতিথি] এর ছবি

তীব্র আত্মগ্লানি হয় কিছু লিখতে গেলে। ওই শিশুগুলির তো স্বাভাবিকভাবে বাঁচার অধিকার ছিলো। কি এগুলো? দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। মাঝে মাঝে মনে হয়, বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়-দুনিয়ার বাইরে থেকে এসে প্রবলশক্তির কোনো সভ্যতা এসে বিচার করলেই একমাত্র সত্যবিচার হতে পারে। এই দুনিয়া খুব একপেশে, মানুষ খুব নিষ্ঠুর, নির্বোধ।

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমার এক আমেরিকান বন্ধুর পাঠানো একটা লিঙ্ক দিলাম। যদিও শুরুতেই বলা আছে বর্তমান পরিস্থিতির যে ধরনের সমাধান সম্ভব/কাম্য তার মধ্যে 'প্রো-ইজরায়েলি' দৃষ্টিভঙ্গি একটি, তারপরও অনেক কথা আছে যা আমার পছন্দ হয়েছে।

একদম শেষে J street এর পিটিশনে যোগ দেয়ার একটা অপশনও আছে। এরা ওবামার সাথে কথা বলছে। আমি পিটিশনে সাইন করেছি। চাইলে অন্য কেউও করতে পারে -

http://tpmcafe.talkingpointsmemo.com/2009/01/05/five_comments_on_the_gaza_crisis_and_what_to_do/index.php

সম্পাদনাঃ J street একটি প্রো-ইজরায়েলি প্রতিষ্ঠান। অতএব, বুঝতেই পারছেন তাদের অবস্থান। কিন্তু, এরা গাযার ১৮ মাসব্যাপী অবরোধের কথা বলছে, ইজরায়েলের আসন্ন নির্বাচন আর রাজনীতির খেলার কথা বলছে এবং প্যালেস্টিনীয়দের অবস্থা মানবিক দৃষ্টিতে দেখার 'চেষ্টা' করছে বলে মনে হয়েছে, লেখাটা পড়ে। তবে, এদেরকে সমর্থন করার আগে নিজে চিন্তা করে দেখবেন। এরা যে ওবামার সাথে ইতোমধ্যেই কথা বলতে শুরু করেছে, এবং আমেরিকাকে চাপ দিচ্ছে ইন্টারভিন করার জন্য - আমি এটাকে সমর্থন করি।

আর এটাও দেখুন -
=http://windowintopalestine.blogspot.com/2008/02/petition-in-support-of-pro-palestinian.html

yokel এর ছবি

>> “রয়টার/বিবিসি/ আল জাজিরা ইংলিশ যে কী পরিমাণ পক্ষপাতপূর্ণ তা এ দিয়ে বোঝা যায়। তারা লিখেছে,
The Palestinian death toll in nine days of Israeli attacks has risen to more than 500. Hamas, which ended a six-month ceasefire, has fired rockets deeper into Israel than ever before, hitting major cities and killing four Israelis.”
ঠিক এই ব্যপারটাই আমি কাল ইকোনোমিস্টেই পড়লাম- এখন হামাস নাকি অনেক শক্তিশালী, আরো দূরপাল্লার রকেট ছুড়ছে ইসরায়েলি বিভিন্ন সিটি থেকে। ফারুক ভাই আপনি এটাকে মিথ্যাভাষণ বলছেন কোন তথ্যের ভিত্তিতে। তবে মিথ্যা হওয়াটা খুব অস্বাভাবিক আর নতুন কিছু নয়।

>> আপনার আগের লেখায় অনেকে অভিযোগ করলেন, ফিলিস্তিনিরা মুসলিম এই কারণে আপনি পক্ষপাতদুষ্ট লেখা লিখেছেন। আপনার লেখায় কতটা পক্ষপাত ছিল তা নির্ণয় করা আমার জন্য ব্যাপক গবেষণার বিষয়। দুঃখ তখনই লাগে, যখন অনেকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিরব থাকে শুধুমাত্র তারা মুসলিম/আরব হবার কারণেই। এই ব্লগে বিভিন্ন বিষয়ে সবসময় সরব কাউকে দেখলাম না আপনার লেখায় কোন কমেন্ট দিতে। সচলায়তনে আমরা অনেক সচল আমাদের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে। বিশ্বের অন্য এক প্রান্তে গত অর্ধ শতাব্দি জুড়ে যে ভয়াবহতম যুদ্ধাপরাধ আর মানবিক বিপর্যয় ঘটে যাচ্ছে তাতে আমরা ততটা সরব নই। ওবামার নির্লিপ্ততা নিয়ে আর কি বলব? কালকের কমেন্টই শুধু রিপিট করতে চাই- আমি ধর্ম, ইতিহাস বুঝি না, আমি বুঝি অসহায় সাধারণ মানুষ, শিশু হত্যা হচ্ছে নৃশংসভাবে।

>> পরিশেষে দ্রোহীর মতই বলতে ইচ্ছা করছে, লেখাটা সত্যিকারভাবে বুঝতে হলে আমাকে গাজায় বড় হওয়া ফিলিস্তিনী হতে হবে। আপনার অনুবাদ এবং সময়োপযোগী এই পোস্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। এতে পুরো চিত্রটার একটা সার সংক্ষেপ পাওয়া গেল।

সবজান্তা এর ছবি

এই ব্লগে বিভিন্ন বিষয়ে সবসময় সরব কাউকে দেখলাম না আপনার লেখায় কোন কমেন্ট দিতে। সচলায়তনে আমরা অনেক সচল আমাদের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে। বিশ্বের অন্য এক প্রান্তে গত অর্ধ শতাব্দি জুড়ে যে ভয়াবহতম যুদ্ধাপরাধ আর মানবিক বিপর্যয় ঘটে যাচ্ছে তাতে আমরা ততটা সরব নই।

এত সরলীকৃত মন্তব্য না করার অনুরোধ থাকলো। মন্তব্য না করা মানেই যে, বিষয়টিকে সমর্থন না করা, এ'রকম ভাবাটা যুক্তিযুক্ত নয়। ব্যক্তিগত ব্যস্ততা কিংবা অনেক কারণেই অনেক সময় অনেকের পক্ষে মন্তব্য করা সম্ভব হয় না। এছাড়া এ ধরণের করুণ, বেদনার্ত, হতাশাগ্রস্ত লেখাগুলিতে মন্তব্য করাও কিছুসময় কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ শুধু সমবেদনাজ্ঞাপক কিছু মন্তব্য ছাড়া আর সত্যিকার অর্থে আমাদের করার কিছুই থাকে না।

মন্তব্য না করা মানেই যে একমত না, এ ধরণের ভুল ধারণা নিয়ে অতীতেও সচলায়তনে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আশা করি, আপনি এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।


অলমিতি বিস্তারেণ

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এই লিংকে এই আগ্রাসনের তলার এবং পরের পরিস্থিতি আলোচনা করা হয়েছে। ওপেন ডেমোক্রেসিতে লিখেছেন সাংবাদিক পল রজারস: গাজা: হোপ আফটার অ্যাটাক

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

রয়টার/বিবিসির তথ্য নিয়ে সন্দেহ থাকতেই পারে, তবে আমার অভিযোগ সেটা নিয়ে ছিল না, আমি বলেছি তারা যে প্রেমিজে বিষয়টার বিশ্লেষণ দিচ্ছে, সেটা হলো হামাসই আগে যুদ্ধবিরতি ভেঙ্গেছে। এই অনুবাদ ও আগের লেখায় আমি সেটাই দেখাবার চেষ্টা করেছি যে, যদি আঠারো মাস আগে থেকে সর্বাত্মত অবরোধ জারি করা হয়, যদি নয় মাস আগেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া হয়ে থাকে, যদি ২০০১ সালেই এর বুনিয়াদি পরিকল্পনা করা হয়, তাহলে বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়, প্রিটেক্সটা তৈরি করা, উদ্দেশ্যটা আগেই নেয়া।

খালিদ মিশালের লেখাটাতেও দেখা যাচ্ছে:

এই রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়া হয়েছে মিথ্যা ও শয়তানি অজুহাতে। হামাস ছয় মাস অস্ত্রবিরতি পালন করেছে। কিন্তু ইসরায়েল গোড়া থেকেই বারবার তা লঙ্ঘন করেছে। শর্ত অনুযায়ী কথা ছিল গাজার পারাপারের সড়ক খুলে দেওয়া এবং পশ্চিম তীরকেও যুদ্ধবিরতির আওতায় আনা। তার বদলে গাজাকে তারা আরও সর্বনাশা অবরোধে চেপে ধরেছে, বারবার বিদ্যুত ও পানির সংযোগ কেটে দিয়েছে। আমাদের অজস্র নেতা-কর্মী তাদের গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে অজস্র নিরীহ মানুষ। ওই তথাকথিত যুদ্ধবিরতি চলার সময়ও ইসরায়েলিদের গুলি ও বোমায় ৩০ জন গাজাবাসী খুন হয়েছে, সরাসরি অবরোধের কারণে বিনা চিকিতসায় মরে গেছে কয়েক শ রোগী। বিনিময়ে ইসরায়েল উপভোগ করেছে শান্তি। আমার জনগণ মরেছে, তারপরও আমরা ইসরায়েলিদের শান্তিতে আঘাত করিনি। বারবার ভঙ্গ করা সেই যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার আগে আগে তাদের জানানো হয়, গাজা ও রাফাহর সব সীমান্ত খুলে দেওয়া এবং অবরোধ তুলে নেওয়ার বিনিময়ে আরও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির জন্য আমরা প্রস্তুত। কিন্তু তাদের বধির কান সেই ডাক শোনেনি। তারপরও এখনো আমরা আগের ওইসব শর্তের সঙ্গে গাজা থেকে সব আগ্রাসী বাহিনী প্রত্যাহারের বিনিময়ে নতুন যুদ্ধবিরতিতে রাজি।

পশ্চিম তীর থেকে এ পর্যন্ত কোনো রকেটই ছোড়া হয়নি। কিন্তু গত বছর সেখানেও ইসরায়েলিদের হাতে ৫০ জন নিহত হয়, আহত হয় শত শত। ইসরায়েল এক মুহূর্তের জন্য তার আগ্রাসন ও ভূমি দখল কর্মসূচি থামায়নি...ইসরায়েল যা চায় তার অর্থ, বিনা চিতকারে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া। ...তাই আমাদের প্রতিরোধ থামাতে বলার মতো উদ্ভট যুক্তি আর হয় না।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

তীরন্দাজ এর ছবি

ক'দিন আগে এখানকার এক জার্মান পত্রিকায় এক ইজরায়েলী সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাতকার প্রকাশ হয়েছে। এই সাংবাদিক ইজরায়েলী আগ্রাসনের বিপক্ষে ও সরকারের কঠিন সমালোচক। তার বক্তব্য, আসন্ন ভোটের আগে ক্ষমতাশীন দল তাদের অবস্থান ভালো করার জন্যেই এধরণের আগ্রাসী ভুমিকা গ্রহন করে। সাংবাদিকের কথানুযায়ী,
" প্রতি ৮০ জন মৃত প্যালেষ্টাইনির বিনিময়ে পার্লামেন্টে একটি করে আসন বাড়ে ক্ষমতাশীন দলের।"

গতকাল একটি স্কুলে বোমা ফেলার পক্ষে কারণ হিসেবে ওখান থেকে এবছর ইজরাইলে রকেট ছোড়া হয়েছে বলে প্রমান হিসেবে একটি ছবি দেখানো হয়। অথচ ছবিটি ২০০৭ সালের বলে প্রমাণিত হয়েছে।

খুব কষ্ট হয়! এতো অন্যায় আর এতো বেশী বর্বরতা, এতো এতো অসহায় মানুষের মরণ! খুব অসহায় মনে হয় নিজেকেও টিভিতে খবর শুনতে আর দেখতে ইচ্ছে করেনা আর!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অভিজিৎ এর ছবি

আমার প্রতিবাদ এখানে



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।