গ্যাব্রিয়েলে রাঙ্কো

ইমরুল কায়েস এর ছবি
লিখেছেন ইমরুল কায়েস (তারিখ: সোম, ৩০/০৩/২০১৫ - ৪:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(গত তিন-চারটে ব্লগের সময় হিসাব করে দেখলাম, গড়ে বছর দেড়েকে একটা করে ব্লগ লিখতেছি। ভালই। বছর দেড়েকের জন্য আরেকটা দিই হাসি )

১.
গ্যাব্রিয়েলে রাঙ্কোর সাথে আমার দেখা Yahoo বার্সেলোনা রিসার্চ ল্যাবসে।

রিসার্চ ইন্টার্ণ হিসেবে Yahoo তে মাত্র গিয়েছে। মিলিয়ন মিলিয়ন ইউজারের ওয়েব-স্কেল ডাটা ওদের জমা করা আছে। এরকম একটা ডাটা Yahoo Answers নিয়ে কাজ করব। কিন্তু কি কাজ করব কিছু জানি না।

সেই ডাটায় ঢুকতে আবার স্পেশাল প্রোগ্রামিং ভাষা জানা লাগে। অনেক কনফিগারেশন, সেটিংস, এই-সেই! সেগুলোর আমি কিছুই জানি না। সকাল আটটায় যাই, রাত দশটায় ফিরি। সব সময় মনে হতে থাকে, আচ্ছা এখানকার সবচেয়ে আজাইরা লোক কি আমি?

এমনি একদিনে গ্যাব্রিয়েলে রাঙ্কো আমার পাশের একটা ফাঁকা টেবিলে এসে বসে। ইটালিয়ান, চোখে চশমা। সে ও রিসার্চ ইন্টার্ণ করতে এসেছে। কুশল বিনিময় হল।

আমার আবার সব কিছুতেই কিউরিওসিটি একটু বেশী। প্রথম আলাপেই জেনে নিলাম সে থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সে পিএইডি করে ইতালীতে। কিন্তু অর্থনীতি নিয়ে তার সম্প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়েছে। সে এখানে ফিন্যান্স ডাটা নিয়ে কাজ করবে।

আমি মনে মনে ভাবলাম, কালে কালে আর কত কি দেখবো! পদার্থ, অর্থনীতি, কম্পিউটার সব মিলেমিশে একাকার! স্মল, কানেক্টেড ওয়ার্ল্ড।

যাই হোক, গ্যাব্রিয়েলে রাঙ্কো টেবিলে বসে তার জন্য রাখা কম্পিউটারটা অন করে টুকটাক শুরু করল। আমি তাজ্জ্বব হয়ে গেলাম। সিম্পলি সে চোখে তেমন কিছুই দেখে না। মাথাটা কম্পিউটারের এক ইঞ্চি সামনে নিয়ে গিয়ে একটা একটা করে শব্দ পড়ছে। পড়া হয়ে গেলে মাথাটা কি বোর্ডের এক ইঞ্চি সামনে এনে প্রতিটা অক্ষর দেখে দেখে টাইপ করছে। তার কীর্তিকলাপ দেখে ভাবলাম, কেম্নে কি!

কিন্তু প্রথমদিনে হঠাৎ করে বেশি কিছু তো আর জিজ্ঞাসা করা যায় না। একদিন লাঞ্চে জানলাম কিছুটা।

গ্যাব্রিয়েলে রাঙ্কো চোখের একধরনের সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহন করেছে। চশমা ছাড়া সে তেমন কিছু দেখে না। চশমা পরেও যে খুব একটা দেখে তা নয়। স্পেশালি লেখা দেখার জন্য তাকে অনেক সামনে যেতে হয়।

আরও জানতে পারলাম সেও আমার মত টেকনিক্যালি অনেক খুঁটিনাটি জানে না, অনেক কিছুই তার শিখতে হবে। তবে হাই লেভেলে কি করতে হবে তা সে জানে। ইউজারের ব্রাউজিং ডাটা আর Yahoo ফিন্যান্স নিউজের সেন্টিমেন্ট (সোজা বাংলায় খবরে আবেগ কেমন) অ্যানালাইসিস করে সে স্টকের দাম, উঠতি/পড়তি এসব প্রেডিক্ট করতে চায়।

আমি মোটামুটি বলা যেতে পারে আকাশ থেকে পড়লাম। দুই-চারদিন ডাটা গুঁতাগুতি করে আমি যা বুঝতে পেরেছিলাম ইউজারের ব্রাউজিং ডাটা খুবই জটিল ধরনের ডাটা। একজন ইউজার একটা ব্রাউজিং সেশনে যা যা করে (এমনকি পেজ ভিউ, ক্লিক) সব রেকর্ডেড হয়ে থাকে এইটাই। এরকম একটা ডাটা থেকে মিনিংফুল কিছু তুলে আনা খুবই কঠিন একটা কাজ।

আমি এধরনের একটা ডাটা ধরে প্রথমেই বাদ দিয়ে দিয়েছি। হবে না, এত কঠিন কিছু পারা যাবে না :)। আর গ্যাব্রিয়েলে রাঙ্কো! যার তেমন একটা টেকনিক্যাল নলেজও নাই, একটা অক্ষর পড়তে বা লিখতে গেলে যার এতক্ষণ লাগে, যার ফিল্ডটাও অন্য, হয়ত আমার চেয়ে অনেক বেশি জিনিসও তার শিখতে হবে, সে এসেছে এগুলো করতে!

মনে মনে ভাবলাম, পারবি না কাগু, পারবি না। না জেনে ভুলভাল অনেক কিছু আশা করে এয়েচিস। দিনশেষে আমার মত হারিকেন নিয়ে ফিরতে হবে। আমি আমেরিকা ফিরে যাব আর তুই ইতালি ফিরে যাবি।

২.
কিন্তু দেখলাম গ্যাব্রিয়েলে রাঙ্কো বাড়াবাড়ি রকমের কর্মঠ লোক। সে সবার আগে ল্যাবে আসে। একটা এক্সপ্রেসো কফি নিয়ে বসে দুই চুমুকে শেষ করে কাজে শুরু করে। সেই মাথা ঘাড়, হাত পা সব মিলিয়ে কাজ করে।যায়ও অনেক রাতে। এমনকি উইকেন্ডেও সে ল্যাবে এসে কাজ করে যায়।

গ্যাব্রিয়েলের সাথে ঘনিষ্টতা বাড়ে। আমি ওর সাথে মজা করি, 'কি গ্যাব্রিয়েলে, বার্সেলোনায় মেয়েদের কেমন দেখছ? কোন দেশের মেয়েরা সুন্দর, স্পেন না ইতালি?' সে হাসতে হাসতে উত্তর দেয় 'স্পেনের'।

শেষে গ্যাব্রিয়েলে রাঙ্কোর এফিসিয়েন্সি দেখে অবাক না হয়ে আমি পারলাম না। এত ফিজিক্যাল লিমিটেশনস নিয়েও সে অনেক তাড়াতাড়ি সবকিছু শিখে নিল। আমি দু'চার দিন তাকে এটা-ওটা খুঁটিনাটি টেকনিক্যাল জিনিস জিজ্ঞাসা করলাম। কিন্তু সে কোনদিন কিছু জানতেও চাইল না। আমার আগে সব শিখে নিয়ে সে কাজকর্ম্ম শুরু করে দিল।

ওয়েব-স্কেলের জটিল ডাটা নিয়ে সে অনায়াসে কাজ করতে লাগল। আর আমি এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয় নিয়ে তার কাজকর্ম্ম দেখতে লাগলাম আর ভাবতে লাগলাম। এরকম একটা লোক পারলে আমি পারব না কেন? চেষ্টার উপরে তো কিছু নাই। চেষ্টা করে না পারলে একটা সান্ত্বনা তো থাকে। আর চেষ্টাই যদি না করি তাইলে হবে টা কি করে!

দ্বিগুন উৎসাহে কাজ শুরু করলাম আমিও। অনেকদিন ধরে কিছুই হল না, হাইপোথিসিসের পর হাইপোথিসিস, অ্যানালাইসিসের পর অ্যানলাইসিস, দিনের পর দিনের কাজ জলে গেল। কিন্তু এরকম সময়ে গ্যাব্রিয়েলের দিকে তাকাতাম।

কম্পিউটারের কি বোর্ডের এক ইঞ্চি সামনে মাথা নিয়ে গিয়ে প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একটা করে অক্ষর টাইপ করছে। তখনই নিজের মনে হত, আমরা তো অনেক লাকি, এট লিষ্ট আমাদের তো হাত-পা চোঁখ মুখ সব ঠিক আছে। এত ফিট জিনিস নিয়ে সামান্যতে হতাশ হলে আমাদের চলবে কেন? আবার দ্বিগুন উৎসাহে কাজ শুরু করতাম। এভাবে দেখতে দেখতে বার্সেলোনা থেকে যাবার সময় চলে আসল।

অনেকদিন পর হঠাৎ আজকে গ্যাব্রিয়েলের কথা মনে পড়ল। দেখলাম সে সুন্দর একটা পেপার লিখেছে কাজটা নিয়ে। আরও একটা রিসার্চ ইন্টার্ণ করছে স্লোভেনিয়ায়। গ্যাব্রিয়েলেরা অন্যরকম। গ্যাব্রিয়েলেরা জীবনে কখনও আটকাবে না!

৩.
গ্যাব্রিয়েলে রাঙ্কো মোটামুটি চোখেই দেখে না। টাইপ করতে তার বেশ সময় লাগে। কি বোর্ডে প্রতিটা অক্ষর টাইপ করার আগে তার অনেকক্ষণ দেখা লাগে। একটু চিন্তা করুন। আপনি যদি চাকুরিদাতা হতেন, এরকম একটা লোককে কি আপনি মিলিয়ন মিলিয়ন ওয়েব ইউজারের ব্রাউজিং বিহেভিয়ার ডাটার মত জটিল জিনিস নিয়ে কাজ করতে দিতেন? ‌

Yahoo কিন্তু দিয়েছে। অবশ্যই Yahoo গ্যাব্রিয়েলে রাঙ্কোকে ষ্ট্যান্ডার্ড ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমেই নিয়েছে। তারা তাকে তার পটেনশিয়াল দেখেই বিবেচনা করেছে, ফিজিক্যাল লিমিটেশনস দেখে বাতিলের খাতায় ফেলে নি।

আমাদের মধ্যে সবাই কি এরকম ভাববে? Yahoo তে যাওয়ার আগে হয়ত আমিও এরকম একজনকে বাতিলের খাতায় ফেলতাম। কিন্তু এখন আর পারব না।

Yahoo থেকে ফেরার পর অনেকদিনের পরিচিত অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রফেসর আমাকে একজনের প্রোফাইল রিভিউ করতে পাঠালো। তার আন্ডারে পিএইডি করতে চায়। ভর্তিচ্ছু লোকের বয়স বেশি, প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি। অন্যসবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু ততদিনে আমি বুঝে গেছি ইট ডাজনট ম্যাটার, পটেনশিয়ালটাই আসল। প্রফেসরকে পজিটিভ একটা মূল্যায়নই দিলাম।

অবশ্য অনেকের কাছে মনে হয় পটেনশিয়ালের সাথে এগুলো অনেককিছুই ম্যাটার করে। অনেকদিন পর আর এক প্রফেসর ডেকে পাঠালো। বিষয় একই, প্রোফাইল রিভিউ। বেশিরভাগ জিনিসই ঠিক আছে। প্রফেসরের শেষ করল ত্যানা-পেঁচানো উক্তি দিয়ে, 'কিন্তু, বয়সটা বেশি হয়ে যাচ্ছে, আমার কাছাকাছি হয়ে যাচ্ছে প্রায়!'

(ফেসবুকেও প্রকাশিত)


মন্তব্য

সবজান্তা এর ছবি

দুর্দান্ত ব্লগ! অনেকদিন পর তোমার লেখা পড়লাম... আমার ধারণা ছিলো যে প্রস্তর যুগের ব্লগার হিসেবে তুমি এখন একদম ফসিল! হো হো হো

গ্যাব্রিয়েলের কথা শুনে ভালো লাগলো। আমি নিজে মোটিভেশন পাই এই ধরনের মানুষদের দেখলে। আমার মনে হয়, শুধুমাত্র মেধাবীদের গল্প না বলে, বরং পরিশ্রমী মানুষের গল্পগুলি বেশি বলাই ভালো। দিনশেষে পরিশ্রমই মানুষকে টেনে নিয়ে যায়।

গ্যাব্রিয়েলের পেপারটা পড়তে চাই। সম্ভব হলে লিঙ্ক দিও। আরো ব্লগের অপেক্ষায় থাকলাম।

ইমরুল কায়েস এর ছবি
সাইদ এর ছবি

বয়স নিয়ে আমেরিকান প্রফেসরদের কি কোন সমস্যা আছে?? এই ব্যাপারটা আগেও শুনেছি।
আমিও রাঙ্কোর মত শুধু আউটপুট তারমত না দেঁতো হাসি

ইমরুল কায়েস এর ছবি

আমেরিকান প্রফেসর এভাবে বললে আসলে এটকু সরলীকরন করা হয়ে যাবে। এটা পারসন টু পারসন ভ্যারি করবে। আবার কালচারাল একটা ব্যাপারও আছে। সতি্য কথা বলতে আসলে পশ্চিমাদের individualistic কালচারে বয়স আসলে অতটা discrimination এর জায়গায় পড়ে না, collectivistic কালচারের সাথে তুলনা করলে।

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

স্পর্শ এর ছবি

আমি মোটিভেশনের অভাব বোধ করলে স্টিফেন হকিং এর উপর একটা ছোটোখাট ডকুমেন্টারি দেখে নেই। গ্রাব্রিয়েলের ঘটনাও অনেক অনুপ্রাণিত করলো। লেখা ভাল্লাগছে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

গ্যাব্রিয়েলের কথা জেনে ভাল লাগলো। আপনাকে ফিরে পেয়েও।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

মাসুদ সজীব এর ছবি

এমন অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষের গল্প পড়তে ভালোলেগেছে। লেখালেখি চলুক অবিরত হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

এক লহমা এর ছবি

অনুপ্রাণিত হলাম। ৫ তারা।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শাখা টপিক নিয়ে আলোচনা।

আমি জীবনে বিশেষ লেখাপড়া করতে পারিনি। কিন্তু আমার ইচ্ছে আছে আমি এক সময় উচ্চশিক্ষা নেবার চেষ্টা করবো। সেটা হয়তো আগামী পাঁচ/ছয় বছর পর। মানে আমাদের সন্তান যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করবে তখন বাপ-বেটা একসাথে উচ্চশিক্ষা নেবার পরিকল্পনা আছে। আমি এই ব্যাপারে কয়েক জনের সাথে কথা বলেছি, কিন্তু তারা কেউই আশাপ্রদ কিছু বলতে পারেননি। বেশিরভাগ জন এই কথা সেই কথা বলে বিষয়টা এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু কাজটা কীভাবে বাস্তবায়িত করা যায়?

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে রেকমেন্ডেশন একটা জরুরী ব্যাপার। আমি যে আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, সে আমলের অধ্যাপকদের কেউ কেউ ঐ বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন, কেউ কেউ কর্মজীবন শেষ করেছেন, আবার কেউ কেউ ধরাধাম ত্যাগ করেছেন। তাছাড়া কেউ অবশিষ্ট থাকলেও কয়েক দশক আগে কে কী করেছিল সেটা তিনি বলতে পারবেন কী করে! কর্ম জীবনে যারা এক কালে মাথার ওপরে ছিলেন তাদের অবস্থাও তথৈবচ। তাহলে আমাকে রেকমেন্ড করবে কে?

কয়েক দশক আগের অধীত বিদ্যা যেমন গুলে খেয়ে ফেলেছি, তেমন তার উপযোগীতাও শেষ হয়ে গেছে। ঐসব বিষয়ে এর মধ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসে গেছে। তাহলে আমাকে কি কোন বিশ্ববিদ্যালয় মিস্ত্রিগিরি বা দোকানদারীর পাঠে ভর্তি নিতে রাজী হবে?

সত্যি বলতে কি উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পেলে আমি মিস্ত্রিগিরি বা দোকানদারীর কোনটাই পড়তে চাই না। আমার আগ্রহ মানবিক বিষয়ে এবং ভৌত বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক শাখায়। কিন্তু এসব বিষয়ে আমার পূর্বতন পড়াশোনা বা কাজের অভিজ্ঞতা নেই। তাহলে আমার উপায় কী?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দিগন্ত এর ছবি

অনলাইনে, কোর্সেরা (coursera) দেখুন।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সবজান্তা এর ছবি

উদ্দেশ্য একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমি, কিংবা আমার কাছাকাছি বয়েসি, এমনকি আমার চেয়ে অনেকটা বড় অনেকেই যখন পড়ালেখাতে আবার ফিরে আসেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, সেটা নিছকই জ্ঞানার্জন না। বরং বহু ক্ষেত্রেই সেটা নিরাপদ(!) ভবিষ্যতের পথে একটা বিনিয়োগ। যদি ভুল অনুমান না করে থাকি, সে ক্ষেত্রে আপনার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণভাবেই জ্ঞান অর্জন। সেখানে আমাদের অনেকের মতোই ভিন্ন কোনো "ধান্দা" নেই। তাই প্রথাগত বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াতেই যে আপনাকে আটকে থাকতে হবে, সেরকম কিন্তু না। দিগন্তদা যেটা বলেছেন, কোর্সেরা খুবই চমৎকার একটা অপশন। কোর্সেরার মতোই আরো বেশ কিছু MOOC কিন্তু খুবই জনপ্রিয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই কোর্সগুলিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারি না, কারণ অল্পকিছু দিন পরই খেই হারিয়ে ফেলি। যেহেতু বাধ্যবাধকতা নেই, আর অনেক কিছুই হয়তো সরাসরি গবেষণাতে কাজে লাগে না, তাই কয়েক সপ্তাহ পর আর কন্টিনিউ করা হয় না। এভাবে মাঝপথে ছেড়ে আসা কোর্সের সংখ্যা দেখলে আতংক লাগে। কিন্তু আপনি যেহেতু শিখতেই চাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে মনোযোগের ঘাটতি না হলে, কোর্সেরার মতো চমৎকার জিনিস কমই আছে। যারা ক্লাস নেন, তারা প্রায় সবাইই খুব নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এবং কোর্সগুলি তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে স্ট্রাকচারে ক্লাস নেন, সে ছাঁচেই বানানো। পরীক্ষার সময় অনেকে ডিফিকাল্টি লেভেল (সঙ্গত কারণেই) একটু নামিয়ে আনে। এছাড়া খুব একটা তফাৎ নেই।

বর্তমানের পৃথিবীতে শেখার রিসোর্সের অভাব নেই, বরং বহুক্ষেত্রেই সদিচ্ছার, এবং সময়েরই অভাব আছে। আমার প্রায়ই মনে হয় (অন্তত আমার গবেষনার বিষয়ে), সমসাময়িক পৃথিবীতে অজ্ঞতা একটা সচেতন সিদ্ধান্ত। শিক্ষকের অভাবে শেখা আটকে থাকার দিন শেষ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

স্কুলটা জরুরী। সাথে ক্লাসরুম, ল্যাব, লাইব্রেরি, সহপাঠী। এগুলো না থাকলে কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে আর বই খুলে সিরিয়াস পড়াশোনা হয় না। বেশি দূর আগানোও যায় না। বেশি বয়সে পড়াশোনা শুরু করাটা বেশ কঠিন। তাই পরিবেশ চাই, চাপ চাই, প্রতিযোগিতা চাই, ডেডলাইন চাই।

পুনশ্চঃ আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর কিন্তু পেলাম না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

সত্যি বলতে কি উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পেলে আমি মিস্ত্রিগিরি বা দোকানদারীর কোনটাই পড়তে চাই না। আমার আগ্রহ মানবিক বিষয়ে এবং ভৌত বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক শাখায়। কিন্তু এসব বিষয়ে আমার পূর্বতন পড়াশোনা বা কাজের অভিজ্ঞতা নেই। তাহলে আমার উপায় কী?

হ, প্রায় একই প্রশ্ন আমারও পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

গ্যাব্রিয়েলের জন্য শুভকামনা।

দেবদ্যুতি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনার লেখাটা আর মন্তব্যগুলো, সব মিলিয়ে দারুণ লাগলো। হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গ্যাব্রিয়েলেরা অন্যরকম। গ্যাব্রিয়েলেরা জীবনে কখনও আটকাবে না!

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেকদিন পর! লেখাটা খুব ভালো লাগলো।

মরুদ্যান এর ছবি

খুব ভাল লাগল ভাই।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।