আদিবাসী শিশু শিক্ষা প্রসঙ্গে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৫/০৭/২০০৯ - ১১:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

-তন্দ্রা চাকমা-

বাংলাদেশে ৪৫টি আদিবাসীর বসবাস । তারমধ্যে ১১ টি ভাষাভাষী আদিবাসী গোষ্ঠী বসবাস করে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলায় । এই ১১ জাতি গোষ্ঠীর প্রত্যেকেরই আলাদা মাতৃভাষা আছে ।

কিন্তু সরকারী অবকাঠামোয় মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের সুযোগ এই আদিবাসী শিশুদের নেই । যারা সৌভাগ্যক্রমে স্কুলে ভর্তি হয় তাদের সরকারী কারিকুলাম এবং বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করতে হয় । হঠাৎ করে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে ও কেন ? ঐ কারিকুলামে তো অনেক চাকমা ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠি লেখাপড়া শিখছে । আমি তন্দ্রা চাকমা ও কিন্তু ঐ কারিকুলামে শিখেছি ও বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ শেষ করেছি । তাহলে মাতৃভাষা কেন ?

তাহলে মাতৃভাষা কেন বললে প্রথমে বলতে হয় আমার অভিজ্ঞতার কথা । আমি জ্ঞান হওয়ার পর যে ভাষায় কথা বলতাম, সেটি হচ্ছে চাকমা । কিšতু বাবা মা যখন আমার হাতেখড়ি দেওয়ার জন্য যে সব বই কিনে এনেছিল, আশ্বর্যজনকভাবে আবিস্কার করলাম, সেগুলো বাংলাভাষায় । আমার মনে আছে যখন বাংলা বর্ণমালা জানলাম, শব্দ ও বাক্য শিখলাম, তখন আমি কিন্তু প্রত্যেকটি শব্দ বাংলায় পড়ে আমি আগে আমার ভাষায় মনে মনে বুঝে নিতাম ও পরে বাংলা মমার্থ বুঝতাম যা আমার বাঙালী সহপাঠীর করতে হতো না । এটা যে কি অসুবিধা এটা কাউকে কখনো বলতে পারিনি ।

পরে পাঠ্যবই এর বাইরে অন্যান্য অনেক বই পড়ার কারনে বাংলায় আমার দখল চলে আসে । কিন্তু এ সুযোগ কত জন পায় । ভাবুন তো থানছি উপজেলার সেই ছোট্ট ম্রো ছেলেটির কথা, যে প্রথমে শেখে ম্রো ভাষা, পরবর্তীতে টিকে থাকার জন্য মারমা, এরপর বাংলা ইত্যাদি, তাকে একসাথে তিন ভাষায় অনুবাদ করে বুঝতে হয় ।

আপনারা হয়তো খেয়াল করবেন, বিভিন্ন ট্রেনিং ও মিটিংয়ে আদিবাসী অংশগ্রহণকারীরা কম কথা বলে । তারমানে এই নয় তারা বোকা । তারা সবাই ভালো বোঝে কিন্তু বাংলাভাষায় যারা কথা বলে তাদের মত ভোকাল নয় । কারণ উপরে বর্ণিত আমার মত অবস্থা । তর্কের খাতিরে অনেকে হয়তো ভিন্নমত পোষণ করবেন, কিন্তু এটা সঠিক ।

আমি দীর্ঘ সাতবছর শিক্ষকতা করেছি এবং পার্বত্যচট্টগ্রামের বিভিন্ন ভাষাভাষী ছাত্র পড়িয়েছি । ওই সময় থেকে এ বিষয়গুলো বুঝতে পারতাম । আমার মনে আছে আমার এক ছাত্র সে ছিল ম্রো । সব শিক্ষকরা তাকে বোকা বলত কারণ সে কম কথা বলতো ও পারতো কম । কিন্তু তাকে তো দোষ দিয়ে লাভ নেই । এ সমস্যা সমাধানের জন্য হাইস্কুলে পড়ে, চাকমা ও বাংলা ভাষা বোঝে এমন একজন ম্রো ছাত্রের শরণাপন্ন হতে বোঝা গেল ক্লাসে যা পড়ানো হচ্ছে তার বুঝতে অসুবিধা হচেছ । পরবর্তীতে ঐ সিনিয়র ছাত্রের সহযোগিতায় বাংলা রপ্ত করতে শিখে ভালো ছাত্রে পরিণত হয় । তার ভালো ছাত্রে পরিণত হওয়ার পিছনে যে বিষয়টি কাজ করেছে সেটি হচ্ছে ক্লাসের পড়ার বিষয় তার মাতৃভাষায় বুঝিয়ে দিত ঐ সিনিয়র ছাত্রটি । পরবর্তীতে সে বাংলা এবং চাকমা এ দুটো ভাষা খুব তাড়াতাড়ি রপ্ত করল ।

উপরে বর্ণিত কারনে পার্বত্য চট্টম্রামে আদিবাসী শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার জাতীয় হার থেকে অনেক বেশী । এখানে ৬০ শতাংশের ও বেশী শিশু একেবারেই প্রাথমিক স্তরেই স্কুল ছেড়ে দেয় ।

বাংলাদেশ সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে ’সবার জন্য শিক্ষা’ ( ই এফ এ) কার্যক্রম বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ । এই কার্যক্রমের লক্ষ্য হলো প্রত্যেকটি শিশুর জন্য সম্পুর্ন অবৈতনিক, বাধ্যতামূলক ও মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষায় সুযোগ নিশ্চিত করা, সুযোগ নিশ্চিত করা, সহজ কথায় এর তাৎপর্য হলো .......শিশুর শারীরিক, মেধাগত, সামাজিক, মানসিক, ভাষাগত কিংবা অন্যান্য দিক নির্বিশেষে সব শিশুকেই স্কুলে ভর্তির সুযোগ দিতে হবে । এরমধ্যে অর্ন্তভুক্ত রয়েছে প্রতিবন্ধী ও প্রতিভাবান শিশু, পথশিশু ও কর্মজীবি শিশু, প্রত্যন্ত অঞ্চলের কিংবা ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্টীর শিশু, ভিন্ন ভাষাভাষী, জাতিসত্তা কিংবা সাংস্কৃতিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী।

দি সালামানাকা ষ্টেটমেন্ট এন্ড ফ্রেমওয়ার্ক ফর একশন, ১৯৯৪, ডাকার সম্মেলন । ’
আদিবাসী এলাকার শিক্ষা মাধ্যমে ব্যবহৃত ভাষার সাথে ইএফএ-র লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে যে নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে তা ইতোমধ্যেই ইউনেস্কো, ইউনিসেফ ও বিশ্বব্যাংক কর্তৃক আšর্তজাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে ।

ইউনেস্কো ২০০৩ ( পজিশন পেপার, প্যারিস ডকুমেন্ট এর ১৪ পাতা ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যাদের মাতৃভাষা জাতীয় বা স্থানীয় ভাষা থেকে ভিন্ন তারা শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেকটা সুবিধাবঞ্চিত থাকে । বাংলাদেশের আদিবাসী শিশুর ক্ষেত্রে এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই ।

আবার ফিরে আসি সেই ম্রো শিশুটির কথায় সে যখন স্কুলে পড়তে আসে তখন তার মাতৃভাষা নয় এমন ভাষা পড়ে, তাছাড়া তাকে এমন শব্দ ও বাক্য পড়তে হয় যা তার পারিপাশ্বিক অবস্থার সাথে সম্পর্কিত নয় ।

একজন শিশু শিখতে পছন্দ করে জানা বিষয় থেকে অজানা বিষয়ে সম্পর্ক স্থাপন করে । এ মতামত শিক্ষাবিদদের । এখানে আমি ম্রো শিশুদের উদাহরণ দিয়েছি, কিন্তু এই উদাহরণ বাংলাদেশের প্রত্যেকটি আদিবাসী শিশুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ।

এ ব্যাপারে আমি উল্লেখ করতে চাই গত ১৩ই মে ২০০৯ সালে মাতৃভাষায় আদিবাসী শিশুদের মৌলিক শিক্ষা সেমিনারে ডঃ সৌরভ সিকদারের প্রবন্ধের কিছু অংশ উপস্থাপন করছি । তিনি বলেছেন , আমরা বিগত কয়েক বৎসর ধরে আদিবাসী শিশুর শিক্ষা বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে উপলদ্বি করেছি যে, মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের সুযোগ না থাকায় আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার ঘটছে না । বাংলাদেশের আদিবাসী পল্লীর বিদ্যালয়গুলোতে শিশুরা যা পড়ছে তা কোনক্রমেই তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংপৃক্ত নয় ।

তাছাড়া যে শিক্ষক পাঠদান করেন তার সঙ্গে রয়েছে শিক্ষার্থীর ভাষিক দুরত্ব । কাজেই তাদের জন্য পৃথক পাঠ্যক্রম তৈরী করা এবং নিজ ভাষায় শিক্ষক জরুরী । জাতিসংঘ ঘোষিত শিশু অধিকার রক্ষার ঘোষনায় বলা হয়েছে সব শিশুর জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং অবৈতনিক করতে হবে । সেই সঙ্গে আর্টিকেল ৩০ তে বলা হয়েছে আদিবাসী শিশুর সংস্কৃতি এবং ভাষা অধিকার রক্ষার কথা । সবার জন্য শিক্ষা ও মিলেনিয়াম ডেভলাপমেন্ট গোল অর্জন করতে হলে এ ব্যবস্থা জরুরী ।
পরিশেষে এ কথা বলতে চাই আমার এ লেখা পড়ে আপনারা যদি আমার মর্মবাণী বুঝতে পারেন, তাহলে আমার সাথে গলা মেলান মাতৃভাষায় আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা পাওয়া গুরুত্বপুর্ণ এবং জাতি হিসাবে মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার আন্দোলন করে অর্জন করেছি ।

বিশ্বের দরবারে আমাদের ২১ শে ফেব্রুয়ারি সর্বজন গৃহীত । তাহলে কেন আমরা আদিবাসী মাতৃভাষার স্বীকৃতি দেব না ?
-----------------------------------------------------
তথ্যসূত্র :
১) গবেষণাপত্র 'মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন'
২) শিশু অধিকার সনদ
৩) প্রথমে মাতৃভাষা- সেভ দা চিলড্রেন ও জাবারাং কল্যাণ সমিতি
৪) আদিবাসী শিশুর মাতুভাষায় মৌলিক শিক্ষা : পরিস্থিতি ও করণীয় -ডঃ সৌরভ শিকদার, -
-------------------------------------------------------


মন্তব্য

জিজ্ঞাসু এর ছবি

লেখাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ভিন্ন ভাষাভাষীদের বাংলায় পাঠদান অনেকটা আমাদের শিশুদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ার মত। যাই পড়ানো হোক মনে মনে তারা সেটা নিজের মাতৃভাষায় বুঝে নিয়ে রপ্ত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারীকে ইউনেস্কো ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে স্বীকৃতি দিয়েছিল। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রেজুলুশন পাশ করা হয় ভাষার বহুত্ব (multilingualism) এবং ভাষাতত্ত্ব ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য অক্ষুন্ন রাখার নিমিত্তে। সে মতে বিভিন্ন ভাষাভাষিদের মাতৃভাষায় পাঠদান তাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে বলে আমি মনে করি।
ভারতেও মণিপুরীরা নিজেদের ভাষায় পাঠদানের জন্য দীর্ঘ আন্দোলন করার পর এখন শতভাগ না হলেও অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মণিপুরী ভাষায় পাঠদান ও পুস্তক প্রণয়ন শুরু হয়ে গেছে।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বিশ্বের দরবারে আমাদের ২১ শে ফেব্রুয়ারি সর্বজন গৃহীত । তাহলে কেন আমরা আদিবাসী মাতৃভাষার স্বীকৃতি দেব না ?

চলুক
আমরা আসলে জন্মগতভাবে অনেক অন্যায়ের অভ্যাসবর্তী হয়ে যাই। জানিই না যে আমরা কিছু অন্যায় করছি। আমাদের সমাজ, পরিবেশ, রাষ্ট্র... এরা আমাদের মধ্যে কিছু ধারণা তৈরি করে দেয়। ধীরে ধীরে বড় হতে হতে কিছু সচেতনতা তৈরি হয়। কিন্তু তা পর্যাপ্ত হয়না সম্ভবত কখনোই।
আপনার কাছ থেকে অনেক কিছুই জানার আছে...
নিয়মিত লিখুন... এই দাবী রাখছি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বিপ্রতীপ এর ছবি

লেখা ভালো লাগলো চলুক
ঠিক এ ধরনের একটি প্রতিবেদন পড়লাম প্রথম আলো তে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর

স্বপ্নহারা এর ছবি

লেখা খুব ভাল লাগল...খুবই যৌক্তিক এবং দরকারী লেখা!

হতাশাবাদীর হতাশাব্যঞ্জক হতশ্বাস!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

চলুক

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

চলুক

বিপ্লব রহমান এর ছবি

বিশ্বের দরবারে আমাদের ২১ শে ফেব্রুয়ারি সর্বজন গৃহীত । তাহলে কেন আমরা আদিবাসী মাতৃভাষার স্বীকৃতি দেব না ?

১। খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন। যে জাতি বুকের রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে, স্বাধীনতার পর সেই জাতি অন্য ক্ষুদ্রজাতি সত্ত্বার ওপর ভাষাগত আগ্রাসণ চালাবে, তা কী মেনে নেওয়া যায়?

২১ ফ্রেব্রুয়ারি, বাংলাভাষা নিয়ে আমি যেমন গর্ব করি, একজন তন্দ্রা চাকমা বা সেই ম্রো শিশুটি কেনো তার নিজস্ব ভাষা নিয়ে গর্ব করতে পারবে না?

২। যে কারণে মাতৃভাষায় পাঠ শিক্ষা আমার জন্মগত অধিকার, একই কারণে আদিবাসী শিশুরও তার মাতৃভাষায় পাঠশিক্ষা জন্মগত অধিকার। ...এই মৌল অধিকারটুকুর প্রশ্ন ছাড়াও মাতৃভাষায় শিক্ষা শিশুর মনোস্তাত্ত্বিক বিকাশের জন্যও জরুরি।

রাঙামাটি পাহাড়ের একজন চাকমা শিশু যখন পাঠ্য বইয়ে পড়ে:

আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে,
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে...

তখন তার ভেতরে কোনো মনছবি বা ইমেজ তৈরি হয় না। কারণ পাহাড়ি নদী বা ছড়াগুলো 'বাঁকে বাঁকে' চলে না; এগুলো উঁচু পাহাড় থেকে নেমে এসে নীচুতে গড়িয়ে যায়। সাধারণ নদীর চেয়ে অসংখ্য ঝর্ণা থেকে সৃষ্ট এসব ছড়ার গতি-প্রকৃতি ভিন্ন।

৩। আদিবাসী শিশুর মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের প্রশ্নে আমার একটি পুরনো লেখা আছে এখানে

৪। তন্দ্রাদিকে অনুরোধ করবো, নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে এই ধরণের জনগুরুত্বপূর্ণ আরো অনেক লেখা সচলে নিয়মিত লেখার জন্য। লেখায় পাঁচতারা। চলুক


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

চলুক

শিক্ষানবিস এর ছবি

চলুক
খুব দরকারি লেখা। ভাষাসহ সকল বিষয়ে আদিবাসীদের সমানাধিকার নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক। এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এ নিয়ে আরও লিখুন...

জুয়েল বিন জহির এর ছবি

ভালো লেগেছে এই গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি। দিদির কাছ থেকে আরো লেখা আশা করছি।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা। আমরা যেসব কারণে অন্যান্য দেশ/জাতিকে দোষ দেই, তার অনেক কিছুই আমরা করে চলেছি পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং সকল আদিবাসী/অবাঙালিদের প্রতি। যে-বাস্তবতা আপনার লেখায় উঠে এসেছে, তা খুব লজ্জার। বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে ভাষার জন্য রক্ত দিতে হয়েছে, সেখানে এমনটা খুব বেশি লজ্জার।

আশা করছি এই পরিস্থিতি অচিরেই বদলাবে। প্রতিটি মানুষের নিজের ভাষায় শিক্ষার অধিকার আছে। এটি প্রশ্নাতীত, আপোষহীন। মূলধারায় টিকে থাকার সুবিধার জন্য বাংলা-ইংরেজিতে শক্ত ভিত্তি থাকা জরুরী, কিন্তু তা কখনই মাতৃভাষাকে অবহেলা করে কিংবা তার পরিবর্তে নয়।

আপনাকে বিনীত অনুরোধ রইলো এধরনের বৈষম্য ও অনাচারগুলো তুলে আনার জন্য। আমাদের মতো মূলধারার অপদার্থ নয়তো এ-নিয়ে জানতে পারবে না কিছুই।

গৌতম এর ছবি

তন্দ্রা চাকমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ না বলা কথাগুলো সুন্দরভাবে তুলে আনার জন্য। মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভ করা প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার। ভূরাজনৈতিক কারণে এসব অধিকার হয়তো ঠিকমতো প্রয়োগ করা যাবে না বা নিপীড়িতের অধিকারের কথাগুলো ঠিকভাবে উঠে আসবে না, কিন্তু যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন, তাঁদেরও এটা খুব ভালোভাবে জানা যে- মাতৃভাষায় একজন শিশু যেভাবে নিজের লার্নিং ক্যাপাসিটি বাড়াতে সক্ষম, সেটা আর অন্য কোনোভাবে সম্ভব নয়। শিক্ষাতত্ত্ব নিয়ে যারা বর্তমানে কাজ করছেন, তাঁরা গুটিকতক যে কয়টি বিষয় নিয়ে অন্যের সাথে পুরোপুরি একমত, তার একটি হচ্ছে এই মাতৃভাষায় শিক্ষাদান।

প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময়টিতে শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটে খুব দ্রুত এবং তার সামাজিকায়নের প্রক্রিয়াটিও এ সময় থেকেই শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে। মাতৃভাষায় শিক্ষাগ্রহণের ফলে শিশু বস্তজগতের সাথে ভাবজগতের (বিশেষ করে চেতনাসম্বন্বীয় বিষয়গুলো- যেমন সততা, সুন্দর, ঐতিহ্য) বিষয়গুলো যেভাবে তাড়াতাড়ি ও সুচারূরুপে মেশাতে পারে, সেটা ভিন্নভাষার মাধ্যমে সম্ভব না। উল্লেখ্য, মাতৃভাষা বলতে এখানে শিশু জন্মের পর থেকে বেড়ে উঠা পর্যন্ত পারিপার্শ্বিক যে ভাষার আবহে গড়ে উঠে, সেটাকেই মাতৃভাষা বলা হচ্ছে।

প্রশ্ন হলো- যারা এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছেন, তাঁরা কি এগুলো জানেন না? খুব ভালো করেই জানেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় দর্শন যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষাকেই প্রমোট করতে চায়, সেখানে যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন, অন্য ভাষাগুলোর জন্য তাদের বাড়তি কিছু করার থাকে না। ফলে অনেক সময় এমনকি কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগের কথা ভাবা হলেও রাষ্ট্রীয় নীতির প্রতিফলনের অভাবে পিছিয়ে যেতে হয়।

শুধু যদি বাংলার পাশাপাশি আরও কয়েকটি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়, তাহলে আদিবাসীদের শিক্ষার 'মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন' জগতে রাতারাতি বিপ্লব ঘটে যাবে- নতুন কোনো রিএজেন্ট ছাড়াই।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

তন্দ্রা চাকমা এর ছবি

apnader sobaike dhonnobad amar lekha kosto kore porar jonno. Ekhane bangla type kora jachche na. Map kore diben. Ami aro lekha dibo. Tobe obossoi somoy pele.

স্নিগ্ধা এর ছবি

মেইনস্ট্রিমের সমস্ত সুবিধা ভোগ করতে করতে এইসব ব্যাপারগুলো মাথাতে থাকে না - 'আমার' স্বার্থে ঘা লাগে না কিনা, তাই!

আরো লিখবেন তন্দ্রা। এইসব লেখার মধ্য দিয়ে বিরাট কোন সামাজিক বা পলিসিগত পরিবর্তন হবে না ঠিকই, কিন্তু এখন থেকে বাচ্চাদের পড়াশোনার প্রসঙ্গ আসলে আমার (এবং যারা যারা এই লেখাটা পড়েছেন) মাথায় থাকবে এই ব্যাপারটা।

নিজের দেশে থেকে নিজের ভাষায় পড়াশোনা করার সুযোগ পাওয়াটা আপনাদের মৌলিক অধিকার।

tandra chakma এর ছবি

Ami abar likchi, ei barer bisoy r o ki kora jai matri vasa niyee. Accha ekhane ichche thaka sotteo ami Banglai likte parina. Amake apnara shikhaben kovabe bangla type korbo.

হিমু এর ছবি

কন্ট্রোল + অল্ট + ইউ = ইউনিজয় লেআউট
কন্ট্রোল + অল্ট + পি = ফোনেটিক লেআউট



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

বর্ষা [অতিথি] এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা। লেখকের বেদনা আমাকে বেশ স্পর্শ করেছে। আমার এক বন্ধুও ঠিক এই কথা বলেছিলো আমাকে । সে নিজে এই সমস্যায় ভুগেছে ।

Tandra Chakma এর ছবি

Amar lekha porar jonno prothek ke Thanks a lot. Janina ei lekha lekhi kotodur chaliyee jete parbo. Ami onek koste Bangla Bijoy type sikhechi kintu keyboard lay out lage ekhono pura Mukhosto hoini. R kichudin chesta korle parbo. Abasese Dhonnobad Himu ke amar lekha valo lagar jonno.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।