`আমি প্রচেষ্টা করিবো'

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন ফিরোজ জামান চৌধুরী [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১২/০৮/২০০৯ - ৭:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মধ্য এপ্রিলে বিজু উৎসব (উতসব) উপলক্ষে খাগড়াছড়ি যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। বিজু পার্বত্য জনপদের প্রধান উতসব। উতসবের নানা রঙের মধ্যেও একটি বিষয় খুব করে নজর কাড়ল, বিজু উতসবেও শিশুদের স্কুলে যেতে হয়েছে, ওদের বাবা-মাকে অফিসে করতে হয়েছে। পরীক্ষার মতো ভয়কাতুরে বিষয়েও ছাড় পায়নি অনেক পাহাড়ি শিশু। চৈত্র মাসের শেষ দুদিন এবং পয়লা বৈশাখ হচ্ছে পাহাড়ে বিজু উৎসব। (মারমারা ওদের ভাষায় বলে সংগ্রাই আর ত্রিপুরারা বলে বৈসু উৎসব। একই উতসবের ভিন্ন ভিন্ন নাম আর কি)।
মূল বিজু হচ্ছে শেষ চৈত্র। রাষ্ট্রের সব উতসবে সবাই ছুটি পায়, তবে কেন নিজেদের প্রধান উতসবে ছুটি পাবে না পাহাড়ি শিশুরা? ঈদ বা পূজার দিন কি কোনো বাঙালি শিশু স্কুলে যায়? শুধু প্রধান উতসবের ছুটিই নয়, পাহাড়ি শিশুরা আরও একটি ব্যাপারে চরম বৈষম্যের শিকার: তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
পাহাড়ি আদিবাসী শিশুরা ঘরে যে ভাষায় কথা বলে স্কুলে গিয়ে সে ভাষার দেখা পায় না। স্কুলকে ভিনদেশি ভুবন মনে হয়। পাঠ্যসূচিকে মনে হয় `দূরের শোনা গল্প'। তাদের হাতে তুলে দেওয়া বইতে নিজের চারপাশের পরিচিত কোনো কিছুর দেখা তারা পায় না। বইগুলো তাদের কাছে হয়ে ওঠে অচেনা সংস্কৃতির আধার; নিজের ভাষার কথাবার্তা নেই সেখানে, নেই সহপাঠী বন্ধুদের চেহারা।
বাংলাদেশে কমবেশি ৪৫টি আদিবাসী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বাস। এর মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে চাকমা, মারমা ত্রিপুরাসহ ১১টি আদিবাসী পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। রাষ্ট্রীয়ভাবে পার্বত্য অঞ্চলটি (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) `উপজাতি' বা আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তিতেও (খণ্ড ক, ধারা-১) এর উল্লেখ রয়েছে। পার্বত্য (শান্তি) চুক্তি অনুযায়ী পাহাড়ি শিশুদের মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে (পার্বত্য চুক্তি, খণ্ড: খ, ধারা: ৩৩-খ-২)। পার্বত্য চুক্তির এক যুগ পূর্তি হতে যাচ্ছে। ১৯৯৭ সালে যে শিশুর জন্ম হয়েছে, এখন তার বয়স ১২ বছর। নীতিনির্ধারকদের অবহেলায় ১২ বছরেও কেন পার্বত্য অঞ্চলের শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা নিশ্চিত করা গেল না, এ প্রশ্নের কী জবাব দেবে ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে থাকা বাঙালি শাসক দল? নিজের মাতৃভাষা রক্ষার জন্য যে বাঙালি লড়াই করেছে, তারাই কেন আবার নিজের দেশের অন্য ভাষাভাষীর মর্যাদা দিতে অনাগ্রহী? অনাদর আর অবহেলায় বাংলাদেশে অনেক ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের মাতৃভাষা হারিয়ে যেতে বসেছে।
শিক্ষর যাত্রাপথকে মসৃণ করতে হবে। শিশুশিক্ষার প্রধান বাহন হচ্ছে মাতৃভাষা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরুতেই মাতৃভাষা ব্যবহারের অন্যতম লক্ষ্য, শিশুকে নিজের ভাষায় বলতে ও বুঝতে সম করে তোলা। মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পেলে একজন শিশুকে নতুন ভাষা শেখার চাপ সইতে হয় না। সে সহজেই সবকিছু রপ্ত করতে পারে। মাতৃভাষায় যেটা সম্ভব, নতুন কোনো ভাষায় তা সম্ভব নয়। `নানান দেশের নানান ভাষা/বিনে স্বদেশী ভাষা, পুরে কি আশা'-মধ্যযুগের কবি রামনিধি গুপ্তের এই কথার আবেদন ও উপযোগিতা এখনো কি প্রাসঙ্গিক নয়?
একবারও কি আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিরা ভাবতে পারি, আমার শিশুটিকে ভিনদেশি অচেনা কোনো ভাষায় (ধরা যাক জাপানি, চীনা, জার্মান বা রুশ ভাষায়) ফুল পাখির নাম কিংবা ছড়া পড়তে হচ্ছে? নিশ্চয় নয়। নিজের সন্তানের জন্য যা সত্য, অন্যের জন্য তা কেন আমরা মানতে চাইব না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কথা তো বহুল উচ্চারিত `আগে চাই মাতৃভাষার গাঁথুনি, তারপর...'।
বৈসু-সাংগ্রাই-বিজু উপলক্ষে স্থানীয় একটি অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা ও বাংলায় চমতকার সব গান পরিবেশন করলেন মৌসুমী ত্রিপুরা। তিনি কমলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য ভাষায় যোগাযোগ যে একজন শিশুর জন্য কতটা পীড়াদায়ক হতে পারে, তা তা জানা গেল মৌসুমী ত্রিপুরার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার একটি গল্প থেকে। ``ক্লাসে আমি একটা ছড়া পড়াচ্ছিলাম। এক পাহাড়ি শিশু কাছে এসে বলল, `আমি প্রচেষ্টা করিবো'। চেষ্টা করবে তো ভালো কথা, করো। ছেলেটি আবার বলল, `প্রচেষ্টা করিবো'। বুঝলাম কোথাও সমস্যা হচ্ছে। বললাম, তোমার নিজের ভাষায় বলো। ছেলেটি ত্রিপুরা। ত্রিপুরাদের মাতৃভাষা অর্থাত ককবরক ভাষায় বলার পরে বুঝলাম `প্রচেষ্টা' নয়, ছেলেটি আসলে `প্রস্রাব' করতে চায়।"
স্কুলে এসব ছোটখাটো সমস্যার কথাও একজন পাহাড়ি শিশু ঠিকভাবে বলতে পারে না, কারণ সে তো বাড়িতে বাংলায় কথা বলে না, ফলে সে তখন স্কুলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কিছুদিন পরে সে স্কুল থেকে ঝরে পড়ে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ভাষাগত সমস্যার কারণে আদিবাসী শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে প্রায় ৬০ শতাংশ, যেখানে জাতীয়ভাবে ঝরে পড়ার হার ৩০ শতাংশ। শিক্ষার প্রধানতম মাধ্যম ভাষা। শিক্ষাজীবনের শুরুতে কোমলমতি শিশুদের দুর্বোধ্য ও অচেনা ভাষায় পড়াশোনা করতে হলে তা সহজে তাদের বোধগম্য হয় না। এতে করে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। তার মধ্যে স্কুলের প্রতি এক ধরনের অনীহা তৈরি হয়।
পার্বত্য জনপদের মানুষ নানাভাবে বৈষ্যমের শিকার। বৈষম্য আর পশ্চাতপদতার দেয়াল ভাঙতে পারে কেবল শিক্ষা। কিন্তু সেই শিক্ষার শুরুটা যদি হয় অন্য ভাষায়, তাহলে তাতে আনন্দ থাকে না, থাকে না সঠিক মনোযোগ।
পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা বিভাগ জেলা পরিষদের অধীনে। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সদস্য সানু মং মারমা বলেন, `জেলা পরিষদ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমটি হাতে নিয়েছে। মাতৃভাষায় শিক্ষা পদ্ধতি চালুর জন্য ইউএনডিপি জেলা পরিষদের মাধ্যমে সহায়তা করবে। খাগড়াছড়ির আদিবাসীদের প্রধান তিনটি ভাষাই (চাকমা-মারমা-ত্রিপুরা) সমৃদ্ধ। এখানে শিশুশিক্ষা বিস্তারে কাজ করা কঠিন কিছু নয়। আমরা আশাবাদী, মাতৃভাষায় শিশুশিক্ষার বিষয়টি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে।'
মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নভাবে দু-চারটি ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোগে অগ্রগতি হয়েছে ঠিকই, তবে তা অপ্রতুল। সরকারিভাবে বেশ কয়েকটি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি।
খাগড়াছড়ি উপজাতীয় কালচারাল ইনস্টিটিউট আয়োজিত বৈসু-সাংগ্রাই-বিজু উতসব শেষে কথা হয় খাগড়াছড়ি সংসদীয় এলাকার সাংসদ এবং অভ্যন্তরণ উদ্বাস্তুবিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান যতীন্দ্রলাল ত্রিপুরার সঙ্গে। তিনি বলেন, `আমরা তো কেবল সরকারে এলাম। এখনই সবকিছু গুছিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। আমাদের চেষ্টা থাকবে পার্বত্য শান্তিচুক্তির আলোকে পাহাড়ের সব সমস্যার সমাধান করার। আমাদের ইচ্ছা আছে, প্রাথমিক পর্যায়ে সবার জন্য স্ব স্ব ভাষায় শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা।'
স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে ১৯৯৭-এর পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে ততকালীন আওয়ামী লীগ সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সে কথারই প্রতিধ্বনি শুনলাম মাননীয় সাংসদের মুখে। আমরা আশায় রইলাম, তিনি ও তাঁর সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে আদিবাসী শিশুদের জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করে সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে।


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

ভালো লাগলো পড়ে! বিজু উৎসব নিয়ে আরেকটু বললে আরও ভালো লাগতো।

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ স্নিগ্ধা। বিজু উৎসব নিয়ে অন্য কোনো এক সময় লেখা যাবে।

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ভালো লাগল লেখাটা। সাথে কিছু ছবি থাকলে আরো ভালো লাগত। এর আগে আমাদের সচল বিপ্লবদা'র লেখায় বিজু উৎসবের কথা প্রথম পড়ছিলাম মনে হয়।

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ অতন্দ্র।

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভালো লাগলো...
ইচ্ছা ছিলো বিস্তারিত কথা বলবো এই নিয়ে। কিন্তু এখনি দৌড় দিতে হবে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে... মন খারাপ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ নজরুল।
আমি এ মাসের শেষে সুন্দরবন যেতে পারি।
আগে গেলে বাঘে খায়!!!

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

সবজান্তা এর ছবি

লেখাটা ভালো লেগেছে, তবে বিজু উৎসব নিয়ে আরো একটু বললে ভালো হত।

আরেকটা কথা, প্রতিটা প্যারাগ্রাফের পর একটা স্পেস দিতে পারেন। না হলে লেখা পড়তে কিছুটা কষ্ট হয়।


অলমিতি বিস্তারেণ

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ সবজান্তা। বিজু উৎসব নিয়ে ভবিষ্যতে লিখবো বলো আশা রাখি।

লেখার ক্ষেত্রে এরপর থেকে স্পেস দেবো। পরামর্শের জন্য ফের ধন্যবাদ।

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

তানবীরা এর ছবি

খুবই ইনফর্মেটিভ লেখা। কিন্তু আমি এতে দ্বিমত পোষন করছি। মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ করে শিশুটির ভবিষ্যত কি হবে? উচ্চতর শিক্ষালাভ কিংবা কর্মজীবন কোনটাই কি তার জন্য সহজ হবে?

আমরা যারা প্রবাসে আছি, আমাদের সবার বাচ্চারাই বিদেশীয় ভাষায় পড়াশোনা করছে, বাড়িতে বাংলা বাইরে অন্য ভাষা। তারা কিন্তু পড়াশোনায় খারাপ করছে না বরং দু চারটে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে উপমহাদেশের বেশীর ভাগ বাচ্চাই পড়াশোনায় এখানে প্রথম কাতারে আছে।

ইউরোপের নব্বইভাগ বাংলাদেশী বাচ্চা কয়েকটি ভাষায় কথা বলে। যেটা খোদ ইউরোপীয়ানদের থেকেও বেশী। ইউরোপীয়ান বাচ্চারা বলে তাদের মাতৃভাষা, ইংরেজী, আর দুটো বিদেশী ভাষা (তিনটে বিদেশী ভাষা জানা এখানে কমপালসারী) কিন্তু বাংলাদেশীরা তার সাথে বাংলা এবং হিন্দীতো বলছেই।

একটা কথা, আপনার লেখার ভাষাটা খুব অফিসিয়াল মনে হলো, আর একটু চলিত করলে মনে হয়, পড়তে আরো আরাম হতো। আশাকরি আমার মন্তব্যে আপনি রাগ করবেন না।

সচলে স্বাগতম।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ তানবীরা আপনার চমঃকার মন্তব্যের জন্য।
ইউরোপের বাস্তবতা আর বাংলাদেশের বাস্তবতা এক নয়। আমাদের দেশের পাহাড়ে দারিদ্র এবং অপ্রতুল যোগাযোগব্যবস্থা সবচেয়ে বড় সমস্যা। তাই প্রাথমিক শিক্ষাটা মাতৃভাষায় না হলে শিশুরা ঝরে যাচ্ছে। স্কুলে আগ্রহ ধরে রাখতে পারছেনা।
আমার লেখায় দেখুন `ভাষাগত সমস্যার কারণে আদিবাসী শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে প্রায় ৬০ শতাংশ, যেখানে জাতীয়ভাবে ঝরে পড়ার হার ৩০ শতাংশ।'

আপনি লিখেছেন `ইউরোপীয়ান বাচ্চারা বলে তাদের মাতৃভাষা, ইংরেজী, আর দুটো বিদেশী ভাষা'
আপনার সাথে এ বিষয়ে আমি একমত যে, কর্মজীবনের জন্য তাকে ইংরেজি শিখতে হবে। প্রয়োজনে তাকে অন্য বিদেশী ভাষা শিখতে হবে। তানবীরা, ভুলে যাবেন না, বাংলা তার কাছেও (এক রকম) বিদেশি ভাষা। বাংলাকে জোর করে (তাদের) মাতৃভাষা বলে চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে কি?

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

তানবীরা এর ছবি

বাংলাদেশের অ-নাদিবাসী দরিদ্র শিশুরাও বিনামূল্যে মাতৃভাষায় শিক্ষা পাওয়া সত্বেও অনেকেই ঝরে পড়ছে। সেই সমস্যা হয়তো ভাষায় না, অন্য জায়গায়। আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বাংলাদেশের সবার শিক্ষা ব্যবস্থা ইংরেজিতে হলে উচ্চতর শিক্ষা এবং কর্মজীবন অনেক আরামদায়ক হতো। মাতৃভাষায় শিক্ষা নিয়ে উন্নতি করার মতো পরিবেশে এখনো আমাদের দেশ পৌঁছতে পারেনি।

জোর করে কোন কিছু চাপাচাপির আসলে দরকার হয় না। বাসায় সারাক্ষন বাংলা শুনে একটা বাচ্চার বাংলা না বলতে পারার কোন কারণতো নেই। আমরাইতো হিন্দী সিরিয়াল দেখে দেখে বাংলাদেশে প্রায় সব্বাই হিন্দি বলি, কি বলি না ?

আর আজকালকার বাচ্চারা অনেক বেশি ক্যাপাসিটি নিয়েই জন্মায়। তিন বছর বয়স থেকে কম্পিউটার, গেমস, প্লে ষ্টেশন, নিটেনডো খেলছে। সুতরাং ভাষায় ব্যাপারটা ঠিক তখন আর তাদের জন্য ততো বড় কিছু থাকে না।

আমার কাছে এগুলোকে অনেক বেশি আবেগের কথা মনে হয় অনেকসময় যুক্তির কথা নয়।

ভালো থাকবেন।

---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

লেখা ভালো লেগেছে। নিজের দেখা অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন বলে ধন্যবাদ।
কয়েকদিন আগে সচলে আদিবাসী শিশু শিক্ষা প্রসঙ্গে একটি লেখা এসেছিল। সেটারও মূল প্রতিপাদ্য ছিল আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দান প্রসঙ্গে।

..................................................................

ঐ যে হাঁটছি মুদ্রা দোষে নাকটা ঘষে
আড্ডা মানেই সেকেণ্ড হাফে খেলছি সোলো
গুজবো না শার্ট আমার পাড়া স্মার্ট পেরিয়ে
সে রোদ্দুরের স্মরণ সভাও লিখতে হল

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ পান্থ। তন্দ্রা চাকমার লেখাটা পাঠানোর জন্য।

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

ভুতুম এর ছবি

নিজের মাতৃভাষা রক্ষার জন্য যে বাঙালি লড়াই করেছে, তারাই কেন আবার নিজের দেশের অন্য ভাষাভাষীর মর্যাদা দিতে অনাগ্রহী?

ঠিক বলেছেন। মাতৃভাষায় শিক্ষা না পেলে এইসব শিশুরা কখনোই শিক্ষার প্রতি আকর্ষণ বোধ করবে না। এ বিষয়টি ম্যাস মিডিয়ায় উঠে আসা দরকার ব্যাপক ভাবে।

ভালো একটি লেখার জন্য ধন্যবাদ।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ ভুতুম।

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

তারেক মাহমুদ [অতিথি] এর ছবি

@ তানবীরা: আপনি বলেছেন-"মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ করে শিশুটির ভবিষ্যত কি হবে? উচ্চতর শিক্ষালাভ কিংবা কর্মজীবন কোনটাই কি তার জন্য সহজ হবে?" সত্যিই কি তাই? আমরা যারা এদেশে পড়েছি তাদের উচ্চতর শিক্ষালাভ কিংবা কর্মজীবন কোনটাই হবেনা? খুবই চিন্তার বিষয়। তাহলেতো আমাদের বাচ্চাদের বাংলা শিক্ষা বন্ধ করা দরকার। না কি বলেন?
ভুলে যাবেননা আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি, প্রান দিয়েছি। তাই আমি মনে করি অন্যের ভাষার প্রতি আমাদের আরও শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। আপনি যে তথাকথিত সভ্য দেশে বাস করেন তাদের অনেকের নিজস্ব ভাষা নেই। ভাষার কষ্টটা তারা ভালো বোঝে। তাই যাদের মাতৃভাষা আছে তাদের শুরুটা কেন মাতৃভাষা দিয়ে হবেনা?
আর উচ্চশিক্ষা? বাংলা মিডিয়ামে পড়া অনেকেই তো বিদেশে গিয়ে ভালো করছে। এটা আপনার মত পরবাশীদের কাছেই শুনেছি। আমি এবং আমার স্ত্রী দুজনেই গন্ডগ্রামে বড় হয়েছি । কই উচ্চতর শিক্ষালাভ কিংবা কর্মজীবন কোনটাতেইতো সমস্যা হয়নি।

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ তারেক। আমার ব্লগে আসার জন্য।

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।