আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়ে আইসিএসএফ এর প্রতিক্রিয়া

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম এর ছবি
লিখেছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৭/০২/২০১৩ - ১:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত ৫ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কর্তৃক আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়ে অপরাধীর লঘু শাস্তিতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত এবং নির্যাতিত মানুষ এবং তাঁদের স্বজনদের আশার প্রতিফলন হয়নি বলে মনে করে বিচারের পক্ষের নাগরিকদের দ্বারা সংগঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ)। জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যিনি ১৯৭১ সালে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, হত্যা, হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা, ধর্ষন ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে বিচারের মুখোমুখি হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২ এ তার বিরুদ্ধে আনা ৬ টি অভিযোগের ৫ টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরও তাকে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করায় বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে আইসিএসএফ এর পক্ষ থেকে।

আইসিএসএফ বিশ্বব্যাপী ১৩টি ভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন ব্যক্তির সমন্বয়ে ২০০৯ সালে গঠিত একটি ফোরাম, যারা ১৯৭১ সালে সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান, আইনের শাসন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৭১ সালে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়।

একাত্তরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর তৎকালীন জামায়াতে ইসলামী, এবং তাদের দ্বারা সৃষ্ট রাজাকার আলবদর এবং আল-শামস বাহিনী কর্তৃক সংঘঠিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসমূহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিচারের এখতিয়াভুক্ত, যা একটি স্বাধীন আদালত। তবে আইসিএসএফ মনে করে যে ট্রাইবুনালে তথ্য-প্রমাণসহ কাদের মোল্লার প্রমাণীত অপরাধসমূহের ভয়াবহতা, নৃশংসতা এবং ব্যাপ্তির সাথে তাকে প্রদত্ত যাবজ্জীবন কারাদন্ড সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। ফলে উক্ত রায়ে প্রদত্ত এই লঘু দণ্ডে সাধারণ মানুষ এবং একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ ও নির্যাতিত মানুষ এবং তাঁদের স্বজনদের আশার প্রতিফলন ঘটেনি। আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারকে এগিয়ে নিতে যত ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং সংগঠন সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন তাঁদেরকেও এই রায় হতাশ করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পূর্বে অপর পলাতক অপরাধী আবুল কালাম আযাদের বিচারে ঘোষিত মৃত্যুদন্ড এবং সেখানে এই একই ট্রাইবুনাল কর্তৃক অনুসৃত শাস্তি প্রদানের মানদন্ডের সাথে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায়ে ঘোষিত শাস্তি সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে আইসিএসএফ মনে করে। অপরাধের সাথে সামমঞ্জস্যহীন লঘু দণ্ড প্রদানের এই দৃষ্টান্ত ভবিষ্যতে বিচারাধীন অন্যান্য মামলাগুলোর রায়ে শাস্তি প্রদানের মানদন্ডের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আইসিএসএফ এর পক্ষ থেকে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। আইসিএসএফ আশা প্রকাশ করে যে, নিন্ম আদালতে অপরাধীর অপরাধের মাত্রা প্রমাণে কোন দূর্বলতা থেকে থাকলে উচ্চতর আদালতে আপিল শুনানিতে সেটি সংশোধিত হবে এবং উচ্চ আদালতে যথার্থ সর্বোচ্চ দণ্ড প্রদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারে সাধারণ মানুষ এবং ১৯৭১ এর অগণিত ভিকটিমদের ন্যায়বিচারের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে।

যেসব ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং সংগঠন আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারের রায়ে আশাহত হয়ে প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন এবং মামলাগুলোর ক্ষেত্রে সুবিচার দাবী করছেন এবং চিহ্নিত মৌলবাদী এবং যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন, তাঁদের সাথে আইসিএসএফ সবসময়ই সর্বাঙ্গীন ভাবে একাত্ম। কিন্তু একই সঙ্গে আইসিএসএফ এও আশা করে যে, সকল ক্ষোভ-হতাশা-বেদনার পরেও, সকলের এই সামষ্টিক আন্দোলনে প্রতিবাদের ভাষা যেন কোনভাবেই যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর অপপ্রচারের পক্ষে না যায় সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলে এখন থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করবেন, কারণ সুবিচারের এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে কিংবা তাকে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করতে ষড়যন্ত্রকারী এবং সুযোগ সন্ধানীরা গত চল্লিশ বছর ধরেই সক্রিয় ছিল এবং আছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামের মতোই বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করার এবং বিচারহীনতার সমাপ্তি ঘটানোর সংগ্রাম। এই বন্ধুর সময়ে আইসিএসএফ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সংগ্রামে নিহত এবং ক্ষতিগ্রস্ত সকললের ত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে, এবং বিচারহীনতার সমাপ্তির লক্ষ্যে, সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের লক্ষ্যে আরো দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে।


মন্তব্য

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

যুদ্ধাপরাধের বিচার হতেই হবে। হবেই।

সুযোগ সন্ধানীরা কোনোভাবেই যেন সুযোগ নিতে না পারে আমাদের স্বতস্ফূর্ত প্রতিবাদের উত্তাল মুহূর্তে।

দ্রোহী এর ছবি

ট্রাইবুনালের রায় মানি না। বিচারাধীন রাজাকারদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কিছু মেনে নেয়া সম্ভব না। দরকার হলে রায় বাতিল করে কাদের মোল্লার বিচার আবার করতে হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচার কোন মাছের বাজার না যে ৫ জনের মধ্যে ৩ জনের ফাঁসি হলেই খুশি হওয়া যাবে।

দেশের শীর্ষ রাজাকারদেরই যদি ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট না হয় তাহলে বাকি রাজাকারদের বিচার করা অর্থহীন ও হাস্যকর ব্যাপার।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

দেশের শীর্ষ রাজাকারদেরই যদি ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট না হয় তাহলে বাকি রাজাকারদের বিচার করা অর্থহীন ও হাস্যকর ব্যাপার।

একমত।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক চলুক
সম্পূর্ণ একমত।
বিচারের বায় ফাঁসি ফাঁসি এবং ফাঁসি চাই এবং শুধু রায় দিলেই হবেনা যতদ্রুত সম্ভব রায়ের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

চলুক

---------------------
আমার ফ্লিকার

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

রায় এবং ফাসিঁ কার্যকর দুইটাই এই সরকারের আমলে চাই।

---------------------
আমার ফ্লিকার

বাউলিয়ানা এর ছবি

চলুক
কারন, Justice Delayed, Justice Denied

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।