একটি অসমাধাকৃত ছিনতাই (বাস্তব)

ইমরুল কায়েস এর ছবি
লিখেছেন ইমরুল কায়েস (তারিখ: রবি, ২৭/০৪/২০০৮ - ১০:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। পলাশী থেকে যাত্রা শুরু করলাম । উদ্দেশ্য মধুবাগ ,এক ছাত্রীকে পড়াতে যেতে হবে । কোন রিকশা নাই । পলাশীতে অনেক সময় রিকশা পাওয়া যায়না , ভাবলাম একটু হাঁটি নীলক্ষেত পর্যন্ত যাই। নীলক্ষেতেও দেখি কোন রিকশা নাই । কি মসিবত। হেঁটে আবারও শাহবাগ পর্যন্ত এলাম ,দেখি ওখানে কি অবস্থা । তখন সদ্য মফস্বল শহর থেকে এসেছি , হাঁটাহাটি কোন বিষয় ছিলনা। শাহবাগে এসে শুনলাম রিকশা ধর্মঘট , সারা শহরে রিকসা চলাচল বন্ধ । কি বিপদ , এখন কেমনে যাই। একবার ভাবলাম হলে ফিরে যাই এতদূর কষ্ট করে যাই কিভাবে । পরে ভাবলাম শাহবাগ পর্যন্ত যখন এসেছিই দেখি হেঁটেই যাই আজকে , পায়ের যা হবার হবে । যা ভাবা তাই কাজ । শাহবাগ থেকে রমনা ,শিল্পকলা একাডেমি, কাকরাইল হয়ে পৌছালাম কর্নফুলী গার্ডেন সিটির সামনে । তখনই ভদ্রলোকটির(!) সাথে আমার দেখা । আমি দ্রুত সামনে যাচ্ছি উনি ডাকলেন এই যে ভাই ।আমি পিছনে ফিরে চাই।
-পায়ে লাগল সরি বললেন না।
আমি ভাবলাম কি ব্যাপার পায়ে লাগল কখন ? আচ্ছা ভুল করে লাগতে পারে ,দ্রুত হাটছিলাম । আমি বলি
-ও পায়ে লেগেছে নাকি ! সরি আসলে আমি খেয়াল করি নাই।
ভদ্রলোক আমার দিকে এগিয়ে আসেন । হাতে হাত মেলান।
-আপানার নাম।
-কায়েস।
-কৈ যাবেন।
-মধুবাগ যাব।
-থাকেন কৈ ,কি করেন।
-পলাশী থাকি। বুয়েটে পড়ি ,ওখানে হলে থাকি।
-ও আচ্ছা । আপনার মোবাইলটা একটু দেবেন । একটা জরুরী কল করা লাগত ।
আমি ভাবি ভদ্রলোক যখন বিপদে পড়েছেন দেই মোবাইলটা। তাছাড়া তখনও সদ্য মফস্বল আগত আমি জানতাম না এই শহরে মানুষ রাস্তাঘাটে কত ফিকির নিয়ে ঘোরে। আমি মোবাইলটা এগিয়ে দেই। লোকটি মোবাইল নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখে । আমার সন্দেহ হয় । অবচেতন মন থেকে কে যেন বলে মোবাইলটা নাও ,এই লোকের উদ্দেশ্য ভাল না। ওসময় মাথা ঠিক ছিলনা । আমি তাই যা-তা বলি ,ভাই একটা নাম্বার আছে দেন ওটা ডিলিট করেই আপনাকে দিচ্ছি। লোকটা প্রথমে একটু ইতস্তত করে । আমি আরেকটু জোর করলে উনি দিয়ে দেন । আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকি । উনি বলেন মোবাইল দেন । আমি বলি না ভাই মোবাইল দেয়া যাবেনা। এবার পাশ থেকে আরেকজন লোক আসে । লোকটা বলে-
-আমাদের ভাই মোবাইল চাইছে আর তুই দিলি না । এনারে চিনস । সেভেন মার্ডার বিপু বললে এনারে সবাই চেনে । মোবাইলটা দে ।
লোকটা আমার হাতটা সেভেন মার্ডারের কোমড়ে ধরে । ওখানে পিস্তল টাইপ একটা জিনিস অনুভব করি। কিন্তু আমিও তখন মফস্বলের গোঁড়ার তরুন। এত লোকের মাঝে মোবাইল নিবা , এত সোজা , দেখি কি কর তোমরা ।
সেভেন মার্ডার এবার ভাষার ভদ্রতা হারান।
-তোরে এখানে কেউ মাইরা রাখলে কেউ দেখব । চিল্লাবি চিল্লা দেখি। দেখ কেউ আসে কিনা । এই এরে ধর নিয়ে যাই চিপায়। শালার হাত পা আজকে ভেঙে দেওয়া লাগবে ।
ঐ সময়ে ১৮ বছরের একজন তরুনকে ভয় দেখানোর জন্য এটা যথেষ্ট ছিল (এখন হলে তো সরাসরি দিয়েই দেব!)। কিন্তু কেন জানি ঐ সময়ে আমি গায়ার্তুমির চূড়ান্ত করি।
-না মোবাইল দেওয়া যাবেনা।
লোকটা কিছুক্ষন আমাকে দেখে । ওনার চোখে আমি অবিশ্বাস দেখি। এরকম ঘটনায় মনে হয় আর কখনো পড়েনি আগে। কি করবে বুঝে উঠতে কিছুক্ষন সময় লাগে তার।
-দিবিনা। আচ্ছা যা । আর য্যান তোরে দেখিনা এ এলাকায়।
আমি বিদাই হই । ছাত্রীকে গিয়ে বলি আগে এক গ্লাস পানি নিয়ে আস।
এরপর আমি কয়েকজনকে ঘটনাটা বলেছে। অনেকে বিশ্বাস করেছে , অনেক ভেবেছে চাপা মারছি । কেউ বলেছে এত সাহস তোমার , ঘুমাও ক্যামনে রাতে।

আমি কিছু বলিনি। মুচকি হেসেছি।

eru

-------------------------------------------------
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

"এত সাহস তোমার , ঘুমাও ক্যামনে রাতে!!"

--------
স্পর্শ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।